ব্রাজিল প্রি-ম্যাচ প্রিভিউঃ ব্রাজিল বনাম মেক্সিকোঃ রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮:

ব্রাজিল প্রি-ম্যাচ প্রিভিউঃ ব্রাজিল বনাম মেক্সিকোঃ রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮:
==================================================================

রাউন্ড অফ সিক্সটিন (নক-আউট) পর্বে আজ বাংলাদেশ সময় ০২ জুলাই ২০১৮ (সোমবার), রাত ৮টায় মাঠে নামবে ব্রাজিল বনাম মেক্সিকো।

ব্রাজিলের যেরকম আক্রমণ ভাগ তাতে খুব সম্ভবত ৪-১-২-৩ এই খেলা শুরু করবে। তার মানে দাড়াচ্ছে বাম দিক থেকে শুরু করলে

৪-
(মার্সেলো- থিয়েগো সিলভা- মার্কুইনহোস- দানিলো)-
১ –
(ক্যাসেমিরো)
২-
(কৌতিনহো – পাউলিনহো)-
৩-
(নেইমার-জেসুস-উলিয়ান)

৪-১-২-৩ মূলত ৪-৩-৩ এর ইম্প্রোভাইজড ভার্সন । অনেকটা অতি আক্রমণাত্মক খেলতে ব্যবহার করা হয় ৪-১-২-৩। এই ফর্মেশনে দুইজন সলিড ডিফেন্ডার থাকে (থিয়েগো সিলভা- মার্কুইনহোস)। আর তার সামনে একজন ডিফেন্সিভ হোল্ডিং মিডফিল্ডার। সাদা চোখে বোঝা যায়না। কিন্তু এই একজন ডিফেন্সিভ হোল্ডিং মিডফিল্ডার ই মূলত ঠিক করবেন আক্রমণ কোন দিক দিয়ে হবে বা কিভাবে হবে। এই ভূমিকাতে থাকবেন ক্যাসামিরো। রিয়াল মাদ্রিদে তিনি ঠিক একই ভূমিকা পালন করেন। জিদানের হ্যাট্রিক চ্যাম্পিয়নশীপ জয়ে তার এই ভূমিকা ছিলো অনস্বীকার্য। এ ধরণের ডিফেন্সিভ হোল্ডিং মিডফিল্ডারকে বেশ বড় ভূমিকা নিতে হয়। ডিফেন্সেও বড় ভুমিকা রাখতে হয়। কিভাবে? বলছি। বল যখন ক্যাসামেরোর পায়ে যাবে, তখন তিনি সবার অবস্থান দেখে ঠিক করবেন এ্যাটাক কোন দিক দিয়ে হওয়া উচিত। সেটা দেখে উপরে উঠে তিনি কৌতিনহো আর পাউলিনহো এর সাথে যোগ দিবেন। তখন ফর্মেশনটা হয়ে যাবে ৪-১-২-৩ থেকে ৪-৩-৩। মানে মাঝে তখন কৌতিনহো – ক্যাসামারো- পাউলিনহো। এটা করার মূল কারণ নিজের মাঝে সমান্তরাল পাসিং লেন তৈরি করা। বল পাস করতে করতে তারা এ্যাটাকিং জোনে নিয়ে যাবে। বল তখন হয় বাম উইং এ নেইমারের কাছে যাবে অথবা ডান উইং এ উলিয়ান এর কাছে। এটা ডিসাইড করবেন ডিফেন্সিভ হোল্ডিং মিডফিল্ডার ক্যাসামেরো। বল ডান উইং এ উলিয়ান এর কাছে গেলে তিনি উইং ধরে এগিয়ে গিয়ে ক্রস করবেন (যদিও তাকে উইং দিয়ে না উঠে মাঝখান দিয়েই এ্যাটাক করতে দেখা গেছে। খুব সম্ভবত তিতে তা-ই চাচ্ছেন)। আর যদি বাম উইং এ নেইমারের কাছে যায়, তবে তিনি ষ্ট্রাইকিং জোন থেকে অল্প নিচে নেমে বল রিসিভ করে মেইন প্লে-মেকারের ভূমিকায় আসবেন। এটা করবেন টীম ফর্মেশন যাতে আবার ৪-১-২-৩ হয়ে যায়। কারণ তখন কৌতিনহো জায়গা পরিবর্তন করে লেফট উইং পজিশনে নেইমারের ইনিশিয়াল জায়গা নিয়ে নিবেন । কাজ করবেন পুরোদস্তুর উইঙ্গারের মতন। আর সেখানে পাসিং লেন তৈরি করার জন্য, নেইমার ডি বক্সের আশেপাশে, মূলত বাম দিকে অবস্থান নিবেন। ইতোমধ্যে যদি বাম দিকে লেফট ব্যাক থেলে মার্সেলো যোগ দেন, তখন কৌতিনহো আবার মাঝখানে চলে আসবেন। তবে তখন নেইমার অলরেডি মাঝখানে থাকলে কৌতিনহো বামেই থাকবেন যতক্ষণ না নেইমার বামে আসছেন। এভাবে পজিশন অদল বদল করে পাসিং লেন তৈরি করার সাথে সাথে প্রতিপক্ষকেও কনফিউজড করার চেষ্টা করবেন। মানে তখন একদম সামনে মার্সেলো- নেইমার- কৈতিনহো- উলিয়ান। আর তারও সামনে জেসুস।

