আগামী ১২ই ফেব্রয়ারি সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের ২০০তম জন্মবার্ষিকী এবং তার সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ “অন দি অরিজিন অফ স্পিসিস” এর ১৫০তম প্রকাশবার্ষিকী। বিবর্তনবাদ নিয়ে আজ পৃথিবীর কোন জীববিজ্ঞানীর মধ্যেই সংশয় নেই। তবে এর প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় আছে। সেটা নিয়েই বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানীরা এখন সবচেয়ে বেশী গবেষণা করছেন। এই প্রেক্ষিতে পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত বিজ্ঞান পত্রিকা “সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান” তাদের জানুয়ারি ২০০৯ সংখ্যাটি বিবর্তনবাদ নিয়ে করেছে। প্রথম প্রবন্ধটির অনুবাদ করে সচলায়তনে প্রকাশ করেছিলাম। মুক্ত-মনা ১২ই ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে বিশেষ ওয়েবপেইজ করছে যেখানে প্রবন্ধটি থাকবে। এর পাশাপাশি সিসিবি-তেও লেখাটি প্রকাশ করলাম।
মূল প্রবন্ধ – Darwin’s Living Legacy
লেখক – Gary Stix
সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান, জানুয়ারি ২০০৯
বাংলা শিরোনাম – একবিংশ শতকের ডারউইন
১৮৩৫ সালে বিগল জাহাজে চড়ে চার্লস ডারউইন গালাপাগোস দ্বীপে গিয়েছিলেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৬ বছর। দ্বীপের বেশ কিছু পাখি তার নজর কেড়েছিল। সেই পাখিগুলোর নামের সাথে তাই ডারউইনের নাম জড়িয়ে আছে। এখনও এগুলোকে ডারউইনের ফিঞ্চ (finch) নামে ডাকা হয়। প্রকৃতিবিদরা এ ধরণের অনেকগুলো ফিঞ্চকে আগে গ্রসবিক (grosbeak) ভেবে ভুল করতেন। বর্তমানে সে ধরণের সংশয় অনেকটাই দূর হয়েছে। এই ফিঞ্চগুলোর আবিষ্কারের কাহিনীও বেশ মজার। ডারউইনের সময় ইংল্যান্ডে জন গুল্ড নামে একজন পক্ষীবিশারদ ও চিত্রকর ছিলেন। ডারউইনরা অনেক ধরণের পাখির নমুনা নিয়ে ইংল্যান্ডে ফিরে এসেছিলেন। গুল্ড এই সংরক্ষিত নমুনাগুলো থেকে কয়েকটির ছবি আঁকা শুরু করেন। ছবি আঁকতে গিয়ে লক্ষ্য করেন, এগুলো সবই ফিঞ্চের বিভিন্ন প্রজাতি।
আমাদের স্বশিক্ষিত প্রকৃতিবিদ ডারউইন গুল্ডের ছবিগুলো দেখে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝতে পেরেছিলেন: প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ফিঞ্চদের ঠোঁটের আকার পরিবর্তিত হয়েছে। বিভিন্ন দ্বীপের ফিঞ্চরা বিভিন্ন আকারের দানা ও পোঁকা খেত। খাদ্যের আকার অনুযায়ীই তাদের ঠোঁটের আকার পরিবর্তিত হয়েছে। এই বিস্ময়কর পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে ডারউইন তার “দ্য ভয়েজ অফ দ্য বিগল” (১৮৩৯) বইয়ে লিখেছেন, “নিবিঢ়ভাবে সম্পর্কিত এক শ্রেণীর পাখির মধ্যে এই গঠনগত ক্রমবিন্যাস ও বৈচিত্র্য দেখে যে কেউ বিস্মিত হবেন। অনেকের মনে হতে পারে, এই দ্বীপপুঞ্জের স্বল্পসংখ্যক পাখি প্রজাতির কোন একটিকে নির্বাচন করা হয়েছে এবং সেই প্রজাতির বিভিন্ন পাখিকে বিভিন্নভাবে বদলানো হয়েছে।”
এর ২০ বছর পর ডারউইন ফিঞ্চদের অভিযোজন প্রক্রিয়ার একটি ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন যা “বিবর্তনবাদ” হিসেবে পরিচিত। এতে বলা হয়েছিল, ভিন্ন ভিন্ন দ্বীপে ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশের কারণেই এক প্রজাতির একেক পাখি একেক ভাবে অভিযোজিত হয়েছে। প্রাকৃতিক নির্বাচনের শক্তিই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে কেবল পরিবেশ উপযোগী বৈশিষ্ট্যগুলোকে টিকিয়ে রেখেছে। ডারউনের তত্ত্ব বিজ্ঞানী ও ধার্মিক উভয় সমাজের কঠোর সমালোচনার শিকার হয়েছে। কিন্তু এই তত্ত্ব একটি অতি সমৃদ্ধ গবেষণাক্ষেত্রের সূচন-বিন্দু মাত্র, সেই গবেষণা আজ অব্দি চলছে, এর যেন কোন শেষ নেই। বর্তমানকালের বিজ্ঞানীরাও সেই তত্ত্ব দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। জীববিজ্ঞানীরা এখনও আণবিক জগতে বিবর্তনের কার্যক্রিয়া নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা বোঝার চেষ্টা করছেন, ঠিক কিভাবে আণবিক স্কেলে প্রাকৃতিক নির্বাচন ঘটে এবং তার মাধ্যমে কিভাবেই বা নতুন প্রজাতির জন্ম হয়।
ডারউইনের সেই বিখ্যাত ফিঞ্চ পাখিরা এখনও বিজ্ঞানীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। গবেষকরা ধারণা করে নিয়েছেন, বিবর্তন প্রক্রিয়া খুব ধীরে ঘটে, এতই ধীরে যে মানুষের জীবদ্দশায় তার প্রমাণ পাওয়ার কল্পনাও করা যায় না। কোন মানব পর্যবেক্ষকের পক্ষে তাই বিবর্তন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু ফিঞ্চদের নিয়ে উৎসাহ কমেনি, এমনকি এদেরকে আদর্শ গবেষণা বস্তু বানিয়ে ফেলা হয়েছে। কারণ এই প্রজাতির পাখিরা অপেক্ষাকৃত দ্রুত বংশবিস্তার করে এবং তারা সচরাচর এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যায় না।
১৯৭০-এর দশকে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী পিটার আর গ্র্যান্ট ও বি রোজম্যারি গ্র্যান্ট গালাপাগোস দ্বীপকে এক জান্তব গবেষণাগার বানিয়ে ফেলেছিলেন। দ্বীপপুঞ্জের প্রায় ২০,০০০ ফিঞ্চ পাখি ছিল তাদের গবেষণার বিষয়বস্তু। তারা দেখেছিলেন, এল নিনো আসে আর যায়, এর সাথে পরিবেশ এক সময় সিক্ত হয়, অন্য সময় আবার শুষ্ক হয়ে উঠে। আর এরই সাথে তাল মিলিয়ে নতুন প্রজন্মে ফিঞ্চদের ঠোঁট ও দেহের আকার পরিবর্তিত হয়। এমনকি তারা ভবিষ্যত প্রজন্মের ফিঞ্চদের আকার-আকৃতি কেমন হবে তার সফল ভবিষ্যৎবাণীও করেছিলেন।
