তারেক মাসুদ এবং আমরা

জহির রায়হান, আলমগির কবীর, এবং তারেক মাসুদ আমাদের ফিল্মের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র; এদের তিনজনকেই আমরা অকালে হারিয়েছি । আবিশ্বাস্য হলেও সত্যি জহির রায়হানকে হত্যা করেছে আল-বদর/রাজাকার, তাও ১৬ই ডিসেম্বরের পরে, আর আলমগীর কবীর, এবং তারেক মাসুদ দুজনকেই হারাতে হল সড়ক দুর্ঘটনায়। তারেকের “মাটির ময়না” আমাদের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের চলচিত্র এবং উল্লেখ্য যে, মাটির ময়নার পুরটাই আমাদের মাটির রস সিঞ্চিত। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের ছাত্র, ফজলুল হক হলে থাকি; বিনা পয়সায় মুভি দেখাই আমার প্রধান হবি। শিশু অ্যাকাডেমিতে বিনা পয়সায় “মুক্তির গান” দেখতে গিয়েছি , শেষ দৃশের পর ক্রেডিট স্ক্রলিং হচ্ছে, ব্যাক গ্রউন্ডে মৌসুমি ভৌমিকের/গিন্সবার্গের “যশোর রোড” গানটি … আর কান্না থামানো গেলনা। ফিল্ম শেষ হলে তারেক মাসুদ তার কলা কুশলিদের অর্থাৎ সাক্ষাৎ মুক্তি যোদ্ধাদের নিয়ে মঞ্চে উঠলেন দর্শকদের প্রতিক্রিয়া জানতে। হল ভর্তি মানুষ তখন কাদছে… সবাই উঠে দাড়িয়ে শ্রদ্ধা জানালাম। তারেক মাসুদ মারা গেল বা তাকে হত্যা করা হল! আমার কোন অভিযোগ নেই! আসলে অসভ্য, অমার্জিত, অযোগ্য, বর্বর মানুষের দেশে যোগ্য মানুষেরাতো এভাবেই মারা যাবে। কত টাকা খরচ করে যোগাযোগ মন্ত্রী হয়েছেন, তিনি লজ্জা পাবেন কেমন করে, পদত্যাগের প্রশ্নতো অনেক পরে…

একদল ভিক্ষুকের দলনেতা একজন ভিক্ষুকই হবে, একজন বাদশা নয় । অযোগ্য মানুষের দলনেতা/নির্বাচিত প্রতিনিধি তাই একজন অযোগ্য মানুষই হবে। বন্ধুবান্ধব/আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কেউ সন্ত্রাসী থাকলে, ঘুষখোর আমলা থাকলে আমারা তাকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করি না বরং চাপা একটা আনন্দ কাজ করে, আমরা স্বস্তি পাই, আর কেউ কবিতার কথা বললে, ফিল্মের কথা বললে আমরা তার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হই। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা জনগনের প্রতিনিধি… তারা আকাশ থেকে পড়েনি। কোন দেশ সেই রকম নেতাই পায়, তার জনগন যে রকম নেতা পাওয়ার যোগ্য। সত্তুরের জনগনের আবেগ আর দেশপ্রেমই ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শক্তি। স্বাধীনতা তাই সেই সময়ের মানুষের প্রাপ্য ছিল। তারা যোগ্য ছিল হাজার বছরের শ্রেষ্টতম অর্জনের।আর আমাদের প্রাপ্য অবহেলা, অপমানের জীবন। কারন আমরা ভীতু, কাপুরুষ প্রজন্ম, বহুতল ভবনের ঘুপচিতে আমাদের বসবাস, বড্ড সৌখিন ভাবে সাজানো আমাদের ড্রইংরুম – বিদ্রোহ করার সাহস আমাদের কোথায়? দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়াতেই আমাদের মুক্তি, প্রতিবাদের ভাষা আমরা কোথায় পাব?

তারেক মাসুদের মৃত্যু নিয়ে আমরা যদি কেবল শোক পালন করি সেটা হবে এই সময়ের সবচেয়ে বড় ভুল। আমাদেরকে প্রতিবাদ করতে হবে। যোগাযোগ মন্ত্রী ব্যার্থ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ব্যার্থ; প্রধান মন্ত্রীকে একথা স্বীকার করতে হবে। সাহারা খাতুনের চেয়ে সুখী মানুষ পৃথিবীতে নাই। আজকে যদি পাচটা মানুষ খুন হয়, কালকের লিড নিউজ হবে দশজন মানুষ খুন হওয়ার।তারপরের দিন আরো খারাপ খবর। রিপিটেড দুসংবাদে মানুষ হত বিহ্বল হয়ে পড়েছে। অভিযোগ করার শক্তি তারা হারিয়ে ফেলেছে। তার কোন রিপ্লেছমেন্ট কি বঙ্গ দেশে নেই? ধরে নিলাম, গত টার্মের কোন এক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কর্মকাণ্ডে হতাশ হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন আপাত সৎ(যতদূর জানি সাহারা খাতুন পারসেনটেজ নেননা), ও একান্ত অনুগত হিসাবে তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হল, তার মত আপাত সৎ, একান্ত অনুগত ও যোগ্যতা(জাতি ইতমধ্যে তার যোগ্যতা দেখেছে)সম্পন্ন অন্য কেউ কী আপনার তূণ-এ নেই যেখান থেকে আপনি বিকল্প কাউকে বেছে নিতে পারেন। যদি আমাদের ধারনা সত্যি হয় তবে স্বীকার করতে হবে আপনার রাজনৈতিক clout অত্যন্ত vulnerable। যুদ্ধাপরাধিদের বিচার করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরে যাওয়া, হাজারো সমস্যায় জর্জরিত এই দেশটার সেবা করা এই দুর্বল সরকারের পক্ষে কতটা সম্ভব তা আগামী নির্বাচনে জনগনের রায় হতে জানা যাবে।

কই, কোন যোগাযোগ মন্ত্রী তো কোনদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলনা? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কোন আত্মীয় তো ক্রসফায়ারে পড়ল না? আমিতো চোর না, আমি মেধাবী এবং পরিশ্রম করে আমার পরিবারের রুটি-রুজি উপার্জন করি। আথচ ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে থাকি আমি, কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় আমার, ক্লান্ত-ধূসর-মলিন হয়ে যায় আমার স্বপ্ন, আর ট্র্যাফিক প্রোটকল নিয়ে সাঁই করে চলে যায় মন্ত্রী/চোর। কীট পতঙ্গের মত মারা যায় তারেক মাসুদ আর প্রোটকল নিয়ে ঘুরে বেড়ায় যোগাযোগ মন্ত্রী। হা!

ঢাকার ট্র্যাফিক জ্যাম একটা পরিকল্পিত দুর্নীতি, যাকে পুজি করে হবে কোটি ডলারের ব্যাবসা করার ফন্দি। Consultant/নবীজীরা, including media, সবাই ভবিষ্যতের কথা বলে; ফ্লাই-ওভার, আন্ডার-পাস, মেট্রো আরো কত কি! যার কোন একটা করতেই কমপক্ষে পাচ থেকে দশ বছর সময় লাগবে। অথচ কেউ বর্তমানের কথা বলে না। সবাই structure এর কথা বলে কেউ strategy এর কথা বলে না। structure এর বাস্তবায়ন হলে consultant/নবীজীরা সবাই বড় হিস্যা পাবে কিন্তু strategy বাস্তবায়ন হলে ভাগ কম পড়বে। (এখানে Consultant হলেন subject matter এ highly technical knowledge সম্পন্ন geeks যারা বোর্ড রুমে pro-people projects গুলো বাস্তবায়নের দুর্বল দিকগুলো তুলে ধরেন এবং pro-pocket project গুলো বাস্তবায়ন হলে জাতি কিভাবে উপকৃত হবেন তা বিশদ ভাবে ব্যাখ্যা করেন আর নবীজীরা হলেন দাতা দেশ/বহুজাতিক কম্পানি/গডফাদারদের প্রেরিত দূত যারা রাজনীতিবিদ ও উচ্চপদস্থ সরকারি আমলাদেরকে নিজ নিজ হিস্যা সুন্দর করে বুঝিয়ে দেন এবং PR এর কাজ করেন).