এখন সমস্যা হলো এক্ষেত্রে ডিফেন্সের কি হবে? কোন কারণে যদি প্রতিপক্ষ আক্রমণে যায় তখন ব্রাজিল হাই প্রেসিং ব্যবহার করবে যাতে ৪-১-২-৩ ফর্মেশন না ভেঙ্গে যায় এবং উপরে উঠে যাওয়া ডিফেন্ডাররা ফিরে আসার সুযোগ পায়, সাথে উইঙ্গাররাও (বিশেষ করে উইলিয়ান) নিচে নেমে সাহায্য করতে পারেন। সেক্ষেত্রে নেইমারের কিছু অতি ডাইভ বা ফলস ডাইভ অথবা পাউলিনহো আর ক্যাসামেরোর হার্ড ট্যাকেল করতে হতে পারে। হাই প্রেসিং মানে যেখানেই ব্রাজিল বল হারাক না কেনো একদম সেখান থেকেই ম্যান টু ম্যান হাই প্রেসিং করা যাতে প্রতিপক্ষ ছোট পাশে আক্রমণ করতে না পারে বা লং পাস দিতে বাধ্য হয় বা বলের পজিশন লুস করে।

আক্রমনাত্বক এই ৪-১-২-৩ এ হাই প্রেস বা অতি ডাইভ মাষ্ট। আর এতে যদি কাজ না হয় তখন হোল্ডিং মিডফিল্ডার ক্যাসামেরো আরো নিচে নেমে এসে ৫-৪-১ এর এক সলিড ডিফেন্স লাইন তৈরি করবে এবং এটার পুরোটা হবে নিজেদের অর্ধে। এর মূল কারণ প্রতিপক্ষের জন্য পাসিং লেন কমিয়ে দেয়া।

তার মানে হচ্ছে আক্রমনাত্বক এই ৪-১-২-৩ এ ব্রাজিল খেলা শুরু করে পরিস্থিতি বুঝে ফর্মেশনে পরিবর্তন আনবে। গত তিনটা ম্যাচ ব্রাজিল এভাবেই খেলেছে আর এ ম্যাচেও তার পরিবর্তন হবে না। ফরমেশনটা দূর্দান্ত যদি দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত ডিফেন্সিভ হোল্ডিং মিডফিল্ডার (ক্যাসামেরো) তার স্বভাবিক খেলা খেলতে পারেন। আর কোন কারণে তিনি ফর্মে না থাকলে সেক্ষেত্রে অবশ্য ক্যাসামেরোর বদলে অন্য কেউ নামবে আর তখন পাউলিনহো ক্যাসামোরের পজিশনের দ্বায়িত্ব নিবেন।

এখন দেখা যাক এই আক্রমনাত্বক ফর্মেশনে ব্রাজিল কতটা শৈল্পিক হতে পারে। সমস্যা একটা এই ফর্মেশনের। কাউন্টার এ্যাটাকে গোল খাওয়া বা কার্ড পাওয়ার সম্ভাবনা (হাই প্রেসিং এর কারণে ট্যাকেল করতে গিয়ে অনেক সময় ভূল হয়ে যায়) বেশি থাকে। আবার জেসুস গোল পাচ্ছেনা না। দলে সমন্ব্য় কম কারণ নেইমার, জেসুস, ক্যাসামেরো বা মার্সেলোর দলের সাথে ম্যাচ প্র্যাকটিস খুবই কম (ইনজুরি আর উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ ফাইনাল এর কারণে)

তবে ব্রাজিল তার স্বভাবিক খেলা খেললে সাম্বা নাচের সৌন্দর্যেরই জয় হওয়ার কথা। তবে কে জানে? মেক্সিকো ও জিতে জেতে পারে। এই বিশ্বকাপ অল্ররেডী অনেক অঘটন এর-ই জন্ম দিয়েছে।

দারুণ একটা ম্যাচের প্রত্যাশায়।

লেখাঃ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
তারিখঃ ০২ জুলাই ২০১৮, সকাল ০৪:২০ ঘটিকা (বাংলাদেশ সময়)
ইমেইল: a.shaon@gmail.com

লেখাটি আরো প্রকাশিত হয়েছেঃ
১) http://www.somewhereinblog.net/blog/shaon1016/30245464
২) http://www.cadetcollegeblog.com/shaon/60978

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।