সময় খুব অদ্ভুত জিনিস। এই মুহূর্তে যা ভাবছি, সেই কথাটা হুশ করে আমার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে! এই পৃথিবী যে সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে বন বন করে, সেই ঘূর্ণনের বেগ জানি কতো? ১৬০০ কিলোমিটার প্রতিঘন্টায়! আমি থির হয়ে এক জায়গায় বসে থাকলেও সটান জোরে চলে যাচ্ছি কতো দূরে। এই দূরত্ব অমোচনীয়। আবার দ্রুততায় মিশে যাচ্ছি কারো কারো সাথে। আমাদের এই পরিচয়, এই ক্ষণিকের মিলন ঠিক একটা দেয়াশলাইয়ের অগ্নিকণার সমান। ফপ করে নিভে গেলে ঘুটঘুট্টি
সময় নিয়ে ভাবতেও সময় লাগে। সেই সময়ের কথা লিখতে আরো একটু সময় চলে যায়। আজ – অদ্য তাই আলসেমি। আড়মোড়া ভাঙি না, ভাঁজ করে রেখে দিই। সময় জানে, আমার সাথে লড়াইয়ে সে সবসময় জিতবে। তাই মুচকি হাসে, তাচ্ছিল্য।
সময় চলে যাচ্ছে এটা হ্যান্নার মুখের দিকে চাইলেও বুঝতে পারি। হ্যান্না ডাকোটা ফ্যানিং। এই তো ক’দিন আগে দেখলাম ছোট্টমণি। সবার সাথে কথা বলে গিড়বিড়-কলকল। কেউ একটু মুখ ভার করে কিছু বললেই ছলোছলো হয়ে ওঠে, টলমল করে কচুপাতার ওপরে একবিন্দু শিশিরের মতো। আবার স্মিত হাসি দিতেই খিলখিল! সেই হ্যান্নার শিশুমুখ কিছুতেই ভুলতে পারি না। সেও বড়ো হয়ে যাচ্ছে তরতর করে – সুইট সিক্সটিন। সেদিন তার ছবি দেখলাম – হাউন্ডডগ। দেখার সময় বারবার মনে পড়ছিলো টেইকেন-এর পিচ্চি অ্যালি’কে। দুটো ছোট ছোট বেণী দুলিয়ে আধো আধো বোলে কথা বলতো মিষ্টি মেয়েটা, আর এখন কেমন গহীন অন্ধকার সব চরিত্র করছে। মানুষের ভেতরের কুৎসিত দিকগুলোর শিকার হচ্ছে রূপালি পর্দায়, তারপরে সেই নীল চোখে তার অশ্রু…। সেই অশ্রু আর টলমল করে না, চোখেই শুকিয়ে ফেলে সে। তারপরে চোয়াল শক্ত করে। পৃথিবী চুরমার হয়ে ঘুরছে, তার সাথে পাল্লা দিতে হবে না! তাই হ্যান্না বড়ো হয়ে ওঠে…
বার বার মনে হয়, এ আমি মানি না।
সেই বেদনাতেই কি না। পৃথিবী ঘুরে ঘুরে আমার সাথে দেখা করিয়ে দেয় এক গাড়ি চোরের। নাম – মিশেল পোয়কার্ড। তার সাথে ঘুরতে ঘুরতে দেখা পাই প্যাট্রিসিয়ার। এরা দুইজনে দেড় ঘন্টা বক বক করে, ঝগড়া করে, মারপিটও করে কিছুটা। দৌড়ে বেড়ায় শেম্প-এলিসের এভিন্যু ধরে। গাড়ি চুরি করে মিশেল, সেই গাড়িতে চড়ে রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতে যায় প্যাট্রিসিয়া। আর সবচেয়ে ভালো লাগে ৩৯ মিনিট ধরে ছোট একটা ঘরের ভেতর তাদের কথাবার্তা। দুজনে বিছানায় বসে কথা বলতেই থাকে, বলতেই থাকে। এরই মাঝে ক্রমাগত সিগ্রেট ফোঁকে মিশেল। আবোল তাবোল অসংলগ্ন আলাপ।
