আজ ৮ই মার্চ, বিশ্ব নারী দিবস, আমাদের প্রথাগত চিন্তার জগতে গৃহস্থ-কল্যানী-মমতাময়ী নারী অবয়বের বিপরীতে বাস্তবের সংগ্রামী নারীকে মনে করার দিন।
আমার (এবং সম্ভবতঃ আমাদের আরো অনেকের) ভাবনায় প্রকৃত মানবসত্বা সর্বদা মুক্তিকামী। সে নিজের সত্বার স্বাধীনতা রক্ষায় দৃঢ় সংকল্প। তার এই সংগ্রাম যে’ই তার স্বাধীনতায় বাঁধ সাধে তারই বিরুদ্ধে; সে ঈশ্বর হোক, দেব-দেবী হোক, আর তার মত অন্যকোন মানুষই হোক। মানুষের এই সংগ্রামী রূপ খুঁজতে গেলে সবথেকে প্রাচীন যে উদাহরণ পাই তা’ আসে গ্রীক মিথলোজী থেকে- স্বর্গের দেবতাশ্রেষ্ঠ জিউসের বিরুদ্ধে প্রমিথিউসের বিদ্রোহ যেখানে প্রমিথিউস মানুষের পক্ষাবলম্বন করতে গিয়ে জিউসের কোপানলে পড়েন।
– প্রমিথিউসকে আমার সব সময়ই ভালো লাগে প্রতিষ্ঠিত শক্তির বিরুদ্ধে ক্ষীণশক্তি মানুষের পক্ষে
তার সাহসী অবস্থানের জন্য। কিন্তু তারপরেও আমার অনুভবে কি যেন অপূর্ণ থেকে যায়। প্রতিনিয়ত জীবন সংগ্রামে আমার মা’কে এবং সেই সাথে অন্য আরো অনেক আত্নীয়/অনাত্নীয় নারীকে দেখে দেখে আমার এই অপূর্ণতা বোধ আরো বৃদ্ধি পায় ক্রমশঃ। চোখের সামনে অগণিত সংগ্রামী নারী আমার কল্পনায় আরেকটা মিথের অবয়ব ধারণ করে যেখানে আমি আরেকটা প্রমিথিউস দেখি- এই প্রমিথিউস একজন নারী, কিন্তু এই প্রমিথিউস একই সাথে ঈশ্বরের পাশাপাশি নিপীড়ক পুরুষের বিরুদ্ধেও সংগ্রামে রত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে একটা কবিতার লাইন মনে ধরেছিলো খুব, ‘জ্বলি ন’উধিম কিত্তেই’- এটা চাকমা ভাষায় লিখিত একটা কবিতা। আর কিছু জানতাম না এর। আজ সামহোয়ারইন ব্লগে একটা পোষ্টে লেখকের নামসহ পুরো কবিতা আর তার অনুবাদ দেখে মনটাই ভালো হয়ে গেল। লেখক কবিতা চাকমা। আর পুরো কবিতাটাই যেন বিদ্রোহের-বিপ্লবের অগ্নিগোলক! সংগ্রামের ভাষা ত’ এটাই।
আমার ভালোলাগাটা সিসিবির সাথে ভাগ করে নিতে পুরো কবিতা আর তার অনুবাদ (সামান্য পরিবর্তিত) তুলে দিলাম [সামুর ব্লগার খারেজীর পোষ্ট থেকে তুলেছি, তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। মূল উৎসঃ http://www.somewhereinblog.net/blog/kharejiblog/29112134]।
জ্বলি ন’উধিম কিত্তেই!
যিয়ান পরানে কয় সিনে গরিবে-
বযত্তান বানেবে বিরানভূমি
ঝারান বানেবে মরুভূমি
গাভুর বেলরে সাঝ
সরয মিলেরে ভাচ।
জ্বলি ন’উধিম কিত্তেই!
