শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল- ২০১৮। “The Greatest Show on Earth”

এবারের বিশ্বকাপটাতে আসলে যে কে ফেভারিট, বলা কঠিন। সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন এর তালিকায় শুরুতেই ফ্রান্সের নাম আগে আসা উচিত। আতলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে সদ্যই ইউরোপা লিগ জেতা অতোয়ান গ্রিজম্যান রয়েছেন দলের আক্রমণভাগে। প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন (পিএসজি) ফরোয়ার্ড কিলিয়াম এমবাপের সঙ্গে রয়েছেন বার্সেলোনা তারকা উসমানে দেম্বেলে। দলে আছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড মিডফিল্ডার পল পগবাও।ফরাসি কোচ দিদিয়ে দেশম এর দলটা এক কথায় ভয়ংকর।

অবশ্য কোচ্ বরখাস্তের ঝামেলাটা না ঘটলে ফ্রান্সের আগে রিয়াল তারকা সার্জিয়ো রামোসের নেতৃত্বাধীন স্পেনের নাম ই থাকতো। বরখাস্ত হওয়া কোচ হুলেন লোপেতেগি দ্বায়িত্ব নেয়ার পর কোন ম্যাচই হারেনি স্পেন। ফেডারেশনের হঠাত এই পদক্ষেপে হয়তো টাল-মাটাল অবস্থা স্পেন দলের। কিন্তু সেটা সামাল দিতে পারলে, এই মুহুর্তে শীরোপার সবচেয়ে বড় দাবিদার স্পেন। এবার স্পেন এমনই শক্ত দল যে ফ্যাব্রেগাজের মত ফুটবলারেরও দলে জায়গা হয়নি।তাদের গোলকিপার ডেভিড ডি গিয়া (ম্যান ইউ) বিশ্বের এক নম্বর। স্পেন দলে রিয়াল এবং বার্সেলোনার একগাদা তারকার ভিড় – জেরার্ড পিকে (বার্সা), জোডি আলভা (বার্সা) ড্যানি কারভাল (রিয়াল) সের্জিও রামোস (রিয়াল) এবং ইনিয়েস্তা (বার্সা)। আর মাঝমাঠ থেকে একটু সামনে রিয়ালের ইসকো আর এসেনসিও। ইনিয়েস্তা হয়ে বল যখন তাদের পায়ে আসবে, বিশেষ করে ডি- বক্সে সেটা সামাল দেয়া দুরুহ কাজ।

টনি ক্রুস (রিয়াল মাদ্রিদ), ম্যাট হামেল (বায়ার্ন) টমাস মুলার (বায়ার্ন) এবং মেসুত ওজিল (আর্সেনাল)। আর গোলে ম্যানুয়াল নয়ার (বায়ার্ন) – এই নাম গুলো যখন কোন দলের সাথে যুক্ত হয়, তখন তাদের দিয়ে সবই সম্ভব। হ্যা মেশিন এর মতন নিখুত খেলে যাওয়া জার্মানীর কথাই হচ্ছে। ২০১৪ এর চ্যাম্পিয়ন দলটি এখনও আছে। আর এই জার্মানী পরীক্ষিত আর চ্যাম্পিয়ন দল।