গ্র্যান্টদের মত আরও অনেক বিজ্ঞানী বাস্তব পরিবেশে বিবর্তন নিয়ে গবেষণা করেছেন। এ ধরণের গবেষণাগুলোতে সবসময়ই ইয়নের বদলে বছর দিয়ে বিবর্তনের সীমারেখা টানা হয়েছে। কিন্তু এটা ডারউইনের ধীর-স্থির বিবর্তন বিষয়ক মূল স্বীকার্যের পরিপন্থী। এ ধরণের পরীক্ষাগুলো অনেক প্রাণীর উপরই করা হয়েছে। যেমন, আফ্রিকার গ্রেট লেকের সিকলিড মাছ, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ার Eleutherodactylus ব্যাঙ ইত্যাদি।
মানুষ কিন্তু অনেক আগে থেকেই বিবর্তন নিয়ে চিন্তা করত। এমনকি সক্রেটিসেরও আগে থেকে তারা যোগ্যতমের টিকে থাকার প্রক্রিয়া নিয়ে ভেবে আসছে। অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতকে জীবনের বেড়ে ওঠা নিয়ে অনেক ধারণার জন্ম হয়েছে। এর মধ্যে ডারউইনের পিতামহ ইরাসমাস ডারউইনের (১৭৩১-১৮০২) ধারণাগুলোও উল্লেখযোগ্য।
কিন্তু ডারউইনীয় বিবর্তনবাদই প্রথমবারের মত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পেরেছে। উনবিংশ শতকের পর থেকে শুরু হয়ে আজ অব্দি সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। বর্তমানে পরীক্ষা হচ্ছে সূক্ষ্ণ সব যন্ত্রপাতি দিয়ে। ক্যামেরা, কম্পিউটার আর ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণের মত সূক্ষ্ণ যন্ত্র আজ বিজ্ঞানীদের কাছে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। বিগল জাহাজের কুঠুরীর সাথে কি আর এর তুলনা চলে। কিন্তু এতসব যন্ত্র দিয়ে করা সুনিপুণ পরীক্ষাগুলো দিন দিন সেই বিগল যাত্রীর পক্ষেই সাক্ষ্য দিচ্ছে। জৈব প্রযুক্তি থেকে শুরু করে ফরেনসিক মেডিসিন পর্যন্ত সকল ব্যবহারিক বিজ্ঞানই আজ বিবর্তনের পক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছে। আজ তাই ডারউইন দিবস উদযাপনের জন্য নব উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। এই ১২ই ফেব্রুয়ারি ডারউইনের ২০০তম জন্মবার্ষিকী এবং তার জগদ্বিখ্যাত গ্রন্থ “On the Origin of Species by Means of Natural Selection, or the Preservation of Favored Races in the Struggle for Life.” এর ১৫০তম প্রকাশবার্ষিকী। বিশ্বের সব বিজ্ঞানী একাট্টা হয়েছেন, ধুমধামের সাথে এই দিবসটি পালন করার জন্যে।
ডারউইনের তত্ত্ব আধুনিক বিজ্ঞানের একটি প্রধান খুঁটি। বিজ্ঞানের মূলভিত্তির কথা চিন্তা করলে তাই বিবর্তনবাদ আপেক্ষিকতা ও কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের সাথেই থাকবে। কোপের্নিকুস যেমন সৌরকেন্দ্রিক মতবাদের মাধ্যমে পৃথিবীকে মহাবিশ্বের কেন্দ্র থেকে বিতাড়িত করেছিলেন, ঠিক তেমনি ডারউইন তার তত্ত্বের মাধ্যমে প্রাকৃতিক বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু থেকে মানুষকে বিতাড়িত করেছেন। তিনি এর জন্য প্রাকৃতিক নির্বাচনকে দায়ী করেছেন, একেই চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। “ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, আরভিন”-এর বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী ফ্রান্সিস্কো জে আয়ালা এই চালিকাশক্তিকে বলেছেন “design without a designer”। এখনও যেসব ধর্মতাত্ত্বিকেরা বিবর্তনবাদকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছেন, আয়ালা এ কথাটি তাদের উদ্দেশ্য করেই বলেছেন। ২০০৭ সালে আয়ালা আরও বলেন, “ডারউইন কোপের্নিকুসীয় বিপ্লবকে পূর্ণতা দিয়েছেন। তিনি জীববিজ্ঞানে এক নবতরঙ্গের সূচনা ঘটিয়েছেন যেখানে প্রকৃতিকে একটি ন্যায়সঙ্গত শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তিনি এমন এক ন্যায়সঙ্গত শক্তির সন্ধান দিয়েছেন যাকে ব্যাখ্যা করার জন্য মানুষকে কোন অতিপ্রাকৃত শক্তির দ্বারস্থ হতে হয় না।”
এই বার্ষিকীতে ডারউইন গবেষণার বন্যা বয়ে যাবে। সবগুলো গবেষণার সূচন-বিন্দু হবে স্বয়ং ডারউইনের রচনা। এই বছর আমরা আবার ভেবে দেখব, গত ১৫০ বছরে কিভাবে বিবর্তনবাদ পরিশোধিত ও বিকশিত হয়েছে। আমরা দেখব, কিভাবে ডারউইনের মৌলিক তত্ত্বের সাথে আধুনিক জিনতত্ত্বের সমন্বয় সাধন করা হয়েছে। যে জিন সম্পর্কে ডারউইনের জ্ঞান প্রাচীন বিজ্ঞানীদের মতই ছিল, সেই জিন কিভাবে মানবতার খোলস উন্মোচন করেছে, কিভাবে শৌখিন বিজ্ঞানী ডারউইনকে আধুনিক সভ্যতার নায়ক বানিয়েছে তা দেখে আমরা আবারও বিস্মিত হব।
বিবর্তনবাদ নিয়ে আমাদের সাধারণ প্রশ্নগুলো এরকম: প্রাকৃতিক নির্বাচন কতটা স্বাভাবিক? জিনের আণবিক স্তরে প্রাকৃতিক নির্বাচন কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে? যে জিন বৈচিত্র্যের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক নির্বাচন কাজ করে তার উৎপত্তি কোত্থেকে? প্রাণী, উদ্ভিদ বা অণুজীবের বিচ্ছিন্ন জিন, পুরো একটা অঙ্গ বা পুরো একটা শ্রেণীর মধ্যেই কি ফিটনেস টেস্ট চলে, নাকি কোন বাছবিচার আছে? মানুষ যদি পরিবেশ বা নিজেদের দেহের উপর এক ধরণের অকাট নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে তবে কি তাদের ক্ষেত্রেও এরকম বিবর্তন ঘটবে?
