সমাজ সংস্কারের প্রেক্ষিতে তত্ত্ব ও এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কিছু কথাবার্তা

মাঝে মধ্যে এমন শুনি যে, তত্ত্বকথা বলে/শুনে লাভ নেই। হাতে নাতে কাজই হলো আসল। বিশেষ করে ডেভেলপমেন্ট-প্র্যাকটিশনাররা কেউ কেউ এই জাতীয় কথা বলে। তাদের মতে, তত্ত্বালাপের থেকে ফিল্ডে কাজ করা বেশি জরুরী।- এ ধরণের মন্তব্য আদতে তত্ত্বজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক। কারণ, তত্ত্ব বাস্তব কর্ম থেকে আলাদা কিছু নয়; বাস্তব ঘটনার সিস্টেম্যাটিক পর্যবেক্ষণ থেকেই তত্ত্বের উদ্ভব। তত্ত্বের কাজ আপাতঃ অসংলগ্ন, বিশৃখল, জটিল সামাজিক অবস্থাসমূহের মধ্যে সাধারণ প্রবণতা খুঁজে দেখা এবং এর মাধ্যমে একাধিক কনসেপ্টের মধ্যকার সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা যা’ থেকে সহজেই সমাজকে বোঝা সম্ভব হয়।

অগণিত ঘটনা থেকে প্রাপ্ত/সংগৃহীত তথ্য থেকে গবেষণার মাধ্যমে তত্ত্ব নির্মাণ করা হয় যা’ পরবর্তীতে অনুরূপ সামাজিক প্রেক্ষিতে কি ঘটতে পারে বা ঘটতে যাচ্ছে আমাদেরকে সেই সম্পর্কে গবেষণা ছাড়াই স্পষ্ট ধারণা দেয়। কোন কাজ/প্রকল্প/পলিসির ফলাফল কি হবে সে সম্পর্কে আগে থেকেই অনুমান করার জন্য তত্ত্বজ্ঞান অত্যন্ত ফলপ্রসু। এতে আমাদের কোন কাজ/প্রকল্প/পলিসির মাধ্যমে সমাজে বিরূপ ফলাফল নিয়ে আসার সম্ভাবনা কমানো যায় এবং আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া ত্বরান্বিত করা যায়।

আসুন বাস্তব উদাহরণ দিয়ে দেখি সমাজবিজ্ঞানে কিভাবে তত্ত্ব গঠন করা হয় এবং কিভাবে তা আমাদের বাস্তব জীবনে কাজে লাগে বা লাগতে পারে।-

বিখ্যাত টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার ঘটনায় ১৯১২ সালে বৃটেনের সরকার যে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে সেখানে দেখা যায় জাহাজের যাত্রীদের মধ্যে সর্বোমোট ২২২৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল যা ছিল ঐ জাহাজের মোট যাত্রীর ৩১.৯৭% ভাগ। এই জীবিতদের মধ্যে ৪২৫ জন নারী, ১৬৯০ জন পুরুষ এবং ১০৯টি শিশু। রিপোর্টে উল্লেখ্য করা হয় যে, জাহাজের ক্যাপ্টেন এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ যাত্রীদের রক্ষা করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল। মৃত্যুভয়ে ভীত যাত্রীরা যা’তে হুড়োহুড়ি করে বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে না পারে সেইজন্য তারা জাহাজের যাত্রীদেরকে একেক তলা থেকে লাইফবোটে তুলেছিল। লাইফবোটগুলো ছিল জাহাজের ছাদে। ফলে তারা প্রথমে ছাদের কাছাকাছি অবস্থিত ১ম শ্রেণীর যাত্রীদের লাইফবোটে তোলে। তাদের পর তোলে পরবর্তী তলা তথা ২য় শ্রেণীর যাত্রীদের। সবশেষে তোলে ডেকের কাছাকছি অবস্থিত ৩য় শ্রেণীর যাত্রীদের। তদন্তে তথ্যের উৎস ছিল সেই যাত্রায় বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা। তারা সকলেই জাহাজের ক্যাপ্টেন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তার কথা অকপটে স্বীকার করেছে। কিন্তু জীবিতদের সংখ্যাগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে যা সাধারণতঃ চোখে পড়ে না। দেখা যাক সেটা কি। –