মাথাপিছু আয়ের দিক দিয়ে এশিয়ার সবচেয়ে ধনী দেশ Singapore মেট্রো রেলের ব্যয় বহন করতে পারছেনা আর আমাদের গত টার্মের যোগাযোগ মন্ত্রী ঢাকা-চিটাগাঙ ম্যাগলেভ (magnetic levitation) করতে চেয়েছিল। অত্যন্ত ব্যয় বহুল সেই পরিবহন কেবল ধনীরা ব্যাবহার করতে পারবে। টিকিটের দাম হবে প্লেনের চেয়ে বেশি, মাত্র ৩০ মিনিটে ঢাকা থেকে চিটাগাঙ। হাজার কোটি টাকার মামলা, শত কোটি টাকার দাও। তার সে স্বপ্ন পুরন হয়নি। এখন বর্তমান মন্ত্রী চান মেট্রো রেল, ফ্লাই ওভার, ঢাকা থেকে চিটাগাঙ ফোরওয়ে লেনের কাজ। শোনা যায় গত নির্বাচনে দুই দলই যোগাযোগ মন্ত্রীর দর হেকেছিল ২৫০-৪০০ কোটি টাকা। আমাদের যোগাযোগ মন্ত্রী পেয়েছেন সেই টিকিট! তাই বড় বড় প্রোজেক্টে কাজ করে দ্রুত পয়সা উসুল করাই তাদের লক্ষ্য। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী পথে যোগাযোগ কতটা উন্নত ? রেলের ছাদে বসে শত শত মানুষ যখন বাড়ি ফেরে তখন কি আমরা পারিনা রেলের মান উন্নত করতে, রেলের পরিসর আর বাড়াতে ?

সবাই জানে ঢাকার ট্র্যাফিক জ্যামের মূল কারন প্রাইভেট কার। পাচ লাখ টাকা জোগাড় করলে পাচ লাখ টাকা ব্যাংকলোণ; হয়ে গেল গাড়ী। ব্যাংক খুশি, গাড়ীর ব্যাবসায়ী খুশি, মধ্যবিত্ত খুশি, রাজনীতিবিদও খুশি। এরাই সব। এরাই দেশ। কারন এদের বাইরের জনগণ বলতে গেলে এক প্রকার মিডিয়া ডার্ক. সেখানে তাদের ওয়ান ওয়ে অ্যাকসেস। তারা সেখানে কেবল কন্স্যুউমারস। পাচ বছর পর ভোট দেয়া ছাড়া তাদের তেমন কোন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নেই. প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক কোন মিডিয়াতেই তাদের প্রতিবাদ করার সুযোগ/যোগ্যতা নাই। তারা চিৎৎৎৎকাআআআর করে বলতে পারে না সরকার যদি ঢাকার রাস্তায় মাত্র ২০০০ Double Decker নামায় এবং ঢাকার রাস্তায় প্রাইভেট কারের বাৎসরিক ট্যাক্স করে দেয় সর্বনিম্ন দশ লাখ টাকা তাহলেই ঢাকার ট্র্যাফিক জ্যাম নব্বুই ভাগ কমে যাবে। আর সড়ক দুর্ঘটনাও কমে যাবে অনেক। (আমিও চাই সবাই প্রাইভেট কারে করে অফিসে যাক, বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যাক, তবে তার আগে আমি চাই সেই গাড়ী গুলোর জন্য প্রয়োজনীয় রাস্তা তৈরি হোক)।

ঢাকার গাড়ীর ৯৭% প্রাইভেট কার এবং তাতে চড়েন এই শহরের মাত্র ৩% লোক। আমার পকেটে ৫০০ টাকা আছে, তা দিয়ে আমি ৫০টা ডিম কিনতে পারি। কিন্তু ৫০টা ডিম কি আমি খেতে পারি? ব্যাপারটাতো আমি কতটা গ্রহন করতে পারি সেটা, আমি কতটা ক্রয় করতে পারি সেটা নয়। আমার শহরেরও তো গ্রহন করার একটা ক্ষমতা আছে। তার ক্ষমতা পঞ্চাশ হাজার গাড়ীর আর আমরা চাপিয়ে দিয়েছি পাচ লক্ষ । শহরতো অসুস্থ মানুষের মত আচরন করবেই।

