১
অনেকদিন পর সিসিবি’তে লিখছি। কিন্তু এরমানে এই না যে, সিসিবি ছেড়ে গেছিলাম- প্রতিদিন নিয়ম করে একবার সিসিবি’তে ঢু না মারলে মনে হয় দিনটাই অপূর্ণ রয়ে গেল!
কয়েকদিন ধরে সিসিবিও বেশ জমজমাট হয়ে উঠছে। ফেসবুকে ফয়েজভাই একটা ষ্ট্যাটাস দিলেন, অনেকেই কমেন্টও করলো সেখানে। তারপর দিবসও একটা ষ্ট্যাটসে নতুন নতুন ব্লগগুলোতে কমেন্ট করার মাধ্যমে সিসিবিকে জমিয়ে তোলার জন্য বলেছিল। সব মিলিয়ে, বেশ একটা আবহ তৈরী হয়েছে মনে হল। ভাবলাম, আমিও আর শুধু নিশ্চুপে ব্লগবাড়িতে ঘোরাঘুরি না করে বরং ব্লগ+কমেন্টের মাধ্যমে নেমে পড়ি সবার সাথে। কিন্তু আগের মতো, আই মিন, পাঁচ/সাত মাস আগের মতো হচ্ছিলনা, ঠিক কোথায় যেন একটা বাঁধো বাঁধো ঠেকছিল- মনে হচ্ছিল কোন একটা সুর বেতাল হয়ে যাচ্ছে। প্রথমে ভাবলাম, এইটা বোধহয় বয়সে অনেক ছোটছোট ক্যাডেটদের সাথে নিজের মধ্যে অনুভব করা একটা দূরত্ব, যা’ সময়ে দূর হয়ে যাবে। কিন্তু না, আমার এই ধারণাটা ভুল ছিল। আর তাই অনেক কাছের বিষয় নিয়ে ব্লগ আসলেও মন্তব্য করতে গিয়ে দ্বিধ্বান্বিত হই। – যেমন, খালেদ মোশারফকে নিয়ে দিবসের ব্লগটা।
মোশারফরা (খালেদ, রাশেদ) আমাদের প্রতিবেশীর মতো- পাশের গ্রামের লোক। হাটা পথে দুই গ্রামের মাঝে দূরত্ব আধ-ঘণ্টার থেকে কিছু বেশি। মোশারফগঞ্জে একটা বড় বিল আছে। ছোটবেলায় শীতের ভোরে মামাদের সাথে হেঁটে গিয়ে সেই বিলে মাছ ধরেছি কতবার- মামারা জাল আর পলো দিয়ে, আর আমি খালি হাতে। পূটি, ট্যাংরা, টাকি, বাইম, এমনকি মাঝে মাঝে শিং মাছও। ছোটবেলা থেকেই মুক্তিযুদ্ধে খালেদ মোশারফের নানান বীরত্বের কাহিনী শুনে আসছি। পারিবারিক ভাবে আমাদের সবাই বিএনপির সাপোর্টার হলেও মোশারফদের বিরুদ্ধে কখনো কোনরূপ কুৎসা বা বিরুপ মন্তব্য করার সুযোগ+সাহস কোনটাই ছিলনা। রাশেদ মোশারফ মন্ত্রী থাকাকালে (১৯৯৬-২০০১) আমাদের পরিবার সরাসরি ভুক্তিভোগী। অথচ, আমার বাবা বা অন্যকারো সামনে তাদেরকে ব্যক্তি-আক্রমণ করে কিছু বলার কথা চিন্তাও করা যেতোনা, এমনকি রাশেদ মোশারফকে থানা আওয়ামীলীগ থেকে দূর্নীতি+স্বজনপ্রীতির অভিযোগে বহিস্কার করার পরেও!- কাজেই, এরূপ শ্রদ্ধার অবস্থানে থাকা খালেদ মোশারফকে নিয়ে যখন কোন আলোচনা হয়, আমি স্বভাবতঃই আগ্রহী হই। এরপরেও আমি কেন দিবসের ব্লগে স্বতস্ফূর্তভাবে কোন কমেন্ট করতে পারছি না?-
২
আমার ধারণায় ভুল হতে পারে, কিন্তু আমার মতো আরো অনেক পুরোনো ব্লগার সিসিতি’তে নিরবে যাতায়াত করেন, কিন্তু ব্লগ বা মন্তব্য লিখেন না। [প্রতিদিনকার ‘অতিথি’ রেজিস্টারের দিকে তাকালেই সেটা খানিকটা বোঝা যায়]। কিন্তু কেন?- অন্যদের কথা জানিনা, আমার কথা বলছি-
সিসিবি’তে আমি লিখা শুরু করি ২০০৯ এর ৫ ফেব্রুয়ারী। ইনফ্যাক্ট, এটাই আমার ব্লগার-জীবনের শুরু। সিসিবি পরিবার থেকে যে সাড়া পেয়েছিলাম, তা’ কোনদিন ভুলবার নয়। সিসিবি’র বর্তমান অবস্থা দেখে মাঝে মাঝেই ঐ ব্লগে ঘুরে আসি। [আগ্রহীদের জন্য http://www.cadetcollegeblog.com/mahmudh/2728]। মনে পড়ে, সকল নতুন ব্লগারকেই সিসিবি অনুরূপ স্বাগতম দিয়েছে। এমনকি ক্যাডেটদের বউরাও একই রকম অভ্যররথনা পেয়েছে। কিন্তু এখন সেসব কোথায় গেল? কেন হারিয়ে গেল? মানুষগুলো ত একই রকম- ক্যাডেট; তার পরেও?-
