৫ই জুন, ২০০৮
আজ সারাদিন, সকাল থেকে বসে আছি। মাথায় অজস্র চিন্তা চলছে। সব ঠেলে দিয়ে এখন লিখতে শুরু করলাম।
কৈশোর!! গতকাল থেকে দারুন স্মৃতিকাতর হয়ে আছি। পুরোনো স্বপ্ন আর জীবনটা বড় বেশি জ্বালাচ্ছে। ভুলে থাকার জন্য ক্রমশ হা হা করে হাসছি, ছুঁড়ে ফেলতে চাচ্ছি ভাবনাগুলো। আজ সকালে হুট করে একটা মেসেজ পেয়েছি:
“যতদূরে গেলে দূরে যাওয়া হয়, তার চেয়ে কত দূরে তুমি?… কেমন আছো বেকুব?”
মাথায় কিছুক্ষণ পরে যখন চিন্তাগুলো চলতে শুরু করলো, তার একটু পরে বুঝতে পারলাম কে মেসেজটা পাঠিয়েছে!!
****
শুরু থেকে শুরু করি। আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, আদমজী ক্যান্ট পাবলিক-এ। বছরের মাঝখানে বাবার পোস্টিং হয়ে গেল বগুড়ায়। আমার মা একটা স্কুলে পড়ান এজন্য ঠিক হলো মা ঢাকায় থাকবে বোনকে নিয়ে নানার বাসায়। আর আমার গতি হলো বাবার সাথে, বগুড়ায়। ছোটবেলায় যারা এরকম স্কুল বদলেছে তারা জানে ব্যাপারটা কত বিরক্তিকর। কিন্তু আমাকে তখনও মতামত প্রকাশের অধিকার দেয়া হয় নাই। আর আমি একটু মন খারাপ করেছিলাম কিন্তু মূলত খুশি হয়েছিলাম। কারণ আদমজীতে স্যাররা ভীষণ মারত! আমি তখন একটু একটু ফাঁকি মারা ব্যাপারটা শিখছি, প্রায়ই মার খেতে হত। আমি চিন্তা করলাম বগুড়া তো আর ঢাকা না, ঐখানে লোকজন নিশ্চয়ই অনেক ভালো, মারামারি করে না। ফ্ল্যাটে পৌছেই আমার জায়গাটা পছন্দ হলো। মা আর বোনের জন্য আসার পথে বেশ মন খারাপ ছিল। কিন্তু এক মন খারাপ আর কতক্ষণ ধরে রাখা যায়। বিকালে ঘুরতে বের হলাম। বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট-টা তখন বেশ ছিমছাম ছিল। রাস্তাগুলো একদম সোজা, একটু পরপর চাররাস্তার মোড়। গাড়ি যায় পাঁচ মিনিটে হয়ত একটা সেজন্য আবার একজন এম.পি. মোড়ের আইল্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকে সারাদিন। আমি তো বের হয়ে দেখি একটা পার্ক, সাথে খেলার মাঠ। আমাকে আর পায় কে!
পরদিন আমাকে নিয়ে ক্যান্ট পাবলিকে ভর্তি করে দিল। স্কুলটা আদমজীর তুলনায় অর্ধেক। আর বাসার অনেক কাছে, হেঁটে যেতে মাত্র পাঁচ-ছয় মিনিট লাগে! এরকম তো আগে ঢাকায় জীবনেও দেখি নাই। 😉 আমার বেশ মজাই লাগলো। ক্লাসে গেলাম এক বেয়ারার সাথে। ঐখানে আরেক মজা। একপাশে দুই লাইন মেয়ে! আদমজী পুরা পোলাদের স্কুল। আমার তখন মনে হচ্ছে আমার বাপে আমারে এ কোথায় এনে ফেলল X( !!! এমনকি ক্লাস টিচারটাও মহিলা! আমি তো মহা বিরক্ত এবং আশংকিত। যা হোক একদম শেষ বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। দুয়েকদিন ক্লাস করেই কয়েকটা মজার জিনিশ খেয়াল করলাম। আমাকে নতুন ছেলে বলে স্যারম্যাডাম-রা তখন একটু ছাড় দিচ্ছে। আমি ক্লাসের শেষ মাথায় একা একা বসি, কারও সাথে তেমন খাতির ও হয় নাই। বসে বসে কিছু জিনিশ চোখে পড়ল। এখানে টিফিন টাইমে ছেলেগুলা ঢাকার মত বান্দর হয়ে যায় না ( যেটা আমি প্রথম দিনেই ধাক্কা খেয়ে বুঝলাম! আমি এক ছেলেকে টিফিনে জিজ্ঞেস করলাম, চলো বোম্বাস্টিং খেলি। পোলা আমার দিকে এমন করে তাকাল!! ) বাইরে খেলা ধূলা যা হয় খুবই বিচ্ছিন্ন। মাঝখানে মেয়েদের দল হেঁটে গেলে কি আর খেলায় মনোযোগী হওয়া যায়? 