১৭৮৯ তে ফ্রেঞ্চ রেভুলুশ্যন এর আগে অর্থনীতিবিদ রবার্ট জ্যাকুয়াস, তার বন্ধু কবি ভলতেয়ারকে নিয়ে যুবকদের এরকম বৈষম্যের কথা বলতেন। পরবর্তীতে পরিসংখ্যানবিদ ভিলফ্রেড পারেটোও অনেক ব্যাখ্যা করেছেন। আমরা কি এরকম রেভুলুশ্যন এর স্বপ্ন দেখতে পারিনা? অত দূরে যাওয়ার কি দরকার, আমারা কি পারি না একজন সূর্যসেন হতে, একজন প্রীতিলতা হতে? নূর হোসেন কি আমাদের অনেক অপরিচিত কেউ, দূরের কেউ? গার্মেন্টসের সেলাই মেশিনে আটকে পড়া মেয়েটা, কম্পিউটারের স্ক্রীনে আটকে থাকা ক্লার্ক, ক্যাশের ওই পাশে বসা ছেলেটা কি পারবে চিৎৎৎৎকাআআআর করতে, প্রতিবাদ জানাতে? পারবে না! কে আসবে, তাহলে? একজন কবি আসবে, একজন চলচিত্র পরিচালক আসবে, একজন তারেক মাসুদ আসবে! আমরা দুর্ভাগা তাই আমাদের জহির রায়হান, তারেক মাসুদেরা হারিয়ে যায়।

জানি লিখে কিছু হবে না… তবুও লিখলাম। It’s my elegy for TAREQ MASUD. তোমার বিদেহী আত্ত্বা শান্তি পাক। আমরা সাধারন মানুষেরাই তো মর্তে থাকব… তোমরা অসাধরনেরা থাকবে স্বর্গে!!!

২,৮০৫ বার দেখা হয়েছে

২৪ টি মন্তব্য : “তারেক মাসুদ এবং আমরা”

  1. রাব্বী (৯২-৯৮)

    দুদিন ধরে ঘুরে ফিরে শুধু সংবাদপত্র, ব্লগে এবং টেলিভিশন সংবাদে ঘুরপাক খাচ্ছি। এটা মেনে নেওয়া যায় না। কি বলার থাকতে পারে! এমন এক একজন মানুষকে হারানো হলো হাজার মানুষকে হারানোর সমান। একেবারেই অপূরনীয় - আমাদের একজন তারেক মাসুদই ছিলেন।

    ব্লগে নিয়মিত লিখুন মুরাদ ভাই।


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ব্লগে স্বাগতম মুরাদ ভাই।

    মন্ত্রীদের কথা আর কি বলবেন ভাইয়া, হাসপাতালে বসে যখন সে দুর্ঘটনায় আহত একজনকে উদ্দেশ্য করে বলতে পারে যে আপনাদের ড্রাইভারের দোষ ছিল ( ঠিক বেঠিক বাদ ই দিলাম) তখন তাদের কাছ থেকে আর কতটুকু আসা করবো? আর দায় দায়িত্ব নেয়া তো অনেক দূরের কথা, তারা তো সাফাই গাইতেই ব্যস্ত।

    ট্রাফিক জ্যাম কতটা পরিকল্পিত দুর্নীতি জানি না, তবে দূরপাল্লায় ট্রেন সার্ভিস কে অবহেলিত করে রেখে বাসের উপরে নির্ভরশীলতা তৈরী আমি মনে করি অবশ্যই পরিকল্পিত।

    আরো কত প্রান কেড়ে নেবার পরে আমাদের কর্তা ব্যক্তিদের টনক নড়বে ?


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
    • মুরাদ (৯০-৯৬)

      ধন্যবাদ আকাশ, তুমি রেলের কথা তুলে ভালই করেছ। রেল শুধু নিরাপদই নয় বাসের চেয়ে প্রায় ২০ গুন পরিবেশ বান্ধব। ২০০০ যাত্রি বহন করতে একটা রেলের চেয়ে বাস ২০-২৫ গুন বেশি পরিবেশ দুষন করে । আর তাছাড়া রেল ভ্রমন ভিষন রোমান্টিক, কি বল? তবুও রেলের উন্নতি হবে না। পরিবহন মালিক সমিতির চান্দা দিয়েইতো মন্ত্রি মহদয় টিকিট কেনে। যে কারনে টেলিটক কখনই ভাল সারভিস দিতে পারবে না। ৭১ সালের পর থেকে tnt মাত্র ২৬ লাখ land phone সংযোগ দিছে। আর ৯৬তে শুরু করে Gpর গ্রাহক ৩ কোটি মাত্র।


