আমার একটা বাজে স্বভাব আছে। হুটহাট আমি কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যাই। ক্লাসে স্যার লেকচার দিচ্ছে কিন্তু আমি অন্য রাজ্যে। এরকম আরো অনেক সময়। এটা বোধ হয় ছোটবেলা থেকেই আমি ৮-১০ ঘন্টার জার্নি করতাম তার ফসল। এখনো ঢাকা শহরে প্রতিদিন ভালই জার্নি হয়। এই কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যাবার একটা বড় সুবিধা আছে। যে কোনো সময় যে কোনো গান শোনা যায়, যার সাথে ইচ্ছা কথা বলা যায়, ইচ্ছা মত আড্ডা দেয়া যায়, পড়ালেখা ও করা যায়। ইদানিং আমি যেটা করি সেটা হচ্ছে আমার অতীতে ঘুরে আসি। মিলিয়ে দেখি, অতীতের আমার সাথে বর্তমানের আমাকে। আর এটা করতে গিয়েই বুঝতে পারছি কতটা পরিবর্তন আমার মধ্যে হয়েছে বিগত কয়েক বছরে। এগুলোর মধ্যেই বেশ কিছু শেয়ার করার জন্যই আমার আজকের এই লেখা।
১. প্রথমেই আমার মায়ের সাথে আমার সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে কিছু লিখি। আগে আমি আমার আম্মুকে বেশ ভয় পেতাম। সারাক্ষণ একটা আতঙ্ক কাজ করত। এটা করলে আম্মু মারবে, ওটা করলে আম্মু বকবে। একটা উদাহরণ দেয়া দরকার। আমার বয়স যখন ৫ বছর, তখন আমরা কয়েক মাসের জন্য বেনাপোল ছিলাম। একদিন বিকেলে আম্মু আমাকে আর আমার ছোট ভাই কে তেল পানি দিয়ে পরিষ্কার জামা পরিয়ে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিল। কিন্তু শাসিয়ে দিল কাপড়ে কোনো ময়লা লাগলে খবর আছে। বর্ষার বিকেল। চারদিকে কাদাপানি। তারমধ্যে ছেলেরা ফুটবল খেলছে। তাদের সবার শরীরে কাদা লেগে আছে। আমাদের পরিষ্কার জামা কাপড় বোধ হয় তাদের পছন্দ হলো না। ওরা ফুটবল দিয়ে আমাদের দিকে মারলো। আমি সরে গেলেও আমার ভাইয়ের গায়ে বল লাগলো এবং যথারীতি ওর কাপড় নোংরা হলো। আমি ভয় পেয়ে গেলাম যে আম্মু আমাকে মারবে। আমার এই ভয় ক্রমেই ক্রোধে পরিনত হলো। আর আমি সেখান থেকে একটা পাথর নিয়ে ওদের কোনো একজনের মাথা ফাটিয়ে দিলাম। আম্মুকে এত ভয় পেতাম যে, মাঝে মাঝে আম্মুকে শত্রু ও মনে হত। সেই অতীতের আমি এখন বড় হয়ে গেছি। আম্মু এখন উল্টো মাঝে মাঝে আমাকে ভয় পায়। আজ সকালে ও বাজারে যেতে বলাতে আমি বিরক্ত হয়েছি। একটু পর আম্মু আমার ছোট ভাইকে পাঠিয়ে দিয়েছে।
২.আগে অনেক নামাজ পড়তাম। শুধু তাই না আজানের অনেক আগেই বাসা থেকে বের হয়ে যেতাম। আর বন্ধু বান্ধব কে ডাকতাম নামাজ পড়ার জন্য। যদিও এটা আমার কলেজে ভর্তি হবার আগের কথা। বাসায় সবাই আমার এই অতিউত্সাহে কিছুটা বোধ হয় বিরক্ত ছিল। আর এখন নামাজ বলতে গেলে পড়া হয় না। জুম্মার নামাজ যাও পড়ি প্রতিবারই তাড়াতাড়ি চলে আসার জন্য বকা খেতে ভুলি না।
৩. আগে প্রচুর গল্পের বই পড়তাম। একবার পেলে আর কোনো কিছুর হুশ থাকত না। কলেজে যেয়ে তো এই রোগ আরো বেড়ে গেল। আমি সচরাচর মিথ্যা বলি না কিন্তু গল্পের বইয়ের জন্য কখনো মিথ্যা বলতে দ্বিধা করিনি। সেই আমি এখন গল্পের বই পড়ার সময় পাই না। এর কারণ অবশ্য আমি একবার বইয়ের ভিতর ঢুকে পড়লে শেষ না করে উঠতে পারি না। এখন ঢাকায় এসে আর এত সময় পাই না যে দিনরাত গল্পের বই নিয়ে পড়ে থাকব। আর তাছাড়া এখন আমার জীবনে আরো অনেক কিছু যোগ হয়েছে। ফেসবুক , ব্লগ , মোবাইলে কথা বলা , অফুরন্ত স্বাধীনতা (নাকি ব্যস্ততার হাতে বন্দী)। এসবের ভেতর থেকে সুনীল কিংবা শীর্ষেন্দুর উপন্যাস পরবার সময় কোথায়?
আরো অনেক পরিবর্তন আছে। বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজনদের প্রতি আচরণ থেকে শুরু করে আরো অনেক কিছু।সেগুলো অন্য কোনদিন বলব। কিন্তু যেটা বুঝতে পারছি, সেটা হলো, আমি আবার আমার আম্মুকে ভয় পেতে চাই, নামাজ পড়তে চাই, দিনের পর দিন গল্পের বই পরে কাটিয়ে দিতে চাই।
অ.ট.:ছোট হয়ে গেছে বোধ হয়। কী করব? আমি কথা বেশি বলি , কিন্তু লিখতে পারিনা । 🙁
আমরা সবাই বোধহয় অতীতচারী হতে চাই, কিন্তু সত্যি সত্যি সেটা আর হয়ে ওঠে না। দিন যাবে, ফেলে আসা সময়ের জন্য বুকের মধ্যে হু হু করবে কিন্তু ফিরতে পারব না। তোমার লেখাটা পড়তে ভাল লেগেছে রায়েদ।
......এত রাইতে লেখা পোস্ট হইলে পরথম হমু ক্যামনে ??? x-(
ধন্যবাদ ভাইয়া
......লিখতে পারস না ক্যাডা কইল? ভাল লিখছস তো। :clap: :thumbup:
......আর তুই যে মাথা ফাটানো টাইপ, এইটা অবশ্য তোরে দেখলেই বুঝা যায়। :grr:
আরো লিখতে চাইসিলাম। পারলাম না তো। 🙁
:boss: সেই যে আমার সোনার খাঁচার দিনগুলো.........।
এইডা কোথা থেকে আইলো। 😕 (সম্পাদিত)
......আমিও চিন্তা করতেছিলাম, আচানক এইডা লেখলি কি বুইঝা। :))
:clap: (সম্পাদিত)
তাই বলে মাথা ফাটায়া দিসিলি? 😮
তুই তো ভাই মাস্তান আসিলি 😐
সবই সময়ের ব্যাপার রে ভাই। আরও কত পরিবর্তন হইব সামনে শুধু দেখতে থাক। এক সময় দেখবি অবাক হওয়াও ভুইলা গেছস। তবে ভাই নামাযটা ধরে ফেল। এইটা খুব বাজে একটা পরিবর্তন হইছে।
ঐ
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
কল্পনার রাজ্যে না ঘুমের রাজ্যে?