ওরিয়েন্টালিজম বিষয়ে আমার ভাবনা

সিসিবি’তে বেশ কয়েকজনকে কথা দিয়েছিলাম যে, ওরিয়েন্টালিজম সম্পর্কে লিখবো। ফিলিস্তিনী বংশোদ্ভূত, আমেরিকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক এডওয়ার্ড সাইদ ১৯৭৮ সালে এই বই প্রকাশ করেন। এটা আমার এ’ যাবতকালে পড়া অন্যতম আকর্ষনীয়+প্রভাববিস্তারকারী বই। আমার দৃষ্টিতে, মুক্তবুদ্ধির চর্চায়- বিশেষ করে জ্ঞানবিজ্ঞানের বর্তমান পাঠ্যসূচির ইউরোসেন্ট্রিক পরিমন্ডলে- এই বই বিশেষভাবে উপকারী।

মূল আলোচনায় যাবার আগে একটা বিষয় বলে নেই।- আমার ক্লাস শুরু হয়ে যাওয়ার কারনে এই লেখাটা তৈরীতে আমি খুব একটা সময় দিতে পারিনি। একারনে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি জটিল মনে হতে পারে। তাছাড়া, বিষয়ের ব্যাপ্তির কারনে সবগুলো যুক্তির পক্ষে উদাহরনও দিতে পারলাম না লেখার আকার আরো বেড়ে যাবার আশংকায়। তবে শেষ অংশে এই ধারায় বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিতে আমার নিজের একটা গবেষনার উল্লেখ করেছি যা ওরিয়েন্টালিজমের মূল বক্তব্য বুঝতে সহায়ক হবে আশা করি। এই লেখার উদ্দেশ্য আগ্রহী পাঠকদের কাছে অল্পকথায় ওরিয়েন্টালিজমের মূল বক্তব্য তুলে ধরা। কেউ বিশেষভাবে আগ্রহী হলে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।

-এই লেখার বিষয়বস্তু কারো ভাল লাগলে আমার এই পরিশ্রম সার্থক। আর এতে যদি কোন ভুল থাকে, বা এটা কাউকে কোনভাবে আঘাত দেয়, তার দায় স্বীকার করে আমি আগে থেকেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তাহলে আলোচনা শুরু করা যাক।-

এককথায়, ওরিয়েন্টালিজম হল পাশ্চাত্যের গবেষকদের প্রাচ্যকে জানার, আবিষ্কার করার, এবং এই বিষয়ক জ্ঞানচর্চা করার একটি বিশেষ ধারা (আলোচনার সুবিধার্থে আমি জ্ঞানচর্চা পদ্ধতি বলবো)। এটি সামাজিক বিজ্ঞানে সর্বাধিক পঠিত, আলোচিত, এবং অনুসৃত একটি চিন্তাধারা (মাত্র ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত, তারপরেও গুগল স্কোলারস এর হিসাব অনুযায়ী এর সাইটেশন ৩০০০ এর উপরে!)। এমনকি এটি বেশ কিছু একাডেমিক ডিসিপ্লিনেরও জন্মকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করেছে, যেমন, পোষ্টকলোনিয়াল ষ্টাডিজ। এটি গবেষককে মুক্তবুদ্ধির পথ দেখায়, বিশেষ করে যখন কেউ তার পরিচিত গন্ডি ছেড়ে অন্য দল/সমাজকে পাঠ করতে যায়।

এই ওরিয়েন্টালিজম ধারনার প্রবক্তা হলেন এডওয়ার্ড সাইদ (Edward Said) (তার সম্পর্কে কিছু বললাম না, নেটে অনেককিছু সহজেই পাওয়া যাবে বলে)। তিনি পাশ্চাত্যের স্কলারদের (বিশেষ করে এনলাইটেনডমেন্ট যুগে) প্রাচ্য-বিষয়ক গবেষনা রীতির একটা ঐতিহাসিক পর্যালোচনার মাধ্যমে এই ধারনায় আসেন। তার মতে, পাশ্চাত্যের এই গবেষনা পদ্ধতি একটা বিশেষ ধারা অনুসরন করে, যা’র মধ্য দিয়ে প্রাচ্যের যে ছবিটা আসে তা বাস্তব প্রাচ্য থেকে অনেকটাই আলাদা। কিন্তু এরপরও সেই জ্ঞান, প্রাচ্যের সেই খন্ডিত/বিকৃত ছবিই গ্রহনযোগ্য হয়, কারন তা প্রাচ্য-বিষয়ে পাশ্চাত্যের পূর্ব-ধারনাগুলোকেই পুণর্ব্যক্ত করে। প্রাচ্য পাশ্চাত্য থেকে আলাদা, এবং তা পাশ্চাত্যের মাপকাঠিতে ক্রমক্ষয়িষ্ণু, ধবংসের দিকে। (একারনে সাইদ পাশ্চাত্য আর প্রাচের মধ্যে এই যে পার্থক্য টানা হয়, তাকে বলেছেন Ontological and Epistemological)। প্রাচ্য, তথা ইউরোপের বাইরে যেকোন স্থান-অঞ্চল-দেশ সম্পর্কে ইউরোপীয়দের মাঝে একটা রোমান্টিক ধারনা সর্বদা বিদ্যমান। সেই ধারনা অনুযায়ী তারা একটা কাল্পনিক ইমেজ নিয়ে প্রাচ্যে আসে। কিন্তু তা স্বভাবতই খুঁজে পায় না। আবার বাস্তবের প্রাচ্যকে অস্বীকারও করতে পারে না। এ অবস্থায় তারা একদিকে প্রাচ্যকে নিয়ে আরো কাল্পনিক কাহিনী তৈরী করে, অন্যদিকে তাদের পূর্ব-ধারনা+ইচ্ছা অনুযায়ী প্রাচ্যকে পরিবর্তনের প্রয়াস পায়। তাদের দৃষ্টিতে প্রাচ্যের সমগ্র অঞ্চল এক, অভিন্ন ও সমন্বিত (essentially homogeneous) যা তাদেরকে সমগ্র প্রাচ্য সম্পর্কে একটা ভ্রান্ত ধারনা দান করে যে, প্রাচ্যের সব মানুষ, সমস্ত গোষ্ঠি ও দল, সমাজ, সংস্কৃতি একই রকম। (কাজেই প্রাচ্যের যেকোন একটা বিশেষ স্থানের, বিশেষ সময়ের, বিশেষ কিছু সমগ্র প্রাচ্যকে প্রতিনিধিত্ব করে)।

ঐতিহাসিক পদ্ধতি অনুসরন করে সাইদ ওরিয়েন্টালিজম এর উতপত্তি এবং বিকাশকে তিনটি পর্যায়ে দেখাতে পেরেছেন। এগুলো নিম্নরুপঃ
প্রথম পর্যায়– এটা মূলত শুরু হয় ১৮শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ইউরোপীয়দের সমুদ্রপথে ও স্থলপথে ভিনদেশে যাত্রার সাথে (যাকে তারা বলে নতুন দেশ আবিষ্কার, যেমন, ভারতবর্ষ আবিষ্কার, আমেরিকা আবিষ্কার, ইত্যাদি)। এই পর্বের দুটো বৈশিষ্ট্যঃ এক, প্রাশ্চাত্যের কাছে প্রাচ্যের ভাষাতাত্ত্বিক গুরুত্ব এবং সেই কারনে প্রাচ্যের প্রতি পশ্চিমের একাডেমিক কম্যুনিটির একটা ইন্টারেষ্ট; দুই, প্রাচ্যকে স্থির-অপরিবর্তশীল-অনড় ধরে নিয়ে সাধারনীকরন এবং প্রাচ্যকে ক্রমাগত বিভাজন-উপবিভাজন। এখানে পাশ্চাত্যের বাইরে যেকোন দেশকেই একই রকম ধরে নেওয়া হয়। -এইপর্বের মূলসুর ছিল প্রাচ্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, তা আলোচনা, পর্যালোচনা, প্রকাশনা, ইত্যাদির মাধ্যমে প্রাচ্যকে “represent” করা। এই উপস্থাপনার উদ্দেশ্য ছিল পাশ্চাত্যকে দেখানো যে প্রাচ্য “আসলে দেখতে কেমন”, আর এর অব্যক্ত+অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ছিল পাশ্চাত্যের লোকজনকে দেখানো যে প্রাচ্য তাদের থেকে কতটা আলাদা, অধঃস্তন, পশ্চাতপদ। আর তথ্য সূত্র ছিলো মূলত অভিযাত্রী আর পরিব্রাজকদের ভ্রমনকাহিনী আর তার সাথে মিশিয়ে আজগুবি কল্পকাহিনী; যেমন- কায়রোর বাজারের মধ্যে প্রকাশ্যে বেশ্যাগমন, ভাব নেওয়ার লোভে স্বেচ্ছায় এক যুবকের প্রকাশ্য রাজপথে বানর-কর্তৃক ধর্ষিত হওয়া, মৃত্যুর পর পুনরুত্থিত একজন দরবেশের অগণিত মুসলিম মহিলাকর্তৃক ক্রমাগত মাষ্টারবেইট করে দেবার ফলে আবার মৃত্যুবরন, ইত্যাদি।

দ্বিতীয় পর্যায়– এটি মোটামুটি ১৮৭০-৮০ থেকে শুরু হয়ে ১ম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত চলেছে। এই সময়কালে ইউরোপের কলোনিয়াল শক্তিগুলো, বিশেষকরে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স- বিশ্বের প্রায় ৮৫% এলাকা দখল করে ফেলে। এই পর্যায়ে ওরিয়েন্টালিজমে চারটি প্রবনতা দেখা যায়ঃ expansion, historical confrontation, sympathy and classification। এক, মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপীয় কলোনিয়ালিজম বিশ্বের অন্যদিকেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। যেমন, আফ্রিকা, চীন, ভারত, জাপান ইত্যাদি। আর খ্রীষ্টান ও ইহুদীবাদের সাথে আরবী ও ইসলামের ধর্মের তুলনার পাশাপাশি চলে আসে সংস্কৃত, বৌদ্ধধর্ম, জোরাস্ট্রোবাদ ও মনু সংহিতার তুলনা। এই পর্যায়ে কল্পকাহিনী ও ভ্রমন-বৃত্তান্তের সাথে যোগ হয় কলোনিয়াল শাসকদের বিবরনী, মিশনারী প্রচারকবাহিনী আর কিছু কিছু বৈজ্ঞানিক অভিযান (যেমন, নৃ-তাত্ত্বিক গবেষনা)। এভাবে ‘একাডেমিক ও মতাদর্শিক ইন্টারেষ্ট+রাজনৈতিক ক্ষমতা’ প্রাচ্যের পাঠে পাশ্চাত্যের ইউরোসেন্ট্রিক ধারাকে আরো শক্তিশালী করে। দুই, ইউরোপের ঐতিহাসিকেরা প্রাচ্যকে নতুন করে পাঠ শুরু করে এই উদ্দেশ্যে যে, প্রাচ্যের সাথে তুলনামূলক আলোচনায় তাদের পাশ্চাত্যকেই ভালো করে জানা হবে। যেমন, গীবন প্রাচ্যে ইসলামের উত্থান বিশ্লেষনের মাধ্যমে রোমের পতন ব্যাখ্যার প্রয়াস পেলেন। তিন, কিন্তু কিছু কিছু স্কলারের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনাকে ছাপিয়ে চীন থেকে পেরু পর্যন্ত সমস্ত মানবসমাজকে জানার আগ্রহও দেখা যায়। এদের মতে, সকল কালচারেই নিজ নিজ স্বকীয়তা বিদ্যমান, এবং একারনে তাদের পাঠ করতে হলে সিমপ্যাথি (empathy নয়) থাকতে হবে। চার, এসময় প্রাচ্য-গবেষকরা classify করা শুরু করে, -মানুষ এবং প্রকৃতি দুইই।এই প্রকৃয়ায় তারা প্রাচ্যের মানুষ ও সমাজ় সম্পর্কিত সবকিছুকেই একটি বিশেষ প্রপঞ্চের (ওরিয়েন্ট বা প্রাচ্য) “নম্বর, রুপ, বা অংশ” হিসেবে বিবেচনা শুরু করে। এই শ্রেনীবিভাজনে বাহ্যিক পার্থক্যের সাথে যুক্ত হয় মোর‌্যাল পার্থক্য; আর বলাই বাহুল্য যে, এই মোর‌্যাল পার্থক্য বিচারে ইউরোপীর মোরালকে মাপকাঠি ধরা হয়। যেমন, (নেটিভ) আমেরিকানরা হলো “red, choleric, erect”, এশিয়ানরা “yellow, rigid, melancholic”, আফ্রিকানরা “black, phlegmatic,lax”। -এই পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্যগুলোকে আবার ধরে নেওয়া হলো জেনেটিক!