😉 একটু বড় ক্লাসের ছেলেগুলাও বেশ পরিপাটি, আদমজীর সব বিগ ব্রাদাররা ছিল গুণ্ডাপাণ্ডা টাইপ। এটা মনে হয় কো-এড আর অলবয়েজ স্কুলের পার্থক্য।
যা হোক। ২য় টার্মের ফাইনাল হয়ে গেল এর মধ্যে। মোটামুটি করলাম। কারণ বাসায় আমাকে শাসন করার কেউ নাই। বাবা দুপুরে অফিস থেকে আসে আড়াইটার দিকে। আমি একটার সময় ফিরে বসি টিভি নিয়ে। জীবনে প্রথম ডিশ নামক বস্তুর দেখা পেলাম। ফেভারিট চ্যানেল ছিল এটিএন, তখন এটা হিন্দি গানের চ্যানেল ছিল। সেই “তু চিজ বাড়ি হ্যায় মাস্ত্ মাস্ত্”- কে কি ভোলা যায়! আহা!! 😀 বাবার সাথে দুপুরে খেয়ে ঘুমের বদলে আমি বের হতাম বাইরে। পাড়ায় ততদিনে বেশ ক’জন “দোস্ত” হয়ে গেছে। অনেক ঝুলাঝুলি করে আমি একটা সাইকেল বাগিয়েছি নতুন। সেটা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় এক মোড় থেকে আরেক মোড় পর্যন্ত রেস্। এই করতে করতে দূর্দান্ত রোদটা কমে আসত, আমরা পার্কে গিয়ে একটু জিরিয়ে আবার সাইকেল নিয়ে বের হতাম।
সমস্যা হলো পরীক্ষার পরে। আমার মাতা বগুড়ায় আসলেন বোনকে নিয়ে। এসেই তার মনে হলো ছেলে পুরা বান্দর হয়ে গেছে, সাইকেল আছে তাই সাইকেল চালায় নয়ত গাছে গাছেই ঝুলত! যা হোক , ৩য় পর্বের ক্লাস শুরু হল। আর সেই সাথে শুরু হল এক বিব্রতকর অনুভূতি নিয়ে বাকিটা জীবন পথ চলা।
(চলবে)
বগুড়া...... খালেদা... জিয়া... 😀
ওহ্!! ঐভাবে ভাবি নাই তখন! পিচ্চি ছিলাম তো! 🙂
নাহ এইডা কি ঠিক হইল...আমরাও দেখপো... 😛 😛 😛 😛
মজা পাব্বো... :awesome: :awesome: :awesome: :awesome:
নজর'কে হিফাজত করো হে রেজওয়ান! 😉
ঐ দুই লাইন মেয়েদের দিকে বড়ো ভয়ে ভয়ে তাকাইতাম ! :shy: :shy:
😕 😕 😕 😕 😕 😕
কই কিছু দেখি না তো...
হে হে হে! সোফা টোফা দেহি এক্কেরে রেডি! নাহ্! পুলাপাইন বড়ো হইয়া গেচে গা! 😕
হুম্, পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব... :no:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
মনে পড়ে যায় আমার কৈশোর...আহা!!! :dreamy:
আহা!!! :dreamy:আহা!!! :dreamy:আহা!!! :dreamy:
তুই কি রে ...
এরম কন্সিস্টেন্সি ধরে রাখা লেখক আমি খুব কম দেখছি।
প্রতিটা লেখা অসাধারণ হওয়া ঠিক না।
একটা হইলেও সাধারণ টাইপ পোষ্টের দাবী জানাচ্ছি।
আর তোরে বস মানলাম।
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
কী যে বলেন!! বড়োই শরমিন্দা হই! :shy: :shy:
এরপরের থেকে অতি-সাধারন পোস্ট দিমুনে, হা হা হা! 😉
দিলা তো শেষ লাইনে একটু গুড় লাগাইয়া x-( । বিব্রতকর ঘটনাটা কি সেটা জানার জন্য কতদিন বসাইয়া রাখবা ভাই 🙁 ?
