১
গতকাল সন্ধ্যায় সৈয়দ শামসুল হককে চাক্ষুস করে আসলাম। টোকিওর শিবুইয়ায় এখানকার বাংলাদেশী লেখক সংঘের একটা অনুষ্ঠানে একজনের একটা উপন্যাসের মোড়ক-উম্মোচন করতে উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি। প্রবল আগ্রহ নিয়ে গিয়েছিলাম কথাসাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হককে চর্মচোক্ষে দর্শন করতে। আফসোস, দেখে এলাম কথাসাহিত্যিকের দেহে অন্য একজনকে, যে আর দশজনের মতই টাকায় বিক্রি হয়, ক্ষমতার অনুগ্রহের লোভে অন্ধ হয়, এমনকি ভুলে যায় নিজের দেবতা-প্রায় অবস্থানকেও!
তখন ক্যাডেট কলেজে, ১৯৯২/৯৩-এর দিকে। আমাদের কলেজে মঞ্চ নাটকের প্রতিযোগিতা হতো। বাংলার জয়নুদ্দীন স্যার আর হাসিনা ম্যাডামের তত্ত্বাবধায়নে বেশ একটা উৎসবের আমেজ নিয়ে আসত সেইসব নাটক। মনে আছে, সৈয়দ শামসুল হকের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ আর ‘নূরালদীনের সারাজীবন’ নাটক দুটোর কথা। এরপর থেকেই সৈয়দ হক মনের মধ্যে স্থায়ী আসন পেতে নিয়েছেন। খেলারাম থেকে শুরু করে তার অগণিত উপন্যাস, গল্প, নাটক পড়া+দেখা হয়েছে, বাংলা সাহিত্যে আমার যতটুকু মুগ্ধতা, তার একটা বিরাট অংশ জুড়ে অবস্থান করছেন সৈয়দ শামসুল হক। এজন্যই অনুষ্ঠান শুরুর আধঘন্টা আগেই তিনি উপস্থিত হয়ে হলের ওয়েটিং রুমে এসে আমার পাশের টেবিলে বসলে আমার গায়ে শিহরণ শুরু হয়েছিল। সৈয়দ শামসুল হক আমার এতও কাছে বসে আছেন, ঠিক ৩/৪ ফুট দুরেই! আমি ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এমন অবস্থা হয়েছিল বেশিরভাগেরই। একজন বেশ সুপরিচিত আবৃত্তিকার তো রীতিমত কাঁপছিলেন কবিতা পড়তে গিয়ে। আর যা’র উপন্যাসের মোড়ক উম্মোচন ছিল, তিনি মাইক্রোফোন সামনে রেখেও তা’ খূঁজে পাচ্ছিলেন না, পকেটে চশমা থাকার পরও চশমা খুঁজে ফিরছিলেন।
২
প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে গুণমুগ্ধ ভক্তরা সৈয়দ শামসুল হককে নানান প্রশংসায় ভাসিয়ে দিচ্ছিলেন। তবুও আমার মনে হচ্ছিল যথেষ্ট প্রশংসা হচ্ছে না। একজন এসে নূরালদীনের একটা মনোলগে অভিনয় করলেন। নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি, পশমগুলো দাঁড়িয়ে গেছে! অনেক প্রতিক্ষার পর সৈয়দ হক মাইক্রোফোন হাতে নিলেন। যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় তিনি সেটা রেখে আসন ছেড়ে দর্শক-শ্রোতার একেবারে সামনে চলে এলেন। বলা শুরু করলেন ১৯৫০এর দশকে বাংলাভাগের পর পাকিস্তানী শাসকদের আগ্রাসনে দিশেহারা বাংলাভাষা আর সাহিত্যকে রক্ষা+প্রতিষ্ঠার জন্য সৈয়দ হক কিভাবে আরো কয়েকজনের সাথে (শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান, আলাউদ্দীন আল-আজাদ প্রমূখ) সংগ্রাম করেছেন, পাকিস্থান সরকারের রক্তচক্ষু এবং প্রলোভন (অর্থ+সম্মান) উপেক্ষা করেছেন। বললেন, সরকারের বিরুদ্ধে তার দীর্ঘ আপোষহীনতার কথা। বললেন, জীবনে কখনো সরকারী চাকুরী না-করার জন্য মৃত্যুশয্যায় শায়ীত বাবার হাত ধরে তার প্রতিজ্ঞা করার কথা, কারণ তা’তে সরকারের গোলাম হয়ে যেতে হয় (এ সময় তিনি হাত জোড় করে উপস্থিত রাষ্ট্রদুতের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিলেন)। সাহিত্যের এই মহান প্রতিবাদী পুরুষের জন্য ভালোলাগা আরো বেড়ে গেল তার সংগ্রামী ভূমিকার কথা তার মুখেই শুনে, বাংলা ভাষার জন্য তার ত্যাগ+অবদান জেনে। এরপর হঠাৎই ছন্দ পতন হল যখন তিনি বলা শুরু করলেন কি কারণে এবার জাপানে এসেছেন সেখান থেকে।
সৈয়দ হক বললেন যে, ঢাকায় যে নভোথিয়েটার আছে, সেখানে বঙ্গবন্ধুর উপর ৩০ মিনিটের একটা ডকুমেন্টারীর প্রদর্শনীর প্রকল্প হাতে নিয়েছে বর্তমান বাংলাদেশ সরকার। সেই ডকুমেন্টারী নির্মাণের দায়িত্বে আছেন সৈয়দ হক, আর প্রযুক্তিগত সাপোর্ট দিচ্ছে জাপানের একটা কোম্পানী। দেশে শুটিং শেষ। এখন সম্পাদনার কাজ চলছে টোকিওতে। আর সেজন্যই তার এখানে আগমণ। বললেন যে, আগামী মাসে আবারো আসবেন, একই এসাইনমেন্টে।
নভোথিয়েটারে বঙ্গবন্ধু? এতোবড় একজন সাহিত্যিক হয়েও কি তার মাথায় এই সহজ বোধটা আসেনাই যে, এই প্রকল্পের প্রকৃত উদ্দেশ্য শুধুমাত্র তেল দেওয়া? নভোথয়েটারে কেউ কি রাজনৈতিক ইতিহাস জানতে যায়, নাকি প্রাগৈতিহাসিক বিশ্ব+মহাকাশ জানতে যায়?- শুধু এইটুকুই নয়। এরপর শুরু করলেন সরকারের গুণগান যা’ নিতান্তই ছেলেমানুষি মনে হচ্ছিল। বললেন, বর্তমান সরকারই বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র সরকার যারা তরুণ প্রজন্মকে একটা সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে!!!- মনে হলো, এই সৈয়দ হক সেই সৈয়দ হক নয় যা’র জন্য উপস্থিত অনেকের মতো আমিও অধীর আগ্রহ নিয়ে অনুষ্ঠানে গেছি, যা’র উপস্থিতিতে অনেকের হাত পা’ কাঁপা শুরু হয়েছিল। এইসব রাজনৈতিক বক্তৃতা দেওয়ার জন্য অন্ততঃ আধ-ডজন তালেবর তার সামনেই দর্শক সাড়িতে বসে ছিলেন যাদের কাছে সৈয়দ হক সরকার-বন্দনায় একেবারেই ছেলেমানুষ। (তাদের কেউ কেউ এমনকি ত্বকীর খুনও কেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বার্থে অবশ্যম্ভাবী ছিল তা’ বক্তৃতার মধ্যে যুক্তিসহ প্রমাণ করে দিতে সক্ষম!) আশংকা করছিলাম কেউ আবার প্রিয় সাহিত্যিককে অপমানসূচক কোন কথা বলে না বসে। ঠিক তা’ই ঘটল! এক প্রবাসী লেখক যিনি একটু আগেই সৈয়দ হকের উপস্থিতিতে তার অনুভূতি বলতে গিয়ে তালগোল পাঁকিয়ে ফেলেছিলেন, তিনি রুষ্ট কন্ঠে বলে বসলেন- “এখন দেশে যে গুমখুন হচ্ছে, সেটা কি আপনি দেখতে পান না?”-
কবিতায়, গল্পে, উপন্যাসে কল্পনার ফানুস উড়িয়ে যা ইচ্ছে তাই করতে পারার মতো ঐশ্বরিক ক্ষমতা সৈয়দ হকের আছে। আর তার জন্যই তিনি আপামর বাঙ্গালীর কাছে নমস্য। কিন্তু রাজনীতির কারবার কল্পনা নিয়ে নয়, এখানে বাস্তবই বড়। এখনকার সেই বাস্তব নিয়ে সৈয়দ হকের কথাগুলো তা’ই অনেকেরই ভালো লাগেনি, লাগার কথা নয়। প্রিয় সাহিত্যিককে অপ্রস্তুত অবস্থা থেকে বের করার জন্যই আমি আচমকা তাকে অনুরোধ করলাম নূরালদীন থেকে কিছু বলার জন্য। আরেকজন আরেকটা কবিতার অনুরোধ করলেন। তিনি দুটোই নাকচ করে তার ১৬ বছর বয়সে লিখা একটা কবিতা আবৃত্তি শুরু করলেন। মুহূর্তের মধ্যেই আবার সেই কবিতার ঈশ্বর, সাহিত্যের মহীরুহ সৈয়দ শামসুল হক আবির্ভূত হলেন। নিমিষেই হল থেকে উধাও হয়ে গেল গুমোট ভাব। আবার সকলের চোখে মুগ্ধতা উপচে পড়া শুরু হলো।
