বিকেলে ভোরের চিঠি

কাল রাতে আপনাকে স্বপ্নে দেখলাম, মাষ্টারমশাই! সানরুমের দক্ষিণ কোণ ঘেঁসে মেহগনি কাঠের দোলায়মান একখানি রকিং চেয়ারে বসে আছেন আপনি। কোলের ‘পরে আকাশ নীল জ্যাকেটে মোড়া দ্য এলজেব্রা অব ইনফিনিট জাস্টিস, বুকমার্কের নিকেশ করে দেখেছি, বইটির মাঝামাঝি অব্দিও পড়া হয়নি এখনো। পায়ের কাছে ধূপছায়া রঙের কোলাপুরী চপ্পলের একটিতে বুড়ো আঙুল জড়িয়ে আছে আলগোছে, অপর পা’টি চড়ে বসেছে ডান পায়ের ওপর।

অরুন্ধতীর লেখা কালো অক্ষরগুলো ছুঁয়ে আছে আপনার করতল, অন্য একটি হাত আলগোছে মাথার পেছনে রাখা। বইয়ের পাতায় মন নেই, পলকহীন চোখে আপনি তাকিয়ে আছেন দূরে কোথাও। বাইরে পাঁচিলবিহীন উঠোনের একপাশে ধবধবে সাদা একটি খরগোশছানা চকিতে এদিক ওদিক তাকিয়ে যখন নিশ্চিত হলো তাকে কেউ দেখছেনা অমনি সে দুটি ঘাসপাতা ছিঁড়ে এমন করে মুখে চালান করে দিল যে মনেহলো ঘোরতর ষড়যন্ত্র শেষে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম অপরাধটি মাত্রই সংঘটিত হলো। অনতিদূরে ম্যাগনোলিয়ার সবচেয়ে নিচু ডালের কোটর থেকে একটি চিপমঙ্ক নেমে আসতেই খরগোশছানাটি লুকিয়ে গেল মৃতপ্রায় নীল হারডেঞ্জার ঝোপের আড়ালে। আপনি এসবের কিছুই দেখছেন না বুঝতে পারি। আমরা অনন্তের সন্ধানে চষে বেড়াই পৃথিবীর নানা কক্ষপথে কিন্তু কাছের জিনিসটি আর পাশের মানুষটি চিরকালই আমাদের দৃষ্টির অন্তরালে থেকে যায়! লিভিং রুমে একুইরিয়ামে গোস্ট শ্রিম্পের পাশে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে নিয়ন টেট্রার ঝাঁক। দুধের সর রঙা মিহীন পাঞ্জাবীতে আজ আপনাকে মানিয়েছে ভাল।

কপালে তিন ভাঁজ ফেলে কী অত ভাবেন বলুন, সারাক্ষণ? দিনশেষে অফিসের দেরাজে কাগজপত্তর রেখে সবাই স্টিয়ারিঙে হাত রাখে। গাড়িতে উঠে পিয়া বাসন্তীরে চাপিয়ে বাড়ির পথে ধাওয়া করে নাগরিক মানুষ। মন উদাস হলে ফিরতি পথে মেলটনস এ্যাপ এন্ড ট্যাপে আখরোট আর কাজু বাদামের সাথে রোজ শ্যাম্পেন হাতে পার্শ্ববর্তিনীর ছত্রিশ-ছাব্বিশ-ছত্রিশে লোভাতুর দৃষ্টি অথবা সামাজিক হাই হ্যালো। পানীয়ের দাম মিটিয়ে ব্যাটে বলে মিললে অচেনা মানবীর প্রতি কোষে ঝড় তুলে পূজো শেষে দেবী প্রতিমার মতই ঝপাস করে গঙ্গা বিসর্জন! তারপর পরিতৃপ্ত ঠোঁট দুটি গোল করে শিস বাজাতে বাজাতে নিজের ডেরায় ফিরে নক্ষত্রের স্মৃতির সাথে নিত্যদিনের গেরস্থালী!

জাগতিক মানুষের কোন গুণপনা আপনার কোন কালেই ছিলনা মাষ্টারমশাই, আপনি ভারবাহী পশুর মত অফিসের যাবতীয় কাজকম্ম বাড়ি বয়ে আনেন! তাতে জগতের আলো কতটুকু বাড়ে বলতে পারিনা কিন্তু চরপাড়ায় মেঘের আড়ালে ঢাকা ভোরের সূর্যের মত আপনার ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা মৃদু হাসির শেষ রেখাটুকুও যে উবে যায় ঠিক বুঝতে পারি। মা থাকলে ঠান্ডা লেবুর সরবতের গেলাস হাতে বলতেন, এক চুমুকে খেয়ে নে বেটা, ঠাডা পড়া রোদ মাথায় আইলি ঘরে, সারাদিন কাজের চাপ তো কম পড়েনা তোর ঘাড়ে। ছেলেরা প্রথম জীবনে বাবার শাসন মেনে বড় হলেও তারা দিন শেষে ঘরে ফিরে আসে আটপৌরে শাড়িতে ঘোমটা পরা মায়ের টানেই। পরিপাটি দস্তরখানায় সাদা ভাতের থালায় আলু পটলের ঝোলে এক টুকরো কালবাউসের পাশে ডাগর একটি কাঁচা লংকা আর কাগজি লেবুর গারনিশ মা ছাড়া জগতে আর কেউ করে না সেটি আপনার মত আর কে জানে!

