১
সিসিবিতে নিয়মিত আসলেও লেখা হয়না অনেকদিন। কেন, সে’ এক বিরাট ইতিহাস। আজ মনে হলো কিছু একটা লিখি, ইতিহাস নিয়েই, তবে তা’ সিসিবিতে আমার লেখার মাঝে এই লম্বা বিরতি নিয়ে নয়, বরং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং সেই প্রেক্ষিতে ব্যক্তির বিচার বিষয়ে, মোটাদাগে যা’কে বলা হয় Sociology of Man in War.
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের মাঝে যে সাধারণ ডিসকোর্স চালু রয়েছে, তা’তে ব্যক্তির সামগ্রিক মূল্যায়ণ হয় প্রকৃতপক্ষে একটা বাইনারি স্ট্যান্ডার্ডের মাধ্যমেঃ আক্রান্ত/আক্রমনকারী, বীর/কাপুরুষ, অথবা দেশপ্রেমিক/দেশোদ্রোহী। এখানে পাকিস্তানী সেনাদেরকে স্বভাবতঃই আক্রমনকারী হিসেবে ঘৃণার চোখে দেখা হয়; এবং তাদের সাথে তাদের সহযোগীদের (রাজাকার+আলবদর) এবং সমর্থকদেরও। এর পাশাপাশি যারা আমাদের দেশের পক্ষে পাকিস্তানী সেনা ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে, অর্থ্যাৎ মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সহযোগী+সমর্থক, তাদেরকে দেশপ্রেমিক+বীর+আত্মত্যাগী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৭১ এ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতে ব্যক্তির মূল্যায়ণের এই যে ব্যবস্থা, এটা যুদ্ধের প্রেক্ষিত (তথা স্থান+কাল) পেড়িয়ে এমনকি আমাদের বর্তমানেও দৃশ্যমান। প্রকৃতপক্ষে, ইতিহাস এমনই- একেকটা ঘটনা তার নিজস্ব কাল এবং স্থানিক গন্ডি পেড়িয়ে অনেক সুদূরের ব্যক্তির জীবনেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে+থাকে। আর একারণেই ১৯৭১ এর বেশ ক’বছর পরে জন্ম নেওয়া আমাদের প্রজন্ম এবং তারও পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে দেখি ‘পাকিমন পেয়ারা/মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী’ স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে ব্যক্তির মূল্যায়ণ এবং বিভাজন। এই বিভাজন শুধুমাত্র ১৯৭১ সম্পর্কিত বিষয়েই সীমাবদ্ধ না থেকে অন্যান্য অগণিত ক্ষেত্রেও ছড়িয়ে পড়ে যেখানে আমরা দেখি গোষ্ঠিস্বার্থ অনুযায়ী সুবিধামত এই স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তির বিচার/মূল্যায়ন, তা’ সে কোন জাতীয় ইস্যুর মত বিশাল ব্যাপারই হোক আর ধর্মীয় আচার-আচরণের মতো একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারই হোক। এই বিচার/মূল্যায়ণ প্রক্রিয়ায় আমি বরাবরই অস্বস্তিবোধ করি, কারণ এখানে ব্যক্তিকে একটা একক সত্বা হিসেবে না দেখে বিশেষ গোষ্ঠীর ‘একজন সদস্যমাত্র’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর ফলে যা’ ঘটে তা’ হলো- সেই গোষ্ঠীর যাবতীয় বৈশিষ্ট্য সকল সদস্যের প্রত্যেকের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে পরিগণিত হয়, আর ব্যক্তির একক বৈশিষ্ট্যসমূহ আড়ালে চলে যায়। পরিণামে কিছু ব্যক্তি অকারণেই গোষ্ঠিগত দোষের বা গুণের ভাগীদার হয়, যেমন মুক্তিযুদ্ধ না করেও (এমনকি বিরোধীতা করেও) আওয়ামীলীগের সমর্থকরা সবাই মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি, আর মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতা না করেও আওয়ামীলীগ বিরোধীরা (এমনকি সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা হলেও) মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী! আমার বিবেচনায়, সবার আগে একক+অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ব্যক্তি, তারপর সেইসব ব্যক্তির সমষ্টি নিয়ে গঠিত দল/গোষ্ঠীর বিচার। আসুন, ভিয়েতনাম যুদ্ধে একটা ঘটনার প্রেক্ষিতে দেখা যাক যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ব্যক্তির বিচারের আমাদের মাঝে প্রচলিত এই যে প্রচলিত প্রক্রিয়া তা’ কতটা গ্রহনযোগ্য।
২
ভিয়েতনামে আমেরিকার আগ্রাসনের কথা আশা করি সকলেরই কমবেশি জানা আছে। এই যুদ্ধে আমেরিকা ভিতেয়নামের মুক্তিযোদ্ধা ‘ভিয়েত কং’ গেরিলাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিধ্বংসী পলিসি অনুসরণ করে- আমেরিকান সেনারা ভিয়েতনামের বাড়ি-ঘর, পথঘাট, ফসলের মাঠ, পুকুর, গবাদিপশু, ইত্যাদি সমস্ত কিছু ধ্বংস করে দেয় যা’তে গেরিলারা স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে কোন প্রকার সহায়তা ও আশ্রয় না পেতে পারে। প্রায় একদশক ব্যাপী এই যুদ্ধের অন্যতম আলোচিত একটা ঘটনা ছিলো ‘My Lai Massacre’ যেখানে আমেরিকান সেনারা মাই লেই গ্রামে ৫০৪ জন নিরপরাধ এবং নিরস্ত্র নারী, শিশু এবং বৃদ্ধকে পাইকারীভাবে হত্যা, ব্যাপক ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগ করে। ঘটনার বিস্তারিত উইকিপিডিয়াতে আছে বলে আমি সেদিকে যাচ্ছি না। শুধু যেটুকু আমার বক্তব্য বোঝানোর জন্য দরকার, সেইটুকু বলছিঃ
১৯৬৮ সালের ১৬ই মার্চ ভিয়েতনামে যুদ্ধরত আমেরিকার সেনাবাহিনীর এক ব্রিগেডের কাছে সংবাদ আসে যে, মাই লেই গ্রামে ভিয়েতকং গেরিলাদের একটা দল আশ্রয় নিয়েছে। ব্রিগেড কমান্ডার হুকুম দিলেন তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানী কমান্ডার তার অধীনস্ত সেনাদলকে জানালেন যে পরবর্তী সকাল তারা মাই লেই গ্রামে অভিযান চালাবেন। তিনি আরো জানালেন যে, সকাল ৭’টার দিকে তারা সেই গ্রামে উপস্থিত হবেন এবং তার প্রাপ্ত সংবাদসূত্র অনুযায়ী তিনি ধারণা/আশা করছেন সেই সময় গ্রামের নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা ঘর ছেড়ে নিকটস্থ বাজারে থাকবে। অতএব, সেই সময় গ্রামে যারা থাকবে তারা সকলেই হয় গেরিলা অথবা তাদেরকে আশ্রয়দানকারী। কাজেই, গ্রামে যাকে দেখা যাবে, তাকেই শত্রু হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং খতম করতে হবে। কিন্তু সেনাদল যথা সময়ে গ্রামে গিয়ে পেল শুধুমাত্র নারী, শিশু এবং বৃদ্ধদেরকে। অধিকাংশ সৈন্য কমান্ডারের আদেশ অনুযায়ী নির্বিচারে গুলিবর্ষন শুরু করল। কিন্তু কিছু সৈন্য কমান্ডারের আদেশ অমান্য করল; কেউ কেউ বাধ্য হয়ে গুলি চালালেও এরপর নিজের পায়ে গুলি করে নিরপরাধ মানুষ হত্যার প্রায়শ্চিত্য করল, কেউ কেউ সরাসরি নিজ সৈন্যদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ করলো এবং কিছু নিরীহ গ্রামবাসীকে রক্ষা করল। এমনকি কয়েকজন সৈন্য লাঞ্চের সময় আড়াল ছেড়ে বেড়িয়ে আসা দুটো কন্যাশিশুকে খাবারও খেতে দিল (ঘটনার এই অংশটুকু উইকি’তে নাই, নিচে আমার উল্লিখিত বই থেকে নেওয়া)। পরদিন আমেরিকান বাহিনীর মুখপাত্র ঘটা করে সারা বিশ্বকে জানিয়ে দেয় যে, আমেরিকার বীর সেনারা দিনব্যাপী এক সংঘর্ষে ১২৮ জন ভিয়েতকং গেরিলাকে হত্যা করেছে!
মাই লেই গ্রামের এই পাইকারী হত্যাযজ্ঞ ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকান বাহিনীর নৃশংসতার একটা মাত্র উদাহরণ। এরকম আরো শত শত ধ্বংসাত্মক ঘটনার মাধ্যমে তারা ভিয়েতনামকে আক্ষরিক অর্থেই একটা ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে, যেকারণে ইংরেজী অভিধানে genocide এর অনুরূপ ‘ecocide’ শব্দটা অন্তর্ভূক্ত করা হয় যা’র অর্থ সমগ্র ইকোসিস্টেমকে হত্যা করা! যেসকল নস্টামীর কারণে বিশ্বব্যাপী আমেরিকার প্রতি মানুষের ঘৃণা, তার মধ্যে অন্যতম হলো ভিয়েতনামে তাদের অমানবিক আগ্রাসন। আমি নিজেও প্রবলভাবে ঘৃণা করি আমেরিকার এই ভয়াল রূপ। কিন্তু তাই বলে আমি কি আমেরিকার সকল ব্যক্তিকেও সমান ঘৃণা করবো? অথবা, আমেরিকার সকল সৈন্যকে? তাহলে ত’ আমেরিকার সেইসব সৈন্যকেও আমি ঘৃণা করছি যারা মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়ে নিরীহ গ্রামবাসীদের পক্ষ নিয়েছিলো (ইন ফ্যাক্ট, ভিয়েতনাম যুদ্ধ-ফেরত অনেক আমেরিকান সৈন্য ও তাদের অফিসার পরবর্তীতে ভিতেয়নামের মানুষের সাহায্যার্থে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে যা’ সাধারণঃত আমাদের অজানা), আমেরিকার সেইসব হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষক-জনতাকে আমি ঘৃণা করছি যারা ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে পথে নেমেছিলো। প্রকৃতপক্ষে, যুদ্ধের ময়দানের কর্মকান্ডের ভিত্তিতে ব্যক্তির মূল্যায়ণেয় প্রক্রিয়াটাই ভ্রান্ত। প্রকৃতপক্ষে, যুদ্ধক্ষেত্রে দানবরূপী হন্তারক অথবা মানবতাবাদী নায়ক খোঁজার চেষ্টাটাই অসার। চলুন, যুক্তি এবং তত্ত্বের আলোকে এই বক্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখি।
৩
মাই লেই হত্যাযজ্ঞে অংশগ্রহনকারী সৈন্যদের মধ্যে যারা সরাসরি কমান্ডারের বিরোধীতা করেছে এবং বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, তারা ত’ প্রথম বিবেচনাতেই হানাদার সৈন্যদের উপর সাধারণভাবে আরোপিত নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যের বাইরে। তাহলে দেখা যাক, যারা হত্যাযজ্ঞে অংশ নিয়েছিল, তাদের ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্ট্যগুলো আরোপ করা যায় কি না।- প্রথমতঃ ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকান সৈন্যদের সিংহভাগই ছিলো Drafted- অর্থ্যাৎ, নিয়মিত আর্মির বাইরের সাধারণ জনগণ যাদেরকে রাষ্ট্রীয় আইনের বাধ্যবাধকতার মাধ্যমে যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে। তারা স্বেচ্ছায় ‘কম্যুনিস্ট’ নামের শত্রু হত্যার জন্য যুদ্ধে যায়নি। অতএব, তাদেরকে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগত ভাবে মানুষ হত্যাকাঙ্খী বা ধর্ষক ভাবার কোন উপায় নেই। দ্বিতীয়তঃ ভিয়েতনামের সাথে ঐতিহাসিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-ভৌগলিক কোনরূপ পূর্বসম্পর্ক এবং তা’ থেকে উদ্ভুত জাতিগত দ্বন্দ্ব আমেরিকার নেই। অতএব, ভিয়েতনামের জনগণের বিরুদ্ধে আমেরিকানদের মাঝে, সুনির্দিষ্ট করে- আমেরিকান সৈন্যদের মাঝে জাতিগত ঘৃণা-বিদ্বেষ থাকার কোন কারণ নেই। কাজেই, আমেরিকান সৈন্যদেরকে ভিয়েতনাম-বিদ্বেষী ভাবারও উপায় নেই। তৃতীয়তঃ ঘটনার প্রেক্ষাপটে কিছু সেনা কমান্ডার এবং সদস্য ভিয়েতনামীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, বিদ্বেষ ও ঘৃণা দেখা গেলেও তা’ জন্মেছে যুদ্ধক্ষেত্রে, যুদ্ধে যাবার আগে নয়। যেমন, মাই লেই গণহত্যার আগেরদিন কিছু আমেরিকান যোদ্ধার অন্তেষ্টিক্রিয়া ছিল যা’ সেনাদের মাঝে ভিয়েতকং এবং তাদের সহায়তাকারী জনগণের বিরুদ্ধে ক্রোধকে বাড়িয়ে দিয়েছিলো। তাছাড়া, এই সেনাদল বিগত দিনগুলোতে ছোটবড় অনেক স্থল-মাইন আক্রমণের শিকার হয় এবং অনেক সহকর্মী প্রাণ দেয় অথবা পঙ্গুত্ব বরণ করে যা’ তাদের ক্রোধ ও ঘৃণাকে বৃদ্ধি করে। অতএব, আমেরিকান সেনারা চরিত্রগত কারণে ভিয়েতনামের গেরিলা এবং জনগণের প্রতি বিদ্বেষবশতঃ গণহত্যা চালিয়েছে এটা ভাবা অবাস্তব।
তাহলে, চরিত্রগত ভাবে হত্যাকাংখী, ধর্ষকামী, মানব-বিদ্বেষী না হলেও বেশিরভাগ আমেরিকান সেনা কেন গণহত্যায় সামিল হল?- এই প্রশ্নের উত্তরে Hamilton এবং Kelman তাদের ‘Crime of Obedience: Toward a Social Psychology of Authority and Responsibility (1990)’ গ্রন্থে ব্যাখ্যা করেছেন যে, এটা ছিলো এমন একটা অপরাধ, যা’র জন্য দায়ী ব্যক্তিগতভাবে কোন সেনাসদস্য নয়, বরং সেই অথরিটি যা’ সেনাদেরকে হত্যার আদেশ দিয়েছে+হত্যাযজ্ঞের জন্য অনুকূল প্রেক্ষির সৃষ্টি করেছে এবং প্রয়োজনে সৈন্যদের বাধ্য করেছে। আমেরিকার সেই সময়কার অথরিটি সেনাদেরকে ভিয়েতনামে কম্যুনিস্ট গেরিলাদেরকে হত্যার মাধ্যমে নির্মূল করতে আদেশ দিয়ে পাঠিয়েছে। তাদেরকে যুদ্ধাবস্থার মধ্যে ঠেলে দিয়ে হত্যাকান্ডে উৎসাহিত করেছে। এছাড়াও যেসব সেনা হত্যাকান্ডে অংশ নিতে অনীহা প্রকাশ করেছে, তাদেরকে ‘আর্মি আইনের’ বলে গুলি ছুড়তে বাধ্য করেছে। অর্থ্যাৎ, ভিয়েতনাম যুদ্ধে ব্যক্তি পর্যায়ে সৈন্যরা এমন একটা বিশেষ ‘সামাজিক প্রেক্ষিত’ (social context) এ প্রবেশ করে যেখানে ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার বদলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশের মাধ্যমে সমস্ত কিছু দল/গোষ্ঠিগতভাবে পরিচালিত হয়। এখানে ব্যক্তি যে সমস্ত কর্মকান্ডে অংশ নেয় সেসবে তাই তা’র ভূমিকা নয়, বরং গোষ্ঠী/দলের সামষ্টিক ভূমিকা মূখ্য। অর্থ্যাৎ, তাদের ভালো-মন্দের বিচার যথার্থভাবে করতে হলে তা’ এই দলীয় প্রেক্ষিত অনুযায়ী করাই যথার্থ।
মাই লেই গ্রামের গণহত্যার ঘটনা বিশ্লেষণ করে Hamilton এবং Kelman বর্ণনা করেছেন যে, Crime of Obedience সংঘটিত হওয়ার প্রেক্ষিতে তিনটি আলাদা কিন্তু পারস্পরিক সম্পর্কিত প্রক্রিয়া বিদ্যমানঃ authorization, routinization এবং dehumanization যা’রা সম্মিলিতভাবে উক্ত প্রেক্ষিতকে এমনভাবে গঠন করে যে, ব্যক্তি তার নিজস্ব বিবেচনা হারিয়ে ফেলে এবং/অথবা হারাতে বাধ্য হয় এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ মেনে নেয়। authorization বলতে তারা বুঝিয়েছেন যে, সেনাদলের অন্তর্গত ব্যক্তিবর্গ তাদের নিজ নিজ পদমর্যাদা অনুসারে উপর থেকে ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে যাবতীয় আদেশ পেশাগত দায়িত্ব হিসেবে মেনে নেয়। কিন্তু দীর্ঘ চেইন-অব-কমান্ডের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পৌঁছানোর মধ্যে মূল কমান্ড ভিন্নভাবে ব্যাখ্যাকৃত হয়ে পড়ে। কারণ, উচ্চপর্যায়ের কমান্ডারদের কমান্ড প্রায়শঃই বিশদ না হয়ে বিমূর্ত হয়ে থাকে যা’ মাঠ পর্যায়ে নিচের স্তরের কমান্ডাররা নিজেদের অবস্থার প্রয়োজনে ব্যাখ্যা করে। যেমন, মাই লেই গ্রামের ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের আদেশ ছিলো ‘ভিয়েতকং’ গেরিলাদের হত্যা করা। পরবর্তীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন সেটাকে ব্যাখ্যা করে এই ভাবে যে, গ্রামবাসীদের মধ্যে যারা বাজারে না গিয়ে বাড়িতে অবস্থান করবে, তারাও হয় গেরিলা অথবা তাদের সহযোগী, অতএব আমেরিকার শত্রু। এটা সহজেই অনুমেয় যে, গেরিলাযুদ্ধে শত্রুসৈন্য আর সাধারণ জনগণের মধ্যে সহজে পার্থক্য করতে না পারার অভিজ্ঞতা থেকেই সেই ক্যাপ্টেন এহেন ব্যাখ্যা দাড় করায়। এভাবে সাধারণ জনগণকেও শত্রুজ্ঞান করার জন্য তার ব্যক্তিগত বিদ্বেষের চেয়ে পেশাগত সাবধানতা দায়ী বলে অনুমান করা বেশি যুক্তিযুক্ত। আর আপামর গ্রামবাসীদের প্রতি গুলি ছুড়তে ইতস্তত করা এক সৈন্যকে তার লেফটেনেণ্টও পেশাগত তাগিদেই আদেশ দেয় ‘just follow the command’। এভাবে সাধারণ একজন সৈন্য নিজের বিচার-বিবেচনার বাইরে গিয়ে তার কমান্ডারের আদেশ আনুযায়ী শত্রু, তথা মানুষ হত্যা করে। routinization বলতে তারা সেনাবাহিনীর নিয়ম-শৃংখলার মাধ্যমে ব্যক্তির কর্মকান্ড পরিচালনার দিকে নির্দেশ করেছেন। সেনাবাহিনীতে সকল কর্মসূচী বিশদভাবে বর্ণনা করা থাকে এবং সেসবকে সুনির্দিষ্টভাবে নিয়ম মেনে বাস্তবায়ন করা হয়। একেক কাজের সময় এমনকি হাত, পা, চোখ, শিরদাড়া, ইত্যাদি কোন পজিশনে কিভাবে থাকবে তা’ও নিয়মিত ট্রেইনিং দিয়ে রপ্ত করানো হয়, যা’তে আদেশ পাওয়ামাত্র সেনারা যন্ত্রের মতো এফিসিয়েন্টলি কাজ সমাধা করে, কোনপ্রকার ভালো-মন্দের বিচার করার সুযোগ ছাড়াই। আর dehumanization বলতে তারা বুঝিয়েছেন যে, টার্গেট জনগোষ্ঠিকে এমনভাবে উপস্থাপণ/চিত্রিত করা যেন তারা সমগ্র মানব সভ্যতার জন্য হুমকি (কম্যুনিস্ট), সভ্যজগতে অনুপযুক্ত বা বেমানান, তথা অসভ্য-অশিক্ষিত-অনুন্নত-বর্বর, অর্থ্যাৎ, ঊনমানুষ। অতএব, মানবতা তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। কাজেই, তারা ‘হত্যা-যোগ্য’ (expendable, disposable)। – এই তিন প্রক্রিয়াকে বোঝার সুবিধার্থে আলাদা ভাবে বর্ণনা করা হলেও এরা সমন্বিত ভাবে সৈন্যদেরকে নিজ নিজ বিচার-বিবেচনার বাইরে নিয়ে যায় এবং তাদের দিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ পালন করিয়ে নেয়। অতএব, যুদ্ধের ময়দানের কর্মকান্ডের জন্য ব্যক্তিগত ভাবে সৈন্যরা দায়ী নয়। কাজেই, এর দ্বারা তাদের ব্যক্তিগত চরিত্রের মূল্যায়ণ করাও ভ্রান্ত।
তাহলে, যুদ্ধে গণহত্যার জন্য দায়ী কে? এই দায় অথরিটির, যা’ মূলতঃ সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র এবং নীতিনির্ধারনী পর্যায়ের নের্তৃবর্গের সমষ্টি।
৪
যেকোন মানুষ হত্যাই মহাপাপ। অথচ, যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুপক্ষের মানুষ হত্যা করাটা অপরিহার্য। এহেন অবস্থায় একটা dilemma দেখা দেয়, মানুষ হত্যার জন্য সপক্ষের সেনাদল হয় পুরস্কৃত আর শত্রুদল ঘৃণীত। এখানে ব্যক্তি হিসেবে সেনাসদস্যরা অনিবার্যভাবেই তাদের নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যাবলী হারিয়ে গোষ্ঠী/দলের বৈশিষ্ট্যে পরিচিত হয়। কিন্তু ব্যক্তির আত্মপরিচয় নির্ধারণে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের বদলে দলীয় কর্মকান্ডের ভিত্তিতে উদ্ভূত বৈশিষ্ট্যের প্রাধান্য দেওয়া বাস্তবিক অর্থেই ভুল। আর এই সত্য আমাদের আশাপাশে পরিচিতজনদের দিকে তাকালে বোঝা কঠিন নয়।
আমাদের সকলেরই বেশ কিছু কাছের বন্ধু, সিনিয়র ও জুনিয়র আছেন বাংলাদেশ আর্মিতে, র্যাবে, পুলিশে। এদের অনেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে বা জাতিসংঘ মিশনে নানা দেশে নানা রকম প্রতিবেশে প্রশংসনীয় ভাবে “পেশাগত দায়িত্ব” পালন করেছেন। পাঠক, আমি বিশেষ করে খেয়াল করতে বলছি তাদের “পেশাগত দায়িত্ব” বিষয়টার প্রতি। তাদের পেশাগত দায়িত্বটা কি?- পার্বত্য চট্টগ্রামে এই দায়িত্ব হচ্ছে মুক্তিকামী কতিপয় ক্ষুদ্র ও দূর্বল জনগোষ্ঠিকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে রাখা, এবং তা’ প্রায়শঃই বল প্রয়োগের মাধ্যমে। আর্মি বল প্রয়োগ করলে তা’ কিরূপ হয়, সেটা আমাদের সকলেরই কমবেশি জানা আছে আশা করি। নির্বিচারে গুলিকরে হত্যা, গুমখুন, অপহরণ, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, ধর্ষণ, ইত্যাদি সবকিছুই থাকতে পারে বলপ্রয়োগের পদ্ধতির তালিকায়। আর এইসব মানবতাবিরোধী কাজগুলো করে আমাদের পরিচিতদেরজনদের মতো সেনারা, যারা যুদ্ধের বাইরে আমাদের আর সবার মতই স্বাভাবিক+সাধারণ মানুষ। যে র্যাব-অফিসার সন্ত্রাসীদের কাছে সাক্ষাৎ যমের মতো ভয়ঙ্কর, সেও বাস্তবিক আমাদের মতো সাধারণ মানুষ, সেও আমাদের মতো কবিতা-গান-উপন্যাস ভালোবাসে। যেই সেনা সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রামে দেশ-বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী গেরিলাদের নির্মূল করে পেশাগত দক্ষতায়, সে-ই আবার শান্তিমিশনে গিয়ে পাশ দাঁড়ায় বিপন্ন মানবতার। আমার যে বন্ধু র্যাব এ গিয়ে নিপুণ দক্ষতায় ‘সন্ত্রাসী’দের ক্রস ফায়ারে দেয়, তাকেও আমি নির্মম মানুষ হত্যাকারী হিসেবে নয়, জানি সন্তানের কাছে একজন স্নেহময় পিতা, স্ত্রীর কাছে দায়িত্ববান স্বামী, বাবা-মায়ের কাছে মুখ উজ্জ্বল করা সন্তান, আর আমাদের মাঝে জিগিরি দোস্ত হিসেবে। তাহলে, একই ব্যক্তি এভাবে একবার দানব আরেকবার নায়ক হচ্ছে যা’ যৌক্তিকভাবে অসম্ভব। প্রকৃতপক্ষে, যুদ্ধাবস্থার মধ্যে ব্যক্তি যা’ করে, তা’ তার ব্যক্তিগত দোষ-গুণ বা ইচ্ছা-অনিচ্ছার জন্য নয়, তা’ করে নিজস্ব পেশাগত দায় থেকে। অতএব, পেশাগত আঙ্গিকে যুদ্ধাবস্থার মধ্যে ব্যক্তির মূল্যায়ণ হতে হবে শুধুমাত্র পেশা-সংক্রান্ত বিষয়ের, যেমন সৈনিক হিসেবে সে চৌকশ কি না, অনুগত কি না, ইত্যাদি। তার ব্যক্তিগত দোষ-গুণ বা বৈশিষ্ট্যের বিচারের জন্য তাই যুদ্ধাবস্থার তথা পেশাগত জীবনের বাইরে সাধারণ মানুষ হিসেবে তার ব্যক্তিগত জীবনের কর্মকান্ড বিবেচ্য।
