এই ছারপোকা কলোনির সবচেয়ে দুঃখী মেয়ে আমি। অথচ একসময় কি সুখময় ছিল আমার জীবন!ছোটবেলা থেকেই আমি একটু দস্যি টাইপের ছিলাম। দিনরাত সঙ্গী সাথিদের নিয়ে বাঁদরামি করে বেড়াতাম আমি। আমাদের কলোনির পাশে যে মনুষ্য দৈত্যের বাস সে ছিল নিতান্ত নিরীহ ও অলস প্রকৃতির। সে আমাদের তেমন একটা ঘাটাতো না। রাতের বেলায় দলবেঁধে রক্ত খেতে বেড়াতাম আমরা। কখনো পায়ের আঙ্গুল, কখনো পায়ের পাতা সব জায়গা চষে বেড়াতাম আমরা। একদিন হাতের পাতার উপর দিয়ে হাঁটছিলাম। হাতের রক্তগুলো খুব সুস্বাদু। হঠাৎ কোত্থেকে আরেকটা হাত আমার ওপরে পরলো। আমি সরার চেষ্টা করলাম। এরপর কি হয়েছিল মনে নেই, আমি জ্ঞান হারালাম।
“ এভাবে, কেউ রক্ত খেতে যায় বোকা মেয়ে?, তোমাকে ধরে মার দেয়া দরকার” ভরাট একটা কণ্ঠে আমি চোখ মেলে তাকালাম। এবং তাকে দেখলাম, আমার স্বপ্নপুরুষকে দেখলাম। সেই আমার জীবন বাঁচিয়েছিল।লাল চকচকে শরীর,বলিষ্ঠ কণ্ঠ, মর্মভেদী দৃষ্টি। যে দৃষ্টিতে আমি তার প্রেমে পড়ে গেলাম। আমি তার কথার কোন উত্তর দিতে পারলাম না। কেবল চোখ দিয়ে অবিরল ধারায় জল পরতে লাগল। সে এবার আমার কাঁধে হাত রেখে কিছুটা নরম গলায় বলল, “ থাক, আর এরকম ভুল করোনা, মনুষ্য দৈত্য কিন্তু অনেক বিপজ্জনক। ওদের মনে কোন দয়া মায়া নেই”।
এরপর শুরু হল আমার নতুন জীবন। ধীরে ধীরে আমি তার মাঝে হারিয়ে যেতে লাগলাম। আমার দিন শুরু হত তার কথা কল্পনা করে, তাকে এক মুহূর্ত না দেখে আমি থাকতে পারতাম না, আর তার কাছে আমার ছিল যত অদ্ভুত সব আবদার। সেও আমার কোন চাওয়া অপূর্ণ রাখত না। কত রাত হাতে হাত ধরে ঘুরে বেড়িয়েছি আমরা। আহা! সেসব দিনগুলো এখনো চোখের সামনে জীবন্ত। সেদিন রাতেও ঘুরতে বেরিয়েছিলাম আমরা। মনুষ্য দৈত্যের বুকের উপর দিয়ে হাটছিলাম আমরা।চোখ পড়লো দৈত্যের ঠোঁটে। তখন আমি সেই সর্বনাশা আবদারটি করে বসলাম। “ জান, মনুষ্য দৈত্যের ঠোঁটের রক্ত মনে হয় অনেক মজার,তুমি খাওয়াবে আমায়?” সে এক মুহূর্ত চিন্তা করলো, তারপর বলল, “ তুমি দাড়াও,আমি দেখি” সে যখন ঠোঁটের কাছাকাছি, তখন দৈত্যটি নড়ে উঠল।আর আমার বুকটা কেমন ছ্যাত করে উঠল । মনে হল, এ আমি কি করলাম, আমার ভালবাসাকে মৃত্যুকূপে পাঠালাম! সৃষ্টিকর্তার কাছে বারবার প্রার্থনা করলাম, “ হে সৃষ্টিকর্তা ,আমার জানকে সুস্থভাবে ফিরিয়ে এনে দাও,” পরক্ষনেই একটা বিকট শব্দ। দৈত্যটি উঠে বসলো। আর আমি নীচে পরে গেলাম,আর তার দেহটা আমার সামনেই পড়লো,
“ ঠোঁটের রক্ত চেয়েছিলে না?এনেছি আমি, কিন্তু আমার সময় বোধহয় আর নেই, তুমি পালাও এখনি,” আমি কিছু বলতে পারলাম না,অবিরল ধারায় শুধু জল পড়ছিল চোখ দিয়ে। তাকে শক্ত করে ধরে রেখেছিলাম শুধু, প্রচণ্ড ইচ্ছা করছিলো তার সাথে চলে যেতে, কিন্তু গর্ভের সন্তানের কথা ভেবে আর মরতে পারিনি।তাই কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে পালিয়ে আসলাম।
এখন দিনগুলি আমার বড় একলা কাটে।এখন আমার সন্তানকে ঘিরেই আমার যত স্বপ্ন। মাঝে মাঝে চিন্তা করি, আমরা কি এমন ক্ষতি করি মানুষদের যে তারা আমাদের এমন নির্মমভাবে মেরে ফেলে? সামান্য একটু রক্তই তো নাকি? অথচ তারা যে আমাদের কত জীবন ধ্বংস করলো, তার বিচার কে করবে?? প্রার্থনা করি,মানুষের চেয়েও বড় এমন কোন দানব আসুক, যারা মানুষদেরও এমনভাবে পিষে মারবে, তখন তারা বুঝবে, জ্বালা কত।
( ঘুমাইয়া ছিলাম, মুখের উপর ছারপোকার কামড়ে ঘুম ভাইঙ্গা গেছে, দুইটা ছিল।একটারে মারছি, আরেকটারে মারবার পারি নাই)
=)) =)) =)) =)) =)) =))
খেয়া (২০০৬-২০১১)
:boss:
বহুত খুব ভাইজান............... 🙂
🙂