অনুজপ্রতীম মাসরুফের “অস্ত্র থেকে অক্ষর” লেখাটি সাম্প্রতিক সময়ে সিসিবি’র অন্যতম আলোচিত এবং প্রশংসিত একটি পোষ্ট। এর প্রতি আমাদের বেশিরভাগেরই মনোযোগও ছিল বেশ, কারণ এটি পোষ্ট করার আগে আরেকটি পোষ্টে লেখক জানিয়ে দিয়েছিল এর মূল প্রতিপাদ্য যা’ ছিল একজন এক্স-ক্যাডেট মুক্তিযোদ্ধা মেজর কামরুল ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎকার এবং তা’ থেকে প্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কিছু অজানা তথ্য। যথারীতি পোষ্ট আসল এবং সকলেই ব্যাপক প্রসংশায় ভাসিয়েও দিলাম পোষ্ট এবং পোষ্টদাতাকে। মাসরুফ এবং তারমতো আর সকলেরই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আবেগের ব্যাপারটি আমার কাছে অমূল্য। সেই কারণে আমিও প্রসংশা করলাম, অন্তর থেকেই।আমাদের দেশের উন্নয়নের পথে এই আবেগ ছাড়া আমি আর কোন পাথেয় দেখিনা। কিন্তু পোষ্টের বক্তব্যে আমি খানিকটা হতাশ, অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্বেও শুধু আবেগকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে ব্যবহার করতে না-পারার কারণে মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্যসমৃদ্ধ ব্লগের বদলে-মাসরুফেরই কথায়-“লেখাটা শেষ পর্যন্ত “ব্লগ” বা ব্যক্তিগত কথামালার বেশি কিছু হয়ে উঠতে পারেনি”। এটা ঘটেছে- আবারো তার কথায় “টেকনিক্যাল নলেজ না নিয়ে শুধুমাত্র আবেগকে ভরসা করায়”।- আসলে মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে যত লেখালেখি দেখি, তার বেশিরভাগই এই পরিণতি বরণ করে। আমার এই পোষ্ট এর কারণ বোঝার এবং তা’ থেকে উত্তরণের চেষ্টা।
সাক্ষাৎকারভিত্তিক তথ্যানুসন্ধানের প্রধানতঃ দুইটা রীতি আছে- structured এবং un/semi-structured । প্রথমটার বেলায় প্রশ্নকর্তা আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখে কি কি প্রশ্ন করবে। এক্ষেত্রে আগে শুধু থেকে নির্বাচিত প্রশ্নই করা হয়। আর দ্বিতীয়টার বেলায় বিষয় সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা থাকলেই চলে, সাক্ষাৎকারের মধ্যে নতুন নতুন প্রশ্ন এসে যায় যা’ সাক্ষাৎকারের প্রকৃয়াকে এগিয়ে নিয়ে যায়। মাসরুফের ক্ষেত্রে প্রথম পদ্ধতি অনুসরণ করার চেষ্টা ছিল; সে আগে থেকেই প্রশ্ন নির্ধারণ করে নিয়েছিল। কিন্তু তার নির্বাচিত প্রশ্নগুলো ছিল (আলোচ্য পোষ্ট দ্রষ্টব্য) মুক্তিযুদ্ধের মূল/গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর স্থলে কম গুরুত্বপূর্ণ দিকে ফোকাসড, যেমন- যোদ্ধার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার গল্প। এটা ঘটেছিল এই কারণে যে, মুক্তিযুদ্ধের আলোচনায় আমরা সাধারণতঃ যোদ্ধাদের ব্যক্তিগত বা ছোটছোট দলগত কাহিনীগুলোতে বেশি আগ্রহী। কিন্তু এই ধারায় ইতিহাস চর্চায় সীমাবদ্ধতা আছে যা’ কামরুল ভাই মনে করিয়ে দিয়েছেন এই উক্তিতে-“Anybody who has seen 1971 has a story to tell, so, there will be hundreds of stories from every corner. That is why you must focus on overall war than someone’s personal experience”. এরপরেও মাসরুফের মনোযোগ যোদ্ধার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার দিকে থেকে যাওয়ায় কামরুল ভাই তাকে আবারও মনে করিয়ে দিয়েছেন এই বলে যে, “Ask me questions that are more important.” -এটা ছিল একটা দারুন সুযোগ। কিন্তু সে সেটা কাজে লাগাতে পারেনি। ফলে, আমরা একজন মুক্তিযোদ্ধা+মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে এক নিবেদিতপ্রাণের দৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানার সূবর্ণ সুযোগ হারালাম। আসলে মুক্তিযুদ্ধের কর্তিত/খন্ডিত/আংশিক ইতিহাসের আলোচনা ‘হেজেমনিক’ রূপ নিয়েছে, ফলে আমরা একটা নির্দিষ্ট ধারার বাইরে এ’সম্পর্কে নতুন কোন প্রশ্নই উত্থাপন করতে ব্যর্থ হই।
একজন মুক্তিযোদ্ধা কেন যুদ্ধে গেল, ভারত কখন+কেন+কিভাবে আমাদের সাহায্য করতে এলো, খেতাব প্রদানের প্রকৃয়া কতটা সঠিক ছিল- এসব মুক্তিযুদ্ধকে জানা+বোঝার ক্ষেত্রে প্রাসংগিক হলেও মূল বিষয় নয়। আসলে আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করি নাই তাদের কাছে সবকিছুই গুরুত্বপূর্ণ মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকে সামগ্রিকভাবে জানতে হলে যারা সরাসরি যুদ্ধ করেছে তাদের কাছ থেকেই তা জানতে হবে, তারা যা’ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভেবেছিলেন+ভাবছেন সেগুলোকেই অধিক গুরিত্ব দিতে হবে। তবেই জানা যাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস। অর্থ্যাৎ, আমি বলতে চাইছি যে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদেরকেই বলতে দিতে হবে কি কি বিষয়কে তারা গুরুত্বপূর্ণ ধরে নিয়েছিলান যুদ্ধে নামার শুরুতে, যুদ্ধের সময়, এবং যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে। তাহলে আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার ইতিহাস জানতে/নির্মাণ করতে চাই, মুক্তিযোদ্ধাদের কাছেই যেতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো, কারা এই মুক্তিযোদ্ধা? কাদের কাছ থেকে আমরা জানবো মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে?
