১.
বাংলার শাহজাহান আলী স্যার কে আমরা খুব পছন্দ করতাম কারণ স্যার দারুণ পড়াতেন। আমার এখনো মনে আছে রবীন্দ্রনাথের ‘ছুটি’ গল্পে ফটিক যখন মারা যাওয়ার আগে বলে ‘এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি….’ এইটুকু পড়াতে পড়াতে স্যার আমাদের সামনে হু হু করে কেঁদে ফেললেন। স্যারের কান্না দেখে আমরাও চোখের পানি আটকাতে পারিনি।
এই শাহজাহান স্যারই প্রেপ টাইমে কেমন যেন পাগল হয়ে যেতেন। একে মারেন তো ওকে ধরেন। পড়া বাদ দিয়ে কেউ এদিক ওদিক তাকালে ঠাস ঠাস পিঠের উপর বসিয়ে দেন। আমরা ঠিক মেলাতে পারতাম না। দিনের শাহজাহান স্যার আর রাতের শাহজাহান স্যারে এতো পার্থক্য কেন।
বিভূতিভূষণের ‘মাঠের পাড়ের দূরের দেশ’ পড়াতে গিয়ে স্যার একদিন ক্লাসে আমাদের আগের ব্যাচের তারেক ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন
-তারেকের চোখ দুটির দিকে তাকিয়ে দেখো, মনে হয় ডাগর কালো নবীন চোখ দুটি কি যেন খুঁজছে। ঠিক যেন পথের পাঁচালির অপু।
তারেক ভাই অবাক। উনার এতো প্রশংসা কোনদিন কোনো স্যার করেনাই।
তারপর মজা হলো সেদিনই সন্ধ্যায়। প্রেপ টাইমে স্যার বেত নিয়ে এসে তারেক ভাইকে বললেন
-তারেক, শয়তান , তোর চোখ দুটি আমি টেনে তুলে ফেলবো। পড়া বাদ দিয়ে গল্প করিস।
তারেক ভাই অবাক।
শেষ পর্যন্ত কোন উপায় না দেখে সবাই মিলে স্যারের নাম দিলাম সিবিপিপি (CBPP)।
‘ক্লাসে ভালো প্রেপে পাগলা।’
২.
অংকের লোকনাথ স্যারের সমস্যা ছিল স্যার একচোখে একটু উল্টাপাল্টা দেখতেন। মানে খাটি বাংলায় আমরা যেটাকে টেরা বলি স্যারের একচোখে সেই সমস্যা ছিল। কোনদিকে তাকিয়ে কথা বলছেন কিছু বুঝা যেতো না।
প্রথম দিন ক্লাসে এসে স্যার পিছনে একজনের দিকে আঙুল তুলে বললেন
-এই ছেলে তুমি দাঁড়াও
পিছনে আমরা ছয় সাতজন একসাথে দাঁড়িয়ে গেলাম। সবাই মনে করল স্যার ওকে বলছেন। স্যার বললেন
-তোমরা দাঁড়াইছ কেন ? তোমরা বস।
সবাই একসাথে বসে পড়ল। স্যার বিরক্ত হয়ে বললেন
-তুমি বসছ কেন? তোমাকে তো বসতে বলিনাই। তুমি দাঁড়াও।
আবার সবাই একসাথে দাঁড়ালাম।
মহা সমস্যা। স্যার কাকে দাঁড়াতে বলছেন আর কাকে বসতে বলছেন কিছু বুঝতে পারছি না।শেষ পর্যন্ত স্যার আশরাফের সামনে এসে ওকে বললেন
-তোমাকে দাঁড়াইতে বলছি। তুমি দাঁড়াও। বাকি সবাই বস।
আমরা মহা টেনশনে পড়ে গেলাম। এই স্যার নিয়া তো ভালো সমস্যা হবে। কার দিকে তাকাইয়া আছে কিছু বুঝা যায় না।
সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়লাম একবার আমি। পাক্ষিক পরীক্ষায় স্যার গার্ড দিতে এসেছেন। একটু পর তাকিয়ে দেখি স্যার ডায়াসের সামনে দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে বাইরে পাখি দেখছেন। আমি ভাবলাম এইতো সুযোগ। ডেষ্কের ভিতরে বই খুলে আরামসে দেখে দেখে লিখতে লাগলাম। একটু পর পর স্যারের দিকে তাকাই আর দেখি স্যার মনোযোগ দিয়ে পাখি দেখতেছেন।
অনেকক্ষণ পর দেখি স্যার হেঁটে হেঁটে আমার কাছে আসলেন। তারপর আমার কান ধরে বললেন
-কতো বড়ো সাহস। আমি তোমার দিকে তাকাইয়া আছি আর তুমি আমার সামনে বই খুইলা লিখতেছ? তোমার মনে একটুও ভয়-ডর নাই?