একজন স্বভাবজাত প্রকৃতিবিদ
আলবার্ট আইনস্টাইন এবং এরকম অনেক বিজ্ঞানীর মত ডারউইনও জন্মসূত্রে মেধাবী ছিলেন। প্রকৃতিবিজ্ঞান বিষয়ে তার কোন উঁচুমানের ডিগ্রি ছিল না। ইংল্যান্ডের এক মফস্বলের বেশ সচ্ছল পরিবারের তার জন্ম। ছাত্র হিসেবে মাঝারি গোছের ছিলেন, সবসময়ই প্রথাগত শিক্ষাকে ঘৃণা করতেন। শিক্ষাক্রমে ক্লাসিক সাহিত্য ও সাধারণ জ্ঞানের আধিক্য তার মোটেই ভাল লাগতো না। (আইনস্টাইনও ডানপিটে ছাত্র ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনার দিকে তার খুব বেশী মনোযোগ ছিল না।) বাবার ইচ্ছায় মেডিক্যাল স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু লাশ ব্যবচ্ছেদ করতে গিয়ে মেডিক্যালের উপর তার সব আগ্রহ চলে যায়, সে পড়াশোনা আর শেষ করেননি। কিন্তু শিকারের সময় পাখি ও ছোট ছোট প্রাণীগুলোকে মেরে ফেলত তার তেমন কোন কষ্টই হতো না। এমনকি জীবজন্তু পর্যবেক্ষণ আর ছোট ছোট প্রাণীর নমুনা সংগ্রহ করা তার শখের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল।
এক সময় বাবা রবার্ট ডারউইন বুঝতে পারলেন তার এই ছেলেকে দিয়ে বিশেষ কিছু হবে না। তাই তাকে ধর্মবেত্তা হওয়ার জন্য ইউনিভার্সিটি অফ ক্যামব্রিজে ভর্তি হতে আদেশ করলেন। মজার বিষয়, যার কাজকে অনেক ধর্মবেত্তা ধর্মের চূড়ান্ত অবমাননা হিসেবে উল্লেখ করেছেন সেই ব্যক্তিই স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছিলেন ধর্মতত্ত্বে। অবশ্য তিনি কোনক্রমে সেই ডিগ্রি পেয়েছিলেন, পরীক্ষার ফলাফল মোটেই ভাল ছিল না।
একসময় বাবার অসম্মতি সত্ত্বেও ডারউইন বিগল জাহাজে প্রকৃতিবিদ হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব গ্রহণ করেন। বিগল ছিল ব্রিটিশ নৌবাহিনীর জরিপ জাহাজ যা দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলে জরিপ কাজ চালাতো। এই নৌ ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে পরবর্তীতে ডারউইন বলেছেন, “আমার প্রথম প্রকৃত শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ”। পাঁচ বছর তিনি জাহাজে চড়ে পৃথিবী চষে বেড়িয়েছেন। তখন তার হাতে চিন্তা করার মত যথেষ্ট সময়ও ছিল। এসময়ই প্রাকৃতিক বিশ্ব ডারউইনের সামনে উন্মোচিত হয়ে পড়ে। এই অভিজ্ঞতাই তার সকল গবেষণাকর্মের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছিল।
বিগল জাহাজের ৫ বছরের যাত্রাপথে অনেকগুলো স্থানের পরিবেশ ও প্রাণীকূল ডারউইনের পরবর্তী গবেষণায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: ক্রান্তীয় ব্রাজিলের বৈচিত্র্যময় প্রজাতিসমূহ, বুয়েনোস আইরেসের ৪০০ মাইল দক্ষিণে একটি বিশাল শ্লথের জীবাশ্ম আবিষ্কার (এছাড়াও বেশ তিনি বেশ কিছু জীবাশ্মের সন্ধান পেয়েছিলেন)। জীবাশ্ম আবিষ্কারের পর তিনি এই প্রাণীগুলোর বিলুপ্তির কারণ নিয়ে ভাবনায় পড়ে গিয়েছিলেন। আর্জেন্টিনার প্যাম্পাস অঞ্চলে গাউচোদের হাতে সেখানকার আদিবাসীদের হত্যার ঘটনা জানার পর তিনি মানুষ নামক প্রাণীটির ভৌগলিক প্রভাব বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠেন। আদ্যিকালে মানুষ নতুন ভূমিতে গিয়ে কি করত সেটাও তিনি এর মাধ্যমে আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। সবশেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানটির কথা আসে, সেই গালাপাগোস দ্বীপ যেখানে ডারউইন পাঁচ সপ্তাহ ছিলেন। এই দ্বীপে যখন বিগল পৌঁছুল তখন সেখানে প্রচণ্ড গরম ছিল। ডারউইনের মন অবশ্য শীতলই ছিল। তিনি কচ্ছপ ও হরবোলা পাখির দুটি পরস্পর সম্পর্কিত প্রজাতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে লক্ষ্য করলেন, এই দুটি প্রজাতিই আশপাশের বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোতে এমনভাবে উপনিবেশ স্থান করেছে যাতে মনে হয়, তারা একই পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়ে এই পর্যায়ে এসেছে।
পানিতে থাকার সময়ও ডারউইন বই পড়ায় ব্যস্ত ছিলেন। জাহাজে বসেই তিনি চার্ল লায়েলের “Principles of Geology” বইটি পড়ছিলেন। এই বইয়ে উল্লেখ ছিল, বর্তমানে যে হারে ভূমিক্ষয় ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হচ্ছে এবং পলি জমছে অতীতেই ঠিক একই হারে হতো। এই ধারণাকে বলা হয় “uniformitarianism”। এই বইয়েই লায়েল “catastrophism” প্রকল্পকে অস্বীকার করেছিলেন। এই প্রকল্পে বলা হতো, আকস্মিক অগ্ন্যুৎপাত বা কোন অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রভাবেই পৃথিবীর ভূভাগ গঠিত হয়েছে। আন্দিসের একেবারে অভ্যন্তরভাগে অভিযাত্রীরা একটি সুপ্রাচীন সামুদ্রিক তলানি উদ্ধার করেছিল, যা প্রাকৃতিক কোন কারণে মাটির ৭,০০০ ফুট নিচ থেকে উপরে উঠে এসেছে। এই আবিষ্কারই লায়েলের তত্ত্বকে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিল।
ডারউইন ধারণাও করতে পারেননি যে, তার এই অভিযান জৈব বিজ্ঞানে আমূল পরিবর্তন এনে দেবে। ৫৭ মাসের এই অভিযানে কিন্তু আকাশের চাঁদ হাত পেয়ে যাওয়ার মত কোন ঘটনা ঘটেনি। ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন যেমন তার “annus mirabilis” গবেষণাপত্রে হঠাৎ করেই বিশেষ আপেক্ষিকতা, ব্রাউনীয় গতি ও এ ধরণের আরেকটি ধারণার জন্ম দিয়ে রাতারাতি বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী বনে গিয়েছেন, তেমন কিছু ডারউইনের ভাগ্যে জোটেনি। এই অভিযানকে তাই ক্ষণিকের বিস্ফোরণ না বলে পাঁচ বছরের এক অমূল্য তথ্যভাণ্ডার বলতে হয়। এই তথ্যভাণ্ডারে ছিল: প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়ক উপলব্ধি নিয়ে লেখা ৩৬৮ পৃষ্ঠা, ৭৭০ পৃষ্ঠার একটি ব্যক্তিগত ডায়রি- এর সাথে ছিল অ্যালকোহল ভর্তি বোতলে ১,৫২৯টি প্রজাতির নমুনা, ৩,৯০৭টি শুষ্ক নমুনা- আর গালাপাগোস দ্বীপ থেকে ধরে আনা জীবন্ত কচ্ছপের কথা তো না বললেই নয়।
