: তুমি কোথায়, বলো তো?
: আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াও। দেখবে ঠিক তোমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছি।
তোমার চুলের সুবাস নিচ্ছি। তোমার ঘাড়ে নিঃশ্বাস পড়ছে। টের পাচ্ছো?
তুমি ঘুরে দাঁড়ালেই তোমাকে ধ’রে ফেলবো।
: তুমি এমন ক’রে বলো … আমার বুক ধুকপুক ক’রে … মনে হয় স্বপ্ন দেখছি না তো?
: আজ মনটা ফুরফুরে বলেই হয়তো এমন …
: ঘুম ভাল হলো?
নিউরনে আলাপনঃ চৌদ্দ
: ঘুমিয়ে পড়েছিলে?
: এই সময়টা ঘুম ঘুম লাগে। তবুও তোমারই আশায় ছিলাম মনে হল। বুঝতে পেরেছিলে?
: আমারো ঘুম পাচ্ছিলো খুব … কিন্তু ভাবছিলাম কতগুলো গান-এর কথা তোমাকে বলবো।
: আমিও আজ কতগুলো গান বেছে রেখেছি তোমার জন্যে!
: কী আশ্চর্য! ভাবনাগুলো কেমন মিলে যায় … একই সময়ে …
: হুম, ‘দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে’ …
: জানো,
নিউরনে আলাপনঃ তেরো
: কোথাও কোন লেখা পড়লে বুঝি তুমি আসলেই কত সুন্দর লেখো …
: কী যে বল না তুমি? আমারগুলো এমনি এমনি লেখা, তাতে এমন কী যায় আসে?
মূল্যের দিক থেকে তো সমুদ্রের তীরের বালুকণাও না …
: সে তুমি বুঝবে না … শুধু আমার মন জানে … তোমার মুগ্ধ পাঠকেরাও তো বলে …
তুমি কত ভালো লিখছো সত্যি বুঝতে পাচ্ছো তো?
নিউরনে আলাপনঃ বারো
: দেখেছো, আমি না ডাকলে বুঝি মনে পড়ে না?
: মনের ভেতরেই তো আছো …
: কত কথা মনের মধ্যে পুষে রাখি, কত আবোল-তাবোল বকি, কিন্তু আসল কথাটিই যেন বলা হয় না! তুমি কেমন আছো?
: আছি, এই তো … চলছে।
: জানো, একদিন বৃষ্টির দিন …
আমরা দু’জন বেশ ভাল করে দু’কাপ চা নিয়ে বসব …
দু’জনের না বলা গল্পগুলো দু’জনকে বলার জন্য …
নিউরনে আলাপনঃ এগারো
: কখনো এটা ভেবেছো, বারবার আমাকেই ফোন করতে হয়? কোনদিন কি তোমার একটুকুও ইচ্ছে হয় না?
: হুম, তাতে কী বুঝায়? আমার কাছে তুমি
আকাশ নেমে এলে বুঝি মাটির বুকেতে চুমি!
: ওই একটাই পারো, কবিতা?
আমার অভিমান, আক্ষেপ, কান্না এগুলো তুমি কোনদিন বুঝবে না।
: আমার এখনো বুঝ হলো না, জ্ঞান হলো না,
না হলো সেই চোখ, পড়ে থাকলাম পথের ধারে,
নিউরনে আলাপনঃ দশ
: দু’দিন কথা না হলেই ভেতরটা কেমন করে! মনে হয় বুঝিবা মাস পেরিয়ে বছর হতে চলল!
: ভালো আছো?
: থাক, যদি বুঝতে?
: তুমি সুন্দর ক’রে চোখে কাজল দিও ঠিক,
কপালে একটা ছোট টিপ আর ঠোঁটে লিপস্টিক!
: ইস, আমার বয়েই গেছে।
আচ্ছা, কোনটা বেশি সুন্দর লাগে কাজল, টিপ না লিপস্টিক?
: শৈশবে কপালের টিপ খুব লাগতো,
সেইসব গল্পঃ দুই
সে আমায় বলেছিল, “ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো!”
মুহূর্তেই আমার শরীর, মন বকুলের গন্ধে ভ’রে ওঠেছিল।
আ-হা, সেই প্রিয় নারী, প্রিয় কবিতা তোমার কন্ঠে যেন প্রিয় সুর হয়ে বেজে ওঠে …
তোমার ছবির দিকে অপলক তাকিয়ে থাকি, এই অবেলায়
চোখ সরেনা, মনও ফেরেনা, পথ চলা থেমে যেতে চায়।
উনুনের পুড়ে যাওয়া কাঠ যেমন গনগনে লাল হয়ে থাকে,
নিউরনে আলাপনঃ নয়
: কাল সারাদিন, সারারাত বৃষ্টি হলো!
আমার যে কী কী হলো, কেমন কেমন লাগলো!
পুরোটা সময় মনে হল, তুমি পাশে আছো, তুমি জড়িয়ে আছো হাতে, বাহুতে!
: হুম, আমিও একা একা ভাবছিলাম। আমি সেদিন থেকে বৃষ্টির প্রতিশব্দ হয়ে গেছি তোমার কাছে, আর বাকি জীবনের সাথেও বুঝি জুড়ে গেল, যখনই বৃষ্টি তখনই আমি!
