প্রসঙ্গ : বিবর্তনবাদ

বিজ্ঞানের যে বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষ তো বটেই, অনেক শিক্ষিত মানুষের মধ্যে বিশাল ভুল ধারণা আছে এবং অনেকে বিষয় অজানা রয়েছে সেটি হচ্ছে বিবর্তনবাদ।নিজের ব্যক্তিগত আগ্রহে পড়াশোনা ও জিনোমিক ডাটা নিয়ে কাজ করার সুবাদে যেটুকু ধারণা আছে সেটি নিয়ে আলোচনা করবো এবং চেষ্টা করবো ভুল ধারণা ভাঙ্গানোর।
বিবর্তনবাদ শুধুই একটি থিওরিঃ
সম্ভবত সবচেয়ে বহুল প্রচলিত ভুল ধারণা এটি ।আমরা দৈনন্দিন জীবনে থিওরি দিয়ে যা বুঝাই আর বিজ্ঞান জগতে থিওরি বলতে যা বোঝায় দুটি মোটেও এক জিনিস না। ক্লাস এইট নাইনের বিজ্ঞান বইতে পর্যন্ত সায়েন্টিফিক থিওরি এবং কখন একটি হাইপোথেসিস থিওরির মর্যাদা পায় সেটি বিস্তারিতভাবে লেখা আছে।তারপরও ন্যাশনাল একাডেমি অফ সাইন্সের দেয়া সংজ্ঞাটি নীচে দিলাম।
“A scientific theory is an explanation of an aspect of the natural world that can be repeatedly tested and verified in accordance with the scientific method, using accepted protocols of observation, measurement, and evaluation of results. Where possible, theories are tested under controlled conditions in an experiment”
বিবর্তনবাদের সংজ্ঞায় আর গেলাম না। কারণ এটি কমবেশি সবারই জানা। তার চেয়ে আলোচনা করি কয়েকটি কমন মিথ নিয়ে, যেমন বানর থেকে মানুষ হলে এখনো বানর আছে কেন? মিসিং লিংক কোথায়? অল্প কয়েকটা মাত্র ফসিল পাওয়া গেছে। অনেক বিজ্ঞানীই এখন এটি মানেন না, ইত্যাদি, ইত্যাদি। এই লেখায় প্রত্যেকটি প্রশ্নের ধারাবাহিক উত্তর দেয়া থাকবে। এবং ডেফিনেশন নিয়ে আগ্রহীদের জন্য নীচের লিংকঃ
//www.talkorigins.org/faqs/evolution-fact.html?fbclid=IwAR3ZJB58dC0GgmZYYfumZfLVgiLUdZ-9xaimErURsZZaWJEa_m4oju2tsGw
ন্যাচারাল সিলেকশন বা প্রাকৃতিক নির্বাচন ঃ
প্রাকৃতিক নির্বাচন বিবর্তনের প্রধান চাবিকাঠি। প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য জীবদেহ প্রকৃতির সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্য আস্তে আস্তে খাপ খাইয়ে নেয়। এটিই হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচন । এটি খুবই ধীর প্রক্রিয়া। একটি খুব সহজ উদাহরণ দেই। ইদানীং যেমন মশার কয়েলে মশা মরে না। কারণ কি? মশার কয়েল থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য মশার জিনে পরিবর্তন ঘটেছে , এবং সেই জিন পরবর্তী প্রজন্মে চলে গিয়েছে। যেসব প্রাণী বন্ধুর প্রকৃতির সাথে খাপ খাওয়াতে পারেনি তারা আজ বিলুপ্ত। প্রাকৃতিক নির্বাচনকে ভুয়া প্রমাণ করতে একটি অদ্ভুত উদাহরণ দেয়া হয় প্রায়শয়ই , সমুদ্রের ঝড়ে বালি পাথর ঠুকাঠিকি করে আস্ত একটি প্লেন হয়ে যাওয়া সম্ভব? এখন আমি যদি পালটা প্রশ্ন করি, শুন্য থেকে আপনা আপনি প্লেন তৈরি হওয়া সম্ভব? উত্তর, না। আজ থেকে দুই হাজার বছর আগে কি বিদ্যুৎ ছিলো? কম্পিউটার ছিলো? সেলফোন ছিলো? না। মানুষ টিকে থাকার