আপনার কি কখনও এমন হয় নি, কারো সাথে অর্থহীন, লক্ষ্যহীন কথা বলেছেন ঘন্টার পর ঘন্টা। কথা বলার পরে ভুলেও গেছেন যে কি বিষয়ে কথা শুরু করেছিলেন? মিশেল – প্যাট্রিসিয়ার গল্পটাও সেরকম। ছবির শুরুতে একটা খুন করেছে মিশেল, এক পুলিশ ড্রাইভারকে দূর্ঘটনাক্রমে গুলি করে মেরে ফেলেছে সে। তার পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। প্যারিসে ফিরে এসেছে জেলের খাঁড়া মাথায় নিয়ে শুধু প্যাট্রিসিয়ার জন্যে। তাকে নিয়ে সে পালিয়ে যেতে চায় ইতালি। সেখানে গিয়ে দুইজনে থাকবে। কিন্তু প্যাট্রিসিয়া যেতে চায় না। গড়িমসি করে। সেই এক ঘরের দৃশ্যে জানায়, তার ভেতরে আরেকজন আসছে। মিশেল আর তার সন্তান। এর জন্যে প্যারিসে থাকতে চায় সে। আর মিশেল তাকে নিয়ে চলে যেতে চায়।
খুব একটা রুদ্ধশ্বাস কিছু নেই। তারপরেও ছবির নাম – ব্রেথলেস। জাঁ-ল্যুক গ’দার পরিচালক। সম্ভবত ফ্রান্সের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী পরিচালক। পঞ্চাশ বছর আগে তার তৈরি এই ছবিটা দেখে রুদ্ধশ্বাস হয়েই বসে থাকি।
পৃথিবী কেন বন বন করে ঘোরে। কেন সে একটু থম ধরে দম নেয় না। চারপাশে এতো বাতাস, এতো হাহাকার মিশে ঘুরপাক খাচ্ছে তার মাঝে!
আমি একটু নির্জলা বাতাস চাই, বিশুদ্ধ অক্সিজেন না হলেও চলবে। খালি একটু ভেজাল মেশানো, কোমল পানীয়ের মতো, বাতাস ফুসফুসে টেনে নেবো। তারপর একটু সময় বুকের ভেতর চেপে ধরে রাখবো। এভাবে আমার মনে হবে আমার চারপাশে আর কিছু নেই। কেউ নেই। কোন কিছু সত্যি সত্যিই আমাকে আর স্পর্শ করতে পারছে না। এই ভাবনা গাঢ় হওয়ার আগে হুট করে সেই বাতাসটুকু ছেড়ে দিবো। তাহলে মনে হবে আমি বেঁচে আছি। আমি ব্রেথলেস নই। আমার ভেতরে ফুসফুস সর্সর্ করে কাজ করছে। পেঁচিয়ে উঠছে ধমনীতে রাগ-ক্ষোভ-ভোগের স্রোত। গ’দার জানেন না, তিনি যে বছর মারা গেছেন সেই বছরেই আমি পৃথিবীতে এসেছিলাম। আর এতোটা সময় পরে, তিনি আমাকে ব্রেথলেস করে দিলেন জাম্প-কাট করা ছবির শেষ দশ মিনিট দিয়ে।
সবকিছু আসলে লাটিমের মতো ঘুরছে, এই পৃথিবী, তার মেরুরেখা-বিষুবরেখা, সমুদ্র-হিমাচল, আমাদের খবরের কাগজের প্রথম পাতা, আমাদের মুখ- প্রমুখ সকল কিছুই ঘূর্ণিতে মিশে হারিয়ে যাবার ঠিক আগে আগে ঝলসে উঠছে। এই বিশ্ব-চরাচরে তার অস্তিত্বের চে’ আর জরুরি কিছু নাই!
*****
– ২১.৯.১০
অনেক অনেকদিন পর ইটা ফেলছি 😀 B-)
:clap: :clap: :clap:
সিমেন্ট লাগায়া ভালো লাগলো :grr:
"Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
- A Concerto Is a Conversation
আমি একটু রং কইরা দিলাম 😛 😛 😛
ভাই, আপনার লেখাগুলা অসাধারন :boss: :clap:
@আছিব, আশহাব, হুমায়রা, ইটা ফালানো, সিমেন্ট লাগানো আর রঙ করা বুঝলাম, কিন্তু পোস্ট নিয়ে কোন কথা না বলাটা একটু অবাক করলো। এটাই কি এখন ব্লগরীতি?