আমি আকাশ থেইকা পড়লাম। স্যার এতক্ষণ আমার দিকে তাকাইয়া ছিলেন ? তারপরও সাহস করে বললাম
-স্যার আমি ভাবছি আপনি জানালা দিয়া পাখি দেখতেছেন।
-শয়তান, পরীক্ষার হলে গার্ড দিতে আইসা আমি জানালা দিয়া পাখি দেখুম?
সেইবার কোনমতে স্যারের হাতে পায়ে ধইরা রেহাই পাইছিলাম। কলেজ লাইফে আর কোনদিন লোকনাথ স্যার গার্ড থাকলে বই খুইলা লেখার চেষ্টা করিনাই।
৩.
আমাদের সময় হায়ারমেথ পরীক্ষার প্রাকটিক্যাল ছিল। ২৫ নম্বরের প্রাকটিক্যাল। এর মধ্যে ৫ নম্বর ভাইবা।
সেইবার ইন্টারমিডিয়েট প্রি-টেস্ট পরীক্ষায় হায়ারমেথ প্রাকটিক্যালের ভাইবা নিচ্ছেন অংকের পূর্ণেন্দু কুমার রায় স্যার। কয়েকজনের ভাইবা নেওয়ার পরে স্যার নিয়ামূল কে ডাকলেন।
-হায়ারমেথ থিউরি কেমন হইছে নিয়ামূল ?
-স্যার বেশি ভালো না।
-কোনটা ভালো হইছে?
-স্যার বাংলা।
-বাংলা থেইকাই প্রশ্ন করি, পারবা?
-জি স্যার পারবো।
-শরতচন্দ্রের বিলাসী গল্পের নায়ক কে ছিল?
-স্যার, ধনঞ্জয়।
-শিওর?
-না স্যার মৃত্যুঞ্জয়।
-শিওর?
-না স্যার, মনে হয় ধনঞ্জয়।
-বাংলা তো ভালো হয়নায় নিয়ামূল।
-স্যার ইংলিশ ভালো হইছে।
-ইংলিশ জিগামু?
-জি স্যার।
-ইংরেজিতে ট্রান্সলেসন কর ‘মশার কামড় খাইয়া আমি সন্ন্যাসীগিরিতে ইস্তফা দিলাম’।
-স্যার, আমারে মাফ কইরা দেন স্যার।
সেইবার নিয়ামূল সহ আমরা অনেকে হায়ারমেথ প্রাকটিক্যালে ফেল মারলাম।
কামরুল ভাই
আপনার লেখা পড়লে শুধু কলেজের কথা মনে পড়ে,মনে হয় এক ছুট দিয়ে চলে যাই সেইসময়টাতে...