৩
যে সৈয়দ শামসুল হককে আমি স্মৃতিতে লালন করি, তিনি জাতীয় পর্যায়ে পাকিস্তানী শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে আর স্থানীয় পর্যায়ে সমাজপতি+মহাজনের শোষণের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সোচ্চার, কবিতায়+নাটকে+উপন্যাসে। তিনি নূরালদীনের মতো হাঁক ছেড়ে বাঙ্গালিকে জাগিয়ে তোলেন, তিনি জলেশ্বরী নদীর বাঁকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আকবরকে গান শোনাতে চান, তিনি নির্যাতিত মানুষের মধ্যকার ক্ষোভকে সাহিত্যের অবয়বে প্রতিবাদের হাতিয়ারে পরিণত করেন। বাংলা সাহিত্যে সৈয়দ শামসুল হক শুধু প্রেম-ভালোবাসার নয়, বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিবাদের নাম। সেই জন্যই আপামর জনতার হৃদয়েও তিনি চির অম্লান।
রাষ্ট্র এবং সরকার চরিত্রগতভাবেই নির্যাতনকারী, কখনও সংখ্যালঘুর প্রতি, কখনও সংখ্যাগুরুর প্রতি। কিন্তু সাহিত্যিক সর্বদাই গণমানুষের পাশে থাকেন। এমন একজন সাহিত্যিকও কি পাওয়া যাবে, যিনি কোন ক্ষমতাসীন সরকারের গুণগান করে জননন্দিত হয়েছেন? আমি জানি না একজনের কথাও। সম্ভবতঃ সৈয়দ হকও এইটা জানেন। আর সেজন্যই তিনি পিতার মৃত্যুশয্যায় তার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, সরকারের আজ্ঞাবাহী হবেন না। কি নিদারূণ বৈপরীত্য! যে অনুষ্ঠানে, যে বক্তৃতায় তিনি এই কথা বললেন, সেই একই স্থানে, মাত্র কয়েক মিনিট পরে সেই তিনিই ছেলেমানুষের মতো বর্তমান সরকারের গুণগান শুরু করলেন। অথচ, আমরা সকলে গিয়েছিলাম সাহিত্যিক সৈয়দ হককে এক নজর দেখতে, একটা উপন্যাসের মোড়ক উম্মোচনে উপলক্ষে লেখক-সাহিত্যিকদের জমায়েতে সাহিত্যিক সৈয়দ হকের মুখে সাহিত্যের কথা শুনতে!!!
৪
কুড়িগ্রামের ছাওয়াল সৈয়দ শামসুল হক এখন আর তিস্তার বুকে হাহাকার দেখেন না। সম্ভবত তিনিও তিস্তাপারের সেই বাঙ্গালীদের (স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী হলেও তারা ত’ সবকিছুর আগে তিস্তাপারের বাঙ্গালীই) মতো যারা গত সপ্তাহে মিছিল করে ভারতের কাছে দাবী জানিয়েছে তিস্তানদীতে বাধঁ দিতে, ফলে তাদের ঘরবাড়ি আর ফী বছর বন্যায় তলিয়ে যাবেনা, উপরপন্তু নতুন নতুন আবাদী জমি জেগে উঠবে! অথবা, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকাবাসী হয়ে সৈয়দ হক নিজেও নাগরিক হয়ে উঠেছেন, যাদের কানে রানাপ্লাজায় খুন হয়ে যাওয়া ১২শ পোশাক শ্রমিক আর তাদের রেখে-যাওয়া ১২শ বিপন্ন পরিবারের কান্নার আওয়াজ পৌঁছায় না। কাজেই, নূরালদীন আর ডাক দেয় না “জাগো বাহে, কুন্ঠে সবায়”, আর কখনো ডাকবেও না।
৫
মন রে, নূরালদীনের যুগ শেষ হয়েছে। কাজেই, এ’ বেলা ক্ষান্ত হ। বাঙ্গালী হ। না পারোস চুপ থাক!!!
