ভালো গান শুনলে কাঁদি।
ভালো কবিতা শুনলে কাঁদি।
মানুষের দুঃখে কাঁদি।
মা মারা গেছে, চোখে পানি আসছে না।
আমার মনে পড়ে মায়ের দুঃখে কেদেছি, মায়ের চোখে পানি দেখে কেদেছি।
মার ক্যান্সার যখন ধরা পড়লো ২০০৫ এ সেই খবর ফোনে পেয়ে কেদেছি।
২০০৯ এ আব্বা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লো। বাচে কি মরে এই অবস্থা।
গতকাল হুমায়ূন কবির সাহেব কলকাতা এসেছেন শুনে জীবনানন্দ সকাল সকাল তাঁর বাসায় চলে এসেছেন। কিন্তু আজকেও হুমায়ূন কবির সাহেবের সাথে দেখা হল না। পিএ যদিও বলল উনি বাড়িতে নেই, তবু সাক্ষাতের জন্য আসা এত লোকজন আর গাড়ি বারান্দায় দাড়ানো গাড়ি বলে দিচ্ছে একজন নিঃস্ব কবির সাথে দেখা করে চাকরির আর্জি শোনার চাইতে আরো অনেক বড় কাজ আছে মন্ত্রী মশায়ের। দুই মাস আগে একবার কবির সাহেবের সাথে দেখা হয়েছিল।
হেলাল হাফিজ অতিসাম্প্রতিক কালে আবার কবিতা লিখছেন। কবির পয়ষট্টিতম জন্মদিন উপলক্ষে যুগান্তরের সাহিত্য পাতায় তিনটি কবিতা ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে একটি কবিতার নাম ওড়না। বলাবাহুল্য কবির সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা এর আগে বহু লেখায় উল্লেখ করেছি। সেই সূত্রে এই কবিতাটির প্রসব বেদনায় যখন কবি ছটফট করছেন তখন আমি কবির সাথে ছিলাম। প্রায়ই তিনি অনুভূতিহীন অন্যমনস্ক হয়ে যেতেন। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে কবিরা একটু অন্যমনস্ক,অগোছালো থাকবে এটাই নিয়ম হলেও কবি হেলাল হাফিজ অত্যন্ত গোছানো একজন মানুষ।
২০০১ সাল। স্থানঃ ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ ড্রিল গ্রাউন্ডে নামার সিঁড়ি।
মাস মনে করতে পারছি না। রাত ১২ টা বেজে ১০ মিনিট।
একটু আগেই আইয়ুব বাচ্চু (এল আর বি) র কনসার্ট শেষ হয়েছে। তার আগে একটা কালচারাল শোতে উপস্থাপনা করেছেন গিয়াস ভাই। কনসার্টের এক পর্যায়ে দেখলাম বাচ্চু ভাই গিয়াস ভাইয়ের খুব প্রশংসা করল। তাঁকে স্পেশাল থ্যাংকস জানালো।
আমি একটু খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম গিয়াস ভাই আমাদের কলেজ এর এক্স ক্যাডেট।আমাদের থেকে ১৮ ব্যাচ সিনিয়র।
মুল লেখাঃ
কবি হেলাল হাফিজের সাথে আমার পরিচয় খুবই অদ্ভুত ভাবে। এক বিকেলে চারুকলার সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে ঢেলে সাজানো বই গুলোর দিকে চোখ বোলাতেই একটি বই চোখে লেগে যায়। যে জলে আগুন জ্বলে। চোখে লাগার মতোই বই। অদ্ভুত শিরোনাম। বই হাতে নিয়ে কয়েক পাতা ওল্টাতেই একটা কবিতা চোখে পড়ে। এক নিমিষেই পড়ে ফেলি।
“প্রেমের কষ্ট ঘৃণার কষ্ট
নদী এবং নারীর কষ্ট
অনাদর ও অবহেলার তুমুল কষ্ট
কষ্ট নেবে কষ্ট?”