৭-১ গোলের পরাজয়ের ক্ষত কাটিয়ে ওটা এবারের ব্রাজিল অন্য রুপের দল। ম্যানেজার তিতের অধীনে এই ব্রাজিল দূর্দান্ত। লিভারপুলের আক্রমণত্রয়ীর অন্যতম স্তম্ভ ফিরমিনোর জায়গা হয় না প্রথম একাদশে। কিংবা বার্সার কৌতিনহোকে খেলতে হয় নিজের জায়গা ছেড়ে অন্য জায়গায় – এই দু’টি জিনিসই যথেষ্ট ব্রাজিলের ভয়ংকরতম রূপটিকে বোঝাতে। রাইট ব্যাক দানি আলভেজ ইনিজুরিতে পড়ায় অবশ্য ফর্মেশনে কিছুটা পরিবর্তন আসবে। আর সেটা কাভার দিতে লেফট উইং এ নামবেন চেলসির উইলিয়ান, ডি-বক্সের বাইরে থেকে যিনি গোল করতে ওস্তাদ। আমার মতে সবচেয়ে ভালো হতো নেইমার কে যদি বদলি হিসাবে নামানো যেতো। শুরুতে কৌতিনহো কে তার নিজের জায়গায় খেলিয়ে সামনে ম্যান সিটির গ্যাব্রিয়েল জেসুস আর লিভারপুলের ফিরমিনহো এই দুই জনকে এক সাথে নামালে। কৌতিনহো আর ফিরমিনোর মাঝে বোঝাপড়া আগে থেকেই ভালো , যখন থেকে তারা লিভারপুলের একই দলে ছিলেন। সেটা কাজে লাগানো যেতো। তবে সমর্থক আর স্পনসরদের চাপ যে কারো পক্ষে সামলানো অসম্ভব। সে হিসাবে নেইমার সুস্থ থাকলে তাকে হয়তো প্রথম একাদশে রাখতেই হবে। সে হিসাবে মাঝমাঠে বাম দিয়ে ঠুকবেন কৌতিনহো। পিছন থেকে বাম দিক দিয়ে ওভারল্যাপ করে উঠে আসবেন সময়ের সেরা লেফট ব্যাক রিয়ালের মার্সেলো। সমানে থাকবেন জেসুস। ডি-বক্সে এরা মিলে এক ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরী করবেন , তাতে সন্দেহ নেই। গতবার ব্রাজিলের ছিলো ভঙ্গুর রক্ষণ । তখনকার অধিনায়ক থিয়েগো সিলভা সেটা কে জোড়াতালি দিয়ে রেখেছিলেন। সিলভা যে ম্যাচে ছিলেন না , সেই ম্যাচেই রক্ষণভাগ একেবারে দুমড়ে মুচড়ে পড়ে। এবার অবশ্য পরিস্থিতি ততটা খারাপ নয়। গোলবারে আছেন রোমার এলিসন, যাকে কিনা স্পেনের ডি-গিয়া (ম্যান ইউ), কোষ্টারিকার কেইলার নাভাস (রিয়াল মাদ্রিদ) আর জার্মানির নয়্যার এর পরই সেরা বলে ধরা হয়। তার সামনে আছেন ড্যানিলো, ফিলিপে লুইস, ফ্যাগনার, কিংবা মারকুইনহস, থিয়াগো সিলভা, মিরান্দা, পেদ্রো। লেফট ব্যাকে খেলবেন মার্সেলো । এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকার সামর্থ্য নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। কিন্তু তিনি আক্রমণে যতটা মনযোগী রক্ষণে ঠিক ততটা নন। রক্ষণের সময় দুই উইং নিয়ে কিছুটা চিন্তা থাকবে ব্রাজিলের। তবে তিতের ব্রাজিল বলে কথা। পাচ বারের চ্যাম্পিয়ন। শৈল্পিক ফুটবলের জনক।

এই হচ্ছে কাগজে কলমের শক্তির বিচারে সম্ভাব্য চার সেমি-ফাইনালিষ্ট। ফ্রান্স – স্পেন – জার্মানী – ব্রাজিল।

কাগজে কলমে এর বাইরে কেউ আসলে সেটা হবে বেলজিয়াম। বেলজিয়ামের থিবো কোরতোয়া (চেলসি) বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলকিপার। কেভিন দ্য ব্রুইন বিশ্বের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার। ডিফেন্সে রয়েছেন অভিজ্ঞ ভিনসেন্ট কোম্পানি (ম্যান সিটি) এবং ভার্মেলেন (বার্সা)। সম্মুখভাগে এডিন হ্যাজার্ড (চেলসি) এবং রোমেরু লুকাকু (ম্যান ইউ)। এডিন হ্যাজার্ড (চেলসি) যদি ঝলে উঠেন, তবে বেলজিয়াম কে ঠেকানো মুশকিল। তবে সমস্যা একটাই। তাদের বিশ্বকাপ জেতার অভিজ্ঞতা নেই।