প্রথম :tuski: :tuski: :tuski:
এইবার পড়ে আসি। 😀
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
এই জিনিসটা আমার মাথায় এখনো ঢুকে না, মোড়ক উম্মোচনের অনুষ্ঠানে সরকার আসে কিভাবে? জানি না, প্রেক্ষাপট হয়তো ভিন্ন ছিল।
আপনার লেখা পড়ে হতাশ হয়েছি। এই শামসুল হক যে সবসময় একই রকম থাকবে এমনটি আশা করা কতটা ঠিক আমি জানিনা। তার রাজনৈতিক বক্তব্যের উত্তর প্রতি উত্তর সবই দেয়া যায়। তবে এটি ঠিক, হিরোদের সব সময় হিরো হিসেবে দেখতেই ভাল লাগে। 🙂
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
হিরোদের সব সময় হিরো হিসেবে দেখতেই ভাল লাগে :thumbup:
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
সৈয়দ শামসুল হকের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ আর ‘নূরালদীনের সারাজীবন’ 🙂 🙂 এখনো কি এই নাটকগুলো সিলেক্ট হয়? খুব জানার ইচ্ছা।
সৈয়দ হক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন, আছেন, থাকবেন।
তিনি যদি জিয়ার উপর তথ্যচিত্র বানাতেন তাইলে দুঃখ পেতাম।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ব্যাপারটা এমন যে ভারত আমাদের পানি দিচ্ছে না আর তাই সৈয়দ হক মুজিবের উপর ডকুমেন্টারি করে অপরাধ করছেন!
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ক্যাডেট কলেজে নূরল দীন বা পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় টাইপ কাব্য নাট্য সিলেক্ট করা কতোটুকু যৌক্তিক তাতে সন্দেহ রয়েছে।
কাব্যনাট্যে অভিনয় করার মতো মেধা-মনন-অভিজ্ঞতা ঐ বয়সে কয়জনের থাকে তাতে আমার অন্তত সন্দেহ রয়েছে।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
খুব সম্ভবত ৭০ এ সৈয়দ হক কিছু সময় পান ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে মুজিবের সাথে দেখা করার।
খুব ভোর বেলায় হক সাহেব কিছুক্ষণের জন্য মুজিবের সাথে দেখা করার সময় পান।
মুজিবুর তাকে জিজ্ঞাসা করেন, কি কবি সাহেব, কি জানতে চান?
হক বলেন, আপনি যদি অল্প কথায় ৬ দফা টআ বুঝিয়ে বলতেন>
মুজিবুর বলেন, কতো নিছো, কবে দিবা, কবে যাবা।
তা সৈয়দ হক বঙ্গবন্ধুর উপর ডকুমেন্ট করবে নাতো আল মাহমুদ করবে???
ভাল কথা শিক্ষাগত যোগ্যতায় ঘাটতি থাকার পর ও আল মাহমুদ কে চাকুরি দিয়েছিলেন মুজিব। কেউ এক্জন বিরোধিতা করলে মুজিব বলেন, কবির আবার শিক্ষাগত যোগ্যতা কি?
যে ফররুখ আহমেদ পাকিদের তাবেদারি করেছেন মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস তাকেও পুনর্বাসিত করেছেন মুজিব।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ভাবছিলাম জিয়া বাংলাদেশের ১ম রাষ্ট্রপতি তারেক জিয়ার এই ঘোষণার পর এর পক্ষে তুই লেখা দিবি না দেইখা অবাক হইছিলাম।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ইলিয়াস আলীর বৌ যখন উপজেলা নির্বাচনের আগে বিএনপি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে গিয়ে বলেন, আপনার বিএনপি কে ভোট দিলে ইলিয়াস আলীকে পাওয়া যাবে তখন ভাবি কে করছে গুম খুন!!!!!
