আমার অনেক বদ অভ্যাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় বদ অভ্যাস হচ্ছে পড়তে বসলেই ঘুমিয়ে যাওয়া। যখনই পড়তে বসি ঘুমে আমার দু চোখ জড়িয়ে আসে আর আমি আমার স্বপ্নের রাজ্যে বিচরণ করতে থাকি। প্রেপের সময় যখন কোনো ভাইয়া গল্প করতে দিতেন না কিংবা কোনো স্যার হইত একদিন প্রচুর জ্বালাচ্ছেন আমি তখন ঘুম। যতই পানিশমেন্ট দিক কিছুতেই কিছু হয় না। ঘুমের চোটে কত যে উল্টা পাল্টা কাজ করেছি তার ইয়ত্তা নেই। একদিন থার্ড প্রেপে পানিশমেন্ট দিতে দিতে বিরক্ত সৌরভ ভাই আমাকে বললেন ঘুমাতে। তার আর কি দোষ? এক ছেলেকে যদি ৫০ মিনিটের প্রেপে ঘুমানোর জন্য ৫ বার পাঙ্গানোর পরেও সে আবার ঘুমায় তাহলে কার কি করার আছে?
আমার এই ঘুমপ্রীতির কথা স্যারদের ও অজানা ছিল না। কলেজ এ আসার কয়েকদিনের মধ্যেই স্যার এবং ম্যাডামরা আমার ঘুমপ্রীতি সম্পর্কে অবহিত হতেন। এমনকি যে শামসুল আলম স্যার কখনো আমাকে ঘুমাতে দেখেননি তিনিও আমাকে ঘুম নিয়ে খোটা দেন।
কলেজ থেকে চলে আসার সময় আমার ডায়রির পাতায় আমার বন্ধুরা সবচেয়ে বেশি যে শব্দটি ব্যবহার করেছে সেই শব্দটি বোধ হয় ঘুম। আমাদের সোবহানির অন্যতম বড় আফসোস সে কখনো আমাকে ঘুমাতে দেখেনি। এটা অবশ্য সম্পূর্ণ ওর দোষ। ও কখনই আমার ফর্মে কিংবা আমার হাউসে আসেনি। আমিতো আর ওকে দেখানোর জন্য ওর ফর্ম কিংবা হাউসে যেয়ে ঘুমাতে পারিনা। তাছাড়া ঘুম জিনিসটা আমার কখনই পছন্দ না। যতক্ষণ ঘুমাবো ততটুকু সময় তো জীবন থেকে হারিয়ে গেল, তাই না? কিন্তু পড়তে বসলেই আমার আর ভালো লাগে না। ভাবনার রাজ্য থেকে ধীরে ধীরে কল্পনার রাজ্যে পাড়ি দেই।
আমার এই ঘুমপ্রীতি সেই ছোটবেলা থেকেই। আম্মু খুব মারত। ঘুমিয়ে পরার জন্য নয়। বই পড়তে পড়তে বইকেই বালিশ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। আমার আম্মুর সাফ কথা ঘুম ধরলে বিছানায় যাও, বইয়ের উপর ঘুমানোর কি দরকার? কিন্তু আমিও নাছোরবান্দা। আমি ঘুম থেকে উঠে আবার পড়তে বসতাম। একটু পর আবার যেই কি সেই। বই আমার বালিশ হয়ে যেত। আবার আম্ম্মুর ঝাড়ি।
এরকমই একদিনের ঘটনা। একদিন রাতে পড়তেসি। খুব মন দিয়ে পড়ার ফলে একটু পরেই ঘুমের রাজ্যে বসবাস। ঐদিন রাত ১০টার সময় পড়তে বসছিলাম। তাই আম্মু এমনিতেই রেগে ছিল। তার উপর যখন দেখল আমি বইয়ের উপর মাথা রেখে দিব্বি ঘুম দিয়েছি সপাত সপাত করে আমার পিঠে বেতের বাড়ি পড়ল। ধড়ফড় করে ঘুম থেকে উঠে আমি আবার পড়তে বসি আর আম্মু আমাকে বকতে থাকে। আমাকে বলল, আমি যেন ঘুমাতে যাই। কিন্তু আমিও গো ধরে থাকলাম। আমি পড়ব। আমাকে সাবধান করে আম্মু চলে গেল আর আমি মনে মনে ইচ্ছা মত কথা শুনালাম। আরে, আমিতো পড়তেই চাই। ঘুম আসলে আমার কি দোষ?