কোন তলা বা শ্রেণী থেকে কতজন নিখোঁজ বা মৃত্যবরণ করেছে সেই সংখ্যাগুলো ছিল এরকমঃ ১ম তলা থেকে মোট যাত্রীর ৩৭%, ২য় তলার মোট যাত্রীর ৫৯%, এবং ৩য় তলার মোট যাত্রীর ৭৫% ভাগ নিখোঁজ। রেশিও (Ratio) হিসেব করলে দেখা যায় ১ম তলার যাত্রীদের বেঁচে যাওয়ার রেশিও ১.৪০, ২য় তলার যাত্রীদের ১.০২, এবং ৩য় তলার যাত্রীদের মাত্র ০.৬৯।

১৯৬৫ সালে আমেরিকা ২০শতকের ভয়াবহতম যুদ্ধ শুরু করে ভিয়েতনামে। তাৎক্ষণিক এবং পরবর্তী সময়ের ক্ষয়ক্ষতির বিবেচনায় এই যুদ্ধকে অনেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাথে তুলনা করে। আমেরিকা এই যুদ্ধে ভিয়েতনামে এতো বেশি পরিমাণে বোমা ফেলে যে সেদেশের পুরো ইকোসিস্টেম ধ্বংস হয়ে যায় (এই থেকে অক্সফোর্ড ডিকশনারী ‘ইকোসাইড’ নামের এক নতুন শব্দ অন্তর্ভূক্ত করে)। এই যুদ্ধের সময় আমেরিকায় যুদ্ধে যাওয়ার উপযুক্ত নাগরিকদের বাধ্যতামূলকভাবে সেনা বাহিনীতে ‘ড্রাফট’ করা হতো। প্রায় ১০ মিলিয়ন আমেরিকানকে যুদ্ধের জন্য ড্রাফট করা হয় যায় দুই-তৃতীয়াংশকে প্রায় দশকব্যাপী সেই যুদ্ধের কোন না কোন সময়ে ভিয়েতনামে পাঠানো হয়।

ড্রাফটিং-এর মাধ্যমে সকল সমর্থ নাগরিকদের সেনাবাহিনীতে নিলে শিল্পে, কৃষিক্ষেত্রে, অফিস-আদালতে কাজ চলবে কি করে? এই কারণে ড্রাফটিং এর সময় এমন কিছু নিয়ম করা হয় যেন এইসব ক্ষেত্রে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক শ্রমিক থাকে। তাই, পেশাজীবি, নিজ-ফার্মে কর্মরত কৃষিজীবি, বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এবং স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত সকল ছাত্রদেরকে সেনাবাহিনীতে ড্রাফটিং থেকে বাদ দেওয়া হয়। সারাদেশে এই নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলা হয়। এরফলে দেখা যায়, সেনাবাহিনীতে ড্রাফটিং-এর মাধ্যমে নেওয়া সেনাদের সিংহভাগ এসেছে দরিদ্র (poor) এবং কর্মজীবি (wage-worker) পরিবার থেকে।

উইসকনসিন রাজ্যে ১৯৬৭ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকানদের মধ্যে হতাহতের পরিমাণ নিয়ে এক গবেষণায় দেখা যায় যে, দরিদ্র+কর্মজীবি পরিবারে ড্রাফটিং-এর যোগ্যদের মধ্যে ৫১.৯%, মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে ৩০.২% এবং কৃষিজীবিদের মধ্যে ১৭.৮% ভাগ নাগরিককে সেনাবাহিনীতে ড্রাফট করা হয়েছে।

উক্ত যুদ্ধে কর্মজীবি পরিবার থেকে আসা সৈন্যদের মধ্যে হতাহতের রেশিও ১১৬.১৮, মধ্যবিত্ত পরিবারের সৈন্যদের হতাহতের রেশিও ৮৪.৪৪ এবং কৃষক পরিবারের সৈন্যদের হতাহতের রেশিও ৭৯.৭৭।

আবার দরিদ্র (poor) পরিবার থেকে আসা সৈন্যদের মধ্যে হতাহতের রেশিও ১৮২.৫৫ এবং অ-দরিদ্র (Non-poor) পরিবার থেকে আসা সৈন্যদের মধ্যে এই রেশিও ৮৫.৫৫।