– এই চারটি ধারার উপর ভিত্তি করেই ওরিয়েন্টালিজম দাড়িয়ে।

তৃতীয় পর্যায়– পূর্বের পর্যায়ে ওরিয়েন্টকে জানা+জানার প্রকৃয়া সম্পন্ন করা গেছে। তাই এই পর্যায়ে প্রাচ্যবিদরা কিভাবে প্রাচ্যকে ভালোভাবে ‘ম্যানেজ’ (কল্যানমূলক শাসন) করা যায় সেই প্রকল্প হাতে নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় উদ্ভব হয় প্রাচ্য-বিষয়ক জ্ঞানের নানা বিশেষায়িত শাখা এবং বিশেষজ্ঞ (বিশেষ করে, সামাজিক বিজ্ঞানে)। এটাই ওরিয়েন্টালিজমের চুড়ান্ত রুপ।

প্রথম পর্যায়ে প্রাচ্যবিদের কাজ ছিলো তার গবেষনার মধ্য দিয়ে প্রাচ্যকে একটা একক অঞ্চল+সমাজ+সংস্কৃতি হিসেবে পাশ্চাত্যের কাছে তুলে ধরা এবং দেখিয়ে দেওয়া যে প্রাচ্য পাশ্চাত্য থেকে কতটা আলাদা (পতিত অর্থে)। দ্বিতীর পর্যায়ে তার কাজ হলো প্রাচ্যের উপর বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা, এবং এর মাধ্যমে প্রাচ্যের উপর বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা অর্জন করা। তৃতীয় পর্যায়ে ব্যক্তি-বিশেষজ্ঞের জায়গায় সরাসরি চলে আসে প্রতিষ্ঠান ও শাসকবর্গ, কারন প্রাচ্যকে (কলোনীয়াল সাম্রাজ্য) ম্যানেজ করতে প্রতিষ্ঠান ও সরকার ব্যক্তির তুলনায় বেশি দক্ষ (এফিসিয়েন্ট)।

সাইদের আলোচনায় ওরিয়েন্টালিজমের যে বৈশিষ্ট্য সমূহ পাওয়া যায়, তা’র সারাংশ নিচে উল্লেখ করা হলঃ

১। ওরিয়েন্টালিজম প্রকৃতপক্ষে একটা আধূনিক রাজনৈতিক-বুদ্ধিবৃত্তিক প্রকল্প, যেখানে প্রাচ্যের থেকে পাশ্চাত্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর লক্ষ্য হল, প্রাচ্যকে পাশ্চাত্যের কাছে পাশ্চাত্যের আকাংখা অনুযায়ী (পাশ্চাত্যের মাপকাঠিতে) উপস্থাপন করা।

২। পাশ্চাত্যের চোখে প্রাচ্য সর্বদা প্রাশ্চাত্যের কিছু কিছু বিষয়ের মতো। যেমন, জার্মান রোমান্টিকদের কাছে ভারতবর্ষের ধর্ম আসলে জার্মানো-ক্রিশ্চিয়ান প্রকৃতিবাদ (pantheism) এর প্রাচ্য-রুপ (যা আসলে একধরনের বিকৃতি)। প্রাচ্যবিদরা এভাবে প্রাচ্যকে পাশ্চাত্যের একেক বিষয়ের মতো করে তৈরী করেই চলে নিরন্তর। এই প্রকৃয়াটা আবার প্রাতিষ্ঠানিকঃ এটা ক্লাসে পড়ানো হয়, এই বিষয়ে গবেষনা সেন্টার আছে (যেমন, বিভিন্ন দেশের এশিয়াটিক সোসাইটি, লন্ডন ইউনিভারসিটির SOAS), গবেষনা পত্রিকা আছে, বিশেষ ভোকাব্যুলারী আছে – সবগুলো একত্রিত হয়ে একটা প্রাচ্য-বিষয়ক জ্ঞান (narrative) তৈরী করে পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মতবাদ অনুযায়ী।

৩। এই প্রাতিষ্ঠানিকীকরনের ফলে প্রাচ্য সম্পর্কে চিন্তাভাবনা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এমনকি যুগের সবথেকে সৃষ্টিশীল গবেষক/চিন্তাবিদের পক্ষেও প্রাচ্য-বিষয়ক নতুন কিছু আবিষ্কার করা বা বলা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারন, তা ক্লাসে পড়ানো হবে না, পত্রিকায় প্রকাশ হবে না, সোসাইটি স্বীকৃতি দেবেনা। কাজেই তা জ্ঞান বলে গৃহীত হবে না। (যেমন, ভারতীয়দের দর্শন, চৈনিকদের নৌ-শিল্প)। আর যা কিছু প্রাচ্য সম্পর্কে পাশ্চাত্যের পুর্ব-মনোভাবের সাথে মিলে যাবে, তা কোন বাঁধা ছাড়াই সরাসরি জ্ঞান হিসেবে গৃহীত হবে (enters the discourse)। যেমন- ১৯শতকে ভারতবর্ষ সম্পর্কে সবথেকে বেশি স্বীকৃতীপ্রাপ্ত লেখক জেমস মিলস ‘ভারতে আসা+ভারতের কোন ভাষা শেখা’ ছাড়াই ভারতের সবথেকে গ্রহনযোগ্য ইতিহাস লিখে ফেললেন! প্রকৃতপক্ষে, ওরিয়েন্টালিজম হল একটা রাজনৈতিক প্রকল্প, যা’র মূল উদ্দেশ্যই হল প্রাচ্যকে (অপরিচিতকে) পাশ্চাত্য (পরিচিত) থেকে আলাদা করে উপস্থাপন করা।

৪। যেহেতু প্রাচ্য বিষয়ক জ্ঞানচর্চা শুরুতেই প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের মাঝে বিভেদ ধরে নিয়ে যাত্রা করে, তাই এই প্রকৃয়ার মধ্য দিয়ে যাবতীয় গবেষনা, বিশ্লেষন, নীতিনির্ধারন, ইত্যাদি আরো বিভাজনমূলক হয়, এবং তা প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিভাজনকে আরো বিস্তৃত করে। এভাবে এটি প্রাচ্যের সাথে পাশ্চাত্যের ইন্টার-কালচারাল যোগাযোগকে সীমাবদ্ধ করে ফেলে। এই প্রকৃয়ায় যেহেতু পাশ্চাত্যের নর্মস+ভাল্যুজকে মাপকাঠি ধরে নিয়ে বিচার+বিশ্লেষন করা হয় শুধু প্রাচ্যকে, তাই প্রাচ্য-বিষয়ক সমস্ত জ্ঞান স্থির-বৈজ্ঞানিক সত্যের রুপ ধারন করে।

৫। প্রকৃতপক্ষে কলোনিয়াল ক্ষমতার আশ্রয়ে প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রাচ্যকে (প্রাচ্যবিষয়ক জ্ঞানকে) তৈরী করা হয়। আর তাই দেখা যায়, প্রাচ্যকে চিত্রিত করা হয় আদালতের বিচারের বিষয়ে, ক্লাসের পাঠ্যে, স্কুল বা জেলখানায় নিয়ন্ত্রনে, ম্যাপে চিহ্নিত স্থান হিসেবে।

৬। ওরিয়েন্টালিজম হল একটা সাংস্কৃতিক ক্ষমতা। একঅর্থে, ওরিয়েন্টালিজম একটা লাইব্রেরী যেখানে প্রাচ্য বিষয়ক সব তথ্য কোনপ্রকার ক্লাসিফিকেশন না করেই একটা সাধারন নামে সংগ্রহে রাখা হয়। যেমন- আরব, মিশর, ভারত, চীন সবই এক ক্যাটাগরীতে। কারন ধরেই নেওয়া হয় যে, প্রাচ্যের সব সমাজ ও মানুষ একই রকম (‘অদ্ভুত’, ‘অপরিচিত’, ‘যুক্তিহীন’, ‘রহস্যময়’, ইত্যাদি)। এই বৈশিষ্ট্য গুলোকে ধরে নেওয়া হয় ধ্রুব।

৭। ওরিয়েন্টালিজমের ফলে গবেষকদের মধ্যে আসে একটা ঐক্যমতঃ তাদের কাছে একটা নির্দিষ্ট ধরনের বিষয়, মন্তব্য, বিশ্লেষন যথার্থ হিসেবে গৃহীত হয়। একারনে এইসব রীতিকে মনে করা হয় প্রাচ্যকে জানার ও বোঝার সঠিক পদ্ধতি।

৮। প্রাচ্য সম্পর্কে যা কিছুই বলা বা লিখা হোক না কেন, তার মাধ্যমে এটাই বোঝানো হয় যে, প্রাচ্যবিদ নিজে অবস্থান করে প্রাচ্যের বাইরে- শারীরিক ও নৈতিক উভয় দিক থেকেই। এর মাধ্যমে আরেকটা বিষয়ও বোঝানো হয় যে, প্রাচ্যের লোকদের আসলে নিজেদেরকে নিজেরাই প্রকাশ করার সামর্থ নেই। তাই পাশ্চাত্যের গবেষকদেরই দায়িত্ব হল প্রাচ্যকে উপস্থাপন করা।

ওরিয়েন্টালিজমে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য অসম ক্ষমতা নিয়ে অবস্থান করে, যেখানে পাশ্চাত্য সব সময় ক্ষমতাবান। একারনেই পাশ্চাত্য প্রাচ্যের হয়ে কথা বলে, কিন্তু তা’র শ্রোতা আবার পাশ্চাত্য। যেহেতু প্রাচ্যকে বিবেচনা করা হয় পুরোনো, পতনোম্মুখ এবং রাজনৈতিকভাবে স্থবির, পাশ্চত্যের কাছে একে উদ্ধার করা তাই একটা নৈতিক দায়িত্ব হয়ে পড়ে। এই করতে গিয়ে তারা প্রাচ্য, প্রাচ্যের মানুষ, সংস্কৃত, সভ্যতা, ইত্যাদি সম্পর্কে তত্ত্ব তৈরী করে। শত বছরের পরিক্রমায় ওরিয়েন্টালিজমে পরিবর্তন আসে, কিন্তু তা কেবল তথ্যের উতসে; তথ্যের এবং সেই সাথে প্রাচ্যেরও প্রাথমিক বৈশিষ্ট্যগুলো অটুট থেকে যায়। যেমন, ওরিয়েন্টালিজমের আগে+শুরুতে ইউরোপীয়দের ধারনা ছিল যে ‘আরব হচ্ছে খ্রীষ্টান দুনিয়ার পার্শ্ববর্তী বিধর্মীদের একটা অভয়াশ্রম এবং মুহাম্মদ একজন ধূর্ত ধর্মত্যাগী’; আর ২০ শতকে এসেও একজন প্রাচ্যবিদের চোখে ‘ইসলাম একটা সেকেন্ড-ক্লাস এরিয়ান হেরেসি’।