প্রচলিত ডিসকোর্সে মুক্তিযোদ্ধা বলতে প্রধানতঃ সামরিক বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতার কাছাকাছি-থাকা রাজনৈতিক নের্তৃবর্গ, আর কিছু ভাগ্যবান কলামিষ্ট ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ত ছিল একটা গণযুদ্ধ যেখানে আপামর জনতা (নারী-পুরুষ, কৃষক-শ্রমিক-পেশাজীবি, গ্রামীন-শহুরে, সাধু-দুষ্কৃতকারী) অংশ নিয়েছে। তাছাড়া, যুদ্ধে অংশ নেওয়ার পেছনে একেকজনের মোটিভ ছিল একেক রকম, এটা বাইডিফল্ট ধরে নেওয়ার উপায় নেই যে সকলেই দেশপ্রেমের জন্য যুদ্ধে ঝাপ দিয়েছিলেন; কারো জন্য দেশপ্রেমটা শুরুতে, কারো যুদ্ধ চলাকালে, এমনকি কারো জন্য যুদ্ধশেষেও দেশপ্রেমের চেতনা এসে থাকবে। আমার ধারণায়, এমন মুক্তিযোদ্ধাও পাওয়া যাবে যারা দেশপ্রেম নিয়ে মোটেও মাথা ঘামায়নি। আর তাই, একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার কাছে মুক্তিযুদ্ধ একটা সামষ্টিক বিষয়। এজন্যই মেজর কামরুল ভাই বলেছেন- “আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কোন একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রচেষ্টার ফসল নয়- এটি ছিলো একটি সামষ্টিক যুদ্ধ। যুদ্ধের ময়দানে যে যুবক দণ্ডায়মান তাকে কমান্ডার কখনো জিজ্ঞাসা করেনা সে কোথা থেকে এসেছে, কেন এসেছে। সে যে যুদ্ধ করতে এসেছে এটাই মূল কথা। কাজেই, আমার ব্যক্তিগত ভূমিকা কি ছিলো, আমি কোথায় ছিলাম- ১৯৭১ এর গণযুদ্ধে এর উল্লেখ নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়।” – অতএব, মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক তথ্যের জন্য মিডিয়ায় সুপরিচিত মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধ বিশেষজ্ঞের থেকে আমি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকেই বেশি প্রাধান্য দিবো। আর এক্ষেত্রে যারা প্রচারবিমুখ, এবং যাদের কাছ থেকে এযাবৎ কোনকিছুই প্রায় শোনা হয়নি (যেমন, নারী, কৃষক) তাদেরকে আমি বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।
সাক্ষাৎকারের পদ্ধতি হিসেবে আমার কাছে দ্বিতীয়টি, তথা un/semi-structured বেশি উপযুক্ত মনে হয়। কারণ, এক্ষেত্রে উত্তরদাতার অভিজ্ঞতা বেশি উঠে আসে। ফলে, তার দৃষ্টিভঙ্গী বোঝা সহজ হয়। জুলফিকারের লেখা “আমার বাবার চোখে ১৯৭১” এই দিক থেকে বেশ খানিকটা সফল আমি মনে করি। কারণ, এখানে একজন যোদ্ধার দৃষ্টিভঙ্গীর ছাপ স্পষ্ট; যেমন, তিনি কি পরিস্থিতিতে যুদ্ধে নেমেছিলেন, কি কি ভূমিকা পালন করছেন, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি কেমন ছিলো, ইত্যাদি। জুলফিকার কোন নির্দিষ্ট প্রশ্ন ছাড়াই বাবার কাছে গল্প/অভিজ্ঞতা শুনতে চেয়েছে বলে তিনি নিজের মতো করে বলতে পেরেছেন যা থেকে আমরা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে না-জানা বেশ কিছু বিষয় জানতে পেরেছি। ঠিক এইখানে জুলফিকার মাসরুফের তুলনায় সফল। কিন্তু এই পদ্ধতি অনুসরণে দুটো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়ঃ এক, অসংখ্য ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণের মধ্যদিয়ে মূল বিষয়ের একটা সামাজিক চিত্র নির্মাণ; আর দুই, বক্তার ব্যক্তিগত বায়াস চিহ্নিতকরণ।
যেসব সামাজিক বিষয়ে গবেষণা অপ্রতুল বা শুরুই হয়নি অথচ ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার ছাড়া তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন (বিশেষ করে ঐতিহাসিক ঘটনা, যেমন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ), সেসব ক্ষেত্রে এথনোগ্রাফিক ইন্টারভিউ বা ন্যার্যাটিভ খুব কার্যকরী পদ্ধতি। ব্যক্তিগত ষ্টোরিগুলো ভালো করে পর্যবেক্ষন করলে আমরা সকলের মধ্যে কিছু কমন
বিষয় পাবো যেগুলোকে তারা নিজেরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। আমার নিজের দুটো গবেষণায় দেখেছি, টার্গেটেড লোকেদের কাছে এমন সব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ যা’ শুরুতে আমার ধারণায়ও ছিলো না। তাদের ৫/৬ জনের সাথে কথা বলার পর একটা আবছা ধারণা তৈরী হতে শুরু করেছিল কি কি বিষয়কে তারা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, কেন মনে করে, তাদের জীবনে সেসবের প্রভাব কি, ইত্যাদির সম্পর্কে।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে এই ধরণের ইন্টারভিউ ব্যক্তির বায়াসকেও চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। সাক্ষাৎকারে আমাদের একটা বিষয় মনে রাখা দরকার যে, উত্তরদাতা প্রায়শঃই প্রশ্নকর্তার মনোভাব বুঝে উত্তর দেয় যা’ বাস্তব থেকে আলাদা। যেমন, কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধে নিজের অবদানকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করতে পারে এইজন্য যে তা’ তাকে মহান দেশপ্রেমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিবে। ফলে, বেশিরভাগ সময়ই ‘আপনি কেনো যুদ্ধে গিয়েছেন’- টাইপের প্রশ্নের উত্তর আসে ‘দেশের জন্য’। কিন্তু তাদেরকে যদি বলা হয় যুদ্ধে যাবার গল্প বলতে, তাহলে তারা যে গল্প বলেন সেখানে পাওয়া যায় বাস্তব চিত্র যা’ সাধারণত আলাদা। যেমন- কামরুল ভাইয়ের কাছে মাসরুফ জানতে চাইছিলো তিনি কিভাবে যুদ্ধে গেলেন এবং সেখানকার অভিজ্ঞতা। তিনি শুরুও করেছিলেন এই বলে যে, “আমার নিজের, আমার পরিবারের, আমার দেশের অপমান অনুভব করার মত বোধশক্তি সে সময়ে আমার ছিলো- আর যুদ্ধে যাবার জন্যে ওটুকুই যথেষ্ট।”