ভূত-প্রেত ও অশরীরী আত্মাদের বসবাসের জন্য সিলেট ক্যাডেট কলেজ অত্যন্ত চমৎকার একটা জায়গা। ক্লাস সেভেনের ক্যাডেটদের অন্তত তাই বিশ্বাস করানো হয়। চারদিকে পাহাড়-জঙ্গলঘেরা পরিবেশ তাতে ব্যাপক সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তার মধ্যে পোলাপান যখন শুনে যে জায়গাটা মুক্তিযুদ্ধের সময় কন্সেনট্রেশন ক্যাম্প ছিলো আর পাশের পাহাড়টা একটা বধ্যভূমি যেখানে এখনো মাঝে মধ্যে মানুষের হাড়গোড় পাওয়া যায় তখন পোলাপান আগেই অর্ধেক কাত হয়ে যায়। তখন শোনানো হয়, আরে এগুলা শুইনাই এই অবস্থা? আরও তো কত কাহিনি আছে,ছাদে ভূতেরা প্যারেড করে,লাইব্রেরীতে নাকি পড়াশুনা করে,বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে বাস্কেটবল খেলে,আর পানির ট্যাঙ্কির উপরে বসে বসে ঠ্যাং নাচায়। রাতে শেয়ালের ডাকগুলা আসলে তেনাদের হাসি।এগুলো শুনলে তখন স্ট্রোক করার মত অবস্থা হয়। এর মধ্যে একজন বুড়া ঝাড়ুদার ছিলো সুরমা হাউসে। সে বলে,একজন বৃদ্ধ দরবেশ টাইপের লোক নাকি প্রতি রাতে তিন হাউজ রাউন্ড দেয় ডিউটি মাস্টারের মত। এর জন্য নাকি কেউ কোন ক্ষতি করতে পারে না। এখন আপনারাই বলেন, যে কলেজে মাত্র ৩০০ মানুষ ক্যাডেট আর ৩০০০ অশরীরী ক্যাডেট বাস করে সেখানে রাত ২ টায় ক্লাস সেভেনের একজনের পক্ষে একা একা টয়লেট এ যাওয়া সম্ভব? না, সম্ভব না। আমরা যেতামও না। ৪ জন রুমমেট ছিলাম, আমরা জোড়ায় জোড়ায় জেতাম সবসময়। কিন্তু লক্ষ্য করলাম, আমার পাশের বেডের ‘জ’ কখনও আমাদের কারো সাথে যায় না। কিন্তু আমরা ওর সাথে ঠিকই যাই। ঠিক করলাম ওর সাথে আর যাব না। একদিন রাতে যথারীতি টয়লেটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। হঠাৎ আমার সঙ্গী ‘র’ গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে দৌড়, আমিও কিছু না বুঝে দৌড় দিলাম সাথে সাথে, রুমে যাওয়ার পর বুঝলাম ওটা ডিউটি মাস্টার ছিলো। এদিকে আমাদের চিৎকার আর কথায় ‘জ’ এর ঘুম ভেঙ্গে গেলো।ওকে তখন সমস্ত ঘটনাটা বুঝিয়ে বললাম।ওকে শিক্ষা দেয়ার জন্য বললাম, ডিউটি মাস্টারকে দেখলাম ঠিক আছে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তার পা ছিলো মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি উপরে আর পায়ের পাতা উলটো দিকে। এই কথা শোনার পর আমার বন্ধু ‘জ’ এর ভয়ে হিসু চলে আসছে। আমরা তিনজনই বললাম, “ একা যাও, আমাদের মরবার সখ নাই” বন্ধু আমার কান্নাকাটি শুরু করে দিলো, কিন্তু এরপরও কারো মন গলে না। একটু পর, ঘুমের ট্রাই করতেছি, কিন্তু হঠাৎ শির শির শির শির আওয়াজ। পাশের বেডে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। দরজা বন্ধ, কিন্তু ‘জ’ নাই।কিভাবে সম্ভব? তবে কি সেই ভূত?? কার সাথে আমরা ফাইজলামি করি?আজকে আমরা শেষ। মনে মনে দোয়া- দরুদ পড়তে পড়তে কি মনে করে পাশের বেডের নীচে তাকালাম। দেখলাম ‘জ’ নিবিষ্টমনে মগের মধ্যে জলবিয়োগ করছে। শির শির শির শির আওয়াজের উৎস এটাই। আমার দিকে সে অসহায়ের মত তাকালো। সে এমন এক দৃষ্টি ছিলো যে আমি আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে হেসে উঠলাম। আমরা তিন রুমমেট প্রাণভরে উপভোগ করলাম সে নির্মল বিনোদন। ওইদিন রাতের মত শান্তির ঘুম খুব কমই এসেছে ক্যাডেট লাইফে। (চলবে)
৮ টি মন্তব্য : “কলেজ লাইফের ভূত-রসাত্মক কাহিনী ১”
মন্তব্য করুন
চলতে থাকুক ! :thumbup: আমাদের এমসিসিসি তেও ভূত নিয়ে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে.. গলাকাটা ডিউটি ক্যাডেট, এফ এইচ এর পিছনে কাঠাল গাছের নিচে গণ কবর, ঘোস্ট নাইট। অনেক কাহিনী ..
হা হা। 😀
সিরিজ চলুক। বর্ণনা সুন্দর হচ্ছে। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
ভালা হইসে :thumbup: :thumbup: :thumbup:
আমাদেরো জ এর মতো এক রুমমেট ছিলো।
উলটা আমি আর ফ ওর জন্য মাইর খাইছি।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
:)) :khekz:
"জ" ভাই, কাহিনীতো জাইনা গেলাম :goragori:
:shy:
পরবর্তী পর্ব আসছে,রিভিউ এ আছে।এই পর্ব আরো ভালো হওয়ার কথা 🙂
অস্থির ছিল ভাই............... চলুক...............পরেরটার অপেক্ষায়...... :clap:
আমাদের একজন ভয়ে ঐসব মগ-বোতলের ধার ধারে নি। এক্কেবারে সরাসরি জানালা দিয়ে কাজ সেরে ফেলেছিল। ভাগ্যিস আমরা তখন নিচতলায় থাকতাম। 😀
MH