ধারাবাহিকভাবে ইউরোসেন্ট্রিক ধারনা ও অনুরুপ পদ্ধতিতে জ্ঞানচর্চার ফলে পাশ্চাত্যের স্কলারদের মধ্যে একটা অন্ধবিশ্বাস (dogma) জন্মে যা ওরিয়েন্টালিজমকে ক্রমশ একাডেমিক গ্রহনযোগ্যতা ও স্থায়িত্ব দেয়। প্রাচ্য সম্পর্কে প্রাশ্চাত্যের প্রাথমিক রোমান্টিসিজম থেকে জন্ম নেয় বুদ্ধিবৃত্তিক আন্ডারষ্ট্যান্ডিং, তার থেকে আসে বিশেষজ্ঞ+প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ডিসিপ্লিনারী কন্ট্রোল (সাম্রাজ্যবাদ)। এভাবে পতনোম্মুখ প্রাচ্যের অক্ষম, কিন্তু স্বেচ্ছাচারী মানুষদের রক্ষা, শাসন ও উন্নয়নের স্বাভাবিক (natural) সমাধান হিসেবেই আসে পাশ্চাত্যের সক্ষম, গনতন্ত্রমনা শাসকদের মানবতাবাদী শাসন (সাম্রাজ্যবাদ)। প্রকৃতপক্ষে, ওরিয়েন্টালিজমে প্রাচ্যকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন প্রাচ্য সর্বদা বাইরে থেকে সাহায্য ও পরিবর্তনের মুখাপেক্ষী; আর যেহেতু সভ্যতা, সংস্কৃতি আর জাতিগতভাবে পাশ্চাত্যই শ্রেষ্ঠ, তাই সেই দায়িত্ব (তথা প্রাচ্যকে উদ্ধারের দ্বায়িত্বটা) পড়ে পাশ্চাত্যের ঘাড়ে! যেহেতু প্রাচ্য নিজের উপর নির্ভর করে চলতে পারেনা, নিজেকে নিজে উপস্থাপন করতে পারেনা, নিজের পতন নিজে ঠেকাতে পারেনা, তাই পাশ্চাত্যের নৈতিক দায়িত্ব হয়ে পড়ে প্রাচ্যকে সাহায্য করার। এভাবে এই ধারনাকে স্বভাবিক করে ফেলা হয় যে, প্রাচ্যের উচিত সব সময় পাশ্চাত্যের সম্রাজ্যবাদের অধীনেই থাকা।

উপরের আলোচনা থেকে এমনটি মনে হতে পারে যে, ওরিয়েন্টালিজম অপ্রতিরোধ্য। কিন্তু সাইদের মতে, এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিভাবে?-
১। ওরিয়েন্টালিজমের ব্যাপারে গবেষকের বুদ্ধিবৃত্তিক ও ব্যক্তিগত সতর্কতা যে, মোটাদাগে প্রাচ্য/পাশ্চাত্য বিভাজন জ্ঞানচর্চায় পদ্ধতিগত ভাবে সংকীর্ণ,
২। উপরোক্ত কারনে গবেষকের গবেষনা/জ্ঞানচর্চায় এই অনিবার্য পদ্ধতিগত কুপমন্ডুকতা (straightjacket) এড়িয়ে চলা,
৩। গবেষনায় বিমূর্ত তত্ত্ব ও ধারনার বদলে মানুষের প্রকৃত+বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে তথ্য সংগ্রহ ও বিচার-বিশ্লেষন করা।

ওরিয়েন্টালিজমে প্রাচ্য/পাশ্চাত্য সম্পর্ক মূল আলোচ্য বিষয় হলেও ভূমিকাতেই বলেছি যে, এই পদ্ধতি যেকোন ধরনের সামাজিক গবেষনায় প্রাসঙ্গিক যেখানে গবেষক নিজ সমাজ ছেড়ে অন্য দল/সমাজ/জাতির মধ্যে গবেষণা করতে যায়। আর তাই, এই পদ্ধতি এক দেশ/সমাজ/সংস্কৃতির গবেষক আরেক দেশ/সমাজ/সংস্কৃতি, পুরুষ হিসেবে নারীসমাজ, হেটেরোসেক্সুয়াল হিসেবে হোমোসেক্সুয়াল সমাজ, সামাজিক ব্যক্তি হিসেবে অসামাজিক দল, যেমন নেশাখোর, অপরাধী, মানসিক প্রতিবন্ধী, ইত্যাদি গবেষনায় নতুন দিগন্ত উম্মোচিত করেছে। আমারও ছোট্ট একটা অভিজ্ঞতা আছে এমন একটা গবেষনা করার।

ঢাবি’তে মাষ্টার্স এর থিসিস হিসেবে আমি ২০০৩/০৪ এ বাংলাদেশে মাজারে গাঁজার ব্যবহার নিয়ে সেই গবেষনাটা করেছিলাম। আমি দেখেছি যে, আমাদের দেশে মাদকের ব্যবহারকে একটা সরল-সাধারন সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখা হয়, যেখানে সব ধরনের মাদকদ্রব্য, তার ব্যবহারকারী, ব্যবহারের কারন, ফলাফল- সবই আশ্চার্যজনক ভাবে একই রকম। কোন পার্থক্য নাই। আর তাই, আইনও করা হয়েছে সেই ভাবে যে, যেকোন মাদকদ্রব্যই বেআইনী+শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যেন সকল প্রকার মাদকদ্রব্য+ব্যবহারকারী একই রকম, এবং স্থান-কাল-পাত্রভেদে সব সময়ই তারা একই রকম। পাশাপাশি, কিছু কিছু মাদকের ক্ষতিকর ব্যবহারের শারীরিক+সামাজিক ক্ষতি দেখে ধরে নেওয়া হয় যে, সব ধরনের মাদকদ্রব্য ক্ষতিকর, এবং কিছু কিছু মাদকাসক্তের অসামাজিক কার্যকলাপ দেখে সকল মাদকসেবীকে অসামাজিক বলে ঘোষনা করা হয়। আর যেহেতু মাদকদ্রব্য ক্ষতিকর+মাদকসেবী ক্ষতিগ্রস্ত, ভালো মানুষদের (পড়ুন মানবিকতাবাদী সমাজপতি/শাসকদের) তাই নৈতিক দায়িত্ব হয়ে পড়ে দেশ থেকে সমস্ত মাদক ও মাদকসেবন উচ্ছেদ করা; সেই সাথে মাদকসেবীদের আরোগ্য করা। তারা স্বেচ্ছায় না ফিরলে এমনকি মারধোর, জেল-জরিমানা করেও ফিরতে বাধ্য করা। এখানে ইনডিভিজ্যুয়ালী দেখা হয় না কোনকিছুই; মাদক হিসেবে সংজ্ঞায়িত যেকোন দ্রব্যই নিষিদ্ধ, আর যেকোন উদ্দেশ্যে যে কেউই তা গ্রহন করুক, তা’ শাস্তিযোগ্য।

আমি দেখলাম (এবং দেখালামও) যে, বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবে সবথেকে বেশী দিন ধরে, সবথেকে বেশী পরিমানে, সবথেকে বেশী লোকে ব্যবহার করে গাঁজা, মাজারে মাজারে। তারপর এডওয়ার্ড সাইদের দেখানো পথে আগে থেকে তৈরী করে রাখা সব তত্ত্ব বাদ দিয়ে সরাসরি গেলাম মাজারে, “নিজের চোখে দেখে+নিজের কানে শুনে+নিজের বুদ্ধি দিয়ে বুঝে” তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জানার জন্য। সেখানে গিয়ে দেখলাম, অনেক ধরনের মাদকসেবীদের একশ্রেণী এই গাঁজাসেবীদের মধ্যেও আছে আরো নানান প্রকার বিভাজন। তাদের গাঁজা সেবনের উদ্দেশ্যও ভিন্ন ভিন্ন। ঠিক যেরকম প্রাচ্যের মধ্যে নানান দেশ/সমাজ/সংস্কৃতি আছে, গাঁজাসেবীদের মধ্যেও আরো অনেক ভাগ আছে। কিন্তু প্রাচ্যবিদ যেমন প্রাচ্যের এই সকল পার্থক্যকে মুছে দিয়ে একটা কাল্পনিক ‘হোমোজেনাস প্রাচ্যে’র গল্প তৈরী করে, সেই ভাবে আমাদের দেশেও একটা গল্প তৈরী করা হয় যেখানে সকল মাদক+মাদকাশক্তি+মাদকসেবী একরকম। এর ফলে যা হয় তা হলো, কয়েকজনের দোষে আরো অনেক নির্দোষ মানুষ অযথাই নিবর্তনমূলক (repressive) শাসনের ভুক্তভোগী হয়। (আমার এই থিসিসটা আর্টিকেল হিসেবে Contemporary Justice Review, ভল্যুম ১১, নং ৪ (ডিসেম্বর, ২০০৮)- এ পাবলিশ হইছে 🙂 )।

একই ভাবে, আরবের বিকৃতমস্তিস্ক কোন এক শেখের হারেমে কয়েক গন্ডা বিবি দেখে প্রাচ্যবিদরা এই কাহিনী ফাঁদে যে সারা প্রাচ্যেই শাসক, তথা পুরুষেরা এইরকম বহুগামী। পারস্যের কোন এক স্থানে অগ্নিপুজা দেখে পুর্ব-অভিজ্ঞতার অভাবহেতু আসল ঘটনা বুঝতে না পেরে গল্প বানায় যে, প্রাচ্যের লোকেরা শয়তানের পুজা করে। ভারতবর্ষে মন্দিরের গায়ে শৃঙ্গারচিত্র দেখে আসল কাহিনী না বুঝেই বুঝে ফেলে যে প্রাচ্যের লোকেরা বড়ই রহস্যময়, যৌনকাতর। – বর্তমানেও একই প্রকৃয়া চলছেই। আর তাই প্রাচ্যবিদরা (এবং তাদের প্রভাবে সামগ্রিকভাবে পাশ্চাত্যের জনসাধারনও) আফগানিস্তানের একদল ধর্মোম্মাদ তালেবানের পাথর ছুড়ে মানুষ মারার ঘটনা পুরো মুসলিম সমাজের বৈশিষ্ট্য বলে ধরে নেয়, একজন লাদেন ও তার কয়েকশ সাঙ্গাতদের দেখে ধরে নেয় সমস্ত মুসলমানই সন্ত্রাসী। আর এই প্রকৃয়ার আবশ্যম্ভাবী ফলস্বরূপ, প্রাচ্যের বিপন্ন মানবতাকে উদ্ধারের জন্য তাই Humanitarian Intervention হয়ে পড়ে পাশ্চাত্যের নৈতিক দায়িত্ব, কার্যতঃ যা’ কিছু মানুষের দোষে প্রাচ্যের সমস্ত মানুষের ভোগান্তি (গনহত্যা, ফোর্সড ডিসপ্লেসমেন্ট, অনাহারজনিত অপুষ্টি, সমাজকাঠামোর ক্ষয়, ইত্যাদি) ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি+পারেনা।

১৫,১৫৬ বার দেখা হয়েছে

৮০ টি মন্তব্য : “ওরিয়েন্টালিজম বিষয়ে আমার ভাবনা”

  1. তৌফিক

    পড়লাম, অনেক কিছু নতুন ভাবে বুঝলাম ও শিখলাম।

    মাহমুদ ভাই, আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় এখানকার লোকজনদের আমাদের নিয়ে ধারণা দেখে অবাক হয়েছি। একটা উদাহরণ দেই, আমাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে দেওয়াটাকে এরা মোটামুটি "কি আজব দেশরে বাবা" চোখে দেখে। নিজেদের গন্ডির বাইরে চিন্তা করার ক্ষমতা কম। ঢালাও সাধারণীকরণ হয়ে যাচ্ছে বোধহয়, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমার অভিজ্ঞতা এরকমই। উল্টোদিকে, পশ্চিম সম্পর্কে আমাদের ধারণা বরং অনেক পরিষ্কার। ওদের স্কুলগুলোতে ভূগোল বলে কোন বিষয় পড়ায় বলে মনে হয় না। নিজেদের ফিল্ড ছাড়া বাইরের ফিল্ড সম্পর্কে পড়াশোনাও কম। নিজের চোখে দেখা, আসল চিত্র ভিন্নরকমও হতে পারে।

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
      নিজের চোখে দেখা, আসল চিত্র ভিন্নরকমও হতে পারে।

      আসল চিত্রও অনেকটাই এইরকম। তবে সেই দোষ ত সাধারন মানুষের না। কারনটা উপরেই বলেছি যে, এটা একটা প্রতিষ্ঠিত Discourse, যা প্রাচ্য-বিষয়ক ধারনাগুলোকে সাধারন জ্ঞানের মতো করে পরিবেশন করে (অর্থ্যাত, এই ধারনার জন্ম দেয় যে, "প্রাচ্য ত এরকমই")


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  2. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    কায়রোর বাজারের মধ্যে প্রকাশ্যে বেশ্যাগমন, ভাব নেওয়ার লোভে স্বেচ্ছায় এক যুবকের প্রকাশ্য রাজপথে বানর-কর্তৃক ধর্ষিত হওয়া, মৃত্যুর পর পুনরুত্থিত একজন দরবেশের অগণিত মুসলিম মহিলাকর্তৃক ক্রমাগত মাষ্টারবেইট করে দেবার ফলে আবার মৃত্যুবরন, ইত্যাদি।

    😮 😮 এমুন মাতালও দুইন্নায় আছে??