এসব হলো কাগজে কলমে হিসাব। বিশ্বকাপ এমন একটা মঞ্ছ যেখানে এ হিসাব ঘাটেনা। তা না হলে ১৯৯৮ বা ১৯৮২ এর জিকো- সক্রেটিসের ব্রাজিল বিশ্বকাপ জেতার কথা। তা না হলে হল্যান্ড এর শিরোপাহীন থাকার কথা না। আর এবারও যে এটা যে ঘটবেনা কে বলতে পারে। সেটা ঘটাতে যে মানুষটি এই মুহুর্তে সবচেয়ে বেশি পারেন, তিনি আর কেউ নন – আরজেন্টাইন ম্যাজিসিয়ান মেসি। গতবার একাই টেনে নিয়ে গেছেন ফাইনাল পর্যন্ত। এবার সতীর্থরা সমর্থন দিলে একমাত্র তিনিই পারেন সেটা শিরোপায় রুপান্তর করতে। পায়ের জাদুকরী ছোয়ায় তিনি সবই করতে পারেন। অনেকে বলছেন এটা তার শেষ বিশ্বকাপ। আমার মনে হয়না। আরো কয়েক বছর তিনি দিব্যি এভাবে খেলে যেতে পারবেন । দলে রয়েছেন ডি-মারিয়া (পিএসজি), দিবালা (জুভেন্টাস), আগুয়েরা (ম্যান সিটি) এর মতন তারকারা। গোলরক্ষক রোমেরো ইনজুরীতে পড়াতে অবশ্য রক্ষণ কিছুটা বেশামাল । তবে এটা লাভের গুড়-ও হতে পারে। ইতিহাস অন্তত তাই বলে। ১৯৯০ এ আর্জেন্টিনাকে অনেকটা একাই ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া গাইকোচিয়াও নিয়মিত গোলরক্ষক মাঝপথে ইনজুরীতে পড়াতেই ঠুকেছিলেন, সেটা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে।

এর বাইরে পর্তুগাল এর ঐতিহ্য কম থাকায় তারা হিসাবে বাইরে। তবে মেসির কিংবদন্তী হওয়ার পথে ভাগ বসানো একই সময়ের আরেক কিংবদন্তী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো অনেক কিছুই করার সামর্থ্য রাখেন । আর ইউরো চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল ও সেই আশাতেই আছে।

আরো একজন মাঠ কাঁপাবেন যদি পুরোপুরই সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরতে পারেন। মিসরীয় মেসি মোহাম্মদ সালাহ (লিভারপুল) । খেলেন অবশ্য ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতন। তবে যেমনই খেলেন, তিনি এককথায় অনন্য। তাছাড়া ইংল্যান্ডের ষ্ট্রাইকার হ্যারি কেইন (টটেনহাম) এর কথাও ভূলে গেলে চলবে না।

এমনই আরো অনেকে মাঠ মাতাতে আসছেন।

বাংলাদেশ সময়ে ১৪ জুন ২০১৮ রাশিয়ার মস্কো-তে রাত ৯টায় রাশিয়া বনাম সৌদি-আরব ম্যাচ দিয়ে শুরু। তার আগে জাকজমক পূর্ন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। হ্যা। আজ থেকেই শুরু হচ্ছে “The Greatest Show on Earth”

এখন ধর্ম একটাই – ফুটবল, শুধুই ফুটবল।

লেখাঃ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
তারিখঃ ১৪ জুন ২০১৮, ০৪:৩৯ ঘটিকা (বাংলাদেশ সময়)
ইমেইলঃ a.shaon@gmail.com

লেখাটি আরো প্রকাশিত হয়েছেঃ

http://www.somewhereinblog.net/blog/shaon1016/30244002

শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল- ২০১৮। “The Greatest Show on Earth”

৩ টি মন্তব্য : “শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল- ২০১৮। “The Greatest Show on Earth””

  1. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন এর তালিকায় শুরুতেই ফ্রান্সের নাম আগে আসা উচিত - বাহ, এ যে দেখছি সম্পূর্ণ সঠিক একটা ভবিষ্যৎ বাণী!
    ফরাসি কোচ দিদিয়ে দেশম এর দলটা এক কথায় ভয়ংকর - কথাটার সত্যতা বিশ্ববাসী দেখেছে।
    চমৎকার পোস্ট। অনেকটা এক্সপার্ট ওপিনিয়ন এর মত।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শাওন (৯৫-০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।