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
সৈয়দ হক তার বিভিন্ন লেখায় সামরিক শাসক জিয়া কে নিয়ে মজার মজার তথ্য হাজির করেছেন।
হকের বই যেহেতু তোর পড়া এ তথ্য ও তোর অজানা থাকার কথা নয়।
আর এমন না যে হক সাহেব নতুন করে আওয়ামীলীগের চাদর গায়ে জড়িয়েছেন।
২০০১ এর আগে পড়ে হক সাহেব রিকশা করে যাওয়ার পথে ছাত্র দল বা বিএনপির ছেলেরা তার রিকশা উল্টে ফেলে দেন।
হক সাহেব তার এক কিশোর উপন্যাস হডসনের বন্দুক উপন্যাসে লেখেন যে জনৈক পাকিস্থানী চা বাগানের মালিককে তার চা বাগান ফেরত দেন সামরিক শাসক জিয়া।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
রাজীব,
তুই ত একলাই কমেন্ট করে ব্লগ ভাসায়া দিলি! 😛
শোন ব্যাটা, ডকুমেন্টারী করছে, ঐটা ব্যাপার না। ব্যাপার হচ্ছে নভোথিয়েটারের জন্য ডকুমেন্টারী করতেছে, যেখানে লোকে ডাইনোসর আর নক্ষত্ররাজী নিয়ে ডিকুমেন্টারী দেখতে যায়। আর সরকাররে তেল দেওয়ার লোকের কি আকাল পড়ছে দেশে যে সৈয়দ হকেরও নামা লাগব ঐ পাঁকে?
আমি কখন কি করমু সেইটা দেখি তুই আজকাল আমার থেকেও বেশি বেশি জানতেছোস। কাহিনী কি? 😉
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
তাইলে ত কইতে হয় ঐটার নাম ভাসানির নামে ক্যান।
বিজ্ঞানীর নামে হইবো।
শাহজালালের নামে এয়ারপোর্ট ক্যান?
শাহজালালের নামে নদী বন্ধর হইতে পারে বড়জোর। কারণ সে জায়নামাজে নাদী পাড়ি দিছিলো
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
তোর চেয়ে বেশি জানি না।
ব্যাপারটা ইজি এন্ড সিম্পল যে সৈয়দ হক আওয়ামী লীগ সাপোর্ট করে এইটাই তোর প্রবলেম।
এইখানে অন্য সব প্রসঙ্গ আনা টা স্রেফ আই ওয়াশ।
ওকে চালাইয়া যা।
বাজারে সব চলে।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
- ঠিকই অনুমান করেছিলাম যে, তুই আমাকে আমার থেকেও বেশি জানিস। আর সেটা হতেও পারে; আফটারঅল, তুই আমার বন্ধু বলে কথা 😛
আর কথা বাড়াইলাম না। এবেলা ক্ষান্ত দেই 🙂
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
''কাব্য প'ড়ে যেমন ভাব
কবি তেমন নয় গো''
😛
সৈয়দ হক ব্যক্তি হিসেবে করতেই পারেন যে কোন দল বা মতকে সাপোর্ট।
তবে তাঁর সৃষ্টিগুলোকে মাথায় রাখলে তাঁর ফেনিয়ে ফেনিয়ে সরকারের সমালোচনা আমাকে আহত করে। মনে হয়, এতোটা কি আসলেই প্রয়োজন?
যেমন মানতে পারিনা ভূপেন হাজারিকার বিজেপি সমর্থন, কিংবা আল মাহমুদের মৌলবাদী হয়ে যাওয়া।
তবে এটাই বাস্তবতা। কীর্তিমানকে কীর্তির ভেতর দিয়ে দেখার চেষ্টা করিনা আর। গল্প, নাটক, কবিতা, গান কতটা তাঁরা জীবনে ধারণ করেন, কতটা করেন না সে হিসেব আর মেলাতে যাইনা।
- ভাইয়া, আসল কথা এইটাই।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
:hatsoff: :hatsoff: :gulli2:
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
কারেকশনঃ 'সমালোচনা'র স্থলে 'স্তুতি' পড়তে হবে।
মহৎ সাহিত্যের স্রষ্টা যে নিজে একজন মহান মানুষ হবেন এমনটা ভাবার কারণ নেই। বরং সারা পৃথিবী জুড়ে এর উল্টো উদাহরণ ভুরি ভুরি ছড়িয়ে আছে।