    জবাব দিন
  3. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    অসাধারণ একটি বিষয়কে অত্যন্ত সুন্দর করে উপস্থাপন করলে তুমি মাহমুদ। এই বইটি পড়া শুরু করেছিলাম কিন্তু নানা কারণে শেষ করা হয়ে ওঠেনি। তোমার নির্ভার গদ্য আমাকে আপ্লুত করেছে। আমি খুব গর্বিত বোধ করছি যে, তোমার মতো বিদ্বান একজন ব্যক্তি আমাদের মধ্যে আছে (একটুও বাড়িয়ে বলছি না কিন্তু!)।
    তাছাড়া তোমার নিজের গবেষণার বিষয়বস্তু চয়ন থেকেও বেশী ভালো লেগেছে ফলাফল নিয়ে তোমার বিশ্লেষণ ও অনুধাবন ক্ষমতা।
    আমি মনে করতেই পারি, সবকিছুকে দেখার এবং বোঝার (এ্যাকাডেমিক জগতের বাইরেও) একটি উদারনৈতিক ও পরিণত দৃষ্টিভঙ্গী তুমি ইতিমধ্যেই অর্জন করে নিয়েছো। প্রাণপণে চাই এই চর্চা অব্যাহত রাখো।

    "orientalism" বইখানা পড়তে আবার উদ্বুদ্ধ করলে। সেজন্যে ধন্যবাদ জানানোই বাহুল্য। তোমার জ্ঞানপিপাসা এবং চর্চা শতজীবী হোক।

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      নূপুর ভাই,

      আপনে ত বস আমারে এক্কেবারে মাটিতে মিশায়া দিলেন :shy: ।

      আমি কিন্তু বিশাল দৌড়ের উপর আছি,- এক প্রফেসর আজ ডেকে কইলো আমাকে পড়ায় আরো বেশি মনোযোগী হতে :grr: । তার ক্লাসে আমার পারফর্মেন্স নাকি নেমে যাচ্ছে। ~x(

      আপনার এই কমেন্ট মনে অনেকটা শান্তি এনে দিলো।

      খুব ভালো লাগল যে আমার লেখা আপনাকে বইটা পড়ায় উদবুদ্ধ করেছে। মূল বইটা পড়লে খুবই মজা পাবেন আশা করি। অনেক কিছুই আরো ক্লিয়ার হবে যা আমি এখানে উল্লেখ করিনি।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  4. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    মাহমুদ ভাই,ওরিয়েন্টালিজম সম্পর্কিত কথাগুলোর সারমর্ম আপনার থিসিস তা পড়ে আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল।এরকম জটিল একটা বিষয় আমার মত আকাট মুর্খ যখন বুঝতে পেরেছে, বাকিরাও পারবে।চমৎকার কাজ।ক্যাডেটদের নিয়ে ভুল ধারণাগুলো এর সাহায্যে ব্যখ্যা দেওয়া সম্ভব বলে মনে হচ্ছে।"ইউ থিঙ্ক হোমোসেক্সুয়ালস আর ভেরি লেস ইন নাম্বার ইন বাংলাদেশ?গো টু ক্যাডেট কলেজ"-এন এস ইউ এর ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের অত্যন্ত সিনিয়র এক শিক্ষিকার এই বক্তব্যের জবাবে উনাকে যে সাইজটা দেওয়া হয়েছিল, আপনার এই প্রবন্ধটা পড়া থাকলে আরো ভালমত দেয়া যেত।

    বি দ্র-ভাল খারাপের তর্কে যাচ্ছিনা কিন্তু হোমোসেক্সুয়ালিটি ক্যাডেট কলেজের প্রধান বৈশিষ্ট এবং অধিকাংশ ক্যাডেট এটা করে এইটা যে একটা মিথ্যা কথা সেইটা উনার মত জ্ঞাণী মহিলার মাথায় কেন ঢুকলনা সেইটা আজো আমার কাছে বিস্ময়।আপনার কাছে কোন ব্যাখ্যা হবে, বস?

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
      এইটা যে একটা মিথ্যা কথা সেইটা উনার মত জ্ঞাণী মহিলার মাথায় কেন ঢুকলনা

      এর কারন হলো- ঐ জ্ঞানী ( :grr: ) মহিলা আগে থেকেই ধরে নিয়ে বসে আছে যে ক্যাডেটরা 'ঐ রকম'। আর তাই তার দৃষ্টি শুধু খূঁজে বেড়ায় তার এই ধারনাকে সমর্থন করে এমন সব ঘটনা। এমন দুয়েকটা ঘটনা (বা সন্দেহ) ত পাওয়া যেতেই পারে। আর তখন সেই বিচ্ছিন্ন ঘটনাকেই তিনি ধরে নেন তার পূর্ব-ধারনার যথার্থ প্রমান হিসেবে। ফলে তার পূর্বের ধারনাটা (ক্যাডেটরা 'ঐ রকম') আরো পোক্ত হয়। মহিলা কখনোই বুঝতে পারেন না যে, তিনি যেটাকে সমগ্র ক্যাডেটদের সাধারন বৈশিষ্ট্য হিসেবে জানেন, তা আসলে একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।-

      এই প্রকৃয়ার আরেকটা পার্শপ্রতিক্রিয়া আছে। তা হলো- যেহেতু এই প্রকৃয়া অনুযায়ী সকল ক্যাডেটই 'ঐ রকম', কাজে কাজেই এটা ক্যাডেটদের সাধারন বৈশিষ্ট্য। তাই যারা ক্যাডেট নয়, তাদের মধ্যে 'ঐ রকম' বৈশিষ্ট্যটা নাই, তারমানে নন-ক্যাডেটরা (পড়ুন পাশ্চাত্য) ক্যাডেটদের (আলোচ্য/পাঠ্য-বিষয়, অর্থ্যাত প্রাচ্য) থেকে এইক্ষেত্রে আলাদা।- এরপর শুরু হয়, ভালোমন্দের বিচার (মাপকাঠি আবার নন-ক্যাডেটদেরটা)।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  5. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    খুব ভাল লাগল। ওরিয়েন্টালিজম বইটার বঙ্গানুবাদ হওয়ার পর আমাদের কলেজে এক কপি গিয়েছিল। প্রিন্সিপাল কিনিয়েছিলেন বোধহয়। নতুন অনেক বইয়ের মত এইটাও চোখে পড়েনি। কলেজে পৌরনীতির স্যার ছিলেন তানভিরুল হক। তিনিই আমাকে এই বইটা পড়তে বলেছিলেন। কলেজেই অনেকটা পড়েছিলাম, ক্লাস টুয়েলভে। তানভির স্যারের সাথে এ নিয়ে মাঝেমধ্যে কিছু আলাপও হতো। কিন্তু কলেজ থেকে বের হওয়ার আগে বইটা শেষ করতে পারিনি। রেগুলার পড়া হয়নি আর কি।

    ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর বাংলা অনুবাদটা কিনে ফেলে আবার পড়েছি। কিন্তু সত্যি বলতে, অনুবাদটা একেবারেই ভাল হয়নি। ইংরেজির অনুকরণে বাংলা বাক্যকে অনেক দীর্ঘায়িত করতে গেলে যে বিরাট গ্যাঞ্জাম লেগে যায়, ওরিয়েন্টালিজমের বাংলা অনুবাদ পড়লেই সেটা বোঝা যায়। অনুবাদক ফয়েজ আলম দেখলাম এডওয়ার্ড সাইদের প্রায় সব বইই একে একে বাংলায় অনুবাদ করে ফেলছেন। "কাভারিং ইসলাম" এর অনুবাদ করেছেন। কয়েকদিন আগে দেখলাম "এডওয়ার্ড সাইদের নির্বাচিত প্রবন্ধ" নামেও একটা বই বের করেছেন। কাভারিং ইসলামটা কিনে বেশ খানিকটা পড়েছি।

    আশাকরি সাঈদের দেখিয়ে যাওয়া নতুন পথে নতুন নতুন অনেক গবেষণা হবে, এবং অচিরেই প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মধ্যে গোঁড়ামির দেয়াল ভেঙে যাবে। এটা খুবই দরকারি। আপনার মাস্টার্স থিসিসের কথা শুনে তো আমি রীতিমত মুগ্ধ।

    আরেকটা বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম। ভাবনাটা এসেছে আমাদের "ডিজিটাল সিগনাল প্রসেসিং" (DSP) স্যারের (এক্স-আরসিসি 🙂 ) একদিনের লেকচার শুনে। স্যার বেশ গোঁড়া ইসলামপন্থী। পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে ছাত্রদের মধ্যে ইসলামী চেতনা ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। একদিন ক্লাসের পরে তার পিএইচডিকালীন অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলছিলেন। পিএইচডি করেছেন অস্ট্রেলিয়াতে। অস্ট্রেলীয়দের নয়েজ সিগনালের ডিজিটাল প্রসেসিং এর কি একটা বিরাট সমস্যা তিনি সমাধান করে দিয়েছিলেন। এরপর অস্ট্রেলীয়রা সবরকম চেষ্টা করেছিল তাকে রেখে দেয়ার। অধিক বেতন, সুযোগ-সুবিধা, নারী সবকিছু দিয়েই তাকে লোভ দেখানো হয়েছিল অস্ট্রেলিয়াতে থেকে যাওয়ার। তিনি থাকেননি। তার সহকর্মী এক পাকিস্তানীকে নাকি অস্ট্রেলীয় মেয়ে জুটিয়ে দিয়ে রেখে দিয়েছে। এহেন চিন্তাধারা দেখে অবাক হয়েছি। যোগ্যদেরকে কেউ রেখে দিতে চাইবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সবকিছুকে "ইসলাম ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্র" পর্যায়ে ফেলে মানুষে মানুষে অবিশ্বাসের যে দেয়াল তৈরী করা হচ্ছে সেটাকে একটু ভিত্তিহীন মনে হয়।

    বাংলাদেশের অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে এখনও ধারণা আছে, ইন্ডিয়ায় গেলে সুন্দরী ললনাদের লোভ দেখিয়ে নাকি রেখে দেয়া হয়। সম্প্রতি রাজনীতিতে ইসলামের প্রবেশের কারণে একটা ইসলামী জাগরণের আভাস দেখা যাচ্ছে। সমস্যা হল, যারা নিজেদেরকে এই জাগরণের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন তাদের অনেকের চিন্তাধারাই এমন। তারা মনে করেন পাশ্চাত্য এবং সার্বিকভাবে বিধর্মীরা যা করে তার সবই ইসলামকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য।
    অন্যদিকে আবার ইউরোপের বেশ কয়েকটা ভার্সিটিতে দেখলাম, "ইরানী হলে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি করানো হবে না" জাতীয় একটা নোটিশ দেয়া।

    এভাবে বর্তমানে মূলত ইসলামী বিশ্ব ও পাশ্চাত্যের মধ্যে একটা ঘোর অবিশ্বাসের দেয়াল তৈরী হয়েছে। পাশ্চাত্য কিছু করলেই মুসলিম নেতারা মনে করে সেটা ইসলাম ধ্বংসের জন্য করা হয়েছে আর ইসলামী সমাজের কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা দেখেই পাশ্চাত্যের হর্তাকর্তারা মনে করে, সম মুসলিমরা জঙ্গি হামলা করে পাশ্চাত্যের সমাজ-অর্থনীতিতে ধ্বস নামানোর পায়তারা করছে। এডওয়ার্ড সাইদের চিন্তাধারার বিকাশ ঘটলে এই অবিশ্বাসও তো বোধহয় কমতে শুরু করবে।