- এইখান থেকে তাকে প্রশ্ন করা যেতো কি কি কারণে তিনি নিজের, পরিবারের, দেশের অপমান বোধ করেছিলেন। প্রশ্নের এই ধারা আমাদেরকে জানাতে পারতো তার অভিজ্ঞতা এবং তা’ থেকে প্রাপ্ত তার অভিমত। কিন্তু আমরা সকলেই যে উত্তরটা আশা করি তা হলো ‘দেশপ্রেম’। এটা কামরুল ভাইও বোঝেন। কিন্তু যেহেতু তিনি সৎ থাকতে চান, তিনি দাবী করেননা যে দেশপ্রেমের কারণেই তিনি যুদ্ধে গেছেন। তিনি যে দেশপ্রেম থেকে যুদ্ধে যাননি তা মনে করিয়ে দিতে তিনি ক্যাডেট কলেজে রাজনৈতিক চেতনার অনুপস্থিতিকেও মনে করিয়ে দেন। এইখান থেকে আমরা জানতে পারি যে, মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে আমরা যে দেশপ্রেমকে দেখি তা’ আসলে যুদ্ধের পরবর্তী কালে আমাদের ‘আবিষ্কৃত’, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত অভিজ্ঞতা নয়। কামরুল ভাইয়ের কাছে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার কারণ তার আত্মপরিচয় (ব্যক্তিগত, পারিবারিক, এবং রাষ্ট্রীয়) যা’ কোন না কোন ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তাকে অপমানিত করেছে। এই দাবী সমর্থিত হয় জুলফিকারের বাবার গল্পেও, তিনি বলেছেন রেডিওতে শেখ মুজিবের বক্তব্যে শোনা “আমাদের আর ধান পাট বিক্রি করে না-খেয়ে মরতে হবে না”- যা’ অর্থনৈতিক মুক্তির আশ্বাস নির্দেশ করে। এভাবে আরো দু’চারজন মুক্তিযোদ্ধার গল্প সংগ্রহ করলে আমরা যুদ্ধে যাওয়ার আরো বেশ কিছু কারণ খুঁজে পাবো। সেখান থেকে যুদ্ধে যাওয়ার বাস্তব কারণ হিসেবে বিভিন্ন বিষয় পাওয়া যাবে যেগুলো ‘দেশপ্রেম’ নামক বিমূর্ত ধারণাকে স্পষ্ট করবে।
এভাবে পূর্ব-ধারণা বা প্রশ্ন ছাড়াই মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ যোদ্ধাদের কাছ থেকে ন্যার্যাটিভ ষ্টোরি সংগ্রহ করে একটা ড্যাটা-ব্যাংক তৈরী করতে করতে পারলে সেখান থেকে সিষ্টেম্যাটিক উপায়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস নির্মাণ করা সম্ভব বলে আমার মনে করি।
একটা জরুরী বিষয়ে আলোকপাত না করলে কোন কোন পাঠকের মনে একটা ভুল ধারণা জন্মাতে পারে যে, আমি মুক্তিযোদ্ধাদের দেশপ্রেমকে খাটো করতে চাচ্ছি, বা দেশের জন্য তাদের অবদানকে ছোট করে দেখছি। আমি আসলে মুক্তিযুদ্ধের বস্তুগত ভিত্তি জানতে চাইছি, মুক্তিযোদ্ধাদের মুখ থেকেই। তার কারণ, দেশপ্রেমের নামে তাদেরকে গৌরবের মোড়কে বাঁধাই করে যুদ্ধে বিজয়ের বাস্তব ফলাফল (তথা স্বাধীনতার সুফল) থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। দেশপ্রেম এসেন্সিয়্যালী ত্যাগকে নির্দেশ করে। দেশপ্রেমের কারণে তারা যুদ্ধে গেছেন বলার মানে ত্যাগের মহান ব্রতের কারণে তারা জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেছেন। কাজেই, তারা কিছু প্রত্যাশা করেননা। অতএব, তাদেরকে কিছু সম্মানসূচক পুরষ্কার, মেডেল দিয়ে বিদেয় করে দিলেই চলবে। মুক্তিযুদ্ধকে দেশপ্রেমের মহিমায় মহিমান্বিত করে এভাবেই আমাদের এলিটরা তাদেরকে+সারাদেশকে বঞ্চিত করে চলেছে। আমরা যদি আরেকজন মেজর কামরুলকে পাই, বাবার প্রজন্মের আরেকজন যোদ্ধাকে পাই, তাদের কাছে শুনতে পাবো আত্মপরিচয় কিংবা আর্থনৈতিক মুক্তির প্রয়োজনের কথা, অথবা একেবারেই নতুন কিছু। তখন আমাদের জন্য এটা বুঝতে সুবিধা হবে স্বাধীন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কি কি, কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের অধিক মনোযোগ থাকা উচিত, কে বন্ধু আর কে শত্রু, ইত্যাদি।
দেশপ্রেমের “ঠুলি”র ভেতর থেকে মুক্তিযুদ্ধকে উদ্ধার করতেই হবে। কারণ, দেশপ্রেম পেটে ভাত দেয় না, তলাহীনহঝুড়ি বা সর্বাপেক্ষা দূর্নীতির অপবাদ থেকে মুক্তি দেয়না, দেশের সর্বত্র ক্রমাগত দুর্বৃত্তায়ন ঠেকাতে পারেনা। দেশপ্রেম এখন অপব্যবহার হতে হতে the last refuge of a scoundrel-এ পরিণত হয়েছে। এর হাত থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে উদ্ধার করতে হবে; আর তা’ পারে আবেগসর্বস্ব আমাদের এই তরুণ প্রজন্মই।
মাসরুফকে, এবং তার মতো আবেগের উত্তাপে আন্দোলিত বাদবাকী সবাইকে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নির্মাণের এই মহাযজ্ঞে আন্তরিক শুভকামনা।
আমার মনে হয়, যারাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংগ্রহে কাজ করছেন, তাদের এই ব্যাপারটায় খেয়াল রাখা উচিত। দেশপ্রেমের আবেগের নীচে যেন প্রকৃত ইতিহাস চাপা না পড়ে যায়। এ প্রসঙ্গে আমার একটা কথা বলি। প্রায়ই বলতে শোনা যায় 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা'র কথা। তবে আমার মনে হয়েছে, এই পুরো ব্যাপারটাই পরে তৈরী হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় হয়নি। আর হয়েছেও সমাজের শিক্ষার দিক থেকে উচ্চস্তরের বুদ্ধিজীবিদের হাতে। সাধারণ মানুষ বা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নয়। এজন্যই কামরুল ভাইয়ের 'জনযুদ্ধ' শব্দটা বেশ ভাল লেগেছিল। কারণ একথা তো আজকাল কেউ বলতেই চায় না। সবাই মুক্তিযুদ্ধকেও যেন চর দখলের মত দখল করার চেষ্টা করছে। আমাদের এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসা দরকার।