খাবার ঘরের চৌকো কাঁচের টেবিলে সোনালী ঘেরাটোপে নীল একখানি থালায় ফারফালে উইথ সসেজ রয়েছে ঢাকা। ব্রকোলির সাথে সেখানে সানড্রাইড টমেটো আর ক্যালামাটা জলপাই উঁকিঝুঁকি দিয়ে জানান দিচ্ছে নিজেদের অস্তিত্ব। বাড়ি ফিরে হাত পুড়িয়ে রাঁধতে বসলেন নাকি আজ? আপনি কি জানেন ফারফালে মানে কি, মাষ্টারমশাই? নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিল ছাপ্পর আঁটা বিশিষ্ট পণ্ডিত আপনি, সমাজ সংসার উদ্ধারকল্পে আপনাদেরই তো আগ বাড়িয়ে নেমন্তন্ন করে বাঘা বাঘা প্রতিষ্ঠানগুলো। চোখে প্রণতির ছাপ এঁকে ডোরাকাটা ধূসর শার্টের কলারে বাঁধা রেকর্ডারটি ঠিক করে দিয়ে যায় আইটির কোন পান্ডা। বাই ফোকাল চশমাটি কপালে তুলে ভারী আলোচনা চলে হিমহিম জলের বোতল পাশে রেখে। পোডিয়ামে তুখোড় বক্তিমা শেষে অতঃপর হোটেলে ফিরে স্কচের বোতলে ধোঁয়াশা স্মৃতির সাঁতার। ফারফালের মত তুচ্ছ কিছুর মানে আপনার না জানলেও চলে, পন্ডিতমশাই!

রকিং চেয়ারের অনতিদূরে টিপয়ে রাখা জলের গেলাসের ডয়লিতে ধুলো জমেছে খানিক, কবেকার জল তুলে রাখা আছে কে জানে! বাড়ি জুড়ে ছড়ানো ছিটানো বইপত্তর, হেঁশেলের গ্রানাইটে মুখ থুবড়ে রয়েছেন এলান পো। আম কাঁঠালের ছুটিতে একবার সবাই মিলে ছোট চাচার সাথে তুমুল হুল্লোড় করে আমাদের গ্রামের বাড়ি রঘুনাথপুরে গিয়েছিলাম, মনে পড়ে? বাড়ি থেকে মাইলখানিক হাঁটলে ছোট্ট একটা নদী, কী মিষ্টি নাম তার, সাগরচরা! খালের মত এক চিলতে নদী তার আবার সাগরচরা নাম, ছোটচাচাকে বললেন আপনি। উত্তরে চাচা বললেন, বহুদূরের সাগর থেকে নেমে এসেছে বলেই এর নাম সাগরচরা! নদীর তীর ঘেঁসে ঘন কাশের বন, কাছেই আমাদের পুরনো দোতলা সমান উঁচু কাঠের একচালা একটি ঘর ছিল। সারাবছর সেখানে কেউ থাকতো না, ভরা বর্ষায় নদীতে জোয়ার এলে দাদাজান তার বন্ধুদের নিয়ে বড়শীতে মাছ ধরতেন এই ঘরের কাঠের পাটাতনে বসে।

মনে পড়ে মাষ্টারমশাই, একদিন শেষ বিকেলে অস্তায়মান সূর্যটির ছায়া ঘনিয়ে এলে আপনি এনাবেল লী পাঠ করে শুনিয়েছিলেন। আমার ইংরেজী কবিতার পড়া বলতে স্কুল কলেজের পাঠ্য পুস্তকে সোভিয়েত নারীর মলাট দেয়া বইই ছিল একমাত্র সম্বল। পাঠ্য বইয়ের বাইরে আপনার মুখেই আমার প্রথম ইংরেজী কবিতার পাঠ শোনা। এনাবেল লী’র মত অনিন্দ্যসুন্দর প্রেমের কবিতা পড়বার সময়েও মাষ্টারমশাই, আপনার মুখের পেশীতে এতোটুকু টান পড়েনি। দূরে ছইওয়ালা একটা নৌকোর দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে ভাবলেশহীন মুখে যখন আপনি পড়লেন, এন্ড দ্য স্টারস নেভার রাইস, বাট আই ফিল দ্য ব্রাইট আইস অব দ্য বিউটিফুল এনাবেল লী, আমার কৈশোরউত্তীর্ণ চোখে তখন এনাবেল লীর জন্য অশ্রু, আপনি সেদিকে ফিরেও তাকালেন না! কবির কলমের টানে আঁকা মানবীর রূপে আমরা মোহিত হই, তার কষ্টে হৃদয় ভেঙ্গে চুরমার হয় সহজেই কিন্তু পার্শ্ববর্তিনীর প্রবাহমান অশ্রুবিন্দু যে চোখ এড়িয়ে যাবে এটিই জগতের রীতি বৈকি!

ওপরতলায় বাথটাবের উত্তরে এক ঝুড়ি সী-শেলের পাশে সন্দেশ রয়েছে উলটে, নীলচে সাদা তোয়ালের কোলে কবেকার খুলে রাখা একখানি ক্রিমসন কালারের হাওয়াইন শার্ট, এমনকি কাপড়ের টুপিও আছে দেখি। সে যাক, বাথরুমে সবার অগোচরে হলেও ‘হাঁস ছিল সজারু’ পড়ে এখনো হাসির ভান করেন আপনি! আপনাকে কোনদিন হাসতে দেখিনি, মাষ্টারমশাই। কী যেন ভাবতেন সারাক্ষণ। লম্বাটে ঋজু শরীর আর ম্যাকাডেমিয়ার রঙে খানিক ধ্যানমগ্নতা আর খানিক অন্যমনস্কতার মিশেলে দূর থেকে আপনাকে অনেকটা যীশুর মত দেখাতো। ছোট চাচার সাথে বন্ধুত্বের ছুতোয় আমাদের বাড়ি এলেও আপনার সাথে আমার একটা যোগাযোগ হয়ে গেল মনেমনে। আমরা কেউ কাউকে কিছুই বলিনি কোনদিন কিন্তু আমি জানতাম আপনি আছেন। চাচা ফুপুদের ভর ভরাট সংসারের সকলের চোখ এড়িয়ে আমার হাতে ঠিকই পৌঁছে যেতো আপনার পকেটের ক্যাডবেরি, সুগন্ধি ইরেজার, ক্রিমওয়ালা পাইনআপেল কুকি, ছবি আঁকা রুলার অথবা রেডিয়েন্ট ওয়ের জ্যাক অ্যান্ড জিল।

মা ছিলনা ঘরে আমাদের, একান্নবর্তী সংসারের হালটি বাবার কাঁধে, কতদিক তিনি সামলাবেন একাকী। রাতে দাদী এসে যদি দেখতে পেতেন মাথার নীচে তেলচিটে একখানা বালিশ আছে তবে বুঝতেন আমার যত্নের কমতি হচ্ছে না চাচীদের কাছে। ছোটবেলায় আমার একমাত্র বিলাসিতা ছিল কুসুম কুসুম গন্ধমাখা হলুদ রঙের পমেড। যখের ধনের মত আগলে রাখতাম সাড়ে চার আউন্সের পমেটমের কৌটোটি যদিও সেটি ফুরোলে ঠোঁট ফেটে রক্ত না বেরুনো অবধি নতুন পমেড আসে নাই ঘরে। আমাদের সদা হট্টগোলের বাড়ির লোকেদের অবশ্য এসব নিয়ে ভাববার অবকাশ ছিলনা। আমার একমাথা রুখুসুখু কোঁকড়ানো চুলে হাত বুলিয়ে একদিন আপনি বললেন, তুই কি আমার পাখি ছিলি নাকি আগের জন্মে? আপনার মত গুরুগম্ভীর মানুষের মুখে ফুল পাখি লতাপাতার মত অকিঞ্চিতকর বস্তুর উল্লেখে আমি যে খানিক বিহ্বল হয়ে পড়িনি এতোকাল পরে কি করে বলি! শৈশবে যারা মাকে হারায় আজীবন তারা আশ্রয়হীনতায় ভোগে মাষ্টারমশাই, তাই একটু মধুর কথা অথবা সামান্য হাসির মত তুচ্ছ খড়কুটোকেই তারা জীবনের পরম পাওয়া বলে ধরে নেয়!

ফ্যামিলি রুমের এক কোণে হলদে একখানা পিকাচু অবহেলায় পড়ে রয়েছে ভারী কাউচের তলায়। বালুচরা একটি পাখি টিটি রব তুলে ঘরে ফিরছে একাকী। অথৈ এর আঁকা বালবুসর দিব্যি রাজত্ব করছে আপনার স্টাডির কোণে, ফাদারস ডে’র উপহার সবুজ নীলের ব্রেসলেটটি পাশেই আছে। আচ্ছা, বাবাকে ছেড়ে অথৈ কেমন আছে তার মায়ের কাছে? সেও কি আপনারই মত একা, মাষ্টারমশাই?

আমার ফুপুরা সাজতে ভালবাসতেন। বিকেলে ইয়ার্ডলী রোজে গা মেজে চোখে সুরমা কাজল পরতেন তারা। গ্রীষ্মে গলায় মুখে পাউডার মেখে আমাকে বলতেন পিঠে প্রিকলি হিট পাউডার ঘসে লাগিয়ে দিতে। চাচী ফুপুদের তিব্বত স্নো পাউডার, ঠোঁটের পালিশ আমাকে টানে নাই কখনো। আমি ভালবাসতাম চোখে কাজল পরতে। একদিন বিকেলে আপনি আমার চোখের কাজল দেখে বললেন, কিরে ভূতুনী, তোর চোখে কালির দোয়াত লেপ্টে দিল কে? আমার কী যে অভিমান হলো আপনার কথা শুনে! একছুটে পালিয়ে মল্লিকাদের বাড়িতে চুপ করে বসে রইলাম। আপনি এঘর ওঘর আমাকে খুঁজে না পেয়ে যখন মল্লিকাদের বাড়ি এলেন তখন চোখের জলে নাকের জলে আমাকে সত্যিকারের ভূতুনীর মতই দেখাচ্ছে। অন্য সব মা মরা মেয়েদের মত কি করে যেন সেই ছোটবেলাতেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে সংসারে আমার লোক দেখানো বাড়তি আদরের মানুষের অভাব নাই বটে কিন্তু সেই আদরের ভিত এতোটাই নড়বড়ে, এতোটাই ঠুনকো যে আমার জ্বরতপ্ত কপালে শীতল পরশ বুলাতে মরেনের মা ছাড়া কাউকেই খুঁজে পাওয়া যেত না। আজ এতোকাল পরে মনেহয়, মানুষ আর কতইবা চোখের কাজল মুছে দেবে বলুন, বিধাতাপুরুষ নিজেই যেখানে কাজলের কারবারী!

নিচতলায় লাল উত্তরীয়খানি কোমড়ে জড়িয়ে দুই পায়ে মোটা ঘুঙুর বেঁধে জগাদা নাচ শেখাচ্ছেন অর্পিতাকে। শ্যামলাটে কালো শরীরে পাকানো গোঁফওয়ালা জগাদার মুখ পানের রসে টইটুম্বুর, তাঁর ডান হাতের তর্জনীতে সাদা চুন। পাতলা ফিনফিনে পাঞ্জাবীর হাতা কনুই অব্দি গুটানো, পরিচর্যার অভাবে অমসৃণ হাতের নখ। বাড়িতে সুলতান চাচা স্বদেশী বাজার থেকে বাবা জর্দা আর কাঁচা সুপারী এনে মজুদ করে রাখেন জগাদার জন্য। মুখভরা গান, গালভরা পান আর শরীর জুড়ে নাচ ছাড়া পঞ্চাশ উত্তীর্ণ জগাদার আর কিছু নেই জগতে। একদিন জগাদা বললেন, মা জননী, অরফি বেটি খুব ভাল নাচে। আপনেও তো ঘরেই থাকুইন, মাইয়াটার সাথে যদি আপনেও নাচতেন বড় ভাল দেখাইতোগো! বিষয়বুদ্ধিহীন ভোলাভালা জগাদা কে নিয়ে আড়ালে আবডালে লোকে হাসাহাসি করে আমি জানি। সংসারে থেকেও যে মানুষ সংসারবিবাগীর জীবন বেছে নেয় তাকে যে গৃহবাসী মানুষের কটুকাটব্য সইতে হবে এ আর নতুন কী!

হেমন্তের নরম রোদ এসে পড়েছে আমাদের সাদা বাড়ির প্রশস্ত বারান্দায়। পাঁচ বছরের অর্পিতা জগাদার হাতে হাত ধরে কিছু না বুঝেই গাইছে, পাশরিব ভাবনা, পাশরিব যাতনা, রাখিবো প্রমোদে ভরি দিবানিশি মনপ্রাণ! বীণার তানে জনম জনম এই যে প্রমোদের সন্ধান করে মানুষ তা কি মেলে এক জন্মে?