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      বাংলা অনুবাদগুলো কেন জানি ঝাপসা ঝাপসা মনে হয় আমার কাছে, বিষয়ের গভীরতা হারিয়ে যায় তার মাঝে। আমি ওরিয়েন্টালিজমের একটা অনুবাদ পড়তে গিয়ে প্রথম তা উপলব্ধি করেছি। আর কমিউনিষ্ট ম্যানিফেষ্টো'র অনুবাদ পড়তে গিয়ে অনুবাদের উপর থেকে আস্থাই হারিয়ে ফেলেছি প্রায়।- তাই বলি, একটু কষ্ট করে হলেও মূল বই পড়তে।

      পদ্ধতিগত দিক থেকে ওরিয়েন্টালিজমের বক্তব্য হল, না-জানা কোন বিষয় জানার শুরুতে সেই বিষয় সম্পর্কে পুর্ব-ধারনার বশবর্তী হয়ে একটা পক্ষ অবলম্বন করে এগুলে ফলাফল অনিবার্যভাবেই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এই ধারায় এগুলে পাঠ্য বিষয় সম্পর্কে পুর্বের ধারনাই আরো পোক্ত হয়। ফলে পুরো বিষয়টা কখনোই জানা হয়ে ওঠেনা। - একারনেই মোল্লা-জাতীয় মুসলমানেরা অমুসলমানদের মধ্যে শুধুই ইসলাম-বিরোধী চক্রান্ত দেখে, আর পশ্চিমা্রা মুসলমানদের মধ্যে শুধুই সন্ত্রাসী দেখে। আর এর ফল তোমার কথাতে যথার্থই প্রতিফলিত হয়েছে-

      এভাবে বর্তমানে মূলত ইসলামী বিশ্ব ও পাশ্চাত্যের মধ্যে একটা ঘোর অবিশ্বাসের দেয়াল তৈরী হয়েছে।

      তবে আশার কথা হল, খোদ পশ্চিমেই এই ভ্রান্ত ধারার বিপরীত চিন্তা-ভাবনার চর্চা শুরু হয়েছে।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  6. জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)

    বেশ ভালো লাগলো আপনার লেখা, অনেক তথ্যবহুল, অনেক কিছু জেনেছি, আপনাকে ধন্যবাদ। তবে, দুই একটা জিনিষ আমার কাছে একটু বেসুরো লেগেছে।

    (নেটিভ) আমেরিকানরা হলো “red, choleric, erect”, এশিয়ানরা “yellow, rigid, melancholic”, আফ্রিকানরা “black, phlegmatic,lax”। -এই পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্যগুলোকে আবার ধরে নেওয়া হলো জেনেটিক!

    মুলত জাতিভেদে আমাদের জেনোমে পরিবির্তন হয় না, একারণে পার্থক্যসমুহও জেনেটিক হওয়া সম্ভব না, নৃবিজ্ঞানে যেভাবে জেনেটিক্স ব্যাবহৃত হয় তা বিস্তারিত আলোচনা এখানে করা সম্ভব না, উইকিপিডিয়া দেখুন y chromosomal haplogroup, polymorphism, snp, dna fingerpriting। আর আমাদের বিহেইভিওরাল অ্যাস্পেক্টগুলোও জেনেটিক না বরং সাইকোলজিকাল এবং নিউরোলজিকাল, জিনের কাজ শুধুই প্রোটিন বানানো।

    গনতন্ত্রমনা শাসকদের মানবতাবাদী শাসন (সাম্রাজ্যবাদ)

    গনতন্ত্র ও মানবতাবাদকে একই বাক্যে সাম্রাজ্যবাদের সমার্থক করাটা আমি মনে করি না ঠিক হয়েছে। অবশ্যই আমরা আমাদের মাথার উপর একটা একনায়ক চাই না, কনিউনিস্ট শাসন চাই না, খিলাফত চাই না, অবশ্যই আমরা মানবতাবাদী গনতন্ত্রই চাই, তাই নয় কি?

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      তোমার প্রথম পয়েন্টে আমার কোন দ্বিমতই নাই। আরেকটু ভালো করে পড়লেই দেখতে যে, ওরিয়েন্টালিজমও পার্থক্যগুলোকে 'জেনেটিক হিসেবে ধরা'কে ক্রিটিসাইজ করে 😛 ।

      আর দ্বিতীয় পয়েন্টটাতে আমি কোন দার্শনিক বিতর্কের অবতারনা করিনি, আমি শুধু বর্তমান বাস্তবতা থেকে দেখাতে চেয়েছি Humanitarian Intervention- এর নামে পাশ্চাত্যের গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো প্রাচ্যের সাথে কতটা Inhuman+Dictetiorial আচরন করছে, এবং প্রাচ্যবাদ কিভাবে তার বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি নির্মাণ করছে।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  7. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    মাহমুদ : সাইদের লেখার ভীষণ ভক্ত হলেও তার কোনো মৌলিক বই পড়া হয়নি। সংবাদপত্রে কলাম পাঠেই এক ধরণের মুগ্ধতা তৈরি হয়ে আছে। তোমার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে সাইদ আসলে পড়তেই হবে। বিশেষ করে যেখানে নিজে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি, বেরুনোর পথ খুঁজে পাই না; সেখানে ভিন্ন পথে ভাবনার একটা জায়গা বা সুযোগ হয়তো তিনি তৈরি করে দিতে পারেন। ধন্যবাদ তোমাকে।

    নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলি, শুধু প্রাচ্য কেন, বাকি বিশ্ব সম্পর্কে গড়পড়তা মার্কিনিদের ধারণা দেখে-শুনে রীতিমতো হতাশ হয়েছিলাম। তবে এখন বোধহয় সময় বদলাচ্ছে। প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের বিরোধ যেভাবে সহিংস পথে যাচ্ছে, তাতে তাদের একদল নিজেদের আঁকড়ে থাকা অজ্ঞতাকে আরো বেশি করে জড়িয়ে ধরছে। আরেক দল নিজেদের ভুল সংশোধন এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথ খুঁজছে।

    তবে একটা বিষয়, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সুদানের মতো সমস্যাগুলোর সমাধানের পথ কি? বিশেষ করে তালেবান সমস্যা? এখন পাকিস্তানের জারদারি সরকার সোয়াতকে তালেবানদের হাতে তুলে দিয়ে একধরণের আপোষের চেষ্টা করছে, সেটা তো মানতে পারছি না। আবার শক্তি প্রয়োগই একমাত্র সমাধান এমন প্রমাণও হাতের কাছে নেই। এসব বিষয় নিয়ে তুমি কি ভাবছো? সিসিবির অন্যরাও এসব বিষয়কে কে কিভাবে দেখে?


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      সানা ভাই,

      ধন্যবাদ। আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুবই আনন্দিত হলাম 😀 । তবে মনে হচ্ছে একটা বিষয় পরিষ্কার করা দরকার।

      - ওরিয়েন্টালিজম কিন্তু প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের তুলনামূলক আলোচনা না, এটা হলো এই জাতীয় যেকোন তুলনামূলক আলোচনায় বিদ্যমান একটা প্রবনতা যা আমাদের জ্ঞানচর্চাকে বিভ্রান্ত করে+ ডিসফাংশনাল পাবলিক পলিসির জন্ম দেয়।

      গবেষকের/জ্ঞানপিপাসুর নিজের দল/সমাজ/সংস্কৃতির বাইরে অন্য যেকোন না-জানা বিষয় জানার প্রকৃয়ায় এই প্রবনতা দেখা দিতে পারে যা জ্ঞানানুসন্ধানের পুরো প্রচেষ্টাকেই ব্যর্থ করে দেয়। এটা একই দেশের মধ্যে, একই সমাজের মধ্যে, এমনকি একই দলের মধ্যেও দেখা যেতে পারে। যেমন- ক্যাডেটদের সম্পর্কে করা মাসরুফের ঐ ম্যাডামের করা উক্তি, গাঁজাখোরদের বিষয়ে আমাদের সাধারন মনোভাব। আমরা দুয়েকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা থেকেই দ্রুত জেনারালাইজেইশন করে ফেলি পুরো দল/গোষ্ঠী/দেশ সম্পর্কে।

      আপনার উল্লিখিত মুসলিম দেশগুলোতে সন্ত্রাসের এই সমস্যাটার মূল কোনমতেই এইসব সন্ত্রাসবাদিতার মধ্যে নয়। সন্ত্রাসী এসব আচরন হচ্ছে ফলাফল বা উপসর্গ; আসল ক্ষত বা সমস্যা আরেকটু গভীরে। আমাদের স্বাভাবিক বুদ্ধি খাটালে এটা বোঝা কঠিন নয় যে, কি কি কারনে, কোন কোন পরিস্থিতিতে মানুষ নিজের জীবন বিপন্ন করে অস্ত্র হাতে নেয়। অব্যক্ত সেই কারনগুলো, সেই অবস্থাগুলো বিবাচনায় না আনলে আসল সমস্যার উপলব্ধি এবং তার সমাধান কখনোই সম্ভব নয়।

      দেশকে তালেবানদের হাতে তুলে দেওয়া কখনোই সমস্যার সমাধান নয়। আবার আমেরিকান (বা অন্য কোন বহিরাগত) বাহিনী ডেকে নিয়ে আসাও কোন সমাধান নয়। এইসব দেশের পতিত শাসকেরা/নীতি-নির্ধারকেরা যতদিন না নিজেদের নির্লজ্জ বিলাসী জীবন ছেড়ে জনগনের পাশে দাঁড়াবে, ততদিন পর্যন্ত তারা কখনোই সাধারন জনগনের সমস্যা বুঝবে না। ফলে বিদ্যমান সমস্যা বাড়তেই খাকবে। তবে, আমি আবার দেশের 'পরজীবি বুদ্ধিজীবি' সম্প্রদায়ের উপরও আস্থা পাইনা, যারা কি না শুধু চায়ের কাপ হাতে নিয়ে, তথাকথিত জাতীয় লেবাসে সজ্জিত হয়ে সভা-সেমিনার করে বেড়ায়, বড় বড় পদ দখল করে বসে থাকে, আর জনগনের টাকায় (ট্যাক্সের বা ঋনের) নিজেদের অফিস/বাড়ি সাজায়, গাড়ী কিনে, আর গনরোষ থেকে বাঁচার জন্য নিরাপত্তা-বাহিনী+সরঞ্জাম বাড়ায়।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
      • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

        মাহমুদ : যে কোনো বিষয় সাধারনীকরণের প্রবণতা কম বেশি মানুষের মধ্যে থাকে। যখন সে যুক্তি বা সমাধান খুঁজে পায় না তখনই এই সমস্যার উদ্ভব। আর কল্পনার ফ্যান্টাসি তো আছেই!

        পাশ্চাত্যের প্রাচ্যচর্চা হচ্ছে অন্ধের হাতি দেখার মতো! পাশ্চাত্যের তথাকথিত পন্ডিতদের এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সাইদ নিজে একাই একটা প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠেছেন। অমর্ত্য সেনও এ নিয়ে কিছু লেখালেখি করেছেন। আর অরুন্ধতী তো এ নিয়ে আরো ঠোটকাটা!!

        মুসলিম দেশগুলোতে সন্ত্রাসের এই সমস্যাটার মূল কোনমতেই এইসব সন্ত্রাসবাদিতার মধ্যে নয়। সন্ত্রাসী এসব আচরন হচ্ছে ফলাফল বা উপসর্গ; আসল ক্ষত বা সমস্যা আরেকটু গভীরে।

        তোমার এই মত নিয়ে তো কোনো দ্বিমত নেই। সমস্যার গভীরতা বা এর কারণগুলো নিয়ে হয়তো আমাদের মধ্যে তেমন ভিন্নমতও পাওয়া যাবে না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ফলাফলটা যখন আমাদের জীবন-যাপন, আত্মপরিচয়, বিকাশ সবকিছুকে গ্রাস করছে তখন কি করবো? একজন বিপ্লবী বা মুক্তিযোদ্ধার সামনে আদর্শ থাকে।

        আবার একজন সন্ত্রাসবাদী বা তালেবানের সামনেও আদর্শ থাকে। শুধুমাত্র ইসরায়েলের প্রতি পাশ্চাত্যের পক্ষপাত বা মুসলিমদের নিপীড়ন এর একমাত্র কারণ না। তাদের ওইসব বঞ্চনার চেয়ে "ইসলাম গেল", "খেলাফত কায়েম করো", "নারীদের পর্দার ভেতর, ঘরের ভেতর ঢুকাও", "সারাবিশ্বে ইসলামের ঝান্ডা উড়াও"- জিহাদের এমন সব উত্তেজনা কি থাকে না?