অনেক ধন্যবাদ মাহমুদ ভাইকে বিষয়টাকে ভিন্ন আঙ্গিক থেকে দেখার জন্য।
আরে আমি দেখি ফার্স্ট হয়ে গেলাম।
যাই হোক, আমার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিষয়ে আমার মন্তব্যের উপরে আরও কিছু বলি। প্রথম এবিষয়ে ধারণা পাই জহির রায়হানের "সময়ের প্রয়োজনে" গল্প থেকে। গল্পের কমান্ডারের করা প্রশ্ন, "কেন যুদ্ধ করছ?" (পুরা মনে নাই, তবে এই রকমই) এর উত্তরে একেকজন একেক উত্তর দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত যে উত্তর দাড়িয়েছে তা হল- "সময়ের প্রয়োজনে" যেটা গল্পের নামই। এথেকে নির্দিষ্ট কোন চেতনা, রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক, সম্মিলিতভাবে খুঁজে পাওয়া যায় না।
এরপর আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের "চিলেকোঠার সেপাই"। এখানেও মুক্তিযুদ্ধের আগের আন্দোলনের পটভূমিতে বিভিন্নজনের মাঝে চেতনার বিভিন্নতা দেখতে পাই। প্রধানত সেটা দুই ধরণের, জাতীয়তাবাদী এবং সমাজতান্ত্রিক। আর এই চেতনাগুলোও সমাজের নীচের অশিক্ষিত স্তরে যেয়ে ভিন্ন রূপ ধারণ করে।
আর দেখলাম জুলফিকারের বাবার গল্পেও। সেখানে দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবাদ প্রচ্ছন্ন, তবে স্বজাত্যবোধ প্রবল। যদিও স্পষ্টভাবে সবার মনোভাব বোঝা যায় না। ওর চাচাদের গল্প শোনার অপেক্ষায় আছি। তবে সরাসরি এই প্রশ্ন মনে হয় না করাই ভাল। কথায় কথায় যতটুকু উঠে আসে, সেটা থেকেই বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
আর শেষে বলব, যেসব বিষয়কে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলা হয়, সেসব বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধার ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থেকে।
'সময়ের প্রয়োজনে' গল্পটা অনেক ছোট, কিন্তু এর প্রভাব আমার ভাবনায় এখনো প্রবলভাবে টের পাই। এটি পড়ার পর আমার বাংলা লেখার ষ্টাইলও বদলে গিয়েছিলো।
মুক্তিযুদ্ধের সময়কার প্রকৃত ভাব এই গল্পে দারুনভাবে ফুটে উঠেছে। হতাশার কথা হলো, মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক সাহিত্য এই ধারাকে লালন করেনি।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আবারও একটা কথা বলি। ভাইয়া আপনি প্রথমে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার তুলনায় আরও অনেক প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ করা যেত বলেছেন, যেটা আলাপচারিতার মাঝেই উঠে আসবে। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, কামরুল ভাই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এড়িয়ে গেছেন বলেই ঐসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো ঠিক উঠে আসেনি। আবার আপনার লেখার শেষের দিকে এসে এমন সব ব্যক্তিগত গল্পগুলোকেই কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নির্মাণের উপায় বলেছেন। একই কারণে জুলফিকারের পোস্টকে তুলনামূলকভাবে সফলও বলেছেন। সেজন্য আমার মনে হয়, আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প শুনতে চাই। খন্ড খন্ড ঘটনা নয়। উনার যুদ্ধের পুরো গল্পটা। আর এমন অনেক গল্প থেকেই বেরিয়ে আসবে ইতিহাস।
একমত। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আমরা যুদ্ধের গল্প শুনতে চাই। তবে কারো ব্যাক্তিগত বীরত্বগাঁথা নয় বরং তাঁর চোখে তখনকার রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা।
ধন্যবাদ মাহমুদ ভাইকে মাসরুফের লেখাটাকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। একটা বিষয়ে আমি আপনার সাথে একমত হয়ে গেলাম সেটা হলো মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের মোটিভ আর তার থেকে উঠে আসা সমাজচিত্র। আমি কাছে যে কয়জন মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা বলেছি তাঁরা সবাই আসলে যুদ্ধে যাবার জন্য বাধ্য ছিলেন। তাদের মাঝে জাতীয়তাবোধ প্রবল ছিলো এমন দাবি তাঁরা করেননি কখনো। তবে মুক্তিযুদ্ধের কথাতে ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন তাঁরা।
তাঁদের কথা থেকে মোটামুটি একটা চিত্র পাওয়া যায়। কিন্তু সমগ্রের তুলনায় সেই স্যাম্পল স্পেস এত ছোট সেগুলো থেকে বড় কোনো সলিউশনে আসা মুশকিল। তবে আমি মনে করি প্রকৃত কিংবা অপ্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নয় বরং ১৯৭১ এর সময় জীবিত সকল নারী ও পুরুষের কাছ থেকেই ( নিরক্ষর থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষিত, আর্মি মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু কৃষক মুক্তিযোদ্ধা , শান্তি কমিটির লোক, রাজাকার আল বদরে যারা যোগ দিয়েছিলেন ( আমি অবশ্যই তাদের নেতৃত্বের বরাহদের কথা বলছি না , বলছি আমজনতার কথা), নারী যারা পরোক্ষ ভাবে যুদ্ধ করেছেন অথবা করেননি)। আমার মনে হয় লিপিবদ্ধ করণে স্যাম্পল স্পেস যত বড় হবে ততই আমরা সত্যের কাছে যেতে পারবো।
আরেকটা কথা ভাইয়া, মাসরুফের পোস্টের কোন জায়গাটা আপনার কাছে সমস্যাযুক্ত মনে হয়েছে আমার কাছে পরিষ্কার হয়নি।আপনি কী সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আক্ষেপের কথা বলছেন , যে মাসরুফের আরো অনেক বেশি তথ্য সংগ্রহ করার সুযোগ ছিলো ?