৫
১৯৭১ এ পাকিস্তানী হানাদার সৈন্যরা আমাদের চোখে হায়নার দল হিসেবে বিবেচিত। দলের বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে ব্যক্তিকে বিবেচনা করি বলে একক ভাবে এই বাহিনীর সৈন্যরাও আমাদের চোখে রক্তপিপাসু, ধর্ষক, বিকৃত-মস্তিস্ক, সাইকো, ইত্যাদি। তাদের সহযোগী ও সমর্থক হিসেবে রাজাকার, আলবদর, ইত্যাদিকেও আমরা স্বভাবতঃই ঘৃণা করি। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সমগ্র পাকিস্তান রাষ্ট্র এবং জাতিকেও ঘৃণা করি। কিন্তু সচেতনভাবে বিবেচনা করলে এই প্রক্রিয়া যথার্থ মনে হয়না। উপরের বক্তব্যের আলোকে এটা ধরে নেওয়া যায় যে, পাকিস্তানী বাহিনীর সকল সৈন্যই একইভাবে ঘৃণ্য বৈশিষ্ট্যের মানুষ নয়। তাদের মাঝে অনেকেই থেকে থাকবে যাদেরকে বাধ্য করে যুদ্ধে আনা হয়েছিল, অর্থ্যাৎ, তারা ব্যক্তিগত ভাবে বাঙ্গালী-বিদ্বেষের কারণে সেই যুদ্ধে যোগ দেয়নি। অনেকেই ছিল যাদেরকে হিন্দুদের হাত থেকে ‘মুসলমান’ ভাইদের রক্ষার নামে মিথ্যা বলে যুদ্ধে নিয়ে আসা হয়েছিলো এবং তাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে এসে তা’ না-দেখে বরং মুসলমানদের বিরুদ্ধে সেই যুদ্ধে অনীহা দেখিয়েছে [ইতিহাসের আহমদ হাসান স্যার ‘বালুচ রেজিমেন্টে’ অনেকের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি ঘটেছিল বলে বলেছিলেন]। আর যারা সেই যুদ্ধে অংশ নেয়নি এবং যারা ১৯৭১ এর পরে জন্ম নিয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে উল্লিখিত নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো আরোপ করা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। অতএব, জাতি হিসেবে সমগ্র পাকিস্তানীদেরকে দানব হিসেবে বিবেচনা করা অযৌক্তিক, এবং একারণেই, ভুল।
উপরে বর্ণীত কারণে আমি মনে করি সমগ্র পাকিস্তানীদের ঘৃণা করার মাধ্যমে নিজেদেরকে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক’ এবং সেইসাথে ‘পাকিমন-পেয়ারা’ নাম দিয়ে আরেক দলকে দেশদ্রোহী হিসেবে পরিগণিত করার এই চলমান প্রক্রিয়াটা প্রকৃতপক্ষে ভুল। কিন্তু তা’ সত্বেও এটা তৈরী হয়েছে এবং দিনদিন এর ব্যবহার বাড়ছে বই কমছে না।- কেন? এই বিষয় বুঝতে এডোয়ার্ড সাইদের ‘ওরিয়েন্টালিজম’ তত্ত্বটা বেশ খানিকটা সহায়কঃ ওরিয়েন্টালাইজিং এর প্রক্রিয়ার মধ্যে ক্ষমতাবান পশ্চিমা উপনিবেশবাদীরা ‘এসেন্সিয়ালী আদার’ হিসেবে প্রাচ্যের নানান অসভ্যতা-অসম্পুর্ণতা-অপারগতা গুলো বর্ণনা করার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে ‘সেলফ’ তথা পাশ্চাত্যের সভ্যতা-পুর্ণতা-সক্ষমতাকে ডিফাইন করার প্রয়াস পায়। একইভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পাক-হানাদার বাহিনীর সাথে তুলনা করে সমগ্র পাকিস্তানকে জাতি হিসেবে আমাদের বিরুদ্ধে চিত্রিত করা হয়; পাশাপাশি যারা তাদের প্রতি সহমর্মীতা পোষণ করে, বা যথেষ্ট ঘৃণা পোষণ না-করে তাদেরকে রাজাকার বা ‘ছাগু’ উপাধী দিয়ে নিগৃহীত করা হয়। ফলস্বরূপ, পাকিস্তান এবং তার দোসর রাজাকারদের প্রতি ঘৃণা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ণে কোনরূপ অগ্রগতি না-হলেও এই জুজু ভয় দেখিয়ে আমাদের নিজেদেরকেই একটা বিশেষ ধরণের নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হয়েছে। যেমন, বর্তমানের সরকারের কোনকিছুর সমালোচনা করলেই তা’ হয়ে যায় ‘যুদ্ধাপরাধী বিচার বিরোধী ষড়যন্ত্র’ আর সমালোচনাকারী হয় দেশদ্রোহী, রাজাকার। পাশাপাশি, পাকিস্তান রাষ্ট্র ইসলামকে ব্যবহার করে আমাদের নির্যাতন করেছে বলে এই ডিসকোর্সে ইসলামও দেশদ্রোহী। অতএব, দাড়ি-টুপি মানেই রাজাকার এবং মৌলবাদী সন্ত্রাসী। এভাবে, স্বাধীনতার স্বত্বাধিকারী আওয়ামীলীগের কোনরূপ সমালোচনাই দুরূহ হয়ে পড়েছে; পাশাপাশি তাদের বন্ধুরাষ্ট্র তথা ভারতেরও। আর তাই ট্রানজিট বা নদীর পানি বন্টন চুক্তি বিষয় সমালোচনাও দেশদ্রোহীতার সমান হয়ে উঠেছে।
অতএব, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী বনাম পাকমন-পেয়ারা’ ডিসকোর্স মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাস্তবায়ন ত’ করছেই না, সেই চেতনাকে যথার্থভাবে ডিফাইন করা এবং সেই অনুযায়ী আমাদের জাতীয় স্বার্থ নির্ণয় ও তা’ অনুসরণের পথেও বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে। এই ডিসকোর্স মূলতঃ আমাদের আপামর জনতার উপর ক্ষমতাবানদের নিয়ন্ত্রণের একটা হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে যা’ রাষ্ট্রের একজন স্বাধীন নাগরিক হিসেবে সরকারের কার্যক্রমের সমালোচনা করার অধিকার পর্যন্ত হরণ করে।
মাহমুদ ভাই, বেশ অনেকদিন পর সিসিবিতে লিখলেন। সম্ভবতঃ একাডেমিক ব্যস্ততাই এর কারণ হবে।
আপনার দীর্ঘ লেখাটি পড়লাম। একজন একাডেমিক বিশ্লেষকের যেমন কোন কোন সময় ভাবালুতা কিংবা আবেগের উর্ধ্বে উঠে ঐতিহাসিক কিংবা সমসাময়িক ঘটনাপঞ্জীর নির্মোহ বিশ্লেষনে যেতে হয়, আপনাকেও বোধকরি সেই পথে হাটার তাড়নাই লেখাটি লিখতে প্রভাবান্বিত করেছে। মোটাদাগে আমাদের স্বদেশিদের মধ্যে 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী বনাম পাকমন পেয়ারা ছাগুসুলভ' ট্যাগিংটির অতি এবং নির্বিচার প্রয়োগের নেগেটিভ ইম্প্যাক্টটার দিকে আপনার ইঙ্গিতের সাথে একমত। তবে এই নির্বিচার এবং ক্ষেত্রে বিশেষে কখনও কখনও অযৌক্তিক ট্যাগিংটির দিকে আঙ্গুল তুলতে গিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড স্টাডি এবং উদাহরণগুলোর প্রতি কেন যেন কোনভাবেই একমত হতে পারছিনা। হয়তো বুঝিয়ে বলতে পারবোনা, কিংবা আমি যা বুঝি সেটি আমার অগভীর চিন্তাভাবনার আউটকাম হতে পারে, কিন্তু নিজের কাছে কিভাবে কিভাবে যেন বেটার ফিল হয় এভাবে ভাবি বলে। ভুলও হতে পারি। ধরিয়ে দিবেন নিশ্চয়ই।
১. ভিয়েতনাম যুদ্ধের সাথে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটি মৌলিক পার্থক্য আছে। অনেক দূরের সম্পূর্ণ ভিন্ন জাতিগোষ্ঠির সাথে যুদ্ধ, আর নিজের দেশেরই আরেকটি অংশের যেখানে বেশিরভাগই একই ধর্মানুসারী এবং সবদিক থেকেই নিরীহ দলিত একটি গোষ্ঠির কন্ঠরোধ করার যুদ্ধ কিছুটা হলেও আলাদা। জিনিসটা কিছুটা এমন, আমরা যেমন আমাদের পরিচিত আত্মীয় কেউ চুরিতে ধরা পড়লে যেমন দুটো চড় দিয়েই হয়তো ছেড়ে দেবো, কিন্তু রাস্তায় একটা অপরিচিত ছিনতাইকারীকে পিটিয়ে মেরেই ফেলবো এই রকম। ভাবতে খারাপ লাগলেও এটাই আমাদের চরিত্র। এটাই স্বাভাবিক। নিজেরদেশের বলে যাদের ভাবি তাদেরকে যে অন্যায়ে চড় দেবো, অন্যকে হয়তো একই অন্যায়ে গুলি করে বসবো। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় কি দেখলাম আমরা? একই দেশের নাগরিকের উপর বিভৎস উন্মত্ততায় ঝাপিয়ে পড়া একদল পশুকে, ধর্মের দোহাই দিয়ে কি ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিলো পাকিস্তানি আর্মি আর তাদের দেশিয় দোসর সাইদি নিজামীরা! প্রায় বিশ বছরব্যাপি একটি যুদ্ধে যেখানে সর্বোচ্চ ধরা হয়ে থাকে ২৫ লক্ষ মৃত্যুর, সেখানে মাত্র নয় মাসে ত্রিশ লক্ষ মেরে কেটে সাফ!
২. আপনি এই ভিয়েতনাম যুদ্ধ ফেরত আর্মি অফিসারদের ভিয়েতনামের জন্য পরে জীবন উৎসর্গের কথা বললেন, ভাই কয়টা পাকিস্তানি আর্মি এমন করেছে? জীবন উৎসর্গ বাদ দেই, কয়টা স্বীকার করেছে যে তারা পৃথিবীর সবচে জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞের সাথে জড়িত হয়েছিলো তাদের ইন্সটিটিউশনাল কমিটমেন্ট থেকে কিংবা বাধ্য হয়ে?? একগাদা বইতো লিখেছে বেশ কয়েকজন, কই কারও কাছ থেকেতো এরকম একটা টু শব্দ পর্যন্ত পেলামনা? হয়তো সামান্য দুই একজন আহা উহু এতোটা ঠিক হয়নি পর্যন্ত বলে থাকতে পারে, তবে সেটিও ব্যালান্স করার ধূর্তামি থেকেই বলে থাকবে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর কিংবা সময় মার্কিন ছাত্র শিক্ষক জনতার সেই যুদ্ধের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসার কথা বললেন, ভাই, কয়টা পাকি শিক্ষক জনতা ছাত্র রাস্তায় নেমে এসেছিলো একটু বলবেন? কিংবা এখন এই যুদ্ধ পরবর্তী জেনারেশন এই ইন্টারনেটের যুগে সব নিজেরা জেনে বুঝে নিজেদের মানসিকতার কি পরিবর্তন দেখিয়েছে একটু দেখাতে পারবেন? মাহমুদ ভাই, পাকিদের ইন্টারনেট ফোরামগুলোতে গেলে দেখবেন কি ভয়াবহ মানসিকতা নিয়ে এই জেনারেশনের পাকি ছাত্র জনতা ঘুরঘুর করছে! হামিদ মীরের সামান্য মাথায় হাতবুলানো কলাম যদি পাকিস্তানী ছাত্র শিক্ষক জনতার উপর থেকে ঘৃণার পরশ তুলে দেয় তবে আমার কিছু আর বলার নেই।
৩. আমাদের খুব কাছের যে বন্ধুটি 'পেশাগত দায়িত্বের' খাতিরে পাহাড়ে আমাদেরই দেশের নাগরিক আদিবাসীদের সাথে পাকিস্তানি আর্মি সুলভ কিংবা তার চেয়েও ভয়াবহ অন্যায়ে লিপ্ত রয়েছে, আমার বরং আশংকা হয় এদের নিয়েই। মানতে চাই বা না চাই, পাকিস্তানি খাসলত অনেক ক্ষেত্রেই আমরা বয়ে চলেছি আমাদের চরিত্রে। 'পেশাগত দায়িত্বের' খোলস যখন আজকের একজন সুশিক্ষিত এবং বিবেকবান তরুণের মগজ সেই আদিম পাকিস্তানি বর্বর সেনাটির সাথে কোন পার্থক্য রাখতে শেখায়না, কিংবা ইন্সটিটিউশনাল মোটিভেশন যখন আমাদেরই জিগরি দোস্তটির সাথে একাত্তরের পাঠান হানাদারের সাথে তার কোন পার্থক্য রাখেনা, তখনই বরং আমি ভয় পেতে থাকি। এবং দিনের পর দিন পাহাড়ি অসহায় মানুষগুলোর উপর অবর্ননীয় অত্যাচার যখন পেশাগত দায়িত্ব এবং 'আমরা ওইখানে বছরের বছরের পর ডিউটি করি, আমরা জানি পাহাড়িরা কি জিনিস' এই দিয়ে আমাদের জিগরি দোস্তরা হালাল করে তখন কষ্ট হলেও বুঝতে পারি, আমরা আমাদের দুষিত পাকিস্তানি লেবেল এখনও দূরে উড়িয়ে ফেলতে পারিনি।
৪. নির্বিচারে অযৌক্তিক ট্যাগিং সব বিষয়েই জোর করে টেনে এনে লাগিয়ে দেয়াটা অবশ্যই খারাপ। তবে অদি আপনি জাতিগত ঘৃণার স্বরূপ এখানে পাকিস্তানিদের সবাইতো আর খারাপ নয়, সবাইতো আর মানুষ মারেনি বলে একাডেমিক যুক্তির বিচারেও সরিয়ে ফেলতে বলেন, তবে ভাইয়া দুঃখিত। হয়তো আমি না বুঝেই এই ঘৃণা বয়ে চলেছি, হয়তো অনেক নিরীহ 'ভালো মানুষ পাকিস্তানি' আমার এই ঘৃণার লক্ষ্যবস্তু হবে, কিন্তু কিছু করার নেই। আমি জানি আমার মতো আরও অনেকেই এই বিজাতীয় ঘৃণা লালন করে যাবেন আজীবন। এবং একই ঘৃণা থাকবে পাকিস্তানি মানসিকতার এদেশিয় একাত্তরের রাজাকার এবং একই রকম মানসিকতা লালনকারি যুদ্ধোত্তর রাজাকার প্রজন্মের প্রতিও।
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
খুব ভালো লাগল তোমার ক্রিটিকাল মন্তব্য পেয়ে।
অনেকক্ষন সময় নিয়ে তোমার মন্তব্যের উত্তর লিখলাম, ঠিক পোষ্ট করার মূহূর্তে মুছে গেল :bash: । আর ঘন্টা দুয়েক ধৈর্য ধরো।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
wow, দুই পুরান পাপী দেখি ব্যাক-টু-ব্যাক সেঞ্চুরী মারলো :hug:
লেখা কমেন্ট কোন্টাই পড়তে পারি নাই 😀 তাতে কি, দুইটাই অতি উচ্চ মার্গের হইছে, তাই দুইজনেরই ১০০ তে ৯৯ দিলাম। বাকী কিছু হবে আফটার-দ্য-লাইটস অফ 😀
=))
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
কাইয়ুম,
তোমার দ্বিমতের বিষয়গুলোতে আরো অনেকেই আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করে তা' আমি অনুমান করতে পারি। কাজেই, তোমার মন্তব্যের উত্তর লিখার সময় তাদের কথাও মাথায় রাখছি। এবার তোমার মন্তব্যের ক্রমানুসারে আমার উত্তরগুলো দেওয়ার চেষ্ট করিঃ
১। ভিয়েতনামের সাথে বাংলাদেশের যে মৌলিক পার্থক্যের কথা বলেছো, সেটা সঠিক নয়। বাংলাদেশ কোনভাবেই পাকিস্থানের অংশ নয়, ছিলও না। পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের ভৌগলিক পার্থক্য প্রায় ১২০০ মেইল, আর সামাজিক-সাংস্কৃতিক পার্থক্যও অনেক। শুধুমাত্র ধর্মের মিল (তা-ও আবার সেখানে নানা মৌলিক+প্রায়োগিক পার্থক্য বিদ্যমান) দেখে এই দুই অঞ্চলকে নিয়ে একটা রাষ্ট্র গঠন করাটা ছিলো নিঃসন্দেহে একটা 'ব্যর্থ পরীক্ষা'। আর সম্পূর্ণ পেশাদার পাকিস্তানী (বিশেষ করে পাঞ্জাবী) সেনাবাহিনীর কাছে বাংগালীরা
একই দেশের নাগরিক ছিলনা, কখনোই না। কাজেই, আমেরিকানদের কাছে ভিয়েতনামীরা যেমন অপরিচিত-অনাত্মীয় ছিল, পাক বাহিনীর কাছে বাংগালীরাও তা-ই। কাজেই, তাদেরকে আত্মীয়-জ্ঞান করার মাধ্যমে শুধুমাত্র 'ডেমোনাইজ' করা যাবে, তাদের প্রকৃত স্বরূপ বোঝা হবে না।
২। প্রথম কথা হচ্ছে, পেশাদার সেনারা শারীরিক+মানসিকভাবে প্রশিক্ষিত থাকে বলে তাদের মাঝে প্রকাশ্যে অনুতাপ করা এবং/অথবা নির্যাতিতদের জন্য সহায়তা করার তুলনায় এই প্রবণতা বেশি দেখা যায় যেসব সেনারা নিয়মিত বাহিনীর নয়, বরং যুদ্ধের সময় ড্রাফটিং এর মাধ্যমে যাদেরকে রিক্রুট করে ও সামান্য প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়। ভিয়েতনামের যুদ্ধে এদের মধ্যেই এই প্রবণতা বেশি দেখা গেছে; আর এই জাতীয় সৈন্যের সংখ্যাও ছিল অনেক, নয় লক্ষেরও অধিক। যুদ্ধ-ফেরত সৈন্যদের মাঝে এই যে অনুতাপ ও নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ানোর প্রবণতা, তা' কিন্তু সেনাবাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর বিরুদ্ধে গিয়েই। আমেরিকার সেনা-সদর সব সময় এই জাতীয় 'অ-পেশাদার' সৈন্যদের অপেশাদারী কার্যকলাপকে কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করেছে। একারণে, সেনাবাহিনীর কাছ থেকে 'মাই লেই' জাতীয় ঘটনা ধামা চাপা দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছিল যা'র কারণে এটা প্রকাশ পায় দুই বছরেরও বেশি সময় পর। আসলে শুধু ভিয়েতনাম যুদ্ধে নয়, এখনকার ইরাক-আফগানিস্তান যুদ্ধের সময়ও সেনা-নেতৃত্ব একই রকম ব্যবহার করেছে (যেমন, ইরাকী বন্দীদের উপর নির্যাতনের ছবিগুলোর কাহিনী)। আর শুধু আমেরিকার সেনাহাবিনী নয়, আমাদের সেনাবাহিনীও এইসব বিষয়ে একই রকম ব্যবহার করে (যেমন, সাজিক ইউনিয়নে উপজাতীদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেওয়ার কাহিনী।
আমেরিকার জনগণের যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে নামার প্রধান কারণ ছিলো তাদের চারিত্রিকভাবে মানবতাবাদীতা নয়, বরং তারা সেই যুদ্ধে সরাসরি নিজেরাও
'আক্রান্ত' হয়েছিলো বলেঃ আমেরিকায় সেসময় সমর্থবান সকল পুরুষকে বাধ্যতামূলক ভাবে সেনা বাহিনীতে অন্তর্ভূক্ত করে ভিয়েতনামে পাঠানো হচ্ছিল। এই ভয় এতটাই ব্যাপক আকার নিয়েছিলো যে, হাজার হাজার আমেরিকান সেসময় ড্রাফটিং এড়াতে পার্শ্ববর্তী কানাডা ও মেক্সিকোতে আশ্রয় নিয়েছিল। স্কুল আর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্রদেরকে ড্রাফটিং এর আওতামুক্ত রাখা হয়েছিলো বলে অনেকে আবার নিয়মিত ছাত্রত্ব গ্রহন করেছিলো। ভিয়েতনাম যুদ্ধ যত দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছিল, আমেরিকার অর্থনীতিও ততোটাই ক্ষতিগ্রাস্থ হচ্ছিল, আর সাধারণ জনগণকে ড্রাফটিং এর মাধ্যমে যুদ্ধে পাঠানোর প্রায়োজনও ততোই বাড়ছিল। ফলে, সাধারণ জনগণের মাঝে যুদ্ধবিরোধী মনোভাব+আন্দোলন
বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এর কোনটাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটেনি। পাকিস্তান মূলতঃ যুদ্ধ চালিয়েছে তাদের নিয়মিত সেনাবাহিনী দিয়ে। পাকিস্তানের সাধারণ জনগণ যেহেতু আমেরিকানদের মতো সরাসর এফেক্টেড হয়নি, তাই তারাও নৈতিকভাবে এই যুদ্ধে সক্রিয় হয়নি। কাজেই, সাধারণের মাঝে যুদ্ধ বিরোধীতা ছিলোনা মানে এই নয় যে, তারা এটাকে গণ হারে সমর্থন দিয়েছিল। ইন ফ্যাক্ট, সেসময় এবং তার পরেও দীর্ঘকাল পাকিস্তান শাসিত হয়েছে সামরিক স্বৈরশাসকদের হাতে যারা গণমতে কোন পরোয়া করেনি।
পোষ্টে আমার বক্তব্য ছিলো যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির চরিত্র নির্ণয়ের social psychological কারণ খোঁজা+তার মাধ্যমে মূল্যায়ণ, তা যে যথেষ্ট যুক্তি+তথ্যহীন সেটা দেখিয়ে দেওয়া।
৩। পৃথিবীর সকল দেশ, সব যুগেই আর্মি গঠন+প্রশিক্ষণ+পালন করে আসছে দেশের 'শত্রু' মোকাবেলা করার জন্য। আর সব দেশের আর্মিই এই পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, গুম-খুন, জ্বালাও-পোড়াও ইত্যাদি পদ্ধতি অনুসরণ করে; এবিষয়ে পাকিস্তানী আর্মি বা আমাদের আর্মি কেন, সকল আর্মিই এক। ইন ফ্যাক্ট, শত্রু নির্মূল করাই আর্মির পেশাগত দায়িত্ব যেমন রোগীর সেবা করা নার্সের দায়িত্ব। নার্স যেমন পেশাগত তাগিদে রোগীর প্রতি মমতাপূর্ণ, আর্মি ঠিক তেমন করেই শত্রুর বিরুদ্ধে নির্মম। কাজেই, পার্বত্য চট্টগ্রামে কি কি কাজ করছে সেই দিক থেকে আমাদের সেনাদের ব্যক্তিগত চরিত্র বিচার করা আমি সঠিক মনে করিনা। অতএব, আমাদের বন্ধু+পরিচিত সেনাদের নিয়ে আমি এখনো চিন্তার কোন কারণ দেখিনা বা তাদেরকে দোষী ভাবিনা। কেন, সেটাও এই পোষ্টের মূল বক্তব্যে আছে।
৪। "হয়তো আমি না বুঝেই এই ঘৃণা বয়ে চলেছি, হয়তো অনেক নিরীহ ‘ভালো মানুষ পাকিস্তানি’ আমার এই ঘৃণার লক্ষ্যবস্তু হবে, কিন্তু কিছু করার নেই। আমি জানি আমার মতো আরও অনেকেই এই বিজাতীয় ঘৃণা লালন করে যাবেন আজীবন।"- মনে হচ্ছে, আমার বক্তব্য খানিকটা ধরতে পেরেছো যে, একটা আগ্রাসনমূলক যুদ্ধ দিয়ে সমগ্র জাতিকে বিচার করা যে অযৌক্তিক+ইমোশনাল ব্যাপার। (সম্পাদিত)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মুসলমান মুসলমান কইরা আমরা মরলাম।
সামনে হয়তো আরও খারাপ দিন আসতেছে।
সোহরাওয়ারদি, ফযলুল হক আর আমাদের পূর্বপুরুষদের অদূরদর্শিতার ফল গুণতে হচ্ছে এখন আমাদের। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ যেমন ভুল ছিল, ঠিক তেমনি ১৯৭১ এর ভারতভাগ ছিল ভুল। দোষ আমাদের পূর্ব পচশিম দুই বাংলার হিন্দু মুসলিম নেতাদের। নয়ত এই অঞ্ছলে সব্দিক দিয়ে ১ নম্বরে থাকতো বাংলা, বা বঙ্গ।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
কি রে, কি অবস্থা?