কিন্তু একটু পর আবার। ৫ মিনিট পর আম্মু এসে আমাকে টেবিলে বইয়ের উপর শয়নরত পাওয়ায় তার ধৈর্য্যের বাধ ভেঙ্গে যায়। আর আমাকে ইচ্ছামত পেটাতে থাকে। তারপর বিছানায় পাঠায়।
বিছানায় মশারির ভিতর তখন আমি রাগে অন্ধ হয়ে আছি। আমার চোখে আর ঘুম আসেনা। সারাক্ষণ আম্মুকে শাপশাপান্ত করে যাচ্ছি। এমন মাতো আর কারো মনে হয় নাই। একটু না হয় ঘুমাইছি, এজন্য এত মারতে হবে? একটু একটু করে সময় বয়ে চলে কিন্তু যেই ঘুমের জন্য এত মার খেলাম সেই ঘুম আর আসেনা। আম্মুর উপর রাগ আরো বাড়তে থাকে। হঠাৎ করেই বেডরুমের দরজা খোলার আওয়াজ পাই। সাথে সাথে সব সাহস কোথায় চলে যায়। অন্ধকার ঘরে মরার মত চোখ খুলে ঘুমের ভান করে পরে থাকি। আম্মু বের হয়েছে। ডাইনিং রুমের লাইটটা জ্বালানোর সাথে সাথে আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। কি জ্বালা মনে মনে কি বলসি এতক্ষণ সব শুনে ফেলসে নাকি? মায়েদের তো আবার অনেক ক্ষমতা। অন্তত আন্দাজ হইত করতে পারছে তাই চেক করতে আসছে ঘুমাইছি কিনা? আমি চোখ বন্ধ থাকা অবস্থাতেও আমার রুমে আম্মুর অস্তিত্ব টের পাই। আস্তে আস্তে আমি সেই অস্তিত্বকে আমার বিছানার পাশে অনুভব করি, তারপর মশারির ভিতরে, এরপর আমার শরীরে বিশেষ করে সেইসব অংশে যেখানে একটু আগে বেত্রাঘাত পরেছে। আমি মরার মত পরে থাকি। একটু পর মনে হলো আমার শরীরে কোথায় যেন এক ফোটা পানি পড়ল। এরপর একটু ডুকরে কেঁদে ওঠার শব্দ পাই। তারপর শুনি আম্মু আস্তে আস্তে বিলাপ করছে আর আমার সারা শরীরে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমি হতভম্বের মত পরে থাকি আর প্রার্থনা করতে থাকি আম্মু তাড়াতাড়ি চলে যাক। আমার চোখ দিয়ে যে অশ্রু বের হয়ে আসছে তা আমি আমার আম্মুর সামনে প্রকাশ করতে চাই না।
akai bole MAA.jer sathe onno karo tulona hoy na 🙂
2nd....
চলো বহুদুর.........
🙂
চোখে পানি চলে আসার মত একটা লেখা।
বহুদিন পরে মনে হল প্রিয়তে যোগ করার মত একটা লেখা পেলাম।
তোমার লেখা খুব সাবলিল। তবে কিছু বানান ভুল আছে। ঠিক করে নিলে লেখাটা ১০০% নিখুঁত হবে।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
ভাইয়া লজ্জা দিয়েন না। 🙂
প্রশংসার জন্য ধন্যবাদ।
ছিঃ ছিঃ রায়েদ তোর এমন বানান ভুল হওয়া শুরু হইল কবে?
তর কাছ থেকে আইসা শিক্ষা নিমু নে
:boss: আপনি কি লিক্সেন......।।আমি ত পুরাই মুঘদ হয়ে গেলাম.........।।পুরাই মুঘধ...............। আসাধারন............।।আতুলনিও......।আমি ভাশাই প্রকাশ করতে পারতেসিনা র............
তুই নবীর কাছ থেকে কিছু শিক্ষা নে
অসাধারণ!
হৃদয় ছুঁয়ে গেলো...
ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপনার হৃদয় ছুঁতে পেরে ভালো লাগলো।
খুব ভাল লেগেছে লিখা।মা রা সবসময় এমন হয়।
তা আর বলতে।
রায়েদ, খুউউউব খুউউব ভালো ছিল।
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
আপনার প্রশংসা আমার মত দুর্বল লেখকদের শক্তি যোগায়।
রায়েদ,সিসিবিতে "অচো"-গিরি করা নিষেধ x-(
ভাইয়া আমিতো নিষ্পাপ মনে বলছি। আপনি আমারে এইটা কোন অপরাধে অপরাধী করলেন?