খিড়কির দরোজায় কলিং বেল বাজছে মাষ্টারমশাই, উনি এলেন বুঝি! আজ তবে যাই!

১০,৫৪৭ বার দেখা হয়েছে

৫১ টি মন্তব্য : “বিকেলে ভোরের চিঠি”

  1. সাইদুল (৭৬-৮২)

    লেখকদের কাছে একটা বড় প্রশ্ন কেন লেখেন? নিজের কছে এই প্রশ্নটা তুমিও করতে পারো কেন লিখি?
    লেখার তো অনেক কারণ থাকে। সবচেয়ে অদ্ভুত কারণ হচ্ছে না লিখে পারিনা তাই লিখি।
    কী লিখি?
    অনেক কিছু লিখি, তবে লেখার সার্থকতা হচ্ছে লেখার ওই টুকুতে, পড়া শেষ হবার পর, কোন ব্যখ্যা বিশ্লেষণ ছাড়াই যে টুক মনে থাকে। যদি কিছু মনে না থাকে, তাহলে লেখাটাকে কী বলা যায়?

    আমার পড়া শোনা খুব কম। আমি কবিতা যেমন কান আর প্রাণের ভরসায় পড়ি গল্পও তেমনি শুধু মনের ভরসায় পড়ি। গল্পের পটভূমি কী? অন্তর্নিহিত কোন তাতপর্য আছে কীনা। এগুলো সব পরের কথা আমার কাছে । প্রথম কথা সুখপাঠ্য কীনা।

    তোমার লেখা সুখপাঠ্য। তুমি আশ্চর্য দক্ষতায় প্রাচ্য পাশ্চাত্য এককরে ফেলো তোমার বর্ণনায়'। পরিবেশ, পারিপার্শ চোখের সামনে ফুটে ওঠে। সেই সাথে আরেকটা জিনিষ মনে রাখা উচিত, গল্প যাকে নিয়ে তিনি কী এসবের ভীড় ভাট্টায় আড়ালে চলে যাচ্ছেন কীনা। ভালো ভালো যে বাক্য গুলি আমরা লিখছি সেগুলি স্বতঃস্ফূর্ত মনে হচ্ছে কীনা। মাহমুদুল হক, আবুল বাশার, দিলারা হাশেম,হুমায়ুন আহমেদ, আর অদিতী ফাল্গুনীর লেখা পড়তে ভালো লাগে, কারণ এদের লেখায় একটি বাক্যও অতিরিক্ত মনে হয়না। গল্পটি মনে থাকে।

    এখন তুমি নিজেই ভেবে দেখো তোমার এই সাড়ে চৌদ্দশ' শব্দের গল্পে মাষ্টার মশাই কত টুকু, তুমি কত টুকু আর অন্যদের ভাগে কী পড়েছে। যদিও শব্দ কার ভাগে কত টুকু পড়েছে বড় কথা নয়। প্রতিটা চরিত্রের গুরুত্ব দিতে হবে।

    আপনাকে কখনও হাসতে দেখিনি মষ্টার মশাই এই বাক্যটি যার প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে তিনি আবার পড়ন্ত বিকেলে একজন কিশোরীকে এনাবেলা লী পাঠকরে শোনাবেন, অথবা বাথরুমে সুকুমার রায়ের কবিতা পড়ে হাসবেন...।। সিরিয়াসল পড়তে গিয়ে এসবমনে হল।

    তবে মানব চরিত্রের আমি আর কতটুকু জানি? (সম্পাদিত)


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
  2. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    🙂 🙂 🙂 🙂

    আমার গল্পটি মনোযোগের সাথে পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া! সেই সাথে তোমার সুচিন্তিত মতামতের জন্য ::salute::
    ব্লগে লেখার জন্য এই গল্পের আকার নিয়ে আমার মনে যে খুঁতখুঁতুনি ভাবটা ছিলনা তা নয়। তবুও সাহস করে দিয়েই ফেললাম অবশেষে।

    এবার লেখকের নোটঃ উত্তম পুরুষে লেখালেখির বিড়ম্বনা এই যে, পাঠক সবসময় গল্পের 'আমি'টিকে লেখক ভেবে বসে থাকেন। এই গল্পের 'আমি'টির সাথে লেখকের কোনই যোগসাজশ নেই। আমি নিউক্লিয়ার একটি পরিবারে উপুরঝুপুর ভালবাসা পেয়ে বড় হয়েছি। সেই ভালবাসার বন্ধন আজো অটুট। আমার মা এখনো বর্তমান এবং তাঁকে আমার জীবনের আলো বললেও কম বলা হবে।

    এই গল্পে একজন মাষ্টারমশাই আছেন আর আছেন আবেগের ডিব্বা একজন তরুণী যার নাম আমরা জানিনা। শৈশবে মাতৃহীন মেয়েটি যৌথ একটি পরিবারে বড় হয়েছেন। তার চারপাশে মানুষের অভাব ছিলনা কখনোই কিন্তু অনেক লোকের ভিড়ে মেয়েটি কি চিরকালই একা ছিলনা? এই গল্পের সিংহভাগ জুড়ে আছেন ভাবলেশহীন একজন মাষ্টারমশাই যাকে মেয়েটি হাসতে দেখেনি কোনদিন। কিন্তু এই গল্পে মাষ্টারমশাইয়ের কি তেমন কোন ভূমিকা আছে? মেয়েটির সাথে তো তাঁর হৃদয়ঘটিত কোন ব্যাপারস্যাপার ছিলনা। মেয়েটির মা ছিলনা, বাবা সদা ব্যস্ত মানুষ। সংসারের বাকী সবাই আছেন ঠিকই কিন্তু মায়ের আদর আর বাবার ভালবাসার অভাবে বড় হওয়া মেয়েটি সারাজীবন যা খুঁজেছে তার নাম আশ্রয়। মানুষের সামান্য মমতায় সে কাতর হয়েছে বরাবর। তাই মাষ্টারের সামান্য উপহারে অথবা তাঁর কবিতা পাঠে বিহ্বল হয়েছে মেয়েটি।