প্রয়োজনে আস্তে আস্তে সভ্য হয়েছে, নানা আবিষ্কার করেছে, আস্তে আস্তে সভ্যতার উন্নতি করেছে এবং সেটি খুব ধীরে ধীরে। যেমন আমরা এন্ড্রয়েড ব্যবহার করি সেটি একদিনে আসেনি। আস্তে আস্তে উন্নতি হয়েছে। প্রাকৃতিক নির্বাচনের ব্যাপারটাও ঠিক এরকম। র‍্যান্ডম না। সেই প্লেনের উদাহরণই যদি ধরি, এটাও প্রাকৃতিক নির্বাচনের উদাহারণ হিসেবে ব্যবহার করা যায় এবং এই প্রক্রিয়ার শুরু সেই প্রথম মানুষ আসার পর থেকে। আস্তে আস্তে উন্নত হতে হতে একসময় উড়ার জন্য প্লেন বানিয়েছে। সিম্পল। যদি আকাশ থেকে টুপ করে প্লেন পড়তো সেটা হতো অসম্ভব । প্রত্যেকটা জিনিসেরই কজ এন্ড ইফেক্ট রিলেশন আছে।
প্রজেক্ট স্টিভঃ
বিবর্তনবিরোধীরা প্রায় বিজ্ঞানীদের কাছে বিবর্তনের গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এবং সাধারণ মানুষ ভাবে বিবর্তন নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে এখনো প্রচুর বিতর্ক আছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে বিবর্তন সত্য নাকি মিথ্যা এটি নিয়ে জীববিজ্ঞানীদের মধ্যে কোন বিতর্ক নেই। বিতর্ক আছে “মেকানিজম” নিয়ে। কারণ বিবর্তন ঠিক কিভাবে কাজ করে এখনো বের করতে পারেনি। বের করতে পারলে প্রাণের রহস্য অনেকটাই উন্মোচিত হবে। বিবর্তনবাদকে ভুল প্রমাণ করার জন্য বিরোধীরা ৫০০+ গবেষক যাদের পিএইচডি আছে এবং যারা বিবর্তনবাদ নিয়ে সন্দিহান তাদের সাক্ষর নিয়েছিলো, এটা বোঝানোর জন্য যে অনেক বিজ্ঞানী বিবর্তন মানে না। তো গবেষকরা এটা গায়ে লাগাননি, কারণ জনপ্রিয়তা বা ভোটাভুটি দিয়ে বিজ্ঞান কাজ করেনা এবং এটা সাধারণ মানুষের জন্য মিসলিডিং।
কিন্ত ন্যাশনাল সেন্টার ফর এডুকেশন জাস্ট মজা করে শুধুমাত্র স্টিভ নামের গবেষকদের সাইন নিয়েছে। এখন পর্যন্ত সাইনের সংখ্যা ১৪৪০! লিংক নীচে দেয়া হলো। আসল সত্য হলো প্রায় নিরানব্বই শতাংশ বিজ্ঞানী বিবর্তনবাদ নিয়ে কোন সংশয় প্রকাশ করেন না।
//ncse.com/list-of-steves
মাইক্রোইভুলিউশন বনাম ম্যাক্রোইভুলিউশনঃ
এটি খুবই মজার একটা টপিক। যখন বিবর্তনবাদ প্রমাণ হলো, যখন এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স, তারপর ছোটছোট ইনসেক্ট যেমন মশা এর বিবর্তনের প্রমাণ দেখানো হলো তখন বিরোধীরা বলা শুরু করলো মাইক্রোএভুলিউশন হয় কিন্তু ম্যাক্রোইভুলিউশন পসিবল না।কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে এখনকার বিজ্ঞানীরা দুইটি পার্থক্য করতে চাননা। মাইক্রো সাধারণত স্পেসিস লেভেলে এবং মাইক্রো এক স্পেসিস থেকে আরেক স্পেসিস লেভেলে হয়। কিন্তু টাইম স্কেলটা ঠিক ডিফাইনড না। কারণ প্রক্রিয়াটা ঠিক এমন না যে এক স্পেসিস থেকে হঠাত করে আরেক স্পেসিসে জাম্প করে। এটি খুবই ধীর প্রক্রিয়া এবং ঠিক কখন স্পেসিস পরিবর্তন হয় এটিও ডিফাইনড না। কিন্তু মেকানিজমে কোন পার্থক্য নেই। সবচেয়ে চমৎকার এনালোজি হতে পারে গ্র্যাভিটি। কেউ কখনো বলে না মাইক্রো গ্রাভিটি ও ম্যাক্রো গ্রাভিটি। গ্রাভিটিও একরকম গ্রাভিটেশন।