- আসলে পাকিস্তানীরা মুসলমান বলে নয়, মানুষ বলেই ওদেরকে ঘৃণা করতে পারিনা, যেমন পারিনা আমাদের সেনাবাহিনীর কর্মকান্ডের জন্য নিজেদের ঘৃণা করতে।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
৪ নম্বরের শেষ বাক্যে একটা ছোট্ট সংশোধনী আছেঃ
জন্যঃ social psychology
পড়ুনঃ psychology
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আমার কাছে আজকাল অনেক কিছুই মনে হয়- "অ্যাবস্ট্রাকশান ঝামেলা"। অনেকদিন পর লিখলেন ভাইয়া। মন্তব্য আলোচনা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
মাহমুদ ভাই, কেমন আছেন? অনেকদিন বাদে। 🙂
লেখাটা ভাল লেগেছে। তথাকথিত ঝগড়াঝাটি ও মিথ্যা-ইতিহাসের কপচানির জঞ্জাল সরিয়ে একটা যুক্তিগ্রাহ্য গোছানো লেখা।
তবে, লেখাটিতে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী বনাম পাকমন পেয়ারা ছাগুসুলভ’ যে গ্রুপিং - তার বাইরে একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কথা আসে নি; এরা মূলত সংখ্যায় বেশি এবং একটি ধূসর এলাকায় অবস্থান করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার পাশাপাশি বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার (যে দলই হোক না কেন) ও দূর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে কথা বলে। রাজাকার ও পাকিস্তানিদের পাশাপাশি ভারতের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধেও কথা বলে। এই গ্রুপটিকে বাকি দুই গ্রুপ (আওয়ামিপন্থি-মুক্তিযুদ্ধব্যবসায়ী ও জামাতপন্থি-ছাগু) বারবার বিরোধিপক্ষ বলে বিবেচনা করে। এদের উল্লেখ ছাড়া এই আলোচনা ব্যর্থ হবে।
মুক্তিযুদ্ধ-চেতনার সাবসেট পাকিঘৃণা। মূল চেতনার বড়ো অংশ একটি সুখি, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ে তুলবার স্বপ্নকে আমি মৃত মনে করি। আমি মনে করি পৃথিবীতে বাংলাদেশ একটি জনবসতিপূর্ণ গরীব বস্তির ভূমিকা পালন করছে এবং এর অবনতি ছাড়া উন্নতির সম্ভাবনা ক্ষীণ। বস্তি হওয়ার কারণে যতো ধরণের সমস্যা থাকা সম্ভব, সবই তার আছে। উটকো সমস্যা হলো ধর্মপরায়ণতার নামে পশ্চাদপদতা, কূপমণ্ডুকতা ও অলসতা। এতো এতো নেতির ভীড়ে চেতনার ইতিবাচক অংশটুকু হারিয়ে গেছে। টিকে আছে ক্ষোভ (মূলত তা অক্ষম ও আশাহতের ক্ষোভ - জ্বালায় দিমু পুড়ায় দিমু কিন্তু ক্যামনে তা জানি না)। এই ক্ষোভের সাবসেট দিয়ে মূল চেতনাকে চেনা কঠিন। তবে এই সাবসেটটি জরুরি, অনেকক্ষেত্রে একমাত্র অবলম্বন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের ব্যাপারে দুয়েকটা বই আর ছবি দেখা ছাড়া আমার বিশেষ জ্ঞান নাই। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের সাথে তুলনা হিসেবে এসেছে, তাই কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গা মিলিয়ে দেখতে চাই। কারণ তুলনা করতে গেলে এই অংশগুলো মিলতেই হবে।
ক) আমেরিকার মতো পাকিস্তানও কি আর্মি বাদে সাধারণ জনতাকে রিক্রুট করেছিল? তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি সাধারণ জনতার মনোভাব কি একই রকম বিদ্বেষপূর্ণ ছিল না? বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কি হিন্দুয়ানি ও নাপাক-মুসলিমের প্রদেশ হিসেবেই তারা তুলে ধরে নাই?
খ) যুদ্ধ চলার সময় আমেরিকায় লেখক-কবি-গায়ক-অভিনেতা ও ছাত্রসমাজ ব্যাপক প্রতিবাদ করেছিল। পাকিস্তানের সুশীল ও ছাত্র সমাজের ১৯৭১-এর প্রতিবাদ নাই। কেন?
গ) স্যারের প্রতি যথাবিহিত সম্মান রেখেই বলতে চাই যে পাকি আর্মির মাঝে হত্যা-করতে-চায়-না-ধর্ষণ-করতে-চায়-না অফিসার বা সেপাই ছিলো বলে কোন ডকুমেন্টেশন নাই। এক-দুই জন মানুষের ব্যক্তিগত জবানি (যা নির্ভরযোগ্যতা পায় না তার অবস্থান বা মোটিভ নৈর্ব্যক্তিক নয় বলে) পাওয়া গেলেও ভিয়েতনামের মাইলাইয়ের সাথে একাত্তরের এই দিকে মিল নেই। নাকি?
ঘ) ভিয়েতনামে আমেরিকার করা গণহত্যার বিচার কি হয়েছে? এই বিচারপ্রক্রিয়ার সাথে আমাদের বিচারপ্রক্রিয়ার পার্থক্য বা মিল আছে কি?
আন্দালিব,
আনেকদিন পরে দেখলাম ব্লগে :shy: ।
আগে তোমার দ্বিমতের পয়েন্টগুলো ক্লিয়ার করি।-
ক আর খ এর উত্তর আশা করি কাইয়ুমের মন্তব্যে আমার উত্তরে পেয়ে যাবে। মূল কথা হল, আমেরিকার জনগণের মাঝে যুদ্ধের বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য 'বস্তুগত' ভিত্তি তৈরী হয়েছিল যা' ১৯৭১ এ পাকিস্তানে অনুপস্থিত ছিল।
গ। 'পাকিস্তানী সেনারা ধর্ষন করবো না, হত্যা করবো না' এমন জোড়ালো নেই, আর স্যারের রেফারেন্স দিয়ে আমি সেটা বোঝাতেও চাইনি। আমি যেটা বলতে চেয়েছি তা হলো হিন্দুদের হাত থেকে মুসলমানদের রক্ষার মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে যাদেরকে যুদ্ধে আনা হয়েছিল, তারা সেটা বাস্তবে না দেখে প্রশ্ন করতে শুরু করেছিল। আর এর মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছি যে, যুদ্ধ আরো দীর্ঘস্থায়ী হলে, মিথ্যা বয়ানের মাধ্যমে যুদ্ধে নিয়ে আসা সৈন্যসংখ্যা আরো বেশি হলে ভিয়েতনাম যুদ্ধের মতো ঘটনা আমরা এখানেও দেখতে পেতাম। তবে এই পয়েন্টটা ছাড়াও আমার পোষ্ট থেকে বুঝতে পারার কথা যুদ্ধে নামা+ধ্বংসলীলা কেন সৈন্যদের চারিত্রিক ব্যাপার নয়, তা' সে যেকোন দেশের আর্মিই হোক, আমেরিকান, পাকিস্তানী বা বাংলাদেশী। আর যুদ্ধবিরোধীদের থেকে কোন তথ্য না-থাকার একটা কারণ হলো সেসময়কার আমেরিকা ছিলো গণতান্ত্রিক+মতপ্রকাশের অধিকার একটা স্বীকৃত নাগরিক অধিকার, অর্থ্যাৎ, নিজ সরকারের বিরুদ্ধে যাবার সামর্থ তাদের ছিল। আর তাদের কারণও ছিল সরকারের বিরুদ্ধে যাওয়ার (তারা সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল)। এই দু'য়ের কোনটাই ছিলনা পাকিস্তানের জনগণের মাঝে।
এখন কাইয়ুমের মতো একটা প্রশ্ন করতে পারো যে, পাকিস্তানীরা ত' এখনো অনুতাপ করেনা? ইন্টেরনেটে পাকিস্তানীদের বর্তমান প্রজন্ম ত' বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায়? - এর কারণ হচ্ছে, তাদেরকে শাসকরা ১৯৭১ এর প্রকৃত ইতিহাস জানাচ্ছে না। তাদেরকে জানানো হচ্ছে যে মূলতঃ ভারতের ষড়যন্ত্রের ফলে তাদের 'ভাইরা' আলাদা হয়ে গেছে। অর্থ্যাৎ, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কোনো শোষণ+বঞ্চনা+নির্যাতনের জন্য হয়নি। ভারতের সাথে পাকিস্তানের অবিরাম সীমান্ত-সংঘাত এবং ভারতকর্তৃক ১৯৯৭১ কে ইষ্টার্ণ ফ্রন্টে বিজয় হিসেবে উদযাপণ এই বয়ানকে আরো বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। আর এইসব পাকিস্তানীদের ইন্টারনেট ঘৃণা দেখে যদি মনে করি জাতগত ভাবেই পাকিস্তানীরা খারাপ এবং সেজন্যই তারা এসব করছে, যেমন তাদের পূর্বসূরীরা করেছিল ১৯৭১ এ, তাহলে ভারতীয়দের মাঝেও ত' ব্যাপকপভাবেই দেখা যায় বাংলাদেশের প্রতি অনুরূর ঘৃণা; একে কিভাবে দেখবে? ভারতীয়দের পূর্বপুরুষরা ত' আমাদের সাহায্য করেছিলো। পাকিস্তানীদের ক্ষেত্রে যুক্তি সঠিক ধরলে ভারতীয়দের ত আমাদেরকে প্রমোট করার কথা। প্রকৃতপক্ষে, পাকিস্তানী বা ভারতীয়দের ইন্টারনেটে প্রচারিত 'বাংলাদেশ বিদ্বেষ' তাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্যের যথাযথ পরিমাপক নয়।
ঘ। ভিয়েতনামের গণহত্যার বিচার হয়েছে, তবে তা' প্রহসন মাত্র। মাই লেই ঘটনার জন্য মাত্র একজন লেফটানেন্টকে দায়ী করা হয়েছিলো, তা-ও আবার ২২টি হত্যার জন্য। শাস্তি হয়েছিল আজীবন 'গৃহ বন্দিত্ব' যা' আবার আমেরিকার দেশপ্রেমিক প্রেসিডেন্ট তিন বছর পর মাফ করে দিছিলেন!!! যুদ্ধক্ষেত্রের কর্মকান্ডের দায় নির্ধারণ প্রায়শঃই দুরূহ, কেন তা' আমার উল্লিখিত তত্ত্বে বর্ণনা করা আছে। ফলে সেসব ঘটনার (শুধুমাত্র গণহত্যাই নয়) বিচার যা' হয়, তা' আসলে ধামাচাপা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। ইতিহাসে এরূপ উদাহরণ আছে অসংখ্য। যেমন, অধুনা ইরাক যুদ্ধের ঘটনাগুলো, পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদের সেনাবাহিনীর ঘটনাগুলো।
-ইদানিংকার ব্লগসমূহে চলমান ভার্চুয়াল মুক্তিযুদ্ধ যা' অনেকাংশে আমার উল্লিখিত ডিসকোর্স তৈরী করছে, এই অংশের উপর তা'র প্রভাব নিয়ে ভাবতে বসেই আমার এই পোষ্ট লিখা।
বলেছো "মুক্তিযুদ্ধ-চেতনার সাবসেট পাকিঘৃণা।"- একমত। তবে ভেবে দেখো, এর বাস্তব প্রভাবটা কি? এটা যে একটা বাউন্ডারী-মার্কার হিসেবে দেশপ্রেমীক আর রাজাকার নামে দুইটা মোটাদাগের বিভাজন তৈরী করছে সেটাও ত ঠিক। এমতাবস্থায়, ক্ষমতাবানরা এই বাউন্ডারী মার্কারকে ব্যবহার করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে এবং ব্যবহার করছেও। কিন্তু সেটা কি উদ্দেশ্যে? সেটা ত' "মূল চেতনার বড়ো অংশ একটি সুখি, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ে তুলবার স্বপ্নকে" চিত্রায়ন+পালন+বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে না, হচ্ছে একটা সংকীর্ণ গোষ্ঠী/দলীয় স্বার্থে। ইনফ্যাক্ট, এই ভার্চুয়াল মুক্তিযুদ্ধ এবং উল্লিখিত ডিসকোর্স অনিবার্যভাবেই আরেকটা সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দিচ্ছে যা' এই প্রক্রিয়ায় জড়িতদের কাছে ইপ্সিত ফলাফলের ঠিক উল্টো। (সম্পাদিত)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
পাকিস্থানীরা জাতিগত ভাবেই উংচ্ছৃখল এবং নৃশংস, সবাই হয়তো নয়, কিন্তু একটা জাতির ৯০ ভাগ লোক যদি এরকম হয়, তবে কি বলা যায় না যে এরা জাতি হিসেবেই ভয়াবহ নিষ্ঠুর।
বেলুচ রেজিমেন্ট মাথায় আছে, কিন্তু তাঁর আগে তাদের ক্ষমা চাইতে হবে এবং ক্ষতিপূরন দিতে হবে। এর পরে আমরা ভাববো বেলুচ কি করেছে বা করেনি।
আওয়ামী নিজের স্বার্থে এসব করছে, এই একটাই ইস্যু যদি জমে যায় তাহলে হয়ত আবার জিতবে তারা, জামাত বিএনপিকে সামনে রেখে বাচার চেস্টা করছে, অন্য ইস্যুকে সামনে আনছে কিন্তু মোটা দাগে ব্যাপারটা হচ্ছে আওয়ামী ছাড়া বিচার হবে না, এবং জনগন শুধু মাত্র এই একটা কারনে আওয়ামীকে পরের বার ভোট দিবে না। মানেটা পরিস্কার সামনে।
আন্দালিবের গ্রে ম্যাটারও মাথায় আছে। সবই আসলে সময়ের প্রয়োজন, কোনটা কখন প্রায়োরিটি পায়, এটা আবার বদলেও যায়, এজাইল।
তবে কি করে ভুলি বল, '৭১ এর কথা, মানুষ তো আমি, গোল্ডফিশ না
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ফয়েজ ভাই,
পাকিস্তান কি একক সত্বার একটা জাতি ছিলো ১৯৭১? বা এখনো কি হয়ে উঠতে পেরেছে? আর পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ছাড়া আর কাদের কে আমরা দেখেছি ১৯৭১ এ? সেই সেনাবাহিনী কি পুরো দেশের রিপ্রেজেন্টেশন ছিল? অর্থ্যাৎ, সেই সেনাবাহিনীকে দেখে কি এটা অনুমান করা যায় যে সেই দেশের ৯০% ভাগ জেনে ফেলেছি?- আসুন, এই প্রশ্নগুলো আলোচনা করি আপনার কনক্লুশানগুলোতে যাবার আগে।
- ১৯৭১ সম্পর্কে আমাদের জানাটাকেই ফিরে দেখতে অনুরোধ করছি। যদি বলে বসেন, ইতোমধ্যেই যথেষ্ট জেনে ফেলেছি, তাইলে আর কোন কথা নাই (ঐতিহাসিক ডঃ জা ইকবালের বইয়ের রেফারেন্স দিবেন না কিন্তু 😛 )। আমি মনে করি, এপর্যন্ত খুব কমই জেনেছি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ।
মানুষ বলে আমরা মনে রাখি, কিন্তু শুধুমাত্র মানুষ বলেই সবটুকু জেনে যাই না। আর, পুরোটা না-জানা হলে ত' ভোলার প্রশ্নই আসেন না 🙂
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
পাঞ্জাব, পাঠান রা কখনও আলাদা হতে চেয়েছে শুনিনি। বেলুচরা আলাদা রাস্ট্র চাচ্ছিল, এখন কি অবস্থা জানি না। তুমি বৃহৎ একটা জাতিকে ভেংগে ভেংগে আগাচ্ছো। কিন্তু কতটুকু ভাংবে?
আদি সিলেটি বা আদি চিটাগাংনিয়ান এর থেকে উত্তর দক্ষিনের কালচার অনেকটাই আলাদা, অনেক আলাদা পুরান ঢাকার মানুষের রীতিনীতি, তাই বলে তারা কি বাংগালী নয়?
শুধু সেনাবাহিনীর কথা আমি কোথাও বলিনি। আমি পুরো পশ্চিম পাকিস্থানীদের কথা বলেছি। ৭১ এর নয় মাস তারা কি করেছে আমাকে দেখাও। সেনাবাহিনী এবং রাজাকাররা যখন আমাদের ধরে ধরে হত্যা করেছিল, তখন পশ্চিম পাকিস্থানের শিক্ষক-বুদ্ধিজীবি-কবি-কেরানীরা কি করছিল? রেফারেন্স দাও, দেখি নতুন কিছু পাই কিনা।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আপনি সেনাবাহিনীর সাথে পুরো দেশের জনগণকে এক করে দেখছেন- এর ভিত্তি কি? (১) তা-ও আবার এমন একটা রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে যেখানে 'জাতীয়তাবাদ' বিষয়টা কি সেটাই স্পষ্ট হয়নি সেসময়। (২)এথনিসিটি আর ন্যাশনালিজমকেও মনে হচ্ছে এক করে দেখছেন আপনি। সিলেট, চট্টগ্রাম আর ঢাকার মধ্যে স্থানীয় কিছু কালচারাল পার্থক্য থাকলেও এরা সবাই একই এথনিসিটির- বাঙ্গাল; বাংলাদেশের ৯৬%-৯৭% জনগণ একই এথনিক গোষ্ঠির মানুষ। একই এনালজি পাকিস্থানের ক্ষেত্রে (ইন ফ্যাক্ট, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের ক্ষেত্রেই) অচল। (৩) তদুপরি, ১৯৭১, তার আগে ও পরে পাকিস্থানের মিলিটারী সরকার ছিল যারা গণমতের কোন পরোয়া করেনি। কাজেই, সরকারের কার্যক্রম তাদের জনমতের প্রতিফল ভাবাটা অবাস্তব।
অন্যভাবে দেখা যাকঃ আমরা ত' কিছু একটা 'আছে' দেখে তার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করি, কিছু একটা 'নেই' দেখে নয়। তাহলে বলেন
১৯৭১ এ পাকিস্তানের আপামর জনগণের কি কি কার্যকলাপ দেখে আপনি আপনার সিদ্ধান্তে এসেছেন?
- অতএব, ১৯৭১-র পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সেদেশের আপামর সাধারণ জনতার সাথে এক করে দেখার কোন বাস্তব+যৌক্তিক ভিত্তি নেই। এই কারণে আমি মনে করি, তাদের বিরুদ্ধে জাতিগত ঘৃণা বয়ে বেড়ানো একটা অপ্রয়োজনীয়। (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
এত ঘুরাচ্ছো কেন? আমি কোথাও কোন কিছুর দাবী করিনি, তুমি চাপিয়ে দিচ্ছ। আমি পরিস্কার ভাবে বলতে চাচ্ছি, পাকিস্থানী সেনাবাহিনী যখন গনহত্যা চালাচ্ছিল, তখন পাকিস্থানের জনগন কি করছিল?
কেউ কোন অন্যায় দেখে চুপচাপ থাকলে যদি তার প্রতিবাদ না করে তবে সেও অন্যায়ের অংশ হয়ে যায়। বাবা যতই ভালো মানুষ হোক না কেন, ছেলে অপরাধের অংশ তাকেও নিতে হয়।
তুমি মূল অংশকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছ। পাকিস্থানের সাধারন জনগন গনহত্যার সময় কি করছিল আমি তা জানতে চাচ্ছি। এখন তার ৭১ সম্পর্কে কি ভাবছে তা জানতে চাচ্ছি।
ব্যতিক্রম নিয়ে কথা বলিও না, মূল স্রোত নিয়ে কথা বল।
- ভাইয়া, আমি কিছুই চাপিয়ে দিচ্ছি না। আমি শুধু বলছি যে, আমি জানিনা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের জনগণ কি করছিল। কিন্তু আমাদের দেশে বেশিরভাগই আপনার মতো দৃঢ বিশ্বাস করে যে পাকিস্তানের সাধারণ জনগণ নৃশংস; যেমন আগের মন্তব্যে বলেছেন "পাকিস্থানীরা জাতিগত ভাবেই উংচ্ছৃখল এবং নৃশংস, সবাই হয়তো নয়, কিন্তু একটা জাতির ৯০ ভাগ লোক যদি এরকম হয়, তবে কি বলা যায় না যে এরা জাতি হিসেবেই ভয়াবহ নিষ্ঠুর।"- আপনার কি মনে হয়না এখানে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে? এর সপক্ষে আপনার তথ্য কোথায়? আমার কাছে তাদের মূলস্রোত বা ব্যতিক্রম কোনটারই তথ্য নেই। আর সেই কারণেই আমি অন্য দেশের (ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রেক্ষিতে আমেরিকার) উদাহরণ টেনে দেখতে চেয়েছি কোনপ্রকার তথ্য ছাড়াই 'দেশপ্রেমমূলক' ডিসকোর্সে পাকিস্তানের আপামর জনগণকে একটা অমানবিক ষ্ট্যাটাস দেওয়ার ভিত্তিটা কি, আর সেটা কতটা গ্রহনযোগ্য।
আপনি বা আর কেউ বাস্তব তথ্য দেখাক, না পারলে অন্ততঃ যুক্তি দিয়ে বোঝাক কেন পাকিস্তানের জনগণ জাতিগত ভাবে হত্যাকারী, তাহলেই ত' ল্যাঠা চুকে গেল 🙂 তা' না বলে যদি বলেন যে, আমার দেশপ্রেমের অনিবার্য উপাদান/নিয়ামক হচ্ছে বিনাবাক্যে পাকিস্তাnIder প্রতি জাতিগত ঘৃণা পোষণ করা, তাইলে ত' আর আলোচনার কোন দরকার নাই। (সম্পাদিত)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
তাহলে জেনে নাও তারা কেমন ছিল, এর পরে কথা বলি।
৭১ নিয়ে আমার জ্ঞান সম্পর্কে তোমার ধারনায় আমি মুগ্ধতা জানিয়ে গেলাম। তবে আস্থা রাখতে পার, আমি যা বলছি তা বাস্তব।
যাইহোক, ভালো থেক।
- জানার জন্যই ত' আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি। আপনাকে বা আপনার জানা কে ছোত করার জন্য অবশ্যই নয়।.
ভাইয়া, রাগ করলেন মনে হচ্ছে।(আমার ভুলও হতে পারে).
কোন তথ্যের ভিত্তিতে আপনি বাস্তব দাবী করছেন সেটা বলে দিলেই ত' ঝামেলা চলে যায়, তাই না? 🙂
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আইসিএসএফ এর (ICSF) লাইব্রেরীতে ঘুরাঘুরি করে দেখ। এক্সেস পাবা কিনা জানি না, না পেলে রায়হান রশিদ ভাই (৮৪ ব্যাচ) বা সেলিনাকে (৮৮ ব্যাচ) নক কর।
আর তুমি কোন তথ্যের ভিত্তিতে পাকি জনগনের সাফাই গাইছো সেটাও এখানে লটকিয়ে দিয়।
::salute::
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ভাল লাগল
ভালো খারাপ মিলিয়ে দুনিয়া।
তবে পাকিস্থানী জাতটাই যেন কেমন!