        দেশকে তালেবানদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। আবার আমেরিকার গোলামও হওয়া যাবে না। তাহলে নিজের শক্তিতে দাঁড়াতে হবে, এই তো?

        কিন্তু ধরো এই মূহুর্তে তোমার সিভিল সোসাইটির ক্ষমতা নেই, রাজনীতিকরা আপস করছে, ব্যবসায়ী আর আমলারা পৃষ্ঠপোষক হয়ে গেছে- তালেবানরা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। বাংলাদেশ বা পাকিস্তান বা আফগানিস্তান প্রতিবেশীদের জন্য, বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠলো। কি করবে তুমি? আমিইবা কি করবো??


        "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

        জবাব দিন
        • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

          অমর্ত্য সেনের the Argumentative Indian এই লাইনে অদ্ভুত একটা বই :boss: ।

          আদর্শ থাকে।

          কিন্তু আদর্শ কোথা থেকে আসে? শেষনবীর আগমনের পরে এখন
          ত আর বলার উপায় নাই যে, আসমান থেকে আদর্শ নাজেল হয় ;;; । মুক্তিযুদ্ধই বলুন, জিহাদই বলুন, আর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধই বলুন, সবগুলোর পেছনেই আদর্শ আছে একটা।

          কিন্তু সেই আদর্শ কোথা থেকে আসে? কিভাবে আসে? কারা কারা তা'র গ্রহন করে, আর কারা বিরুদ্ধাচারন করে? যারা গ্রহন করে, তা কেন করে? আর যারা বিরুদ্ধাচরন করে, তা কেনো করে?- এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেলে আপনার উল্লিখিত সমস্যা মোকাবেলা করার একটা পথ পাওয়া যাবে আশা করি।

          আমরা কাজের মধ্যে দিয়েই বেঁচে থাকি। কাজ করেই জীবিকা অর্জন করি। সবাই। কেউ দ্বিমত করতেই পারে যদি তার কাজ না করেও জীবিকা অর্জনের পথ থেকে থাকে। এই কারনে, আমি যাবতীয় সমস্যা-সম্ভাবনা, আশা-নিরাশা, ভাব-ভালোবাসা সবকিছুকে 'কাজ করা'র প্রেক্ষিতে দেখতে পছন্দ করি (তবে সবাইকে আমার মত করে ভাবতে হবে, তা বলছি না কোনমতেই।)। আর তাই, আমাদের বুদ্ধিজীবিদের উপর আস্থা আমার সব থেকে কম। কারন, তাদের কাছে সব সমস্যার কিছু রেডিমেইড সমাধান সব সময় থাকে। আসল সমস্যা না বুঝেই তারা সমাধান করে ফেলে। রাজনীতিবিদ আর ব্যবসায়ীরা ত পুরাই পরজীবি ছত্রাকের মতো। রাজনীতিবিদের নেই আদর্শ, আর ব্যবসায়ীর নেই মূল ব্যবসা। দুইদলই দালাল শ্রেণীর; একদল দালালী করে ধার করা মতাদর্শের, আরেকদল ধার করা (বিদেশী) পণ্যের।


          There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

          জবাব দিন
    • জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)
      আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সুদানের মতো সমস্যাগুলোর সমাধানের পথ কি?

      আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, সেলফ ডিফেন্স ছাড়া অন্য কোন কারণে এক দেশ আরেক দেশ আক্রমন করা কোনভাবেই উচিত না। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আরেকটি দেশ আক্রমন করা সফল হয়েছে অল্পই এ পর্যন্ত। এই দৃষ্টিতে আফগানিস্তানে হামলা আমি মনে করি ঠিক, তবে ইরাকে নয়(যদিও আমি মানি যে, সাদ্দামের মত শাসকের অপসারণ অবশ্যই ছিলো প্রয়োজনীয়, কিন্তু মৃত্যুদন্ডের বিরোধী আমি)। আর যেই দেশগুলো পটেন্সিয়াল থ্রেট সেই দেশগুলোতে হামলা হওয়া আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়না, বিশেষত ইরাক হামলা না করে ইরান করলে আমি মনে করি সেটা বেশী ফলপ্রসু হত।

      জবাব দিন
      • জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)

        ইরাকে হমলার বিরোধীতা আমি করি মুলত এই কারণে যে এটা গনতন্ত্রের মুখে থুতু ছিটিয়ে করা হয়েছে, ব্রিটেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যার পররাষ্ট্র নীতির প্রথম কথাই হয়েছে, "যে কোন অবস্থায় আমেরিকাকে সাহায্য করা ও আমেরিকার পাশে থাকে"- ছাড়া ইউরোপের আর কোন দেশ সমর্থন দেয়নি, জাতিসংঘ সমর্থন দেয়নি, ডাব্লিউ,এম,ডি পাওয়া যায়নি এত কিছুর পরও একটি দেশ আক্রমন, সেই দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যার্থ হওয়া- এটা সুস্পষ্ট পরাজয়। এটাই কারণ যা টনি ব্লেয়ার এর মত সফল ও জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রীকে মেয়াদ থাকতেও ক্ষমতা ছাড়তে বাদ্ধ করে, এবং বুশকে নিক্ষেপ করতে যাচ্ছে পলপট, স্ট্যালিন, মাও এদের কাতারে। আর ইরানে হামলা হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি এই কারণে না যে এটা মানবাধীকার লঙ্ঘনকারী দেশ, সৌদিআরব পৃথিবীর প্রায় সবকটি অনুন্নত দেশ এমনকি বাংলাদেশও মানবাধীকার লঙ্ঘনকারী। এভাবে ঢালাও হামলা করে আর যা কিছু সম্ভব হোক শান্তি স্থাপন সম্ভব না। ইরানে হামলা হওয়া উচিত এই কারণে যে এটা পারমানবিক বোমা বানানোর চেষ্টায় লিপ্ত, এবং পৃথিবীর শান্তি বিনষ্টকারী প্রপাগান্ডায় লিপ্ত। বলাই বাহুল্য, তারা সফল হয়ে থাকলে এটার মত বড় হুমকী পৃথিবীর জন্য আর কিছু হতে পারে না।

        জবাব দিন
        • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

          অর্নব : আমি ইরানের সমর্থক না। তবে তুমি যেসব যুক্তিতে সেদেশে বা আরো অন্য দেশে হামলার সমর্থন করছো সেটাও সমর্থন করতে পারছি না। ইসরায়েলে হামলা তাহলে নয় কেন? ইসরায়েলের নেতৃত্ব আগ্রাসী, গণহত্যাকারী। পাশাপাশি পারমানবিক অস্ত্রও ওদের হাতে আছে। যা পাশ্চাত্য কখনো স্বীকার করে না বা এ কারণে ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করে না। বিশ্বশান্তির জন্য বড় হুমকি এই দেশটি।


          "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

          জবাব দিন
          • জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)

            বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ইরান হামলা হওয়া সম্ভবও না, এমনকি যদি হয়েও থাকে এর বিরোধীতাই করবে এক ক্রেডিট ক্রাঞ্চে নাস্তানাবুদ হওয়া জনগন। আর ইরান ছাড়া আর কোন দেশ আক্রমন হওয়া উচিত এই কথা আমি বলিনি। আমি বলেছি, গুরুতর পটেনশিয়াল থ্রেট দেশকে জাতিসংঘের অনুমতি সাপেক্ষে আরেকটি দেশ আক্রমন করতে পারে তখনই যখন আর কোন পথ খোলা নেই। ইরাক হামলা সেই প্রেক্ষিতে ভুল। এই ভুল হামলাটা ইরাকে না হয়ে (যেহেতু তাদের কাছে কোন wmd পাওয়া যায়নি) ইরানে হত তাহলে সেটা বরং বেশী ফলপ্রসু হত (যেহেতু তারা পারমানবিক বোমা বানানোর চেষ্টায় লিপ্ত)।

            জবাব দিন
            • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
              যেহেতু তারা পারমানবিক বোমা বানানোর চেষ্টায় লিপ্ত

              আর যারা পারমানবিক বোমা বানিয়ে ফেলেছে+তার গরমে পুরা পৃথিবীকেই দৌড়ের উপর রেখেছে, তাদের জন্য কি ব্যবস্থা? গণতান্ত্রিক নীতি কি বলে?

              আমি বলতে চাইছি, এই বিশ্ব-ব্যবস্থায় জাতিসংঘ আমেরিকার একটা তালুকদারি ছাড়া আর কিছুই নয়। আগে তবু কিছুটা ভাগ দিতে হতো রাশিয়া আর বৃটেনরে, এখন আর লাগেনা। ঐ নিরাপত্তা পরিষদ কখনোই ইস্রায়েলের কাছে পারমানবিক বোমা খূজে পাবেনা, কিন্তু অন্যকোন টার্গেটেড দেশে না থাকলেও খুঁজে পাবে+আক্রমন করে লাখ লাখ মানুষ মেরে সাবার করার পর বুঝতে পারবে যে তাদের "ভূল" হয়েছিলো (যেমনঃ ইরাক)। সারা বিশ্বের চোখের সামনে গণহত্যা করে গেলেও ইস্রায়েল পার পেয়ে যাবে, যেমন- সম্প্রতি গাজায় উপত্যকায়। (আমেরিকার কথা ত বলাই যাবে না)।

              - কাজেই, পারমানবিক বোমা বানাবার চেষ্টা করার অযুহাতটা আমার কাছে মেষ-শাবককে হত্যার সংকল্প নিয়ে সিংহের 'পানি ঘোলা করার' যুক্তিতর্কের মতো লাগে। কষ্টের কথা হল, এই ধারার যুক্তিটা আমেরিকা এবং তার অনুগামীরা (দেশ+সংস্থা) বেশ ভালো ভাবেই প্রতিষ্ঠা করার পথে এগিয়ে যাচ্ছে (প্রমান, চমস্কির উল্লিখিত দুইটা বইয়ে আছে)।


              There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

              জবাব দিন
        • রাজীউর রহমান (১৯৯৯ - ২০০৫)

          ইরানে হামলা হওয়া উচিত এই কারণে যে এটা পারমানবিক বোমা বানানোর চেষ্টায় লিপ্ত, এবং পৃথিবীর শান্তি বিনষ্টকারী প্রপাগান্ডায় লিপ্ত।

          এই পৃথিবীর শান্তির সংজ্ঞা কি? ইসরায়েলের পারমানবিক অস্ত্র শান্তি রক্ষায় কি ভুমিকা রাখছে তা স্পষ্ট । আপনি বলেছেন কোন দেশের নিজেদের উপর হুমকি থাকলে আক্রমন করা জায়েজ বলে মনে করছেন। ইরানের উপর তো প্রতিনিয়ত হুমকি চলছে । থ্রি নট থ্রি দিয়ে কি তাদের আত্মরক্ষা হবে? পারমানবিক শক্তি তাদের আত্মরক্ষার জন্য প্রচন্ড জরুরী।

          @জুবায়ের অর্নব, আপনার একপেশে চিন্তায় বড়ই মর্মাহত ।

          জবাব দিন
          • জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)
            ইসরায়েলের পারমানবিক অস্ত্র শান্তি রক্ষায় কি ভুমিকা রাখছে তা স্পষ্ট ।

            স্ট্রম্যান হল না এইটা? আমি তো মনে হয়না বলেছি ইসরায়েলের অস্ত্র শান্তি রক্ষায় ভুমিকা রাখছে। প্রথমত, আমরা এখনও জানি না ইসরায়েলের আদৌ পারমানবিক অস্ত্র আছে কিনা। তবে, এটা সত্য সেল্ফ-ডিফেন্সের বাইরে ইস্রায়েলের সামরিক কার্যকলাপ অগ্রহনযোগ্য। পৃথিবীর শান্তি বিনষ্টে ইসরায়েল ভুমিকা রাখছে।

            কোন দেশের নিজেদের উপর হুমকি থাকলে আক্রমন করা জায়েজ বলে মনে করছেন

            হ্যা, তবে অবশ্যই এটাকে যেতে হবে গনতান্ত্রিক স্ক্রটিনির ভেতর দিয়ে, এটাতে জাতিসঙ্গঘ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন থাকতে হবে, কসোভো হামলার মত, আফগানিস্তান হামলার মত। এটা লিগালিটি থাকতে হবে নীতিগিত গ্রহনযোগ্যতা থাকতে হবে। ইরাক হামলার মত এটা অবশ্যই হওয়া যাবে না।

            পারমানবিক শক্তি তাদের আত্মরক্ষার জন্য প্রচন্ড জরুরী।

            হয়তো বা, এটার যোগ্য অ্যানালজি হতে পারে ডাকাতের আত্নরক্ষার জন্য এসএমজি প্রচন্ড জরুরী। তুমি হয়তো জেনে থাকবে তাদের নিজেদের পারমানবিক চুল্লী বন্ধ করার বিনিময়ে পারমানবিক শক্তি অফার করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যা তারা রিফিউজ করে। এটা স্পষ্টই প্রকাশ করছে তাদের মতিগতি তাই নয় কি?

