আমাদের ভূগোল স্যার ছিলেন হিসেবি। শুধু হিসেবি নয় ভয়াবহ হিসেবি। কতটা
হিসেবি বলি, তিনি ছিলেন আমাদের ক্লাস টীচার। ক্লাস টীচারের দায়িত্ব ছিল
অনেক। ক্লাসের কোন জিনিসপত্র নষ্ট হলে তা ঠিক করার দায়িত্ব ছিল স্যারের।
একবার হঠাত্ করেই ক্লাসের ঘড়ির ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেল। যেহেতু আমাদের
ক্যাডেট কলেজে অনেক নিয়ম কানুন ছিল তাই চাইলেও ব্যাটারি পরিবর্তন করার
সুযোগ ছিলনা। এদিকে পরীক্ষাও খুব কাছে চলে এসেছে। আর কলেজ ব্যবস্থায়
ব্যাটারি ইস্যু করার ও ঝামেলা অনেক। যেমন,প্রথমে এপ্লিকেশন লেখা,পরে তা
ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে পাঠানো,তারপর প্রিন্সিপাল হয়ে স্টোর কীপারের
কাছে পৌঁছানো,এরপর ব্যাটারি পাওয়া। শুধু ব্যাটারি নয়,কলেজ ব্যবস্থায়
যেকোনো কিছু পাওয়ার সিস্টেম ছিল এটি। যা পেতে মোটামুটি পনের দিন সময় লেগে
যায়। আমরা স্যারকে বললাম,স্যার তার চেয়ে এক কাজ করুন আপনি একটা ব্যাটারি
কিনে আনুন। পরে কলেজ ব্যবস্থায় ব্যাটারি ইস্যু হলে আপনি তা পেয়ে যাবেন।
স্যার রাজী হলেনএবং কিছুক্ষন পর তিনি আমাদের একটা ব্যাটারি এনে দিলেন।
আমরাও খুশী স্যার ও খুশী। ঘড়িও চলছে ঠিকঠাক। সেদিন রাতে টিভি রুমে গেলাম।
জি মিউজিকে সদ্য মুক্তি পাওয়া ক্যাটরিনার হট হিন্দী গান চলছে আর আমরাও হা
হয়ে উপভোগ করছি এরমধ্যে ঢুকলেন ডিউটি শিক্ষক। তাঁকে দেখে রিমোট হাতে নিয়ে
চ্যানেল ঘোরানোর চেষ্টা করছি,কিন্তু কিছুতেই আর চ্যানেল চেঞ্জ হচ্ছেনা।
এদিকে স্যার ও পরলেন বিব্রতকর অবস্থায়,তিনি দু একবার কেশে চলে গেলেন।
স্যার চলে গেলে আমরা অনুধাবন করলাম রিমোটের একটা ব্যাটারি নেই।বুঝতে
কিছুই বাকী রইলোনা শুধু আমরা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রইলাম অসহায়
দৃষ্টিতে।
আমাদের ক্লাস দেয়াল পত্রিকা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছে। সবার মধ্যে আনন্দ
ও উচ্ছ্বাস। স্যার ও বেশ খুশী। আমরা সবাই এবার স্যারকে ধরলাম,চকোলেট
খাওয়াতে হবে। স্যার ও গোবেচারা। বললেন,খাওয়াবেন। পরদিন দেখি তিনি পকেটে
একটা চকলেট এনেছেন। চকলেটটা ক্লাস ক্যাপ্টেনের হাতে তুলে দিয়ে
বললেন,যেহেতু ও তোমাদের রিপ্রেজেনটেটিভ তাই সবার পক্ষ থেকে ওকে খাওয়ালাম।
ও খাওয়া মানেই সবার খাওয়া। আমরা অসহায় কন্ঠে বললাম,ঠিক স্যার। স্যার
হাসলেন। যে হাসির মূল্য অনেক।
একবার ভুগোল ক্লাসে স্যার বিষুব রেখার সজ্ঞা শেখাচ্ছেন। শোন,যে রেখা
পৃথিবীকে উত্তর ও দক্ষিন দুই গোলার্ধে ভাগ করেছে তার নাম বিষুব রেখা।
যেমন ধর,আমার বেল্ট। এটি যদি বিষুব রেখা হয় তবে আমার উপরের অংশ উত্তর
গোলার্ধ আর নিচের অংশ দক্ষিন গোলার্ধ। বুঝেছো?
স্যারের কথা শুনে রনন বলল,স্যার সব ই ঠিক আছে কিন্তু বিষুব রেখা কি ছেঁড়া?