খালি ইটা ফালানো, সিমেন্ট লাগানো বা রঙ করার জন্যে কষ্ট করে পোস্টে ঢোকা আর কমেন্ট করার দরকার নাই। তবু ধন্যবাদ।
===================
@আরিফ, পড়ার জন্যে তোমাকে অনেক ধন্যবাদ
সরি বস,তখন লেখা ফুল পড়া শেষ করিনি,নেট চলে গিয়েছিল।এখন শেষ করলাম :boss:
:hatsoff:
১.
ভদ্রলোকের নাম রড লুরি (আসলে সঠিক উচ্চারণ কী হবে জানি না।) ইসরাইলি বংশোদ্ভুত আমেরিকান।
ইউএস মিলিটারীতে ছিলেন। শখের বশে বিনোদন সাংবাদিকতা করতেন। চলচ্চিত্রের সমালোচনা লেখাটা খুব পছন্দ ছিল। একদিন হঠাৎ আর্মির চাকরি ছেড়ে দিয়ে সিনেমা বানানো শুরু করলেন। এবং দেখা গেল তিনি দারুণ সিনেমা বানাতে পারেন।
এসব কথা আমি জেনেছি তাঁর সম্পর্কে নেটে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে। ঘাটাঘাটি করেছিলাম কারণ কিছুদিন আগে নাথিং বাট দ্য ট্রুথ নামে একটা ছবি দেখে আমি খুব মুগ্ধ হয়েছি। হয় না, অনেক সময় কোন প্রত্যাশা ছাড়াই একটা ছবি দেখতে বসলি, তারপর ছবি শেষ হলে মনে হয়-আরে এটাতো দারুন, এই রকম।
ঘাটাঘাটি করে তার প্রোফাইল খুব ইন্টারেস্টিং মনে হল। ফলে দ্য কন্টেন্ডার নামে তার আরো একটা ছবি যোগাড় করে দেখলাম। এবং তারপর মনে হল প্রথমবারের মুগ্ধতাটা অকারণ ছিল না।
আমি এখন অনেককে এই দুইটা ছবি দেখতে বলছি। ঠিক করেছি তার বাকি সব ছবি যোগাড় করে দেখবো।
২.
হাউন্ডডগ দেখিনি। ব্রেথলেস দেখেছিলাম বোধহয় বছরখানেক আগে। গ'দার অনেক পছন্দের পরিচালক। কিন্তু ডিভিডিতে তার ছবি খুব বেশি একটা পাই না।
৩.
লেখা নিয়ে কিছু বলতে হবে? জানিসই তো তোর লেখা ভালো লাগে। 🙂
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
আমার কম্পিউটারে নাথিং বাট দ্য ট্রুথ গত তিন মাস ধরে পড়ে আছে, আরেক বন্ধুর থেকে কপি করেছিলাম। গতকাল আপনার কমেন্ট দেখে ঠিক করলাম ছবিটা দেখার পরেই জবাব দিবো!
ভাই, কী বলবো। শেষ দৃশ্যে চমক থাকবে এটা ধরে রেখেছিলাম, তারপরেও পুরোপুরি চমকে গেছি! পুরো ছবিটায় একটা 'Aloof' ভাব আছে পরিচালকের। দৃশ্যগুলো খুব স্বাভাবিকভাবে ঘটে যাচ্ছে যেন কিছুই না। কতো বড়ো বড়ো অন্যায় ঘটছে আমাদের চারপাশে আমরা সেগুলো রূপালি পর্দায় দেখলেই খালি মনে করি না জানি কতো বড়ো অন্যায়!
বেকিনসেল একটু জড়োসড়ো মনে হইছে। এ'ছাড়া অনেকদিন মনে রাখার মতো একটা ছবি! এখন ভাবতেছি কনটেন্ডার নামাতে বসবো! 😀
ব্রেথলেস আর হাউন্ডডগ দুইটাই ডাউনলোড করে দেখেছি। লিংক দিয়ে দেই - টাইম পাইলে নামায় ফেলেন!
http://stagevu.com/video/zuhijyuhszhk
http://stagevu.com/video/txkptmyltohi
থ্যাঙ্কস। 🙂
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
TAKEN মুভিটা দেখেছি। তবে মনে অতটা দাগ কাটেনি। ফরাসী,ইরানী সিনেমাগুলো অনেক প্যাশন নিয়ে দেখা লাগে,সবসময় ধৈর্যে কুলায় না। 😕
লেখা যথারীতি ভালো ভাই :boss:
টেইকেন কিন্তু সিরিয়াল। দশ পর্বের। খালি প্রথমটা দেখলে হয়তো তেমন মজা পাওয়া যায় না, অনেক কাহিনীই অসমাপ্ত থাকে। কিন্তু পুরো সিরিজ দেখা হলে মুগ্ধ হবে, নিশ্চিত!