            জবাব দিন
            • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

              আলোচনার স্বার্থে একটা পরামর্শ দেই। আলোচনায় যে কেউ দ্বিমত করতেই পারে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে তাকে কোন 'লেবেল' দেওয়াটা ঠিক নয়। তা'তে শুধু উত্তাপই ছড়ায়, গঠনমূলক কোন যুক্তি বের হয় না। যেমন, তুমি বলেছো

              স্ট্রম্যান হল না এইটা?

              একটা প্রশ্ন ছিলো তোমার জন্য।

              আমরা এখনও জানি না ইসরায়েলের আদৌ পারমানবিক অস্ত্র আছে কিনা।

              এই আমরা'টা কারা?


              There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

              জবাব দিন
              • জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)
                এই আমরা’টা কারা?

                সাধারণ মানুষ, যাদের তথ্য জানতে হয় একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র থেকে। ইসরায়েলের পারমানবিক অস্ত্র আছে এর স্বপক্ষে প্রমান- তারা এনপিটি স্বাক্ষর করেনি এবং অফিশিয়াল ঘোষণা দিতে রিফিউজ করেছে যে তাদের কাছে নিউক্লিয়ার উইপন নেই। একটি দেশের কাছে পারমানিবিক অস্ত্র আছে বলা যায় তখনয় যখন তারা পরীক্ষামুলক বিস্ফোরণ ঘটায় এবং পরীক্ষা সফলের অফিশিয়াল ঘোষণা দেয়, তাই নয় কি? তবে, এটা সত্য এটাই বেশী সম্ভবনাযুক্ত যে ইসরায়েলের পারমানিবিক বোমা আছে, আবার এও হতে পারে যে তারা তাদের বহুদিনের পুরোনো অভ্যাস লুকোচুরি খেলা খেলছে মধ্যপ্রাচ্যে নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে।

                জবাব দিন
        • সাঈদের আলোচনা পড়ার পরও আপনার এই মন্তব্য "ইরানকে কেন আক্রমণ করা উচিত" দেখে হতাশ হলাম । এই পৃথিবীতে যে পারমাণবিক বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে তার জন্য দায়ী দেশকে বাদ দিয়ে আপনি ইরান -যে কিনা পারমাণবিক প্রযুক্তির অধিকারী হতে পারেনি তারই- দোষ দেখলেন। এতো প্রাচ্যবিদদের কথার প্রতিধ্বনি বলেই মন হলো।

          জবাব দিন
      • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
        সেলফ ডিফেন্স ছাড়া অন্য কোন কারণে এক দেশ আরেক দেশ আক্রমন করা কোনভাবেই উচিত না।

        আমিও তা-ই মনে করি।

        অর্নব,
        আসলে দেখা যাচ্ছে, তোমার সাথে আমার মতের খুব একটা অমিল নাই, কি বলো? (সিসিআর, আপ, আপ,... B-) )

        তবে আফগানিস্তান-ইরান আক্রমনে তোমার মতামতটা আমি গ্রহন করতে পারলাম না। একটা কারন সানা ভাই বলে দিছেন।


        There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

        জবাব দিন
        • জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)
          আফগানিস্তান-ইরান আক্রমনে তোমার মতামতটা আমি গ্রহন করতে পারলাম না।

          আফগানিস্তানে যদি হামলা না করা হত এটার অল্টার্নেইটিভ কি হতে পারতো? একটি দেশের একনায়ক সরকার আত্নঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে আরেকটি দেশের ৬০০০ এরও বেশী মানুষ মেরে ফেললো, নিজেদের ভবিষ্যতের সেন্ফডিফেন্সের খাতিরেই কি সেই আক্রান্ত দেশ ঐ হামলাকারী দেশের সরকার অপসারণের জন্য চেষ্টা করা উচিত না?

          জবাব দিন
          • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

            সেলফ-ডিফেন্সের প্রচলিত ধারনা থেকে বের হয়ে তবেই আমেরিকা বুশের নেতৃত্বে ইরাকে হামলা চালিয়েছে। প্রচলিত আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সর্বজন স্বীকৃত "প্রটেক্টিভ সেলফ-ডিফেন্স" থেকে "প্রিএমটিভ সেলফ-ডিফেন্স" এ আমেরিকা সরে এসেছে যেখানে কোন কল্পিত-শত্রুকেও তারা আক্রমন করতে পারে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে!!!

            সময় থাক্লে পড়ে নিও চমস্কি'র Imperial Ambition বা Hegemony or Survival. তাহলে বিষয়টা স্পষ্ট হবে।


            There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

            জবাব দিন
            • জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)

              সেটা করা হয়েছে ইরাকের বেলায়। এর আগে তো বুশ ডক্ট্রিন যেটা বলে "পটেনশিয়াল থ্রেটকে একটি দেশ আক্রমন করার অধিকার রাখে" প্রকাশিতই হয়নি, আমি নিশ্চিত না এই ব্যাপারে। তবে, এটা জানি যে ইরাক হামলা হয় বুশ ডক্ট্রিন অনুযায়ী, যখন জাতিসংঘ তাদের কাছে কোন wmd না পায় এবং ইরাক আক্রমনের প্রস্তাব অননুমোদন করে। আর আফগানিস্তানে হামলা হয়েছিল এই কারণে যে তারা টুইন-টাওয়ার হামলা করে ৬০০০ এর বেশী মানুষ হত্যা করে, এবং জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আফগানিস্তান হামলা অনুমোদন করে।

              জবাব দিন
              • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

                বুশ ডক্ট্রিনই। আর এটা ত ঘটয়া করে প্রকাশ করার ব্যাপার নয়, ক্ষমতাবান রাষ্টসমূহের কার্যাবলী পর্যালোচনা করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-বিষয়ক গবেষকরা প্রচলিত প্রবনতাগুলো চিহ্নিত করে+প্রকাশ করে। যেটা করেছেন নোয়াম চমস্কি এবং আরো অনেকেই।

                আর আফগানিস্তান নয়, টুইন টাওয়ারে হামলা করেছিলো আল-কায়েদা, তাও সেটার সলিড প্রমাণ নাই। (মাত্রই গত সপ্তাহে নেদারল্যান্ডে এক টিভি-শো আদালতে ঘোষনা করা হল যে, টুইন-টাওয়ারে হামলার জন্য আলকায়েদা'কে দোষী করাটা ভূল, কারন এর পক্ষে যথেষ্ঠ প্রমান নাই, যদিও তারা বলেছে যে আলকায়েদা একটা খারাপ-সন্ত্রাসী সংগঠন)।


                There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

                জবাব দিন
          • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
            একটি দেশের একনায়ক সরকার আত্নঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে আরেকটি দেশের ৬০০০ এরও বেশী মানুষ মেরে ফেললো

            কোথায় পেলে এই তথ্য? 😮 কোন সরকার কবে, কোথায় আত্মঘাতী হামলা করলো? একটা দেশের সরকার আর একটা সন্ত্রাসী-সংগঠন কি এক?


            There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

            জবাব দিন
  8. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    মাহমুদ ভাই, আপনি সিনেমা দেখেন কিনা জানি না। না দেখলেও আমার অনুরোধ, একটা সিনেমা দেখেন: স্লামডগ মিলিওনার।

    আপনার এটা দেখা উচিত। আমার মনে হয় গত এক দশকে ওয়েস্টার্ন কালচারাল হেজেমনির সবচেয়ে নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই স্লামডগ মিলিওনারে। পাশ্চাত্য যেভাবে প্রাচ্যকে দেখতে ভালোবাসে ঠিক সেভাবে এই সিনেমায় প্রাচ্যকে তুলে ধরা হয়েছে। ফলাফল তথৈবচ: আটটি অস্কার। স্লামডগকে অস্কার দেয়া হয়েছে ভারত এবং সামগ্রিকভাবে সমগ্র প্রাচ্যকে পাশ্চাত্যের চোখে আবারও হেয় করার জন্য। পোস্ট-কলোনিয়াল কালচার...
    সিনেমার প্রতি পদে পদে কিভাবে প্রাচ্যের দারিদ্র্য ও সন্ত্রাসকে পুঁজি করে পাশ্চাত্যের অনুকম্পা অর্জনের চেষ্টা করা হয়েছে সেটা দেখলে আপনি অবাক হবেন। এটা নিয়ে একটা লেখা পড়লাম:

    http://vikaspathak.blogspot.com/2009/03/on-slumdog-millionaire.html

    পড়ে দেখেন। তাছাড়া গতকালের প্রথম আলোতো স্লামডগ মিলিওনার এবং অরবিন্দ আদিগার "দ্য হোয়াইট টাইগার" উপন্যাস নিয়ে একটা চমৎকার লেখা এসেছে। প্রায় একই সাথে দ্য হোয়াইট টাইগার পেয়েছে ম্যানবুকার প্রাইজ আর স্লামডগ পেয়েছে অস্কার। উপন্যাস পড়ি নাই। দুটা একসাথে পাশ্চাত্যে এত প্রশংসিত হওয়ার আসল কারণ আছে সেই হেজেমনিতে। কারণ, এর কোনটাই এতটা প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য না।
    হেজেমনির নড়্নরূপ বুঝতে হলে সবার স্লামডগ মিলিওনার দেখা উচিত।

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
      আপনি সিনেমা দেখেন কিনা জানি না। না দেখলেও আমার অনুরোধ, একটা সিনেমা দেখেন: স্লামডগ মিলিওনার।

      আমি আসলেই সিনেমা কম দেখি। তবে এই ছবিটা আমেরিকায় আসার প্রথম মাসেই দেখেছি। বলতে পারো, আমাকে দেখানো হয়েছে। এক আমেরিকান ফ্রেন্ড ( 😀 ) অনেকটা জোর করে সিনেমা হলে নিয়ে গেল এই বলে যে, এটা আমাকে দেখতেই হবে। ত গেলাম। দেখলামও। টেকনিক্যাল দিকগুলো আসলেই মনোমুগ্ধকর। কিন্তু যেভাবে বিষয়বস্তুটা উপস্থাপন করেছে, তা অনেকখানি বিরক্তির উদ্রেক করেছে। কিন্তু আমার সেই ফ্রেন্ড+অন্য আমেরিকানদের কাছে এটা খুবই ভালো লেগেছে।

      ওরা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে, আমাদের দেশগুলোতে- বস্তিতে- অবস্থা আসলেই এতোটা খারাপ নাকি। আমি শুধু বলেছি, খারাপ, তবে সেটা অন্যরকম + সময়-সুযোগ পেলে একবার ঘুরে আসতে। 😛