স্যার নিজের বেল্টের দিকে তাকিয়ে দেখলেন তা খানিকটা ছেঁড়া। তিনি অসহায়ের
মত হাসি দিয়ে বললেন,ওই ধর আর কি. . .
কিছুদিন পর স্যার নতুন বেল্ট পরে এসেছেন। সেদিন ভুগোল ক্লাসে অংক করতে
গিয়ে রনন ধরা খেল। স্যার রননকে দাঁড় করিয়ে বললেন,ওই রনন বল,বিষুব রেখা
কাকে বলে?
রননের সোজা সাপ্টা উত্তর,যে রেখা পৃথিবীকে উত্তর ও দক্ষিন দুটি গোলার্ধে
ভাগ করে এবং প্রথমে ছেঁড়া থাকলেও পরবর্তীতে বায়ুমন্ডলীয় চাপে তা নূতন হয়ে
যায় তাকে…
এটুকু শুনে স্যার বললেন,থাক থাক আর বলতে হবেনা। তুমি অংকই করো বাবা. . .
স্যারের সাথে আমাদের প্রথম পরিচয়টাও মজার। সপ্তম শ্রেণীতে নতুন ভর্তি
হয়েছি।কলেজে একদম নতুন। এক একজন স্যার ক্লাসে এসে তাঁদের প্রথম পরিচয় দেয়
এভাবে,আমি অমুক,আমি তমুক বিষয় পড়াবো। তো একদিন স্যার এসে বললেন,ক্যাডেটস
আমার নাম নবীন কুন্ডু. . .
পেছন থেকে জনৈক ক্যাডেট চাপা স্বরে বলল,ভালোবাসি মাছের মুন্ডু. . . . .
আমরা সবাই একত্রে হেসে উঠলে স্যার ধমক দিয়ে বললেন,কে কে বলেছো?
কেউ মুখ খুললোনা। পিনপতন নিরবতায় শুধু স্যারের কন্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হল
কয়েকবার। এরপর মিলিয়ে গেল সহজ অভ্যাসে।
মজার! 🙂
আমি চোখ মেললুম আকাশে
জ্বলে উঠলো আলো পূবে পশ্চিমে
🙂
আপ্নার লিখা, কখনৈ খারাপ নয় . এত্তগুলা ভাল হৈসে .
:dreamy:
ভাবছি। স্যার এই লেখাটা দেখলে কি ভাববেন..।
এসব ক্ষেত্রে স্যারদের নাম উহ্য রাখলে ভালো হয় কিন্বা কয়েকটা ভিন্ন ভিন্ন কাহিনী দিলে আলাদা করে কোন স্যারের তা বোঝার উপায় থাকে না।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
স্যার এর আসল নাম উল্লেখ করা হয় নি
প্রথম পরিচয়ের দিন বলা নামটা কি কাল্পনিক? :-/
তুই মনে হয় ক্যাডেট, নন-ক্যাডেট দুই গ্রুপ এর কথা মাথায় রেখে লিখেছিস...এজন্য অনেক কিছু বিশদ ভাবে উল্লেখ করা... :dreamy:
যাই হোক, স্মৃতিচারণ ভাল হয়েছে... :thumbup:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ধন্যবাদ ভাই। হ্যাঁ ভাই নামটা কাল্পনিক 🙂 আর এর আগের লেখায় সিভিল রা অভিযোগ করেছে তারা ক্যাডেট এর অনেক টার্ম বোঝে না। তাই সবার কথা চিন্তা করে লেখা। 🙂
:thumbup:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
রাব্বী নামের পাশে কলেজে অবস্থান কালের সময় টা যোগ করে দাও..
দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হোলো না। 🙁
:clap:
মজা পাইলাম
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
ধন্যবাদ। 🙂
মাঝে মাঝে চিন্তা করি ক্যাডেট কলেজে স্যাররা থাকেন কিভাবে? মাথা খারাপ হবার জোগাড় হবার কথা।
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
ঠিক বলেছেন। 🙂
হু মনে আছে তার কথা। আমাদের ব্যাচেও বহু কল্পকাহিনী আছে স্যারকে নিয়ে। উনার স্বভাব খাচড়া, লোক হিসাবেও ভালো না।
চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।
😀 😀 😀 😀
valo hoeshe 🙂 Moja paeshi . :clap: Good luck. :thumbup: Amake chinecho ? Boloto ami k? Chino ba na chino reply deo :-B ;))