হুমায়ুন আজাদ তো গোলাপ ফুলের কথা বলেই গেছেন।
আর পাকিস্থান আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ না যে ---
আর শুধু মুসলমান বলেই তাদেরকে আমাদের পসিতিভলি দেখতে হবে তাও তো হয় না। একমাত্র ইরান বাদে প্রতিটা মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের পাশে ছিল ১৯৭১ এ।
ঘৃণা বুকে পুষে রেখে এগিয়ে যাওয়া যায় না; কিন্তু ভালবাসার মালা ছড়িয়ে দিতে দিতে চলতে হবে তার ও মানে দেখি না।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
সহমত।
খুব ভালো লাগত তুই যদি তোর মন্তব্যের এই বোল্ড অংশটাকে আলোচ্য ডিসকোর্সের মধ্যে ব্যাখ্যা করিস।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আমার একটা ব্যাপার জানার আগ্রহ ছিল। বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী বা দেশ, যারা অন্যদেরকে শোষণ করেছে, অত্যাচার করেছে বা অন্য কোন ধরণের লজ্জার ইতিহাস আছে, সেগুলো তারা পাঠ্যবইয়ের ইতিহাসে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। নাকি সবাই ই এড়িয়ে গিয়েছে?
গুলশান,
তোমার প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য বেশি দূর যাওয়া লাগে না, আমাদের দেশেই দেখো আমরা কিভাবে 'সংখ্যালঘু'দের (শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘু নয়, সব ধরণের) সাথে কি কি করছি আর তার ইতিহাস কিভাবে লেখা হচ্ছে।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
:thumbup:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
কোন ব্যাতিক্রম কি আছে? কোন দেশ কি নিজেরদের ভুল স্বীকার করে সেটা তাদের সিলেবাসভুক্ত ইতিহাসে এনেছে?
মাহমুদ ভাই, উপরে কাইয়ুম ভাই এটা নিয়ে বলেছেন, আমিও ভাইয়ার সাথে একমত।
আমাদের এত এত যুদ্ধ নিয়ে উপন্যাস, গল্প, নাটক আছে কোথাও কিন্তু কোনো পাকীর এধরণের ভালো কাজের নমুনা দেখা যায়নাই, তাদের দেশের ছাত্ররা কিংবা মানুষরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেনাই, কোনো সৈন্য বাংলাদেশগ স্বাধীন হওয়ার পর কিছু করসে কিনা সেটাও জানা যায়নাই।
আমার মাঝেও আগে এই ধরণের একটা ধারণা ছিল, যারা যুদ্ধ করসে তারা খারাপ, এরা নিশ্চই খারাপ না। বর্তমান পাকীদের খারাপ বলা যাবেনা। কিন্তু বিদেশে এসে বুঝলাম এদের আসলে পদে পদে গালি দেয়া ছাড়া উপায় নাই, সারাক্ষণ হালাল-হারাম, আর নামাজ কালামের কথা, এবং তার চাইতেও বেশি বলে মেয়েদের নিয়ে।
এগুলা কোনো ঘটনা না, কিন্তু এদের মাঝে ৯৯% স্বার্থপর বলা যায়, এবং বাংলাদেশকে ছোট করে দেখার একটা প্রবণতা আছে।
আর আমি এজন্য বাঙ্গালীদের কেও দোষ দিতে চাই, তারা সব সময় এই পাকী আর ইন্ডিয়ানদের সাথে হিন্দীতে কথা বলে, আমনকি বাংলাদেশ ভালো পাকীরা খারাপ সেটা নিয়া ঝগড়া করে হিন্দীতে/উর্দূতে
আপনার লেখাটা অনেক ভালো হয়েছে, যুক্তি ছিল। 🙂
এইসব বাঙ্গালিরে ধইরা জুতানো দরকার।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
নাজমুল,
আমার মূল বক্তব্যটা বুঝতে পারোনি মনে হচ্ছে- ব্যক্তির চারিত্রিক বিচার যুদ্ধের মধ্যে নয় (এমনকি জাতিগত ভাবেও নয়), যুদ্ধের বাইরে স্বাভাবিক জীবনের মধ্যে হবে। আর, ১৯৭১ আমরা আপামর পাকিস্তানীদের দেখি নাই, দেখেছি তাদের সেনাবাহিনীকে; এই দুইটা আলাদা।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
দোস্ত
তোমার কথা ঠিক।
কিন্তু একটা বিশাল কিন্তু আছে।
বেশি কিছু বলবো না।
ইউ টিউবে গেলেই ভুট্টোর একটা ভাষণ দেখতে পাইবা ১৯৭১ এর পরের। পাকি জনগণকে এড্রেস কইরা। বিষয় হইল নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকবে কিনা এইটা নিয়া। সেখানে বাঙ্গালিদের শুয়োরের বাচ্চা হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
http://www.youtube.com/watch?v=_Q5tvAYi5js
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
নতুন তথ্যের জন্য ধন্যবাদ মাহমুদ। কিন্তু বড্ড একপেশে হয়ে গেল। বাংলাদেশ এবং পাকিস্থান যদি একদম পাশাপাশি হত, কিংবা পাকিস্থানের সামরিক সরকার যদি ঘোষনা করে দিত সাধারন জনগন কারা কারা যুদ্ধে যেতে ইচ্ছুক এবং এর ফলে তারা কি কি রিওয়ার্ড (হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষন) পাবে, তাহলে বোধহয় তোমার গবেষনার ষোলকলা পূর্ন হত, কি বল? 🙂
তোমার কাছে যুদ্ধের এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সংগা জানতে ইচ্ছে করছে।
ফয়েজ ভাই,
মনে হচ্ছে আপনার চিন্তা যুক্তি ধরে এগুচ্ছে না। যুক্তির লাইনে থাকলে বোঝার কথা যে, ১৯৭১-র যুদ্ধ শুধু আমাদের জন্যই ছিল মুক্তিযুদ্ধ, পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য নয়। কাজেই, আমাদের নেতা প্রতিরোধের ডাক দিলে জনগণের জন্য তা'তে সাড়া দেওয়ার যে দায় (অর্থ্যাৎ, দেশপ্রেম), সেটা পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের উপর আরোপ করে আপনি বলতে চাইছেন যে, তারাও স্বতঃপ্রনোদিত হয়ে যুদ্ধে এসেছিল। একই ব্যাপার ভিয়েতনামের যুদ্ধেও খাটেঃ সেখানে ভিয়েতনামীরা করেছে মুক্তিযুদ্ধ যা' দেশপ্রেমের পরিচায়ক, আর আমেরিকানরা করেছে আগ্রাসনমূলক যুদ্ধ যা' সাথে দেশেপ্রেমের সংযোগ নেই বলেই তাদেরকে ড্রাফিটিং এর মাধ্যমে জোর করে ধরে নিয়ে যেতে হয়েছে।
বস, আরেকটু খেয়াল করে 🙂 ।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
টিপস এর জন্য ধন্যবাদ।
রাজীব,
দোস্ত, আমার কাছে আরো রেফারেন্স আছে যে জে নিয়াজী এবং ইয়াহিয়াও প্রকাশ্য বক্তৃতায় বাঙ্গালদের 'বানর-সদৃশ্য' উন-মানুষ টাইপের বলেছে। কিন্তু এতে কি করে প্রমাণ হলো যে, পাকিস্তান জাতি হিসেবেই বর্বর বা আমাদের প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন?
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
দোস্ত,
নিয়াজী, ইয়াহিয়া যা বলেছে তা যুদ্ধ চলাকালীন।
আমাদের কামরুল হাসান ও ইয়াহিয়ার ছবি এঁকেছেন সেসময়; এইসব পশুদের হত্যা করতে হবে বা এরকম কিছু।
আবার ফররুখ আহমেদ সহ আরো অনেকে পাকিস্থানীদের পক্ষে মুখ খুলেছেন।
ভুট্টো আমাদের স্বাধীনতার পরে সাধারণ লোকদের জনসভায় ঐ ভাষণটি দিয়েছেন। আশা করছি পার্থক্যটা ধরা পড়েছে।
কেন পাকিস্তান আমাদের ২ বার সৃকিতি দিয়েছে। মুজিব মারা যাবার পর দ্বিতীয়বার।???
কোন পাকিস্তানীদের আমরা বিশ্বাস করবো???
এখানে আমি ১২/১৪ কোটি পাকিস্তানী মানুষকে ঘৃণা করার কথা বলছি না; ঐ নাপাক রাষ্ট্রটির কথা বলছি।
আমার সাথে এক ডাক্তারের সাথে কথা হয়েছিলো অনেক আগে; সে বলল, ইন্ডিয়ান আরমি নাকি পাকি আরমির ড্রেস পরে বাংলাদেশে এসে গণহত্যা চালিয়েছে।
আমি বললাম তোমাদের আর্মি আমাদের প্যান্ট খুলে চেক করে দেখেছে যে খৎনা করা আছে কিনা। সে উত্তর দিল, ওটা তারা করেছে হিন্দুস্তানী চরদের ধরার জন্য।
আরেকজন আমার কলিগ ছিল। খুব ঠাণ্ডা স্বভাবের। সে একদিন আমাকে জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা তোমরা মুজিবুর রেহমানকে বঙ্গবুদ্ধু বলো কেন? এটা মানে ত বাংলার শ্রেষ্ঠ বোকা লোক। তাইনা?
আমি তখন তাকে ব্যাখ্যা করলাম যে বঙ্গবন্ধু।
পরে যখন আসিফ জারদারি যখন সেই নাপাক দেশটির প্রধান তখন তাকে বললাম মিস্টার টেন পারসেন্ট তো এখন ক্ষমতায়; কি অবস্থা তোমাদের? সাথে সাথে তার প্রতিবাদ এবং সে বলা শুরু করলো যে আসিফ সাহেব যে কত মহান লোক।
এরা যেটা বলতে চায় যে পাকিস্তান বিভক্তির জন্য ইন্ডিয়া, ভুট্টো, মুজিব দায়ী। এবং এই কমেন্ট ও অদের মাঝে যারা সহানুভূতিশীল তাদের করা।
ওরা কি এখনো মাপ চাইছে? কোনো খতিপূরণ দিছে?
ওদের কথা বাদ দেই। বাংলাদেশ আর্মি অ কি মাপ চাইছে মুজিব হত্যার জন্য। আমরা এদের কে খুশি করার জন্য বলি একটি বিপথগামী দল। আর এরা অ খুশিমনে তা মাইনা নেয়। যদি তারা বিপথগামী হইয়াই থাকে তবে আর্মি আইনে তাদের বিচার হইল না কেন?
এম্নিতেই আর্মি নিয়া কিছু বলা যায় না, ঘি দিলাম কিনা কে জানে???
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
মাহমুদ ভাই,
লেখাটা এবং এর কমেন্টগুলো বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে এবং আরও অনেক ব্যাপার হয়ত তুলে আনবে আশা করছি।
আপনার এই কথাটা:
আমার মনে কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আশা করি আপনার থেকে যথার্থ উত্তর পাব।
১। আমাদের চিন্তা ধারায় আমরা যখন কোন জাতি বা কোন স্পেসিফিক গ্রুপ নিয়ে কথা বলি তখন কিন্তু একটা মাইন্ডসেট নিয়ে কমেন্ট করি। যদিও এটা ঠিক নয়। যেমনঃ নোয়াখালীর মানুষ এরকম, আমেরিকানরা ওরকম বা পলিটিক্স যারা করে তারা সেরকম, তাই না? আমরা কিন্তু এই স্পেসিফিক গ্রুপের কোন Statistical Analysis করে কিছু বলি না। যার ফলে দেখা যায় অনেকে এসব স্পেসিফিক গ্রুপের কাউকে তারা সারা জীবনে এনকাউন্টার না করেও ঐ প্রচলিত কমেন্ট করে যাচ্ছে। কিন্তু সে যদি তাঁর লাইফে ঐ কমেন্ট এর বিপরীতে কিছু পেয়ে থাকে তখন তাঁর ঐ প্রি-কন্সেপ্ট হয়ত পরিবর্তন করে, তা না হলে সে ঐ বদ্ধমূল ধারণার উপর থেকে যায়।
২। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোন যুদ্ধ হয়েছে কিনা যেখানে জাতির বদলে ব্যক্তির জাজমেন্ট হয়েছে? যেমন- ২য় বিশ্ব যুদ্ধে আমেরিকানরা জাপানে আণবিক বোমা ফেলেছে, জাপানীরা ম্যাসাকার করেছে চীনে কিংবা জার্মানরা হলোকাস্ট করেছে, তাই না?কেউ কিন্তু বলেনা যে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, জাপানের সম্রাট এই কাজগুলো করেছে। আর ব্যক্তির বিচার/জাজমেন্ট করতে গেলে আপনে কয়জনের করবেন? রাষ্ট্র প্রধান ছাড়া আমার মনে হয় না ইতিহাস আম-জনতার জাজমেন্ট কে ধরে রেখেছে। ব্যক্তির বিচার/জাজমেন্ট আপনি তখনি করতে পারবেন যখন আপনি তাকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনবেন তাও আবার আপনার সাথে যতটুকু তাঁর ডিলিংস হবে তাঁর রেস্পেক্টে। এখন আপনার একবন্ধু হয়ত আপনার খুব জানের দোস্ত কিন্তু তাঁর ব্যবহার বাসার কাজের লোক কিংবা কাজের ক্ষেত্রে তাঁর জুনিয়র বা অন্যদের সাথে জঘন্য, তখন ত আপনি তাকে সৎ তকমা দিতে পারেন না, তাই না?
৩। আমি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তেমন পড়াশোনা করিনি। কিন্তু কোন পত্রিকার এক বোদ্ধার কলামে পড়েছিলাম যে, পাকিস্তান আর্মির যেসব সেনাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল, তারা বেশীরভাগ নিয়মিত সেনা বাহিনীর অংশ ছিলনা। উত্তর প্রদেশ সীমান্ত প্রদেশের অনিয়মিত রিসার্ভ ফোর্সের অংশ ছিল। সেনা বাহিনীর লিডারেরা এটা করেছিল ইচ্ছা করে যাতে তাদের মধ্যে বাঙ্গালী বিদ্বেষ বা তাদের হিন্দু বা নাপাক মুসলমান করার কাহিনী বেশ ভাল ভাবে খাওয়ানো যায়। এটা অনেকটা রাতের নাইট গার্ডকে/ কিংবা রাস্তার সাধারণ লোককে পুলিশের দায়িত্ব দেওয়ার মত। যারা হঠাৎ করে চোর বা ডাকাত ধরে সেখানেই দফা-রফা করে দেবার ব্যবস্থা করে দিবে থানায় যাবার জন্য অপেক্ষা করবেনা। নিয়মিত সেনা বাহিনীর সেনা পাঠালে হয়তবা (???) এরকম ম্যাসাকার তারা করাতে পারতোনা বা তাদের মধ্যে হিন্দু বা নাপাক মুসলমান করার কাহিনী বিশ্বাস করানো কঠিন হতেও পারত (???)।
৪। মাই লেই এর গণহত্যা তে আপনি ২টি ফ্যক্টর উল্লেখ করেছেন। তাদের লিডার ধরে নিয়েছিল যে সকাল ৭টার মধ্যে সবাই বাজারে চলে যাবে সো যারা থাকবে তারা ভিয়েতকং এর সদস্য। আরেকটা হচ্ছে এর আগের দিন কিছু আমেরিকান যোদ্ধার অন্তেষ্টিক্রিয়া ছিল যা’ সেনাদের মাঝে ভিয়েতকং এবং তাদের সহায়তাকারী জনগণের বিরুদ্ধে ক্রোধকে বাড়িয়ে দিয়েছিলো। আমার প্রশ্ন হচ্ছে পাকি বাহিনী কি তাদের যুদ্ধে এমন কোন চিন্তা ভাবনা করেছিল কিনা যাতে সাধারণ মানুষের কোন ক্ষতি না হয়, অথবা বাঙ্গালীরা কি এমন কিছু করেছিল ২৪ শে মার্চ যা পাকিদের কে ২৫ শে মার্চ রাতের আঁধারে বাধ্য করেছিল ক্রাক ডাউন করতে?
৫। ১৪-ই ডিসেম্বরের ঘটনাকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? পাকিস্তানি কিছু সেনা আফিসারের যুদ্ধের প্ল্যান নাকি ঐ সময়ের পাকি মাস্টার মাইন্ডদের একটা জাতিকে পঙ্গু করে দেবার প্ল্যান, আর সেই মাস্টার মাইন্ডরা কিন্তু সেই পাকিদেরকেই রিপ্রেজন্ট করে।
আর কাইয়ূমের সাথে সহমত পোষণ করে গেলাম।
যুদ্ধ ক্ষেত্রে ২/১ জনের ভাল রূপ বা তাদের কনফেশন বা পরবর্তী জীবনের ভাল কাজ দিয়ে হয়ত তাদের ভাল মানুষী পরিমাপ করা যেতে পারে, সামষ্টিক জাজমেন্ট এর কোন পরিবর্তন আনা যাবে না। আর পাকিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সে ২/১ জনের ভাল রূপ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ভাল থাকবেন। (সম্পাদিত)
সাইফুল,
ধন্যবাদ সময় নিয়ে মন্তব্য ক্রিটিক্যালী করার জন্য। দেখান যাক তোমার প্রশ্নের উত্তর গুলো দেওয়া যায় কি না?
১। এইখানে তোমার সাথে আমি একমত। কিন্তু তোমার প্রশ্নটা বুঝতে পারিনি।
২। "পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোন যুদ্ধ হয়েছে কিনা যেখানে জাতির বদলে ব্যক্তির জাজমেন্ট হয়েছে"- এইবার বাস্তব তথ্য নিয়ে এসেছো বলে আবারো ধন্যবাদ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিচারের রায় কি ছিলো মনে করে দেখো- সেখানে দোষী হয়েছে শুধুমাত্র যুদ্ধের হোতারা যাদেরকে তোমার কথায়ই বলা যায় মাষ্টারমাইন্ড; সেখানে কিন্তু জার্মানীর আপামর জনগণ বা জাপানের আপামর জনগণকে দোষী করা হয়নি। বলেছো, "কিন্তু বলেনা যে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, জাপানের সম্রাট এই কাজগুলো করেছে।"- তোমার কথা অনুযায়ী, জনগণ কি বলে সেটা দিয়েই যদি সত্য নির্ধারণ হতো, তাহলে সেই রায়ে জার্মানী আর জাপানের সকল জনগণকে দোষী করা হতো, তাই না? আসলে, সত্য কখনো জনমত বা গণভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়না, হয় বাস্তব তথ্য+যুক্তি দিয়ে। আমাদের জনমতকে একটা সিষ্টেম্যাটিকালী বিশেষ দিকে পরিচালিত করা হচ্ছে বলেই আলোচ্য ডিসকোর্সের জন্ম, এটা উদ্ভবের পেছনে কোন তথ্য/যুক্তি আছে সেটা খুঁজে দেখতে গিয়েই আমার এইসব ভাবনা।
৩। এই প্রশ্নের উত্তর তোমার মন্তব্যের মধ্যেই আছে, "সেনা বাহিনীর লিডারেরা এটা করেছিল ইচ্ছা করে যাতে তাদের মধ্যে বাঙ্গালী বিদ্বেষ বা তাদের হিন্দু বা নাপাক মুসলমান করার কাহিনী বেশ ভাল ভাবে খাওয়ানো যায়।"
৪। এইপ্রশ্নে মূল বিবেচ্য মনে হচ্ছে 'যাতে সাধারণ মানুষের কোন ক্ষতি না হয়'- কোন যুদ্ধেই সাধারণ মানুষ লক্ষ্যে থাকে না, থাকে শুধু শত্রুবাহিনী; আর তাই শত্রু নিধন করার জন্য বাদবাকি সব কিছুই উপেক্ষা করা হয়+প্রয়োজন ধ্বংশ করা হয়, যেকোন যুদ্ধেই। আর সৈন্যরা তা করেও। এটা দিয়ে সৈন্য ব্যক্তিচরিত্র মূল্যায়ণ করা যায় না, দেশের জনহণ ত' আরো দূরের ব্যাপার।
৫। এখানে তোমার সাথে আবারও পূর্ণ সহমত 🙂 । আর প্রশ্নের উত্তর তুমি নিজেই দিয়েছো। ভালো করে পড়ে দেখ তোমার লেখা, কিন্তু এইবার 'মাষ্টারমাইন্ড' শব্দটায় খেয়াল রেখো। একটা দেশের আপামর জনগণকে নিশ্চয়ই তুমি 'মাষ্টারমাইন্ড' বলবে না, কি বলো?
তুমিও ভালো থেকো। (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ ভাই,
১। আমি বলতে চেয়েছি, পাকিস্তানিদের ব্যাপারে আমাদের প্রজন্মের যে ধারণা তাঁর একটা বিশাল অংশ এসেছে মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা এবং আরেকটা অংশ এসেছে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় তাদের জনগণকে(পাকিস্তানিদের) এঙ্কাউন্টার করার মাধ্যমে। আমাদের প্রজন্মের লোকজন এই দুটোর মধ্যে কম্পেয়ার করে বেশীরভাগ লোকজনের অনুসিদ্ধান্ত (আমার মতে), তাদের পাকিস্তানিদের ব্যাপারে প্রি কনসেপ্টটাই ঠিক ছিল।
২। আমি ভাই, জাজমেন্ট বলতে এক জনগোষ্ঠীর কাছে আরেক জনগোষ্ঠীর মূল্যায়নকে বুঝিয়েছি। কোর্ট-কাচারীতে গিয়ে কোন যুদ্ধে কি জাজমেন্ট হয়েছে সেটার ব্যাপারে বলিনি। সাধারণ জনগণ (৩য় পক্ষ, যেমন- ২য় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে আমেরিকা/জাপান নিয়ে আমার কমেন্ট) সেটা নিয়ে বা সেটার রায় নিয়ে খুব একটা ভাবে না, দেখে ওভারওল কি হয়েছিল?
আপানার এই কথার সাথে একমত হতে পারলাম না যে, আমাদের দেশের জনগণকে সিষ্টেম্যাটিকালী বিশেষ দিকে পরিচালিত করা হচ্ছে, বরং মুক্তিযুদ্ধে যা হয়েছিল তা যদি উন্নত বিশ্বের মত ঘটনা বাই ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হত তবে পাকিস্তানিদের ব্যাপারে যে ঘৃণা তা আরও কয়েকগুণ বেশী হত।
৩। সেনাবাহিনী (পাকিস্তানি) কার বিরুদ্ধে সেদিন যুদ্ধে নেমেছিল বলতে পারবেন? আমাদের ত আলাদা সেনাবাহিনী ছিলনা, আমাদের গেরিলা বাহিনী ত ওদের মার খাবার বেশ কয়েক মাস পর গঠিত হয়েছিল, তবে কেন একই দেশ হওয়া সত্ত্বেও তারা তাদের লোকের বিরুদ্ধে এরকম বর্বর কান্ড সাধন করেছিল? ভারতেও ত বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর বসবাস, এক গোষ্ঠীর কোন দাবি-দাওয়ার বিরুদ্ধে কি কেন্দ্রীয় শাসক গোষ্ঠী কি তাদের সেনাবাহিনী কে এভাবে লেলিয়ে দিয়েছিল? পাকিস্তানের এই জাতীয় চরিত্র এখনো বিদ্যমান। এখনো তারা তাদের বেলুচ প্রদেশ বা উত্তর- পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের নিরীহ জনগণকে এখন কিভাবে নির্যাতন করছে, তা আশা করি আমারা সবাই জানি।
৪। ভাই, ঐ সময় আমাদের দেশে মানে ২৫শে মার্চ এর আগে পাকিস্তানিদের শত্রু পক্ষ কে ছিল? একদল নিরীহ জনগণ যাদের ন্যায্য দাবী তারা জোর করে দিচ্ছিল না?