১৮৩৬ সালের অক্টোবরে বিগল ইংল্যান্ডে ভিড়ার আগেই ডারউইনের লেখা চিঠিগুলো সেখানকার বিজ্ঞানী মহলে ছড়িয়ে পড়েছিল। চিঠিগুলোর সুবাদে তিনি ইতিমধ্যেই পণ্ডিত বনে গিয়েছিলেন। এই খ্যাতি তার বাবার ধর্মবেত্তা বানানোর ইচ্ছাকেও দমিয়ে দিয়েছিল। এর কয়েক বছরের মধ্যেই ডারউইন তার আপন চাচাতো বোন এমা ওয়েজউডকে বিয়ে করে শহরের বাইরে একটি এস্টেটে চলে যান। এই বাড়ির সাথে লাগোয়া বাগান ও গ্রিনহাউজকে তিনি জীবন্ত গবেষণাগার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন, মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বিশাল সম্পত্তির কারণেই তিনি এভাবে জীবনযাপন করতে পেরেছিলেন। বিগল অভিযান থেকে ফেরার পরই ডারউইন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ১৮৮২ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্তই তিনি অসুস্থ ছিলেন, যদিও এর কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। মাথা ব্যথা থেকে শুরু করে হৃদরোগ, মাংসপেশীর খিঁচুনি ইত্যাদি সব ধরণের লক্ষণই তার মধ্যে দেখা গিয়েছিল। এসব কারণেই ডারউইন পরবর্তীতে আর কোন অভিযানে বেরোতে পারেননি।
একটি তত্ত্বের উৎপত্তি
১৮৩০-এর দশকের শেষার্ধেই ডারউইন তার তত্ত্ব প্রস্তুত করে ফেলেছিলেন। প্রকাশ করেছেন আরও দুই দশক পর, তাও প্রতিযোগী বিজ্ঞানী আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেসের চাপাচাপিতে। এত পরে প্রকাশ করার কারণ, তিনি নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন যে, তার তথ্য ও স্বীকার্যে কোন খুঁত নেই।
এই তত্ত্বে পৌঁছাতেও তিনি কোন তাড়াহুড়ো করেননি। লায়েলের বই থেকেই প্রথমে জেনেছিলেন যে, পৃথিবীর স্থলভূমি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে এই পর্যায়ে এসেছে, কোন অতিপ্রাকৃতিক শক্তিতে নয়। এখান থেকে তিনি ভাবলেন, তবে জীবকূলেরও তো ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে এই পর্যায়ে আসার কথা। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, জীবকূলের এক প্রজাতিই অন্য প্রজাতির জন্ম দেয়। জীববিজ্ঞানের এ ধরণের পরিব্যক্তির ধারণা সে সময় আরও কয়েকজন বিপ্লবী চিন্তাবিদের মাথায় ছিল। কিন্তু তারা একে “scala naturae” তথা “জীবকূলের মহাশিকল” আকারে কল্পনা করতেন। এই মহাশিকল প্রকল্পে বলা হতো, পৃথিবীর সকল প্রাণী বা উদ্ভিদের ভিন্ন ভিন্ন পূর্বপুরুষ আছে এবং প্রত্যেকে তার পূর্বপুরুষ থেকে নির্দিষ্ট পথে বিকশিত হয়েছে। এই প্রকল্পে আরও বলা হতো, প্রত্যেক প্রজাতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সন্নিহিত পদার্থগুলোকে গ্রহণ করেছে এবং দিন দিন অপেক্ষাকৃত জটিল ও নিপুণ হয়েছে।
ডারউইন এই সহজ-সরল বিকাশ প্রকল্পকে বর্জন করলেন এবং আমাদের সুপরিচিত শাখাসমৃদ্ধ বিবর্তন তত্ত্ব গ্রহণ করলেন। এই শাখা-প্রশাখা তত্ত্বে বলা হয়, পৃথিবীর সকল প্রজাতিই একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বিকশিত হয়েছে, বিভিন্ন প্রজাতি বিভিন্ন স্থানে এসে বিকাশের ভিন্ন পথ গ্রহণ করেছে। কিন্তু মহাশিকল প্রকল্পে বলা হতো, কে কোন প্রজাতি থেকে বিকশিত হবে তার একটা সীমা আছে। সকল প্রজাতি কেবল একটি পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হতে পারে না। এক্ষেত্রে ডারউইন গালাপাগোস দ্বীপে দেখা হরবোলা পাখির তিনটি প্রজাতিকে স্মরণ করলেন। এই তিনটি পাখি প্রজাতিই লাতিন আমেরিকার একটিমাত্র প্রজাতি থেকে বিবর্তিত হয়েছে। “অরিজিন অফ স্পিসিস” বইয়ে কেবল একটি ছবি ছিল, “জীবনবৃক্ষ” নামের সেই ছবির মাধ্যমে ডারউইন বিবর্তনের শাখাসমৃদ্ধ চিত্রটি আমাদের সামনে তুলে ধরেছিলেন।
এই জীবনবৃক্ষ প্রবর্তনের পরই কিন্তু ঝামেলা শুরু হয়। কারণ এই বৃক্ষ সৃষ্টির পেছনে কোন কারণ দেখাতে না পারলে তো চলবে না। কারণ সন্ধান করতে গিয়েই ডারউইন “প্রাকৃতিক নির্বাচন” নামক বিপ্লবী ধারণার জন্ম দিলেন। তিনি টমাস ম্যালথাসের বইয়ে পড়েছিলেন, বরাদ্দকৃত সম্পদ সীমিত থাকা সত্ত্বেও জনসংখ্যা খুব দ্রুত বেড়ে চলে। এছাড়া প্রাণী ও উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধি নিয়ে তার আগ্রহ ছিল, কৃষি বাজারে গিয়ে নিয়মিতই উদ্ভিদ তালিকা সংগ্রহ করতেন।
১৮৩৮ সালে ডারউইন একটি মজার বিষয় বুঝতে পেরেছিলেন: গবাদি পশুর বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে আমরা ইচ্ছা করেই কেবল উপযোগী বৈশিষ্ট্যগুলোকে প্রাধান্য দেই, কিন্তু বংশবিস্তারের ক্ষেত্রে জীবজগতের একটি নিজস্ব পন্থা আছে যা একটু ভিন্ন। একটি বাস্তুতান্ত্রিক সাম্যাবস্থা যখন কোন কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তখনই কেবল এই পন্থাটি সক্রিয় হয়ে উঠে। এ অবস্থায় প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়া এমন জীবগুলোকে ছেটে ফেলে যেগুলোর অভিযোজনক্ষম বৈশিষ্ট্য অপেক্ষাকৃত কম। অর্থাৎ একই প্রজাতির অপেক্ষাকৃত অনুপযোগী জীবগুলো ঝরে পড়ে। এটিই প্রকৃতপক্ষে আয়ালার “design without a designer”। এমনকি, একই প্রজাতির দুটি জীবের একটিকে মরু অঞ্চলে এবং আরেকটিকে পর্বতাঞ্চলে রেখে দিলে দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে তারা সম্পূর্ণ পৃথক দুটি প্রজাতির জন্ম দিতে পারে- এমন দুটি প্রজাতি যাদের মধ্যে যৌন জননও সম্ভব হবে না।