      শামীম মুরাদ

      জবাব দিন
  3. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    মুরাদ,
    লেখা ভালো হইছে।
    এবার বাবা ১০টা দাও।
    আমার ও দিতে হইছে।
    তোর সাথে একমত।
    তবে ঢাকায় যদি লন্ডনের মতন কনজেশন চার্জ বসানো যাইত তবে বেশ হইতো।
    আবার দেখ পাবলিক ট্রান্সপোর্টের বেহাল অবস্থা। তুই কি কইরা সবাইরে বলবি বাসে ট্রাভেল করতে।
    বাংলাদেশে দরকার একজন দেশপ্রেমিক নেতা; যদি তার হাতে ডাণ্ডাও থাকে তবুও আমি তার পিছনে থাকবো।
    আজকেও তোদের আরিফের সঙ্গে কথা হইল।
    ভালো থাকিস।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
      • মুরাদ (৯০-৯৬)

        বস, বড় ভাইদের কথা আর কি বলব পিচ্চি পোলাপাইনরা যে সুন্দর লেখে আমিতো মুগ্ধ। ব্লগে নতুনতো, তাই ঘাইটা ঘাইটা পুড়নো লেখা গুলা পড়তেছি। পরানের গহিন ভেতর এ আপনার একটা লেখা পড়লাম। দারুন। আসলে পুরা সংকলনটা হেভি হইসে। আপনার কি স্রিজনী আর sprout এর কথা মনে আছে ? কলেজে থাকতে কি ওইগুলাতে লেখা দিতেন?


        শামীম মুরাদ

        জবাব দিন
        • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

          না মুরাদ, আমি সৃজনী কিংবা স্প্রাউটে লিখতাম না। ইন-ফ্যাক্ট আমাদের ব্যাচের মনে হয় কেউই এইগুলোতে লেখা জমা দিতাম না। আমাদের মনে হয়েছিল, আমরা যা লিখছি, ফিরোজা ম্যাডামের সেগুলো পছন্দ হবে না। 🙂

          তবে আমাদের ব্যাচের অনেকেই লিখতো। আমরা নিজেরাই লিখতাম, নিজেরাই নিজেদের লেখা পড়ে বাহবা দিতাম। চন্ডী থেকে চটি সবই আমরা লিখতাম 😛


          পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

          জবাব দিন
  4. মশিউর (২০০২-২০০৮)
    একদল ভিক্ষুকের দলনেতা একজন ভিক্ষুকই হবে, একজন বাদশা নয় । অযোগ্য মানুষের দলনেতা/নির্বাচিত প্রতিনিধি তাই একজন অযোগ্য মানুষই হবে। বন্ধুবান্ধব/আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কেউ সন্ত্রাসী থাকলে আমারা তাকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করি না বরং চাপা একটা আনন্দ কাজ করে, আমরা স্বস্তি পাই, আর কেউ কবিতার কথা বললে, ফিল্মের কথা বললে আমরা তার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হই। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা জনগনের প্রতিনিধি… তারা আকাশ থেকে পড়েনি। কোন দেশ সেই রকম নেতাই পায়, তার জনগন যে রকম নেতা পাওয়ার যোগ্য। সত্তুরের জনগনের আবেগ আর দেশপ্রেমই ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শক্তি। স্বাধীনতা তাই সেই সময়ের মানুষের প্রাপ্য ছিল। তারা যোগ্য ছিল হাজার বছরের শ্রেষ্টতম অর্জনের।আর আমাদের প্রাপ্য অবহেলা। কারন আমরা ভীতু, কাপুরুষ প্রজন্ম, বহুতল ভবনের ঘুপচিতে আমাদের বসবাস, বড্ড সৌখিন ভাবে সাজানো আমাদের ড্রইংরুম – বিদ্রোহ করার সাহস আমাদের কোথায়? দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়াতেই আমাদের মুক্তি, প্রতিবাদের ভাষা আমরা কোথায় পাব?

    :thumbup:

    জবাব দিন
    • মুরাদ (৯০-৯৬)

      মঞ্জুর,খুব ভাল লাগলো যে, তোমার লেখাটা ভাল লেগেছে।কলেজের কথাতো আর বলার অপেক্ষা রাখে না, (আমরা ccr 16 এর নিজেরা আমাদের soulmate বা soul16’s. বলি/জানি), DU এর কাউকে পেলেও খুব ভাল লাগে।

      দেখ তুমি, আমি, আমরা আমাদের এই অতি সাধারণ আবস্থান থেকেও যেটা বুঝি, সেটা নেতা নেত্রীরাও বোঝে কিন্তু ওরা না বোঝার ভান করে, কারন ওরা জীবনের কাছে হার মেনে নিয়েছে, আত্মসমর্পণ করেছে অনন্যায়ের কাছে, অমর্যাদার কাছে । দিনশেষে ঘুমোতে যাবার সময় ওরা চায়না আয়নার ওই লোকটা বলুক “তুমি সম্মানিত”।