    গল্পে কোথাও বলা হয়নি যে মাষ্টার বাথরুমে সুকুমার পড়ে হাসেন, মেয়েটি কল্পনায় ভেবে নিচ্ছে যে সন্দেশ পড়ে মাষ্টার হাসছেন। মেয়েটি কি কখনো মাষ্টারের বাড়ি বেড়াতে এসেছেন? তার তো কোন প্রমাণ আমরা পাইনা। আদৌ কি মাষ্টারের বাড়িতে সুকুমার আছেন? এটি তো একটি স্বপ্নদৃশ্য। সব কিছুই কি মেয়েটির কল্পনাপ্রসূত নয়? মেয়েটির মনে তার ছোটবেলার এই ভালবাসার মানুষটি রয়ে গেছেন সবার অগোচরে, পরম মমতায়। মাষ্টারকে স্বপ্নে দেখা অথবা অসময়ে লেখা এই চিঠিটি তারই প্রমাণ নয়? গল্পের শেষে দেখতে পাই, মেয়েটি এখন বিবাহিত এবং একটি সন্তানের মা। গল্পের শেষে আরো একটি চরিত্র দেখতে পাই আমরা, জগাদা যার নাম। উরাধুরা টাইপ জগাদা কি সেই একই মমতা প্রকাশ করেননি মেয়েটির জন্য? যাকে মেয়েটি হয়তো ভালবাসার আশ্রয়ই ভাবছে?

    আমি কি বুঝাতে পারলাম, ভাইয়া?

    আপনি খ্যাতনামা যেসব লেখকের উল্লেখ করেছেন তাঁদের ধারে কাছে আসার যোগ্যতা আমার নেই, ভাইয়া! আমি মনে করি, লেখকের সকল অনুপ্রেরণার উৎস পাঠক। পাঠকের সাড়া না পেলে আমি হয়তো ভবিষ্যতে এ ধরণের গল্প লেখার আগে তিনবার ভাবতে বসবো।

    জবাব দিন
  3. সাইদুল (৭৬-৮২)

    তোমার মন্তব্য পড়ে মনে হলো গল্পটা কী আমি ঠিকমত পড়িনি?
    আবার পড়লাম।
    না ভুল পড়িনি।
    একটা গল্পে একটি চরিত্র কী ভাবে সামনে এসে দাঁড়ায় পাঠকে কে কত খানি প্রভাবিত করে সেটা নির্ভর করে চরিত্রের উপর লেখক কতখানি সুবিচার করেছেন তার উপর। মাষ্টার মশাই একটি চরিত্র যার সাথে বালিকার পরিচয় ছোট চাচার সুত্রে। মাষ্টার মশাই হাসেননা। গম্ভীর, বালিকার বয়সী নন।
    তাঁর চরিত্রের এই দিকের সাথে এনাবেলা পড়ে শোনানো মানান সই কী না ভেবে দেখো বিশেষত তিনি যখন প্রশ্ন করেন কিরে ভূতুনী, তোর চোখে কালির দোয়াত লেপ্টে দিল কে?
    ধরে নিলাম বাসায় না এসে কোকড়া চুলে হাত বুলিয়ে দিয়েছিলো।

    আমার চোখে লাগা অসংগতি গুলির কথা বলেছি। এত সিরিয়াসলি নেবার কিছু নেই। গল্পের আঁকার সমস্যা নয়। সমস্যা গল্পের পাত্রপাত্রিদের যথেষ্ট সময় দেয়া হয়েছে কেনা। বলাই গল্পে বলাই, কাকীমা, কাকা, শিমুল গাছ কোনটার গুরুত্ব আমার কাছে মনে হয়না। কোনটাকে শুধু চমকে দেবার জন্যে ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে হয়না। গল্পের প্রয়োজনে যা যা দরকার কিছুই আমি বাদ দিতে বলিনা।

    উত্তম পুরুষে গল্প লেখার সে বিড়ম্বনা তো আছেই। তবে একজন মনোযোগী পাঠক সম্ভবত বুঝতে পারেন কতটুকু আত্মজৈবনিক আর কত টুকু কল্পনা।
    তোমার গল্প আমার কাছে আত্মজৈবনিক মনে হয়নি। কতকটা বেনীমাধব প্রভাবিত মনে হয়েছে। আরও মনে হয়েছে, যে জীবনের অনেকটাই তোমার অজানা শুধু কল্পনা দিয়ে সেটির পারফেক্ট পরিনতি দেওয়া সহজ ব্যপার নয়।

    পাঠক নিয়ে এত ভেবোনা। অন্তত শ'তিনিকে বার এই লেখা পাঠক পড়েছে। আমি ছাড়া এখন পর্যন্ত তদের কেউই কঠিন সমালোচনা করেনি।


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
  4. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    :boss: :boss: :boss: :boss:

    আপনার বিশ্লেষণ অতি চমৎকার বলতেই হবে, ভাইয়া। পাঠকের জন্যই তো আমার লেখা। পাঠক ইজ অলওয়েজ রাইট। আমার সামান্য লেখাটি আপনি মনোযোগের সাথে একাধিক বার পড়েছেন সেটিই কি লেখক হিসেবে আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি নয়?

    আমি চাই আমার লেখার কঠিন সমালোচনা হোক। সিসিবিতে আমার ঝুলিতে প্রশংসার শেষ নেই স্বীকার করতেই হবে। ছোট বড় সবার ভালবাসায় আকন্ঠ ডুবে আছি বললে কম বলা হবে। তিন শতাধিক পাঠকের ভালবাসার সাথে সাথে অন্তত তিনজন সমালোচকও যদি পাওয়া যায় তবে সেটিকে আমি পরম প্রাপ্তি বলেই ধরে নেবো!

    অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া।

    জবাব দিন
  5. জিয়া হায়দার সোহেল (৮৯-৯৫)

    আপু, প্রথমে বলে নিই আমি অনেক খুশী হয়েছে তোমার এতো বড় গল্প লিখার উদ্যোগ নিতে দেখে। এটি কোন উপন্যাস নয় তাই এখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র অনেক গুরুত্বপূর্ণ যেখানে তোমার চেষ্টা প্রশংসনীয়। এই গল্পে কেন্দ্রীয় চরিত্রকে তুলে ধরতে গিয়ে অনেকগুলো চরিত্র এবং চরিত্র সম্পর্কিত ঘটনা এসেছে যেগুলোর ব্যাপারে পাঠকের উৎসাহ কম থাকতে পারে তবে লেখকের উচিত ঐগুলোকে পাঠকপ্রিয় করে তোলা।
    আমি মনে করি তুমি অনেক সুন্দর লিখছ। লিখতে লিখতে একদিন অনেক সুন্দর কিছু একটা বের হয়ে আসবে তোমার থেকে।
    অনেক শুভকামনা আপু। :clap: :clap: (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂

      আমার অনেক লেখাতেই তুমি অপেক্ষাকৃত বড় পরিসরে লিখবার জন্য বরাবর উৎসাহিত করেছো, জিয়া। তোমার অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে গিয়ে গোটা রাইস মিল গিলে ফেলিনিতো, ভাইয়া?

      ঈদ উপলক্ষে একখানা অডিও ব্লগ নামাবার অভিপ্রায়ে পিয়ানোয় টুংটাঙ করছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল একটি গানের অডিওর সাথে টুকরো একটি গল্প লেখা যেমনটি আমি বরাবর করি। লিখতে লিখতে মেঘে মেঘে দেখি অনেক বেলা হলো। পড়তে গিয়ে টের পেলাম নার্সিসিজম কাকে বলে। আয়নায় নিজের মুখখানি দেখতে কার না ভাল লাগে। হায়! আমার লেখার নিষ্ঠুর প্রকৃতির কৃটিকটি ইউরোপে থাকেন, তাঁকে তলব করা হলো। তিনি বললেন, ফাডাইলাছেন! তখনো বুঝিনি কপালটিই ফাটালাম কিনা! পাঠকের সময় অতি মূল্যবান তাই শেষমেশ অডিওটি যোগ করে তাঁদের আর ভারাক্রান্ত করতে চাইনি।

      জবাব দিন
  6. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    গল্প যেমনই হোক, কিংবা গল্পের চরিত্রগুলো ঠিকমত ফুটুক বা না ফুটুক, তোমার গল্পে যে জিনিসটা আমি বেশী উপভোগ করি সেটা হচ্ছে গল্পের মাঝে ছোট ছোট ডিটেলসগুলো পরম যত্নের সাথে বসিয়ে দেওয়া। এখানেও ওরকম অনেক আছে।

    জবাব দিন
  7. প্রথমেই বলি আমি ক্যাডেট কলেজের কেউনা। গতকাল আমার প্রেমিক যে একজন এক্স ক্যাডেট এই ব্লগটা পাঠিয়েছিল মেইল করে। একবার নয়, দুইবার নয় বেশ কয়েকবার পড়লাম এই লেখাটা। পড়তে পড়তে একবার মনেহল গদ্য না আমি কবিতা পড়ছি হয়তো। আর একবার মনেহল কৌশিক গংগোপাধ্যায় বা ঋতুপর্ণ ঘোষের একটি চলচ্চিএ দেখছি আমি। কি সুন্দর বাংলা আপনার আপু। এই লেখা যেকোনো বাজারী লেখকের লেখাকে লজ্জা দেবার জন্য যথেষ্ট। আজ আপনার গান শুনলাম, কবিতা পড়লাম, রান্নার ব্লগও পড়লাম। আর যেটা না বললেই না আপু আপনার প্রফাইলের ছবি দেখে আমি ফিদা হয়ে গেলাম। একটা মানুষকে আল্লাহ এত গুণ দেবেন কেন আমি শুধু ভাবছি। আপনার পাংখা হয়ে গেলাম আপু আমি। আমার সালাম নিবেন।

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂

      ইশরাত জাহান, আপনার উচ্ছসিত মন্তব্য পড়ে যারপরনাই লাজুকলতা হয়ে আছি; এখানে পালাই নাকি সেখানে লুকোই এমন অবস্থা আমার। একজন অকবির লেখা গদ্যটি যে কারো মনে কবিতার মত মনে হতে পারে সেটি ভেবে আমি পুলকিত বটে কিন্তু যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তো থেকেই যায় 😛

      কৌশিকের অপুর পাঁচালী দিয়ে তাঁর সাথে আমার প্রথম পরিচয়। পরে তাঁর 'শব্দ' এবং 'আরেকটি প্রেমের গল্প' দেখে মুগ্ধতায় ডুবেছিলাম। ঋতুপর্ণ ঘোষের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। আমি তাঁর সবিশেষ অনুরাগী। আমি একজন সামান্য লেখক বটে কিন্তু যতটুকুই লিখি না কেন ভালবেসেই লিখি। আমরা যতোই বলিনা কেন নিজের আনন্দে লিখি কিন্তু আমি জানি, লেখকের জন্য পাঠকের রেসপন্স খুবই গুরত্বপূর্ণ তাতে অলিখিত একটি দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়। একই মুভি ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কাছে যেমন ভিন্ন আবেদন নিয়ে আসতে পারে বৈকি লেখার ব্যাপারটিও তেমনি।

      প্রোফাইলের ছবিতে লেখকের কোনই কৃতিত্ব নেই জানবেন। আমার কপালে সূর্যোদয়ের টিপখানি কন্যারত্নের চিত্রকল্প বটে বাকীটুকু টেকনোলজির কারুকার্য ছাড়া আর কিছু নয়, আপনার দেখবার চোখটুকুর কথা নাইবা বলি আর!