সমাজতান্ত্রিক শাসনামলে রুমানিয়ায় গর্ভপাত নিষিদ্ধ ছিল। শুধুমাত্র পাঁচের অধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার পরই নারীদেরকে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হতো। সকল হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে কঠোর সরকারী নজরদারী ছিল যেন কেউ আইনবহির্ভূতভাবে গর্ভপাত করতে না পারে। একারণে নারীরা গোপনে হাতুড়ে ডাক্তারদের কাছে গর্ভপাত করাতো বলে রুমানিয়াতে গর্ভকালীন মৃত্যুহার আশংকাজনক হারে বেড়ে যায়।

১৯৮৯ সালে সমাজতন্ত্রের পতন হলে ১৯৯০ সালেই নতুন গণতান্ত্রিক সরকার আগের আইন বাতিল করে সকল নারীর জন্য গর্ভপাত বৈধ করে দেয়। এর ফল হয় অভূতপূর্বঃ ব্যাপক হারে রুমানিয়ান নারীরা গর্ভপাত ঘটাতে থাকে। এমন নজীরও আছে যে, একই নারী এক বছরে ৩বার গর্ভপাত ঘটায়। ফলে এক বছরেই জন্মহারের বিশাল পতন হয় যা’ সরকারের নীতি-নির্ধারণী মহলকে সতর্ক করে দেয়। মুক্ত-বাজার অর্থনীতির অনুগামী সরকার মার্কেট-মেকানিজমের মাধ্যমে গর্ভপাতকে নিরুৎসাহিত করার পদক্ষেপ নেয়। তারা গর্ভপাতের সুবিধাসমূহের (সার্জারী, ঔষধ, সেবা, ইত্যাদি) দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। এরফলে সহসাই হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে গর্ভপাতের সংখ্যা অনেকাংশে কমে আসে। কারণ, যারা বর্ধিত খরচ বহন করতে সক্ষম, শুধু তারাই হাসপাতালে এবং ক্লিনিকে গর্ভপাতের সুবিধা নিতে পারতো। কিন্তু রুমানিয়ার অধিকাংশ নারীই দরিদ্র এবং বর্ধিত দামে স্বাস্থ্যসেবা কিনতে অপারগ ছিল। গর্ভপাতের এই দামবৃদ্ধির ফলে তাই দরিদ্র নারীদের মাঝে গর্ভকালীন মৃত্যুহার আবার বেড়ে যায়।

উপরের তিনটা ঘটনায় একটা সাধারণ প্যাটার্ণ লক্ষ্যনীয়ঃ সমাজকাঠামোয় ব্যক্তির অবস্থান তার জীবন/মৃত্যুর (life chance) নির্ধারক, যেখানে সমাজের নীচুতলায় (৩য় শ্রেণী) মানুষের জীবনকাল সবথেকে কম আর উচুতলায় (১ম শ্রেণী) মানুষের জীবনকাল সবথেকে দীর্ঘ। উল্লিখিত ঘটনাগুলোর কোনটিতেই কোন একজন বা একদল মানুষ অন্যান্যদেরকে মেরে ফেলার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনকিছু করেনি। সিদ্ধান্ত গ্রহনে সবক্ষেত্রে সাধারণভাবে সকলের বা সমাজের কল্যাণই প্রাধান্য পেয়েছে। তারপরেও দেখা যাচ্ছে যে, ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে একই ফলাফল পরিলক্ষিত হচ্ছেঃ কি দূর্ঘটনায়, কি যুদ্ধে, কি রাজনৈতিক পরিবর্তনে সমাজের নীচুশ্রেণীর মানুষের মৃত্যর সম্ভাবনা সবথেকে বেশি।

এইভাবে সমাজবিজ্ঞানীরা নানান দেশে, নানার পরিস্থিতিতে, নানান ধরণের সামাজিক অবস্থার মধ্যে অসংখ্য গবেষণার মধ্যে একই প্যাটার্ণ পর্যবেক্ষণ করে এই সিদ্ধান্তে আসে যে, social class is a decisive determinant of life chance, অর্থ্যাৎ, সমাজে শ্রেণী-অবস্থান মানুষের জীবন/মৃত্যুর নির্ধারক। এভাবে এই অনুসিদ্ধান্ত এক সময় সমাজবিজ্ঞানে একটা তত্ত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।