খ্যাতনামা চলচ্চিত্রকার রোমান পোলান্সকির কথাই ধরা যাক, তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো জানার শোনার পরও মুগ্ধ হয়ে তাঁর ছবিগুলো দেখতে থাকি।
সৃষ্টিশীলতা মানেই পবিত্রতা নয় কেবল, সেখানে অসুখ, বিকৃতি ইত্যাদিও থাকে -- সেসব নিয়েও তাদের কারবার।
হুমায়ূন আজাদ দু'চোখে দেখতে পারতেননা সৈয়দ হককে -- তাঁদের রেষারেষিও প্রবাদপ্রতিম ছিলো। তিনি অভিযোগ করেছিলেন --- হক তাঁর মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসে ধর্ষণদৃশ্যের বর্ণণায় নিজেই কার্যত ধর্ষণ করেছিলেন চরিত্রসমূহকে (মূলত মানসিক বিকারগ্রস্ত বলতে চেয়েছিলেন হককে)।
'খেলারাম খেলে যা' মুগ্ধ হয়ে পড়েছি, তবু মনে হয়েছে মনের মধ্যে বিকার ধারণ না করলে একজন বিকারগ্রস্তকে নিয়ে গল্প তৈরী করা সম্ভব নয়। মুগ্ধ হয়ে কবিকণ্ঠে শুনেছি 'কখনো কবিকে' নামের অমর কবিতাটি। শামসুল হক আমার অন্যতম প্রিয় সাহিত্যিকদের একজন --- তাঁর প্রতি মুগ্ধতা সীমাহীন। কিন্তু তিনি আমার ঈশ্বর বা দেবতা নন --- আমার কাছে দেবতা বা ঈশ্বর বলে কিছু নেই। সেই ঘোর বহু আগেই কেটে গেছে।
এই পোস্ট টা দেখেছিলাম আর যেই কথা গুলো মাথায় এসেছিলো সেটাই নূপুরদা বলে দিলেন। হুমায়ুন আজাদ তো সৈয়দ হকের চিন্তা ভাবনা পঁচে গেছে এমন জাতীয় কথা বলেছিলেন এমনও মনে করতে পারি। তবে অসাধারণ সাহিত্যিক সৈয়দ হক যে ব্যাক্তি হিসাবেও অসাধারণ হবেন এমন আশা করা ঠিক না বলে মনে করি।
তবে এই পোস্ট এবং বিষয় নিয়ে আরো কিছু কথা বলার দরকার মনে করি। যতদূর জানি, আমাদের সংসাদের কোন দলীয় সাংসদ দলীয় মতের বিরুদ্ধে গেলে তাকে সাংসদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয় (রেফারেন্স আমি নিশ্চিত না, তবে এমন উদাহরণ দেখা গেছে, আমার ভুল থাকলে কেউ ঠিক করে দিবেন প্লিজ)। এমতাবস্থায় আমার কাছে মনে হয় আমাদের সিস্টেম আসলে দলবাজি কিংবা দলভক্তিকে প্রমোট করছে। মানছি সৈয়দ হক দলীয় কেউ নন, কিন্তু গত এক বছরে শাহবাগ পরবর্তী সময়ে এখনকার বুদ্ধিজীবীদের জায়গাগুলো খুব সুষ্পষ্ট ভাবেই সরলীকৃত। এখানে গ্রে রিজনে যাওয়ার সুযোগ সিস্টেম নিজেই বন্ধ করে দিচ্ছে বলে মনে করি।
বর্তমান সময়ে যা অবস্থা দেখি সৈয়দ হক তো সৈয়দ হক, খোদ রবীন্দ্রনাথ থাকলেও কোন এক দলের আজ্ঞাবাহক হয়ে উঠতেন এমনটাও বিচিত্র না। (শাহবাগ নিয়ে হাসনাত আব্ডুল হাইয়ের লেখায় রীতিত বিস্মিত হয়েছি)।
তুই এখনও অবাক হস্?? কেমনে পারিস?
কথা ঐটাই, ব্যক্তিকে নয়, তার নির্দিষ্ট কিছু সৃষ্টিকে নিয়ে মুগ্ধ হওয়াই ভালো।
আমরা সবাই দলকানা। যে আমার দলের পক্ষে না, সে অপর দলের পক্ষে কানা; তা সে যতই ভিন্ন ভেকের চশমা পরুক।
এই লিখা এবং ডিসকাশানটা মিস করলাম ক্যামনে?
আমারও মত সেটাই, লেখক স্বত্তা ও ব্যাক্তি স্বত্তা দুটো পৃথক জিনিস। একটি আরেকটিকে কমপ্লিমেন্ট করে কিন্তু তারপরেও পৃথকই থেকে যায়।
"টেক ইট ইজি" - না হয়ে এটা হ্যান্ডেল করার আর কোন উপায় আমার জানা নাই।
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
আপনার কমেন্টে আবার এসে এই লেখায় ঢুকলাম।
😀
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