আর কিছু না হোক ঐ পোস্টের সবচেয়ে সাফল্য বলতে হবে তা আমাদের মতো "অ আ ক খ" লোকদেরকে ইনসপায়ার করেছে। আমরাও হয়তো চেনা পরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প গুলো লিখার চেষ্টা করবো সেখান থেকেই স্যাম্পল স্পেস বাড়বে।
- সমস্যা ঠিকই ত ধরেছো, তাইলে পরিষ্কার হলো না কেনো? এখানে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানার প্রবল আকুতি আছে, কিন্তু সেসম্পর্কে নতুন কোন তথ্য নেই।
ভালো করে পড়লে দেখবে আমি বলেছি মাসরুফের পোষ্টের যেটা শক্তি (আবেগময়তা), সেটাই আবার এর দূর্বলতা।
গবেষনার বিষয়বস্তু নির্ধারণে আবেগ থাকা দরকার, কিন্তু গবেষনা-প্রকৃয়ার মধ্যে আবেগকে নিয়ন্ত্রন করতেই হয়। তা নাহলে প্রায়শঃই গবেষণার লক্ষ্য অর্জিত হয়না। মাসরুফের পোষ্টের পূণর্পাঠে আমি সেটাই বলতে চেয়েছি। আবার, দেশের জন্য, দশের জন্য করণীয় কর্তব্য নির্ধারণের বেলায় এই আবেগকে আমি মূল্যবান মনে করি। কারণ, এটা ছাড়া আমরা মানবিক মূল্যবোধগুলো হারিয়ে ফেলতে পারি। (সম্পাদিত)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
:thumbup: আমিন
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
@গুলশান,
ধন্যবাদ তোমার সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়ার জন্য।
- আমি একমত। অবে আমি চাই যে, তারা তাদের গল্পগুলো তাদের মতো করেই বলুক, আমাদের ইচ্ছা/আকাংখা অনুযায়ী না। এতেই কেবল বাস্তবে কি ঘটেছিল মুক্তিযুদ্ধে তা জানা যাবে।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
সম্ভবত আমাকে উদ্দেশ্য করে আপনার প্রথম কমেন্ট। আপনি একমত হওয়ায় অনেক সম্মানিত বোধ করছি।
প্রথমেই মাহমুদ ভাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার লেখাটি নিয়ে আলাদা করে পোস্ট দিয়ে এর সমস্যাযুক্ত দিকগুলো তুলে ধরবার জন্যে।আপনি লেখাটির যে সীমাবদ্ধতাগুলো তুলে ধরেছেন তা সর্বৈব সত্য,দ্বিমত করার প্রশ্নই ওঠেনা।এই সীমাবদ্ধতাগুলোর পেছনে পূর্বের মতই আমার নিজের দায় সর্বৈবভাবে নতমস্তকে স্বীকার করে নিচ্ছি,সেই সাথে আবারো কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ভিন্ন আঙ্গিকে লেখাটিকে দেখতে পারার সুযোগ করে দেবার জন্যে।
আসলে শুধু আবেগ দিয়ে লেখা হলে সেটি শুধুমাত্র "ব্লগ"-ই হয়ে ওঠে,এর বেশি কিছু হয়ে ওঠার সুযোগও সেখানে থাকেনা।শুধু আবেগকে সম্বল করে এরকম বিশাল আকারের একটা কাজ করতে যাবার সময় পদে পদে নিজের সীমাবদ্ধতা অনুভব করেছি,এমনকী স্বীকারও করে নিচ্ছি কোন কোন ক্ষেত্রে মেজর কামরুল হাসান ভুইয়া স্যার কিছুটা বিরক্তও হয়েছিলেন।আমি প্রশ্ন করি,তিনি উত্তর দেন,সেই উত্তরের আবার অনেক কিছু বুঝিনা,তিনি তখন সেটি বোঝান,সেখানেরও অনেক কিছু বুঝিনা,তিনি তখন সেটি বুঝিয়ে দেন-এই চক্রে ঘুরপাক খেতে খেতে আসলে যা বের হয়েছে তা অতি সামান্যই।তবে আমার ইচ্ছে ছিলো দুটো মোটা দাগের কনফিউশন(বেসামরিক খেতাবপ্রাপ্তির অভাব এবং ভারতের কৃতিত্বকে অতিমানবিকতা প্রদান)দূর করতে একজন মুক্তিযোদ্ধা গবেষকের মুখ থেকে সরাসরি কিছু তথ্য তুলে আনা।সেটি কতটুকু করতে পেরেছি সেটা আমি নিজেই খুব বেশি নিশ্চিত নই।
"পাইক্যাগোতো ইন্ডিয়া আইসাই হারায়া দিয়া গেছে" বা " যুদ্ধ তো করছে খালি আর্মি,সব বীরশ্রেষ্ঠ পদক তারা নিবোনা কিল্লাই" টাইপের আবালসুলভ মন্তব্যের জবাবে একেবারে প্রাথমিক জবাব হিসেবে ওই ব্লগের এক-দুটি লাইন যদি একজনও কখনও ব্যবহার করতে পারে-তাতেই আমার পরিশ্রম সার্থক হবে বলে আমি মনে করি।
গুনাগুণ বিচারে লেখাটি মনে হয় ছাইভষ্মের বেশি কিছু হতে পারেনি,আমার মত সীমিত জ্ঞান নিয়ে সেটা সম্ভবও নয়।কিন্তু এই ছাইভষ্ম থেকে জুলফিখার এবং পরবর্তী লেখকেরা আরও ভালো ভালো পোস্ট দেবার মাধ্যমে যদি মুক্তিযুদ্ধের বীরগাঁথার ফিনিক্স পাখির জন্ম নেয়,আমার লেখাটিতে যেসব সীমাবদ্ধতা চোখে পড়ল সেগুলো যদি ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়- তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করব।
যার যা কিছু ছিলো তা নিয়ে আমাদের দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো।মুক্তিযুদ্ধের ভার্সন ২ তে আপাততঃ আমার সম্বল আবেগ-এটা নিয়েই লড়ব বলে ঠিক করেছি।পরবর্তীতে আরও পড়াশোনার মাধ্যমে যুক্তি/বুদ্ধি/বিবেচনাবোধ আরও শানিত হলে সেগুলোও অস্ত্রভাণ্ডারে যুক্ত করার আশা রাখি।
ইশ, প্রচন্ড আফসোস হচ্ছে- ইন্টারভিউটা আরও মাসখানেক আগে নিলে হয়তো আপনাকে নিয়ে যেতে পারতাম! তাহলে যেসব সীমাবদ্ধতা রয়েছে সেগুলো কিছুটা কমত-আর আপনিও স্যারের কাছ থেকে অনেক ম্যাচিউর্ডভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী যোগাড় করলে আমরা সবাই সেগুলো জানতে পারতাম।আশা করি পরেরবার,বস!
