বৃষ্টি শেষের গান

লেখার শুরুতেই কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের তৃতীয় ব্যাচের ক্যাডেট, মুক্তিযোদ্ধা লেঃ কর্নেল(অবঃ) খায়রুল আলম বেলাল ভাইকে। ভাইয়া অশেষ ধন্যবাদ,এই সময়ের একজনকে সেই সময়ে নিয়ে যাবার জন্য।

আমার মা’র কথা

মা’র জন্য আমাকে প্রায়ই বিব্রত হতে হয়। বিশ্বাস করুন প্রায়ই হতে হয়। বিশেষ করে ছুটি শেষে কলেজে ফেরার সময়। মা আমাকে বিদায় দিতে রেলষ্টেশন পর্যন্ত চলে আসেন । আমি সব সময়ই চাইতাম- বিদায় পর্বটা অন্তত বাড়িতেই শেষ হোক।

মাকে কখনোই বোঝাতে পারিনি যে, আমি এখন অনেক বড় হয়েছি। কলেজ ফার্স্ট ইয়ারে যারা পড়ে, তাদের মা’রা এভাবে স্টেশন পর্যন্ত চলে এলে ফার্স্ট ইয়ারে পড়া ছেলেরা লজ্জা পায়। মা অবশ্য কখনোই তার ছেলের লজ্জার ধার ধারেননি। মা ব্যস্ত হয়ে দোয়া ইউনুস পড়েন। মাথায় ফুঁ দেন। আমি লজ্জা পাই। অপেক্ষা করি, ট্রেনের জন্য। ট্রেনটা এসে পড়লে বেঁচে যাই। এভাবে এতো লোকের সামনে এতো বড় একটা ছেলেকে কেউ এভাবে দোয়া পড়ে মাথায় ফুঁ দেয়?

কিন্তু শেষের দিকটায় কেন যেন আমার অনেক খারাপ লাগতো। মনে হত বড় হয়ে যাওয়াটা মোটেই ভাল কিছু না। মা যখন স্টেশনভর্তি লোকের সামনে আমার গায়ে ফু দেন, তখন লজ্জা লাগে ঠিকই কিন্তু নাম না জানা একটা অনুভূতি চারপাশ থেকে আমাকে ঘিরে ধরে। নিজেকে আমার খুব নিরাপদ মনে হয়।

ট্রেন চলে আসে। আমি ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে মা’কে হাত নাড়িয়ে বিদায় দিই। ট্রেন চলতে শুরু করার পর আমাদের মাঝে দূরত্বটা বাড়তে থাকতো। ট্রেনটা ধীরে ধীরে তার গতি বাড়াতো, আমি দেখতাম ধীরে ধীরে আমার মা ছোট হয়ে আসছেন। একটা সময় দূর থেকে মাকে দেখা যেত বিন্দুর মত। ট্রেনটা মোড় ঘুরে অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত মা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকতেন।

এরপরও আমি অনেকটা সময় হাতল ধরে ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতাম। চলন বিলের বুক চিড়ে রাজশাহী মেইল ছুটে চলতো। বিলের একরাশ ভেজা বাতাস আমার চুল এলোমেলো করে দিয়ে যেত। আমি সেই বাতাসে আমার মাকে খুঁজতাম। মা’র শরীরের গন্ধ আর বাতাসের সেই গন্ধ এক ছিল। আমি কখনো আলাদা করতে পারি নি।

কিছু দিন ধরে আমার চার পাশে সব অপরিচিত গন্ধ। চলন বিলের বাতাসে আমি আমার মা’র গন্ধ খুঁজে পাই না। নিজেকে আমার খুব অনিরাপদ মনে হয়।