আমার ক্রাশ খাওয়ার হিস্টোরি বহুত বড়। জীবনে অনেক বার অনেক মেয়ের উপরে ক্রাশ খেয়েছি। সোজা বাংলায় “একতরফা প্রেমে পতিত” হয়েছি। আমি বন্ধুবান্ধবদের সাথে বেশ কথা-বার্তা বলতে পারি, আড্ডা মারায় ওস্তাদ; তা সে ছুটির দিন হোক, আর পরীক্ষার আগের দিনই হোক। কিন্তু মেয়েদের সাথে আমি পুরো উল্টো স্বভাবের। অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিত যে কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে গেলেই আমার কেন জানি পেটের মধ্যে মোচড়ানো শুরু করে।
ছোট বেলা থেকেই মা আমাকে বলতেন, নিজের যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা উচিৎ। কম থাকার কারণে আমাকে কখনো কষ্ট পেতে হয়নি, পেতে হয়েছে বেশি থাকার কারণে। ব্যপারটা আরেকটু গুছিয়ে বলি।
মানুষ হিসেবে আমি প্রচণ্ড আবেগী। শৈশবের রঙ্গিন জীবনটা কৈশোরে মোড় নেয়ার সাথে সাথে এই আবেগটা বেশ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গিয়েছিলো বৈকি। প্রেম- ভালোবাসা সংক্রান্ত ব্যপারগুলো নিয়ে ভাবার শুরুটা তখন।
—হ্যালো।হ্যা বল।
—কিরে।
—কিরে।
—কেমন আছস?
—হু ভাল।তুই?
—ভাল।শোন।
—ক।
—টি শার্ট কিনছিলাম দুইটা। আর একটা প্যান্ট। এখন তো লাগে না। ছোট হয়,টাইট হয়। কি করমু তাইলে?
—আবার?
—আবার কিরে আবার?
—কোত্থেকে কিনছস?
—নাম কইলে তুই চিনবি? তুই কিছু চিনস? ঢাকার কিছু বুঝস? ছাইড়া দিলে তো হারায়ে যাবি!!!
ঘটনা সত্য।বছরে ১-২ বার ঢাকা যাই।রাস্তায় হাটার সময় অলওয়েজ কানে ফোন থাকে,ওপাশ থেকে ইন্সট্রাকশন আসে,আর লোকজনকে জিজ্ঞেস করে এদিক ওদিক যেতে হয়।
তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি,সম্ভবত থার্ড টার্মের কথা।ওইসময়ে ছুটি থেকে আসার সময় শুকনো খাবার আনা আমাদের কলেজে বৈধ ছিলো। আমরা ৪ রুমমেট একদিন লাঞ্চের পরে রুমে বসে বসে মুড়ি-চানাচুর খাচ্ছি।এমন সময় সপ্তম শ্রেণীর ক্যাডেটদের দেখতে আসলেন গণিতের রিয়াজউদ্দিন প্রামাণিক স্যার,সংক্ষেপে রূপলাল স্যার।উঠে দাঁড়ালাম।স্যার খাটের কাছে এসে বিছানায় মুড়ি দেখে নাক কুঁচকে বললেন,”ছিঃ,তোমরা মুড়ি খাও!!!!”স্যারের বলার ভঙ্গী আর কথা শুনে আমরা ভাবছিলাম ক্যাডেট কলেজে মুড়িকে মনে হয় ফকিরী খাবার মনে করা হয়,সবাই ঘেন্না করে।
আমাদের ভূগোল স্যার ছিলেন হিসেবি। শুধু হিসেবি নয় ভয়াবহ হিসেবি। কতটা
হিসেবি বলি, তিনি ছিলেন আমাদের ক্লাস টীচার। ক্লাস টীচারের দায়িত্ব ছিল
অনেক। ক্লাসের কোন জিনিসপত্র নষ্ট হলে তা ঠিক করার দায়িত্ব ছিল স্যারের।
একবার হঠাত্ করেই ক্লাসের ঘড়ির ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেল। যেহেতু আমাদের
ক্যাডেট কলেজে অনেক নিয়ম কানুন ছিল তাই চাইলেও ব্যাটারি পরিবর্তন করার
সুযোগ ছিলনা। এদিকে পরীক্ষাও খুব কাছে চলে এসেছে।
জীবনে অনেক মানুষের সাথেই মিশেছি হয়েছে বন্ধুত্ব। তবে এই স্বল্প পরিসরে কিছু মানুষ পেয়েছি যারা আসলেই অভাগা। মানে তারা যাই করতে যায় না কেন সব সময় বিপরীতটাই ঘটে থাকে। তবে এই কথাটি সব সময় আবার প্রযোজ্য নয়। আর আমার এই লেখাটিকে আশা করবো সবাই Fun হিসাবেই নিবে, এটা কাউকে ছোট করার জন্য যেমন নয় তেমনি কাউকে অপমান করার জন্য নয়ই। শুধুই মজা করার জন্য।
এই পর্যন্ত যতগুলো বন্ধু পেয়েছি তার মাঝে সব চেয়ে অভাগা আমার মনে হয়েছে অয়নকে।
ঘুম থেকে উঠে দরজা খোলা মাত্রই দেখলাম প্রচুর ভীড়।বিকেল ৫.৩০ বাজে।আবার কি হল?? ভীড় নীচতলার করিডোর জুড়ে, সিঁড়ির ধাপে ধাপে,দোতলায় গিয়ে তুঙ্গে!! কোমরে তোয়ালে পেঁচিয়ে বের হয়েছিলাম গোসল করার আশা নিয়ে! জুলাই মাসে দিনে অন্তত একবার গোসল না করলে নিজেকে বড় বিবেকহীন মনে হয়। কিন্তু অনুসন্ধিৎসু অন্তঃকরণের কাছে হার মেনে গেলাম! আবার দরজা লাগায়ে হাফ প্যান্ট আর টিশার্ট পরলাম! জুলাই মাসে গোসল রাতেও করা যাবে!