ওই পোস্টে আপনাকে অনুরোধ করেছিলাম আমার লেখাটির সীমাবদ্ধতাগুলো দেখিয়ে দিয়ে কিছু লিখতে।আপনার এই লেখাটি আমাকে কি পরিমাণ উপকৃত করেছে বলে বোঝানো যাবেনা।সবই ক্যাডেট কলেজের গুণ-বড় ভাইরা ফ্রি ফ্রি সবকিছু ঠিকঠাক করতে সাহায্য করে 😀
মাসরুফ,
খানিকটা টেনশনে ছিলাম এই পোষ্টটা তুমি কিভাবে নাও তা'ই নিয়ে। সকলেই যেখানে শুধুই প্রসংশা করছে, সেখানে আমি সীমাবদ্ধতা নিয়ে টানাটানি করলাম! - তারপরেও তোমাকে কাছে থেকে যতটুকু চিনি তা'তেই সাহস পেয়ে লিখে ফেললাম। আমি তোমাকে যেভাবে বুঝেছিলাম, দেখলাম ভুল করিনি চিনতে। যাই হোক, এখন অনটপিকে আসি-
- কোয়ালিটেটিভ রিসার্চে নবীশ যেকারো জন্য এই সমস্যা সবথেকে কমন; এই লাইনে সকলেই এই সমস্যার মধ্য দিয়ে যায়। এরকম হওয়ার প্রধান কারণ হলো, গবেষক হিসেবে আমরা জানতে চাই। কিন্তু আমরা আগে থেকেই একটা দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে যাই যা' প্রায় সর্বক্ষেত্রে যাদেরকে জানতে চাই তাদের থেকে আলাদা, এবং সময় সময় সাংঘর্ষিক। একারণে যা ঘটে- আমরা আসল বিষয়টা জানতেই পারিনা। এর থেকে উত্তরণের সবথেকে ভালো উপায় হচ্ছে 'Grounded Theory Approach' যা'র মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে first-hand তথ্য পাওয়া যাবে। আর এইভাবে সংগৃহীত 'মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যক্তিগত গল্পসমগ্র' থেকে 'Analytic Induction' এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত সমাজচিত্র নির্মাণ করা সম্ভব।
তোমার পোষ্ট ছাই-ভস্ম হয়েছে তাই বা বলছো কেন? এর মধ্যকার আবেগের মূল্য দেখতে পাওনা? জুলফিকারের পোষ্ট, আরো কয়েকজনের এই রকম পোষ্ট লিখার অনুপ্রেরণা এইসবই তোমার পোষ্টের প্রাপ্তি। এগুলোর মূল্য মোটেই কম নয়। (সম্পাদিত)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আমার কোন এক পোস্টে মনে হয় গ্রাউন্ডেড থিউরী নিয়া বলছিলেন। এর মানে হলো খুব সম্ভবত প্রচলিত স্বীকৃত ধারণায় প্রভাবিত না হয়ে বিপরীত অথবা সাংঘর্ষিক অথচ সত্য ঘটনাগুলোর ভিত্তিতে বিকল্প উপায়ে দেখার চেষ্টা করা।
আপনার মন্তব্যের দ্বিতীয় প্যারায় যে কথাটা বললেন সেটা আসলেই আমার জন্য সত্য। আমার আশেপাশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচলিত ধারণার বাইড়ে কথা শুনে ভালো লাগেনি এর পিছনের কারণ ছিলো অনানুষ্ঠানিক আড্ডা বলে তাঁরা আমার জানতে চাওয়ার পিছনে কোন মোটিফ খুঁজেননি।সেই গল্পগুলো আমার নিজের আলসেমির জন্যই সংগৃহীত হয়নি। মাসরুফের পোস্ট পড়ার পর ঠিক করেছি দেশে ফিরে প্রথম কাজ হবে এই তথ্য অথবা ধারণাগুলো লিপিবদ্ধ করে কোথাও শেয়ার করে যাওয়া। হয়তো সেখান হতে আরো আরো অনেকে আরো তথ্য যোগাড়ে নেমে যাবে আর যা নিয়ে যাবে আমাদের প্রকৃত সত্যের দিকে। এ হিসেবে মাসরুফের কাজটি পথিকৃত স্বরূপ। মাসরুফের পোস্টে বলেছিলাম আবার বলতেসি @ মাসরুফ, ঐ পোস্ট পড়ে আমি যে কী ইনসপায়ার হইছি সেটা তুই ভাবতে পারবি না। স্যালুট ইউ ম্যান।
:thumbup: মাহমুদ
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
এই বেলা আরেকটা কথা বলে ফেলিঃ
যে অপপ্রচারগুলো সম্পর্কে মেজর কামরুল হাসান ভুইয়ার কাছ থেকে তথ্য নিতে গিয়েছিলাম সেই দুটি বিষয় অন্ততঃ আমার কাছে অতি অতি অতি গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে হয়েছে।মুক্তিযুদ্ধকে আমাদেরই মুরুব্বিকর্তৃক শুধুমাত্র ভারতের বিজয় বলে অভিহিত করা কিংবা বেসামরিক যাবতীয় গণযোদ্ধাদের বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবের অনুপযুক্ত ভাবা- এই দুটি বিষয় আমার কাছে ভয়াবহ রকমের গুরুত্ব বহন করে।প্রথম অপপ্রচারটি মেনে নিলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমি যে আত্মশ্লাঘা অনুভব করি তা বেমালুম উবে যায়,আর দ্বিতীয়টি মেনে নিলে গণমানুষের বীরত্ব(এবং দেশের প্রয়োজনে আমার মত সাধারণ মানুষেরাও যে সর্বোচ্চ বীরত্ব প্রদর্শন করতে পারে) থেকে প্রাপ্ত অনুপ্রেরণা উধাও হয়ে যায়।আমার সীমিত সুযোগ,জ্ঞান,সময় এবং সামর্থের ভেতরে থেকে উপরোক্ত দুটি বিষয়ের উত্তর আমি তুলে আনতে চেয়েছি।
কাজেই,মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্যসমৃদ্ধ ব্লগের বদলে-মাসরুফেরই কথায়-”লেখাটা শেষ পর্যন্ত “ব্লগ” বা ব্যক্তিগত কথামালার বেশি কিছু হয়ে উঠতে পারেনি” লাইনটির শেষোক্ত অংশটুকু নতমস্তকে মেনে নিলেও প্রথম অংশটুকুর নিয়ে কিছুটা বিশ্লেষণ তুলে ধরতে আপনাকে বিনীত অনুরোধ করছি। হতে পারে আমার উত্তরগুলো তুলে আনার সময় আমার লেখার ধরণে প্রচুর সীমাবদ্ধতা রয়েছে(থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়,কারণ আগেই বলেছি-টেকনিকাল নলেজের অভাব) ; এই সীমাবদ্ধতাগুলো আরেকটু যদি পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দেন( যেমন কিভাবে প্রশ্নগুলো করলে আরও ভালো উত্তর পাওয়া যেত/ কি কি প্রশ্ন করা যেত ) তাহলে খুব উপকৃত হতাম।
আসলে ব্লগটি তথ্যসমৃদ্ধ করতে না পারার ব্যর্থতা আমার,তবে যে তথ্যগুলো জানতে চেয়েছিলাম সেগুলো আমার কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ,এই কারণেই আপনাকে আরেকবার বিরক্ত করা।ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি। (সম্পাদিত)
