আজকের (জুলাই ১৪, ২০১৫) বাংলা পত্রিকাগুলোতে চোখ বুলাতে গিয়ে হঠাৎ দৃষ্টি আটকে গেল দৈনিক আমাদের সময়ের একটা সংবাদে যেখানে বলা হয়েছে যে, সিলেটের রাজন-হত্যার প্রধান আসামী কামরুলকে জনতা হাতেনাতে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ ঘুষের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দিলে সে সৌদি আরবে পালিয়ে যায়।- পুলিশ যে ঘুষের বিনিময়ে বড় বড় আসামীকে ছেড়ে দেয় এমন দু’একটা সংবাদ মাঝেমধ্যেই সংবাদপত্রে আসে। আর এমন দু’একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হাজার হাজার পুলিশের মধ্যে দু’একজন ঘটাতেই পারে। কখনো কখনো তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় বিচার+শাস্তির খবরও আসে। কিন্তু আজকের অন্যান্য বাংলা প্রত্রিকাগুলো পুলিশের নানান রকম অপরাধে জড়িয়ে পড়ার যে সব সংবাদ ছাপিয়েছে, তা’তে পুলিশের অপরাধ বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার অবকাশ আছে কি না সেই বিবেচনা গুরুত্ব দিয়ে করার সময় এসে গেছে। সংবাদগুলো নিচে লিঙ্কসহ তুলে দিলাম।
ঘুষ নিয়ে আসামীকে ছেড়ে দেওয়াঃ
১২ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রধান আসামী কামরুলকে ছেড়ে দেয় পুলিশ!
ছিনতাইকারীদের সাথে যোগ দানঃ
ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি
ছিনতাইকারী গ্রুপের সাথে যোগদান
মাদক চোরাকারবারে পুলিশ!
কক্সবাজারে পুলিশের ইয়াবা কানেকশন
ইয়াবা চোরাচালানীকে ছেড়ে দিল পুলিশ
পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রতিশোধঃ
ডিবি পরিচয়ে গ্রেফতারের পর খুন
নির্যাতন করে হত্যাঃ
নির্যাতন করে যুবক হত্যা
দেশের আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশের হাতে। পুলিশ দক্ষতা+সততার সাথে এই দায়িত্ব পালন করে কিনা তা’র উপর রাষ্ট্রের নিয়ম+শৃংখলা, আইন+কানুন এবং শান্তি+সমৃদ্ধি কতটা হয়েছে আর কতটা হবে তা’ বহুলাংশে নির্ভর করে। কিন্তু শুধুমাত্র একদিনের সংবাদপত্রের মধ্যেই আমরা দেখছি পুলিশ ঘুষের বিনিময়ে গুরুতর অপরাধের আসামীকে আটকের পরেও ছেড়ে দেয়, ছিনতাই প্রতিরোধ করার বদলে নিজেই ছিনতাইকারীর সাথে যোগ দিয়ে টাকা ছিনিয়ে নেয়, মাদক ব্যবসা প্রতিরোধ করার বদলে এর সহযোগী হয়ে দাঁড়ায়, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে অথবা সামান্য ব্যক্তিগত হাতাহাতির জন্য ধরে নিয়ে গুমখুন করে। এ’অবস্থায় ব্যক্তি নয়, বরং প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশের কার্যকলাপ প্রশ্নের মুখে পড়ে।
আপনার মতে, পুলিশ প্রশাসনের এ’ অবস্থার কারণ কি? প্রতিকারই বা কি?
(দল+মতের বাইরে এসে একান্ত ব্যক্তিগত ভাবনা শেয়ার করার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি)।
রাষ্ট্রের বৃহত্তম এই "বিচ্ছিন্নতাবাদী"-দের আমার ভালু লাগে। আবার খারাপ লাগে। আবার ভালু লাগে। কারণ তারা ২টি বড় ভালু কাজ করে। তারপরে বিরতিহীন ভাবে খারাপ কাজ করে। আবার তিনটি ভালু কাজ করে। (চলমান প্রক্রিয়া)
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
মোকাব্বির,
প্রথম দর্শণে দোষ অবশ্যই পুলিশের। কিন্তু পুলিশ সমাজের বাইরের কেউ না, ওরা আমাদেরই কারো ভাই, কারো বন্ধু, আবার কারো শত্রুও। কাজেই, পুলিশকে আলাদা করে দোষী করা হলে সমস্যার মূল অধরাই রয়ে যাবে বলে মনে করি।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
দোষ চাপাচ্ছিলাম না ভাই। আরো কিছু লিখার আগে দৌঁড় দিয়েছি। আমি পুলিশকে নিয়ে বাজে মনোভাব পোষন করি না। তারা আমাদের মত মানুষ এবং ভয়াবহ ব্যস্ত মানুষ সেটা গত চার মাস থানা পুলিশ দৌঁড়াদৌড়ি করেই বুঝেছি। উপরের উদ্ধৃতিটা আজকে "সকালের সময়" খবর দেখার সময়। বরিশাল মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনারের। বরিশালের বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চালকদের ভাষ্যমতে রাস্তাঘাটে পুলিশ মাথা গরম করা চাঁদাবাজি করছে। এখানে সাংবাদিকতার নিষ্ঠা ইত্যাদি নিয়েও প্রচুর প্রশ্নের অবকাশ থেকে যায়। কিন্তু যেহেতু আমাদের মতই উনারা মানুষ, কথা বলার ক্ষেত্রে আরেকটু কৌশলী হওয়াটাও জরুরী বলে আমি মনে করি। "কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা"-এর ভাঙা রেডিও আর কয়দিন বাজাবে এরা?