Ernst Walter Mayr, বিংশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত বায়োলজিস্ট, গুগল করলেই পাবেন। তিনি বলেছেন,
“transspecific evolution is nothing but an extrapolation and magnification of the events that take place within populations and species…it is misleading to make a distinction between the causes of micro- and macroevolution”
সুত্রঃ Mayr, Ernst. (1988). Toward a New Philosophy of Biology: Observations of an Evolutionist. Harvard University Press. p. 499. ISBN 0-674-89666-1
আমি শুধু একটা উল্লেখ করলাম। এই লিংকে গেলে আরো ক্লিয়ার আইডিয়া পাবেন।
//www.talkorigins.org/faqs/macroevolution.html
কিভাবে গবেষণা করা হয়?ঃ
সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা অনেকটা এরকম, গুটিকয়েক ফসিল পাওয়া গেছে , কয়েকজন বিজ্ঞানী একসাথে চা খেতে খেতে মসিল নিয়ে আলোচনা করলো আর নাম দিলো homo habilis. বিষয়টা মোটেই এরকম না। UC Berkley, Harbard, Columbia, Oxford, Yale আরো অসংখ্য ল্যাবে অসংখ্য গবেষক নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অনেক সময় একটা সিংগেল ফসিলের ট্যাক্সোনমি নির্ধারণ করতে প্রায় দশ বারো বছর লাগে। যে পরিমাণ ফসিলের নামকরণ করা হয়েছে এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ফসিল ল্যাবে পড়ে আছে, কারণ কাজ করার মত সে পরিমাণ এক্সপার্ট নেই। আর এটি সম্ভবত একমাত্র ফিল্ড যেখানে সবচেইয়ে বেশি ডিসিপ্লিনের মানুষ একসাথে কাজ করে।
( জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার, ইকোলজিস্ট, পেলিয়েন্টোলজিস্ট, এনাটমিস্ট, বায়োস্ট্যাটিস্টিশিয়ান ইত্যাদি সাথে আরো কয়েকটি ডিসিপ্লিন)
এমনকি পরিসংখ্যানের জনক রোনাল্ড ফিশারও মুলত ছিলেন একজন বিবর্তন গবেষক,
আমরা যে ANOVA Table ব্যবহার করি, এটিরো উদ্ভাবন হয়েছিলো বিবর্তন নিয়ে কাজ করার জন্য।
কিভাবে ফসিলের বয়স নির্ণয় করে? ঃ
বয়স নির্ণয় করার বেশ কিছু নির্ভরযোগ্য মেথড আছে। দুঃখের বিষয় অনেকেই মেথডগুলোতে ভরসা করেন না।বিজ্ঞানীরা কিন্তু ক্রস-চেক, রি ইভালুয়েশন ছাড়া কিছু করেন না। কার্বন আইসোটোপ-১৪ এর হাফলাইফ দিয়ে বয়স বের করার প্রক্রিয়াটি বহুল প্রচলিত।আরো কিছু মেথড আছে যেমনঃ Thermo-luminescence,
Paleomagnetism, Biochronology, Molecular clock ইত্যাদি। দেখা যায় সব ডেটিং মেথডই খুব কাছাকাছি রেজাল্ট দেয়। সেখান থেকে বিজ্ঞানীরা বয়স নির্ধারণ করেন।
ফসিল নিয়ে যত ভুল ধারণাঃ
যারা আরিফ আজাদের বই ও জাকির নায়েকের লেকচার শুনেছেন তারা নিশ্চয়ই Piltdown man, ida , এবং Nebraska man এর কথা জানেন। তারা উভয়েই বলেছেন এটি বিবর্তনবাদীদের জোচ্চুরি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো মোটেও সেটি নয়।