২৬ মার্চ ১৯৭১, ভোর ৫টা
কালিতলার হাট, রংপুর-বগুড়া মহাসড়ক।

২৩ ব্রিগেড হেড কোয়ার্টার রংপুর থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি সাঁজোয়া দল রওনা হয়েছে বগুড়ার দিকে। এ দলের অধিনায়ক মেজর এজাজ বেগ। ব্রিগেড কমান্ডার আবদুল্লাহ মালিক খুব ঠাণ্ডা ভাষায় মেজর এজাজ বেগকে ব্রিফ করেছেন, কিভাবে বগুড়াকে ‘ডার্টি ব্লাড’ মুক্ত করতে হবে। প্রিয় পাঠক,ব্রিগেডিয়ার আব্দুল্লাহ মালিক সেই লোক যার নির্দেশে ২৮ মার্চ একদিনেই বৃহত্তর রংপুর এলাকায় ৬০০ বাঙালীকে মারা হয়েছে। রংপুরবাসীর শোকের সেই গল্পটা পরে একদিন বলা হবে।

মেজর এজাজ বেগ যখন বগুড়া শহরের উপকণ্ঠে তখন তার দলের উপর প্রথম আক্রমণটি হলো। শোনা গেছে, স্থানীয় থানা লুট করা হয়েছে। অস্ত্র সব চলে গিয়েছে সিভিলিয়ানদের হাতে। এজাজ বেগ ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তিত। তার কাছে খবর আছে, ওসি মোয়াজ্জেম নামের এক লোক থানার সব অস্ত্র সিভিলিয়ানদের দিয়ে দিয়েছে। একটু আগে পর পর তিন রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়েছে এজাজ বেগের জিপের দিকে। এজাজ বেগ তার দলকে থামালেন না। যারা এলোমেলোভাবে গুলি ছুঁড়ছে, তারা সংখ্যায় কত সেই ধারণা এই মুহূর্তে তার কাছে নেই। তারা কখন কোথায় থাকে এজাজ বেগ সেটাও জানেন না। এছাড়াও এজাজ বেগের ভয়ের আরও কারণ আছে। ২৫ তারিখ দুপুরের দিকে এই এলাকার লোকেরা একজন তরুণ ক্যাপ্টেনসহ পাক আর্মির পুরো এক কোম্পানি সৈন্যকে পিটিয়ে মেরেছে। স্থানীয় প্রশাসন শেষের দিকে এই দলটাকে বাঁচানোর একটা শেষ চেষ্টা করেছিল- তাদের জেলখানায় নিয়ে গিয়ে। শেষ রক্ষা অবশ্য হয়নি। উন্মত্ত জনস্রোত জেলের গেট ভাঙতে খুব কম সময় নিয়েছিল।

ব্রিগেডিয়ার আবদুল্লাহ মালিকের নির্দেশ আছে, এই নির্মমতার যথাযথ উত্তর পাক আর্মি যেন দিয়ে আসে।

আক্রান্ত এক জনপদের গল্প

হায়েনার দল আমাদের শহরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। পথে যাকে পেয়েছে তাঁকেই মেরেছে। মাটিডালি মোড়ে পাখির মত গুলি করে মেরেছে আমাদের লোকেদের। সকাল বেলা রিকশা নিয়ে তোতা মিয়া বের হয়েছিল। তোতা মিয়া ফিরে আসেনি। যত সময় গিয়েছে ফিরে না আসার দল ভারী হয়েছে। রেলগেট এলাকায় ফল ব্যবসায়ী আতাউরকে ওরা গুলি করেছে খুব কাছ থেকে। আতাউর বুকে ধাপ করে যে গুলিটা প্রথম এসে লেগেছিল, আমি ব্যাংকের ছাদে বসে তার শব্দ পেয়েছি। আতাউরের মত আরও অনেকের লাশ বাসি হচ্ছে। ওদের শরীর থেকে উষ্ণ রক্তের যে স্রোতটা একসময় বহমান ছিল, তা এখন জমাট বাঁধছে। আমি দূর থেকেও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, মাছি উড়ছে ওদের মুখের উপর। এক একটা লাশ মনে করিয়ে দিচ্ছে, কতটা অনিরাপদ ছিলাম আমরা এই কয়টা বছর! সময় আমাদের সবাইকে একদল হায়েনার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