৫। মাষ্টারমাইন্ডরাই একটা দেশের ডিসিশন মেইক করে কিন্তু তারা কিন্তু সাধারণ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে তাই না, কেননা তারা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই আসে? এখন যদি সেই মাষ্টারমাইন্ডদের কোন ডিসিশন এর সাথে সাধারণ জনগণ একমত না হয় তবে তারা (সাধারণ জনগণ) তাঁর প্রতিবাদ করবে, সেটা লেখালিখি করে হোক কিংবা সমাবেশ করে হোক অথবা যে কোন গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে হোক (যেমন- আমাদের দেশে ট্রানজিট এর ব্যাপারে আমাদের সাধারণ জনগণ হয়ত সরকারের সিদ্ধান্তের সাথে একমত নয়, তাই বিভিন্ন ভাবে সেটার প্রতিবাদ হচ্ছে)। আমরা কিন্তু সেটা পাকিস্তানিদের ক্ষেত্রে দেখি নাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে। সো, অনুসিদ্ধান্ত নেয়া দোষের কিছু না যে একজন বাঙ্গালী হিসেবে যে তাদের সাধারণ জনগণ তাদের মাষ্টারমাইন্ডদেরকেই বা তাদের সিদ্ধান্তের সাথে সহমত ছিল। আর, রাজীব ভাইয়ের ভিডিও লিংকটা ত অনেক আগেই দেখা, সেটা দেখে কি বলবেন আপনি?
সাইফুল,
আমার মনে হচ্ছে আমাদের কিছু বিষয়ে আরো স্পেসিফিক হওয়া দরকার। তাহলে আলোচনা চালিয়ে যেতে সুবিধাঃ
১। আমরা কি মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে/বুঝতে চাইছি, না কি আমাদের আবেগের কাছে দায়বদ্ধতার জন্য সেই ইতিহাসের একটা বিশেষ অংশ জানতে চাইছি?
২। জনগণ কি নিজেরা নিজেরা ইতিহাস দেখতে/নির্মাণ করেত সক্ষম?
৩। সেনাবাহিনী যখন আক্রমণ করে, তখন কি সেটা শুধুই আরেকটা সশস্র শত্রু বাহিনীকেই শুধু? নাকি সাধারণ জনগণকেও? এমনকি নিজেদের রক্তের স্বজনদেরকেও (২০০৭ এর ঢাবি'র ঘটনা)?
৪। মাষ্টারমাইন্ডরা কিভাবে গণপ্রতিনিধিত্ত্ব করে?
আমার বিশ্বাস, এই প্রশ্নগুলোয় একমতে উপনীত হতে না পারলে আমাদের দুজনের আলাপ ভিন্নদিকে যেতেই থাকবে। আমি অবশ্যই দাবী করছি না যে, আমার ধারণা/মত সঠিক আর তোমারটা ভুল। আমি ভুল জানতেই পারি, কিন্তু সেটা সংশোধন করে নিতেই আমি বেশি ইচ্ছুক। আশা করি, তোমার থেকে কিছু জানতে পারবো।
কাজেই, উপরোক্ত প্রশ্নগুলো ভেবে দেখতে অনুরোধ রইল।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ ভাই, লেখাটা প্রকাশিত হবার সাথে সাথেই পড়েছি, তার পর থেকেই অনেক কথা মাথায় ঘুরছে কিন্তু সময় করতে পারছিলাম না। এখন লিখতে বসলাম, কিন্তু কতটুকু গুছিয়ে লিখতে পারবো জানিনা।
প্রথমে আসি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কথায় আপনার মতে ৭১ এ পাকিস্তানের যে ক্ষুদ্র অংশটুকুকে আমরা দেখেছি...
> সেনাবাহিনীর সব সদস্যরা কাজ করেছে তাদের নিজ নিজ উর্ধ্বতনের আদেশে, অন্যভাবে বলতে গেলে তারা শুধু আদেশ পালন করেছে মাত্র। এখন প্রশ্ন হল আদেশ কি ছিল? মুক্তিযুদ্ধের প্রতক্ষদর্শী বিভিন্ন মানুষের (ডঃ জাফর ইকবাল সহ অন্য আরো অনেকের) লেখা, বক্তব্য শুনে এবং পড়ে তাদের যে নারকীয় কর্মকান্ডের কথা শুনেছি তার কতটুকু শুধুমাত্র আদেশের মাধ্যমে করানো যায়? একটা গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার আদেশ হয়ত তারা পেয়েছিল কিংবা গ্রামের সকল মানুষকে মেরে ফেলার আদেশ, সেটা সম্ভব ছিল মাথা পিছু একটি বুলেট খরচের মাধ্যমেই। কিন্তু বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, পিতা-মাতার সামনে সন্তানদের পাশবিক অত্যাচার করে মারা সহ আরো সব বিকৃত মানসিকতার পরিচয় তারা দিয়েছে সেটার কতটুকু ছিল আদেশ পালন?
> একই কথা প্রযোজ্য নারীদের যেভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে সে ক্ষেত্রেও... ধর্ষনের আদেশ ও হয়ত দেয়া হয়েছে উপর থেকে, কিন্তু যে বিকৃত, বিভৎস ভাবে পাকি সেনারা নির্যাতন চালিয়েছে সেটার কতটুকু আদেশের মধ্যে উল্লেখ ছিল?
> ধরে নিলাম সেনাবাহিনীকে ব্রেন ওয়াশ করে নিয়ে আসা হয়েছিল এদেশের মালাউন দের হাত থেকে সাচ্চা মুসলমানদের বাঁচাতে, কিন্তু তাদের হাত থেকে কিন্তু রাজাকারের খাতায় নাম লেখায়নি এমন অনেক মসজিদের ইমামও রক্ষা পায় নি, এমনও শুনেছি জীবন বাঁচাতে কোরআন শরীফ পড়া শুরু করেও রক্ষা পাওয়া যায়নি, সে অবস্থায় তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে।
সোজা কথায় শুধু আদেশ পালনের জন্য হত্যা করা আর পাকিস্তানি সেনাদের চালানো পাশবিকতার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ আছে, সেগুলো ছিল রক্তপিপাসু, ধর্ষক, বিকৃত-মস্তিস্ক, সাইকো একদল মানুষ রূপী পশুর তান্ডব লীলা।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
এবার আসা যাক পাকিস্তানিদের মূল অংশ অর্থাৎ সেনাবাহিনী বাদে বাকি যে অংশকে আমরা দেখিনি তাদের সম্পর্কে। আপনি নিজেই বলেছেন আপনি জানেননা ৭১ এ পশ্চিম পাকিস্তানের জনগন কি করেছিল... অথচ তাদেরকে ভাল মানুষের স্বীকৃতি দেইয়ে দিচ্ছেন, ঘৃনা করতে মানা করছেন, না জেনেই আমাদের উপর এতবড় হত্যাযজ্ঞ চালানো একটা জাতিকে এত বড় ছাড় দিয়ে দিলেন?
আমার জ্ঞান খুব বেশি না, এই সীমিত জ্ঞানে যতটুকু জেনেছি তাতে পশ্চিম পাকিস্তানিদের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তেমন কোন উচ্চ বাচ্যই করা হয়নি, এর বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া তো দূরে থাক। ( আমি মোটামোটি নিশ্চিত, কারন সেরকম কোন ঘটনা থাকলে তথাকথিত 'পাক মন পেয়ারু' রা এতদিনে সেটাকে পুঁজি করে অনেক কিছু করে ফেলত)
ধরে নিলাম তারা সমর্থন করেই নাই (?) কিন্তু যে জাতি এরকম একটা নারকীয় হত্যাযজ্ঞকে চুপচাপ হজম করে যেতে পারে তাদের প্রতি আমাদের ঘৃনা পোষন করাকে আমি কোন ভাবেই অযৌক্তিক বলতে পারছি না।
আর পাকিস্তানীদের এ প্রজন্মের চিন্তা ভাবনা সম্পর্কে আপনার জানার সৌভাগ্য হয়েছে কিনা জানি না, তবে ওদের কিছু ইন্টারনেট ফোরামে গিয়ে ওদের প্রতি আমার ঘৃনা আমার আরো বেড়েছে।
আর জাতিগত ভাবে ওদের মনভাব টের পাওয়া যায় ৭১ এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনার বিষয় সামনে এলেইতাদের বক্তব্যে, মনভাবে। আর যে জাতি এরকম একটা জঘন্যতম ঘটনার জন্য ক্ষমা পর্যন্ত চাইতে পারলো না, তাদের কে আগ বাড়িয়ে নিজের থেকে ক্ষমা করে দেবার মত উদারতা আমি অন্তত দেখাতে পারছিনা।
পাকমন পেয়ারুদের নিয়েও বলার কিছু ছিল, কিন্তু লিখতে গিয়ে যুক্তি টুক্তি বাদ দিয়ে আবেগি কথা বাত্রা বেশি হয়ে যাচ্ছে, তাই পরে কোন এক সময়ে বলবো।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
- এটা তোমার অনুমিত, যেহেতু তুমি এটা ধরে নিয়ে আলোচনা শুরু করছো যে, পাকিস্তানীরা জাতিগত ভাবেই আমাদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ। কাউকে ঘৃণা করতে মানা করার মানে তাকে ভালো-মানুষের স্বীকৃতি দেওয়া হয় কিভাবে? দুনিয়াতে কি ঘৃণীত আর ভালোবাসার মানুষ ছাড়া আর কারো থাকতে নেই? বেশিরভাগ মানুষই ত' এই দুই ক্যাটাগরির বাইরে পরে।
যুদ্ধক্ষেত্রে হত্যা+ধর্ষণ ইত্যাদির জন্য পৃথিবীর কোন সেনাবাহিনীকেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ দেওয়া হয়নি (অন্তত কোন প্রামাণ্য তথ্য নেই), তারপরও প্রতিটি যুদ্ধেই এসব হচ্ছে, এই বিষয়টা কিভাবে ব্যাখ্যা করো? আর যদি উদাহরণটা নিই পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদের সেনাবাহিনীর কার্যকলাপ থেকে?
মুহম্মদের মন্তব্যের প্রতি উত্তরে খানিকটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি। তোমার মত জানিও। (সম্পাদিত)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
অনেকদিন পর আপনার লেখা পাইলাম, সেই কারণে আবার কমেন্ট না করেও থাকতে পারলাম না। অনেকদিন পর ব্লগে কমেন্ট করা।
আপনার বিশ্লেষণের সাথে প্রায় পুরোটাই একমত। পাকিস্তানী আর্মির হিংস্রতা দিয়ে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা খোদ সৈন্যদের ব্যক্তি চরিত্র বিশ্লেষণও ত্রুটিহীনভাবে করা যায় না। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের প্রতি আমার কোন ঘৃণা নাই। সামাজিক প্রেক্ষাপট তৈরি হলে সেদেশের মানুষও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারে। একটা উদাহরণও দেখলাম। ইরাসমাসের এই প্রোগ্রামে আমার ক্লাসমেট এক পাকিস্তানী আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সব জানে। সে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে পাকিস্তান সরকারের এজন্য ক্ষমা চাওয়া, অপরাধীদের বিচার করা এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এমনকি তাদের পুরা ফ্যামিলিই এমন। ওর বাবা অর্থনীতিবিদ যিনি নিয়মিত সরকারের কাছে ব্যর্থ চিঠি লিখেন বাংলাদেশে গণহত্যার বিচার চেয়ে। অবশ্য এর একটা কারণ, বাংলাদেশে ওদের আত্মীয় আছে, ওর মামারা বাংলাদেশে থাকে (সম্ভবত বিহারী হিসেবে) এবং সে ৩-৪ বার ঢাকা গেছে। এজন্য ইতিহাস সম্পর্কে সে কিছুটা জানে, তাছাড়া সে ধর্মে বিশ্বাস করে না, বেশ পড়াশোনা করা ছেলে, ইউরোপে আছে গত ৪ বছর ধরে। দেখা যাচ্ছে তার আসল ইতিহাস জানার কারণটাও বেরিয়ে আসছে। পাকিস্তানে এমন পরিবেশ নেই বলেই কেউ কিছু জানতে পারছে না। অবশ্যই আমি একটিমাত্র উদাহরণ দিয়ে কোনকিছু জাস্টিফাই করার চেষ্টা করছি না- ওর সাথে পরিচয় হওয়ার আগেও আমি কোন ব্যক্তি মানুষকে ঘৃণা করতাম না। একটা লোক যে দেশেরই হোক তাকে খারাপ লাগার জন্য আমার প্রথমে তাকে জানতে হবে, বুঝতে হবে, সে একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বলেই তাকে ঘৃণা করা যায় না।
এবার পরের বিষয় আসি: মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এবং বিপক্ষের শক্তি হিসেবে যে সরলীকরণ হতে দেখা যায় সেটাও সমর্থনযোগ্য নয়। আপনার সাথে একমত। কিন্তু একটা ভীতি আমাদের (যারা রাজাকার ও ধর্মান্ধতা বিরোধী) রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে- কারও মধ্যে যথেষ্ট পাকবিদ্বেষ না দেখলে আমরা শংকিত হয়ে পড়ি, আমি নিজেও। যখন কারও মুখে পাকিস্তান+রাজাকার বিদ্বেষ শুনি তখন অন্তত এটুকু ভরসা পাই যে সে ধর্মান্ধ বা জামাতপন্থী নয়। এক্ষেত্রেও সরলীকরণ থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের সময় সাধারণ মানুষের চেতনাটি ধারণ করা উচিত, কিন্তু সেই চেতনার নামে ঘৃণার চর্চা এবং তার যাচ্ছেতাই প্রয়োগ ঠেকানো প্রয়োজন। কিন্তু সরলীকরণ সব সময়ই এড়ানো প্রয়োজন। আপনার লেখাতেও কিছু সরলীকরণ আছে বলে মনে হয়েছে। আপনার বিশ্লেষণ বেশি গাণিতিক হয়ে গেছে, আরও সমাজ-বৈজ্ঞানিক হওয়া উচিত ছিল বলে মনে হয়েছে। 😀
১।
আর্মির নির্যাতনের নিয়মে ধর্ষণ এবং গণহত্যা আছে বলে কিন্তু আমার মনে হয় না। বিএমএ-তে নিশ্চই এসব শেখানো হয় না? সুতরাং উপরওয়ালার নির্দেশ হলেও মাঠ পর্যায়ে কে কমান্ড দিচ্ছেন এবং সৈন্যরা কেমন তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে উপরের আদেশে গ্রামে আগুন দিতে বাধ্য হয়েছেন, কিন্তু হয়ত তিনি কোন মানুষকে নিজের সামনে নিজের উপভোগের জন্য জ্যন্ত পুড়িয়ে মারতে পারবেন না। যদি কেউ সেটা করে তাহলে আমি অবশ্যই তাকে ঘৃণা করব, আমার বন্ধু হলেও। কেউ যদি যুদ্ধের সময় ধর্ষণ করে তাকে আমি অবশ্যই ঘৃণা করব। তবে সবটুকু ঘুণা তাকে নয়, অর্ধেক ঘৃণা কর্তৃপক্ষের উপরে যাবে, কারণ কর্তৃপক্ষ স্বয়ং সৈন্যটির উপরেও ডিহিউম্যানাইজেশন চালিয়েছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে হওয়া স্ট্যানলি কুবরিকের "ফুল মেটাল জ্যাকেট" সিনেমায় এই পুরো dehumanization প্রক্রিয়াটি দেখানো হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যণীয় যে সবাই পুরোপুরি dehumanized হয় না, যুদ্ধে সব সৈন্য এক রকম হয় না, সবাই রেইপ করে না, যদি কেউ করে তাকে বিনা বাক্যবয়ে ঘৃণা করা যায়। ধর্ষণ এবং নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করার দায় পুরোটাই কর্তৃপক্ষের এটা ঠিক মানি না। ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে হওয়া প্লাটুন এও মাই লেই হত্যাযজ্ঞের মত কিন্তু অনেক কম হিংস্র একটা ঘটনা দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, সেখানেও দেখা যায় সব সৈন্য এক না। অ্যাপোক্যালিপস নাউ সিনেমায় দেখানো হয়, আমেরিকান সেনা কর্মকর্তা ভিয়েতনামে গিয়ে কি হিংস্র জন্তুতে পরিণত হয়েছে, যুদ্ধের মাঠে যখন নিয়ন্ত্রণ খুব কম থাকে তখন মানুষের মধ্যে অনেক পাশবিকতা ভর করে, অনেকেই হয়ে উঠে সাক্ষাৎ জানোয়ার।
সুতরাং পাকিস্তানের যে সৈন্যটি যুদ্ধের সময় একজনকে ধর্ষণ করেছিল, একজন নিরপরাধ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করেছিল, তাকে ঘৃণা না করে উপায় নেই কোন। কিন্তু তার নাম করে সকল সৈন্য এবং গোটা জাতিকে ঘৃণা করা যায় না।
২।
বর্তমানের সরকারের যেকোন সমালোচনা করলেই তা হয়ে যায় পাকিপ্রেম- এটা অতি সরলীকরণ মনে হয়েছে। হ্যা এই প্রক্রিয়া অবশ্যই চালু আছে, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের সুযোগ নিয়েছে ঠিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দিয়ে ভোট বাড়িয়েছে তাও ঠিক, কিন্তু পরবর্তী নির্বাচনে সেটা ততটুক পারবে বলে মনে হয় না। তাদের যেকোন সমালোচনাকেই মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীতা হিসেবে দেখা হয়, বিদেশে বসে অন্তত ব্লগ পড়ে আমার তা মনে হয়নি। ব্লগে তো দেখি সবাই লীগকে গালাগালিই করছে, যারা গাল দিচ্ছে তাদের সবাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং সেক্যুলার, কেবল জামাতকে ঠেকানোর জন্যই হয়ত তারা অনেকে লীগকে ভোট দিয়েছিল। তারা বিএনপি-জামাত জোটকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা (সেক্যুলারিজম) বিরোধী মনে করে, তাই বলে আওয়ামী লীগকে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশব্দ মনে করে না। এ ধরণের আওয়ামীতে ভোট দানকারী আওয়ামী বিদ্বেষীদের সংখ্যা কিন্তু এই নির্বাচনে কম ছিল না।
:thumbup:
মুহম্মদ,
তোমার কমেন্ট পড়ে মনে হলো পোষ্টের মূল বক্তব্য তোমার মনোযোগ ধরতে পেরেছে। আমার আসল বক্তব্যটা ছিল পোষ্টের ৩ নং অংশে যেখানে আমি ব্যক্তিগত সাইকোলজি আর সামাজিক সাইকোলজির মধ্যে পার্থক্য করে বলতে চেয়েছি যে, যুদ্ধ একটা এক্সট্রা-অর্ডিনারী অবস্থা যেখানে ব্যক্তি নিজের নয়, বরং সামাজিক সাইকোলজির দ্বারা পরিচালিত হয়, অনেকটা 'মব- সাইকোলজির' মত। আর তার মেকানিজমটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি যা'তে এটা স্পষ্ট হয় কেন স্বাভাবিক মানুষগুলোই সেনাবাহিনীর অন্তর্গত হয়ে 'যুদ্ধাবস্থার মধ্যে, দানবের মতো আচরণ করে।
- খেয়াল করে দেখো, এই ভয় কিন্তু আরেকটা সাম্প্রদায়িকতার জন্য দিচ্ছে। কারণ, রাজাকার+ধর্মান্ধতার পক্ষভুক্ত না থাকাটা তাদেরকে ঘৃণার সাপেক্ষে নির্ধারিত হচ্ছে। তারমানে, "হয় তাদেরকে ঘৃণা করো যেমন আমরা করি, অথবা তোমরাও তাদের অন্তর্ভূক্ত"- এরমধ্যে ইসলামী জিহাদী ডাকের প্রতিধ্বনী পাও? এটাও কিন্তু চরমভাবেই প্রতিক্রিয়াশীল একটা অবস্থান। আর সম্ভবতঃ এই প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থানের জন্যই যুদ্ধাবপরাধীর বিচার চাওয়ার বাইরে এই মতধারা হতে সৃষ্টিশীল (মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইতিহাস, দেশের উন্নয়ণ পরিকল্পনা, ইত্যাদি) আর কোন কিছু আসছে না।
তোমার দুইটা মতপার্থক্যের বিষয়ে আমার অবস্থান হলোঃ
১। ব্যক্তিগত সাইকোলজি আর সোসাল সাইকোলজির পার্থাক্য মাথায় রেখে ভাবলে দেখবে কেন বিএমএ বা আর কোথাও ধর্ষণের শিক্ষা না দেওয়া হলেও যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যরা কেন তা' করে। সাধারণ জনগণকে পাইকারী ভাবে হত্যা করার বিষয়েও একই মত।
২।
- না, সবাই চেতনাপন্থী নয়, এদের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আছে জামাতী এবং বিএনপিপন্থী যাদেরকে কোন ভাবেই তুমি চেতনাপন্থী বা সেক্যুলার বলতে পারবে না। নিজেদেরকে এদের থেকে আলাদা করতে হবে, কিন্তু কিভাবে? এটা আমি বলবো না, তোমাকেই ভেবে বের করতে হবে।
নিজেদের মধ্যে যে ধারায় তুমি মুক্তিযুদ্ধ আর এর বিরোধীপক্ষ সনাক্ত করছো, এটা উপরে নির্দেশিত কারণে ভুল, মারাত্মক একটা ভুল। একারণেই আওয়ামীলীগ যেমন বিনা বিচারে স্বাধীনতার পক্ষশক্তির স্বীকৃত পেয়ে যাচ্ছে, তেমনি এর বিরোধীরাও বিনা বিচারে স্বাধীনতার বিপক্ষশক্তির স্বীকৃত পাচ্ছে। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধ সাধারণ মানুষের মুক্তির স্বপ্ন না থেকে ক্ষমতার পালাবদলের প্রক্রিয়ায় 'পণ্যে' পরিণত হয়েছে।
সিসিবিকে ধন্যবাদ এমন একটা স্পর্শকাতর ইস্য নিয়ে মুক্ত আলোচনার সুযোগ তৈরী করার জন্য। আলোচনা চলুক।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
এ লেখায় বহু মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য আসতে থাকবে নিশ্চয়ই।
অনেক কথাই বলা যায়।দেখি, খুব অল্প কথায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারি কি না।
আমার নিজের মানসিক ব্যক্তিক অবস্থানের সবটাই, কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে, আমার হাতে থাকেনা।চাইলেই একটি নিউট্রাল অবস্থানে চলে যাওয়া হয়না।যারা আমাদের ঘৃণা-ভালোবাসার ধার ধারেনি কোনোদিনো, তাদের আমি ছাড় দিতে চাইলেই পারিনা। আমার মা-বোন-ভাই তথা ইতিহাসের প্রতি অবিচার করা হয় তাহলে। নিজের রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করার চাইতে আমি বরং এই অন্ধত্বটুকুকেই লালন করবো আসীম ঘ্বণায়।তাতে আমার কোন খেদ নেই, লজ্জা নেই।
পাকিস্তান কখনো ক্ষমা চাইলো কি চাইলো না তাতে আমার এখন আর কিছুই যায় আসেনা। লোকদেখানো, কূটনৈতিক ক্ষমাপ্রার্থনায় আমার কোন আস্থা নেই।
তার চে' বরং আমি মনোযোগী হই, আজ বা আগামীকাল দেশী দালালগুলোর বিচার হচ্ছে কিনা এই বাংলার মাটিতে তা দেখার জন্য।
উদারতার বানের জলে আবার (বারবার) যাতে এই বরাহকূল আমাদের স্রোতে মিশে যেতে না পারে তার জন্যে আমাদের বিনিদ্র সময়যাপন করার সময় এসেছে। এসকল দিন শেষ হলে সব ভাবা যাবে সুস্থ মাথায়।
:thumbup:
nupur bhai
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
:hatsoff:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
নাহ মাহমুদ, রাগ করে নেই তোমার উপর, তবে যথেস্ট বিরক্ত বলতে পার।
একমাত্র আমাদের পক্ষেই মনেহয় সম্ভব "আইক্কা বাঁশ" খাওয়ার পরেও যিনি "বাঁশ দিয়েছেন তার যে বাঁশ না দিয়ে উপায় ছিল না" এটা নিয়ে গবেষনা করা। তোমার মন্তব্য পড়ে আমার এমন ধারনাই হয়েছে। আর অবাক হয়েছি এই কথায়, তুমি যখন বলছো পাকিস্থানের সাধারন জনগনের মৌলিক অবস্থান সম্পর্কে তোমার ধারনা নেই। এবং তুমি ধরেই নিয়েছো মোটা দাগের যে বিভাজন তা তথ্য ভিত্তিক নয়, আবেগ ভিত্তিক।
সবার জন্যই কুইনাইন, তাই না 🙂
পাকিস্থানের সাধারন জনগনের বিরুদ্ধে আমার ক্ষোভ এবং ঘৃনা আছে এবং তা এইজন্য যে '৭১ এর ব্যাপারটা তারা এড়িয়ে যায়। এবং এই ব্যাপারে তারা ক্ষমা চাওয়া এবং ক্ষতিপূরন না দেয়া ছাড়া এটা যাবে না আমার। কারন বাঁশ খেয়ে আমার পিছনটা ব্যাথা করে। এখন তুমি যদি পাকিস্থানের সাধারন একজন মানুষকে আমার সামনে এনে দাড় করিয়ে বল আমি এই লোকটাকে ঘৃনা করি কিনা, আমি না বলবো, এরপরে আমি তাকে ৭১ সম্পর্কে বলবো, ধারনা দিব এবং বলবো সে এই জন্য অনুতপ্ত কিনা, যদি অনুতপ্ত না হয় তবে আমি তাকে অবশ্যই ঘৃনা করবো। এবং তাকে বাশ দেয়ার চেস্টা না করলেও অবশ্যই এড়িয়ে চলবো।
তুমি মহান এবং উদার মানুষ, ভালোবাসা এবং গবেষনা দিয়ে জয় কর তাদের, শুভকামনা থাকলো তোমার জন্য।
ফয়েয ভাই
আবার অ :hatsoff:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ফয়েজ ভাই,
আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। তবে এরপরেও যে এই বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে গেলেন, তার জন্য আপনাকে, এবং পুরো সিসিবি পরিবারকেই আন্তরিক ধন্যবাদ। কারণ, এই লেখা অন্য কোন ব্লগে দিলে আমার কি পরিনণতি হতো, তা' অনুমান করতে পারি। যাই হোক, মূল কথায় আসিঃ
আপনি আপনার জায়গাতেই থাকলেন যে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে (যা' ওদের ক্ষেত্রে আমাদের উপর অন্যায় আগ্রাসন) পাকিস্তানের সাধারণ মানুষও দোষী। কারণ, তারা সেসময় যুদ্ধের বিরুদ্ধে কোন কথা বলেনি, এমন কি আজ পর্যন্ত আমাদের কাছে ক্ষমা চায়নি। তত্ত্ব-টত্ত্ব বাদ দিয়ে আসেন সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে নিজেদের দিয়ে বিচার করি।-
১। সাধারণ জনগণের বিষয়েঃ
আমাদের স্বাধীনতার পর থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদের সরকারী নীতির কারণে যা' হচ্ছে, তা' ১৯৭১ এর আগে আমাদের সাথে যা' পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার যা' করছিলো, তা' থেকে কি কোন ভাবে আলাদা? আমরা ত' ওদের ভাষা, সংস্কৃতি, ঘরবাড়ি, জমি সবই কেড়ে নিয়েছি, এবং নিয়েই চলেছি? হত্যা-ধর্ষণ-লুটতরাজ কোনটাই ত' বন্ধ হয়নি। এসবের কয়টা সাধারণ বাংলাদেশীরা জানতে পারে? সবগুলো ব্লগ মিলিয়ে মোট পাঠক ত' জনসংখ্যার শতকরা ৫ জনের বেশি হওয়ার কথা নয়। এর মধ্যেও একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মনে করে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপর বাংলাদেশীদের 'অধিকার' ন্যায্য এবং সরকার যা' করছে, ঠিকই করছে। শহরের শিক্ষিত-মধ্যবিত্ত-প্রগতিশীল কয়েক লাখ ব্লগ-পড়ুয়া বাংলাদেশী ছাড়া বাংলাদেশের বাদবাকি আপামর জনসাধারণের দায় টা তাহলে কি? পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদের নির্বাচিত+অনির্বাচিত সরকারসমূহ আর্মি দিয়ে যেসব অন্যায়-অবিচার চালিয়েছে এবং চালাচ্ছে, তা'র জন্য সেখানকার দলীত-নির্যাতীত-গৃহহীন মানুষেরা কি এদেরকে দায়ী করতে পারে? পাকিস্তানের সাধারণ জনগণ তবু বলতে পারে যে, তারা ১২০০ মাইলেরও বেশি দূরে ছিল বলে জানতে পারেনি এখানে তাদের সেনাবাহিনী কি করতে, বলতে পারে যে তাদের সরকার স্বৈরাচার ছিল, বলতে পারে যে তাদের সময় মিডিয়া+তথ্যপ্রবাহ এখনকার মতো সহজ ছিলোনা; ঘরের পাশে থেকে, সরকারকে নির্বাচিত করে, তথ্য প্রবাহের সহজ সুযোগের মধ্যে থেকেও এই যে শতকতা ৯৫ ভাগ বাংলাদেশী, আমরা, কি করেছি আমাদের সরকার+আর্মির নির্যাতন থেকে তাদের রক্ষা করতে? -এমতাবস্থায়, আপনার চিন্তাধারা অনুযায়ী এই সাধারণ বাংলাদেশীরা ত' সবাই ১৯৭১ এর পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের থেকে বেশি ছাড়া কম অপরাধী নয়। ভুল বললাম কি?
