একঃ
– আমি মহিব। তুমি?
ছেলেটা ভেজা ভেজা চোখে আমার দিকে তাকাল। আমি কিছুটা অবাক হলাম। আরে ভাই, কাঁদার কী আছে? আর সাতদিন পরেই তো আমরা বাসায় যাব। বাবা- মা কে ছাড়া কী সাতটা দিন থাকা যায় না? আমি তো ক্লাস সিক্সেও হোস্টেলে থাকতাম। চিটাগাং রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ। আমি ছেলেটার কাঁধে হাত রাখলাম। সাথে সাথে আমারও কান্না কান্না একটা ভাব হল।
– আমি তানবীন।
– বাসা কোথায় তোমার?
– উত্তর কাট্টলী।
– একদম কাছে।
অবশ্য এটা একেবারে অযৌক্তিক কথা। বাসা কাছে হোক আর দূরে হোক ইচ্ছে করলে তো আর বাসায় চলে যাওয়া যাবে না। এটা হলো ক্যাডেট কলেজ।
আজ ক্যাডেট কলেজে আমাদের প্রথম দিন। জুনের তিন তারিখ- ১৯৯৯। কিছুক্ষণ আগে বাবা-মা’রা চলে গেছেন। আমাদের রিসিভ করলেন আমাদের ”হাউস প্রিফেক্ট”।
কলেজের ক্যাম্পাসে যখন ঢুকলাম তখন বেশ মজা লাগছিল। কেমন উৎসব উৎসব একটা ভাব। সাদা সাদা ড্রেস পরা কয়েকজন মানুষ আমাদের ব্যাগ চেক করলেন। আমার ব্যাগে দুইটা বিস্কিটের প্যাকেট ছিল। ওগুলো দেখে ওনাদের একজন এমন একটা ভাব করলেন যেন আমি পিস্তল-টিস্তল নিয়ে এসেছি। ব্যাপারটায় আমি বেশ মজা পেলাম। পাশে আম্মু ছিল। আম্মু আবার অল্পতেই অস্থির হয়ে যায়। মুখটা কান্না কান্না করে ফেলল। আম্মুর মুখের দিকে তাকিয়ে আমারও বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠল।
এরপর আমরা অডিটরিয়ামে গেলাম। নামটা বেশ অদ্ভুত- ”বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা মিলনায়তন”।
স্টেজের ওপর অনেকগুলি চেয়ার রাখা। সাদা প্যান্ট- সাদা শার্ট আর টাই পরে কতগুলো ভদ্র- মানুষ বসে আছেন। তাদের দেখেই মনে হল- এই বসে থাকা ব্যাপারটা তারা মোটেই উপভোগ করছেন না। তারা নিশ্চয় স্যার। আমি কিছুটা হতাশ হলাম। আমি ধরে নিয়েছিলাম- ক্যাডেট কলেজের সব স্যাররা আর্মির পোষাক পরে থাকেন। একটু পর দেখলাম সত্যি সত্যি দুজন আর্মি পোষাক-ওয়ালা লোক স্টেজে উঠলেন। সাথে সাথে পুরো অডিটরিয়ামের সবাই উঠে দাঁড়াল। এই সেই প্রিন্সিপাল? আর পাশের জন এডজুডেন্ট! প্রিন্সিপাল স্যার অনেক কথা বললেন। অনেক কিছু বুঝলাম- আর বেশিরভাগ কথাই আমার কাছে কেমন দুর্বোধ্য ঠেকল।
এরপর ডাইনিং হলে গেলাম। বেশ খাওয়া দাওয়া হল। আম্মু আমার মুখে খাবার তুলে দিতে চায়। আমার ভীষণ লজ্জা লাগে। আম্মুটা কী না! সবাই দেখলে কী ভাববে?
ইতোমধ্যে একটা ব্যাপার জানতে পারলাম। কলেজে নাকি ছুটি চলছে। পানি নিয়ে কী সমস্যা হয়েছে। তাই তিনমাসের ছুটি। শুধু যারা ইন্টার পরীক্ষা দিবে তারা আছে আর যারা কোন একটা বিশেষ ফুটবল কম্পিটিশনে অংশ নিবে তারা আছে। সবাই বলাবলি করছে ‘আইসিসি’। ব্যাপারটা আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না। আমি তো জানি আইসিসি মানে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল।
যদিও আমাদের ব্যাচের পঞ্চাশ জনকে চারটা হাউসে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে- আমরা সবাই নজরুল হাউসে উঠলাম। বাবা-মারা এসে রুম গুছিয়ে দিয়ে গেলেন। আব্বু-আম্মুর কত কথা।
– ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করবি।
– ঠিকমত পড়াশোনা করবি।
– একদম দুষ্টুমি করবি না। বড় ভাইয়া আর স্যারদের কথা শুনবি।
আমাদের সাথে যারা আসছিল তারা যখন চলে গেল তখন পুরো জায়গাটা কেমন খালি হয়ে গেল। আম্মুর সে কী কান্না। আব্বু আম্মুকে বলছে।
– কাঁদার কী আছে। আর সাতদিন পর তো বাসায় আসবে।
এখন তানবীনকে দেখে আমারও কান্না আসতে চাইল। তানবীন ছেলেটা একদম পিচ্চি। আমার থেকে খাটো হবে। আমি রুমের সবাইকে দেখতে লাগলাম। আমরা রুমে আটজন। সবার একই অবস্থা। শুধু একজন দেখলাম- মুখটা হাসি হাসি করে রেখেছে। আমি ওর কাছে গেলাম।
– নাম কী তোমার।
আমি খুব মজার কোন কথা বলেছি- এমন একটা ভাব নিয়ে ছেলেটা হেসে দিল। আমাকে বলল।
– ঐ। তুই কী মাইয়া। আমাকে তুমি করে বলস ক্যান। আমি হিমেল। তোর নাম কী? কাঁদছস নাকি?
সাথে সাথে আমার মনটা কেন জানি ভালো হয়ে গেল। ভেজা ভেজা চোখ নিয়ে আমি হেসে দিলাম।
মনে হল- ছয় বছর যাদের সাথে থাকব সবাই হিমেলের মত। আগামী ছয় বছর যখনই কারো চোখ ভিজে যাবে- তখন অন্যরা কোন কথা বলে তার ভেজা চোখে হাসি নিয়ে আসব।
……
দোস্ত, কী লিখলি!!!
এইটারে মাঝ পথে কবর দিয়া দিসনা... প্লীজ... চালায়া যা...
"আগামী ছয় বছর যখনই কারো চোখ ভিজে যাবে- তখন অন্যরা কোন কথা বলে তার ভেজা চোখে হাসি নিয়ে আসব।"
চমৎকার একটা সূচনার চমৎকার একটা উপসংহার।
চালিয়ে যা। বাকি পর্বগুলো পড়ার জন্য মুখিয়ে রইলাম।
তাড়াতাড়ি লেখ।
চলবে, চলতেই হবে...............
অনেক সুন্দর হয়েছে, মানতেই হবে।
পরেরটা তাড়াতাড়ি আসে যেন।
বোকাসোকা র কি হইল এইটার সেকেন্ড পার্ট কবে দিবে।>
এই পোলাডারে ধইরা কঠিন একটা পিডানি দেয়া দরকার । এইরকম কঠিন একটা উপন্যাস শুরু করে শেষ না করার কোন মানে হয়! 🙁
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
সহমত
আমি শুরু করব, জিহাদ ভাইয়া? ;))