নিজেদের মাঝে যে পরিবারসম বন্ধনের বিশ্বাস থেকে সিসিবি’র যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই বিশ্বাসটা এখন আর নেই। সেসময়কার আর এখনকার সিসিবি’র পার্থক্য এখানেই। আগে নিজেদের মধ্যে যে আত্মীয়সম ভালোবাসার বন্ধন ছিল, এখন সেটার জায়গায় এসেছে রাজনৈতিক আদর্শের বন্ধন, যা’র ভিত্তিতে রয়েছে প্রতিপক্ষের প্রতি ঘৃণা! সিসিবি’র হাইবারনেশনে যাওয়ার এটাই প্রধান কারণ।
ভালোবাসা যেখানে ভিন্নমতকে বুঝিয়ে নিজের দলভুক্ত করার আশা জাগায়, ঘৃণা সেখানে কামনা করে ধ্বংশ। ভালোবাসা যেখানে ভিন্নমতকে প্রশ্রয় দেয়, ঘৃণা সেখানে হয় খড়গ-হস্ত। ভালোবাসা যেখানে উদ্বুদ্ধ করে আলোচনার মাধ্যমে মতবিরোধের নিরসন, ঘৃণা সেখানে যেকোন উপায়ে বিনাস চায় ভিন্নমতের। ভালোবাসা যেখানে ভিন্নমতের মাঝে খুঁজে খুঁজে বের করে নিজের কাছাকাছি মনোভাবাপন্নদের, সাদরে গ্রহন করতে চায় নিজেদের মধ্যে, ঘৃণা সেখানে নিজ দলের মধ্যেই খুঁজে ফিরে বিরোধীদের।
তাই মনে হয়, কি লাভ বড়+ছোট ভাইবোনদের সাথে আড্ডায়/আলোচনায় গিয়ে। আবার কখন ভিন্নমত প্রকাশ হয়ে পড়ে, ঘৃণার রোষানলে পড়তে হয়। এ’ই বেশ ভালো আছি- খাই দাই, ঘুরে বেড়াই, সময় করে সিসিবি’তে ঢু’ মারি। কতজনে কতকিছু শেয়ার করে, পড়ি, হাসি, মন খারাপ করি, খুশি হই।
আসলে আমি ভালো নেই। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এইরকম ছাড়াছাড়া সম্পর্কের মাঝে স্বাভাবিকভাবে বাঁচা যায়না। সিসিবি’র এ’ই অবস্থা থেকে বের হওয়া দরকার। সিসিবি’তে আগে যারা লেখতো, তারা কেউই লেখালেখি থামায়নি, ফেসবুকে, অন্যব্লগে, পত্রিকায় ঠিকই লেখে যাচ্ছেন, শুধু সিসিবি’তে নেই।
সিসিবি’কে আমি নিজের বাড়ি মনে করি, একমাত্র বাড়ি। আমার এই বাড়িটি আজ বিরানপ্রায়। তাই আমি ভালো নেই।
১ম
B-) B-)
ছোট হাতি
আগেকার সিসিবি'র একটা অসুস্থ ( 😛 ) প্রতিযোগিতার কথা মনে কারায়া দিলা।
সিসিবি'র সেইসব আসুস্থতা (১ম হওয়ার দৌড়, পাঙ্গা, ফ্রন্ট্রোল, কল্পিত GF নিয়ে পচানি, ইত্যাদি) মিস করি।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আপনার অনুভূতির সাথে অনেক কিছুই মিলে গেল মাহমুদ ভাই। সিসিবি সবসময়ই আমার কাছে শুধু একটা ব্লগের চেয়ে অনেক অনেক বড় কিছু ছিল, বাড়ি ছিল, পরিবার ছিল, এখনো আছে। বাড়ির সেই মুখরিত পরিবেশে হয়ত অনেকাংশেই ভাটা পড়েছে কিন্তু সবসময় মনের ভিতর স্বপ্ন দেখি আবার আমাদের এই বাড়িটা জমজমাট হয়ে উঠবে, পুরোনোরা আবার এখানে সাড়া দেবে, নতুনদেরকে বরন করে নেব। গত কয়েকদিনে ব্লগে আনাগোনার বৃদ্ধি দেখে বেশ ভাল লাগছে, আশা বাড়ছে। এই যে আজ আপনি লিখলেন, কাল পরশু হয়তো অন্য কেউ ফিরে আসবে। এভাবেই আস্তে আস্তে সবাই আবার মুখরিত হয়ে উঠবো। আমরা সবাই আবার ভাল থাকবো।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
- তোমার, আমার, আমাদের সবার আশা পূর্ণ হোক, সিসিবি আবার জমজমাট হয়ে উঠুক।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
ফিরে আসুন সেই অসুস্থ( 😛 ) প্রতিযোগিতায় ভাই ! আপনাদের কমেন্ট আমাদের মতো জুনিয়র দের জন্য অনেক কিছু।
- আমিও কমেন্ট করতাম, করতে চাইও। কিন্তু মনের মধ্যে ঢুকে পড়া দ্বিধ্বাটাই সব নষ্ট করে ফেলে ......