বরং বিবর্তন নিয়ে গবেষণা করা গবেষকরাই গবেষণা করে পিল্টডাউন ম্যান যে ভুয়া এটা বের করেছিলো। সেই ১৯১২ সালে Charles Dawson নামের এক আনাড়ি paleontologist, একটু বিখ্যাত হওয়ার আশায় মানুষ ও ওরাংওটাং এর কংকাল দিয়ে ফসিলের মতো বানিয়েছিলো। আর নেব্রাস্কা ম্যান এর ভুলটা প্রায় অনিচ্ছাকৃত । আরিফ আজাদ না হয় জাকির নায়েকের লেকচার শুনে লিখেছেন, তাই আরিফ আজাদের দোষ দিচ্ছি না। কিন্তু জাকির নায়েক এতো জ্ঞানী অথচ উনার কাছে Toumai, Lucy, Turkana boy, Taung Child, nutcracker man, yuanmou man, chellean man, Mojokerto child, Madam Buya, Java man, Peking man, Heidelberg man, Saldalha man, Boxgrove man, Tautavel man, Ceprano man, Swanscombe man, Galillee man, Altamura man, Rhodeshian man, Mungo man, Balangoda man, Yamashita cho man, Bichon man, La brea woman, Kennewick man, Tepexcan man, Loshbour man, Minnesota woman সহ আরো অসংখ্য ফসিলের খবর পৌঁছায়নি এটি আমি বিশ্বাস করিনা। মজার ব্যাপার উনার লেকচারে মানুষের অন্যান্য স্পেসিসের বিখ্যাত ফসিলগুলোর কথা উনি একবারও বলেননি। আর সাধারণ মানুষের এত সময় কোথায় পড়াশোনা করে দেখবে?
প্রমাণঃ
বিবর্তনবিরোধীদের মুখে একটি কথা প্রায়সময়ই শোনা যায় কোন প্রমাণ নেই, কোন প্রমাণ নেই। অথচ দিনের পর দিন অসংখ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। যারা সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞান জগতের খোঁজখবর রাখেন বা পড়াশোনা করেন তারা জানেন যে গবেষণায় কি কি বিস্ময়কর সাফল্য আসছে বর্তমান সময়ে। এইতো কয়েক বছর আগে ইন্দোনেশিয়ায় homo florensis এর ফসিল পাওয়া গেলো। কিংবা আফ্রিকায় homo naledi এর প্রায় ১৫ টা ফসিলের প্রায় ১৫৫০ স্পেসিমেন পাওয়া গেছে। যা কিন্ত বিবর্তন গবেষণায় এক অভূতপূর্ব সাফল্য। বিবর্তন বিরোধীরা বলেন কোন মিসিং লিংক নেই। আসলে টেকনিক্যালি মিসিং লিংক ডিফাইন করা যায়না। কারণ আগেই বলেছি, এক স্পেসিস থেকে আরেকটায় জাম্প করা যায়না। তবুও ট্রাঞ্জিশন এনিম্যালের কথা যদি বলতেই চান তাহলে বর্তমান সময়ে তিমি এবং বাদুড় জ্বলন্ত উদাহরণ। আরো বড় একটা প্রমাণ হলো এখনকার সময়ের ৯৯ পারসেন্ট স্পেসিসই জুরাসিক যুগে পাওয়া যায়না। এবং সেই সময়ের প্রায় সব প্রাণীই বিলুপ্ত। কোইন্সিডেন্স? আর তাছাড়া আমার নিজের পিসিতেই প্রায় ৬২টা ফসিলের ছবি আছে। সেপারেট এলবামে আপলোড করে লিংক এড করে দিলাম।
//www.facebook.com/m1367/media_set?set=a.10217992579039609&type=3
যারা মনে করেন মাইক্রোএভুলিউশনে প্রমাণ আছে কিন্তু ম্যাক্রোএভুলিউশনের প্রমাণ নেই তাদের জন্য একটা লিংক দিলাম। কষ্ট করে পড়ে দেখবেন।
//www.talkorigins.org/faqs/comdesc/
মানুষের বিবর্তনঃ