      সিসিবিতে অনেক গুণীজনের লেখা আছে সময় সুযোগ হলে তাঁদের ব্লগ পোষ্টেও ঘুরে আসতে পারেন, আপু। আমার ভালবাসা জানবেন।

      জবাব দিন
  8. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    প্রথম দুই অনুচ্ছেদে মাষ্টারমশাই এর বর্ণনাটা অনবদ্য হয়েছে। আর তোমার লেখায় যখন culinary details আসা শুরু হয়, তখন মনে হয়, কোন স্পেশালিস্ট শেফের লেখা পড়ছি।

    জবাব দিন
  9. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    সাবিনাপা, তোমার ডিটেইলিং এত মারাত্মক সুন্দর কি আর বলব! ;;)
    আর প্রতিটি লাইন মায়া-মায়া... :dreamy:
    পড়তে খুব ভাল লাগে। 😀

    একটি সুশীলগিরি করি- মাস্টারমশাই এর মাস্টারে 'দন্ত্য স' হবে। ষত্ব বিধান অনুসারে বিদেশি শব্দে 'মুর্ধণ্য স' হয় না।
    শব্দটি অনেক বার এসেছে- তাই বললাম।
    আগেই ফ্রন্টরোল দিয়ে নিচ্ছি... :frontroll:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂

      জুনা তোমার মুখে এই তুমি সম্বোধন কী যে মিষ্টি লাগে শুনতে যদি জানতে, ভাইয়া! হাঁটুর বয়েসী ভাইটি পরিচয়ের ঠিক প্রথম দিন থেকেই এই যে ভালবেসে তুমি বলে ডাকে তার মাঝে কত যে মায়া আছে সেটি আমি জানি!

      ণত্বষত্বজ্ঞান ভুলেছি কোন কালে, ভাইয়া! মাস্টারমশাই তে যে দন্ত্য স আছে সেটি তো মনেই পড়ে না, হায়! কী বলে যে ধন্যবাদ দিবো তোমায়। ফ্রন্টরোল কেন দিতে হবেরে নতুন কিছু শেখার মত আনন্দ আর কিছুতেই নেই।
      এক হাজারেরও অধিকবার পড়া হয়েছে এই লেখাটি, তোমার আগে নিশ্চয়ই অনেকেই লক্ষ্য করেছেন ভুল বানানটি কিন্তু দেখো কেউই বলেননি। নূপুর আগে বলতেন এখন তিনিও দেখি অবসরে!

      ঈদ মুবারক, ভাইয়া। আমার ভালবাসা জেনো!

      জবাব দিন
      • জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

        তোমাকেও ঈদ মোবারক, সাবিনাপা! 😀
        ভীষণ অন্তর্মুখী বলে আমার 'সুনাম' আছে... ;))
        সুতরাং বুঝতেই পারছো, তোমাকে অবলীলায় আপন করে নেয়াটার কৃতিত্ব আসলে কার!! ;;)


        ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

        জবাব দিন
        • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

          🙂 🙂 🙂 🙂

          তোমাকে আমার ঠিক অন্তর্মুখী বলে মনে হয়না, জুনা! আমার বরং মনেহয় তুমি খানিকটা চুজি মানুষ। পছন্দসই মানুষ পেলে তোমারে কেউ 'দাবায়' রাখতে পারেনা! ঠিক বলেছি কি?

          আমার কথা বলি, আমি নিজে কথা বলা মানুষ জানো, কিন্তু মাঝেমধ্যে কিছু মানুষের সাথে ঠিক কি কথা বলবো বুঝে উঠতে পারিনা। চোখ বড় বড় করে অপার বিষ্ময়ে তাঁদের গল্প শুনে যাই ঠিকই কিন্তু একাত্মতা বোধ করতে পারিনা। সেটি আমারই ব্যর্থতা আমি জানি যদিত্ত! 😀

          জবাব দিন
          • জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

            সাবিনাপা,
            অন্তর্মুখী বলেই পার পাই না, 'চুজি' স্বীকার করলে তো লোকে জুতা-পেটা করবে! তাই স্বীকার করছি না। 😛

            তবে, তোমার পর্যবেক্ষণ শক্তির প্রশংসা না করে পারছি না!
            আমি সত্যিই মুগ্ধ! :boss:


            ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

            জবাব দিন
            • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

              🙂 🙂 🙂 🙂

              জুনা, the difference between an introvert and an extrovert is that an introvert is unconsciously deemed guilty until proven innocent. তুমি কি করে বুঝবে যে তুমি সতি্যই অন্তর্মুখী? যখন দেখবে তুমি নিজেই নিজের সংগ এনজয় করছো দারুণভাবে এবং জাগতিক জড়োয়া তোমায় অতো টানছেনা তখন বুঝবে তুমি ইনট্রোভাটর্। আরো মজার একটি ক্লু হলো ইফ ইউ গেট মোর ফোন কলস, টেক্সটস এন্ড ইমেইলস দ্যান ইউ মেইক তুমি সহজেই বুঝে যাবে যে তুমি অন্তর্মুখী, ভাইয়া!

              ভাল থাকিস, জুনা। আমার ভালবাসা রইল!

              জবাব দিন
  10. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    লেখাটা পড়ে মুগ্ধ বিষণ্ণতায় কিছুক্ষণ গুম মেরে থাকি। বহু কথা, অনুভূতি হাত পিছলে পিছলে সরে যায় --- সহজ কথা যায়না লেখা সহজে!
    আমার চোখে যেটা ধরা পড়ল সেটা হচ্ছে --- ছবি অর্থাৎ পেইন্টিং। ডিটেইলে চোখ রাখলে একরকম হতচকিত বিহবলতা --- একটু পিছিয়ে এসে পুরো ফ্রেমটাকে একদেখায় দেখতে চাইলে হৃদয় মথিত আকুলতা --- ভেতরে যেন বেহালার ছড় দিয়ে বাজিয়ে দিচ্ছে কেউ --- সুর ছাড়া, রং ছাড়া শুধু কথায় যেন তাকে বাঁধা যায় না। অথচ তুমি যে পারলে! এবং তোমার বলবার এই অনন্যতা, ছোট ছোট টানে (এবং তানেও বৈ কি!) আঁকবার এ শিল্প -- এর অভিঘাতে পাঠকের স্তব্ধ হৃদয় উল্লম্ফনে মেতে উঠতে গিয়ে বিদীর্ণতায় কেঁপে কেঁপে ওঠে।

    গল্প চাইনে। গল্পের ইঙ্গিতই ঢের। তেমন অজস্র ইশারা যত্রতত্র ফেলে ছড়িয়ে রাখো তুমি। কিছু না, পাঁচ মিনিটের একটা চলচ্চিত্র নামিয়ে ফেলি এমন দুঃসাধ্য সাধ হয়।
    তবে একটা কথা --- তোমার গদ্যের অনন্যতা তোমাকেই ভাঙতে হবে। এবারে নতুন ভাষায় 'পুরনো' গল্প শোনাও। আবারো মুগ্ধ হয়ে শুনি!