১৮৫৯ সালে ডারউইন তাড়াহুড়ো করে “অরিজিন অফ স্পিসিস” ছাপিয়ে দিলেন। কারণ, তিনি শুনতে পেয়েছিলেন, ওয়ালেস নাকি একই ধরণের সিদ্ধান্তে এসেছেন এবং তার পাণ্ডুলিপিটি অচিরেই প্রকাশ করতে যাচ্ছেন। বইয়ের মুখবন্ধ ছিল ১৫৫,০০০ শব্দের। এই বিশাল মুখবন্ধের ১,২৫০ কপি খুব দ্রুত বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। ডারউইনের বক্তব্য ছিল বেশ সহজ এবং পরিষ্কার। এ নিয়ে তাই কোন সরস সংলাপের জন্ম হয়নি, আইনস্টাইনের তত্ত্ব প্রকাশের পর যেমন বলা হচ্ছিল- আইনস্টাইন ছাড়া পৃথিবীর আর মাত্র তিন জন এই তত্ত্ব বুঝে।
ডারউইনের বাড়ি ছিল লন্ডন শহর থেকে ১৬ মাইল দক্ষিণে Downe নামক স্থানে। অরিজিন অফ স্পিসিস প্রকাশের পর তিনি বাড়ির আঙিনায় অর্কিড অন্যান্য গাছের মাধ্যমে সরাসরি প্রাকৃতিক নির্বাচন নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে গেছেন। মৃত্যুর পর অন্যদের কাছে তার এই গবেষণার তদারকির ভার ন্যাস্ত করে গিয়েছিলেন। বইটি প্রকাশের পর যে বিতর্কের জন্ম হয়েছিল তা আজও চলছে। সৃষ্টিবাদী নামে পরিচিত কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আজও ডারউইনীয় বিবর্তনবাদকে মিথ্যা আখ্যা দেয়ার চেষ্টা করছে, স্কুলের পাঠ্যবইকেও তারা প্রভাবিত করেছে। ১৮৬০ সালের ১১ই আগস্ট সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান এর একটি প্রবন্ধে এক সম্মেলনের কথা বলা হয়েছিল, “ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস” এর সম্মেলন। সেই সম্মেলনে “স্যার বি ব্রডি” নামক এক ব্যক্তি এই বলে ডারউইনের প্রকল্পকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন যে, “মানুষের আত্ম-সচেতনতা বলে একটি শক্তি আছে- বস্তুজগতে অন্য কোন কিছুর মধ্যেই এটা নেই। নিম্ন শ্রেণীর প্রাণীতে কিভাবে এই চেতনা তৈরী হতে পারে তা ডারউইন খেয়ালই করেননি। মানুষের এই একক অনন্য ক্ষমতা কেবল স্বর্গীয় বুদ্ধিমত্তার সাথেই তুলনীয়।” কিন্তু তখনও বিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেকে ডারউইনের হয়ে কথা বলেছিলেন। সেই একই সম্মেলনে বিখ্যাত ব্যক্তিতব জোসেফ হুকার একটি সাময়িকী প্রকাশের প্রেক্ষিতে অক্সফোর্ডের বিশপকে বলেছিলেন, “এই ধর্মবেত্তার ডারউইনের লেখা সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই।”
অরিজিন অফ স্পিসিস বইয়ে মানুষের বিবর্তন নিয়ে কিছু লেখা হয়নি। কিন্তু ডারউইন “The Descent of Man, and Selection in Relation to Sex” নামে একটি সম্পূর্ণ বই-ই লিখেছেন। এই বইয়ে মানুষের পূর্বপুরুষ হিসেবে আদ্যিকালের বানরদের নাম করা হয়েছে। এই বই অনেকের মর্মমূলে আঘাত করেছে এবং এ নিয়ে ডারউইনকে অনেক ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়েছে, অনেক পত্র-পত্রিকায় মানুষকে অর্ধেক বানর-অর্ধেক মানুষ হিসেবে আঁকা হয়েছে। এমনকি ১৮৬০-এর দশকেও ডারউইনের চাচাতো ভাই ফ্রান্সিস গাল্টন অন্যদের সাথে মিলে বলা শুরু করেছিল, “আধুনিক সমাজ তার অযোগ্য সদস্যদেরকে প্রাকৃতিক নির্বাচনের কবল থেকে রক্ষা করে”। আর নাৎসি আদর্শচ্যুত আদর্শবাদী থেকে শুরু করে নব্য-উদারতাবাদী অর্থনীতিবিদ হয়ে জনপ্রিয় সাহিত্য- সর্বত্র ডারউইনবাদের যে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে তা তো বলাই বাহুল্য। মার্কিন ঔপন্যাসিক কুর্ট ভনেগাট একবার বলেছিলেন, “ডারউইন আমাদের শিখিয়েছেন, যারা মারা যায়, মৃত্যুবরণ করাই তাদের জন্য উপযুক্ত ছিল। তিনি আমাদের বুঝিয়েছেন, মরদেহ উৎকর্ষের প্রতীক।”
বর্তমান পৃথিবীর বৈচিত্র্যময় প্রজাতিগুলো যে একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে শাখা-প্রশাখা বিস্তারের মাধ্যমে বিকশিত হয়েছে, এই ধারণা মানুষ বেশ দ্রুতই গ্রহণ করেছে। কিন্তু এর কারণ হিসেবে প্রাকৃতিক নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বিজ্ঞানী সমাজেও অনেক দেরিতে তৈরী হয়েছে। এ নিয়ে দ্বিধারও যথেষ্ট কারণ ছিল। ডারউইন তার গবেষণায় উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর সঞ্চারণ নিয়ে কোন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেননি। তিনি অনুমান করে নিয়েছিলেন, মানব দেহে “gemmules” নামে এক ধরণের বস্তু আছে যা প্রতিটি কোষ থেকে নিসৃত হয়ে যৌন অঙ্গে যায় এবং সেখানে সংখ্যা বাড়তে থাকে। এই বস্তুগুলোই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তথ্য বহনের কাজ করে। এই অনুমান প্রথমে খুব বেশী সমর্থন পায়নি। তাই ১৯৩০-৪০ এর দশকের আগে প্রাকৃতিক নির্বাচন কেবলই একটি প্রকল্প হিসেবে নড়বড়ে কাঠামোর উপর দাড়িয়ে ছিল। কিন্তু ৩০-৪০ এর দশকেই প্রাকৃতিক নির্বাচন নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে চলে আসা সংশয়ের অবসান ঘটে।
এরপর আধুনিক সংশ্লেষণ পদ্ধতি বিকশিত হতে শুরু করে। ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদকে গ্রেগর মেন্ডেল প্রবর্তিত জিনতত্ত্বের মাধ্যমে নতুন আঙ্গিকে পরীক্ষা করা হয়। ১৯৫৯ সালে যখন অরিজিন অফ স্পিসিস বইয়ের ১০০তম প্রকাশবার্ষিকী পালিত হয়, ততদিনে প্রাকৃতিক নির্বাচন নিয়েও বিজ্ঞানীদের মধ্যে কোন সংশয় অবশিষ্ট ছিল না।
কিন্তু এর পরের বছরগুলোতে বিবর্তনবাদের যতটা প্রসার হওয়ার কথা ছিল, কিছু প্রশ্নের কারণে ততটা প্রসার হয়নি। বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানীদের জন্য এই প্রশ্নগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্নগুলো এরকম: বিবর্তন প্রক্রিয়া কি সবসময়ই সমভাবে চলমান নাকি অনেকদিন নিশ্চল থাকার পর হঠাৎ জোরেশোরে শুরু হয়? দৈব পরিব্যক্তি কি হরহামেশাই ঘটতে থাকে নাকি কখনও কখনও বিকাশ বা বিলয় বাদ দিয়ে বংশানুগতিক বিচ্যুতি (genetic drift) প্রক্রিয়ায় অদৃশ্য হয়ে যায়। প্রতিটি জৈব বৈশিষ্ট্যই কি বিবর্তনমূলক অভিযোজনের ফল নাকি কিছু বৈশিষ্ট্য নিছক বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় উপজাত হিসেবে তৈরী হয়?
আরেকটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ, মাঝে মাঝে একটি জীবগোষ্ঠীর সবার মাঝে কিছু পরার্থবাদী বৈশিষ্ট্য দেখা যায় যেগুলোকে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে খুব ভালভাবেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব। এ বিষয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। আর প্রজাতির উৎপত্তিতে বংশানুগতিক বিচ্যুতি কি ভূমিকা রাখে সেটা চেখে দেখার তো কোন বিকল্পই নেই। আরেকটি সমস্যা আছে: এককোষী জীবগুলো অনেক সময় একে অন্যের সাথে জিন বিনিময় করে, দুয়েকটি জিন না, বরং সবগুলো জিনই তারা বদল করে। এই জিন বিনিময়ের ঘটনা প্রজাতির মৌলিক সংজ্ঞাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। একই প্রজাতির এক জীব অন্য জীবের সাথে যৌন জনন ঘটাতে পারে। ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে এ ধরণের জিন বিনিময় তাই নতুন সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। কিন্তু, এ নিয়ে বিতর্ক যতই তীব্র হচ্ছে, বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞান ততই বিকশিত হচ্ছে, সেই সাথে ডারউইনের যুগান্তকারী আবিষ্কারের গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে চলেছে।
বিবর্তনবাদ: ডারউইনের আগে ও পরে
৬১০-৫৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ – দার্শনিক আনাক্সিমান্দ্রোস বলেন, সকল জীব সামুদ্রিক মাছ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু স্থলে আসার পর তাদের গুণগত পরিবর্তন হয়েছে।
১৭৩৫ – কার্ল লিনিয়াস “Systema Naturae” বইয়ের প্রথম খণ্ড প্রকাশ করেন। এর মাধ্যমে শ্রেণীবিন্যাসবিদ্যার সূচনা ঘটে। পরে তিনি বলেছিলেন উদ্ভিদ একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বিকশিত হয়েছে।
১৮০৯ – ইংল্যান্ডের শ্রুসবারিতে ডারউইন জন্মগ্রহণ করেন।
১৮৩০ – চার্লস লায়েল “Principles of Geology” নামক বইটি প্রকাশ করেন। এই বই দ্বারা ডারউইন প্রভাবিত হয়েছিলেন। প্রকৃতির সবকিছু ধীরে ধীরে এই পর্যায়ে এসেছে বলে যে ধারণার জন্ম তিনি দিয়েছিলেন তা এই বই থেকেই অনুপ্রাণিত। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের ক্রমান্বয়িক পরিবর্তন তার নজর কেড়েছিল।
১৮৩১ – ডারউইন পাঁচ বছরের সমুদ্রে ভ্রমণে বেরোন। বিগল জাহাজে চড়ে তার বিশ্ব ভ্রমণ শুরু হয়।
১৮৩৮ – চার্লস ডারউইন প্রাকৃতিক নির্বাচনের তত্ত্ব প্রণয়ন করেন যা আরও ২০ বছর পর জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়।
১৮৫৯ – “অন দি অরিজিন অফ স্পিসিস” প্রকাশিত হয়।
১৮৬৫ – চেক সন্ন্যাসী গ্রেগর মেন্ডেল উত্তরাধিকারের উপর করা গবেষণা প্রকাশ করেন। কিন্তু আরও ৩৫ বছর পর্যন্ত তার গবেষণা স্বীকৃতি পায়নি।
১৮৭১ – “দ্য ডিসেন্ট অফ ম্যান” বইয়ে ডারউইন মানুষের পূর্বপুরুষ হিসেবে প্রাইমেটদের নাম করেন। এ কারণে তিনি প্রচণ্ড বিতর্কিত হন।
১৮৮২ – ডারউইন মৃত্যুবরণ করেন।
১৯২৫ – “দ্য স্কোপ্স মাংকি ট্রায়াল” এর মাধ্যমে স্বর্গীয় সৃষ্টিতত্ত্বকে অস্বীকার করে এমন কোন কিছু স্কুলে পড়ানো যাবে না বলে আইন পাশ করা হয়।
১৯৩৬-৪৭ – আধুনিক সংশ্লেষণ পদ্ধতিতে ডারউইনের বিবর্তনবাদকে মেন্ডেলীয় জিনতত্ত্বের সাথে মেলানো হয়।
১৯৫৩ – জেম্স ডি ওয়াটসন ও ফ্রান্সিস ক্রিক ডিএনএ-র গঠন আবিষ্কার করেন। এর মাধ্যমে বিবর্তনের আণবিক জীববিজ্ঞান অধ্যয়ন সম্ভব হয়।
বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় – জিন বিশ্লেষণের মাধ্যমে কয়েক হাজার বছর আগেও মানুষের বিবর্তন হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
২০০৯ – এ বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি আমাদের মহান প্রকৃতিবিদ ডারউইনের ২০০তম জন্মবার্ষিকী এবং তার সবচেয়ে বিখ্যাত বইটির ১৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বিশ্বব্যাপী জাঁকজমকের সাথে এ দিবসটি পালনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
বাপরে বাপ ১ম হওয়ার জন্য এত নিচে নামা লাগল 🙁 🙁
২য় B-)
২য়
আমি মহাম্মদের ভক্ত হিসেবে নিজেরে ঘোষনা করছি।
আর আমি আপনার ভক্ত হিসেবে নিজেরে ঘোষনা করছি। 😀
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আর আমি আপনের ভক্ত হিসেবে নিজেরে ঘোষণা করলাম 😀
আর আমি আপনাদের সবার ভক্ত হিসেবে নিজেরে ঘোষণা করলাম 😀
উরি বাসরে, কত্ত বড় আর ভারী লেখা এইটা।
ওই মুহাম্মদ, তোমার দুরবীনের কি খবর?