আর এটা ঠিক হাউকাউয়ের মধ্যে বিদেশি ভাষার ছবি দেখা একটু কঠিনই বটে। 🙂
ব্রেথলেস দেখে নিতে হচ্ছে তাহলে।
আর খবর টবর কি আন্দালিব?
খবর টবর ভালই নূপুর'দা। চলতেছে দিনকাল। ব্রেথলেস দেখলে ভালো লাগবে, গ্যারান্টি দিলাম। 😀
একটা মুভিও দেখি নাই এখনো । দেখার আশা করতেছি ।
চমৎকার একটা লাইন । আগেই বলেছি আপনার লেখার প্রায় পুরোটাই কোট করা যায় ।
🙂
ছবি দুটোর ডাউনলোড লিংক দিয়ে দিলাম। সময় করে দেখো।
http://stagevu.com/video/zuhijyuhszhk
http://stagevu.com/video/txkptmyltohi
মাঝখানে কিছুদিন কাটিয়েছি অনেকটা এমনঃ দারুণ প্যাশন নিয়ে সিনেমা দেখতে বসতাম, খুঁজে পেতে কিছু ভালো চবি ঘাঁটতাম, পর পর দুটো ছবি দেখতাম না। মনে হতো, হয়তো আগেরটার রেশ কেটে যাবে। হঠাৎ বিরতি পড়ে গেছে ওভাবে সময় নিয়ে দেখবার। পোষ্টের ফলশ্রুতিতে আরেকবার শুরু করবো ভাবছি। 😀
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
হ শুরু কইরা দাও!! :clap: :clap:
এই নাও লিংকু:: http://stagevu.com/video/zuhijyuhszhk
http://stagevu.com/video/txkptmyltohi
মাইয়াডা বড় বেশি চিল্লায়। ওয়ার অব দা ওয়াররল্ড এ বিরক্ত কইরা মারছে।
তোমার লেখা পড়া অহন আমার মাথা ঘুরতাছে।
ওয়ার অফ দ্যা ওয়ার্লড ছবিটাই তো ভুয়া ছিলো। টেইকেন দেখেন। তব্ধা খাবেন এই মেয়ের অভিনয় দেখে। হলিউড কেমনে কেমনে জানি সব 'ইউনিক' আর 'আনকোরা' প্রতিভাগুলোকে ছাঁচে ফেলে দুমড়ে মুচড়ে 'টিপিক্যাল' বানিয়ে ফেলে। সেটা আবার সবাই গোগ্রাসে গেলে! আফসুস! 🙁
মাথা ঘুরে কেন বস! :khekz:
😀
Oshadharon 🙂
ফ্যানিং এর সর্বশেষ the runaways দেখসিলাম, ছবিটা অসাধারন লাগছে আমার কাছে, সাথে kristen stewart আর dakota fanning এর গলায় গান ও শোনা হইছিলো 🙂 .........মেয়েটারে ইদানিং দেখে কোনভাবেই মানতে পারতেছিনা যে তার বয়স ১৬ 🙁
৫ বছর আগেও ওয়ার অফ দ্যা ওয়ার্লড এ যেরকম পিচ্চি ছিলো , এখন দেখলে চিনাই যায়না ...
আন্দালিব ভাই...লেখা দারুন হইছে 🙂
হ্যাঁ, রানঅ্যাওয়েজ দেখেছি। তবে ওটাকে একটু গতানুগতিক টিনএজ সমস্যার ছবি বলে মনে হয়েছে। গান শুনতে পারাটা অবশ্য বোনাস। 🙂
আমার ধারণা, যদি ড্রাগ বা পপুরালিটি মাথা না খায়, ড্যাকোটা ফ্যানিং একদিন খুব বড়ো মাপের অভিনেত্রী হবে।