😀 বস কি মাইন্ড রীডিং জানেন নাকি??? উত্তর মোটামুটি পেয়ে গেছি আপনের উপরের কমেন্টে।আসলে আমি জানতে চাচ্ছি, যে বিষয়দুটো তুলে ধরা হয়েছে সেগুলোর গুরুত্ব মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রে কেমন এইটা।মানে,এই বিষয়গুলো কি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ নাকি আমিই খালি লাফালাফি করতেছি। এই প্রশ্নটা আপনাকে করার কারণ গবেষক হিসেবে আপনার ম্যাচিউরিটির উপরে আমার অগাধ ভরসা(বিশেষ করে ওই "ক্ষুদ্রঋণ" কেইসের পরে 😀 )
মনে কিছু নিয়েন না আবার।
মাসরুফ,
খানিকটা টেনশনে ছিলাম এই পোষ্টটা তুমি কিভাবে নাও তা’ই নিয়ে।
ভাইজান,এইগুলা বইলা আমাকে লজ্জা দিয়েন না।আপনার গবেষণাকর্মের উপরে আমার কি পরিমাণ আস্থা সেইটা ওপেন ফোরামে বললে আপনের লজ্জিত হওয়ার তীব্র সম্ভাবনা আছে এই কারণে ওইদিকে আর গেলাম না।আপনার মাপের একজনের কাছ থেকে ফ্রি-তে উপদেশ পাচ্ছি এইটা ক্যাডেট কলেজে পড়ার ফ্রিঞ্জ বেনিফিট হিসেবে আগেই উল্লেখ করছিলাম এখন আবার করলাম। (সম্পাদিত)
-এইখানে খেয়াল করো। আমি কখনোই বলিনি যে, তোমার কাছে কি কি গুরুত্বপূর্ণ, তা কতটা গুরুত্বপূর্ন। সে সম্পর্কে আমার কোন বক্তব্য নেই। আমি বলতে চেয়েছি, মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে কি কি গুরুত্বপূর্ণ সেইসব। কোন গবেষকই তার কাছে গুরুত্বহীন এমন বিষয়ে প্রশ্ন করেনা। কিন্তু আমরা যদি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোই শুধু খুঁজি, তাহলে তা' মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস হবেনা। সেখানে মুক্তিযোদ্ধার দৃষ্টিভঙ্গীকেই প্রাধান্য দিতে হবে।
এখন ক্লাসে যাচ্ছি। তোমাদের সকালে আবার বসবো। তখন আরো কথা হবে, যদি জানতে চাও আর কি...।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
@মাহমুদ ভাই-
ধুরো, ধন্যবাদ দিয়ে আপনেকে খাটো করতে করতে মাইক্রোস্কপিক সাইজে নিয়ে ফেলতে হবে মনে হচ্ছে আজকে!
সত্যিই তো, মুক্তিযোদ্ধারা যেহেতু জীবিত- তাঁদের যুদ্ধকালীন ভাবনাটাইতো সবচাইতে বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত আর আমি(ক্ষেত্রবিশেষে আমরা) মেতে আছি আমাদের কাছে কি গুরুত্বপূর্ণ সেইটা নিয়ে!!! মুক্তিযুদ্ধের যাঁরা নায়ক,তাঁদের ভাবনা যে দর্শক এবং সুফলভোগীদের ভাবনার চাইতে ইতিহাসে অধিক গুরুত্বপূর্ণ এই জিনিসটা শুরুতে ধরতে পারছেন বলেই আপনি গবেষক আর আমি......(নাহ থাক,কিচ্ছু বললাম না x-( )
এই সহজ অথচ অমূল্য চিন্তাটা আমার পরবর্তী সবগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাতকার নেবার সময় কাজে লাগাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করব।আবারো কৃতজ্ঞতা,মাহমুদ ভাই!
:thumbup: মাশরুফ
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
অনেক ভালো লাগলো 🙂
ভিন্ন ভাবে বিষয়টি নিয়ে ভাবার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ।
অসাধারণ :boss: :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff: :boss:
চলুন না আমরা সবাই মিলে মুক্তিযোদ্ধাদের গল্পগুলো সংগ্রহ করার একটা প্রজেক্ট হাতে নিই। উনাদের interview নেয়া হবে unstructured-ভাবে। নির্দিষ্ট কোন প্রশ্ন আগে থেকে করা হবে না। প্রাসঙ্গিক কিছু এসে গেলে সেটা জিজ্ঞাসা করা হবে। লক্ষ রাখতে হবে যেন যিনি বলছেন, তিনি যেন উনার গল্পটা উনার মত করেই বলতে পারেন। কোনভাবেই যেন প্রভাবিত না হন। এব্যাপারে মাহমুদ ভাই নির্দেশনা দিতে পারেন। সবার কাছ থেকে এসব গল্প আর মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের কিছু সাধারণ তথ্য যেমন নাম,বয়স, পেশা, ঠিকানা ইত্যাদি নিয়ে তৈরী করা হবে একটা database। অনেকটা যেভাবে যুদ্ধাপরাধের ব্যাপারে ফোরাম বানিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এখন। এজন্য একটা আলাদা ওয়েবসাইট বানানো যেতে পারে। সবাই মিলে সেখানে এসব গল্প জমা করা হবে। এভাবে যখন একটা নির্দিষ্ট সংখ্যা পূরণ হয়ে যাবে, তখন সেগুলোকে বিশ্লেষণ করার কাজ শুরু হতে পারে। কী বলেন সবাই?
:thumbup:
গুলশান,
ভালো লাগল এই দেখে যে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংগ্রহের মহাযজ্ঞের পদ্ধতিগত বিষয়ে আমার পরামর্শ কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারবে বলে মনে করছো।
ইনফ্যাক্ট, আমেরিকায় ফিরে আসার আগে গত আগষ্টে যখন ঢাবি'র সমাজবিজ্ঞানে জয়েন করার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, তখনই ভেবেছিলাম আমার ছাত্রদেরকে দিয়ে এইভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প সংগ্রহ করাবো। তারপর সেইখান থেকে জেনারালাইজ করার চেষ্টা করবো গ্রহনযোগ্য বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে। কিন্তু আমার পোড়া কপাল, তাই সেই ভাইভাবোর্ড ৫ম বারের মতো স্থগিত হয়ে গেল (এটা ঢাবির ইতিহাসে সম্ভবতঃ রেকর্ড)।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
পোড়া কপাল আপনার নয়, আজ বাদে কাল আপনি হার্ভার্ড/প্রিন্সটণ টাইপের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করবেন এইটা আমি মোটামুটি ১০০% নিশ্চিত।দুর্ভাগ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং এর ছাত্রছাত্রীদের।নচিকেতার গান মনে পড়ছে...
কোন এক উলটো রাজার উলটো বুঝলি প্রজার দেশে
চলে সব উলটো বেশে উলটো রথে প্রজার শেষে
জ্বী না জনাব, এখনো হাল ছাড়ি নাই। নিয়োগ হতে হলে সম্ভবতঃ আমাকে নিতেই হবে :grr: (যদি আমি এখানে সবকিছু ম্যানেজ করে ভাইভা বোর্ড পর্যন্ত যেতে পারি আর কি......)