আমি কখনোই সাহসী হয়ে উঠতে পারিনি। আমি সাঁতার জানিনা। কখনো চেষ্টাও করা হয়নি। আমি ঘুড়ি উড়াতে জানিনা। আমি আরও অনেক কিছুই জানিনা। জানিনা কিভাবে একটা দেশের জন্ম হয়। শুধু জানি, আমাদের নিজেদের একটা আকাশ খুব দরকার। করতোয়ার উপরে রেলের যে ব্রিজটা আছে, সেটার উপর থেকে ঝাঁপিয়ে নিচে পড়বার স্বাধীনতা দরকার। বিকেলের দিকে দুরন্ত গতিতে যে ট্রেনগুলো উত্তরের দিকে চলে যায়, রেললাইনে কান পেতে তাদের চলে যাওয়ার শব্দ শুনবার অধিকার দরকার।

সকাল থেকে তিন জন অপেক্ষা করছি। প্রতিটা মুহূর্তে মনে হয়েছে, ট্রিগার চেপে এক একটা হায়েনাকে ঝাঁঝরা করে দিই। সেটা করতে পারি নি। তিনটা থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে বড়জোর আমরা মিনিট দশেক টিকতে পারবো। তাই অপেক্ষা করেছি। হায়েনার দলের আরও কাছে আসার অপেক্ষা। আমরা একটা গুলিও অপচয় করতে চাই না। এতক্ষণে সবাই এই সমীকরণটা বুঝে ফেলেছি যে, এক একটা বুলেট আমাদের স্বাধীন আকাশের স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

বেলা বারোটার দিকে দেখলাম, হায়েনার দল মহিলা কলেজ মাঠে বেশ কিছু মানুষকে জড়ো করছে। মানুষগুলো সবাই আমাদের পরিচিত। আমাদের স্বজন। কেউ হয়তো পাশের পাড়ায় থাকেন। তাদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে বাজারে, মাঠে-ময়দানে, ঈদের জামাতে কিংবা অন্য কোথাও। আমরা কাউকে আলাদা করতে পারি না। সবাইকে আমাদের এক মনে হয়। আমাদের স্বজনেরা এক একজন উৎকণ্ঠা চোখে চারপাশ দেখছেন। হায়েনারা কারও কারও চোখ বেঁধে দিয়েছে।

আমার বন্ধু টিটু হায়েনাদের দিকে প্রথম গুলিটা করলো। এর পর সবাই কিভাবে যেন অদ্ভুত স্বপ্নময় একটা জগতে চলে গেলাম। চারপাশের কোন কিছুর কথা আমাদের মাথায় নেই। আমরা তখন রাইফেলে নিরন্তরভাবে আমাদের স্বপ্নগুলো বুনে চলেছি। স্বাধীন একটা আকাশের স্বপ্ন। একটা রেলস্টেশন, একটা নদী, একটা সবুজ ধানখেত। ততক্ষণে সেই খুব পরিচিত গন্ধটা আমাদের চারপাশে ঘুরে ফিরতে শুরু করেছে। চলন বিল থেকে উঠে আসা সেই ভেজা বাতাসের গন্ধ। আমাদের মা’র শরীরের গন্ধ আর সেই বাতাসের সেই গন্ধ এক ছিল। যাকে আমরা কখনো আলাদা করতে পারি নি।

জানি,আমাদের হাতে সময় খুব কম। খুব বড়জোড় মিনিট দশেক এই প্রতিরোধটা চালিয়ে যেতে পারবো। নিচ থেকে আমাদের দিকে বৃষ্টির মত গুলি ছোঁড়া হচ্ছে। খুব সম্ভবত ওরা চারপাশ থেকে আমাদের ঘিরে ফেলেছে। পরিকল্পনা ছিল, পিছনের পাইপ বেয়ে পালিয়ে যাব। সেটা এখন আর কোনভাবেই সম্ভব না। আমাদের শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে। আমরা সবাই গত কয়েক মিনিটে খুব অদ্ভুত কিছু অনুভূতির সাথে পরিচিত হয়েছি। এই অনুভূতির নাম আমরা কেউ জানি না। শুধু জানি, স্বাধীন একটা আকাশে ঘুড়ি উড়ানোর স্বপ্ন দেখাটা খুব আনন্দের। নিজেদের একটা পতাকার স্বপ্ন দেখাটা খুব আনন্দের। প্রিয়জনদের ইচ্ছেমত চারপাশে ঘুরতে ফিরতে দেখাটা আনন্দের। আমরা স্বপ্নটা দেখতে শিখে গিয়েছি। বিশ্বাস করুন, আমরা একদমই ভয় পাচ্ছি না। একদমই না।