খুবই ইমোশনাল লেখা :thumbup: ক্যাপশনেই দেখি পুরা গল্প :clap:
"Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
- A Concerto Is a Conversation
তোরতো এখনো নভিসেস ই হলো নারে। ১ম ব্লগ কবে দিবি? অনেকদিনতো হলো, কিসু ১ টা লেখ।
লেখা পরার জন্য ধন্যকে বাদ।
:hatsoff:
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
:salute:
:clap:
অনেক দিন পর একটা লেখা প্রিয়তে যোগ করলাম।
অঃটঃ হালা মাদ্রিদ
অন টপিক বুঝছি কিন্তু অফ টপিকটা বুঝলাম না।
আমার লেখা প্রিয়তে গেছে দেইখা ইমোশনাল হয়ে গেলাম। মায়ের কি জাদু যে লেখক দেয়াল পত্রিকার জন্য কোনো লেখা আজ পর্যন্ত দিতে পারেনি তার লেখাও প্রিয়তে যায়।
......রায়েদ,
তুই এই রকম ভয়ংকর লেখক হয়ে গেলি কবে ???
আমার মত রোবট টাইপ একজন মানুষ এর চোখেও প্রায় পানি চলে আসার উপক্রম ।।।
অদ্ভুত ভালো লাগছে রে, :just: সিরামমমমম ।।।
......রায়েদ,
তুই এই রকম ভয়ংকর লেখক হয়ে গেলি কবে ???
আমার মত রোবট টাইপ একজন মানুষ এর চোখেও প্রায় পানি চলে আসার উপক্রম ।।।
অদ্ভুত ভালো লাগছে রে, :just: সিরামমমমম ।।।
আপনি রোবট হইলে আমরা কি? অতীত আমি ভুলি নাই কত কষ্ট আপনি করসেন। এই অধম জুনিয়রের জন্য। :boss: :boss:
ঘাপলা নেট......কমেন্ট দুইবার গেল কেন ??? ~x(
😀
x-( হাসছ কেন ??? x-(
🙁 আর কয়দিন পর ১ বচ্ছরের জন্য পত্রপাঠ বাসা হইতে বিদায় আর তুই আমারে এইরকম লেখা পড়াইলি? 🙁 মন খারাপ হয়া গেলো লেখাটা পইড়া
আমার লেখা এক্ষণে পূর্ণতা লাভ করলো।
রায়েদ, লেখা পইড়া আমার চোখে পানি চইলা আসছে ভাই।
:salute: :salute:
কেমন আছেন ভাইয়া? লেখা পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভাল আছি। তুমি কেমন আছো?
এইতো ভাইয়া আল্লাহই রাখছে।
ভালো লাগলো, রায়েদ।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।
রায়েদ দোস্ত খুবই ভালো লিখছিস... তোর ঘুম প্রীতির কথা আবার মনে পরে গেল... বিশেষ করে প্রেপ টাইমে রাব্বির সাথে তোর ঝগড়ার কথা তো ভুলার মতন ই না ... 😉 😉 ...
আর মনে আছে?? তুই ঘুমাচ্ছিলি আর রাব্বি পেছন থেকে তোর কান ধরে টেনে তুলল ... তুই কোনো স্যার ভেবে সেভাবেই দাড়িয়ে দাড়িয়ে ঘুমানো শুরু করলি!!!
যাই হোক তোর ঘুম আমরা অনেক এনজয় করতাম...চালিয়ে যা তোর ঘুম...
ওই রাব্বির সাথে আমার কোনো ঝগড়া হয়নি। আমি ঝাড়ছি, আর ও খালি শুনছে। তাইলে ঝগড়া হইলো কেমনে? 😀
আর আমি মোটেও অন্য স্যার মনে করে ঘুমায়নি। এর পরেইতো ঝাড়িটা খেল।
এখন ক্লাস ছাড়া আর তেমন ঘুমাইতে পারিনা। স্যারেরা খুব ভালো। দেখলেও কিচ্ছুই কয় না।
রায়েদ ভাই....আফনে তো ফুরাই বস লেখক.... :hatsoff:
তুই কোথা থেকে আসলি রে নৈম্মা
ওয়াহ ওয়াহ :boss: জ়োশ লেখা ভাই আমার তো খারাপ লাগতেসে পইরা
ধন্যবাদ
রায়েদ তুই নিশ্চিত লেখাটা ঘুমাইতে ঘুমাইতে লিখসিস 😀 :(( :boss:
:thumbup:
আর ৫ টা হলেই হাফসেঞ্চুরী হয়ে যেত
তোর লেখাটা অসাধারণ। আর মা তো এমনই হয় রে।
:thumbup: :thumbup:
নিজের লেখায় নিজে ৫০ করে ফেলি 😀 😀
......অভিনন্দন। 🙂
মা- মা -মা -আমার মা -েতামার মা -সবার মা -এক রকম।মা েতা এরকম হবে।েতামার েলখা আমার প্রাণ ছঁুেয় েগল।আমার মা নাই েতা? বুেকর িভতর েয ব্যাথা িচনিচন
আপনার সত্য ঘটনা খুব ভাল লেগেছে। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
পুরনো লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। 🙂
আপনার মন্তব্যের সুবাদে নিজের লেখা নিজেরই আরেকবার পড়া হয়ে গেল। 😀 😀