আর যদি একেবারেই কাউকে নিতে না চায় তাইলে ভিন্ন কথা।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ ভাই, ঢাকা ভার্সিটিতে আইলে আমারে ছাত্র হিসাবে নিতে হইবো কিন্তু !! আপনি আমারে কথা দিছিলেন !! ( বস বাংলা সিঃনেমার হুমায়ুন ফরিদীর ডায়লগ দিয়েন না যে "কথা দিয়েছিলাম!! মিথ্যে কথা দিয়েছিলাম।" 🙂 🙂 )
পড়লাম তোমার পোস্টটা।
আমি একজনকে চিনি, যিনি মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছেন কারন পাক সেনা তাদের বাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল, প্রতিশোধ নিতে গিয়েছিলেন যুদ্ধে। দেশপ্রেম বা অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য নয়।
যুদ্ধ একটা ব্যাপক জিনিস। সমস্যা হচ্ছে বিজয়ীরা নিজেদের মত করে সব কিছু সাজিয়ে নিতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় কে দোহন করে (দুঃখিত এর চেয়ে ভালো বাংলা পেলাম না) ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি তো আর কম দেখলাম না গত বিশ বছরে। শুধু এটুকুই বলতে পারি তা থেকে, মুক্তিযোদ্ধা মানেই তিনি দেশপ্রেমিক নন, আর একবারের মুক্তিযোদ্ধা, আজীবনের মুক্তিযোদ্ধা নন। যদি তাই হত, ১৯৭১ এর পরে এত রক্ত ঝরতো না বাংলাদেশে। এত রাজনৈতিক দৈন্যতা থাকতো না আমাদের।
এ ব্যাপারে আমি নিঃসন্দেহ এখন, সব মুক্তিযোদ্ধাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল না বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বরং অনেক গুলো গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যের মধ্যে একটা ছিল স্বাধীনতা, বাকী লক্ষ্যগুলো অনেকখানিই আলাদা আলাদা, এবং কখনও বা তা একদম বিপরীত ধর্মী।
আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি বলে, প্রকৃত ইতিহাসকে জানতে হলে যেতে হবে সেইসব মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের কাছে, যারা গ্রামের কৃষিকাজ ফেলে, কেরানীগিরি চাকুরী ফেলে, মানে একদম সাধাসিধা আটপৌর মাটির কাছাকাছি লোক, কোন রাজনৈতিক উচ্চাশা ছিল না তাদের, তারাই বলতে পারবে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত উপলব্ধির ব্যাপারটা। কোন ফোর্স (কে, এস বা জেড) বা অন্য কোন কোন বাহিনীর কাছে নয়। কোন বুদ্ধিজীবি বা কলমপেশার কাছে নয়, যারা নৈতিক সমর্থন দিয়েই দায় সেরেছেন।
অবশ্য জহির রায়হান তোমার প্রশ্নের উত্তর এককথায় বলে দিয়েছেন একজন কমান্ডারের ভাষ্যে "আমরা যুদ্ধ করেছি সময়ের প্রয়োজনে"। (সম্পাদিত)
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
@ মাহমুদ
আমি তোমার পোস্ট পড়েই কমেন্ট ঘরে এসে কমেন্ট করেছি, মন্তব্য গুলো পড়ে দেখিনি প্রথমে। পরে দেখলাম গুলশান আগেই আমার ভাবনা গুলো বলে ফেলেছে। ওর মন্তব্য গুলো আগে পড়ে এলে শুধু শুধু আমাকে আর এগুলো নতুন করে লিখতে হত না।
এনিওয়ে, ভালো থেক। আর গুলশানকেও ধন্যবাদ। ভাবনা গুলো মিলের যাবার জন্য।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আপনার সাথে ভাবনাগুলো মিলে যাওয়াতে অনেক খুশী লাগছে। সম্মানিত বোধ করছি।
- ফয়েজ ভাই,
ঠিকই ধরেছেন। এমনকি, মাসরুফের পোষ্টে মেজর কামরুল ভাইয়ের কাছ থেকেও আমরা জেনেছি যে, এক কিশোর যুদ্ধে গেছে প্রেমিকার অনুরোধে/চাপে পরে। কিন্তু আমাদের মন যেহেতু যুদ্ধে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেশপ্রেম দেখতে চায়, তাই ব্যক্তিগত প্রেমকেও দেশপ্রেম ধরে নিই। এটা আমার নিজের চোখও এড়িয়ে গেছিল।
-এর একটা রিস্ক আছে, দুইভাবে এটা পাঠ করা সম্ভবঃ এক, ১৯৭১-এ পশ্চিম পাকিস্তানীদের শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তির জন্য যুদ্ধ করা দরকার ছিলো, তাই মানুষ যুদ্ধ করেছে। এখন যেহেতু তারাদেরকে তাড়িয়ে দেওয়া গেছে, তাই যুদ্ধের আর দরকার নেই। দুই, সময়ের প্রয়োজনেই যেহেতু মানুষ যুদ্ধ করে এবং এখন করছে না, তারমানে এখন সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে (অর্থ্যাৎ, যুদ্ধের প্রয়োজন নেই)। সমাজ বদলের চিন্তায় দুটোই মারাত্মক ক্ষতিকর।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
:boss: ফয়েয ভাই।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ওয়াও.. ঢাবি'তে জয়েন করার ব্যাপারে তোর কনফিডেন্সটা জটিল লাগলো.. ওয়েটিং টু সি দ্যাট ডে..
তা - তোর এই ঢাবি'তে জয়েন করার চলমান যুদ্ধের পিছনে মূল মোটিফ টা কি? দেশপ্রেম, প্রেমিকার অনুরোধ, ব্যক্তিগত প্রতিশোধ, সময়ের প্রয়োজন না অন্য কিছু??
..... পোস্টের বক্তব্যের সাথে সহমত পোষন করছি। ভালো লাগলো।
এখানে "আমাদের" শব্দটারো নানান রূপ আছে।
মিডিয়া তাদের কাছে যা গুরুত্বপূর্ন (কাটতি বাড়ানোর জন্য) তা ব্যবহার করছে করছে মুক্তিযুদ্ধের নামে।
রাজনীতিবিদরা তাদের কাছে যা গুরুত্বপূর্ন (ভোট বাড়ানোর জন্য) তা ব্যবহার করছে মুক্তিযুদ্ধের নামে।
বুদ্ধিজীবিরা তাদের কাছে যা গুরুত্বপূর্ন (পেট চালানোর জন্য) তা ব্যবহার করছে মুক্তিযুদ্ধের নামে।
অথচ এই তিন ধরনের মানুষদের ভূমিকাই কিন্তু সবচেয়ে বেশি মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে তুলে আনার জন্য। কারন, তাদের পছন্দ করি আর না করি, এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, সবধরনের মানুষের কাছে যাওয়ার এবং তাদের প্রভাবিত করার সামর্থ্য অন্যদের থেকে তাদেরই বেশি।
র্সষেতে যদি ভূত থাকে তাহলে সে র্সষে কি ভূত তাড়াতে পারবে?