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
দুরবিন প্রজেক্ট চলছে। আসলে হার্ডওয়্যারের কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু আউটপুট পাইছি ইথারনেট কেবল থেকে। সেই আউটপুট রায়হান আবীরের ল্যাপটপে লাগাইয়া সফ্ট কাজগুলা করতে হবে। আপনার সাহায্য লাগতে পারে। যোগাযোগ করব। রেডি থাইকেন।
মাইচ্ছে আমারে, এডা কিতা কয়? 🙁
আমি হেইডা কি বুঝি নাকি?
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
প্রজেক্টের পুরাটা তো কই নাই। পুরাটা শুনলে বুঝবেন, আপনার হেল্প কতটা লাগবে। দুরবিন হবে আইইউটি-র প্রাক্তন ভিস্যাট দিয়ে। অ্যান্টেনা, এলএনএ, ট্রান্সসিভার, মডেম, রাউটার সবই পাওয়া গেছে। একটা লিংক দিলাম, এইখানে ডিটেলস পাইবেন:
C-band radio telescope with cassegrian antenna
দুরবিন প্রজেক্ট কি?
ইন্টারেস্টিং মনে হইতেসে...
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
তুমি কি নিশ্চিত, c-band এর v-sat তোমার পারপাস সল্ভ করবে? আর v-sat সাধারনত রোটেটিং হয়না আমাদের দেশে, মানে আমার জানা মতে নেই।
তোমার সিগন্যাল যেগুলোকে ট্র্যাক করতে চাও সেগুলো ফ্রিকোয়ন্সি কি রকম হবে বলে মনে হয়?
টেক-ভ্যালিতে কেঊ আছে কিনা দেখ? ওরা বাংলাদেশের v-sat বস।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
বুঝছেন ফয়েজ ভাই, অনেক কিছুই জানি না। বাংলাদেশের ভিস্যাট সাধারণ রোটেটিং হয় না বলে তো ভয় ধরিয়ে দিলেন। আমাদের অ্যাকাডেমি বিল্ডিং এর ছাদে যেইটা আছে ঐটাও রোটেটিং না। কিন্তু ম্যানুয়ালি নাকি ঘোরানো যায়। সূর্য পর্যবেক্ষণ অনেক কঠিন হয়ে যাবে। তাও যতটুকু পারা যায়।
আমাদের পরপাস সল্ভ করার কথা। কারণ সি-ব্যান্ডে রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনেকগুলো পর্যবেক্ষণ হয় বলে জানি। সেগুলো তো এটা দিয়েও হওয়ার কথা।
আমাদের সিগনালের ফ্রিকোয়েন্সি সব রকমই হতে পারে। রেডিও সোর্সগুলো থেকে সবরকম ফ্রিকোয়েন্সিই আসে, কিন্তু এনার্জি খুব কম হয়। এজন্যই ভিন্ন ধরণের রিসিভার লাগে বোধহয়। আমরা তো রিসিভারও এক রাখছি। জানি না কি হবে। আপনাকে আপডেট জানাবো।
টেক-ভ্যালির কথা তো জানতামই না। অচিরেই টেক-ভ্যালির সাথে যোগাযোগ করতে হবে। আমাদের অ্যান্টেনা ঘোরানোটা খুবই দরকার।
বাংলাদেশে ভি-স্যাট এর ব্যবহার ভিপিএন আর ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। স্যাটেলাইট গুলোর সংগে টিউন করার করার জন্য ভি-স্যাটের ফিড-হর্ন (লম্বা ডান্ডাটা)এদিক- ওদিক করা হয় বেষ্ট আউট-পুটের জন্য। এই কাজের জন্য তিন-চার জন ছাতাটা নিয়ে টানাটানি করে আর একজন বসে বসে রিসিভিং পাওয়ার মাপে। এর পর পুরোপুরি টিউন হয়ে গেলে ফিক্স করে ফেলা হয়। তুমি এটাকেই মনে হয় বলছ "ম্যানুয়েল রোটেটিং"।
মডেম আর ট্রান্সসিভার টা ইম্পর্টেন্ট, তুমি যে মডেলের ছবি দিয়েছ তাতে তোমার কাজ হবে কিনা চেক কর। আর এগুলো কিন্তু খুব এক্সপেন্সিভ, এক একটা কর্নভার্টারের দাম পড়ে যায় অনেক। ধোলাই খালে এগুলো পাবে না।
টেক-ভ্যালীতে ভাল হয় যদি ইউনিভার্সিটি এর থ্রুতে যোগাযোগ কর। এরা অনেক প্রফেশনাল বিহেভ করে, পয়সা ছাড়া কাশিও দেয়না। তবে শিক্ষার জন্য এক্সপেরিমেন্ট করবে কিনা?
তোমার টাইম-ফ্রেম কি? এক বছর? নাকি ছয় মাস?
তুমি তোমার প্রজেক্টটের ভি-স্যাট পার্টটুকু আর যা যা ইকুপমেন্ট আছে স্টকে তার একটা মেইল দিতে পার, দেখি একটু দাপদাপি করে কিছু করতে পারি কিনা।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আমি, রায়হান আবীর এবং আর একজন মিলে একটা রেডিও দুরবিন বানানোর চেষ্টা করছি। ফোর্থ ইয়ারের থিসিস প্রজেক্ট হিসেবে। জানি না কতটুকু পারব। 🙂
দারুণ প্ল্যান। মজাদার বিষয়।
শোন, তোমার কানে কানে একটা খবর দেই। তোমার জন্য একটা MS scholarship offer আছে, ইঞ্জিনিরায়িং শেষ হইলেই আমাকে আওয়াজ দিও। 🙂 (অন্যদের বলবা না, কারণ খুবই ডিমান্ডিং এইটাতে countrywise compettetion হয়।)
নাহ! আমি যতই বায়োকেমিষ্ট্রি ছাড়তে চাই, বায়োকেমিষ্ট্রি আমারে ছাড়ে না 😀
বড় পোস্টের সবচেয়ে মানানসই মন্তব্য হচ্ছে, 'সরাসরি প্রিয়তে। সময় করে পড়বো ;;; '
পড়তে থাকেন। 🙂
সুন্দর বর্ণনা।
আচ্ছা, ১৯২৫ সালে কী হইসিলো? ডিটেইল্স?
বিস্তারিত এখানে পাবেন:
The Scopes Monkey Trial - Wikipedia
Butler Act - Wikipedia
ভূমিকাটুকু যোগ করে দেই:
The Butler Act was a 1925 Tennessee law forbidding public school teachers to deny the literal Biblical account of man’s origin and to teach in its place the evolution of man from lower orders of animals. The law did not prohibit the teaching of any evolutionary theory of any other species of plant or animal.