এখন আসি সবচেয়ে স্পর্শকাতর টপিকে। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা মানুষ এসেছে বানর থেকে। অথচ মজার ব্যাপার, ইভুলিউশন ট্রি তে বানর সবচেয়ে দূরবর্তী প্রাইমেট। আসলে এখনোও বিজ্ঞানীরা মানুষের পূর্বপুরুষ কে, সেটা ক্লিয়ারলি জানতে পারে নি। বিজ্ঞান যা জানেনা সেটি নিয়ে মিথ্যা বলেনা, বা অনুমাণ এ কথা বলে না। তবে যেটি জানা যায় সেটি হলো, homo Neanderthals এবং homo sapiens এর পূর্বপুরুষ একই। সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক ব্যাপার, আজ থেকে ঠিক তিন লক্ষ বছর পূর্বে আধুনিক মানুষ সহ মানুষের আরো ছয়টা স্পেসিস এই ধরণীর বুকে একসঙ্গে হেঁটে বেড়িয়েছে। তাহলে ডিরেক্ট এনচেস্টর না পাওয়া গেলেও বিজ্ঞানীরা কিভাবে মানুষের বিবর্তন নিয়ে শতভাগ নিশ্চিন্ত? কারণ তিন লাখ বছরেরও আরো পিছনে গেলে আধুনিক মানুষ অর্থাৎ homo sapiens এর কোন চিহ্ন পাওয়া যায়না। এখানে আরোও অনেকগুলো ফ্যাকটর আছে। যেমন খুব সহজ এবং চমৎকার উদাহরণ দেই? ধরুন, homo sapience এর জিনোম সিকুয়েন্সে একটা জিন বাঁকা অথবা ভাঙ্গা। সেই একই জিন homo neanderthal এর ঠিক একই অবস্থানে ভাংগা। এই সিমিলারিটির কারণ কি? কারণ হচ্ছে পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হওয়ার সময় সেই ট্রেইট টা রয়ে গেছে। দুইটি সম্পূর্ণ ভিন্ন স্পেসিসের জিন একই পজিশনে ভাংগা প্র্যাকটিকালি ইম্পসিবল। অনেকে ধারণা করে, আমাদের এনচেস্টর homo habilis কিংবা homo erectus. এখন এই বিষয়টি হাইপোথেসিস। কারণ যেহেতু প্রমাণ হয়নি তাই বিজ্ঞান এটিকে থিওরি দাবী করেনা। প্রমাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত করবেনা কখনো।
এখন কি কি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেছে আর কি কি পাওয়া যায়নি সেটি খুব ক্লিয়ারলি নীচের ওয়েবসাইটে দেয়া আছে। কষ্ট করে পড়বেন। আর কিছু যদি ভুল তথ্য দেয়া থাকে, ওদের ইমেইল দিবেন । ওরা হাসিমুখে ভুল সংশোধন করবে।
//humanorigins.si.edu/evidence/human-fossils/species?sort_by=title
নীচে সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য কিছু ফাইন্ডিংস দেয়া হলোঃ
//blogs.plos.org/scicomm/2018/12/11/top-6-human-evolution-discoveries-of-2018/
//www.nature.com/subjects/evolution
বিবর্তন গবেষণার ব্যবহার ও প্রয়োজনীয়তা ঃ
এখন আসি সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পার্টে। কোন জিনিসের উপকারিতা না থাকলে সেটি নিয়ে গবেষণার কোন মানে হয়না। আপনি যে জিনিসকে অবিশ্বাস করে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছেন সেই জিনিস মানব কল্যাণে অনেক অবদান রাখছে। যেমনঃ
১, আরটিফিশিয়াল সিলেকশনের মাধ্যমে সবল প্রজাতি উৎপন্ন। যাদের আমরা হাইব্রীড প্রাণী বলি।
২, মেডিসিন।
৩, বায়োইনফরমেটিকস: জীববিজ্ঞানের গতিপ্রকৃতি নির্ণয়ে বায়োইনফরমেটিকস একটি খুবই প্রয়োজনীয় ফিল্ড । কম্পিউটার সাইন্স, পরিসংখ্যান, গণিত, জেনেটিক্স সব একযোগে কাজ করে এই ফিল্ডে। বিবর্তন ছাড়া এই ফিল্ড বলতে গেলে পঙ্গু।
৪, কৃষি , ক্ষতিকর পোকামাকড়ের সাথে যুদ্ধ করতে পারে এমন প্রজাতি উৎপন্ন।
৫, তেজস্ক্রিয় ব্জ্র ডিকমপোজ করার জন্য ব্যাকটেরিয়া স্ট্রেইন ব্যবহার।
৬, জেনেটিক এলগরিদম নির্ণয়। অর্থাৎ একটি প্রজাতি কেমন হবে, তার সবলতা ও দুর্বলতা কি জানার জন্য জেনেটিক এলগরিদম জানা জরুরী। এখানেও চলে আসে বিবর্তন ।