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ ভাই, আপনারে অনলাইন দেখে লগিন হলাম।
সিসিবির অবস্থা এতটা খারাপ কেন সেটা নিয়ে ভাববার সুযোগ আছে।
তবে আমি কেন কম আসি সেটা ব্যাখ্যা করা কঠিন। তবে আমি প্রায়শই চেক করে যাই। কিছু কিছু ব্যাপারে বিরক্ত হয়ে আসা কমিয়ে ছিলাম আর এখন কিছু ব্যাপারে হতাশা বোধ করি। তবে মনে প্রাণে চাই সিসিবি আবার জমে উঠুক আগের মত।
ভালো থাকেন।
সবাই চাইলে এই পোস্টেই আড্ডা হতে পারে।
আমিন,
কবে বিদেশ আসলে, আবার চলেও গেলে। কিছুই তো শেয়ার করলে না সিসিবি'তে......
পুলাপাইন সব আইলস্যা হয়া গেছে :grr:
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
ঘরপোড়া গরু... 🙁
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
ভাই অনেকদিন পড় আপনার লেখা পড়লাম, আবার জমবে, আড্ডা হবে, লেখা হবে। নতুনরা আসছে।
চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।
তাদেরকে যথাযথভাবে বরণ করার ব্যবস্থা করা হোক 😛
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ ভাই অনেকদিন পর। কেমন আছেন আপনি?
রেজা,
আমি ভাল নাই বলেই না এই ব্লগটা লিখলাম!
তুমি ক্যামন আছো?- লেখাটেখা পোষ্ট কর সিসিবি'তে...... নাকি অন্যকোথাও জমিয়ে ফেলেছো 😉
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
:goragori:
:-B
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
রাজীব,
তোর কপালে খুব খারাবি আছে যেদিন আমার সাথে দেখা হবে- কয়া রাখলাম x-(
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
:grr:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ভাই, প্রথম যখন বিদেশে আসলাম সারাদিন তেমন কিছুই করার থাকত না। সারাদিনে ৩ ঘন্টার ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাস। তখন কম্পিউটার,নেট এসব নিয়ে ধারণাও কম ছিল। আমাদের সালেকীন তুরস্ক থাকত, ইয়াহুতে ১দিন সিসিবি'র লিঙ্ক দিল, সেখান থেকেই ব্লগ কি জিনিস চিনলাম। সারাদিন ব্লগে থাকতাম, আপনাদের লেখা পড়তাম। তার থেকেও বেশী পড়তাম কমেন্টগুলা। মন খারাপ থাকলে ঐ কমেন্টগুলাতে মন ভাল হয়ে যেত। আবার মন ভাল থাকলে আরো ভাল হত।এভাবেই থাকতাম। আপনাদের সবাইকে আসলে 'চাই' বললে কথাটা যথার্থ হবে না। আপনাদের সবাইকে আবার দরকার।
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
ঐ 🙂
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
ওয়েল্কামব্যাক মাহমুদ ভাই।
কিছু কিছু বিষয়ে আপনার অবস্থান সম্পর্কে আমি নিজেও একমত নই। সেটা মন্তব্যে বলেছিও সংশ্লিষ্ট ব্লগগুলোতে। একইভাবে আপনিও অনেক বিষয়ে অনেকের সাথে একমত হবেননা। এবং এটাই স্বাভাবিক।
মারামারি হবে, কাটাকাটি হবে, ঘটনা হবে ,দূর্ঘটনাও হবে। কিন্তু লেখালেখি থামানো চলবেনা।
লিখতে থাকেন ভাই আগের মত। অনেকদিন হইলো মাথার উপর দিয়া যাওয়ার মত ব্লগ পড়া হয়না 😛
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
সেইটা কি আর বলতে...... সিসিবি'তে এই জাতীয় ব্লগের খোঁজ করলে আমার কমপক্ষে দুইটা ব্লগ লিষ্টে চলে আসবে- মূলতঃ মুহাম্মদ আর জুবারেয় অর্নবের সাথে আমার বিতর্কের। নিজ নিজ অবস্থানকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে আমার মনে হয়না কেউ দেখানে ব্যক্তি-আক্রমণ করেছিলাম।
আমি এইটা খুব ভালো করেই জানি যে, আমার মতের সাথে অনেকেরই মতের মিল হবে না। আর সেইজন্যই ত আলোচনা, তাই না?
মাথার উপরে দিয়ে যাওয়া ব্লগ খালি আমিই লিখি? অন্ততঃ আন্দালিবের কথাও ত' বলতে পারতে। প্রবল নিন্দা ...... :grr:
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
:boss:
😉
মাহমুদ, শইলডা ভালা?
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম