গত সপ্তাহে নরওয়ের এক সাংবাদিক গ্রামীন ক্ষুদ্রঋণের উপর একটা প্রামান্যচিত্র প্রকাশ করে বেশ হইচই ফেলে দিয়েছে। সেই প্রামান্যচিত্রে দেখানো হয়েছে ক্ষুদ্রঋণগ্রহীতাদের উপর ক্ষুদ্রঋণের ফলাফল যা’র পুরোটাই নেতিবাচক। এই ব্যাপারটি আমাদের মধ্যবিত্তের কাছে (যারা তথ্যের জন্য মিডিয়ার দিকে চেয়ে থাকে) একধরনের শক, কারণ এতোদিন ধরে দেশী-বিদেশী মিডিয়া শুধু ক্ষুদ্রঋণের প্রশংসাই শুনিয়েছে। ক্ষুদ্রঋণের গ্রহীতাদের নানান দূর্ভোগের বিবরণের পাশাপাশি এই তথ্যচিত্র আরো একটি বিষয় তুলে ধরেছে, তা হলো বিদেশী অনুদান হিসেবে প্রাপ্ত তহবিল মিস-ম্যানেজমেন্ট। এখানে বলা হয়েছে যে, গ্রামীন ব্যাংক অনুদানের অর্থ নিয়মবহির্ভূত উপায়ে এর অন্য একটা সিষ্টার-কন্সার্ন (গ্রামীন কল্যাণ) এর তহবিলে স্থানান্তর করেছে। আমাদের দেশের মিডিয়া এই ব্যাপারটিকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে; গ্রামীনের বিপক্ষের লোকজন এই ইস্যুকে সামনে এনে সম্ভবতঃ গ্রামীনকে আইনের প্যাচে ফেলতে চাইছে, আর গ্রামীন এবং তার পক্ষের মিডিয়া এই বিষয়টাকে আইনগত কৌশল হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে যা’ ব্যবসায় অনেক প্রতিষ্ঠানই করে থাকে। তহবিল স্থানান্তর নিয়ে এই আইনী বৈধতা/অবৈধতার ডামাডোলে মনোযোগের আড়ালে চলে যাচ্ছে ক্ষুদ্রঋণের আসল কাঠামোগত দূর্বলতা- দারিদ্র্য নিরসনে এর ব্যর্থতা, উপরন্তু দারিদ্র্য উৎপাদনে এর ভূমিকা।
আমি গ্রামের ছেলে, গ্রামেই জন্ম, গ্রামেই বেড়ে ওঠা। ক্ষুদ্রঋণের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা আমার নিজের গ্রামেই দেখার সৌভাগ্য হয়েছে সেই ১৯৮৭/৮৮ সাল থেকে। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে গ্রামবাংলার মানুষের মধ্যে- বিশেষ করে যারা সেই ঋণের গ্রহীতা- কখনো কোনরূপ উম্মাদনা দেখি নাই। এমনকি ডঃ ইউনুসের নামডাকও সেভাবে শোনা যায়নি। তিনি যে মহাপুরূষ জাতীয় কেউ একজন আর ক্ষুদ্রঋণ যে দারিদ্র্যকে যাদুঘরে পাঠানোর এক মহান পদ্ধতি তা’ জানার জন্য বাংলাদেশের প্রত্যন্ত দরিদ্র অঞ্চলের এক গ্রামের ধূলো মেখে গ্রামীন ক্ষুদ্রঋণের সাথেই বেড়ে ওঠা এই আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে কলেজ পাশ করে ঢাবি’তে আসা অব্দি। ১৯৯৭ এ কলা ভবনে আসার পর সমাজসেবা/দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারীমুক্তি ইত্যাদিতে অবদানের জন্য নানা দেশ/সংস্থা থেকে ডঃ ইউনুসের বিভিন্ন পুরষ্কার প্রাপ্তির সংবাদ শুনতে শুরু করলাম। প্রথম প্রথম বেশ গর্বিত হতাম এই ভেবে যে, গ্রামীন ক্ষুদ্রঋণের মত একটা মহান ব্যবস্থার সাথে জন্মলগ্ন থেকে নিবিড়ভাবে পরিচয় আছে। কিন্তু ক্ষুদ্রঋণের সাথে আমার শৈশবকালের কাছে থেকে দেখা কিছু মানুষের সম্পর্ক এবং তাদের পরবর্তী জীবন দেখে ক্ষুদ্রঋণের এই মহত্বের আব্রু ছিঁড়েও গেছে খুব তাড়াতাড়িই।
আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে আমার এই মোহভঙ্গের প্রথম দিনটির কথা। সবসময় ঢাকা থেকে ট্রেনে করে বাড়ি যেতাম। ১৯৯৮ এর প্রথম দিকে। রিক্সায় করে কমলাপুর যাচ্ছি। মতিঝিল টিএন্ডটি কলোনীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এক রাস্তার কোণে পানের দোকান থেকে দোকানী উচ্চস্বরে আমার ডাকনাম ধরে ডেকে উঠলো। উল্লেখ্য, মামাবাড়ি ছাড়া ঢাকা শহরে আমাকে ঐ নামে ডাকার মানুষ থাকার কথা না। আমি চমকে পেছন ফিরে দেখি আমাদের পাড়ার এক প্রতিবেশী ডাকছে। রিক্সা ঘুরিয়ে তার কাছে গেলাম। আমাকে আপ্যায়ণ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে। অনেক মানা করার সত্বেও পাশের দোকান থেকে কলা আর চা কিনে খাওয়ালো। এরই মধ্যে আমি তার বর্তমান অবস্থা জানলাম। তাদের পানের বরজ (পানক্ষেত) বিক্রি করে সে বাবার সাথে পানের পাইকারী ব্যবসা ধরেছিল, সেটাতে টিকতে না পেরে মা’কে নিয়ে ঢাকায় এসেছে। নিজে ছোট্ট পানের দোকান নিয়ে বসে, আর মা’ বাসাবাড়িতে ঝি’য়ের কাজ করে। বাবা অসুস্থ, তাই গ্রামের বাড়িতে থাকে। সে বলল, এনজিও’র লোকজন এসে তার মা’কে বলেছিল ক্ষুদ্রঋণ নিলে তাদের পানের বরজ আরো বড় করতে পারবে, তা’তে অনেক লাভ হবে। কিন্তু পরের বছর অতিবৃষ্টি আর বন্যায় বরজ নষ্ট হয়ে যায়। তখন তার মা’ আরো ঋণ নিয়ে তার বাবাকে পানের পাইকারী ব্যবসায় নামায়। সেখানে লাভ ভালো হলেও বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়ে। ফলে আর কোন উপায় না দেখে তারা পানের বরজ বন্ধক দিয়ে ঋণ শোধ করে দেয়, আর মা’কে নিয়ে ঢাকা শহরে চলে আসে। উল্লেখ্য, সে তাদের এই অবস্থার জন্য ক্ষুদ্রঋণকে কোন দোষ দেয়নি। বন্যায় পানের বরজ নষ্ট হওয়া, বাবার অসুস্থতার জন্য ব্যবসায় ক্ষতি হওয়া, এসবকে সে বলেছিল তাদের ‘কপালের ফের’।
সেইবার বাড়ি গিয়ে শুনি যে মহিলার কাছ থেকে আমরা ভাপাপিঠা কিনে খেতাম ছোটবেলা থেকে, সে নাকি ঢাকায় চলে যাচ্ছে। সেই মহিলা প্রতিদিন বিকেলে আমাদের বাড়িতে আসত। আম্মাকে খালা ডাকত এবং তার কাছে টাকা জমা রাখত। নিজেদের ভিটামাটী ছাড়া আর কিছুই ছিলো না বলে তার স্বামী দিনমজুরী করতো। আর সে গ্রামীন ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে প্রতি সপ্তাহে ৪/৫ মণ ধান কিনে সেটা সিদ্ধ করে, ঢেকিতে চাল ভেনে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করতো। শীতের সময় এই কাজের পাশাপাশি সকালে ভাপা পিঠা বানিয়ে পাড়ায় বিক্রি করতো। [আমার এখনো মনে পড়ে শীতের ভোরে কুয়াশা মাড়িয়ে ধানক্ষেতে আইল ধরে পায়ে হেটে তার বাড়ির ঊঠানে বসে আগুনের তাপ পোহানো, কলাপাতায় মুড়ে সাদাসাদা ভাপ-ওঠা গরম ভাপা পিঠা নিয়ে বাড়ি আসা, প্রায়শঃই দেরি করে ফেরায় আম্মার ঝাড়ি]। আমি প্রথমে অবাক হয়েছিলাম তার ঢাকায় চলে যাওয়ার কথায়, কারণ আমি জানতাম তার অবস্থা দিনে দিনে বেশ ভালো হচ্ছিল। সে আমাদের বাড়ির পাশে বিঘাখানেক জমি বন্ধকও নিয়েছিল। বড়ছেলেটা কেবল স্কুলে যাওয়া শুরু করেছিল। তাকে ঢাকায় যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলেছিল চাল বেচে আর আগের মতো লাভ হচ্ছে না। কারণ, গ্রামে দুইটা চালকল (রাইসমিল) বসেছে। তাই বাজারে তার চালের দাম কমে গেছে। তাছাড়া তার স্বামী প্রায়শঃই জোর করে তার ব্যবসার টাকা নিয়ে নেয়। তাই সে ঠিক করেছে জমি থেকে বন্ধকী টাকা তুলে নিয়ে সব ঋণ শোধ করে দিয়ে ঢাকায় চলে যাবে। – সেও তার ভাগ্যকে দোষারোপ করলো গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় যেতে বাধ্য হওয়ার জন্য। কিন্তু ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে সে ত’ ভালো করছিল। তাহলে তাকে সব ছেড়ে ছুড়ে গ্রাম ছেড়ে যেতে হবে কেনো?- মনের মধ্যে একটা অস্বস্তি ঢুকে পড়ল।
সেইবারের ছুটিতে বাড়ি গিয়ে জানলাম গ্রামের পরিচিত স্বল্প-আয়ের অনেক পরিবার ঢাকা শহরে চলে গেছে/যাচ্ছে কাজের সন্ধানে। ব্যাপারটা কিভাবে যেন মাথায় মধ্যে রয়ে গেলো। সমাজবিজ্ঞানে পড়ি, প্রতিদিন কলাভবনে-টিএসসিতে-লাইব্রেরীর সামনে-বুয়েটে নানান জায়গায় বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডায় সময় কেটে যায়। দিন কেটে যায়, আড্ডার পরিধি বাড়ে, জানাশোনারও। প্রায়শঃই বিকেলগুলো-সন্ধ্যাগুলো কেটে যেতে থাকে মধূর কেন্টিনে। প্রয়োজনীয়/অপ্রয়োজনীয় নানা বিষয়ে আড্ডার মাঝে উঠে আসে ক্ষুদ্রঋণ আর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ডঃ ইউনুসের পুরষ্কার প্রাপ্তির খবর। মাঝেমধ্যে আবার ক্ষুদ্রঋণের শোষনের কথাও শুনি। আর দেখতে থাকি ঢাকা শহরটা ক্রমেই ভরে উঠছে গ্রাম থেকে আসা ক্ষুদ্র আয়ের মানুষগুলোয়। তারা আসছে দেশের সব অঞ্চল থেকে। আস্তে আস্তে ঢাকা শহরের বস্তিগুলো ঘরছড়া গ্রামীন মানুষে ভরে উঠছে, রাস্তাগুলো রিক্সায় ভরে উঠছে, ফুটপাতে জমে উঠছে অল্পমূল্যের খাবারের বিকিকিনি।
শেষেরদিকে পাড়াপ্রতিবেশী কাউকে ঢাকায় রিক্সাচালাতে দেখলে আর অবাক হতাম না। কারণ, প্রায়শঃই কাউকে না কাউকে দেখা যেত। সবার কাছেই শুনতাম তাদের দূর্ভাগ্য আর ঢাকায় আসার কালপঞ্জী। মনের মধ্যে থাকা অস্বস্তিটা ক্রমশঃ বাড়তে লাগল একদিন এক আড্ডার পর থেকে। সেখানে একজন হিসেব কষে দেখালো যে গ্রামীন ব্যাংক থেকে তিন/পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে ঋণ নেওয়ার পরের সপ্তাহ থেকেই বায়ান্নো (অন্য বন্দোবস্তও আছে) কিস্তিতে টাকা শোধ করায় সুদের প্রকৃত হার শতকরা চল্লিশ ছাড়িয়ে যায়। উপরি হিসেবে নিজেদের কাজ ফেলে মিটিংয়ে অংশ নেওয়া, প্রতি সপ্তাহে সদস্য ফী জমা, সদস্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিস্তি আদায়ে সাহায্য করা, ইত্যাদি ত আছেই। সেখান থেকে আমি ফিরে দেখতে শুরু করলাম সেইসব প্রতিবেশীর কথা যারা ক্ষুদ্রঋণ নিয়েছিল, এখন গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে এসেছে। সুদের হার নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে বুঝতে পারলাম কেন ক্ষুদ্রঋণের গ্রাহক আমার সেইসব প্রতিবেশীরা সবাই ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, নিজের ঘর ছেড়ে বস্তিতে বাসা বেঁধেছে।
গ্রামীন বাংলায় এমন কোন ব্যবসা আছে কি যেখানে মাত্র ৫/৬ হাজার টাকা খাটিয়ে ৪০% মুনাফা করা যায়, তা-ও আবার প্রথম সপ্তাহ থেকেই?! (সারা পৃথিবীতেই আছে কি?) সব ব্যবসায়ই রিস্ক আছে- পানের ব্যবসা, চালের ব্যবসা, কাঁচা তরিতরকারির ব্যবসা, গরুছাগল পালন- গ্রামীন অর্থনীতির এইসব ব্যবসায় সেই রিস্ক আরো বেশিঃ বন্যা আছে, খরা আছে, বাজারে বহুজাতিক কোম্পানীর এজেন্ট আছে; গ্রামীন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সেইসব দরিদ্র নারীদের জন্য আরো আছে মাতাল-জুয়ারী স্বামী, আছে নারীর সতীত্ব নিয়ে সদাচিন্তিত সমাজ। এইসব রিস্কের মোকাবিলায় নারী উদ্যোক্তা কিন্তু একেবারেই একা। এইসব রিস্ক একা নিজের কাঁধে নিয়ে দরিদ্র নারী উদ্যোক্তা কত দূর যেতে পারে?- এইটুকু বোঝার জন্য মধ্যবিত্ত, শিক্ষিত, ব্লগের লেখক/পাঠক এই আমাদের ইউনিভার্সিটির ক্লাসে, সভা-সেমিনারে যেতে হলেও গ্রামের সাধারণতঃ অশিক্ষিত লোকজনকে কোথাও যেতে হয়না। তারা তাদের আশেপাশে ক্ষুদ্রঋণের কাজকারবার থেকেই শিখে নেয় যে এটা একটা মরণ ফাঁদ। একবার এক ফাঁদে পড়লে ভিটেছাড়া হওয়ার আগে আর মুক্তি মেলে না।
ক্ষুদ্রঋণওয়ালাদের একমাত্র চিন্তা তাদের নির্ধারিত হারে কড়ায়গন্ডায় সুদে-আসলে ঋণ আদায় করা। ব্যবসায়ের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী লগ্নিকারী ব্যাংক ব্যবসায়ীদের এইসব রিস্ক কমাতে কিস্তি নেওয়া শুরু করে একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর থেকে, ব্যবসায় ক্ষতি হলে সুদ কমায় বা মাফ করে, ব্যবসা-সংক্রান্ত নানান তথ্য দিয়ে উদ্যোক্তাদের সহায়তা করে, এমনকি ব্যবসায় ধরা খেলে ঋণ-খেলাফি হওয়ার এবং দিব্যি আগের মতোই ঠাটেবাটে চলার ফাঁকফোকড় থাকে (আমাদের জাতীয় পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের কারে রেখে কার নাম বলব, সবাই ত এই দলে)। কিন্তু গ্রামের দরিদ্র ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের জন্য এইসব কোন সুযোগই নেই। এমনকি তাদের জন্য দেউলিয়া হওয়ারও কোন উপায় নেই। ঘরের চাল, গোয়ালের গরু, মাঠের ফসল, যা’ কিছু দিয়ে হোক, ঋণের টাকা সুদেমূলে শোধ দিতেই হবে; তা’ সে গ্রহীতার সম্মতিক্রমেই হোক আর জোর-জবরদস্তি করেই হোক। আমার কথা বিশ্বাস করার দরকার নেই, শুধু ‘মুক্তমন’ নিয়ে কিছু একাডেমিক পেপার পড়লেই জানা যাবে ক্ষুদ্রঋণ কি, এটা কিভাবে দরিদ্র নারীদেরকে অর্থনৈতিক মুক্তির মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ঋণের জালে বন্দী করে, আর কিভাবে সংসার নিংড়ে সেই নারীসহ তার পুরো পরিবারকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে। [এই লেখার শেষে একটা তালিকা সংযুক্ত করে দিবো। কেউ চাইলে ইমেইলে পাঠাতে পারবো]। আর যারা পড়ার কষ্টটুকু করতে চাননা তাদেরকে বলি, প্রতি বছরই ত আপনারা কত জায়গায় বেড়াতে যান, একবার না হয় কক্সবাজার-বান্দরবন-ব্যাংকক-মালয়েশিয়া বাদ দিয়ে আপনার ঘরের কাছেই কোন একটা গ্রামে যান, একটা দিন কাটিয়ে আসুন মাটির কাছাকাছি থাকা কিছু মানুষের সাথে। বাড়ির পাশেই সারা বিশ্বব্যাপী খ্যাতিমান ক্ষুদ্রঋণের মডেল চলছে, সেটা দেখার কৌতুহল মিটবে, পাশাপাশি টাকার সাশ্রয়ও হবে।
আজ থেকে ১০/১২ বছর আগে যেইসব স্বল্প আয়ের মানুষ আর্থিক দূর্গতির জন্য তাদের ‘কপাল’কে দায়ী করত, এখন তারা ক্ষুদ্রঋণকে দায়ী করা শিখেছে। এখন তারা বুঝতে শিখেছে যে, ক্ষুদ্রঋণের গ্রহীতাদের সবারই একই সাথে একই ভাবে দূর্ভাগা হওয়ার কোন ঐশরিক কারণ নেই। আর ব্যক্তিগত ভাবে তারা কেউই দায়ী না তাদের আর্থিক অসংগতির জন্য। যে’ই ক্ষুদ্রঋণ নেয়, সে’ই ক্ষতির মধ্যে পড়ে। কাজেই, ক্ষুদ্রঋণই এর জন্য দায়ী। ক্ষুদ্রঋণের কাঠামোর মধ্যেই নিহীত গ্রহীতাদের যাবতীয় দূর্গতি। কাজেই, এই ক্ষুদ্রঋণের কান্ডারী মহামতি ডঃ ইউনুসই হোক, কুখ্যাত জয়নাল হাজারীই হোক, কিংবা পামর কালা জাহাঙ্গীরই হোক, ফলাফল একই হবে- ক্ষুদ্রঋণের গ্রহীতারা ভিটেমাটি থেকে উৎখাত হবে। (দারিদ্র্য নির্মূল না উৎপাদন তা’ জানতে এইখানে দেখুন http://www.cadetcollegeblog.com/mahmudh/8159)।
ক্ষুদ্রঋণ যদি এতোটাই ভয়ঙ্কর হবে তাহলে তা’ সাধারণভাবে আমাদের মিডিয়ায় আসছে না কেন? আমাদের স্কুলে-কলেজেই বা এই বিষয়ে জানানো-পড়ানো হয় না কেন?- এর প্রধান কারণ হচ্ছে, আমাদের রাষ্ট্র নিজেই এই ব্যবস্থার পৃষ্ঠপোষক। মনে রাখতে হবে, জন্মলগ্ন (১৯৮৪) থেকেই গ্রামীন ক্ষুদ্রঋণ সরকারের কাছ থেকে ট্যাক্স-মাফ পেয়ে আসছে (অথচ নিজের দরিদ্র সদস্যেরকে গ্রামীন একদিনও ছাড় দেয় না!)। পাঠ্যপুস্তকে ক্ষুদ্রঋণের বিষয়ে ভালো ভালো কথা (যা’র সবটাই আজগুবি) ছাড়া কোন সমালোচনা করা নাযায়েজ (কেনো তা’ দেখুন এইখানে http://www.cadetcollegeblog.com/mahmudh/17334)। আর মিডিয়া ত’ ডঃ ইউনুসের অতীব একান্ত ভক্তঃ যেখানে নরওয়ের সেই প্রামান্যচিত্রের বড় অংশই ক্ষুদ্রঋণের গ্রহীতাদের দূর্দশা তুলে ধরেছে, এর পাশাপাশি আর্থিক দুই নম্বরীর মাধ্যমে গ্রামীনের পেট থেকে বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থার অবৈধ জন্মের কাহিনী ফাঁস করেছে, সেখানে মিডিয়া মূল ঘটনা বাদ দিয়ে আর্থিক দিক নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে। ভাবটা এমন যেন, গ্রামীনের ঐসব আর্থিক লেনাদেনাকে বৈধ্য প্রমাণ করতে পারলেই ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে ঋণগ্রহীতাদের দূর্ভোগগুলো সৃষ্টিও করা বৈধ হয়ে যাবে!
ক্ষুদ্রঋণের বিপক্ষ মতকে স্তব্ধ করে রাখতে আমাদের মিডিয়া ‘দেশপ্রেম’ এর বয়ান শোনায়। ডঃ ইউনুস ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে ‘নোবেল শান্তি’ পুরষ্কার এনে আমাদের জাতির মুখ উজ্জ্বল করেছেন। কাজেই, তার এবং তার প্রবর্তীত ক্ষুদ্রঋণের সমালোচনা করা মানে হলো জাতীয় গৌরবের মুখে কালী লেপন করা। অতএব, যারাই এর সমালোচনা করবে, তারাই জাতীয় শত্রু, দেশের শত্রু। আর দেশপ্রেমিক তারাই যারা এর সুনাম গাইবে। কিন্তু আমি শৈশবের প্রানবন্ত সেইসব মানুষের কথা ভুলি কি করে যারা আজ ভিটেমাটি ছেড়ে মলিন মুখে ঢাকার রাস্তায় রিক্সা চালায়, কি বাসাবাড়িতে ঘর মুছে? যাদের হাসিখুশী মুখ মিশে আছে আমার সমগ্র শৈশব-কৈশর জুড়ে? তাদের বাদ দিয়ে আমি দেশ ভাবতে পারিনা। তাদের ভালো-মন্দ মিশে আছে আমার ‘স্বদেশ’ ভাবনায়। আর তাই আমার দেশপ্রেম ক্ষুদ্রঋণের বেপারী আর তার ভক্তকূলের দেশপ্রেম থেকে আলাদা। একারণেই, প্রথম দিকে ঢাকা শহরে এবং পরবর্তিতে দেশের বাইরে দেশীভাইদের সাথে ক্ষুদ্রঋণের গুণগানের মজলিশে শামিল হয়ে নিজের দেশপ্রেমের পরাকাষ্ঠা দেখাতে বরাবরই ব্যর্থ হয়েছি।
আমার কাছে ক্ষুদ্রঋণের প্রকৃত মুখোশ উম্মোচন করার মাধ্যমে গ্রামীন ব্যাংকের (এবং অন্যান্য ক্ষুদ্রঋনের ব্যবসায়ী এনজিওগুলোর) রক্তচোষা চরিত্র দেখিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এর ভয়ানক থাবা থেকে দরিদ্রদেরকে উদ্ধার করা মুক্তিযুদ্ধের সমার্থক। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যদি পাকিস্থানের শোষন থেকে জনগণের মুক্তির প্রচেষ্টাকে আমাদের দেশপ্রেমের দাবী মানি, তাহলে ক্ষুদ্রঋণের শোষণ থেকে কয়েক কোটি মানুষকে উদ্ধার করাও দেশপ্রেমেরই দাবী। কারণ, মানুষ না বাঁচলে দেশ বাঁচেনা। আর ক্ষুদ্রঋণ এর গ্রহীতাদেরকে যে জীবনের দিকে ঠেলে দেয়, তা’কে ‘মানবেতর জীবন’ ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। এই কারণে, সকল দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীকে আমি দেশের অগণিত দরিদ্র মানুষকে বাঁচানোর স্বার্থে ক্ষুদ্রঋণের বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নিতে অনুরোধ করি।
ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক পাঠতালিকাঃ
Ahmed, M. M. (2003) “Distant Voices: the Views of the Fieldworkers of NGOs in Bangladesh on Microcredit” in the Geographical Journal, 169(1):65-74.
Anthony, D. and C. Horne (2003) “Gender and Cooperation: Explaining Loan Repayment in Microcredit Groups” in Social Psychology Quarterly, 66(3):293-302.
Bernasek, A. (2003) “Banking on Social Change: GrameenBank Lending to Women” in International Journal of Politics, Culture and Society, 16(3):369-385.
Bhatt, N, and S. Tang (2002) “Determinants of Repayments in Microcredit: Evidence from the Programs in the United States” in International Journal of Urban and Regional Research, 26(2):360-376.
Develtere, P. and A. Huybrechts (2005) “The Impact of Microcredit on the Poor in Bangladesh” in alternatives,30:165-189.
Elahi, K.Q. and C.P.Danopoulos (2004) “Microfinance and Third World Development: A Critical Analysis” in Journal of Political and Military Sociology, 32(1):61-77.
Karim, Lamia (2008) “Demystifying Microcredit: The Grameen Bank, NGOs, and Neoliberalism in Bangladesh” in Cultural Dynamics, 20(1):5:29.
Lucarelli, B. (2005) “Microcredit: A Cautionary Tale” in Journal of Contemporary Asia, 35(1):78-86.
Mallick, R. (2002) “Implementing and Evaluating Microcredit in Bangladesh” in Development in Practice, 12(2):153-163.
Mahmud, S. (2003) “Actually How Empowering is Microcredit?” in Development and Change, 34(4):577-605.
অনেক কিছু জানতে পারলাম।
সুন্দর পোস্ট :clap:
ধন্যবাদ আমীন।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ ভাই অনেক ধন্যবাদ পোস্টের জন্য । দয়া করে আরেক পর্ব লিখুন যাতে আরো বিশদভাবে আমরা এদের কীর্তি জানতে পারি । মনে হচ্ছে পৃথিবীতে এবসেলুট ভাল বলে কিছু নাই সবকিছুই গ্রে এরিয়ায় ।
- উহু, ঠিক হলো না, যদিও বুঝতে পারছি কেন বলছো এই কথা। আসল কথা হলো, নির্দ্বিধায়, বিনাপ্রশ্নে বিশ্বাসের দিন শেষ হয়েছে। শুধুমাত্র নামের পাশে ডিগ্রী দেখে লোকের কথায় বিশ্বাস করার দিন শেষ হয়েছে।
ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে আমার লেখা অব্যাহত থাকবে। (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আজকের কালের কন্ঠে 'ভিন্নমত' বিভাগে এক লেখা আছে 'মুহাম্মদ ইউনুসঃ প্রতিটি বাংলাদেশির গর্ব' শিরোনামে। লিখেছেন মার্কেটিং এর বাংলাদেশি অধ্যাপক, যিনি আমেরিকায় ২৬ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা+ছয়টি মহাদেশে বহুদেশ ঘোরার অভিজ্ঞতা আছে বলে শুরু করেছেন। তারপর যা' বলেছেন তা' সেইসব অন্ধবিশ্বাসীদের মতো যাদের কাছে ডঃ ইউনুস এমন এক মহাপুরুষ যার দাওয়াই পেয়ে বিশ্বের কোটি কোটি দরিদ্র মুক্তির পথে! আমেরিকার পড়া+পড়ানো আর বিশ্বভ্রমনের কথা দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে তার বক্তব্য খুবই মূল্যবান, কাজেই পাঠক যেন কোন তথ্যের তালাশ না করে। তার কথা না মানলে, তার মতো করে ক্ষুদ্রঋণের গুণগান না গাইলে ঐ ব্যক্তির মধ্যে দেশপ্রেমের বিলক্ষণ ঘাটতি আছে মানতে হবে।
মজার ব্যাপার হলো, তার নিজের পরিচয় তিনি ফাঁপিয়ে দিয়েছেন। লিখেছেন আমেরিকার সনামধন্য উত্তর কেরোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান' অথচ, গুগল থেকে তার সিভি নামিয়ে দেখলাম তিনি সেখানকার না ছিলেন ছাত্র, আর না শিক্ষক। বটে!
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
🙁
একেই বলে শিক্ষক! অধ্যাপক বলে কথা! 😀
পড়লাম। লেখার শেষের লিংকগুলোর জন্য ধন্যবাদ। আমার এখন এক্সাম চলছে। এক্সাম শেষে সবগুলো এক সাথে জমিয়ে পড়বো। ক্ষুদ্র ঋণের পক্ষে বিপক্ষে এত আলোচনা ফেসবুক ব্লগে ব্লগে দেখি যে আসল সত্য বুঝতে আরেকটু খাঁটুনি করা লাগবে।
- না আমিন, খুব বেশি কষ্ট করা লাগবে না। মাত্র ৮/১০ ঘন্টা হলেই কিছু পেপার পড়া হয়ে যায় যা' থেকে আসল কাহিনী বোঝা যায়।
তবে সব থেকে সহজ হচ্ছে গ্রামে গিয়ে নিজের চোখে দেখা; সময়ও কম লাগবে, নিজের চোখে-দেখা সত্য গ্রহন করাও সহজ হবে। কিন্তু তোমার ত সেই সুযোগ নেই। তা' কানাডায় কি পড়ছো, কোথায়? ফোন নম্বর দিলে কথা বলা যাবে। গুগল মাগনা কথা বলার ব্যবস্থা করেছে আমেরিকা-কানাডায় 😀
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
ধন্যবাদ মাহমুদ। চমৎকার একটি লেখা। সাবলিল বর্ননায় ক্ষুদ্র ঋণের বারটা বাজিয়ে দিয়োছো।
কিছু বিষয় শেয়ার (শেয়ার বাজারের শেয়ার নয়) করতে চাই। শুধুমাত্র ক্ষুদ্র ঋণই আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতির ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির বারটা বাজাচ্ছে, তা কিন্তু না। এখানে আরো ফ্যাক্টর কাজ করছে। যেমন ধর, যদি ক্ষুদ্র ঋণ না থাকতো, তবে কি গ্রাম হতে শহরমুখী দরিদ্র জনগোষ্ঠির স্থানান্তরের স্রোত বন্ধ হয়ে যেত? না। বতর্মানে গার্মেন্টস সেক্টর বহু দরিদ্র শ্রমজীবি মানুষকে শহরে টানছে। সেখানে যারা চাকরী পাচ্ছে তারা যেমন আসছে, আবার `যে করেই হোক, ওর মতো আমাকেও একটা চাকরী করতে হবে' এই নিয়তে বিনা চাকরীতেও বহু মানুষ আসছে। এদের মধ্যে এমন অনেকেও আছে, যারা কিনা গ্রামে অদ্যাবধি কিছু একটা করার মতো জমি-সম্পদ আছে, যা তারা ফেলে রেখে চলে আসছে। অথচ সে শুধু গ্রামে থাকার নিয়ত করলে সেখানেই অনেক কিছু করতে পারতো।
ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে নয়, ভিন্নভাবে প্রাণ একসময় গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে ঘনিষ্টভাবে কাজ করতে চেষ্টা করেছিল। একটি চুক্তির মাধ্যমে প্রাণ কৃষকদেরকে উন্নত জাতের বীজ প্রদান করলো। যখন ফসল তোলা হলে, সেবারে বাজারে ঐ ফসলের মূল্য চুক্তির চেয়ে বেশী ছিল (ধরা যাক ১০০ টকায় ক্রয়ের চুক্তি ছিল, ১৪০ টাকা দাম উঠলো), কেউ আর প্রাণের নিকট তা বিক্রী করে না। ফলে প্রাণকে তা বেশী দামেই কিনতে হলো। পরের বছরও আবার একই ব্যবস্থা নেওয়া হলো। এবারে বাজার পরে গেল (ধরা যাক ৬০ টাকা)। এখন সকল কৃষক প্রাণের গোডাউনে মাল ঢালতে লাগলো, এমনকি যা হয়তো আমাদের প্রয়োজনাতিরিক্ত এবং অনেক ক্ষেত্র্রে মানসম্মতও ছিল না। এবারে তারা চুক্তিমূল্য দাবী করলো, বাজার মূল্য নিবেনা। ফ্যাক্টরী বন্ধ হবার উপক্রম। এবারে প্রাণের মাথা খুললো। আর চুক্তি নয়, বেচাতেও ব্যবসা করে, কেনাতেও ব্যবসা করে। এটি উল্লেখ করলাম গ্রামীণ সাধারণ (ব্যাতিক্রমী মানুষও থাকে) জনগোষ্ঠীর আচরণ ভঙ্গিমা বোঝানোর জন্য।
একসময় গ্রামের মানুষ প্রয়োজনের সময় অনেক বেশী টাকা দিয়ে মহাজনের নিকট হতে ঋণ নিত, তার সুদ ৪০% নয়, ১০০%, ২০০% বা ৫০০% পযর্ন্ত হতো। তাহলে এই ক্ষুদ্র ঋণ আমাদের ক্ষতি করছে কিভাবে? আগের সেই মহাজন নিজ বাড়ীতে বসে অনেক সময় দিতে না পারলে কি হবে তার ফলাফল বুঝিয়ে ঋণ দিত। কেননা এই ঋণ তাকে গ্রামীন ব্যবস্থাপনা কাজে লাগিয়েই আদায় করতে হবে, যেখানে কিনা আরোও এমন অনেকে আছে, যারা কিনা ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আর আধূনিক মহাজন বাড়ী বাড়ী গিয়ে ঋণের বাস্তব প্রয়োজন আছে কিনা তার যাচাই ছাড়াই শুধু মাত্র তাদের নিয়োজিত কমর্চারীগণ নিজ নিজ ব্যাক্তিগত লাভের উদ্দেশ্যে টার্গেট পূরণের লক্ষ্যে শেধে ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। ঋণ গ্রহীতাকে তার সম্ভাব্য ক্ষতির দিকটি নয়, হতেও পারে লাভের দিকটি বুঝানো হচ্ছে। পরে যখন না বলা ক্ষতির দিকটিই বাস্তব হয়ে উঠে তখন ঋণ গ্রহীতার `এমন তো কথা ছিল না' গান গাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
পরিশেষে তোমার সাথে একমত, যে ক্ষুদ্র ঋণ আসলে কোন সমাধান নয়। বাংলাদেশে এর প্রয়োগের অনেক ত্রুটি আছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, গ্রামীণ স্বনির্ভর কর্মসংস্থান।
নঈম ভাই,
খুব ভালো লাগল আপনার দীর্ঘ মতামত পেয়ে। ক্ষুদ্রঋণের সাথে তুলনা করে প্রাণের উপমাটা দিয়ে ভালো করেছেন। এতে বোঝা যায় আর্থিক লেনদেন এ সবাই মুনাফাটা ভালোই বোঝে, কি দরিদ্র গ্রামবাসী, কি সাহায্যদাতা সংস্থা। কাজেই, এই আলোচনায় সমাজসেবা, দেশপ্রেম, এইসব ভ্যালুজ আসলেই বাস্তবকে শুধুমাত্র মিষ্টিফাই করে।
ভালো পর্যবেক্ষণ। কিন্তু আমার এই লেখাটা একটা পলেমিক যেখানে আমি ক্ষুদ্রঋণের বেপারী+ভক্তদের এই দাবীকে অসার দেখাতে চাই যে ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্য ত দূর করেই না, ববং চরম দারিদ্র্য বৃদ্ধি করে। আর তাই লেখাটা পড়ে মনে হচ্ছে যে, শুধুমাত্র ক্ষুদ্রঋণই বুঝি গ্রামীন মানুষকে ঘরছাড়া করছে। আরো কারণ যে আছে, তা' আমিও জানি। কিন্তু লেখার মূল বক্তব্য ফুটিয়ে তোলার স্বার্থেই সেগুলো আলোচনায় আসেনি।
ভাইয়া, আমার চেহারা আপনার মনে আছে কি? আমি কিন্তু সবুজ হাউসের!
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
অনেক দিন হয়ে গেল, যোগাযোগ কম, স্মৃতিও দুর্বল। সবকিছু ঝাপসা মনে হয়। তবুও মনে করি বেশী পরিবর্তন না হলে সামনা-সামনি দেখলে চিনতে পারবো।
আরেকটি বিষয়; শুধু দারিদ্র নয়, গ্রামীণ সামাজিক পরিবেশের পরিবর্তনেও এদের ভূমিকা আলোচনার বিষয় হতে পারে, যা অবশ্যই ভাল নয়।
এ বিষয়ের উপর আরো লেখা আশা করছি।
নঈম, তোর প্রানের উদাহরণটা ভালো লাগলো না। তোর এপ্রোচ দেখে মনে হল, প্রান একটা এলিট গ্রুপ এবং খুব বিরক্ত একটা অর্ডিনারী গ্রুপের আচরনে। তুই হয়ত প্রকিউরমেন্টে কাজ করিস, কিন্তু একটু খোঁজ নিয়ে জানাতে পারবি কি, প্রান প্রফিট ম্যাক্সিমাইজ করে কিভাবে?
আবার বলে বসিস না, তোরা প্রফিট করিস না। বলা তো যায় না, নোবেল নিয়ে কথা
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আমি ফাইনান্সে কাজ করি। প্রাণ একটি প্রফিট অর্গানাইজেশন, প্রফিট ম্যাক্সিমাইজেশন প্রাণের প্রধান লক্ষ্য। আমি ভাল মতোই জানি, আর প্রাণেরও দাবি তাই।
কিন্তু প্রাণ কাজ করে গ্রামীণ অর্থনীতির সাথে। আমাদের বেশীর ভাগ পণ্যের মৌলিক কাঁচামাল আসে গ্রাম হতে। অন্য ইন্ডাস্ট্রী প্রডাকশন হতে কমই আসে। তাই প্রফিট ম্যাক্সিমাইজেশনের জন্য প্রাণ চেষ্টা করেছিল সরাসরি কৃষককূল হতে কিভাবে উন্নত মানের পণ্য অল্প দামে কেনা যায়, আর কৃষকও এতে লাভবান হয়। কিন্তু কেন তা আমরা করতে পারিনি তাই বলেছি। এখানে প্রাণকে এলিট গ্রুপ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করিনি। বরং গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সত্যিকারের কিছু করতে যাওয়াও যে কতটা কঠিন, তা বোঝানোর চেষ্টা করছি।
নঈম ভাই,
আমার বোল্ড করা শব্দটা লক্ষ্য করুন। ঐখানে আমার আপত্তি আছে। ব্যবসায়ীরা দরিদ্রদের জন্য কোন কিছু করে না, তারা সত্যিকার অর্থে দরিদ্রদের মাঝে যা করে তা হলো "ব্যবসা"। যা' সত্য সেটা বললেই ত লেঠা চুকে যায়, দরিদ্রদের 'সেবায় নিয়োজিত' বলে তারা নিজেদেরকে যেভাবে দেখাতে চায়, তারা ত প্রকৃত পক্ষে তা নয়। আপনি অবশ্য বলেছেন যে, প্রাণ গ্রুপ মুনাফার জন্যই চেষ্টা করে।
আর হ্যাঁ, দরিদ্রদের মাঝে ব্যবসা করা আসলেই কঠিন।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
তোমার সাথে দ্বিমত করছি না।
তবে প্রাণের চেষ্টা ছিল উন্নত জাতের পণ্য মধ্যসত্ত্বভোগীদের থেকে কমদামে কেনা। অন্য দিকে গ্রামীণ কৃষকগণও মধ্যসত্ত্বভোগীদের থেকে যা পেত তার থেকে কিছু বেশীতে মান সম্মত পণ্য প্রাণের কাছে বেচতে পারতো। এখন আমরা পুনরায় মধ্যসত্ত্বভোগীদের প্রাধান্য দিচ্ছি।
তোরা করতে পারিসনি, কারন গ্রামীন জনগোস্টির উন্নয়ন তোদের প্রায়োরিটিতে পিছনের দিকেই ছিল, প্রফিট ম্যাক্সিমাইজের পরে এডিশনাল ইনফ্রাস্ট্রকচার ডেভেল্পমেন্টের মত। এটা নিয়ে আমার বিতর্ক নয়।
আমার বির্তক "প্রভার্টি" নিয়ে এবং এটা নিয়ে বিজনেস করা নিয়ে। "প্রভার্টি" একটা বড় ব্যবসা, তাই এটা নিয়ে কিছু গন্ধ পেলেই ঝাপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে, তুই হয়ত কিছু বলিসনি, কিন্তু আমার মনে হল তুই যা বলতে চাচ্ছিস তা ঠিক নয়, এই আরকি 🙂
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
মাহমুদ, তুমি নিশ্চয় আমার চেয়ে ভালো বুঝ, গ্রামীন ব্যাংক আসলে একটা ব্যাংক, প্রচলিত ব্যাংকের থেকে নিয়ম একটু আলাদা, কিন্তু, এন্ড অব দ্যা ডে, ইটস আ ব্যাংক।
তোমার লেখাটায় আবেগ বেশী এসেছে, তুমি হয়ত গ্রামের সহজ সরল চেহারায় অভ্যস্থ, এবং তোমার মনে হয়েছে গ্রামীনের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিতে খুব সহজেই গ্রামের সরল লোকেরা ফাঁদে পা দিবে, এবং এটা অন্যায়।
কিন্তু সাদা চোখে চিন্তা করে দেখ তো আসলেই কি এটা অন্যায়? যে ঋন নিবে তার তো সব কিছু চিন্তা ভাবনা করেই নেয়া উচিৎ তাই না?
ক্ষুদ্র ঋনের পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে ব্যাংকির এর নতুন একটা ধারা, দরিদ্র জনগনকে ব্যাংকিং এর আওয়াত আনার একটা থিওরী, এর বেশি কিছু নয়।
আমার খারাপ লাগে ডঃ ইউনুসের এপ্রোচ, তিনি জানেন এর ক্ষতিকর দিক গুলি, অন্য আর সবার চেয়ে ভালোই জানেন। কিন্তু তিনি ভালোমানুষের মত আচরন করেন, ফেরেশতার মত একটা ইমেজ তৈরী করে রাখতে ভালোবাসেন। সেই অর্থে তিনি একজন হিপোক্র্যাট ছাড়া আর কিছু নন, আর এটা নিয়ে এত আলোচনার কিছু নেই, গ্রামীন ব্যাংক কে প্রচলিত ব্যাংকের আওয়াত নিয়ে আসলেই সব আলোচনা বন্ধ হয়ে যাবে। আইন করে বন্ধ করে দিতে হবে "দারিদ্র্য জনগোষ্টি" এই কথার ব্যবহার।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
😀 তুই তো দেখি গ্রামীণ ব্যাংকের ব্র্যান্ড লইয়া টানাটানি শুরু করছোস। ভাল ভাল।
একটা কথা ঠিক, গ্রামীণ মহাজন অপেক্ষা ড: ইউনুস আরো ভয়ঙ্কর। কারণ আগেই মন্তব্যে বলেছি।
ফয়েজ ভাই,
গ্রামীনের মূলধন কিন্তু ব্যবসায়ের ষ্ট্যাটেজির পাশাপাশি ঐ ভালোমানুষি ইমেজও, কারণ ওইটা দিয়েই বেপারী গ্রামের আপাতঃ নির্বোধ (আসলে অনন্যোপায়) মানুষগুলোর কাছে ক্ষুদ্রঋণকে তাদের আর্থিক মুক্তির উপায় হিসেবে তুলে ধরেন। আফটারঅল, মহাপুরুষ কি গরীবের ক্ষতির কারণ পারেন?
আর গ্রামীন ক্ষুদ্রঋণকে যদি ব্যবসা হিসেবে ধরেন, তাইলে আইন করা লাগে না, ওটা এমনি ধ্বসে পড়বে। কারণ, আর্থিক ব্যবস্থা হিসেবে এটা সাসটেইনেবল না, বিদেশী সাহায্য আর সরকারের কর রেয়াত ছাড়া এটা এক বছরও চলতে পারবে না (আমার আগের একটা পোষ্টে বলেছিলাম)। প্রতি বছর ড্রপ-আউটের হার গোনায় ধরলে দেখবেন চক্রাকারে চলা ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা এক সময় স্যাচ্যুরেশন-পয়েন্টে চলে আসে। ফলে মানি-সার্কুলেশন থেমে যাওয়ায় এই ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য। গ্রামীণ ব্যাংকের একের পর এক অন্যান্য ব্যবসা খোলার এটাও একটা বড় কারণ। (সম্পাদিত)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ,
অনেক অনেক অনেক ভাল একটা লেখা পড়লাম। মন্তব্যগুলো এখনো পড়া হয়নি। অনেক কিছুই জানলাম, শিখলাম। তবে এমন টপিক নিয়ে লেখার সময় আবেগের বাহিরে থেকে লেখার চেষ্টা করিস; যদিও স্বীকার করছি সেটা অনেক কঠিন কাজ।
ভাল থাকিস।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
প্রফেসর ভাই,
আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগল।
- ভাইয়া, ইচ্ছে করেই এভাবে লিখেছি। আর নিরাবেগ পাঠের জন্য পাঠতালিকা দিছি। পড়তে চাইলে আওয়াজ দিয়েন, এমেইলে পাঠায়া দিমু।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আগ্রহ প্রকাশ করলাম।
পাঠাইয়া দে।
pialbd@yahoo.com
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
আহমদ ভাই,
আর কয়েক মিনিটের মধ্যেই পেপারগুলো পেয়ে যাবেন ই-মেইলে ।
শুভ পড়াশোনা 😀
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
পাইছি। থ্যাঙ্কু। 😀
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
ধন্যবাদ আপনাকেও 😀
ভালো কথা, প্রথম পেপারটা উন্নয়নের মূলধারার তত্ত্বগুলোর আলোকে ক্ষুদ্রঋণকে যাচাই করেছে। ফলে পুরোপুরি তত্ত্বীয় হওয়ায় এটা আপনার কাছে প্রথমে বোরিং লাগতে পারে। পাঠের শুরু হিসেবে আমি লামিয়া করীমের লেখাটা রেকমেন্ড করি। কারণ ঐটা এথনোগ্রাফি- পড়তে সহজ, অনেকটা সাহিত্য আর তত্ত্বের মিশেল। মাঠকর্মীদের ভিউ নিয়ে পেপারটা পড়ে অবাক হবেন না; কারণ, আমরা মিডিয়ায় যা দেখি, তা' এনজিও'র আপার-এশেলনের ভিউ। এই পেপারে মাঠের তৃণমূলে কি অবস্থা তা' দেখবেন।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আমি এখানে আমার কিছু কথা বলি ভাইয়া। গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এবং ড. ইউনুস নিয়ে কয়েকদিন পক্ষে বিপক্ষে অনেক লেখালেখি বা আলোচনা হচ্ছে। আমি সেদিকে বেশী না যাওয়ার চেষ্টা করব। আমার যেটা মনে হয়, দরিদ্র মানুষের অবস্থার উন্নতির জন্য কি করা যেতে পারে এটাই প্রধান ফোকাস হওয়া উচিত। তো এজন্য প্রথমেই কিছু অর্থের প্রয়োজন। আমার হিসেবে এখন এই অর্থের মোটামুটি তিনটা উৎস- গ্রাম্য মহাজন, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো এবং সচ্ছল আত্মীয়-স্বজন। প্রথম দুটোর অসুবিধাগুলো মনে হয় আমরা সবাইই অনেক শুনেছি বা জানি। সুতরাং আর আলোচনা করলাম না। সচ্ছল আত্মীয়-স্বজনদের কথায়। এটাও আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে খুব একটা কার্যকরী না। কারণ এই ক্ষেত্রে অর্থ যদি ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়, তাহলে সেটা পরিশোধের ব্যাপারে অনেক সময়ই গড়িমসি চলতে থাকে। শুধু মুখে মুখে হওয়ার কারণে গুরুত্বও কমে যায়। আবার সরাসরি দান হিসেবে দিলেও কিছু সমস্যা তৈরী হয়। আর উভয় ক্ষেত্রেই সম্পর্কে ফাটল ধরার একটা বড় সম্ভাবনা থাকে। অনেকে পারিবারিকভাবে হয়ত এসব জেনে থাকবেন।
এখন আমাদের যেটা করতে হবে সেটা হল, নতুন কোন একটা উৎস তৈরী করতে হবে বা বর্তমান কোন একটা উৎসকেই নতুন ভাবে নতুন মডেলে দাঁড় করাতে হবে। ড. ইউনুসের ক্ষুদ্রঋণের মডেল যদি কাজ না করে তাহলে আমাদের সেটা মডিফাই করে নতুন মডেল দাঁড় করাতে হবে। নতুন মডেলের ব্যাপারে আমারও কিছু আইডিয়া ছিল। পরে একসময় বলার চেষ্টা করব।
আপনি এই বিষয়ে আরো লিখবেন বলেছেন। আপনার কাছ থেকেও একটা নতুন মডেল আশা করছি।
গুলশান,
ভালো লাগল এই দেখে যে, দরিদ্রদের মুক্তি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছো।
- শোনার আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকলাম।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আমার একটা আইডিয়া বলি। সেটা হল ক্ষুদ্রঋণ শুধু মহিলাদের না দিয়ে যে কাউকে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা। জানি মহিলাদের ঋণ দেওয়া হয় "নারীর ক্ষমতায়ন" কে উদ্দেশ্য রেখে। কিন্তু আমাদের গ্রামীন সমাজে মহিলাদের যে অবস্থান, তাতে ঐ ক্ষুদ্রঋণের মূল উদ্দেশ্য "দারিদ্র বিমোচন" ব্যহত হয় বলে আমার ধারণা। কারণ যদি অর্থ মহিলারাই বিনিয়োগ করেন- তাহলে বিনিয়োগের ক্ষেত্র কিছুটা সংকীর্ণ হয়ে যাবে। আর যদি ঐ অর্থ পুরুষরাই বিনিয়োগ করেন, তাহলে ঋণ সরাসরি তাকে দিতে সমস্যা কি? সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য? জানি না এটা করটুকু সফল।
আমি আসলে ক্ষুদ্রঋণের বর্তমান মডেলটা ভালভাবে জানি না। জ়ানলে হয়ত সুবিধা হত।
আমি "দারিদ্র্য" এই শব্দটার বিরুদ্ধে, আমার ধারনা এটা বিভাজন তৈরী করে এবং সবশেষে "লাভের গুড় পিপঁড়ায় খায়" ।
নুন্যতম মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করাকেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা দরকার, বাকীটা আপনা থেকেই হবে। এর এরজন্য দরকার একটা টেকসই "ফিসক্যাল পলিসি" ।
বাকীটা কর্মঠ জনগন নিজেরাই তৈরী করে নিতে পারবে।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
-উহুঁ, ভুল জানো। নারীদেরকে ঋণ দেওয়ার প্রকৃত কারণ তাদের থেকে ফেরৎ পাওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ+নিশ্চিত।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ,
তোমার লেখা ভীষণ রকম একপেশে। তোমার রেফারেন্সগুলোও তাই। আমিও একগাদা রেফারেন্স দিতে পারি যেখানে ক্ষুদ্র ঋণে মানুষ উপকৃত হয়েছে। তাতে তোমার বা আমার অবস্থান বদলাবে না। আক্রমণাত্মক লিখে প্রতিপক্ষকে লড়াইয়ে আমন্ত্রণ জানানো যায়, তাতে সমাজের বা মানুষের কোনোই উপকার হয় না। এটা জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি। সেই ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। এখন জনসংখ্যা সাড়ে ১৬ কোটি। দারিদ্র সীমার নিচে মানুষ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এটা হাওয়ায় বা আমাদের রিসার্চে, বক্তৃতায়, লেখালেখিতে হয়নি। অনেকের মিলিত অবদানে হয়েছে। ইউনূস বা ক্ষুদ্র ঋণকে তুড়ি দিয়ে নাকচ করা সহজ। আর সেটাই আমরা করে চলেছি। আমার লজ্জা লাগে নিজেদের জন্য। সত্যি বলছি।
আশা করছি এ নিয়ে পৃথক ব্লগ দেবো।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
পাকিস্তানের শোষণ + যুদ্ধ + যুদ্ধ পরবর্তী কিছু দুর্নীতি, এসব কারণে ১৯৭৪ এর দিকে মনে হয় আমাদের আবস্থা সবচেয়ে খারাপ ছিল। সেখান থেকে দারিদ্র সীমার নীচে থাকা মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা নিশ্চয় গর্ব করার মত একটি বিষয়। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার সাফল্যের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণের আবদানকে অবশ্যই আলাদা করে বিচার করতে হবে। তা নাহলে আমরা একে মূল্যায়ন ঠিকমত মূল্যায়ন করতে পারব না।
সানা ভাই,
কমেন্ট পড়ে মনে হলো আপনি মাইন্ড করেছেন। কিন্তু কি করবো ভাইয়া বলেন, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে চারদিকে মিথ্যার এতো ছড়াছড়ি! নিজের চোখকে, নিজের উপলব্ধি কে, সর্বোপরি ভালোমন্দ বোঝার জন্য নিজের ক্ষমতাকে ত একজন মানুষের বয়ানের উপর ভিত্তি করে ছুড়ে দিতে পারিনা।
আমার লেখাটা একপেশে, ঠিকই বলেছেন। আমিও স্বীকার করছি। কিন্তু ক্ষুদ্রঋণের বয়ানও ত একপেশে। কখনও ডঃ ইউনুস বা তার হয়ে আর কাউকে বলতে শুনেছেন ক্ষুদ্রঋণের একটা সীমাবদ্ধতার কথা? - একারণেই, তারা যে পাশটার কথা আড়াল করে, আমি সেইটার কথা বলি। আর তা'ই করতে গিয়ে আমার লেখাও একপেশে হয়ে যায়।
ভাইয়া,
আপনার লেখার অপেক্ষায় থাকলাম; রেফারেন্সগুলোরও। তারপর এ'ই নিয়ে আলাপ করা যাবে।
- ভাইয়া, পারসোনালী নিয়েন না, প্লিজ। ক্ষুদ্রঋণ আপনার কিছু নয়, আমারও নয়। নিজের পড়াশোনা+সেখান থেকে প্রাপ্ত উপলব্ধি থেকেই আমি ক্ষুদ্রঋণের বিরোধীতা করি। আর কিছু নয়।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ,
মাইন্ড করবো বা পারসোনালি নেবো কেন? ইউনূস আমার ভাই না ভাগ্নে? না আমি গ্রামীণ বাংকে চাকরি করি বা তার সুবিধাভোগী! তবে নিজের অভিজ্ঞতায় শিখেছি, একপেশে কোনো কিছু ভালো না। আর শিক্ষকের জন্য তো নয়ই। কারণ তার কাজ চোখ খুলে দেওয়া, শিক্ষার্থীদের অন্ধত্ব বা একপেশে চিন্তায় ঠেলে দেওয়া নয়। আমি ভুল হতে পারি। তবে আমি মনে করি, তুমি শিক্ষক। একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীর সামনে সব বিকল্প, সব মত তুলে ধরবে। শিক্ষার্থীই ঠিক করবে কোনটা ঠিক। আমার সন্তানকে আমি কখনোই বলি না তুমি ধর্মপরায়ন হও বা হয়ো না। তাকে পড়তে বলবো, আলোচনা-বিতর্ক করতে বলবো। নিজের জ্ঞানে সেই ঠিক করবে কোন পথ সে বেছে নেবে।
ভালো থেকো।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
ভাইয়া,
খুব ভালো লাগল। মনে শান্তি পেলাম।
- ভাইয়া, আমি ত সেটাই করছি। ক্ষুদ্রঋণের পক্ষের লোকজন এমনভাবে এর একটা দিক তুলে ধরে যে, এর অবিচ্ছেদ্য আরেকটা দিক আড়ালেই থেকে যায়। আর আমি সেইটাই তুলে ধরছি।
আর আমি ত কাউকে বলিনি কে কি বিশ্বাস করবে। আমি যা' বলতে চাই, সেইদিকে ইশারা আছে, কিন্তু নির্দেশ করে কিছু বলিনি। পরামর্শ দিয়েছি নিজ নিজ বিচার-বুদ্ধির উপরে আস্থা রাখতে আর ক্ষুদ্রঋণকে নিজে যাচাই করে দেখতে; তা'র পথেরও ঠিকানা দিছি (আর্টিক্যালের তালিকা বা গ্রাম-ভ্রমনের পরামর্শ); কিন্তু বলনি যে এসব করতেই হবে। আসলে, আমি সচেতনভাবেই চেষ্টা করি আমার মতামত অনন্য কারো উপর চাপিয়ে না দিতে।
ভাইয়া, আমি কিন্তু আপনার লেখার অপেক্ষায় থাকলাম। সময় করে লিখে ফেলেন এই ডিসেম্বরের মধ্যেই। এরপর আবার আমার ক্লাসে দৌড়াদৌড়ি শুরু হবে।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
সানাউল্লাহ ভাই, আপনার ব্লগের অপেক্ষায় থাকলাম।
"জনসংখ্যার সমানুপাতিক হারে দারিদ্র্যতা বাড়েনি" এই যুক্তির পিছনে ক্ষুদ্র ঋনের অবদান কতটুকু জানতে চাই। যদি তাই হয়, তাহলে ৭১ থেকে ৮৪ পর্যন্ত দারিদ্র্যতা বাড়ার এবং এর পরে দারিদ্র্যতা কমে আসার গ্রাফ পাওয়া যাবে। যদি ধরে নেই, অন্যান্যা প্যারামিটার গুলো সমানুপাতিক ছিল।
আসলেই কি তাই? জানতে চাচ্ছি।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আরে আপনি দেখি আমার কথাগুলা আগেই বলছেন। আগে দেখলে উপরের কমেন্টটা হয়ত করতাম না।
তোমার লেখাটি ভালো লেগেছে মাহমুদ।গ্রামীণ ব্যাংক, ক্ষুদ্রঋণ এবং ইউনূস নিয়ে কিছুই জানিনা।পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কিছু শুনলেও তাই মন্তব্য করা হয়না।একটু পড়ে নিতে হচ্ছে।তোমার লেখাগুলো অনুপ্রাণিত করছে।
নুপুর ভাই,
আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছে জেনে আমারও ভালো লাগল।
ক্ষুদ্রঋণের তর্ক-বিতর্কে শুধু একটা বিষয়ে খেয়াল রাখবেন, তথ্য। বক্তা/লেখকের ব্যক্তিগত ক্রেডেনশিয়ালের উপর বিশ্বাস রাখলে আখেরে ঠকতে হবে, হবেই।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
জানার আছে অনেক কিছু ... ড: ইউনুস কে নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক দেখি ।আপনার লেখা থেকে অনেক কিছু শেখা যায় ।
:clap:
পড়লাম অনেক কিছু শিখলাম-জানলাম।।
আমার জানা মতে গ্রামীন ব্যাংক তার সাফ্যলের ক্লেইম করে এই বলে যে, তাদের দেওয়া ঋন নাকি ৯৭%+ মানুষজন ফেরত দেয়!!
মাহমুদ ভাই, আহমেদ ভাইরে করা মেইলটা কি আমাকে ফরোয়ার্ড করা যায় না?
asifndespair@gmail.com
যেমন রক্তের মধ্যে জন্ম নেয় সোনালি অসুখ-তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
জাতির শরীরে আজ তেম্নি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি - ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ি রূপে
- রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
আমারেও প্লিজ,
emahmud@gmail.com
@ নঈম ভাই ও কিবরিয়া,
মেইল পাঠায়া দিছি।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মেইল পাইছি।।
থ্যাংকু থ্যাংকু।। 😀 😀
যেমন রক্তের মধ্যে জন্ম নেয় সোনালি অসুখ-তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
জাতির শরীরে আজ তেম্নি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি - ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ি রূপে
- রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
কিবরিয়া আমি একটা জায়গায় দেখলাম গ্রামীন ব্যাংকে ৩০% ডিফল্টার।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আপু এইটা আর এইটা দেখতে পারেন।
আমার মেইনলী এইটা পড়ার পর খোজাঁখুজি শুরু করছিলাম।। 😀
ইউনুস আসলে একটা মাল।।
যেমন রক্তের মধ্যে জন্ম নেয় সোনালি অসুখ-তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
জাতির শরীরে আজ তেম্নি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি - ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ি রূপে
- রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
- এইটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা। মানুষ জন ফেরত দেয় বলে ক্ষুদ্রঋণওয়ালারা বোঝানোর চেষ্টা করে যে, লোকে লাভজনক ব্যবসা করে বলেই লাভের থেকে ঋণ ফেরত দেয়। অর্থ্যাৎ, ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্য দূরীকরণে সফল!
কিন্তু আসল সত্য হলো, গ্রহীতাদেরকে সিস্টেমিক চিপা দিয়ে ঋণ সুদেমূলে ফেরত দিতে বাধ্য করা হয়, আর সেটা প্রায়শঃই প্রবল প্রেশার দিয়ে। মানুষ সহজে ভিটেমাটি ছাড়েনা।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
নঈমের কথার সাথে বেশ খানিকটা একমত। দরিদ্র থাকার পেছনে অনেকটা মানসিকতা দায়ী। এটা শুধু গ্রামেই নয়, দেশেও অবস্থাপন্ন শ্রেনী বা প্রবাসে শিক্ষিত চাকুরীজীবিদের অনেকে দরিদ্র বা ঋণএর চক্রে আটকে যাচ্ছে তাদের স্বভাবগত কারণে। শর্টকার্টে বড়লোক হওয়া যায় না এবং ঋণ জিনিষটা যে ভালো না সেটা বুঝতে না পারার কারণে।
তোমার লেখায় যেই উদাহরণগুলো দিলে তাতে কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে তারা ভালো করছিলো কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং আরো নানাবিধ কারণে কিস্তি দিতে না পারাতে রূণের চক্রে পড়ে। এখানে আরেকটা নিয়াময় যোগ হতে পারে কী - মানুষের এডভেঞ্ছার স্বভাব? আমি কয়েকটা ডকুমেন্টারীতে দেখেছি ইউরোপের কিছু গ্রামে বুড়ো্লোকেরা ছাড়া আর কেউ নেই। The Cider House Rules ছবিটাতে ব্যাপারটা উঠে এসেছে।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
- আপু,
প্রথমে তর্কের খাতিরে ধরে নিই যে তারা প্রাকৃতিক দূর্যোগের জন্য আর্থিক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছিল। তাইলে সেই সময় দরিদ্রের বন্ধু হিসেবে ক্ষুদ্রঋণের কি ভূমিকা হওয়া উচিত? ঘরের চাল খুলে নেওয়া, ২০০৮ এ সিডরের সময় ব্যাপক হারে যেটা তারা করেছে? আপনি নিশ্চয় এটা সমর্থন করবেন না।
আমার মনে, প্রাকৃতিক দূর্যোগের রিস্ক বেশি বলেই এইসব গ্রামীন আর্থিক কারবারে বিনিয়োগ সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ। আর তাই অন্যকোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এইসবে ব্যবসা করতে যায় না। ডঃ ইউনুসের কৃত্বিত্ব হলো সেই ঝুঁকির পুরোটাই দরিদ্র নারীর ঘারে চাপাতে পারা। এর ফলেই ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসায় কারবারির এতো বেশি লাভ, আর গ্রাহকের ক্ষতি। এটা ক্ষুদ্রঋণ আর গ্রামীন অর্থনীতির কাঠামোগত, ব্যক্তি চরিত্রের ভালোমন্দের ব্যাপার নয়। (সম্পাদিত)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
বিতর্ক বড় ভয় পাই, তাও আবার সিসিবিতে। ভালো খারাপ আসলে বিচার করার মতো এতো জ্ঞ্যানী এখনো হয়ে উঠিনি। কিন্তু আমি একটা এনজিও তে গবেষনা বিভাগে প্রোগরাম কো-অর্ডিনেটর পদে কাজ করেছি যেই প্রতিষ্ঠানটি ডঃ ইউনুসের আপন ভাই ডঃ ইব্রাহীম পরিচালনা করতেন। প্রতিষ্ঠানটিতে ডঃ ইউনুস সহ আরও ১৫ জন হম্বিতম্বি মানুষ মিলিকানায় ছিলেন। তখনো ইউনুস সাহেব নোবেল প্রাইজ পাননি। তার ভীন দেশী কন্যা পিতৃ দেশ এসে ঘুরে গেল- সেই সময়ের কথা বলছি। আমার ডিপার্টমেন্ট যদিও না, তার পরও মাইক্রো-ক্রেডিট নিয়ে এতো কথা, তাই আগ্রহ বশত সিস্টেমটা বুঝার চেষ্টা করলাম। বেশ ক'টি ফিল্ড ভিসিটে গিয়ে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী, যারা এনজিওটির নানাবিধ কার্যক্রমের সাথে জড়িত এবং তাদের অনেকেই ক্ষুদ্র-ঋন গ্রাহক, তাদের সাথে কথা বলার সু্যোগ আমার হয়েছিল। সেই গ্রামটিতে কম হলেও ১২ থেকে ১৫ টা (সংখ্যা খুব সম্ভব আরো অনেক বেশী হবে নিশ্চিত, এক্সাক্টলী মনে নেই) এনজিও এই ক্ষুদ্র ঋন নিয়ে কাজ করছে বেশ জোড়েসরে। ডিম বিক্রি করে বিশাল বড়লোক হয়ে যাবার স্বপ্ন দেখার গল্পের মতই গ্রামের মানুষগুলো ব্যাবসা করে বিরাট ধনী হয়ে যাবে ভেবে একটা এনজিও থেকে ঋন নেয়, মাহমুদ ভাইয়ের উপরে লেখা ঘটনাগুলোর মত নানান পরিস্থইতিতে পড়ে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে অপারগ হয়ে অন্য আরেকটি এনজিও এর কাছে আবার ঋন নেয়...কিছুদিন পর আমার অন্য আরেকটি এনজিও থেকে...নিতেই থাকে, নিতেই থাকে। ঋনের বোঝা বাড়তেই থাকে। অনেকটা পশ্চিমা দেশগুলোর মত, ক্রেডিটেই জীবন চলে! এখানে ডঃ ইউনুস বা ক্ষুদ্র ঋন দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কি করে বাংলাদেশ থেকে দারিদ্র মুছে ফেলবেন বলে আশ্বাস দেন তা আমাই এই ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে কোনভাবেই ঢুকে না, হয়তো আমারই ব্যার্থতা বা সীমাবদ্ধতা।
ডঃ ইউনুস সম্পর্কে যেই অভিযোগ উঠেছে তা অবশ্য এই আলোচনার সাথে রিলেটেড না। কিন্তু মানবিকতা বা মনুষত্য বিবেচনায় আমার মত আবেগপ্রবন মানুষের সেদিন গ্রামের মানুষগুলোর কথা শুনে চোখে জল আসেনি, রাগ হয়েছিল ভীষন সিস্টেমটার উপর, ডঃ ইউনুসের মতো উপরতলার লোকের উপর রাগ করার ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস ছিল না বলেই বোধয়।
আমি এতোকিছুর পরও মনে প্রানে চাই ডঃ ইউনুস নির্দোষ প্রমানিত হউক। নইলে বিশ্বের দরবারে জাতি হিসেবে "চির উন্নত মম শির" নিয়ে দাড়ানোর যে বাসনাটা মনের ভিতর আজ আমরা সবাই লালন করছি, তা কোনদিনও আর সম্ভব হবে না বোধহয়।
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
বিনয় শিখতে হবে।
হ ঠিক্কইচ্চেন।। 🙁 🙁 :boss:
যেমন রক্তের মধ্যে জন্ম নেয় সোনালি অসুখ-তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
জাতির শরীরে আজ তেম্নি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি - ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ি রূপে
- রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
গুলশান, এই ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ একটা ব্লগে এই কোটটা না করলেও চলতো। যাই হোক, তোমার জ্ঞ্যাতার্থে বলি ভাই, আসলেই সিসিবিতে ব্লগগুলো পড়ি আর উপলব্ধি করি আমি আসলেই কি গর্হিতপর্যায় কম জানি তোমাদের সবার তুলনায়। আর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ছিলো সেই এনজিওটির স্টার্টিং পোষ্ট 🙁
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
সরি আপু।
ধন্যবাদ জিতু তোমার মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য। মাঠে গেলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস সকলেরই তোমার মতো অভিজ্ঞতা হবে।
- উহুঁ, এটা ব্যক্তি হিসেবে তোমার একার সীমাবদ্ধতা নয়, আমাদের প্রায় সকলেরই, বিশেষ করে যারা ডঃ ইউনুসের ক্রেডেনশিয়াল দেখে তার কথা সরল মনে বিশ্বাস করি। এতো বড় মাপের একজন মানুষ ক্রমাগত মিথ্যা বলে যাবেন এটা ভাবা সহজ নয়। কিন্তু আমি তাকে সেটাই বলি। আমার একটা ব্লগ আছে 'ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ে আমার মূল্যায়ণ', সেখানে আমি ব্যাখ্যা করেছি কেন তাকে আমি 'সচেতন মিথ্যুক' বলি।
জিতু, চিন্তার কিছু নাই। ক্ষুদ্রঋণের ঈশ্বরকে ধরা সহজ নয়, সারা ইউরোপের সমস্ত রাজারানী, ইংল্যান্ড-আমেরিকার বিলিয়নিয়াররা যার বন্ধু, তাকে ধরতে পারা এক কথায় অসম্ভব। লক্ষ্য করলে দেখবে অলরেডি তাকে বাঁচানোর জন্য সেই প্রামাণ্যচিত্রের মূল বক্তব্য (ক্ষুদ্রঋণের ফলে গ্রহীতাদের দূর্ভোগ) এড়িয়ে মিডিয়া লেগে পড়েছে গ্রামীনের তহবিল স্থানান্তর নিয়ে। আইনী মারপেঁচে এটা কাটিয়ে উঠতে পারলেই জোরেশোরে বলা শুরু হবে ক্ষুদ্রঋণ ঠিকই আছে। এমন ভাবে, যেন সেই চিত্রে দেখানো মানুষগুলোর দূর্দশা কোন ব্যাপারই না।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
জিতু,
তোমার মন্তব্যের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশই দেখি মিস করে গেছিলামঃ
(এম্ফেসিস এডেড)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
পুরো লেখা এবং মন্তব্য গুলো পড়লাম। জানলাম অনেক কিছু কিন্তু কতটুকু বুঝলাম তা বোধগম্য নয়। মনের ভিতর অনেক প্রশ্ন জেগে উঠল। দয়া করে যদি কেউ জবাব দিতেন তবে খানিকটা স্বস্তিবোধ করতাম।
প্রশ্ন ১। কোন বিচারকরা ড.ইউনূসকে মহামূল্যবান নোবেল খানা দিল? তাদের বিচার করার ক্ষমতা কি খুবই দুর্বল?
প্রশ্ন ২। আসলেই কি ড.ইউনূস ধাপ্পাবাজ? তার কর্ম কি ব্যাক্তিগত লাভ ছাড়া দেশের এবং দেশের মানুষের কোন উপকারে আসে নাই?
প্রশ্ন ৩। দুইদিন আগে যে দেশের হীরো ছিল আজ কিভাবে সে সবচেয়ে ঘৃনিত ব্যক্তিতে পরিনত হল?
আমার কথা, দরিদ্রের দুষ্ট চক্র যারা পড়েছেন তারা উপলব্ধি করেছেন কিভাবে দরিদ্ররা কেবল আরো দরিদ্রই হতে থাকে। আমাদের ড্রয়িং টিচার (নামটা এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না) খুব রসিয়ে একটা কবিতা আবৃত্তি করতেন।
“যার টাকা নেই, তার চাকা নেই। আর যার চাকা নেই, তার টাকা নেই।”
কবিতা কবির নামও মনে করতে পারছি না, অনেকেই পড়ে থাকবেন।
যারা আমার কথার বিপক্ষে, তারা হয়ত অনেক দরিদ্রের ঊত্তরনের কাহিনী শুনাবেন। কিন্তু তা খুবই নগন্য,হাজারে দুই এক জন। একখানা বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে কখনই রাতারাতি ধনী জনগোষ্ঠীতে পরিনত করা সম্ভব নয়।
যারা এই নিয়ে বিশদ গবেষনা করছেন নতুন মডেল দাড়া করানো কথা ভাবছেন, তারাও যে একসময় ড.ইউনূস-এ পরিনত হবেন না। তাহা সম্ভাবনা কি? স্বয়ং ইশ্বর কিংবা স্রষ্টা যাই বলুন না কেন, তিনি যখন আর দরিদ্র জনগোষ্ঠী নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছেন না, সেখানে ড.ইউনূস এর মত মানুষরাই বা আর কতটুকু পারবে?
"টাকা নেই তাই চাকা নেই তাই টাকা নেই"
- ওয়াহিদ স্যার
মামা! দূরনীতি ছাড়া দূরনীতির চ্যামপিয়ান দেশে "টাকা" আর "মিডিয়া কভারেজ" পওয়া যায় না
মহিউদ্দীন,
তোমার প্রথম প্রশ্নের উত্তরে শুধু এইটুকু বলি, ডঃ ইউনুসের কাজটা অর্থনৈতিক, কিন্তু নোবেল পুরষ্কারটা শান্তি'তে। এইটা কেন হলো? কেন তাকে অর্থনীতিতে নোবেল দেওয়া হলো না যদি গ্রামীন অর্থনীতিতে এই মডেল এতোটাই কার্যরকী হতো যতোটা তারা দাবী করে?- আবার নোবেল পুরষ্কারের পর তাকে পরিচয় করা/করানো হয় নোবেল বিজয়ী 'অর্থনীতিবিদ' বলে (!!!)- গতবার ওবামা শুধু মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে এই পুরষ্কার পাইছে! এইবার চীনের জিয়াবাও-কে নোবেল শান্তি পুরষ্কার দিছে, আর সে বুশের ইরাক যুদ্ধ, ওবামার আফগ্রানিস্তানের যুদ্ধকে সমর্থন করেছে; আরও বলছে আমেরিকার ভিয়েতনাম যুদ্ধ সঠিক ছিল!.........আর কত শুনবা?
ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে দেশের মানুষ কার কি লাভ হয়েছে সেটা দেখার আগে দেখতে হবে যাদের লাভ হয়েছে+হচ্ছে (গ্রামীন দরিদ্র নারী)বলে দাবী করা হয়, তাদের কি অবস্থা? এইখানে ঘুরে আসো (//cadetcollegeblog.com/mahmudh/8159), কিছুটা জানবে।
আর তিন নম্বর প্রশ্নের উত্তরে বলি, গ্রামের মানুষের কাছে তিনি কখনোই 'হীরো' ছিলেননা। কারণ, ক্ষুদ্রঋণ কি চীজ সেটা জানার জন্য তাদেরকে নোবেল কমিটির পুরষ্কার প্রদান আর টিভি-পত্রিকার রিপোর্ট পড়তে/দেখতে হয়না। তারা নিজেদের জীবন থেকে নেওয়া অভিজ্ঞতা দিয়ে জানে এইটা একটা মরণ ফাঁদ।
যারা আগে তার কথা সরল বিশ্বাসে মেনে নিয়ে ভেবেছে ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্যকে যাদুঘরে পাঠাচ্ছে, তাদের অনেকে এখন দেখছে এটা পুরাই ফাঁকাবুলি। আর তাই তিনি এখন হীরো থেকে জিরো তে নেমে আসছেন। (সম্পাদিত) (সম্পাদিত) (সম্পাদিত) (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
😮 আর কতো? :no:
যাই হোক। জিতুর কথা মতো ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ ব্লগে দুষ্টামি কম।
একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, নোবেল শান্তি পুরুষ্কার আসলে নোবেল পলিটিশিয়ান পুরুষ্কার। বছরের সেরা ওয়ার্ল্ড পলিটিশিয়ানরাই এটি একচেটিয়া ভাবে পাইয়া আসতেছে। সাথে একটু মর্যাদা ধরে রাখার জন্য কিছু অন্য লোক থাকে।
গ্রামীন চেক পরে সাধারনের কাতারে নেমে আসার চেষ্টাটা বহুবার ভন্ডামি মনে হলেও গ্রামীন, ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে খুব বেশি কিছু জানিনা ।
আপনার স্বদেশ ভাবনার সহজ ধরনটা খুব ভাল লেগেছে। :boss:
- ধন্যবাদ রেশাদ, অন্তত তুমি খেয়াল করেছো যে আমি পুরোপুরি 'দেশঅপ্রেমিক' না; অন্যজাতের হলেও খানিকটা দেশপ্রেম আমারও আছে ;;;
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
কেন? ড: ইউনুসের বিপরীতে বললে কেউ দেশ-অপ্রেমিক হবে কেন?
লেখাটা পড়লাম। সম্পূর্ণ একমত। প্রচুর মন্তব্য। সবগুলো পড়ার ধৈর্য নেই।
তোমার একটি প্রশ্ন যুক্তিসঙ্গত। তা হলো বাংলদেশের কোন ব্যবসায় বিনিয়োগ করে ৪০% রিটার্ন পাওয়া সম্ভব? আসলেই তো। ডঃ ইউনূসের লেখা বই হতে জানতে পারি সুদের হার ২০%।
আমার প্রশ্ন ১ঃ সুদের হার আসলে কত? ২০% নাকি তার চেয়ে বেশি।
প্রশ্ন ২ঃ এই ক্ষুদ্র বিনিয়োগ কারীরার যদি গ্রামীন হতে ঋণ না পেতো তাহলে মহাজনদের কাছ হতে ঋণ নিতো। ইউণুসের বই হতে পাই সেই ঋণের হার নাকি মাসিক ১০%, তার মানে বাৎসরিক ১২০% এর কাছাকাছি। তাহলে যারা ঋণ নিতো তারা কিভাবে এই টাকা ফেরৎ দিতো? আর যদি ১২০% ঋণ ফেরৎ দেওয়ার সম্ভব তাহলে ৪০% বা ২০% ফেরৎ দেওয়া আরো সম্ভব। বরং এতে ৮০% মুনাফা রয়ে যাচ্ছে। এই চিত্রটি তত্ত্বীয় গত ভাবে কতটা সত্য? আমি এই বিষয়ে তোমার বিশ্লেষণ শুনতে চাচ্ছি।
প্রশ্ন ৩ঃ ক্ষুদ্র ঋণের সমস্যা থাকবে সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু ইউনূস একটি মডেল দাড় করিয়েছেন ট্রায়াল এন্ড এরর এর পদ্ধতিতে যেটা কেউ আগে করেননি। হয়তো এই মডেল ভবিষ্যতে আরো উন্নত হবে। কিন্তু তিনি একটি মডেল দাড় করিয়েছেন। প্রশ্ন হল এর বিকল্প কি আমাদের হাতে আছে? যদি থাকে তবে সেটা কি হতে পারে? আর যদি না থাকে তবে আমাদের কাজ হবে এই মডেলের সমস্যাগুলোকে দূর করে কিভাবে উন্নত করা যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করো। আশা করি বিকল্প হিসেবে তুমি সাম্যবাদ নিয়ে আসবে না। সব কিছুর সমাধান রাষ্ট্র কিংবা সাম্যবাদে দেখলে আলোচনা চালানো অর্থহীন। সাম্যবাদ কিংবা রাষ্ট্রীয় পরিচালনা নিয়ে অন্য সময় আলোচনা করা যাবে। সেটা ভিন্ন বিতর্ক।
পাঠ তালিকায় যে পেপারগুলো রয়েছে সেগুলোর ডিজিটাল কপি থাকলে আমাকে wremostafa এট ইহাহু ডট কম ঠিকানায় পাঠিও। থ্যাকন্স।
মোস্তফা ভাই,
গ্রামীনের সুদের হার বার্ষিক ২০%- এটা একমাত্র গ্রামীনের বইয়েই পাবেন, বাস্তবে এই হার সর্বত্রই ৪০% ছাড়িয়ে যায়। কারণ, গ্রামীন ষ্ট্যান্ডার্ড হিসাব বাদ দিয়ে একটা গোজামিল দেয়, আর তাতেই তাদের হিসেবে সুদের হার আসে ২০%। আমার কথা বিশ্বাস করার দরকার নেই, তবে গ্রামীনের বইও বিশ্বাস করবেন না। অন্যান্য অসংখ্য সূত্র আছে এই সুদের প্রকৃত হার জানার জন্য।
২। মহাজনের সুদের হার আসলেও বার্ষিক ১২০% বা তার বেশি ছিল। কিন্তু এইখানে গ্রামীন একটা বিশাল চাপাবাজী করে; এইটা হলো 'গ্রামের লোকজন ক্ষুদ্রঋণ না থাকলে মহাজনের কাছে যেতো'। হুম যেতো, কিন্তু অল্প সংখ্যক লোকেই মহাজনের কাছে যেতো এবং এটা জেনেই যেতো যে মহাজনের ঋণ কি ভয়ানক জিনিস। কিন্তু বিপরীতভাবে, গ্রামীনের ক্ষুদ্রঋণ মানুষের কাছে যায়, আর দরিদ্র মহিলাদেরকে দারিদ্র্যমুক্তির মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ঋণ গছিয়ে দেয়। মহাজনের কাছে কাছে খুব অল্প মানুষ যেতো, মহাজন তাদের সর্বশান্ত করতো বলে তাদের ঘৃণাও করতো। কিন্তু ক্ষুদ্রঋণ ব্যাপক আকারে গ্রামের অধিকাংশ মানুষের কাছে যায়, ধীরে ধীরে তাদেরকে শোষণ করে, দরিদ্র করে, কিন্তু ভাব ধরে যে দরিদ্রদের মুক্তির জন্যই যাচ্ছে। ক্ষুদ্রঋণের এই সিস্টেম্যাটিক শোষণের বিরুদ্ধে কথা বলার পথও বন্ধ, থামানো ত দূরের কথা।
৩। বলেছেন, ক্ষুদ্রঋণ একটা মডেল দাড় করিয়েছে। কিন্তু সেই মডেলের বিবরণ পেয়েছেন কোথাও- সেটা কিভাবে কাজ করে, কাকে কাকে কিসের ভিত্তিতে ঋণ দেয়, কি কি কাজের মাধ্যমে গ্রহীতারা আয় বৃদ্ধি করে, কি কি উপায়ে ঋণ পরিশোধ করে- এইসব বিষয়ে ডঃ ইউনুস বা তার মতের অনুসারী কেউ কখনও বিশ্লেষণ করেছেন দেখিনি। এইসব কথা বললেই উত্তর দেওয়া হয় এই বলে যে, আমরা শুধু থিওরী কপচাই না, আমরা বাস্তবে কাজ করি।......তখন আর কি বলার থাকে? থিওরী ত আকাশ থেকে পড়ে না, বাস্তব থেকেই তৈরী করা হয়। বাস্তবে ক্ষুদ্রঋণ কিভাবে কাজ করছে, তার ভিত্তিতেই আমি জানতে চাই এটা কি। ডঃ ইউনুস বা ডিগ্রীধারী কারো মুখের কথায় নয়। কিছু আর্টিক্যাল পাঠাবো ক্ষদ্রঋণের মডেলের বাস্তব রূপ বোঝার জন্য।
ক্ষুদ্রঋণের ক্ষতিকর দিক আলোচনা করার জন্য অন্য কোন মডেল আলোচনা করার প্রয়োজন নাই, যেমন বিষের ক্ষতিকর দিক আলোচনা করার জন্য অমৃতের আলোচনা অপ্রয়োজনীয়।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মূল পেপারগুলো আমাকে পাঠিও।
ভাইয়া,
চারটা পাঠালাম। আরো চাইলে পাঠানো যাবে। ক্ষুদ্রঋণের উপর আমার কাছে ২০টার মতো একাডেমিক পেপার আছে।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
ভাই,
গতকালকের কালের কণ্ঠ খবর দিছে ড: ইউনুস নাকি গ্রামীন কল্যান থেকে ৬০০ কোটি সরাই ডানন দই বানাইছে। 🙂 🙁
থলের মুখ খুলে গেলে সেটা আটকানো মুশকিল। আরো নতুন খবর বের হলে আমি অবাক হবো না।
মিথ্যা কখনোই চিরকাল ঢেকে রাখার জিনিস না। এর প্রকাশ অবশ্যম্ভাবী।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
ভারতের ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে বিবিসি-এর প্রতিবেদন-
http://www.bbc.co.uk/bengali/news/2011/01/110126_mhmicrocredit.shtml
ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে বৃহৎ পুষ্ট ...
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
বৃহৎ পোষ্টে ক্ষুদ্র কমেন্ট...... :grr:
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
লিখাটা এবং তৎসংলগ্ন মন্তব্য সকল পড়ে ভাল লাগল। মূল পয়েন্ট গুলা, যা এই সবকিছুতে উঠে এসেছে, আমার কাছে মনে হল এমনঃ
১) গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেটার ভুক্তভুগীদের সংখ্যা বেশী।
২) শুধু ঋণ দিয়ে দরিদ্র জনগণ এর ভাগ্য বদলান যাবে না, এর পাশাপাশি সামাজিক এবং প্রাকৃতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মোট কথা, একটা মডেল কে কার্যকর করতে হলে পারিপার্শ্বিক সাপোর্ট দরকার।
৩) কিন্তু, গ্রামীন ব্যাংক এর সেসব দিকে চিন্তা কম ই মনে হয়, তাদের মুনাফা অর্জন টা ই তাদের কাছে প্রাধান।
৪) গ্রামীণ ব্যাংক "গ্রামীণ বন্ধু" কথাটা তাদের স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছে। কারন তারা দুর্যোগের সময় ঋণ ভোগীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না, শুধু ঋণ দিয়ে আর টা সময় মত আদায় করে ই তাদের দায়িত্ব পালন শেষ করছে। তার মানে ব্যবসায় টাকা খাটিয়ে সেটার লাভ আর ক্ষতি ২ টা ই সমান ভাবে গ্রহণ করার ব্যাপারটি চলে আসতে পারে এক্ষেত্রে, অথবা অন্যান্য ব্যাংক এর মত ঋণ গ্রাহিতাদের সুবিধা দিতে হবে।
৫) মোট কথা, গ্রামীণ ব্যাংক এবং তাদের ক্ষুদ্র-ঋণ এর মধ্যে যথেষ্ট ধাপ্পাব্জী আছে (সেটা হচ্ছে শুধু মুনাফা লগ্নী করা) আর এই মডেলটার অনেক সীমাব্ধ্বতা ও আছে (সেটা স্বীকার না করা টা আর তা দূর করার চেষ্টা না করা ও ধাপ্পাবাজীর ই আরেকটা নমুনা বলে মনে করি, সেই সাথে ট্রাইয়াল এন্ড এরর ব্যাপার টা ও নাকচ হয়ে যায়--যেটা একজন কমেন্ট করেছেন), যেটা গ্রামীণ ভুক্তভুগী জনগণ অনেক আগে ই টের পেলে ও নগরের সচেতন সমাজের আর সরকারের সচেতন বিবেচনায় আসতে অনেক সময় লেগেছে, আর যেটা গ্রামীণ মুক্তির জন্য বর্তমান নিয়ম এ খুব জ্রুরী!!!
তবে, এসব কিছুর উপরে (সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগতভাবে) ভাল লেগেছে যেটা সেটা হল যে কখন ও একপেশে হওয়া ঠিক না।
ধন্যবাদ।