সমাজবিজ্ঞানের এই তত্ত্বটা কোন সমাজবিজ্ঞানীর শুধুমাত্র চিন্তা-ভাবনার ফসল নয়, এটা বাস্তব তথ্যের মধ্যে সিস্টেম্যাটিক পর্যবেক্ষণের দ্বারা প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত। এভাবে থিওরাইজিং-এ সমাজবিজ্ঞানী একেকটা বিশেষ ঘটনার বিশেষত্বগুলো (particularities) বাদ দিয়ে শুধু ঘটনাসমূহের মধ্যে সাধারণ (common) বিষয়গুলোকে বিবেচনা করে। যেমন, উপরোক্ত ঘটনাগুলোর স্থান (আটলান্টিক, ভিয়েতনাম, রুমানিয়া), কাল (১৯১২, ১৯৬৫-৬৭, ১৯৯০), পাত্র (টাইটানিকের যাত্রী, আমেরিকান সৈন্য, রুমানিয়ার নারী) বিশেষ। কিন্তু এই ঘটনাগুলোর মধ্যে সাধারণ হচ্ছে নীচুশ্রেণীর মানুষের তুলনামূলকভাবে অধিক মৃত্যুহার। অর্থ্যাৎ, সমাজকাঠামোয় ব্যক্তির অবস্থান এবং তার জীবন/মৃত্যুর মধ্যে একটা সম্পর্ক বিদ্যমানঃ সবক্ষেত্রেই মৃত্যুহার সমাজের নীচু অবস্থানে সর্বাধিক, আর উচ্চ অবস্থানে সর্বাপক্ষে কম।

আমরা জানি, সমাজে শ্রেণী-ধর্ম-বর্ণ-পেশা নির্বিশেষ সকল মানুষের সমান অধিকার। কাজেই, সকলের বেঁচে থাকার সমানাধিকার নিশ্চিত করা সকল রাষ্ট্রের কর্তব্য। এক্ষেত্রে উপরোক্ত তত্ত্ব বিবেচনায় রাখলে কোথাও দূর্ঘটনায় উদ্ধারকার্যে আগে থেকেই সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে যা’তে কোন বিশেষ শ্রেণীর মানুষ অধিক ক্ষতির মুখে না পড়ে; কোন রাষ্ট্র যুদ্ধের প্রস্তুতিকালে ড্রাফটিং-এর প্রয়োজন হলে এমনভাবে তা’ করবে যেন শুধু দরিদ্র আর কর্মজীবিরাই সেনাবাহিনীর অন্তর্ভূক্ত না হয়; কোথাও সমাজ সংস্কারের প্রকল্প নিলে তা’ এমনভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে যেন সুবিধাগুলো শুধুমাত্র বিশেষ শ্রেণীর মানুষের মধ্যে সীমিত হয়ে না পড়ে। এভাবে তত্ত্ব আমাদেরকে ট্রায়াল-এরোর এর মধ্যে অবশ্যম্ভাবী ফলাফল/ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সাহায্য করে।

একইভাবে সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্বই আমাদেরকে জানায় সবার জন্য শিক্ষার সমান সুযোগ বিদ্যমান থাকা সত্বেও দরিদ্রদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায় না বা অকালে ঝরে পড়ে, সরকারী-বেসরকারী নানা কর্মসূচী জারী থাকার পরেও কেন দরিদ্র জনগোষ্ঠী জন্ম-নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়, সকলের সদিচ্ছা থাকার পরেও দেশ থেকে কেন দূর্নীতি দূর করা যাচ্ছে না, ইত্যাদি।

বিজ্ঞান আছে বলেই তত্ত্ব আছে। আর তত্ত্ব আছে বলেই আমরা সহজে সমাজকে বুঝতে পারি এবং সমাজের প্রয়োজনীয় সংস্কারের চেষ্টা করতে পারি।

অতএব, উন্নয়ণ প্রক্রিয়ায় তত্ত্ব মোটেও অপ্রয়োজনীয় কিছু নয়, অপ্রাসঙ্গিক তো নয়ই। বরং, বিদ্যমান তত্ত্ব আমাদের বাস্তব কাজের ক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজনীয়। প্রকৃতপক্ষে, সমাজকে বোঝার জন্য, সমাজের উন্নয়ণের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য তত্ত্বজ্ঞান অপরিহার্য।

১৭ টি মন্তব্য : “সমাজ সংস্কারের প্রেক্ষিতে তত্ত্ব ও এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কিছু কথাবার্তা”

  1. মোস্তফা (১৯৮৮-১৯৯৪)