এখন আসি পারসোনালি আমার কাছে সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট রিসার্চ। Center for evolution and Cancer Research লিখে গুগলে সার্চ দিন, আমার এক্সাইট্মেন্টের কারণ পেয়ে যাবেন। ক্যান্সার গবেষণার একটি কি ইনগ্রিডিয়েন্ট হচ্ছে বিবর্তন। আমি একটি রিসার্চ গ্রুপের কথা জানি যারা এই বিবর্তনের উপর ভিত্তি করে ক্যান্সার হওয়ার কারণ বের করার জন্য নিরলসভাবে গবেষণা করে যাচ্ছে। Adaptive Ontogenesis লিখে সার্চ দিন কিছু তথ্য পাবে। চিন্তা করুন, তারা যদি গবেষণায় সফল হয় তাহলে কি পরিমাণ বিপ্লব হবে? অথচ দুঃখের বিষয় এর পিছনে যে বিবর্তনের বড় অবদান সেটি কেউ কখনো জানবেনা, ঠিক যেমন জানেনা গুটি বসন্ত কিভাবে বিলুপ্ত হলো।
পরিশেষে আমি জানি আপনাদের মনে অনেক প্রশ্ন আছে। আপনাদের মনে কি কি প্রশ্ন আসতে পারে সেটি নীচের লিংকে অত্যন্ত চমৎকারভাবে দেয়া আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি জানি, অনেকেই পোস্ট পুরোটা না পড়েই হা হা রিএক্ট দিবেন, কেউ কেউ কিছু না পড়েই আবার আগের মতন বলবেন কোন প্রমাণ নেই, এটি জাস্ট একটি অনুমাণ। তাদের জন্য আমার কিছু বলার নেই ?
//www.talkorigins.org/indexcc/index.html
এখন কথা হচ্ছে অনেকেরই ভুল ধারণা যে বিবর্তন প্রমাণিত নয়। আসল সত্য হচ্ছে, মহাকর্ষ ও অভিকর্ষের মতই বিবর্তন প্রমাণিত। যেটি এখনো অজানা সেটি হচ্ছে, “প্রাণের প্রথম সূচনা” এবং “বিবর্তনের মেকানিজম” অর্থাৎ বিবর্তন কিভাবে কাজ করে। বিজ্ঞানীরা যেদিন মেকানিজমটা বের করতে পারবে সেদিন একটি বিশাল বিপ্লব ঘটে যাবে, আর সেই বিপ্লব ঘটানোর জন্যই হাজার হাজার গবেষক নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
শেষ করছি আরো দুটো ভিডিও দিয়ে। যাদের হাতে সময় খুব কম তাড়া নীচের ভিডিও দুইটি দেখতে পারেন। চমৎকারভাবে বর্ণনা করা আছে।
//www.youtube.com/watch?v=lIEoO5KdPvg
//www.youtube.com/watch?v=2GfKZlTRNjA
পরিশেষে, কেউ গঠনমূলক প্রশ্ন করলে অবশ্যই আমি উত্তর দিবো। এবং সাধ্যমতো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ ।

৬,৭৬৭ বার দেখা হয়েছে

৮ টি মন্তব্য : “প্রসঙ্গ : বিবর্তনবাদ”

  1. টিটো মোস্তাফিজ

    বড়লেখা তাই খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে পড়িনি। তবে ভালো লেগেছে। আমাদের দেশে শিক্ষকরা পড়ানোর সময় ধর্ম আর বিজ্ঞান কে আলাদা করে রাখতে পারেনা ।এসব বিষয় পড়ানোর সময় তারা বলে আমি বিশ্বাস করিনা কিন্তু পড়াতে হবে তাই পড়াচ্ছি।


    পুরাদস্তুর বাঙ্গাল

    জবাব দিন
  2. মিলন(৮৭-৯৩)

    খুবই অবাক হলাম মাত্র ১২৪৭ পড়েছে আর ৬ জন কমেন্ট করলো। আমি বিজ্ঞানের ছাত্র না । তবে আমি "বিবর্তনের পথ ধরে" বইটি পড়ে যতটুকু মুগ্ধ হয়েছিলাম তোমার লেখা পড়ে আরো মুগ্ধ হলাম। এতো সহজে অনেক গুছিয়ে বিষয়বস্তু তুলে ধরার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।