গুড় কই লাগছে! হায় হায়! 😮 😮
বেশিদিন অপেক্ষা নাই। আজকে রাইতেই পরের পর্ব দিতে পারবো মনে হয়! 😀 😀
অনেক ধন্যবাদ রহমান ভাই!
ওই ...লা, মেসেজ কেডায় দিল কইলি না?
এক্কেবারে হিট টিভি সিরিজের মতো কইরা ফেলছে, মূলা ঝুলায়া রাখসে সামনে। x-(
পরের কিস্তি... জলদি। 😡 😡 😡
বকা দিস কেন দোস্ত! দিতেছি পরেরটা। আরেকটু সবুর কর! 🙂
এইতো ফালাইছে বাটে।
বাকিটা কইরে বাপ 😡 😡
তাত্তারি তাত্তারি :hatsoff: :hatsoff:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
খুব ভাল লাগলো । পরের কিস্তির অপেক্ষায় । :hatsoff:
ভাই পরের পর্বের অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকলাম। ভাই বেশি অপেক্ষায় রাইখেন না।
আন্দালিব ভাই, আমিও পড়ছিলাম আদমজীতে কিছুদিন। ভাল লাগত কোন স্যার না আসলে দরখাস্ত দিলেই গেমস পিরিয়ড। :grr: :grr:
সামাজিক বিজ্ঞানের এক স্যার ছিলেন, হালকা-পাতলা গড়নের। প্রতি ক্লাসে পড়া ধরতেন, না পারলে জোড়া স্কেলের বাড়ি। 😛
হ্যাঁ, ঐ স্যারের মাইর আমিও খাইছি, মনে পড়ে যতদূর! 🙁 🙁
ভাই হিন্দী সিরিয়াল পাইছেন।বাকি টুকু তারাতারি লেখেন আর তর সয় না।
:thumbup:
ওয়াও!
এই ধরণের লেখা আমার বরাবরই ভাল লাগে। মানে মাথার উপর দিয়ে যায়না আরকি। 😀
অধীর আগ্রহে পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
আন্দালিব,
আদ্ভুৎ সুন্দর তোমার লেখা টেনে নেয়ার ধরনটা...।
প্রচন্ড সাসপেন্সে রাখলাতো মিয়া...
দেশে কিন্তু হার্টের রোগীর সংখ্যা অনেক বেশী... আর বাড়াইওনা...
তাড়াতাড়ি পরের কিস্তি ঢাইলা ফালাও...
হ, আহসান ঠিক কইছে। আমি আবার হার্টের রুগি!! জলদি পরের কিস্তি ছাড়ো মিয়া। হাসপাতালে অহন এডমিশন নিতে পারুম না!!
খুবই ভালো লাগছে আন্দালিব। :thumbup:
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
হায় হায়! এ দেখি সিরিকাস অবস্থা!! আসলেই তো সবার হৃদযন্ত্রের সমস্যা! দেখি আমিও তাড়াতাড়ি পরের কাহিনী দিয়ে দিব।
সিরিজ লেখা ভ্যান করতে হবে। 😡 😡
ভালো লেখ বইলা কি পাঠকদের এই ভাবে মূলা ঝুলাইয়া বসাইয়া রাখবা নাকি? জলদি পরের পর্ব ছাড়ো। :thumbup: :thumbup: :thumbup:
বস্! দিয়ে দিলাম পরেরটা। কেমন হইলো কে জানে!
আমার প্রথম স্কুল বগুড়া ক্যান্ট পাবলিক।
আর চতুর্থ স্কুল আদমজী 😀 😀 ।
এই কমেন্টটা সকালেই অফিসে বসে করতে চেষ্টা করছিলাম কিন্তু পোস্ট হয় নাই।
ভাইরে সাসপেন্স বড় ডেঞ্জামাইস জিনিস....... 😕 😕 ।
Life is Mad.
আহারে কি দিন ছিল।
ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত পড়ছি কো-এডুকেশনে। কত বান্ধবী এল গেল, নাম মনে নাই, কিন্তু ওই হাফ প্যান্ট পড়া বান্ধবীগুলার একটারও নাম ভুলি নাই।
নষ্টালজিক করে দিলা তুমি।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না