    তত্ত্বের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আমার মনে হয় না কেউ দ্বিমত করবে। বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হতে হলে সেটা অবশ্যই পর্যবেক্ষণযোগ্য হতে হবে। অর্থৎ সেই তত্ত্বের ভবিষ্যৎ প্রেডিকশানের ক্ষমতা থাকতে হবে এবং সেটা পর্যবেক্ষণযোগ্য হতে হবে। যদি কোন তত্ত্ব দাবী করে যে সেটা পর্যবেক্ষণযোগ্য নয় তবে সেই তত্ত্ব বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মর্যাদা হারাবে।

    তোমার লেখাতে সমস্যাগুলোই মূলত এসেছে। শ্রেণী বৈষম্য অবশ্যই আমাদের অনেক সমস্যার মূলে। কিন্তু আমি জানতে আগ্রহী এই শ্রেণী বৈষম্য সৃষ্টির পেছনের কারণগুলো এবং এর সম্ভাব্য সমাধান গুলো কি হতে পারে তা। আমার মত যারা সমাজবিজ্ঞানী নই তারা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে পারি, কিন্তু তোমার মত সমাজবিজ্ঞানীর কাছে থেকে প্রত্যাশা আরো বেশি। তোমাদের লেখা সমস্যা নিয়ে আলোচনার মাঝে সীমাবদ্ধ না থেকে সমাধান নিয়ে কথা বলবে সেই প্রত্যাশা করি। নিজের সেই প্রত্যাশাটুকু জানিয়ে গেলাম।

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
      তত্ত্বের ভবিষ্যৎ প্রেডিকশানের ক্ষমতা থাকতে হবে এবং সেটা পর্যবেক্ষণযোগ্য হতে হবে।

      - মোস্তফা ভাই,
      একেবারে আসল কথাটিই বলে দিয়েছেন। তত্ত্ব হতে হলে তা'র প্রেডিকটিবিলিটি থাকতে হবে, এবং তা' পর্যবেক্ষণযোগ্য হতে হবে। আমি উদাহরণ হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের যে তত্ত্বটা উল্লেখ করেছি তা'র মধ্যে এ'দুটো গুণই আছে। একারণেই এটা একটা প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব।

      তোমার লেখাতে সমস্যাগুলোই মূলত এসেছে।

      -আসলে এখানে আমি একটা তত্ত্বকে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে এসেছি যা ঘটনাক্রমে সমস্যা-সংক্রান্ত। সমাধান-সম্পর্কিত তত্ত্বও আছে।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  2. গুলশান (১৯৯৯-২০০৫)

    আমি একথা বলব না যে,
    "তত্ত্বকথা বলে/শুনে লাভ নেই।"
    তবে এটা অবশই বলব-
    "হাতে নাতে কাজই হলো আসল। "

    আমার মতে গবেষকড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নীতিনির্ধারক নন। এজন্য গবেষকদের উচিত এই মডেল বা ফলাফলগুলো এমনভাবে নীতিনির্ধারক এবং তাদের চারপাশের মানুষের কাছে উপস্থাপন করা যেন উনারা সহজেই এর প্রয়োজনীয়তাটা ধরতে পারেন। অ্যাবস্ট্রাকশান(কথাটা আমি কয়েকদিন বেশী ব্যবহার করছি :p) লেভেল কিছু বাড়িয়ে দিতে হবে আর কি। আর মাহমুদ ভাই এই কাজটাই করছেন। এজন্য উনাকে ধন্যবাদ জানাই। তবে এসব নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছানোর আরো কোন উপান আছে কিনা তা নিয়ে চিন্তা করে দেখতে হবে।

    জবাব দিন
  3. আসলে এখানে আমি একটা তত্ত্বকে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে এসেছি যা ঘটনাক্রমে সমস্যা-সংক্রান্ত। সমাধান-সম্পর্কিত তত্ত্বও আছে।

    মাহমুদ ভাই, ধন্যবাদ। চমৎকার তত্ত্ব পড়ে মজা পাইছি। সমাধান-সম্পর্কিত তত্ত্ব সময় করে একখানা লেখে ফেলেন। অপেক্ষায় রইলাম।

    জবাব দিন
  4. আসিফ খান (১৯৯৪-২০০০)

    মাহমুদ ভাই। অত্যন্ত সময়োপযোগী একটা লেখার জন্য ধন্যবাদ।
    আমার একটা লেখা আছে ইংরেজীতে- বিশ্ব স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপর। এটা অনুবাদ করার সময় পাচ্ছিনা একদম।
    কোন পরামর্শ দিতে পারেন। কেউ সাহায্য করলে খুব ভাল হয়।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।