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂

      আমার লেখায় তোমার মন্তব্য না আসা অব্দি পুরো আয়োজনটিই অপূর্ণ মনেহয়, নূপুর! ফুল কোর্স ডিনার শেষে আরাধ্য ডেসার্টটি হলো তোমার এই ঘুরে যাওয়া! কী চমৎকার করেই না নিজেকে প্রকাশ কর তুমি!

      লেখকের নিজের তৈরি করা বৃত্তটিকে ভেঙে বেড়িয়ে আসাটির মত চ্যালেঞ্জ আর কিছুতেই হয়না সতি্যই। প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে, দেখি না কি হয়।

      আমার ভালবাসা জেনো। ঈদ মুবারক।

      জবাব দিন
  11. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    মাত্র চারদিনে ১১৩৫ বার ক্লিক, মনে হয় সমস্ত রেকর্ডস অতিক্রম করে যাচ্ছে, নয়তোবা ইতোমধ্যেই সাম কাইন্ড অব রেকর্ডস হয়ে গেছে।
    বাহ! অভিনন্দন! :clap:

    জবাব দিন
  12. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    আপা,

    একবার পড়লাম। গদ্য মনে করে। কিন্তু কি যেন বাকি থেকে গেলো। আবার পড়লাম গদ্য মনে করেই। আবারও একই অনুভূতি। তাহলে এইটা কি কবিতা? বা অন্যকিছু? তা নাহলে ছাপার অক্ষরে যা' লিখেছেন, তারও চেয়ে কিছু বেশি ভাব মনে উদয় হয় কেন?- এসব কোন প্রশ্নেরই নিশ্চিত উত্তর নেই আমার কাছে। তাই প্রিয়তে নিলাম এই পোস্ট। আবারও পড়ে দেখবো বলে। আর মাত্র একবারই নয় কিন্তু।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂

      আমাদের ডাক্তার সাহেবের প্রিয়তে? ওরে আমারে ধর!

      জোকস এপার্ট, এটিকে গল্প অথবা কবিতা না বলে ব্লগর ব্লগর বললে লেখাটির প্রতি সুবিচার করা হয়। একটি টুকরো গল্প বা খন্ড চিত্র আঁকার অভিপ্রায়ে এটি লেখার শুরু কিন্তু লিখতে লিখতে মায়া পড়ে গেল চরিত্রটির প্রতি। এইতো। সামান্য এই লেখাটির সূত্রে তোমাদের কাছাকাছি আসতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছে।

      অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া!

      (সম্পাদিত)

      জবাব দিন
    • Runa Shabnam (83-89)

      রজনীর অন্ধকার
      উজ্জয়িনী করি দিল লুপ্ত একাকার।
      দীপ দ্বারপাশে
      কখন নিবিয়া গেল দুরন্ত বাতাসে।
      শিপ্রানদীতীরে
      আরতি থামিয়া গেল শিবের মন্দিরে।


      মানুষ এমনতয়, একবার পাইবার পর
      নিতান্তই মাটির মনে হয় তার সোনার মোহর.........

      জবাব দিন
  13. আমার প্রিয় অংশগুলোর কথা জানাতে মন চাইল আপনাকে আপা।

    ১.আমরা অনন্তের সন্ধানে চষে বেড়াই পৃথিবীর নানা কক্ষপথে কিন্তু কাছের জিনিসটি আর পাশের মানুষটি চিরকালই আমাদের দৃষ্টির অন্তরালে থেকে যায়.
    আপা আপনার গভীর জীবনবোধ আমাকে মুগ্ধ করেছে।

    ২. শৈশবে যারা মাকে হারায় আজীবন তারা আশ্রয়হীনতায় ভোগে মাষ্টারমশাই, তাই একটু মধুর কথা অথবা সামান্য হাসির মত তুচ্ছ খড়কুটোকেই তারা জীবনের পরম পাওয়া বলে ধরে নেয়.
    সুনীল গংগোপাধ্যায় পড়ে বড় হয়েছি আমরা। আপনার লেখা পড়ে কখনো কখনো সুনীলের লেখা বলে মনেহয়।

    ৩. বাবাকে ছেড়ে অথৈ কেমন আছে তার মায়ের কাছে? সেও কি আপনারই মত একা, মাষ্টারমশাই?
    একটি মাত্র বাক্যে কত কি বলে ফেললেন আপনি।

    ৪. মানুষ আর কতইবা চোখের কাজল মুছে দেবে বলুন, বিধাতাপুরুষ নিজেই যেখানে কাজলের কারবারী!
    কি শক্তিশালী কথা, তার মানে জীবনে কষ্টের পর আনন্দ আসে। খোদা নিজেই দুঃখী মানুষের চোখে এক সময় কাজল এঁকে দেন।

    আরো অনেক অনেক অনেক লেখা পড়তে চাই আপনার থেকে।

    জবাব দিন
  14. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    এই লিখাটা না পড়ার কারন, ভ্রমন।
    ভ্রমনে অনেক প্রাপ্তি থাকলেও একটা ক্ষতি যে হয়েছিল, এখন বুঝতে পারছি।

    পড়তে পড়তে এক এক সময় মনে হচ্ছিলো, কবিতা পরছি না তো?
    পরে কমেন্ট পড়ে বুঝলাম, ওটা কেবল আমার একার সমস্যা ছিল না।
    আরও অনেকেই ঐ সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

    এক্কেবারে জমজমাট লিখা গদ্য আর পদ্যের মিশেলে।
    দীর্ঘক্ষন মনের মধ্যে ঘুরঘুর করে যাচ্ছে.........


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।