      দেখবা তোমাদের বন্ধুদের মধ্যে থেকেই কেউ কেউ বড় বড় ঘুষখোর আমলা হবে, চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী হবে (এরা পরে হ্বজ করে আসবে), কেউ কেউ বড় বড় anti-people/against-mass-convenience project এর consultant হবে, তোমাদের মধ্যেই কেউ কেউ তাদের সাথে বেশী যোগাযোগ রাখবে আখেরে লাভের আসায়, তোমরা পারবেনা তাকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করতে।তাই দেশও বদলাবে না। দেশ বদলাতে হলে আগে নিজেদের বদলাতে হবে। পরিবর্তনই জীবনের একমাত্র ধ্রুবক, জীবনে সব কিছুই বদলাবে, কিন্তু তোমার এই DU জীবনের পরিবেশ/প্রতিবেশ বন্ধুরাও দেখবা সব চেয়ে দ্রুত বদলাবে। ভাল থেক । (সম্পাদিত)


      শামীম মুরাদ

      জবাব দিন
  5. আসাদুজ্জামান (১৯৯৬-২০০২)
    একদল ভিক্ষুকের দলনেতা একজন ভিক্ষুকই হবে, একজন বাদশা নয় । অযোগ্য মানুষের দলনেতা/নির্বাচিত প্রতিনিধি তাই একজন অযোগ্য মানুষই হবে। বন্ধুবান্ধব/আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কেউ সন্ত্রাসী থাকলে, ঘুষখোর আমলা থাকলে আমারা তাকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করি না বরং চাপা একটা আনন্দ কাজ করে, আমরা স্বস্তি পাই, আর কেউ কবিতার কথা বললে, ফিল্মের কথা বললে আমরা তার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হই। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা জনগনের প্রতিনিধি… তারা আকাশ থেকে পড়েনি। কোন দেশ সেই রকম নেতাই পায়, তার জনগন যে রকম নেতা পাওয়ার যোগ্য। সত্তুরের জনগনের আবেগ আর দেশপ্রেমই ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শক্তি। স্বাধীনতা তাই সেই সময়ের মানুষের প্রাপ্য ছিল। তারা যোগ্য ছিল হাজার বছরের শ্রেষ্টতম অর্জনের।আর আমাদের প্রাপ্য অবহেলা, অপমানের জীবন। কারন আমরা ভীতু, কাপুরুষ প্রজন্ম, বহুতল ভবনের ঘুপচিতে আমাদের বসবাস, বড্ড সৌখিন ভাবে সাজানো আমাদের ড্রইংরুম – বিদ্রোহ করার সাহস আমাদের কোথায়? দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়াতেই আমাদের মুক্তি, প্রতিবাদের ভাষা আমরা কোথায় পাব?

    সম্পূর্ণ একমত।

    আমিতো চোর না, আমি মেধাবী এবং পরিশ্রম করে আমার পরিবারের রুটি-রুজি উপার্জন করি। আথচ ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে থাকি আমি, কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় আমার, ক্লান্ত-ধূসর-মলিন হয়ে যায় আমার স্বপ্ন, আর ট্র্যাফিক প্রোটকল নিয়ে সাঁই করে চলে যায় মন্ত্রী/চোর। কীট পতঙ্গের মত মারা যায় তারেক মাসুদ আর প্রোটকল নিয়ে ঘুরে বেড়ায় যোগাযোগ মন্ত্রী। হা!

    ভাইরে কিছু একটা করা দরকার। সব ক্যাডেট মিলেও কি আমরা কিছু করতে পারি না??? দেশে কমপক্ষে ১৫,০০০ ক্যাডেট পাশ করেছে ক্যাডেট কলেজ থেকে।

    ভাই লেখাটা বেশ ভালো হইছে। এমন লেখনীই আমাদের এখন বেশী প্রয়োজন। আওয়ামীলীগ কে ঠেকাইতে না কিংবা বিএনপিকে উঠাইতে না। দেশকে এইসব দুর্বৃত্ত আর দুষ্কৃতিকারীদের থেকে বাচাইতে।

    জবাব দিন
    • মুরাদ (৯০-৯৬)

      ধন্যবাদ, শিশির।

      সব ক্যাডেট মিলেও কি আমরা কিছু করতে পারি না???