আমরা বুঝে গিয়েছি একটা দেশ কখনও আয়তনে তৈরি হয় না, একটা দেশ তৈরি হয় স্বপ্নে।

বৃষ্টি শেষের গান

প্রিয় পাঠক, আমার পূর্বসূরির কথা বলছিলাম। যার কথা বলছিলাম তিনি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের ২য় ব্যাচের ক্যাডেট শহীদ আব্দুল মোমেন। ক্যাডেট নং- ৩৫।

পাক আর্মি বগুড়া আক্রমনের প্রাক্বালে সেই সময়ের ইউনাইটেড ব্যাংকের ছাদ থেকে একদল কিশোর-তরুণ আর্মিকে চালেঞ্জ করে প্রথম গুলি ছোঁড়ে। শহীদ আব্দুল মোমেন হিটলু তাঁদেরই একজন। অসম এই যুদ্ধ প্রয়াসের ব্যাপ্তি ছিল খুব অল্পক্ষণের। পরবর্তীতে এই দলটি ধরা পড়ে পাক আর্মির হাতে। মোমেনের সাথে যারা ছিল তাঁদের মধ্যে দুই জনের নাম পাওয়া গিয়েছে। এরা হলেন শহীদ মোস্তাফিজার রহমান চুন্নু এবং টিটু।

ধরা পড়ার পরপরই খুব কাছ থেকে চুন্নু এবং টিটুর চোখে গুলি করা হয়। পরবর্তীতে পাক আর্মি বেয়নেট দিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাঁদের সেখানেই মেরে ফেলে।

মোমেনকে তাৎক্ষণিকভাবে মারা হয়নি। জনশ্রুতি আছে, তাঁকে অজ্ঞাত স্থানে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর পেট্রোল ঢেলে তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। শহীদ মোমেন এদেশের নিখোঁজ সেই সব অগণিত সূর্য সন্তানদের একজন যার কবর খুঁজে পাওয়া যায় নি।

আমার খুব ভাবতে ইচ্ছে করে প্রবল বর্ষার কোন এক দিনে করতোয়ার উপরের রেলসেতুটা ধরে হেঁটে হেঁটে মোমেন বাড়ি ফিরছে। চলন বিলের ভেজা বাতাস বার বার মোমেনের চুল এলোমেলো করে দিচ্ছে। সূর্যকে ছুঁয়ে বাড়ি ফেরা মোমেনরা আজ বড় ক্লান্ত।

১৬,৬৩২ বার দেখা হয়েছে

১১২ টি মন্তব্য : “বৃষ্টি শেষের গান”

  1. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    একটি সত্যি কাহিনিকে তোমার ্নিজের মতো করে যেভাবে লিখেছো তাতে তোমার লেখার ব্যাপারে আমি অপরিসীম আশাবাদী। নিজের কথা লেখা যায় খুব সহজে কিন্তু অন্যের গল্প নিজের মধ্যে ধারণ করে বলাটা অতো সহজ নয়।
    এই লেখার প্রথম অংশে আমার ছেলের কথা মনে হচ্ছিল। দশ বছর হয়ে গেলেও এখনও প্রতিরাতে সে মায়ের কাছে গল্প না শুনে ঘুমাবে না। আমি চাই ছেলেটা বড় হোক। মায়ের উপর থেকে নির্ভরতা কমে যাক। পরমুহূর্তে মনে হয় আসলেই কি তাই চাই? ও খুব মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতে পছন্দ করে। এই গল্পটা ওকে বলবো। আমার বন্ধু রাশেদের ইংরেজি অনুবাদটা ছেলেটা খুব পছন্দ করেছে।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  2. রায়হান রশিদ (৮৬ - ৯০)

    অসাধারণ!!
    ::salute::