২। আর্মির বিষয়েঃ
২০০৭ এর আগষ্টে ঢাবি'র জিমনেশিয়ামে দু'চারজন ছাত্র ও সেনা সদস্যের মধ্যে কথা কাটাকাটি থেকে সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর আমাদের সমগ্র আর্মি কিভাবে ঝাপিয়ে পড়েছিল তা' সকলের মনে আছে নিশ্চয়ই। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে গিয়ে, আশেপাশের এলাকার ছাত্র-মেসগুলোতে গিয়ে আমাদের আর্মি- যাদের সাথে হাজার হাজার ছাত্রের সরাসরি রক্তের সম্পর্ক বিদ্যমান- নারকীয় তান্ডব চালিয়েছে যা' এখনো অনেকেরই স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে। রেলষ্টেশনে, বাসষ্টপে গিয়ে ছাত্রদের আলাদা করে নিয়ে বেধরক পিটিয়েছে। আজীজ সুপারে আর্মির 'অপারেশন' নিয়ে বিবিসি'র রিপোর্টের একটা ক্লীপ আমাদের সিসিআর-১৬ এর মেইল থেকে আবার নামিয়ে শুনলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে যেন আমি স্বাধীনতার দলিলপত্রে বর্ণীত কোন ঘটনার পুণরাবৃতি শুনছি। বিবিসি'কে পুরো বিশ্বাস করতে পারিনি বলে ঘটনার শিকার আমার সিসিআর এক বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছি। সে বলেছে, বিবিসি অনেক কম বলেছে (পোষ্টে সেই অডিও ক্লীপ জুড়ে দিতে চাইছিলাম, পারলাম না; কেউ চাইলে ই-মেইল করে দিতে পারবো)। এটাকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
অথবা, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আর্মি জমি-কেনা নিয়ে যা' করলো, সেটাকে কি বলবেন? -সেটাও ত' স্বজাতীর বিরুদ্ধেই ছিলো।
১নং বিষয়টা পুরোটার দায় আমি দিতে চাই ক্ষমতাবানদের উপর- আওয়ামীলীগ, বিএনপি, স্বৈরাচার, সবাই। আর এক্ষেত্রে এই পোষ্টে উল্লিখিত তত্ত্ব সামগ্রিক ঘটনার ব্যাখ্যা করতে সক্ষম বলে আমি মনে করি। আর তাই, আমি নিজে বা আমার মতো আরো ১৪/১৫ কোটি বাংলাদেশীকে এরজন্য একদম দায়ী মনে করি না। এমনকি তাদের উপর চলতে থাকা জুলুমগুলো সম্পর্কে জানার আগ্রহ না-থাকার জন্যও নয়। কারণ, আমি তাদের না স্বজাতি, না আত্মীয়। খুব স্বার্থপরের মতো হয়ে গেল, তাই না? তাহলে আমি হয়তো স্বার্থপরই, কিন্তু ঘাতক নই, অথবা ধর্ষক নই, এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর প্রতি বিদ্বেষীও নই; নাকি ভুল বললাম?
আর ২নং বিষয়ে উল্লিখিত ঘটনার জন্য কি আমরা মনে করতে পারি যে, আমাদের সেনাবাহিনী চরিত্রগতভাবেই হিংস্র, এমনকি স্বজাতীর সাথেও? সেনাসদস্যরাও? - নিশ্চয়ই নয়। কারণ, এই সেনাবাহিনীই নানা দূর্যোগের সময় নিঃস্বার্থ ভাবে সাধারণ জনগণের পাশে দাঁড়ায়, এরাই দূর্বলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী/নির্যাতনকারীকে প্রতিরোধ করে, এরাই এখনও দেশের ক্রান্তীকালে সাধারণ জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল। আর ব্যক্তিগত ভাবেও ত' আমরা সবাই কোন না কোন আর্মি অফিসার ও সেনাসদস্যকে চিনি+জানি। তারমানে কি দাড়ালো?
- আশা করি, আমি বোঝাতে পেরেছি আমার বক্তব্য।
- ভাইয়া, আমি মহানও না, উদারও না; হয়তো খানিকটা স্বার্থপর। তবে নিশ্চয়ই হত্যাকাংখী বা ধর্ষকামী না। আর যেকোন দেশের, বা স্থানে্ বা গোত্রের আপামর জনগণকে এরূপ ভাবতে না-পারা একজন বোকা/ভিতু/না-বুঝ আমজনতা মাত্র।
আমার জন্য শুভাকাংখা করেছেন, সেজন্য আর ধন্যবাদ না-দেই; একই হাউসের জুনিয়র হিসেবে এটুকু আমার অধিকার বলেই মনে করি; তবে এরসাথে এইটুকু দোওয়া চেয়ে নিচ্ছি যে, আমি যেন খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিবেচনা করতে গিয়ে আবেগের কারণে ভুল না করি।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আমি অবশ্যই পাহাড়ীদের কাছে লজ্জিত এবং দুঃখিত, এবং রাস্ট্রীয় ভাবে আমি তাদের ক্ষতিপূরন দেবার পক্ষপাতি।
২০০৭ এর আর্মির কাজের জন্যও আমি আর্মির সমালোচনা করি, যেমন ইচ্ছা থাকা সত্তেও রাজনীতির ক্যাডারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমার মনে ঘৃনা আছে।
আমি অবশ্যই এসব ঘৃনা করি এবং বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এজন্য লজ্জিত।
জন্য
পড়ুন
মাহমুদ দোস্ত,
আমি তোর লেখাটাতে লাইক তাইক সবই দিছি। কিন্তু ঐ যে বলছি।
তোর কাছে কোন তত্থ থাকলে জানা। আমি হজম করতে পারবো।
আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনদের মদ্ধে রাজাকার, শান্তিবাহিনী, মুক্তিযোদ্ধা সবই আছে।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
তবে একটা কথা বলতে চাই পাকিরা এক মহান উদ্দেশ্য নিয়া আমাদের রেপ করেছিলো। আমাদের মুসল্মান বানাতে চেয়েছিল। যে জাতি উর্দুর বাংলা বেশি পছন্দ করে তাদের মুসল্মানিত্ত নিয়া সন্দেহ হইতেই পারে। আমাগো অরা কি কইত,
মাশ্রেকে পাকিস্তান, না। তবে দেশ ত কনদিন পাক হয় না; পাক হয় মন।
ঠিক বাংলাদেশের নাগরিক হইতে গেলে যেমন সচ্চরিত্রবান হইতে হইবো।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
রাজীব,
রাষ্ট্র, সরকার আর জনগণ পারস্পরিক সম্পর্কিত হলেও যে মৌলিকভাবে আলাদা এটা নিশ্চয় বুঝিস। না বুঝলে আর আলোচনা করে না লাভ নেই।
আর ধর্মকে টেনে আনা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। আমি মুসলমান বলেই যে শুধু মুসলিম/ইসলাম নিয়ে ইন্টারেষ্টেড হবো, এমনটি ত' নয়, কি বলিস? অন্যরাও ত' মানুষ।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
:thumbup: mahmud
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
মাহমুদ ভাই, কেমন আছেন?
ইতিহাসের বিকল্প পাঠ, সাবজেকটিভ ডিসকোর্স নিয়ে আলোচনা, ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে গ্রস না হয়ে টেক্সট নির্মানের উদ্দেশ্য এবং ইতিহাসে ব্যবহৃত উপাদানের ভিতর নিহিত ক্ষমতার ব্যবহারকে প্রশ্ন করে সমসাময়িক বাতচিতে এবং ব্লগোস্ফিয়ারে মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতীয়তাবাদী চেতনা ব্যবহারের গতিপ্রকৃতির পাঠ নিঃসন্দেহে একাডেমিক্যালি ট্রেন্ডি। শুদ্ধ ইতিহাস চর্চার উদ্দেশ্যকে আমিও সাধুবাদ জানাই। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে পাকিস্থানি সেনাবাহিনী, পশ্চিম পাকিস্থানের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থান-বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি, আমলাতন্ত্রকে আমরা "পাক-হানাদার" শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে ব্লার করে দেই - এটাকে কিভাবে দেখবেন?
ঘটনা হলো, আমরা এমনিতেই ইতিহাস বিস্মৃত জাতি। আমাদের দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের বাস্তবতায় এসব বিকল্প পাঠের লাভের গুড় আখেরে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তির থলিতে জমা হয়। এই পাঠগুলো ঘৃনা কতটুকু দূর করে আমি নিশ্চিত না, কিন্তু কিছু অমানুষকে 'বেনিফিট অব ডাউট' দিয়ে তাদের অপরাধগুলোকে লঘু করে দেখার সুযোগ করে দেয় বলে আশংকা হয়।
আপনার লেখা থেকে হ্যামিলটন এবং কেলম্যানের কাজ যেটুকু বুঝলাম, ধরুন - গোলাম আযম, নিজামী, কামরুজ্জামান, কাদের মোল্লা এরা তো একাত্তরে একটি সেনা রাজনৈতিক শক্তির অংশ হিসেবে স্পেশাল এ্যাসাইনমেন্ট ফোর্স হিসেবেই কাজ করেছে। এখন এদের সেই অপরাধ তাহলে ব্যক্তির হবে না, হবে তাদের অথোরিটির। ব্যক্তি গো-আযম, নিজামী, সাইদি সহ সকলকে বুঝতে হবে তাদের ব্যক্তি জীবনাচরণের সাপেক্ষে। আমি ধারণা করি, এরা এমন অনেক কাজ ব্যক্তি জীবনে করে থাকবে যা আর দশটা সাধারণ মানুষও করে কিংবা হয়তো ভাল কাজই করে থাকবে। তাহলে সেই ভাল কাজের সাপেক্ষে তাদের একাত্তরের কাজগুলোর জন্য তারা দায়ী হবে না। এখন এরা যদি বলে বসে দেখো হ্যামিলটন এবং কেলম্যান ভিয়েতনাম যুদ্ধে দেখিয়েছে যুদ্ধে ব্যক্তি আসলে কিভাবে তার অথোরিটিরির কাছে ক্রীড়নড়ক হয়ে যায়, আমরাও তাই হয়েছিলাম, আমাদের কোন দোষ ছিল না একাত্তরে। আমরা যা করেছি তা ছিল পাকিস্থান এবং ইসলামকে টিকিয়ে রাখার জন্য। আর আমাদের ব্যক্তি জীবন দেখো এখন আমরা বাংলাদেশে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েমের জন্য ত্যাগ করে দিয়েছি। তখন কি হবে?
আমার বন্ধুয়া বিহনে
রাব্বী,
আমার উল্লিখিত তত্ত্বীয় মডেলটা বোঝোনি, তাইলে গোলাম আজম গংকে এর মধ্যে আনতে না। এই মডেল শুধুমাত্র সেনাসদস্যদের জন্য প্রযোজ্য যারা সরাসরি একটা কর্তৃত্বের নিয়ন্ত্রনাধীনে থেকে যুদ্ধে যায়। আমাদের রাজাকাররা কোন ভাবেই এই দলে পড়ে না। ইন ফ্যাক্ট, আমার আলোচনা শুধুমাত্র পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং সেই সাথে সাধারণ জনগণকে নিয়ে।
ফয়েজ ভাইয়ের সাথে আলাপের সূত্র ধরে কিছু প্রশ্ন নিয়ে আবার আলোচনায় ফিরবো, শীঘ্রই; সাথে থেকো।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
হ্যামিলটন এবং কেলম্যান পড়িনি - তাই অজ্ঞতা মেনে নিলাম। পড়লেও সেটা পাকিস্থানী সেনাসদস্যকে এবং সেই সাথে জনগণকে 'বেনিফিট অব ডাউট' দেবার কাজে ব্যবহার করবো কিনা সেটা একটি বিবেচ্য বিষয় হতো। কারণ একাডেমিক যুক্তিনির্ভর আলোচনা যে নিরপেক্ষ এমন মনে করি না। তারও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে।
তত্ত্বীয় মডেলের কথা কিছুই বুঝিনাই বলে ঘ্যাচাং করে দিলেন, ব্যাপারটা এমন নাও হতে পারে। দেখি চেষ্টা করি, যুদ্ধে সেনারা কি পরিস্থিতিতে কি করে, কেন করে এবং তার দায় আসলে কার - এটুকু আপনার লেখা থেকে তত্ত্বের ব্যাপারে বুঝলাম এবং সেই তত্ত্বের নিরিখে সেনাবাহিনী এবং তার কর্তৃত্বকে বুজে আমাদের কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বয়ান এবং পাকিস্থান সেনাবাহিনীকে, পাকিস্থান জাতিকে পাঠ এবং বিবেচনা করা উচিত। সেই প্রেক্ষাপটে ব্লগে চলমান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক "বর্গগুলো" ভ্রান্ত, কারণ তারা আবেগকে পুঁজি করে নিজেদের ভিতর ঘৃনাকে উপজীব্য করে বিভাজন রেখা টানছে যা আপনি সমর্থন করেন না। অল্প কথায় তো এটাই বলতে চেয়েছেন - নাকি? না বুঝে কিছু বাদ দিলে বলেন।
আমার বেশকিছু কথা মুহম্মদ এবং আন্দালিবের মন্তব্যে আছে তাই আর সেগুলো অযথা টানলাম না। রাজাকার প্রশ্ন ইচ্ছে করেই টানা। দেখতে চাইলাম রাজাকারদের হ্যামিলটন এবং কেলম্যানের জুতার ভিতর ঢুকিয়ে কেমন ফিট হয়। রাজাকার ব্যাপারটা তো শুধু মুখে মুখে ছিল না। পূর্ব পাকিস্থান রাজাকার অধ্যাদেশ ছিল ১৯৪৮ এর আনসার অধ্যাদেশের প্রতিস্থাপন, যারা সেনাবাহিনীর পূর্ন নিয়ন্ত্রনে ছিল। যুদ্ধের নিয়মিত বাহিনীর সদস্যকে যদি তত্ত্বীয় মডেল অনুযায়ী সোশ্যাল ইনডেমিনিটি দেওয়া যায় তাহলে তার সহযোগীর পেতে সমস্যা কি, মাহমুদ ভাই?
আবারো, "পাক-হানাদার" কথাটা যে ঢালাও এবং ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক শক্তিকে আড়াল করে এটা কিভাবে দেখবেন?
আমার বন্ধুয়া বিহনে
আরে।।তুমি মাইন্ড করছো নাকি? তোমাকে করা আমার মন্তব্য আবার পড়ে দেখলাম, কিন্তু সেরকম কিছু ত পেলাম না। তারপরেও বলছি, আমি ঘ্যাচাং করার জন্য কিছু বলিনি।
তোমার এই মন্তব্যে মনে হচ্ছে, আমার পোষ্টের মূল বক্তব্য ভালোই বুঝেছো, কিন্তু উল্লিখিত তত্ত্বটা আরেকবার পড়ার অনুরোধ করছি (মূল পোষ্টের ৩ নং অংশ)। সেখানে authorization, routinization ও dehumanization প্রত্যয়গুলোকে একত্রে একটা প্রেক্ষিতে বিবেচনা করো (তুমি একাডেমিতে আছো বলেই একটু বেশি দাবী করা আর কি... 🙂 ), তাহলে বুঝবে কেন আমি এখানে রাজাকারদের ফেলতে পারি না।
মুহাম্মদ আর আন্দালিবের মন্তব্যের উত্তরে আমার বক্তব্যও ত' আছে। সেগুলোর ব্যাপারে কি বল?
রাজাকারদের বিষয়ে আমার মত স্পষ্ট করে বলা দরকার মনে হচ্ছেঃ আমার দৃষ্টিতে তারাই সবথেকে ঘৃণ্য, কারণ তারা জেনেবুঝে স্বজাতীর বিরুদ্ধে যাবতীয় কুকর্ম করেছে, তা-ও আবার জাতীয় শত্রুর সাথে হাত মিলিয়ে। তাদের অপরাধ পাক-হানাদারদের সমান নয়, অনেক গুণ বেশি।
আমার অনুমান, এক্ষেত্রে তোমার সাথে আমার মতের পার্থক্য হবে না যদি এই প্রক্রিয়ার মধ্যকার 'ওরিয়েন্টালাইজেশন'টা দেখে থাকো।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাইন্ড করার প্রশ্নই আসেনা। মাইন্ড করে ঠকার মানুষ আমি না। আপনার কয়েকটি অবজারভেশন ঠিক মনে হলেও তাত্ত্বিক মডেলের সাথে পুরো হাইপোথিসিস সংগতিপূর্ন হচ্ছে না বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। আপনার এই লেখাটি তাত্ত্বিকভাবে খুবই ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে, যেকারণে মূল বাস্তবতাকে আংশিকভাবে বিবেচনা করছে বলে মনে হচ্ছে।
আপনার পোষ্টের ৩ নং অংশের তত্ত্বীয় অংশ আবার পড়লাম এবং অথোরাইজেশন, রুটিনাইজেশন ও ডিহিউম্যানাইজেশন প্রত্যয়গুলোকে একত্রে একটি প্রেক্ষিতে বিবেচনা করার চেষ্টা করলাম। পড়ে আমার উল্টো মনে হচ্ছে - কেলম্যান এবং হ্যামিলটনের তত্ত্বীয় মডেল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পাকিস্থানের সেনাবাহিনীর জন্য প্রযোজ্য হবে না। এটা খানিকটা বাটারফ্লাই থিওরির মতো শোনাচ্ছে যেন ম্যাক্সিকোতে প্রজাপ্রতি পাখা মেলে উড়ার অভিঘাতে ক্যালিফোর্নিয়ার ঝড়ের জাষ্টিফিকেশন যৌক্তিক কাঠামোতে দাড় করানোর মতো। ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কোনভাবেই একই বর্গে তুলনাযোগ্য যুদ্ধ না যার ভিত্তিতে আমেরিকা বা পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর সদস্যদের একই বর্গে দেখার সুযোগ ছিল/আছে।
যুদ্ধে একজন সৈনিক ডিহিউম্যানাইজড হলেও সে যদি যুদ্ধাপরাধ করে সে দায় শুধু কর্তৃত্বের হবে, এটা তো গ্রহণযোগ্য না। ‘সোশ্যাল সাইকোলজি’ বোঝার চেষ্টা ঠিক আছে, তাই বলে কর্তৃত্বের উপর সব দায় চাপিয়ে ব্যক্তিকে দায়মুক্তি দেওয়া কতটুকু সমীচিন আমি নিশ্চিত না। আমেরিকান সেনার দায়মুক্তির মডেল পাকিস্থানী সেনার উপর আরোপ করার কোন যৌক্তিক ভিত্তি দেখি না। বাঙালি অনেক সেনা সদস্য তো সেদিন পাক-আর্মি ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধের অনিশ্চয়তায় নিজেকে সঁপে দিয়েছিল। যুদ্ধের ফলাফল উল্টে গেলে তার দায় কি সে সময়ের কর্তৃত্ব নিতো নাকি ব্যক্তি বাঙালি সেনার হতো? তাদেরও তো রুটিনাইজেশনের মাধ্যমে ডিহিম্যানাইজ করা হয়েছিল।
আপনার এই কথাগুলি লক্ষ্যনীয় –
আপনার অবস্থান বোঝাতে গিয়ে তুলনামূলক ঘৃণা উপাদান ব্যবহার করাতে আপনার লেখা সারবস্তুকে নিজেই চ্যালেঞ্জ করে বসলেন। রাজাকারদের জন্য “কুকর্ম” আসলে খুব লঘু শব্দ, যেগুলো ছিল আদতে যুদ্ধাপরাধ। হয়তো আ্ইনি মারপ্যাচে সেটাকে বলা হচ্ছে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। আমি “পাক-হানাদার” শব্দ এড়িয়ে চলি কারণ এটি পঁচাত্তর পরবর্তী পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে টেক্সটে ব্যবহার করা হয় এবং তারপর আমাদের বাতচিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটাও আপনার লেখার সারবস্তুর সাথে সাংর্ঘষিক কারণ “পাক-হানাদার” খুবই অস্পষ্ট প্রত্যয় – এটা দিয়ে পাকিস্থানের সেনাবাহিনী, সরকার, জনগণ কি বোঝায় তা পরিষ্কার নয়।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
রাব্বী,
এবার খানিকটা বোঝা গেল কেন তুমি মডেলটা ঠিক বুঝতে পারছোনা।
সৈনিক নয়, ডিহিউমেনাইজড হয় টার্গেট জনগণ; সৈনিকদের মাঝে তাদেরকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন তারা ঠিক পুরোপুরি মানুষ নয়, এর চেয়ে কমকিছু, যেওমন, ১৯৭১ আমাদেরকে নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানীদের শাসকদের মনোভাব যা' প্রচ্ছন্নভাবে সেখানকার ডিসকোর্সেও ঢুকে গেছে)।
এখনও কি আমার উল্লিখিত তত্ত্ব 'বাটারফ্লাই' তত্ত্ব মনে হচ্ছে? 🙂
"ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কোনভাবেই একই বর্গে তুলনাযোগ্য যুদ্ধ না যার ভিত্তিতে আমেরিকা বা পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর সদস্যদের একই বর্গে দেখার সুযোগ ছিল/আছে।"- কেন? এদের মধ্যকার মৌলিক পার্থক্যগুলো কি কি বলে মনে করো? (সম্পাদিত)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আচ্ছা! তত্ত্ব বোঝায় আমার কিছু অক্ষমতা ছিল এবং হয়তো আরো থেকে থাকতে পারে। কিন্তু তাতে অবস্থান পাল্টাচ্ছে এমন নয়। কেন পাল্টাচ্ছে না সেটা বলছি - কর্তৃত্ত্ব সৈনিকদের মাঝে টার্গেটকে ডিহিউম্যানাইজড হিসেবে প্রতীয়মান করে বলে সেজন্য কি ‘ব্যক্তি’ সৈন্যকে সার্বজনীনভাবে দায়মুক্তি যুক্তিযুক্ত হতে পারে? আর দায়মুক্তির যুক্তি আসলে ব্লগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভাজন প্রকিয়ায় পাঠে কতটুকু প্রাসঙ্গিক?