      হতে পারে ক্যাডেটরা মস্তিস্কের মত চিন্তাটা শুরু করতে পারে বা ছড়িয়ে দিতে পারে কিন্তু কাজটা করতে হবে সবাইকে নিয়ে । একেবারে আস্বাভাবিক কিছুও না। সাত কোটি লোক মোবাইল ফোনে কথা বলে আর দশ লাখের ও বেশী ফেসবুক আকাউনট । কিছু একটা হবে হয়তো। ভাল থেক


      শামীম মুরাদ

      জবাব দিন
        • মুরাদ (৯০-৯৬)

          বাটুকেশ্বর দত্তের নাম শুনেছ ? ভগত সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ, রাজগুরু, সুখদেভ, ক্ষুদিরাম এদের কথা মনেহয় শুনেছ। ব্রিটিশদের কাছ থেকে এদেশকে মুক্ত করার জন্য এরা প্রান দিয়েছিল, এদের সাথের অনেকেই তখন আন্দামান দীপপুঞ্জের সেলুলার জেলে আটকা ছিল, এদের বেশির ভাগ ছিল বাঙ্গালী। দেশ স্বাধীন হলে এরা যখন মুক্তি পেল, দেখল দেশ ভাগ হয়ে গেছে। নোয়াখালি, বারিশাল, বগুরা এলাকার অনেক তরুণ হিন্দু তাদের মধ্যে ছিল, যারা আবিষ্কার করে যে তাদের পরিবার বাংলা ছেড়ে ইন্ডিয়াতে চলে গেছে।আসলে ইতিহাস বলে তরুণ, যুবাদের ত্যাগেই বড়, অর্থবহ কিছু হয়।

          মেজর কামরুল ইসলাম ভুঁইয়া, একজন অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় এক্স-ক্যাডেট,মুক্তিযোদ্ধা; তার জনযুদ্ধের গনযোদ্ধা নামের বইটা পেলে পড়ে দেখ। একটা যুদ্ধে তরুণ, যুবা, কৃষক, সাধারণ মানুষদের অবদান কতটা থাকে।ইন ফ্যাক্ট, কাচের ঘরে যারা থাকে ঢিল ছোঁড়াছুড়ি তারা পছন্দ করে না । আর তাছাড়া এখন আন্দোলন মানে জ্বালাও পোড়াও না, এখন আন্দোলন মানে বেশী মানুষকে উন্নত শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসা। রাষ্ট্র নামক যন্ত্রের পরিচালনায় তাদের সরাসরি অংশগ্রহন নিশ্চিত করা। শিক্ষিত সমাজ তৈরি করতে পারলে রাজনীতিবিদদের জবাবদিহিতা বাড়বে, নির্বাচনের আগে কাঁঠালের পাতা খাইয়ে ছাগল বশে আনার মত টাকা ছড়িয়ে ভোট কিনতে পারবে না। ভাল থেক। (সম্পাদিত)


          শামীম মুরাদ

          জবাব দিন
          • আসাদুজ্জামান (১৯৯৬-২০০২)

            হ্যাঁ ভাই...।। এই কথাগুলোও আমি শুনতে চাচ্ছিলাম।

            Right persons in right places..... accountability... participation of mass people in the Government.

            কিন্তু ভাই আমার মনে হয় এইদেশের জন্য কথাগুলো একদমই তাত্ত্বিক। কারন দেখেন, এদেশের মানুষজন একটা চক্রে বিদ্যমান। হয় লীগ না হয় দল। বিকল্প নেই। বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলেও দেখা যায় প্রধানত দুই দল। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনেক উন্নত। তাদের রাজনীতি রাজা হওয়ার জন্য নয়। বিরোধী দলকে শত্রু হিসেবে চিন্‌হিত করার জন্য নয়।

            আমরা বলি গুড গভার্নেন্সের কথা। তবে আমার ধারনা এইটা সম্ভব নয়, যতদিন না আমরা আমাদের নৈতিক উন্নয়ন ঘটাই একদম তৃনমূল পর্যায়ে, যার জন্য সবার স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর প্রয়োজন নেই। ডিগ্রীকে অবমূল্যায়ন করছি না, তবে নৈতিকতার ব্যাপারে সামাজিক জাগরনকে বিশেষভাবে উল্লেখ করার প্রয়োজন অনুভব করছি।

            জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।