কোনদিন যদি সত্যি সত্যি যাও, আমাকেও সঙ্গে নিও।
:shy: ইয়ে মানে আমিও আসি,গেরান্ড ডিনারে আপনের পাশে বইসা খামু,আর কিচ্ছু করুমনা।শুনছি সিলেটের খানাপিনা বেশ জম্পেশ 😀
কোথায় যে পড়েছিলাম মনে নেই, পেটের মধ্য থেকে উঠে আসা নির্মল হাসিকে তুলনা করা হয়েছিল কোকের বোতল থেকে গ্লাসে কোক ঢালার সময় বুগবুগ করে উঠে আসা বুদ্দুদের সাথে।
"কোথায় পাব তাদের" সবগুলো সিক্যুয়েল আমাকে সেইরকম পেটের মধ্য থেকে বুগবুগিয়ে উঠে আসা হাসি হাসিয়েছে।
কিপ ইট আপ ব্রাদার।
থ্যাংক ইউ ভাইয়া।
-ইংরেজিতে ট্রান্সলেসন কর ‘মশার কামড় খাইয়া আমি সন্ন্যাসীগিরিতে ইস্তফা দিলাম’।
-স্যার, আমারে মাফ কইরা দেন স্যার।
=))
কোথায় পাবো তাদের - যদি কোনদিন শেষ হয় তাইলে আপনার বাসায় গিয়ে যত্ন করে ভাংচুর করে আসবো 🙂
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
খুব তাড়াতাড়ি শেষ করে দিতে হবে।
নইলে একদিন দেখবা স্যার রা এসে আমারে শেষ কইরা দিছে।
নির্মল হাসি হাসতেই আছি হাসতেই আছি, হাসতে হাসতে লুটোপুটি। কামরুল ভাই আপনি ভাই একটা জিনিস। (এই কথা যদি কলেজে কইতাম মাইর একটাও মাটিতে পড়ত না, কামরুল ভাই আমার অল্টারনেটিভ)
লোকনাথ স্যার আমাদের ক্লাসে প্রথম যেদিন আসল সেদিন আমাদের কম্বাইন্ড ক্লাসে ক্লাস হচ্ছে। পাশপাশি দুই বেঞ্ছে আমি আর জাহিদ বসে আছি আর আমাদের সামনে মাহমুদ। স্যার কে হঠাৎ লক্ষ্য করলাম আমাদের দিকে আসতেছে। আমি জাহিদ আর মাহমুদ একসাথে দাঁড়িয়ে পড়লাম। বুঝতে পারতেছিনা কাকে স্যার এসে ধরবে। এসে ঠাস করে জাহিদের গালে চড় মারল স্যার। এত বিদ্যুৎগতিতে আমরা ৩ জনই গালে হাত দিয়েছিলাম। মারার আগ পর্যন্ত বুঝতে পারিনাই স্যার কাকে মারবে।
সিনিয়র কে ‘জিনিস’ বলার অপরাধে তোমার নামে দুইটা ব্লগ ইস্যু করা হইল।
তাড়াতাড়ি দুইটা ব্লগ লিখ।
A+
Cool........
হা হা হা। জটিল লিখছস কামরুল। প্রায় সব কয়টা গল্পই তোর মুখে বহুবার শোনা, তবু হাসি চাপাইয়া রাখতে পারতেছি না!
www.tareqnurulhasan.com
এই গল্প গুলিই তুই লিখলে আরো অনেক মজা করে লিখতে পারতি।
সবাইকে সেই মজা থেকে বঞ্চিত করার জন্য তোর পানিসমেন্ট হওয়া দরকার।
CBPP???
আমাদের এক ষ্টাফের নিক নাম আমরা দিছিলাম CCBP(চান্দি ছিলা বান্দির পুত)
জটিল।
CCBP কে ছীল রে...।ণাম টা বল ভুলে গেছি...।
:khekz: =)) :pira:
=))
নওরীন এতো হাসে কেন?
আহারে... মেয়েটা চক্ষের সামনে আস্তে আস্তে পাগল হইয়া গেল...
বড়ই ভাল মেয়ে ছিল... 🙁
বলিস কি??