: ভালোই হলো। তোমার না থাকা নিয়ে আমায় ভাবতে হবে না।
নিউরনে আলাপনঃ আট
: জানো, থেকে থেকে ঘুম ভেঙ্গে যায়। তোমার কথা মনে হয়।
: একজন শিখিয়েছিলে সেই কতদিন আগে – আমি তোমাকে মনে করলে, তোমারও আমায় মনে পড়ে।
: সত্যি?
: তা তো বুঝিনা, তোমার জীবনে আমায় ঘুম-হরা হয়েই কাটাতে হবে এটা বুঝলাম।
অথচ কেউ ঘুম-ভাঙ্গানিয়া হবার শখ পুষেছিল ভেতরে ভেতরে!
: ইস! এমনিতেও আমার অনেকদিন হল ভাল ঘুম হয় না। সিডেটিভ নিচ্ছিলাম।
অমর প্রেম
অমর প্রেম
মুহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ
তোকে মাঝে মাঝে মনে পড়ে
দিনের বারান্দায় ব্যস্ত কোলাহল ভিড়ে
কখনো চায়ের টেবিলে সন্ধায়,
কবিতা পড়তে পড়তে বসে আনমনে
ভাবি, কেন ভালবাসিনি তোমায়?
কৃষ্ণচূড়ার সবুজ কুন্তলে লাল ফুল গুঁজে
বসন্ত বিকেলে গোধূলি বেলায়
মাঠের সষর্ের ফুল কতনা ডেকেছে আয়
ঘুডি নিয়ে দৌড়ায় হলুদ মাঠে সুতোর টানে।
বসতিস পাশে কত ছল করে
বিসতীনর্ ঘাঁসের চাদরে জোছনা রাতে
গানের আসরে গভীর নিশিতে,
নিউরনে আলাপনঃ সাত
: একজনের ঘুম কেড়ে নিয়ে নিজে ভোঁস ভোঁস ক’রে ঘুমায়।
এটা কি অবিচার নয়?
তাই সকাল সকাল জাগিয়ে দিলাম, রাগ করলে?
: না, এইতো আরেকটু পরেই উঠতাম।
: আচ্ছা, আমার খুব দেখতে মন চায়, ঘুমিয়ে থাকলে তোমায় কেমন দেখায়?
: বোকাদের যেমন দেখায়, শিশুর মত ঘুমে কাদা হয়ে পড়ে আছে, হা করা মুখ গ’লে লালা বের হয়ে গাল বেয়ে নেমে বালিশ ভিজিয়ে দিচ্ছে!
নিউরনে আলাপনঃ ছয়
: মনটা কেমন বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে, মনে হলো তোমার সাথে কথা হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু আসলে তা হয় না। আরো মনটা কেমন কেমন জানি হয়ে যায়!
: এ আমার লজ্জা! আমার সীমাবদ্ধতার কোন সীমা নেই জানি।
: কাল সারারাত শুধু কাঁদলাম। মনে মনে বললাম, আমার বাকি জীবনটাও কেঁদেই কেটে যাবে। কেউ বুঝবে না তবু, কেউ জানতে চাইবে না?
: পৃথিবীটা অপদার্থ দিয়ে ভরে গেছে!
নিউরনে আলাপনঃ পাঁচ
: কাল সারারাত ঘুম হতে চাইছিল না, শুধু ছটফট করেছি। আজ তোমার সাথে কখন কথা হবে এই ভেবে ভেবে ছিলাম অস্থির!
এরকম কেন হলো, আমার?
: প্রতীক্ষা ব্যাপারটি তাহলে বেশ থ্রিলিং মানতেই হবে।
: ইস, আমার যে কী হয়, তা যদি উনি বুঝতেন। উনার কবিতা করাই সার!
: তাহলে এখন সুখী?
: সুখই তো, আবার দুঃখও হয়; কিছুক্ষণ পরেই কথা ফুরোবে,
জন্ম
জন্ম
মুহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ
নারীর অস্রুত আতুরের গন্ধ
শরীরে লেগে আছে,
ভালবেসে তোর বুকে লেখা কবিতা
গান হয়ে দোতরায় আজো তেমনি কাঁদে,
বাধ ভাঙ্গা জোয়ার জলে
জীবন সাঁতরিয়ে ডাঙ্গায় উঠে চোখ মেলে
দেখে মানুষের মুখ ।
ভোরের আলোয় পদর্া তুলে
রৌদ্র উকি দেয়,
আলিঙ্গনে আকে তোর গভর্ে গল্প গাঁথা
সুখ হয়ে কপোলে আজো তেমনি হাসে,
নিউরনে আলাপনঃ চার
: একটা কথা বলবো?
: বল।
: কোন কিছু নিয়ে বেশি ভাবছো?
চুপ ক’রে আছ কেন?
: আচ্ছা, বলো তো, আমার চোখগুলা কি অসুন্দর?
তুমি ভাল ক’রে কখনো তাকিয়ে দেখেছো?
: দেখি তো শুধু তোমাকেই। তোমার মোলায়েম মুখখানা, মাঝে মাঝে হঠাৎ অস্থির হয়ে থাকা চোখ, কপালের ওপর দু’তিনটে চুল, গাল বেয়ে পড়া ঘাম।
: আজ আমার চোখকে খুনীর চোখ বলেছে এক বন্ধু …