আমার অনুমান, ব্লগের এই আপাতঃ দৃশ্যমান বিভাজন আসলে মূলধারার রাজনীতিতে একাত্তর পরবর্তী যে ‘আইডিওলজিক্যাল’ উপাদানের উপর ভিত্তি করে জাতীয়তাবাদী এবং পরিচয়ের রাজনীতি নির্মিত হয়েছে তার একটি অংশ। আপনার হাইপোথিসিসে ব্লগের এই বাইনারি বিভাজন এবং তার ভিত্তি হিসেবে ‘ঘৃণা’ বরং রাজনৈতিক আদর্শগত সংঘাতের সাবসেট হিসেবে উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু ব্লগে বা বাস্তব প্রেক্ষাপটে এই বিভাজনের বাইরে বিভিন্ন মাত্রায় মুক্তিযুদ্ধ ডিসকোর্স ক্রিয়াশীল। জাতীয়তাবাদী ভাবাদর্শের মাত্রা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন স্কেলের ডিসকোর্স তৈরি করে। আপনি যেখানে ধরেই শুরু করেছেন যে শুধুমাত্র বাইনারি বিভাজন বিদ্যমান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চায় এবং তার ভিত্তিতে বর্তমান বাতচিতে সেই বিভাজন এমন উপাদান পূনঃউৎপাদন করছে যার ভিত্তিতে আমরা জাতীয়তাবাদ এবং পরিচয়ের সীমানা নির্ধারণ করছি – সেখানে আমি অনুমান করি, মুক্তিযুদ্ধের ডিসকোর্সের বাস্তব রুপ ‘ডাইভার্স’ স্থান-কাল-পাত্র হিসেবে, এটা শুধুমাত্র বাইনারি বিভাজনের ভিত্তিতে উৎপাদিত হয় না এবং একটি উপাদানের উপর নির্ভরশীল নয়।
মৌলিক পার্থক্য যুদ্ধের উদ্দেশ্য এবং পক্ষ-প্রতিপক্ষের সম্পর্কের ভিতর বিদ্যমান। ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলেছে দুটি দেশের ভিতরে আমেরিকা যেখানে কমিউনিজম ঠেকাতে ভিয়েতনামে গিয়েছিল একটি চলমান যুদ্ধাবস্তার মধ্যেই। আর এদিকে একাত্তরে পশ্চিম পাকিস্থানের সেনা-রাজনৈতিক শক্তি তার নিজ দেশের অন্য প্রদেশে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি হাসিলের জন্য সেনা শক্তি প্রয়োগ করে ‘অপারেশন সার্চ-লাইট’ নামে যেখানে মূল লক্ষ্য ছিল ২৫ হাজারের মতো বাঙালি মারা এবং তার বিনিময়ে পূর্ব-পাকিস্থানকে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করা। পাকিস্থানি রাষ্ট্র নয় মাসের বেশিরভাগ সময় তারা স্বীকারই করেনি যে পূর্ব পাকিস্থান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ছিল।
তাছাড়া ভিয়েতনামের যুদ্ধে আমেরিকার সেনাবাহিনীর বাইরেও বহু তরুণ ছাত্র/পেশাজীবিকে যুদ্ধে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল ষাটের দশকে যারা নিয়মিত বাহিনীর সদস্য ছিলনা। যারা সেই যুদ্ধের দায় কোনভাবেই স্বীকার করে না। পাকিস্থানে কি কোনভাবে তেমন একটি প্রেক্ষাপট ছিল? সেদিক দিয়ে তুলনা করলে পাকিস্থান আর্মি বরং জেনেবুঝে একই রাষ্ট্রের মানুষের উপর অপারেশন চালাতে এসেছিল। বাঙালিদের প্রতিরোধে যেটি মুক্তিযুদ্ধে রুপ নেয়। তারা রাজাকারের মত বাহিনীর জন্ম দিয়েছিল এবং শান্তিকমিটি স্থাপন করেছিল। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সাথে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মেকানিজমটাই ভিন্ন ছিল। পঁচিশ মার্চ রাতের আক্রমনের টার্গেটগুলো ফিরে দেখুন – সেটা ছিল এথনোসাইড। তাছাড়া তখন সেনাশাসন ছিল দেশে। তাই দুই যুদ্ধের সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষিত, ধরণ-প্রকরণ স্পষ্টই আলাদা।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
আমি কিন্তু সেটা বলিনি, ইনফ্যাক্ট, পোষ্টের লক্ষ্যও দায়মুক্তি নয়। আলোচ্য ডিসকোর্সে 'জাতিহিসেবে পাকিস্তানকে ঘৃণা' কেন্দ্র হিসেবে কতটা বাস্তবে সম্ভব তা' যাচাই করাই হলো আমার আলোচনার উদ্দেশ্য। পাশাপাশি, এই ডিসকোর্স বাইনারি বিভাজনের মাধ্যমে যে হেজেমনিক ক্ষমতা বিস্তার ঘটাচ্ছে, ব্যক্তি বাংলাদেশীর উপর তার প্রভাব, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রেক্ষিতে, তাকেও যাচাই করা। পোষ্টের উপসংহারে ইঙ্গিত সেই দিকেই ছিল। আমার লেখার সীমাবদ্ধতার জন্যই, অথবা আনুষংগিক নানান বিষয়ের ভিড়ে হয়তো এটা সব কিছু ছাপিয়ে উঠতে পারেনি।
অতএব, ব্যক্তি সৈন্যের দায়মুক্তি আলোচনার লক্ষ্য নয়, বড়জোড় অনুসর্গ।
আর ভিয়েতনামের সাথে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে পার্থক্যগুলো বলেছে, তা আমারও মত, উপরে আমার কয়েকটা প্রতিমন্তব্যে সেগুলোও উঠে এসেছে। আমি মূলতঃ ওদের উদাহরণ টেনেছি এই জন্য যে, সেখানে ব্যক্তি সৈন্য বা আমেরিকার আপামর জনতাকে দায়ী করা যায়না। একই ভাবে, পাকিস্তানের সাধারণ জনগণকেও দায়ী-->ঘৃণা করা অযৌক্তিক, অতএব একে কেন্দ্রে রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে বাংলাদেশীদের আইডেনটিটি নির্ধারণ যথার্থ নয়।
তোমার পাঠে লক্ষ্য থেকে 'দায়মুক্তি' সড়িয়ে দিলে বোধ হয় আমাদের মতের অমিল খানিকটা কমে আসবে। আর একমত হতেই হবে, সেটাই বা কে বলেছে, তাই না? 🙂
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
একটু সময় পাওয়া গেলো উইক এন্ডে এসে। এবার তোমার লেখাটা নিয়ে আরেকটু আলোচনার চেষ্টা করা যাক।
১। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের মাঝে যে সাধারণ ডিসকোর্স চালু রয়েছে
ডিসকোর্স, হ্যাঁ ডিসকোর্স। বাইনারি ডিসকোর্স। তা এই যে বাইনারি ডিসকোর্সটি চালু রয়েছে আজ অব্দি, কেন রয়েছে বহাল তবিয়তে? আমরা কি শখ করে চালু রেখেছি? চোর-পুলিশ খেলার মতো কেউ রাজাকার কেউ পাকিস্তানী সৈন্য কেউ মুক্তিযোদ্ধা কেউ ধর্ষিত সাজছি? আমাদের যুদ্ধ কি শেষ হয়ে গিয়েছে? পক্ষ-বিপক্ষ চেনার প্রয়োজন শেষ?
২।
এমনকি বর্তমানেও দৃশ্যমান হওয়াতে এত আশ্চর্য হবার কি হলো বোঝা গেলোনা। যদি আমাদের ক্ষতে কিছু প্রলেপ পড়তো গণহত্যার কিছু বিচার পেতাম, ক্ষতিপূরণ পেতাম, ক্ষমাপ্রার্থনা করতো দেশী দালালগুলো সহ পাকিস্তানী কতৃপক্ষ, আর এত কিছু পেয়ে যাবার পর আমার যদি একটা যুদ্ধের কাছে আর চাইবার কিছু না থাকে তাহলে না হয় কেউ বলতো, খামাখাই প্যাচাল পাড়তেসেন, ''এমনকি বর্তমানেও" এমন অতীতমুখিতার কি কারণ।
৩।
সরাসরি বলোনি, তবে তোমার বলার ধরণটা এমন যেন এই বিভাজন কৃত্রিম। যেন পাকিমন পেয়ারা লোকগুলোর অস্তিত্বই নেই, ওগুলো আমাদের কল্পনার ফসল, পৃথিবীর কিমাকার ডায়নামোর পরে চরে বেড়াচ্ছে। দেশ স্বাধীন হবার এত বছর পরেও যখন দেখি সাঈদী সাকারা চরে বেড়াচ্ছে, শিবিরের বাচ্চাগুলো একেকটা পাঁঠায় পরিণত হচ্ছে তখন আফসোস হয় যে এই ছাগুগুলোর বাপদের না মেরে ফেলে আমরা কি ভুলই না করেছি। এখন যখন ঘরে ঘরে এরা সেঁধিয়ে গেছে, 'বিভাজন' তাই বড় চোখে লাগে! ক'বছর আগে যখন মুক্তিযুদ্ধ একটা তামাশার ব্যাপার ছিলো, এই রাজাকারের বাচ্চাদের কত আস্ফালনই না আমাদের দেখতে হয়েছে। আজকে একটা সম্ভাবনা এসেছে এগুলোর বিচার হবার। আর এত বছর পরে এরা ঘাড়ে গর্দানেও এমন বেড়েছে যে তেমন মোটা রশি পাওয়া যাচ্ছেনা গলায় পরাবার জন্য। এদের মুরীদ বেড়েছে, কোণায় কোণায় ঘাপটি মেরে আছে নানান বেশে নানান দেশে যে চেনাই দায় বেশির ভাগ সময়। সবরকমভাবে চেষ্টা করছে তাদের অপকর্ম লুকাবার অস্বীকার করবার হালাল করবার, তবু একটি বারের জন্যেও নতজানু হয়ে বলছেনা, ভুল করসি মাফ করে দাও। এত আস্পর্ধা বেজন্মাগুলোর।তো এই যে 'পাকিমন পেয়ারা' লোকগুলো, এদেরকে 'বিভাজন' করে একপাশে সরিয়ে রাখাটা কি আমাদের মারাত্মক ভুল হচ্ছে? 'পাকিমন পেয়ারা' আদর্শের মাপে মেপে ফেলে ট্যাগ করাটা কি খুবই অপরিণামদর্শী কাজ হচ্ছে? আমাদের কি আরো প্রয়োজনীয় কাজ রয়ে গেছে যে এসব আপাতত ( বা চিরতরে?) শিকেয় তুলে রাখবো?
৪। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তাত্ত্বিক দার্শনিক নান্দনিক সামাজিক রাজনৈতিক ব্লা ব্লা ব্লা, কোন কিছু অনুধাবন করার জন্যই ভিয়েতনাম বা অন্য কোন যুদ্ধের উদাহরণ দেবার প্রয়োজন নেই। আমরা যে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে গিয়েছি যেভাবে আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছি সে অভিজ্ঞতাই যথেষ্ট আমাদের চেতনার সংকটকে ব্যাখ্যা করার জন্য।
তাই ভিয়েতনাম নিয়ে কিছু নাই বা বলি।
৫। পাকিস্তানীদের প্রতি ঘৃণা কেন আসছে? তার কারণটা কি বোঝো, বা বোঝার চেষ্টা করো? মোটাদাগে এটাকে আযৌক্তিক বলার আগে ভাবো।
নয়মাসের যুদ্ধে 'পেশগত কারণ বা দক্ষতা' নিয়ে একটা জাতিকে বিলুপ্ত করার সবরকম চেষ্টা হয়েছে, তাতে ভুট্টো নিয়াজী টিক্কা খান রাও ফরমান আলী থেকে শুরু করে পুরো পাকিস্তানী সৈন্য বাহিনীর দায় রয়েছে। আর পূর্ব পাকিস্তান হারানোর কারণে পাকিস্তানী জনগণের আফসোস রয়ে গেছে এখনো, এই ইন্টারনেটের যুগে সমস্ত কিছু জানার পারেও তাদের হারানোর বেদনাই যখন বাজে বেশি গণহত্যা লুন্ঠন ধর্ষণ ছাপিয়ে তাই তাদেরো দায় আছে। তাই পাকিস্তানীদের প্রতি ঘৃণা, তাই পাকিমন পেয়ারা (যারা আজো আক্ষেপ করে 'হারানো' দিনগুলোর জন্যে)-দের প্রতি ঘৃণা। পাকিস্তান গোল্লায় যাক। আগেও বলেছি এরা এসবের ধার ধারেনা। ধারলে অন্তত মাফটুকু চাইতো (অর্থ হয় না যদিও কোন)।
৫।
তা এই অপরিহার্য কাজটা শুরু করলো কেডা। আর এটা করতে গিয়ে ব্যাপারটা যে শেষ পর্যন্ত গণহত্যায় গিয়ে ঠেকলো সেই খেয়াল আছে? আমি বরং তোমাকে নিয়ে চিন্তিত, পুরো ব্যাপারটাকে একটা অপরিহার্যতার আবরণ দিয়ে ফেললে।
৫। একাত্তরের রক্তাক্ত ইতিহাস দেখে, এতগুলো প্রাণের বিনাশ দেখে আমার মাথার ঠিক নেই, আমি এখনো উদ্ভ্রান্ত, সারা দেশ উদ্ভ্রান্ত।তার ক্ষত এখনো শুকোয়নি। সেই আমাদেরি কেন সব ভুলে গিয়ে নিরপেক্ষতার বড়ি খেয়ে 'পাকিস্তানী ভাই'দের হৃদয়ে ভালোবাসার লুক্কায়িত ভোমরাটিকে খুঁজে বের করতে হবে। কি কথা তাহার সনে?
নাকি সেটাই করতে হবে কারণ সেটা 'তত্ত্বীয়' ভাবে ঠিক, আর তা না করাটাই হবে 'মারাত্মক' ভুল? সেটা করতে গেলে আমাকে সব ভুলে যেতে হয়, ঘোর অ্যামনেসিয়া বা আলঝেইমার না হলে আমার পক্ষে সেটা ভুলে যাওয়া সম্ভব না। তবু কি আমাকে ভুলে যেতে হবে 'এগিয়ে যাবার' জন্য? পাকিস্তানের সংগে মিলেমিশে এগিয়ে যাবার কোন প্রকল্প কি আছে বাংলাদেশের হাতে?
৬। বলতে বলতে বারবার খেই হারিয়ে ফেলছি। অনেক কথা বলার, কিন্তু ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারছিনা। জাতিগত ঘৃণার উপাদানগুলো কি কি, কেন একটি জাতির অন্তরে প্রোথিত হয়ে থাকে অসীম ঘৃণা আরেকটি জাতির জন্যে, এসব ইস্যুকে অ্যাড্রেস না করে সেই 'ঘৃণা'-কে তত্ত্বের আলোকে অসার বলে উঠলে কিছু ঘটনা, কিছু রেফারেন্স কিছু আরোপিত বুলি একটা টিনে ঝাঁকিয়ে কয়েকশো শব্দের একটা অর্থহীন 'প্রবন্ধ' তৈরী হয়, কাজের কাজ কিছুই হয়না।
৭। আর এসব লিখে কার ঝোল কার পাতে দিচ্ছো (অজান্তে অনিচ্ছায়ই বোধ করি) সেটাও ভেবে দেখো পারলে।
নূপুর ভাই,
আমার এই ব্লগ-পাঠে আপনার প্রচুর ভুল হয়েছে, অনেক কিছুই নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করেছেন।
আপনার নিজের উপর আরেকটু নিয়ন্ত্রণ আসুক, তারপরে বলবো।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
নুপুর ভাই,
আপনার কমেণ্টের উত্তর দিতে গিয়ে যুক্তির বদলে আবেগ বেশি থাকার কারণে ঠিক নিশ্চিত নই যে আমি বুঝতে পেরেছি আপনি কি বলতে চেয়েছেন। তারপরও যতটুকু বুঝলাম, তারই উত্তর দিতে চেষ্টা করিঃ
আপনার ১+২+৩ নং কমেন্টে মনে হচ্ছে, ডিসকোর্স বিষয়ে আপনার ধারণা আমার জানা ধারণা থেকে বেশ আলাদা। ডিসকোর্স যেকোন জাতীয়তাবাদী মতবাদের (আসলে যেকোন মতবাদেরই) একটা অবিচ্ছেদ্য অনুসংগ। এটা সত্য ইতিহাস নয়, ইতিহাসের একটা সিলেক্টিভ অংশ যা' উক্ত মতবাদকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়। আর সাধারণ জনগণ এটা তৈরী করে না, শুধুমাত্র এতে রেসপন্ড করে, মেনে নেয়।
আমি মোটেও সঠিক ইতিহাস বলতে 'অতীতমুখিতা' বোঝাইনি, আমি জানি ইতিহাসের মূল্য এবং প্রভাব কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ইতিহাস যেকোন জাতির জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ডমিন্যান্ট ডিসকোর্স সব সময়ই প্রকৃত ইতিহাসকে আড়াল করে, ঠিক এভাবেই। আর এর লক্ষ্যও খুব স্পষ্ট- ক্ষমতা, অর্জন করা এবং+ধরে রাখা।
৪নং কমেন্টের ব্যাপারে বলি, আমি দাবী করি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে আমরা মূল ফোকাসই এখনো ঠিক করতে পারিনি, ইতিহাস নির্মাণ ত' পরের কথা। আমাদের শত্রু কারা কারা, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কি কি ষ্ট্রাটেজী হওয়া উচিত, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের কিভাবে মূল্যায়ণ করা দরকার, তাদের চেতনা কি ও কিভাবে তা' বাস্তবায়ণ হবে- এসব বিষয় নির্ধারণে অনিবার্য ভাবেই নিয়ামকের ভূমিকা নিবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসচর্চায়।
আমার মতে, আমাদের প্রধান শত্রু সেই সময়কার পাকিস্তান রাষ্ট্র+সরকার+রাজাকাররা, এরপর পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। এই শত্রুর তালিকায় ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে জাতীয় শত্রু হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা যারা বর্তমানে জাতীয় স্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত, তারা- তা' সে যেকোন দল/গোষ্ঠি/মতের লোকই হোক না কেন। কিন্তু বিদ্যমান ডিসকোর্স আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ১৯৭১ এ আটকে দিয়ে পুরোপুরি অ-ঐতিহাসিক করে ফেলেছে, এর পরে আমাদের জীবনে কি ঘটে চলেছে, যেদিকে দৃষ্টপাত করতেই দিচ্ছে না। ফলে, জাতীয়তাবাদের আবরণে গোষ্ঠি+দলীয় স্বার্থ জাতীয় স্বার্থের উর্ধ্বে এসেছে। আর তাই যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, সে নিজের সুবিধামত মুক্তিযুদ্ধের একটা ডিস্কোর্স তৈরী করে নেয় নিজের যাবতীয় ভালো+মন্দ কর্মকে জায়েজ করতে। উদাহরণস্বরূপ, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের ভালো কাজগুলোর পাশাপাশি পাহাড়ীদের বাংগালী করার প্রজেক্ট, রক্ষিবাহিনী দিয়ে সমাজতন্ত্রীদের হত্যা, আত্মীয়তন্ত্র (যা'র ধাআরাবাহিকতায় আজ রাজাকারও মন্ত্রী), দূর্নীতি, ইত্যাদিও বৈধ্যতা পেয়ে যায়। এক্ষেত্রে পরবর্তী সরকারগুলো তা'র থেকেও অনেক বেশি এগিয়ে। এখানে লক্ষ্য করলে দেখবেন, মুক্তিযুদ্ধের ডিসকোর্সকে তারা ঢালের মতো ব্যবহার করে। লক্ষ্ণীপুরের আবু তাহেরের খুনী পুত্রকে ক্ষমা করে দেওয়া, শেয়ার বাজারে কেলেংকারীর হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না-নেওয়া, যুগ+ছাত্রলীগকর্তৃক আইনকে নিজের ইচ্ছে মতো নিজের হাতে তুলে নেওয়া, ইত্যাদি। তালিকা করতে গেলে দৃষ্টান্তের শেষ হবে না।
- আমি পুরোটাই একমত আপনার সাথে। কিন্তু 'সে অভিজ্ঞতা'টা কি? সেটা কি পুরোটা জানি? আমি মনে করি, সেই ইতিহাস আমরা জানিনা। আর তাই, অনুরূপ ইতিহাসের পর্যালোচনা থেকে জানতে চেষ্টা করেছি সে সময়কার জাতীয় শত্রুদের। এর মানে কোনভাবেই এটা নয় যে, আমি তখনকার হত্যা+ধর্ষণ+লুটতরাজ এসবকে অস্বীকার করছি। কারা কারা যুদ্ধের জন্য দায়ী, কারা কারা হত্যার জন্য দায়ী- এসবের স্পষ্ট নির্ধারণ হোক। আমি যুক্তিসংগত কারণেই মনে করি 'পাকি', 'পাক-হানাদার' ইত্যাদি দায়সাড়া ডেফিনিশন দিয়ে, গণহারে একটা জাতির বিরুদ্ধে ঘৃণা পোষণ করে, মুহূর্তের অসতর্কতায়ও নিজেকে হত্যাকাংখী হিসেবে দাড় করানোর মধ্যে কোন প্রগতিশীলতা নেই, আছে চরম প্রতিক্রিয়াশীলতা যা'র শেষ গন্তব্য ফ্যাসীবাদ।
আপনার ৫নং মন্তব্যটিও ভুল-বোঝা থেকে। আমার কোন কথায় মনে হওয়ার কোন কারণ নেই যে, আমি পাকিস্তানীদেরকে 'পাকি ভাই' হিসেবে বিবেচনা করেছি। এটা আপনার মনে হয়েছে এই জন্য যে, আপনার বিশ্বাসের জায়গায় আপনি (আপনার মতো এই ধারায় বিশ্বাসী সকলে) ওদেরকে ভাই হিসেবে দেখতে চান বলে। আর যেহেতু ওরা ১৯৭১ এ ভাই না হয়ে শত্রুর মতো ব্যবহার করেছে, তাই ওদের প্রতি এতো রাগ, ঘৃণা। ওদেরকে সাধারণ মানুষ হিসেবে ভাবলে এই ঘৃণা থাকার কথা না। আর উপরে অনেকের, বিশেষ করে ফয়েজ ভাইয়ের আর কাইয়ুমের মন্তব্যের উত্তরে বলেছি কেন ওদেরকে আমি ভাই বলে মনে করা যথার্থ মনে করি না। আর এও বলেছি কেন একটা আগ্রাসনমূলক যুদ্ধের জন্য আমি পুরো জাতিকে দায়ী মনে করি না (সেটা বুঝতে+বোঝাতেই ভিয়েতনামের উদাহরণ টেনে নিয়ে আসা, ১৯৭১ এর হত্যা-ধ্বংসলীলাকে নরমালাইজ করতে নয় অবশ্যই)।
আপনার ৬নং কমেন্টের সাথে কি এই পোষ্ট কোনভাবে রিলেট করা যায়? আরেকবার ভেবে দেখবেন।
৭নং কমেন্টে উল্লিখিত রিস্কের ব্যাপারে আমিও ভেবেছি। কিন্তু এই রিস্কের ভয়ই যে বিদ্যমান ডিসকোর্সের 'একমাত্র সত্য' হয়ে ওঠার বাস্তবতাকে আড়াল করে দিচ্ছে, সেটাও ত' ঠিক, ভুল বললাম কি?