"Scopes Trial" (State v. Scopes, Scopes v. State, 152 Tenn. 424, 278 S.W. 57 (Tenn. 1926), often called the "Scopes Monkey Trial") was an American legal case that tested the Butler Act, which made it unlawful, in any state-funded educational establishment in Tennessee, "to teach any theory that denies the story of the Divine Creation of man as taught in the Bible, and to teach instead that man has descended from a lower order of animals." This is often interpreted as meaning that the law forbade the teaching of any aspect of the theory of evolution. The case was a critical turning point in the United States' creation-evolution controversy.
অসাধারণ :salute:
আমার জীববিজ্ঞানের জ্ঞান প্রায় শূন্যের কোঠায় 🙁 , তাই অনেক জায়গায় বুঝতে অসুবিধা হইসে...তারপরেও লেখাটা যথেষ্ট উপভোগ করসি...
কিছু কিছু প্রশ্ন আছে...আমি জানিনা, মুহাম্মদ এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞ কিনা...তবে, যদি জানা থাকে, উত্তর দিলে খুশি হব...
১. এই ধারণাকে বলা হয় “uniformitarianism”। এই বইয়েই লায়েল “catastrophism” প্রকল্পকে অস্বীকার করেছিলেন।
ভূভাগের উৎপত্তি বা গঠন ব্যাখ্যা করার জন্য এই দুই তত্ত্বের(নাকি 'প্রকল্প')মধ্যে কোনটা গ্রহণযোগ্য, আমি জানিনা...কিন্তু ভূভাগের পরিবর্তন ব্যাখ্যা করার জন্য “catastrophism”কে যথেষ্ট যৌক্তিক বলে আমার সাধারণ জ্ঞানে মনে হয়...
২.এ ধরণের গবেষণাগুলোতে সবসময়ই ইয়নের বদলে বছর দিয়ে বিবর্তনের সীমারেখা টানা হয়েছে।
'ইয়ন' মানে কি?
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
প্রশ্ন দুটো খুব ভাল লেগেছে। আমি মোটামোটি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছি:
১. বর্তমানে ভূবিজ্ঞানে ক্যাটাস্ট্রফিজম এবং ইউনিফর্মিটারিয়ানিজম এর একটি সমন্বিত রূপকে স্বীকৃত দেয়া হয়েছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে ইউনিফর্মিটারিয়ানিজম-ই রয়ে গেছে। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূভাগ খুব ধীর এবং ধারাবাহিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান পর্যায়ে এসেছে, কিন্তু মাঝেমাঝে কিছু ক্যাটাস্ট্রফি পরিবর্তনের ট্রিগার হিসেবে কাজ করেছে। অর্থাৎ, কোন ক্যাটাস্ট্রফির মাধ্যমে হয়ত পরিবেশ অন্য দিকে মোড় নিতে শুরু করেছে, কিন্তু সেই পরিবর্তনও ধারাবাহিকভাবে খুব ধীরে ধীরে ঘটেছে। শুরুটা অস্বাভাবিক হলেও যাত্রাটা অস্বাভাবিক না। লায়েল নাকি তার বইয়ে এমন একটা কথাও বলেছিলেন। ডারউইনও এ বিষয়ে জ্ঞাত ছিলেন।
২. ইয়ন (Aeon) বলতে বিজ্ঞানীরা ১০০ কোটি বছর বুঝেন। বিজ্ঞানীরা বলছি কারণ, সাধারণ মানুষ ইয়ন বলতে ১০০ কোটি বছর বুঝে না। সাধারণ্যে ইয়ন বলতে অসীম বা বিশাল সময় বোঝায়।
সবশেষে ধন্যবাদ... 🙂
মুহাম্মদ,
যত্ন করে উত্তর দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ... সেই সাথে :salute:
সাকীব আল হাসান যেমন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিজ্ঞাপন, তেমনি তুমিও আমাদের এমসিসির বিজ্ঞাপন... :party:
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
এই লেখা এবং অনুবাদ দুইটাই হেব্বি হইছে। আরগুলা করলি না কেন রে?
কেন যেন লেখা হচ্ছে না। ১২ তারিখ তো এসেই গেল। 🙁
মুহাম্মদ ভাইকে :salute:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
থ্যাঙ্কিউ
লেখাটা ভালো লাগলো মুহাম্মদ, একইসঙ্গে তোমাদের উচ্চাভিলাষী থিসিস প্রজেক্টের কথা জেনে। বিজ্ঞান আমার বিষয় ছিল না। কখনোই তেমন টানতো না। একসময়ে দর্শন নিয়ে পড়াশুনাটা ভালো লাগতো। এখন সেটা সাম্প্রতিক রাজনীতিতে এসে ঠেকেছে। এ রকম নানা লেখা, বইয়ের আলোচনা-সমালোচনা পড়ে, তর্ক-বিতর্ক করে যতোটা জানা।
আমার কাছে মনে হয়, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একটা মোটা গলদ হচ্ছে এটা বিজ্ঞান এবং মানবিককে একেবারে বিচ্ছিন্নভাবে দেখে। যেন একটা আরেকটার বিরোধী বা শত্রু। কিন্তু এ দুটোর সমন্বয় বা মিশ্রণ না হলে যে অজ্ঞতা তৈরি হয়, তার প্রমাণ সম্ভবত আমি নিজেই।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
🙁
শিক্ষা-ব্যবস্থার গলদের বিষয়টা খুব মনে ধরল। এই গলদের কারণে বাংলাদেশে বিজ্ঞানের ছাত্ররাই সবচেয়ে বেশী গোঁড়া হয়। সে তুলনায় কিন্তু শিল্পকলা ও সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্ররা অনেক উদার। এক দিক দিয়ে বলা যায়, বিজ্ঞানের ছাত্ররাই সবচেয়ে বেশী বিজ্ঞানবিমুখ।
আর প্রকৌশলের ছাত্রদের অবস্থা যে কি সেটা বুঝিয়ে বলা সম্ভব না। আমার তো মনে হয় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে আমরা শুধু মিস্ত্রিই থেকে যাই। কোনটার সাথে কোনটা লাগালে কি হয় এই জ্ঞানকেই আমাদের যথেষ্ট মনে হয়। খুবই দুঃখজনক।
বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের বিষয়টা যথার্থ বলেছ। অধিকাংশই মুখস্ত করে চলে। চর্চার প্রশ্নই উঠে না। এটা একটা ভালো গবেষণার বিষয় হতে পারে।
আরেকটা অভিজ্ঞতা আমার সাম্প্রতিক। বিদেশে বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকা প্রবাসীদের একটা বড় অংশ দিন দিন আরো বেশি করে ধর্মকে নিজেদের পরিচয়ের প্রধান বিষয় করে তোলে।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
আখন ও ডারউইন নিয়া আছেন...।।
Zakir neik ar lecture dekhan...
Tarpor o hedayat na hoile amar kisu e bolar nai.....
খেক খেক। এই জোক তো আগে চোখে পড়ে নাই। =)) =))