    আমার খুব ভাবতে ইচ্ছে করে প্রবল বর্ষার কোন এক দিনে করতোয়ার উপরের রেলসেতুটা ধরে হেঁটে হেঁটে মোমেন বাড়ি ফিরছে। চলন বিলের ভেজা বাতাস বার বার মোমেনের চুল এলোমেলো করে দিচ্ছে। সূর্যকে ছুঁয়ে বাড়ি ফেরা মোমেনরা আজ বড় ক্লান্ত।
    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    তোমার লেখা যত বেশি পড়ছি তত বেশি মুগ্ধ হচ্ছি :hatsoff: এরকম কত জানা অজানা মোমেন, চুন্নু, টিটুদের কাছে আমাদের যে ঋন তা শোধানোর বোধটা আমাদের মধ্যে জেগে ওঠা দরকার।

    আমরা বুঝে গিয়েছি একটা দেশ কখনও আয়তনে তৈরি হয় না, একটা দেশ তৈরি হয় স্বপ্নে।

    :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  4. সমস্ত শরীর কেঁপে উঠে চোখ বেয়ে আপনিই অনুভূতি সব বেরিয়ে এলো... এই অসাধারণ ঘটনা একান্তই আমাদের, আত্মত্যাগের এবং গর্বের। এই আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস। এই সব ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় কত অমূল্য আমাদের এই স্বাধীনতা!

    লেখককে অভিনন্দন।

    জবাব দিন
  5. কৌশিক(২০০৪-২০১০)
    আমার খুব ভাবতে ইচ্ছে করে প্রবল বর্ষার কোন এক দিনে করতোয়ার উপরের রেলসেতুটা ধরে হেঁটে হেঁটে মোমেন বাড়ি ফিরছে। চলন বিলের ভেজা বাতাস বার বার মোমেনের চুল এলোমেলো করে দিচ্ছে। সূর্যকে ছুঁয়ে বাড়ি ফেরা মোমেনরা আজ বড় ক্লান্ত।
    জবাব দিন
  6. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    তোমার লেখা নিয়মিত না দেখলে মাইর দিব।
    অসম্ভব ভাল লেগেছে তোমার লেখা। তোমরা যারা সুন্দর করে লেখ তোমাদের একটা দায়িত্ব থাকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখার। তুমি আরো লেখ মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, আমার মনে হয় সেটা তোমার কর্তব্য।

    অঃটঃ তোমার সাথে দেখা হলে অটোগ্রাফ নিব। আর তোমার জন্য একটা ট্রিট রইল। দেখা হবার দিন ইনশা আল্লাহ।

    জবাব দিন
    • রেজা শাওন (০১-০৭)

      তপু ভাই অনেক ধন্যবাদ। ট্রিটের কথা শুনে হালকা মন খারাপ হল। দেশের বাইরে থাকলে এভাবে অনেকেই ট্রিট দিয়ে থাকে।

      দেখা তো অবশ্যই হবে, উপায় নাই তো।

      আপনি ভাল থাকবেন ভাইয়া। সময় হলে হল্যান্ড ঘুরে যান। ভাবী সহ আসলে বেশি খুশি হব।

      জবাব দিন
  7. অনেক অনেক দিন পর আমি উদীয়মান কারো লেখা পড়ে আবেগে আপ্লুত হলাম। প্রায় ৮ বছর পর খুবি তৃপ্তি সহকারে লেখাটা পড়লাম। শুভ কামনা অরুণ প্রাতের তরুণ দল। :clap:

    জবাব দিন
  8. আজিজুল (১৯৭২-১৯৭৮)

    রেজা শাওন ,
    তোমার লিখায় আগুন আছে, সাথে মা'র স্নিগ্ধ আঁচলের পরশ। তুমি অনেক বড় লেখক হবে ইনশাআল্লাহ্‌ ! মন থেকে দোয়া করছি।
    শুভেচ্ছান্তে, - আজিজ।

    পুনশ্চঃ দেশের বাড়িতে আসলে চাটগায়, বা জার্মানিতে দাওয়াত রইল।


    Smile n live, help let others do!

    জবাব দিন
  9. তাওসীফ হামীম (০২-০৬)

    লেখা নিয়া কিছু বলার নাই। সিসিবি একটু গরম হইতেছে দেখে ভালো লাগলো। ভালো থাকেন রেজা শাওন ভাই।


    চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।

    জবাব দিন
  10. নাফিজ (০৩-০৯)

    দেরী হয়ে গেলো লেখাটা পড়তে...