নুপুর ভাই,
আমার মন খুব খারাপ হলে, অথবা ব্যক্তিগত কোন কারণে খুব হতাশায় ভুগলে আমার ওরিয়েন্টালিজম ব্লগে করা আপনার মন্তব্যটা পড়ে দেখি। মনোবল আবার ফিরে পাই। বলতে চাইছি, আপনাদের মতো বড ভাইদের স্নেহ আর ছোটদের সম্মান পাওয়ার জন্যই সিসিবি'তে লেখালেখি করা। সেই ভরসাতেই নিজের মাঝে ঘুরপাক খেতে থাকা প্রশ্নগুলো+চিন্তাগুলো সবার সাথে শেয়ার করা। আশা করি, আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা সেই দিকেই যাবো। এতে আমার নিজের আর কোন বৈষয়িক লাভ না হলেও চিন্তার স্বচ্ছতা পাওয়া হবে যা' আমার কাছে অনেক মূল্যবান।
সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ। (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ,
বেশ ব্যস্ত সময় যাচ্ছে বলে প্রতিমন্তব্য দেরীতে করা হচ্ছে।
আসলেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ায় আলোচনাটা ঠিক সেভাবে হতে পারছেনা।
তোমার স্থিতধী অবস্থানের জন্যে অশেষ ধন্যবাদ।
আমার শেষ দুটি মন্তব্যের মধ্যে তেমন কোন ফারাক নেই, দ্বিতীয়টি শুধু প্রথমটির ভাবসম্প্রসারণ। এবং দ্বিতীয়টি অবশ্যই বেশ উচ্চকিত, কোথাও কোথাও একটু মাত্রাছাড়া।
আশা করছি, অনুভূতিপ্রবণ হয়ে পড়ে গিয়ে এই যে কথোপকথন, এটুকু আমরা পরষ্পর করতেই পারি; সে স্পেস আমাদের আছে। আর এমন মুহুর্তে তোমার সুস্থির চিন্তাবোধ আমার খুব ভালো লেগেছে, আমিও একটু সুস্থির হলে এবারে আলোচনায় এগুনো যায়। তাই না?
তোমাকে, তোমার চিন্তার ধরণকে এখানে অনেকেই বোঝে বলে আমার মনে হয়েছে। কাইয়ূম, মুহাম্মদ, রাব্বীসহ আরো অনেকেই সঠিক ধরতে পেরেছে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে কথাগুলো লিখেছো। আমিও একবার পড়েই ঠিক বুঝেছিলাম, তোমার বক্তব্যটুকু।
আমার পাঠপ্রতিক্রিয়ায় অনেক কথাই তোমার উপর আরোপ করে দিয়েছি। আমিও সেটা বুঝতে পারছিলাম, তারপরো নিজের চিন্তাকে পরে 'সম্পাদিত' করিনি।
কারণ, আবেগকে সরিয়ে রেখে যুক্তিটুকু নিয়ে নাড়াচাড়া করতে পারছিলামনা, বিশ্বাস করো এখনো পারছিনা। আমি শুধু এটাই বলতে চাইছিলাম, নির্মোহ যে হতে পারছিনা, এটার জন্য আমি একা দায়ী নই। এ আমার উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। ইতিহাসের পুনঃ কিংবা সঠিক পাঠের জন্য নির্মোহ হবার সত্যি প্রয়োজন, কিন্তু সেটা কি করে কোথা থেকে কাদের দিয়ে শুরু হবে এসব ভাবতে গিয়ে আমার আর খেই থাকেনা।
ঢালাওভাবে ( বা বাইনারী পদ্ধতিতে ) পক্ষবিপক্ষ নির্ধারণ যে ভুল এব্যাপারে আমার কোন দ্বিমত নেই, বলাই বাহুল্য। আমি শুধু আতংকিত একারণে যে, এতদিন পরে (যখন আমরা অসংরক্ষিত ইতিহাসের বহুকিছুই ভুলে গেছি, প্রমাণাদি হাতের কাছে আর নেই) পক্ষবিপক্ষ নতুন করে নির্ধারণ হোক এটাই অনেকে চায়না।এ প্রক্রিয়াটাই তাদের কাছে অনাকাংখিত; ফাঁকফোঁকর গলে বেরিয়ে যাবার বহু সুযোগ আমরা নিজেরাই তো সৃষ্টি করে বসে আছি। ব্যাপার হচ্ছে এই।
পাকিস্তান রাষ্ট্র বা পাকিস্তানীদের সম্পর্কে:
আমি মনে করি, রাষ্ট্র বা জাতি হিসেবে তাকে বা তাদের দায় নিতে হবে, কোন না কোন সময় অবনত মস্তকে মেনে নিতে হবে তাদের অন্যায়গুলোর কথা।পুরো জাতির প্রতিটি মানুষ এর জন্যে দায়ী থাকবে স্ব স্ব বিবেকের কাছে, সঠিক কাজটি না করতে পারা পর্যন্ত।কিন্তু তাই বলে এজন্যে একজন পাকিস্তানীকেও এজন্যে অবিচারের সম্মুখীন হওয়াটা আমি জাস্টিফাই করবোনা। সোজা কথায়, আমার কোন পাকিস্তানী রোগী বা ছাত্র যদি পাকিস্তানী হয় তবে তার জাতিগত পরিচয় কোনভাবেই আমার কাছে প্রাধান্য পাবেনা। কিন্তু চায়ের টেবিলে বা অন্য কোথাও একই ব্যক্তিদের সংগে যদি প্রসংগক্রমে আলাপচারিতা হয় আমাদের অতীত নিয়ে, তখন মনে করিয়ে দিতে ভুলবোনা কি দায় সে বয়ে বেড়াচ্ছে।আর কেবল পাকিস্তানী পরিচয়ের কারণে কেু যদি কোন বাংলাদেশীর নিগ্রহ বা লুলটপাটের স্বীকার হয়, নিজের প্রাণ দিয়ে হলেও প্রতিরোধ করবো। এই-ই হলো আমার অবস্থান।
কিন্তু এরপরো ভেতরে যে আরো একটা কিন্তুকিন্তু রয়ে গেছে সমগ্র পাকিস্তানী জাতির জন্যে, সেটা বোধহয় কখনোই যাবেনা। সেটা অনেক লম্বা সময়ের ব্যাপার। শুধু বিস্মৃতি দিয়ে এ ক্ষত সারবেনা। যে পাপ তারা একটি জাতি হিসেবে করেছে, তার জন্যে শুধু তাদের সেনাবাহিনীকে আমি দায় দেবো না।
টুইন টাওয়ারে বিমান হামলার পর যেসকল মানুষ ভেবেছে, আমেরিকার এমনটা প্রয়োজন ছিলো আর তাদের উচিত শিক্ষা হয়েছে, আমি মনে করি তারাও সমান দোষে দোষী (হ্য়তো তাদের সেই ইনভলভেন্ট ছিলোনা, কিন্তু সমর্থন তো ছিলো। ওদের হয়ে কাজটা অন্যরা করে দিলো বলে তাতে নীরবে মজা পাওয়া তো ছিলো)।
(আগের মন্তব্য শেষ করতে পারিনি। কিছু একটা ঝামেলা হচ্ছিলো।)
একটা সমস্ত জাতির বিবেকের কথা চিন্তা করলে পুরনো পাপগুলোর একটা হিসেবনিকেশ তাদের করতে হবে, তাদের নিজেদেরি জন্য, আমাদের কথা না ভাবলেও।তবে, সেজন্যেই, তারা অন্তত এখন কি ভাবছে সেটা স্থিরভাবে নিরূপণ করা অনেক জরুরী। আমরা যেমন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলাবলি করছি, ওরা একটুও অনুতপ্ত নয় এখনো, সেটাই সামগ্রিক ভাবে জানা উচিত। জানা উচিত আমাদের খন্ডিত, ব্যক্তিগত অনুধাবনগুলো কতটা ঠিক। তাহলে আমাদের ঘৃণা বলো, আক্রোশ বলো তার
তল বা ভিত্তির যৌক্তিকতাটা বোঝা যাবে।
আর আমাদের পাহাড়ি অধবাসীদের কথা এসেছে বলে আরেকটু বলি। যদি আমাদের যা বলার তা বলে উঠতে না পারি, যদি সরকার বা সমগ্র দেশের রাজনৈতিক অবস্থানের
সংগে দ্বিমত পোষণের অবকাশ আছে বলে মনে করেও চুপচাপ বসে থাকি, আর এজন্যে যদি একজন পাহাড়ি কোটি বাংগালির সবাইকে ঘৃণা করে তাকে কি দোষ দেয়া যাবে?
তার উপর কি এটা চাপিয়ে দেয়া হয়নি? শুভবুদ্ধি নিয়ে, যে তার উপর কোন অত্যাচার করেনি, তাকে দেখার পথ প্রশস্ত করাটা আমাদের সবারি দায়। তা না হলে এটা শুধু একটা বোঝা হয়েই থাকবে একপক্ষের কাছে।
আবারো, অনেক কথা বললাম। জানিনা নিজেকে বোঝাতে পেরেছি কিনা।
আর, আমার ৬ নং প্রসংগটা নিয়ে কথা নাই বা বললাম। তুমিও জানো আমি তোমাকে কিভাবে দেখি। একটা কথায় কিছুই প্রমাণ হয় না। আমার এটুকু সহই তুমি আমাকে বুঝে নেবে এটুকু বাড়তি আশা তো করতেই পারি, কি বলো। 😀
মাহমুদ ভাই, অনেক দিন পর সিসিবিতে লগ ইন করলাম আপনার পোস্ট টাতে কমেন্ট করতে। সবগুলো কমেন্ট পড়ে শেষ করতে পারিনি, তার আগেই আবার বিজি হয়ে গেলাম।। আপাতত পোস্ট প্রিয়তে তুলে গেলাম। আর কিছু জায়গায় হালকা দ্বিমত আছে। সময় করে জানিয়ে যাবো।
ভালো লাগল এই ভেবে যে, আমার পোষ্ট অন্ততঃ তোমাকে সিসিবি'তে লগ-ইন করাতে পেরেছে 🙂
হালকা নয় শুধু, জোরালো দ্বিমতও আশা করছি। আফটার অল, এখানে লেখার বিষয়বস্তুটা খুবই ডেলিকেট।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
পোস্ট পড়ার পরে কমেন্টগুলো পড়তে গিয়ে মূল লেখার বিষয়গুলো থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলাম। কমেন্টগুলোর ইফেক্ট মাথা থেকে সরিয়ে পোস্টের ব্যাপারে আমার আনবায়াসড ভাবনা গুলো আগে বলবার চেষ্ট করি।
পোস্টের যে বিষয়ে পুরো একমত সেটা হলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ভাবনা মোটামুটি বাংলা সিনেমার নায়ক গুন্ডা চিহ্নিত করণ আর সুপার হিরো কিংবা সুপার ভিলেন খোঁজার মাঝে শেষ হয়ে যায়। যেটা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। আমি যদি পোস্ট টি ভালোমত বুঝে থাকি আপনি বুঝাতে চেয়েছেন ডিজিটালি নায়ক গুন্ডা যাচাই করার ব্যাপারটা ভুল, এবং ১৯৭১ এর ঘটনার দায়ভার তৎকালীন পাকিস্তনি রাষ্ট্রযন্ত্রের। ব্যাক্তি পাকি কোন মানুষের চরিত্র যাচাইয়ে তার প্রভাব থাকা উচিত না। এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ একমত। তবে তারপরের কথাতে হালকা আপত্তি।
এখানে আরেকদল শব্দটার মাজেজা আমার কাছে ক্লিয়ার হয়নি। আরেক দল মানে কি যারা এই ভুলটি করেন না তারা, নাকি যারা প্রকাশ্যে মুসলিম ব্রাদারহুডের গল্প ফাঁদেন (মাঝে মাঝে পাকিদের সাহাবাদের জাত বলেন) পাকি দেখলেই লদলদে গলিয়ে পড়েন কিংবা ১৯৭১ এ পাকি বিভাজন ভুল ছিল জাতীয় দাবি করেন?? উল্লেখ্য দ্বিতীয় দলটি প্রথম দলের সাবসেট। মাত্রাতিরিক্ত সরলীকরণের ফলে পূরক সেট (মানে ১ম দল-২য় দল) এ গালিতে পড়ে না তা না, তবে যেকোন রকম সরলীকরণকে বিরোধিতা করেও আমার মনে হয় বেনিফিট অব ডাউটে দ্বিতীয় দলের লোকগুলো যদি গ্রাউন্ড পেয়ে যায় তাহলে সময়ের সাথে সাথে ইতিহাস বিকৃতির সম্ভাবনা আরো বাড়বে।
আমি জানি না আমি ঠিক বলছি কিনা, ভুল হলে শুধরে দেবেন। আপনি এখানে পাকিস্তান রাষ্ট্র আর রাজাকার এক গ্রাউন্ডে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন যেখানে এমনকি আপনি খুব সম্ভবত রাজাকারদের ব্যাপারে ঘৃণার জায়গাটুকু রেখে পাকিস্তান রাষ্ট্র ঘৃণার ব্যাপারটাকে ভুল বলেছেন। আমার কাছে কিছুটা কন্ট্রডিকশন লেগেছে এই জায়গায়।
কোন রাষ্ট্র কিংবা তার অধিবাসীদের মোটাদাগে ঘৃণা করার দলে আমি নেই। ব্যাক্তিক বিশ্লেষণে গোষ্ঠিগত আরো বিশেষভাবে বললে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম দ্বারা বায়াস হওয়াটা একাডেমিক্যালি ভুল হলেও একটা নেগেটিভ ইফেক্ট থেকে যায়। এই ভুলটুকু আমি স্বীকার করে নিচ্ছি।
আপনার লেখা পড়ে মনে হয়েছে পাক মন পেয়ারা শব্দটা জাতিগত ঘৃণা হতে উদ্ভুত। কিন্তু আমার কাছে বাস্তব কিন্তু তা মনে হয়নি। পাক মন পেয়ারা লোক আছএ যারা কথায় কথায় বুলি চাপড়ে যান পাকিস্তান আমলে এটা ভালো ছিল ঐটা ভালো ছিলো, পাকিস্তান রাষ্ট্র ভাঙা ভুল ছিলো ইত্যাদি। আপনার লেখা পড়ে মনে হয়েছে যারা যথেষ্ট ঘৃণা করছে না পাকিস্তানকে তারাই পাক মন পেয়ারু। আন্দালিবের মন্তব্যে গ্রে অংশে কথা এসেছে। বেশির ভাগ লোক গ্রে অংশেই বাস করে। মানে পাক মন পেয়ারুও না আমার পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতি তীব্র ঘৃণা করে নেই। কিন্তু আপনার লেখায় মনে হয়েছে এখন ডিজিটালি দুই দল ( আমার বুঝার ব্যর্থতা হতে পারে।)
অপ্রাসঙ্গিক ভাবে আরো কিছু কথা বলতে চাই। আমি মাঝে মাঝে হতাশ হই আমাদের হীনমন্যতা আড় মাত্রতিরিক্ত সরলীকরণে। এখানে আরেকটা টার্ম আছে ভাদা। ভারতীয় দালাল। আষল কথাকাটাকাটি যখন হয় এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ভাদা আর পাকি মন পেয়ারা বলে ইট ছোড়াছুড়ি করে। তাহলে কি আমাদের নিজেদের জাতীয়তাবাদ বলে কিছু নেই। এই দেশকে লাথি মেরে ঐ দেশের কোলে বসাতেই কি আমাদের সব চেতনা !!! একাডেমিক ভাবে ভারত প্রীতি কিংবা পাকি প্রীতি কোনটাই গ্রহণযোগ্য নয়। আপনি পাকি ঘৃণার কথা বললেও পাকি মন পেয়ারা লোকদের ব্যাপারটাকে এড়িয়ে গেছেন মনে হয়েছে।
তবে আপনার মূলসুরের সাথে পুরৈ একমত। লেখাটি আবেগের উর্ধ্বে গিয়ে নির্মোহ হয়েছে যেটা প্রশংসার দাবি রাখে। তবে একটু খেয়াল কইরা বস। আপনার এই নির্মোহ লেখা কখন কীভাবে ব্যভৃত হবে আপনি টের পাবেন না। আজ খালেদা জিয়া দাঁড়িয়ে বলছেন নিজামী মুজাহিদী সাকারা যুদ্ধাপরাধী না, কালকে হয়তো শোনা যাবে কেউ বলে বসছে ১৯৭১ সালে এদেশে আদতে কোন যুদ্ধই হয়নি।
এ জন্য ডাইলেমায় ভুগি। মুহম্মদ যেটা উপরে বলেছে কারো মাঝে পাকি বিরোধী মনোভাব দেখলে অন্তত নিশ্চিত হই যে সে রাজাকার গোত্রীয় না।
আর আরেকটা কথা রাজাকার আলবদর রা মনে হয় আপনার তৈরি করা মডেলের মাঝে পড়ে না। তারা স্বতপ্রণোদিত হয়ে ইসলাম রক্ষায় ঝাপাইছিলো। তাদের মতাবলম্বীরাই লুকিয়ে আছে পাকি মন পেয়ারাদের ভিড়ে।
আমি নির্মোহ ভাবে বলাটাই তো শেষ কথা না। বরং সেই নির্মোহ কথা চরম মোহযুক্ত সমাজে খার কোর্টে পড়বে সেটা কেউ বলতে পারি না।
শেষ করবো তালগাছবাদী যুক্তি (নাকি কুযুক্তি) দিয়ে। ব্যাক্তিক বিশ্লেষণ রাস্ট্র দ্বারা না করে রাস্ত্র বিশ্লেষণ যদি ব্যাক্তির দ্বারা করা যায় সেটা কী একাডেমিকভাবে ভুল? ভুল হোক আড় না হোক , আমার সৌভাগ্য কি দুর্ভাগ্য সেটা হলো আমার পরিচিত স্যাম্পল স্পেসের পাকিগুলোকে কখনৈ ভালো লাগার কিছু পাই নি। ঘৃণা করার কিছু না পেলেও তাদের কথাবার্তায় খুবই বিনোদিত হয়েছি। তারা মুসলিম ব্রাদারহুডের কথা তুলে ১৯৭১ ভারতের ষড়যন্ত্র এমন আবেগী কথা খুব চালায় । এবং এই ইন্টারনেটের যুগেও সত্য যাচাই বাছাইয়ের চেষ্টা না করেই ১৯৭১ কে ব্লার করার চেষ্টা করে(সেই চেষ্টা আমরাও করি হয়তো)। সবকিছুর শেষে আমি বলবো, পাকি নামক রাষ্ট্রের প্রতি ঘৃণা না থাকলেও তাদের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা নিয়ে আছি থাকবো, সেটা একাডেমিক্যালি ভুল জেনেও।
পোস্টের জন্য ধন্যবাদ মাহমুদ ভাই।
অবশেষে তোমার সময় হয়েছে বিস্তারিত মন্তব্যে আসার 🙂 ।
তোমার 'আনবায়াসড' ভাবনাগুলো দিয়ে দ্বিমতগুলো আলোচনা করা যাকঃ
তোমার আনবায়াসড ভাবনাঃ
এবার দেখা যাক, দ্বিমতগুলোঃ
১। যেখানে আমার সাথে তুমি একমত পোষণ কর যে, ১৯৭১ এর দায় 'তৎকালীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের', সেখানে বর্তমানে এসে সাধারণ জনগণের মধ্যে সেই দায় চাপানোটা কি ভ্রান্ত নয়? রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে রাষ্ট্র-চালকরা ভালো+মন্দ যা কিছু করে, তা'র কৃতিত্ব/দায় কোনটাই আপামর জনগণের উপর আরোপ করা যুক্তিসঙ্গত বা বাস্তব নয়। একারণ একটা রাষ্ট্রের "খুনী" সরকারের ইমেজ দিয়ে সাধারণ জনগণের বিচার করা অবাস্তব।
২।
- ঠিকই ধরেছ। কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার করা দরকারঃ সর্বযুগের পাকিস্তান রাষ্ট্র নয়, শুধুমাত্র ১৯৭১-উত্তর পাকিস্তান রাষ্ট্র। শুত্রুতা কোন চিরস্থায়ী বিষয় নয় যা' বংশ পরম্পরায় চলতে পারে, একই ভাবে বন্ধুত্বও; দুটোকেই চলমান বাস্তবের মধ্যে দিয়ে বিবেচনা করতে হয়। বাস্তবে তাকিয়ে দেখ, আমার অবস্থানের যথার্থতা মিলবে আশা করি।
আমার লক্ষ্যও এই গ্রে অংশই। মুক্তিযুদ্ধ ফিরিয়ে আনা যাবে না, ফলে আর কারো পক্ষে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেওয়ার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করাও সম্ভব নয়। কিন্তু বিদ্যমান ডিসকোর্স এমনভাবে ব্যক্তির পরিচয় নির্ধারণ করে চলেছে যে, ব্যক্তিকে একটা অবস্থান নিতেই হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতে- পক্ষ অথবা বিপক্ষ। কিন্তু যুদ্ধে যাওয়ার ত' আর উপায় নেই? - এ অবস্থায় ব্যক্তির সামনে একমাত্র+সহজ সমাধান হিসেবে তুলে ধরা হয় "পাকি বিরোধী মনোভাব" যা' দেখানো মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে সে "রাজাকার গোত্রীয় না"। ক্রমশঃ এটাই হয়ে দাঁড়ায় এই ডিসকোর্সে ব্যক্তির পরিচয় নির্মাণের প্রধান (প্রায়শঃই একমাত্র) মেকানিজম। এইভাবে দেশপ্রেমকে 'পাকিঘৃণা'র বিপরীতে বসিয়ে একটা ক্ষুদ্র গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলা হয়। ক্ষুদ্র বলছি এই কারণে যে, দেশপ্রেম দেখানো/প্রমাণ করার আরো উপায় থাকার সম্ভাবনাগুলোকে এটা অস্বীকার করে। যেমন, নিঃস্বার্থভাবে বাংলাদেশের জন্য কাজ করা, জনকল্যাণকর কাজকর্মের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সেবা করা, ইত্যাদি। কিন্তু, দেশপ্রেমের এই বাধ্যতামূলক+সহজলভ্য ডেফিনিশন থাকায় যাদেরকে আমরা 'গ্রে অংশ' বলছি, তারা 'পাকি-ঘৃণা' প্রকাশের জন্য একটা দায় অনুভব করে, পাশাপাশি এটাকে দেশপ্রেমিকের খাতায় নাম লেখানোর 'ফাস্ট' উপায় হিসেবে গ্রহন করে। 'পাকি-ঘৃণা'কে দেশপ্রেমের প্রধান চিহ্ন হিসেবে মেনে নিনিতে আমার আপত্তিটা ঠিক এই জায়গায়।
১৯৭১ এর প্রেক্ষিতে পাকি-ঘৃণার সাথে ইসলামকে জুড়ে দেওয়াটা আসলে বর্তমানের আবিষ্কার, ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির ফল, যুদ্ধাবস্থার বাস্তব ইতিহাস নয়, কখনোই নয়। এটা মানতে হলে এমন মিথ্যাবাদী বা নির্বোধ হতে হবে যে প্রচার করা বা বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশিদের মধ্যে সকল সাচ্চা বা আধা-সাচ্চা মুসলমান ১৯৭১ এ পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল (পপারিয়ান ডিডাক্টিভিজম ব্যবহার করলে এই ধারণায় আসা কঠিন নয়)।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
অসাধারণ এই পোস্টের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনারা যদি এভাবে সাহস ও সততার সাথে কিবোর্ড ধরেন। ভড়ংবাজ ফালতু কলম ব্যাবসায়ীরা আর লেখার মাধ্যমে ইতিহাস বাণিজ্য করার পথ পাবে না।
অসাধারণ কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন। আসলেই সস্তা আবেগের মোহে পড়ে মানুষ অনেক অন্ধকারে পড়ে থাকে। যুক্তি দিয়ে বিচার করতে চায়না আসলে কি হয়েছে।
একজন ভারতীয় নাগরিক ৭১ নিয়ে যে ধারণা রাখেন, আমার ধারণা মোটামুটি একই।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের চেতনাধারী দল এবং তাদের অন্ধ সমর্থকেরা আজগুবি সব রূপকথা টেনে দেশে একটা ইসলাম বিদ্বেষ এবং জাতিগত বিভক্তির রেখা স্পষ্ট করে রেখেছে।