PCC তে ফোন দিয়ে বলা লাগবে যেন তাদের পাগলা গারদে ১টা বুকিং দেয়।
:))
তাইলে দুলাভাইয়ের কি হবে গো?
কেন? ৬ বছর অপেক্ষা করবে! (আহারে আমারে যদি কেউ পাগল ভেবে আবার কলেজে ফেরত দিত আমি আমার সব কয়টা ক্লাসমেট কে সাথে নিয়ে উড়ে চলে যেতাম কলেজে)
"চান্দি ছিলা বান্দির পুত"
মজা পাইলাম।
CCBP ? হালায় আসলেই একটা CCBP.
বহুত জ্বালান জ্বালাইছে কলেজে।
আমাদের কলেজের আর্মি পোলাপান তাদের ইউনিটে একবার পাইলেই হয়...ডলা দিয়ে দিবে।।
প্যারেন্টস ডে'তে সবসময়তো সবার অভিভাবক আসতে পারতেন না, তাই প্রত্যেক প্যারেন্টস ডে'তে আমাদের একটা দল হয়ে যেত যারা ছাড়া গরুর মতোন ঘুরে
বেড়াতাম, অন্য সবার প্যারেন্টস-আত্মীয়ের সাথে দেখা করতাম।
এই দলের নাম হয়ে গিয়েছিল "প্যানাপাপা", মানে - "প্যারেন্টস না পাওয়া পার্টি"।
Life is Mad.
কেম জিনিস আর জিনিয়াস এই দুটারই প্রথম শব্দ :জ;কিন্তু তুই এক্তটা জিনিয়াস ।
🙁
দারুণ হয়েছে, একদম সেইরকম মজার।
থ্যাংক ইউ
মামা জটিল আর ক ঠিন কি এখনও আমি বুঝি না কিন্তু তারপরও বলছি জটিল আর কঠিন দুই এর সং মিশ্রন ............।চালাইয়া যা...............।।
😛
খুবই ভাল বন্ধু...
কিন্তু আমি যে smiley দিতে পারছি না! কেউ কি শিখিয়ে দিবে????
এডিটর ওপেন করে নিচের দিকে সংযুক্ত স্মাইলিগুলো ক্লিক করে দেখুন কোনটার জন্য কোনটা শর্টকাট।
ইয়াহু মেসেঞ্জার এর জন্য ব্যবহৃত শর্টকাটগুলোই এই ব্লগে ব্যবহার করা হয়েছে।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
"-ইংরেজিতে ট্রান্সলেসন কর ‘মশার কামড় খাইয়া আমি সন্ন্যাসীগিরিতে ইস্তফা দিলাম’।"
আমি নতুন ব্লগার- অফিসে কাজ কম বলে ব্লগ পড়ছি- মন্তব্য করবো ভাবি নাই-
যাই হোক, কামরুলের এই লেখা পড়ে অফিসের মধ্যে েতো হো হো করে হেসে উঠলাম যে সে কথা না জানায়ে পারতেছি না-
দারূণ কামরুল- চালায় যাও-
নতুন আরেকজন কে দেখে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ ভাইয়া।
লেখালেখি শুরু করেন তাহলে। আর নিয়মিত কমেন্ট করবেন তো অবশ্যই। 🙂 🙂
ভাই
সিরাম হইছে ভাই সিরাম...
এক্কেরে হাইসা গড়াগড়ি দিলাম...
=)) =)) =))
আহারে আমারও খুব প্রিয় ছিলো সিরিজটা। একটা বিশেষ মহলের চাপে বন্ধ কইরা দিতে হইলো ;;; ;;;
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
বিশেষ মহলের ব্যান চাই...
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
:pira: :khekz:
কামরুল ভাই আপনি আসলেই একটা জিনিস 😀
তুই আমার পুরান পোস্ট পড়া শুরু করলি নাকি?
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
:clap: :clap: :clap: 😛 😛 😛 =)) =)) =)) :)) :)) :))
Proud to be an ex-cadet..... once a cadet, always a cadet