২০০২ থেকে ২০০৮।আমার ক্যাডেট লাইফ।ভালোয় মন্দে মিশিয়ে কেটেছে জীবনের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর এই ছয়টি বছর।যেকোন ক্যাডেটের এই ছয়টি বছর কাটে অনেক ঘটনাবহুল।আমিও ব্যাতিক্রম না,মাঝে মাঝে মনে হয় আমার ক্যাডেট লাইফ একটু বেশিই উরা-ধুরা।কলেজের গল্প করতে কার না ভালো লাগে?ছয় বছরের ছোট ছোট ঘটনা নিয়ে আমার এই সিরিজ ‘ক্যাডেট কলেজ কড়চা’।আগেই বলে নেই ঘটনাগুলো ক্রমানুসারে সাজানো নয়।যেটা আগে মনে আসবে সেটাই লিখবো আগে।
(ডিসক্লেইমারঃধূমপান ক্যানসার সহ নানা প্রকারের দুরারোগ্য ব্যাধির কারণ হতে পারে)
বয়স তখন ১৩ কি ১৪।ক্লাস এইটের কোন এক ছুটি।দুই দুষ্টু (ক্যাডেট)বন্ধুর প্ররোচনায় সিগারেটে হাতেখড়ি।আমার ভাব তখন দেখে কে?২ দিনে মনে হলো অনেক বড় হয়ে গেছি।অসম্ভব(!)স্মার্ট লাগতে লাগলো নিজেকে।তার উপর বিলবোর্ডে নেভির প্যাকেট সামনে রেখে জাহিদ হাসানের ছবি,লেখা “শেষ পর্যন্ত সিগারেটটা ধরেই ফেললাম”।ভ্যাকেশনে লুকিয়ে লুকিয়ে সিগারেট খেতাম বাথরুমে,অনেক রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে।মাঝে মাঝে মিসটাইমিং হয়ে যেত।আম্মা বলতো রাতদুপুরে নাকি বিড়ির গন্ধ পায়।নানী এগিয়ে আসতো আমাকে বাঁচাতে,বলতো পাশের বাসার আঙ্কেল রাতে বিড়ি খায়।
শাকুর মজিদ নামের সাথে পরিচয় নবম শ্রেণীতে। আমি তখন বরিশাল ক্যাডেট কলেজ এ পড়ি। হঠাত্ করে খবর পেলাম কেউ একজন ক্যাডেট কলেজের সপ্তম শ্রেণীর জীবনযাত্রা নিয়ে একটি বই লিখেছে। বই এর নাম,ক্লাস সেভেন ১৯৭৮। বইয়ের নাম শুনেই বুঝলাম যে বইটা লিখেছেন তিনি হয়তো ১৯৭৮ সালে ক্যাডেট কলেজে সপ্তম শ্রেণীতে ছিলেন। বই এর প্রতি আগ্রহ তৈরি হল। কারণ,আধাসামরিক এ কলেজের নিয়ম কানুন দেশের আর দশটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা।
আমার কানে এখনো বেজে ওঠে সেই ভাঙ্গাচোরা বিহারী দারোয়ানটার কন্ঠ। সারা লালখানবাজার এলাকায় হয়ত একাই ডেকে ডেকে সবাইকে ওঠাতো। আমি তাকে কখনও দেখিনি। আমি শুধু তাকে শুনেছি। শুনেছি তার হাতের ঝুনঝুন লাঠির আওয়াজ – দুমদাম করে গেইটে বারি দিত। আর সবাইকে চেঁচিয়ে বলত –