নিচে সাইদুল ভাইয়ের সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং সমাধানগুলো নিয়ে ভাবছিলাম। পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা, নিয়ন্ত্রিত হবার ইচ্ছাঃ সমস্যা হলেও সম্ভবত কেন্দ্রবিন্দু নয়। তবে জবাবদিহীতা নিয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ঘুরে ফিরে সমাজেই ফেরত এলাম। পরিবর্তনটা আমাদের দরকার। বড় মাপে তবে এক ধাক্কায় নয়। পুলিশ নিয়ে ভাল কাজ হচ্ছে, তাদের আচরণ জনবান্ধব হয়ে উঠছে। আমি কিন্তু সেগুলো ছুড়ে ফেলে দিচ্ছি না।
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
আরে আমি ঠিক 'দোষ চাপাচ্ছো' এভাবে বলতে চাইনি। আসলে বলছিলাম যে, অন্যান্য আর সকলের মতো পুলিশের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে অন্যান্য সকলে নিজেদেরকে ধোয়া তুলসিপাতা মনে করে যে আত্মতৃপ্তিতে ভোগে, সেইটা ঠিক নয়।
তাহলে তোমার মতে সমস্যার কেন্দ্র কোথায়?
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আমি যখন বিদেশে লেখাপড়া করতাম, তখন আমার একজন শিক্ষক ছিলেন, যিনি আমাদের দর্শন পড়াতেন। স্যার মূলতঃ একজন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন, কিন্তু পরবর্তিকালে দর্শনের উপর লেখাপড়া করেন, পরে পি.এইচ.ডি.-ও করেন দর্শনের উপর। স্যারের নাম ছিলো ফিওদোরোভ। উনার ক্লাসগুলো আমাকে মুগ্ধ করেছিলো। জীবন-জগৎ-ইতিহাস-দর্শন সম্পর্কে উনার ছিলো অগাধ জ্ঞান।
স্যারকে একবার প্রশ্ন করেছিলাম, "সমাজে বা দেশে ক্রাইম বৃদ্ধি পায় কেন?" স্যার উত্তরে বলেছিলেন, "ক্রাইম বিষয়টি করাপশনের সাথে জড়িত, যেই সমাজে করাপশন যত বেশি, সেই সমাজে ক্রাইমও তত বেশি।"
ঠিকই বলেছেন আপনার শিক্ষক দর্শণের অধ্যাপক। তবে তার কথা অনেক বেশি বিমূর্ত। আমি ভাবছিলাম আরেকটু বাস্তবছোঁয়া অনুমানের কথা।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
তিনটি কারণঃ
১। পুলিশকে রাজনৈতিক ভাবে নিয়নত্রন করা
২।পুলিশের রাজনৈতিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবার ইচ্ছা।
৩। পুলিশের স্বেচ্ছাচারিতার যথাযথ তদন্ত না হওয়া।
সমস্যা যেহেতু পরিষ্কার, এওসবের প্রতিকারও সোজা সাপ্টা।
দ্য়া করে কেউ এর সাথে পুলিশের সুযোগ সুবিধার অপ্রতুলতা,নানামুখী সীমাবদ্ধতার কথা ভাববেননা। এসব জেনেই পুলিশরা পুলিশে যোগ দিয়ে থাকে
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
একেবারে নিরেট বাস্তবভিত্তিক কিছু কারণ ও সম্ভাব্য সমাধান উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়ণ সমগ্র সমাজের প্রত্যক্ষ+পরোক্ষ অংশগ্রহন ব্যাতিরেকে সম্ভব কি?
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
পুলিশকে একমাত্র লাইনে আনতে পারে নেতারা (ক্ষমতাসীন মন্ত্রী) এবং সাংবাদিকগণ।
কিন্তু নেতা ও সাংবাদিককে লাইনে আনবে কে?
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
তাদের কে লাইনে আনার দায়িত্ব আমদের এই নিতে হবে তা না হলে তারা লাইনে আসবে না । জনগণ এই পারে তাদের লাইনে নিতে আবার লাইনে আন্তেও ...
পুলিশের মাঝে 'চ্যানেল অব কমান্ড' প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং তদনুযায়ী কাজ করতে দিতে হবে। এখনকার মত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে যেন থানার ওসিদের সাথে সরাসরি দহরম মহরম না করেন। পুলিশকে পেশাগতভাবে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে এবং তাদের কড়া জবাবদিহির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ক্রসফায়ারের মত দানবিক permissiveness কে প্রশাসন থেকে চিরতরে নির্মূল করতে হবে। প্রথমে কিছুদিন ভালো কাজের পুরস্কার আর মন্দ কাজের শাস্তি প্রকাশ্যে প্রদর্শন করতে হবে। এর demonstrative effect সুফল বয়ে আনলে পরে এবং এটা রীতি হিসেবে একবার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে পরে প্রকাশ্যে প্রদর্শন রহিত করা যেতে পারে। স্বেচ্ছারিতার বিষয়গুলোর উপর বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে।
পুলিশ এখন সন্তাসীদের ভূমিকা পালন করছে। আমি মনে করি তার পিছনে তাদের আর্থসামাজিক অবস্থা এবং তাদের নৈতিকতা , দায়িত্ব পালনে অনীহা আর রাজনৈতিক প্রভাব এই দায়ী।
বিগত ২৭ টি বসন্তকালে আমার হৃদয়ের ফুল বাগানে ফুল ফুটত প্রতিনিয়ত...! কিন্তু দৃশ্যপট দেখে মনে হচ্ছে ফুল হয়তো আরো অনেক বছর ফুটবে কিন্তু কোনো ফুলই হয়তো আর সুগন্ধ ছরাবে না....!