    লেখাটা পড়ে আপনার লেখা সম্পর্কে আমার শ্রদ্ধা আরো অনেক উঁচুতে উঠে গেলো ভাই ::salute::

    আমার দুঃখটা হচ্ছে- এই মানুষগুলো সম্পর্কে আমরা ক্যাডেট/ এক্স ক্যাডেট হয়েও এতদিন জানতে পারিনি কেন ? উনাদের মরণোত্তর শ্রদ্ধা জানানো বা এধরণের কোন উদ্যোগ কি ক্যাডেট কলেজ পরিবার থেকে নেয়া হয়েছে ?


    আলোর দিকে তাকাও, ভোগ করো এর রূপ। চক্ষু বোজো এবং আবার দ্যাখো। প্রথমেই তুমি যা দেখেছিলে তা আর নেই,এর পর তুমি যা দেখবে, তা এখনও হয়ে ওঠেনি।

    জবাব দিন
    • রেজা শাওন (০১-০৭)

      নাফিজ ধন্যবাদ ভাইয়া।

      উনাদের মরণোত্তর শ্রদ্ধা জানানো বা এধরণের কোন উদ্যোগ কি ক্যাডেট কলেজ পরিবার থেকে নেয়া হয়েছে ?

      না নেওয়া হয়নি। ক্যাডেট কলেজ পরিবারের জীবিত যারা মুক্তিযোদ্ধা আছেন, তাঁদের নিয়েও কখনো বিশেষ কিছু করা হয়েছে বলে জানিনা। শুধু শ্রদ্ধা বা সম্মাননা এই মানুষগুলোর জন্য অনেক কম হয়ে যায়। আমরা উত্তরসূরিরা কিংবা আমাদের পরেও যারা আসবে, তারা যাতে জননী সাহসীকার এই বীর সন্তানদের অনন্তকাল হৃদয়ে ধারণ করতে পারি, এমন কিছু করা দরকার। আমাদের এই ব্যাপার নিয়ে একটা তথ্যচিত্র নির্মাণের ইচ্ছা আছে। বাকীটা আল্লাহ্‌ ভরসা।

      ভাল থাকিস।

      জবাব দিন
      • রেজা শাওন, ভাই, আমাদের কলেজে মোমেন ভাই'র নামে আমাদের কলেজের মাল্টিমিডিয়া গ্যালারি'র নামকরন করা হইসে। আরেক স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ মন্নাফ ভাই'র (১ম ব্যাচ) নামে কলেজ মিউজিয়াম এর নাম করন করা হইসে। শাহি ভাই (আমাদের ১৭তম ব্যাচ) প্রিন্সিপাল হওয়ার পর উনি উদ্যোগ নিয়ে করেছেন। সেই মিউজিয়াম-এ কলেজের বিভিন্ন ব্যাচ এর স্মৃতি'র সাথে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের কলেজ এর ক্যাডেট এবং স্টাফ-দের ও স্মৃতি সংগ্রহ করা হচ্ছে।
        কাজেই একদম কিছু হচ্ছেনা এমন না, অন্তত রাজশাহি ক্যাডেট কলেজ এ চেষ্টা করছি আমরা। এবং আমাদের জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদেরও সম্মানিত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
        রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ-এর শহীদ ক্যাডেটদের তালিকা সম্পর্কে সম্পূরক তথ্যঃ
        ১) শহীদ আব্দুল মন্নাফ ভাই (১/২৫৯)
        ২) শহীদ এস এ মোমেন ভাই (২/৩৫)
        ৩) শহীদ মাজিদ রেজা ভাই (৪/১৬০)
        ৪) শহীদ মোঃ জাকারিয়া ভাই (৫/২২৩)
        ৫) শহীদ আফতাব আলম ভাই (৫/২৩৫)
        ৬) শহীদ এনাম ভাই (৫/২৪৮)
        ৭) শহীদ আব্দুল্লাহ-আল-মামুন ভাই (৫/২৫৭)
        ৮) শহীদ হান্নান আশ্রাফ ভাই (৭/৩৫৩)

        জবাব দিন
        • রেজা শাওন (০১-০৭)

          আরমান ভাই অনেক ধন্যবাদ, খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিয়েছেন ভাইয়া।