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  9. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    ওরিয়েন্টালিজম ও কলনিয়ালাইজেশন নিয়ে একটা সেমিনারে গিয়েছিলাম। আমাদের সমস্যা এক কথায় ডঃ সলিমুল্লাহ খান বলেছিলেন, "I for once am guilty for not being revolutionary enough with my thought."। কথাটা আমাদের সবার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সত্যি বলেই এই ওরিয়েন্টালিজম আজও আমাদের নিকট একটা মূলধারার জ্ঞান বলে বিবেচিত। আমি এটা বলব না যে কেউই এর দুর্বলতা ধরতে পারেনি। মাহমুদ ভাই পেরেছেন। কিন্তু অনেকেই এই জ্ঞানচর্চার ঠুনকো অবস্থানটা ধরতে পারেনি। এটা খুবই কষ্টের ব্যাপার।

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
      মাহমুদ ভাই পেরেছেন।

      লজ্জা দিওনা ছুডোভাই 🙂 । আমি যখনই পড়ি, মনে হয় আগেরবার অনেক কিছুই মিস করে গেছি ~x( । কাজেই, আমার পথ এখনো অনেক বাকি :(( ।

      মার্ক্সের একটা কথা বলি, there is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits. - (এখানে লক্ষ্যনীয় যে, মার্ক্স সম্ভাবনার কথা বলেছেন, নিশ্চিত সাফল্যের কথা বলেননি)।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
      • শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

        আমি মার্ক্সের উপর সামান্য বিরক্ত। এই লোক আমার পড়াশুনার বারোটা বাজাচ্ছে। আমাদের একটা টপিক আছে ওনাকে নিয়ে Jurisprudence বিষয়ে। সেই দিয়ে শুরু। অন্য কোন বিষয় আর পড়া হচ্ছে না।

        জবাব দিন
        • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
          আমি মার্ক্সের উপর সামান্য বিরক্ত।

          আমি পুরাই 😀 । আমার জীবন ত একেবারে ভাজা ভাজা কইরা ফালাইতাছে :grr: । সেই কবে থেকে শুরু করেছি পড়া, এক যুগেরও বেশি :(( । মাঝে ভুলে গেছিলাম পোষ্টমডার্নিজমের জ্বরে 😛 । এখন আবার শুরু করছি 😛 ।

          আগ্রহ থাকলে বলো, জট্টিল কিছু ম্যাটেরিয়েল আছে আমার কাছে।


          There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

          জবাব দিন
          • জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)

            মার্ক্স-এন্গেলস্, কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো- ডাস ক্যাপিটাল জ্বরে আমি আক্রান্ত ছিলাম ক্লাস 11-12 পর্যন্ত। হ্যা বেশ খারাপ জ্বর এটা। তবে, এটার সুফল ছিল এর প্রভাবে প্রথমত, ধর্ম-ঈশ্বর, জাদু-টোনা নামক সাপের তেল আর কেউ আমার কাছে বিক্রি করার ক্ষমতা হারিয়েছে, দ্বিতীয়ত, আমি বুঝেছি why political phylosophy matters. তবে এখন বোধহয় ভ্যাক্সিনেইশন পেয়ে গিয়েছি। বার্ট্রান্ড রাসেল পড়ে আমি জানি কম্যুনিজম নিজেই একটা ধর্ম যা জীবীকা নির্বাহ করে আমার মত সাধারণ মানুষদের কাছে সাপের তেল বিক্রি করে। এখন আমি বুঝি যে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ (individualism) কে সমষ্টিবাদ (collectivism) দ্বারা প্রতিস্থাপন করলে এটা explicitly pisses on the face of our democratic values, sense of human rights and the pathways to globalization and economic freedom. আমি মার্কস-এন্গেলসের থিওরিটিকাল কম্যুনিজমের প্রতি মডারেটলি শ্রদ্ধাশীল- তবে, রক্তরক্তি করার বিপক্ষে। কম্যুনিজম বহু রক্ত ঝড়িয়েছে, এটা স্বস্তির ব্যাপার যে এটা এখন পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত। তবে, সাম্রাজ্যবাদ, প্রলেটারিয়েটদের আপরাইজিঙ, শ্রেণীশত্রু, বিপ্লব এরকম কিছু সাপের তেলের অবশিষ্ট স্টক তারা সফলভাবে হ্যান্ড-ওভার করে যেতে পারে যা কিনা এখনও আমাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এমনকি, আমার জীবন্ধারণের অধিকারও আসে কালেক্টিভ থেকে এটা যেই পলিটিকাল ফিলসফি আমাকে বলে, আমি সেই পলিটিকাল ফিলসফিকে মনে প্রাণে ঘৃণা করি। I hate it.

            জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      আমাকে ই-মেইল করো, পিডিএফ ফাইল পাঠানো যাবে। তবে আসল আর্টিক্যালটাতে আসলে দুটো আর্গুমেন্ট আছে, - এক, গাঁজাসেবন+গাঁজাসেবকদের মধ্যকার নানান পার্থক্যগুলো তুলে ধরা+ এর মাধ্যমে দেখানো যে, তাদের সবাইকে একটা 'এন্টি-সোস্যাল' আইডেন্টিটি দেওয়ার প্রকৃয়াটা ভ্রান্ত; দুই, গাঁজাসেবকদের একাংশ আবার নিজেরা নিজেদের মধ্যে সংগঠিত হয়ে কিভাবে এই অনায্য-অমানবিক প্রকৃয়া রুখে দাড়ানোর চেষ্টা করে, তা দেখানো (একারনে এই ষ্টাডিকে আমি পোষ্টমডার্ণ বলি 😛 )।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  10. রায়হান রশিদ (৮৬ - ৯০)

    @ মাহমুদ

    এই প্রকৃয়াটা আবার প্রাতিষ্ঠানিকঃ এটা ক্লাসে পড়ানো হয়, এই বিষয়ে গবেষনা সেন্টার আছে (যেমন, বিভিন্ন দেশের এশিয়াটিক সোসাইটি, অক্সফোর্ড ইউনিভারসিটির SOAS),

    দরকারী পোস্ট। খুব ভাল লাগলো পড়ে। শুধু উপরের তথ্যটা (সম্ভবত টাইপিংয়ের ভুল) মূল পোস্টে ঠিক করে নিলে ভাল হয়। স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজ বা SOAS অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ না। এটি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায়। অক্সফোর্ডে "ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ" নামে একটা আলাদা ফ্যাকাল্টিই রয়েছে।
    ধন্যবাদ। আরও চাই এমন লেখা।

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      ধন্যবাদ রায়হান ভাই, ভুলটা ধরিয়ে দেবার জন্য।
      ওটা নিয়ে আমিও কিছুটা সন্দেহে ছিলাম। কিন্তু আইলস্যামির জন্য ফিরে দেখা হয়নি 🙂 ।

      ঢাবি'র ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ এর প্রফেসর ডঃ আতিউর রহমান (এমসিসি+জামালপুইর‌্যা পোলা B-) ) ঐখান থেকে পিএইচডি।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  11. প্রবন্ধটি তার প্রবন্ধমান বিচারে উন্নিত।বিষয়টিও শীর্ষ বিষয়।কিন্তু আপনার কথায় এ কথাটি উঠে আসেনি যে,প্রাচ্যকে জানার যে আগ্রহ প্রাশ্চাত্যবাদীরা দেখায় তা ইসলামকেন্দ্রীক।মূলত ইসলামের কলকব্জা সব রপ্ত করে তাতে বুদ্ধিবৃত্তিক আধিপত্য বিস্তারই তাদের প্রধানতম এইম।শত্রুকে পরাভূত করতে শত্রুর ঘর-বাড়ী, অবস্হান মনিটরিং -এর মত।আর আপনি যেটা বললেন যে- পশ্চাৎপদদেরক পতনোন্মুখতা থেকে তারা বাঁচাতে চায়; ব্যাপারটা এমন নয়।ওরা আরবি শিখেছে কেন? উওর জানতে গেলে দেখবেন যে কুরআন- হাদিস নিয়ে মানুষের মনে শংশয় দানা বাঁধিয়ে ইসলামকে কুলুষিত করাই এখানে তাদের চাহিদা।সর্বোপরি দুনিয়াময় আধিপত্য বিস্তার তো আছেই!

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      মানাযির আহসান খান,

      প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ সিসিবির ইতিহাসের পাতা খুড়ে এই পোষ্ট পড়ার+মন্তব্য করার জন্য। তবে, আপনার সাথে আমি একমত নই যে "প্রাচ্যকে জানার যে আগ্রহ প্রাশ্চাত্যবাদীরা দেখায় তা ইসলামকেন্দ্রীক। মূলত ইসলামের কলকব্জা সব রপ্ত করে তাতে বুদ্ধিবৃত্তিক আধিপত্য বিস্তারই তাদের প্রধানতম এইম।"- আমার ধারণা, এইটা ইসলামকেন্দ্রিক নয়, বরং অধিকৃত জনগোষ্ঠির সমাজ+সংস্কৃতিকেন্দ্রিক। ইউরোপীয়রা ছিল কলোনাইজার, এবং কলোনিগুলোতে তাদের ক্ষমতা+শাসনের স্বার্থেই তারা এসব অঞ্চলকে পাঠ করতে চেয়েছে। ঘটনাক্রমে এসব অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকার মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বি। অন্যান্য ধর্মাবলম্বিদের এলাকাগুলোতে কিন্তু একই প্রবণতা লক্ষ্যনীয়, যেমন আফ্রিকা, এশিয়ার দূরপ্রাচ্য, ইত্যাদি।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      মানাযির আহসান খান,

      প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ সিসিবির ইতিহাসের পাতা খুড়ে এই পোষ্ট পড়ার+মন্তব্য করার জন্য। তবে, আপনার সাথে আমি একমত নই যে "প্রাচ্যকে জানার যে আগ্রহ প্রাশ্চাত্যবাদীরা দেখায় তা ইসলামকেন্দ্রীক। মূলত ইসলামের কলকব্জা সব রপ্ত করে তাতে বুদ্ধিবৃত্তিক আধিপত্য বিস্তারই তাদের প্রধানতম এইম।"- আমার ধারণা, এইটা ইসলামকেন্দ্রিক নয়, বরং অধিকৃত জনগোষ্ঠির সমাজ+সংস্কৃতিকেন্দ্রিক। ইউরোপীয়রা ছিল কলোনাইজার, এবং কলোনিগুলোতে তাদের ক্ষমতা+শাসনের স্বার্থেই তারা এসব অঞ্চলকে পাঠ করতে চেয়েছে। ঘটনাক্রমে এসব অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকার মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বি। অন্যান্য ধর্মাবলম্বিদের এলাকাগুলোতে কিন্তু একই প্রবণতা লক্ষ্যনীয়, যেমন আফ্রিকা, এশিয়ার দূরপ্রাচ্য, ইত্যাদি যেখানে অধিবাসীরা মুসলমান নয়।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  12. এই আর্টিকেলটা আমাকে খুঁজে বের করতে হয়েছে। 'বাঙ্গালি মুসলমান প্রশ্ন' বইটা পড়া শেষ করলাম মাত্র। বইটাতে ওরিয়েন্টালিজম নিয়ে একটা অধ্যায় রাখা হয়েছে। এডওয়ার্ড সাইদের 'ওরিয়েন্টালিজম' আগে থেকে পড়া থাকায় ব্যাপারগুলো খুব সহজেই বুঝতে পেরেছি।

    'বাঙ্গালি মুসলমান প্রশ্ন' বইটার ১৩৯ পৃষ্ঠায় দেয়া রেফারেন্সটা দেখেই আমি মূলত এই আর্টিকেলটা খুঁজে বের করেছি। অতঃপর পুরো আর্টিকেলটা একটানা পড়ে শেষ করলাম। সেই প্রত্যেকটা কমেন্টও পড়লাম। খুব সুন্দর আর গোছালো আলোচনা। মনে হচ্ছিল এই কমেন্ট সেকশনটা যেন শেষ না হয়।
    সবকিছুর জন্য লেখককে ধন্যবাদ😊

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।