          এই ব্যাপারগুলো কিছুটা আমরা জানি। তবে পুরো ক্যাডেট কলেজ পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কোন উদ্যোগ নেওয়া হত, এই বীরত্বগাঁথাগুলো পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য, তাহলে ব্যাপারটা খুব ভাল হত। এই ব্যাপারে কথা বলছিলাম।

          আমার নিজের কথা বলি, বদি কিংবা হারিছ ভাইদের কথা কিন্তু আমি জানতে পেরেছি কলেজ থেকে বাইরে আসার পর।

          তাই এমন কিছু যদি করা দরকার যাতে এই ব্যাপারগুলো অন্তত সবার কাছে পৌঁছুতে পারে।

          জবাব দিন
  11. আসিফ (২০০১-'০৭)

    তুই তো দিনদিন 'লেখক' হয়ে যাইতেছিস রে ! অসাধারন ! অনেকদিন পরে মনে হয় লগ ইন করে পোস্টে কমেন্ট করলাম । হিংসা হইতেছে, সৎ হিংসা অবশ্য !!! 😛 😛 😛 😛 😛

    চালায়া যা , লেখালেখি থামাইস না । :clap: :clap: :clap: :clap: :clap: :clap:

    জবাব দিন
  12. রকিব (০১-০৭)

    এই আবেগটা তোমার মধ্যে অটুট থাকুক রেজা শাওন। আর কিছু বললাম না, লেখকের মানা আছে।

    ভালো থেকো 🙂


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  13. আসাদুজ্জামান (১৯৯৬-২০০২)

    এইবার রিইউনিয়নে গিয়ে শহীদ মোমেন ভাইয়ের ছবি দেখলাম। উনার ছবির ম্যুরাল করা হয়েছে লেকচার গ্যালারীর প্রবেশমুখে।

    খুব কষ্ট হয় যখন দেখি এত কষ্ট, এত আবেগ, এত ত্যাগ তিতীক্ষায় অর্জিত এই দেশকে ছি্বলে খুবলে খাচ্ছে এই দেশের রাজনীতিবি্দরূপী ব্যবসায়ীরা। রাজনীতি ব্যবসার এক উত্তম ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে তাদের কল্যানে। লাখ লাখ শহীদের আত্মত্যাগকে বাদ দিয়ে পিতা আর স্বামীর হাতে দেশকে দিয়ে চলে রশি টানাটানি আর দেশ ছিড়ে যায় বার আর। আর এই মোমেন, চুন্নু আর টিটুরা রয়ে যায় গল্পেই।

    ধিক মোদের শত ধিক.........।

    @ রেজা, লেখা বরাবরের মত ভালো হয়েছে। আর আমি বরাবরই তোমার লেখার একজন একনিষ্ঠ পাঠক। (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
  14. রকিব (০১-০৭)

    banglanews24.com থেকে পাওয়া একটা আর্টিকেলের অংশবিশেষ তুলে দিচ্ছিঃ
    ___________________________________

    নতুন প্রজন্মের সন্তানেরা আমাদের মতো মধ্য প্রজন্ম কিংবা আগের প্রজন্ম থেকে অনেক ভিন্ন হবে বলেই মনে হয়।এরই মধ্যে তাদের চেতনার প্রকাশ সেই ইতিবাচক পরিবর্তনের কথাই জানান দিচ্ছে।এইতো ঘন্টাখানেক আগে হবে।ফেইসবুকে এক বন্ধুর একটা পোস্টিং দেখে ঘুঁ মারলাম সেখানে।ক্যাডেট কলেজ ব্লগে রেজা শাওন নামের এই প্রজম্মের একজন এক মুক্তিযোদ্ধার কথা লিখেছেন। মোমেন নামের একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কথা। লেখাটা মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়তে থাকলাম। শেষটায় এসে থমকে গেলাম। মনে হলো, খানিকটা সময়ের জন্য আমার অনুভূতির একটা বিশাল অংশ শাওন কেড়ে নিয়েছেন তার লেখার মধ্য দিয়ে। শাওন লিখেছেন:

    ‘‘আমার খুব ভাবতে ইচ্ছে করে প্রবল বর্ষার কোনো এক দিনে করতোয়ার উপরের রেলসেতুটা ধরে হেঁটে হেঁটে মোমেন বাড়ি ফিরছে। চলন বিলের ভেজা বাতাস বার বার মোমেনের চুল এলোমেলো করে দিচ্ছে। সূর্যকে ছুঁয়ে বাড়ি ফেরা মোমেনরা আজ বড় ক্লান্ত।”

    শাওন, আপনার রাজনৈতিক পরিচয় কি আমি জানতে চাই না। গণতান্ত্রিক দেশে একটা মানুষ যে কোনো গণতান্ত্রিক মতাদর্শে বিশ্বাসী হতেই পারে। কিন্তু আমাদের অস্তিত্বের যে জায়গা সেখানে কোনো বিভেদ অমার্জনীয়। শাওন, আপনার বর্ণিত শহীদ মোমেন আর কোনদিনও ফিরবে না। কিন্তু আমি দিব্যি দেখতে পারছি, এ প্রজন্মের কোটি কোটি মোমেনের হাতের ছোঁয়ায় আমাদের দেশ আবারো ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। একটা যুদ্ধের জন্য। সেই যুদ্ধ হচ্ছে, ক্ষুধা-দরিদ্রতার বিরুদ্ধে, সামাজিক অসমতার বিরুদ্ধে। আজকের মোমেনদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরেও বিশ্বকে জানান দেবে। শুধু ক্রিকেটে নয়, জীবনের সবখানেই আমরা সাকিব, আমরা তামিম!

    মূল লেখাটি পড়তে চাইলে এখানে ঢুঁ মারতে পারেন


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  15. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    অদেখা ভবিষ্যতের কথা ভেবে, অনাগত সন্তানদের কথা ভেবে যাঁরা জীবন হেসেখেলে বিলিয়ে দিতে পারে তাঁদের কথা ভাবলে গা শিউরে ওঠে।

    অসাধারণ লেখনী শাওন।

    জবাব দিন
  16. তারিক

    "আমি কখনোই সাহসী হয়ে উঠতে পারিনি। আমি সাঁতার জানিনা। কখনো চেষ্টাও করা হয়নি। আমি ঘুড়ি উড়াতে জানিনা। আমি আরও অনেক কিছুই জানিনা। আমি জানিনা কিভাবে একটা দেশের জন্ম হয়। শুধু জানি, আমাদের নিজেদের একটা আকাশ খুব দরকার। করতোয়ার উপরে রেলের যে ব্রিজটা আছে, সেটার উপর থেকে ঝাঁপিয়ে নিচে পড়বার স্বাধীনতা দরকার। বিকেলের দিকে দুরন্ত গতিতে যে ট্রেনগুলো উত্তরের দিকে চলে যায়, রেললাইনে কান পেতে তাদের চলে যাওয়ার শব্দ শুনবার অধিকার দরকার।" অসাধারণ ভাইয়া। :boss: :boss: :boss: :boss:

    জবাব দিন
  17. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    অসাধারন ভাই ::salute:: ::salute:: ::salute::


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
    • আমার সম্পূর্ণ গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছে!
      অসম্ভব ভালো লাগল আপনার লেখা পড়ে!
      সত্যি ঘটনা অথচ মনে হচ্ছে কারো পরিচালনায় কোন সিনেমার পটভূমি যেন!

      তখন দেশ পরাধীন ছিল!
      কিন্তু, বর্তমান কি খুব বেশী নাড়া দিচ্ছে না আমাদের প্রতিটি মুহূর্তে!
      আদৌ কি কোন পরিবর্তন এনেছে!
      এতো বছর পরও!
      এই ত্যাগ!
      তিতিক্ষা!
      জীবন-মরনের বিভীষিকা!
      সেই প্রশ্ন রেখেই শেষ করলাম!
      আর লিখতে পারছি না!

      আপনি কি করে এতো সাহসী কলম চালালেন!
      তা আপনিই ভালো জানেন!
      আর আমি কমেন্টস করতে কলম না, আঙুল চলছে না!
      বিনম্র শ্রদ্ধা ও তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি!
      ভালো থাকুন।
      দোয়া রইল।

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।