যিয়ান পরানে কয় সিয়ান গরিবে-
জন্মভূমত মানুচ বন্দী
মিলেরে কিন্যে দাসী বান্দী,
পহ্ররে কানা
সৃষ্টির দানা।
অবহেলা অপমানে ক্রোধ
ভিদিরে তুবোল লোর স্রোত
পাত্থর খুনি খুনি ভাঙে বিঘ্ন
চেতনার সাগরত রণ তীক্ষ্ণ।
-মর পরিপরক গাই মুই-ই
জ্বলি ন’উধিম কিত্তেই!
অনুবাদ
জ্বলে উঠব না কেন!
কবিতা চাকমা
জ্বলে উঠব না কেন!
যা ইচ্ছা তাই করবে-
বসত বিরানভূমি
নিবিড় অরণ্য মরুভূমি,
সকালকে সন্ধ্যা
ফলবতীকে বন্ধ্যা।
জ্বলে উঠব না কেন!
যা ইচ্ছা তাই করবে-
জন্মভূমে পরবাসী
নারীকে ক্রীতদাসী,
দৃষ্টিকে অন্ধ
সৃষ্টিকে বন্ধ।
অবহেলা অপমানে ক্রোধ
ধমনীতে তুমুল রক্তের স্রোত
আঘাতে আঘাতে ভাঙে বিঘ্ন,
চেতনার সমুদ্র তারুণ্যে তীক্ষ্ণ।
-আমার পূর্ণতা একমাত্র আমিই।
জ্বলে উঠব না কেন!
১ম
দোস্ত 'পুরুষ দিবস' করার কি কোন সুযোগ আছে? ভালো লেখা। ধন্যবাদ।
দোস্তো,
ভালো লেগেছে জেনে আনন্দিত হলাম।
আসল কাহিনী আগে কইতে দে, তারপর এই প্রশ্নটা আবার করিস। 😉
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
এই আর কিছুক্ষন পরেই, সানা ভাই একগাদা রমনী পরিবেষ্টিত হয়ে ক্যাক-কুক কাটবে আর গাপুস-গুপুস করে খাবে।
নারী দিবস কি আর সবার জন্যরে ভাই, গুটিকয়েক মানুষের জন্য।
নাহ দুনিয়াতে ইন্সাফ বইলা কিচ্ছু নাই
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ফয়েজ তোমার জন্য পাঠাইলাম! খাইয়া কইও টেস্ট ক্যামুন 😀 😀 😀
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
অপূর্ণতা এবং তার মধ্যে প্রমিথিউসের দর্শন লাভ- খুব উৎসাহ পেলাম আপনার কথায় মাহমুদ ভাই। প্রমিথিউস বোধহয় আসলেই মানব মুক্তির প্রথম দিশারী। মার্ক্সের কোন একটা লেখায় যেন প্রমিথিউস সম্পর্কে কয়েক লাইন পড়েছিলাম, খুব ভাল লেগেছিল, এখন মনে আসছে না। নেট ঘেটে দুটো রেফারেন্স পেলাম আপাতত:
[http://www.marxists.org/bangla/archive/marx-engels/1841/dr-theses/drths_b4read.htm]
[http://allintensivepurposes.blogspot.com/2007/07/karl-marx-prometheus-of-working-class.html]
ওয়ার্কিং ক্লাসের প্রমিথিউস যদি কার্ল মার্ক্স হয় তবে নারীদের প্রমিথিউস কে হবেন? নির্দিষ্ট করে বোধহয় বলা যায় না, কারণ এমন কেউ বোধহয় পুরো বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারে নি। মেরি ওলস্টোনক্র্যাফট বা আমাদের বেগম রোকেয়া আগুনের দিশারী, সন্দেহ নেই।
শুধু নারী বিদ্বেষ নয়, সকল ধরণের জেন্ডার বিদ্বেষ কেটে যাক- মানুষ আরও বিকশিত হোক- এ দিনে এটাই কামনা।
ও হ্যা, কবিতাটা খুব ভাল লেগেছে। কবিতা চাকমা :boss:
মুহাম্মদ,
কি খবর?
আসলে এই পোষ্টটা আরেকটা আইডিয়া থেকে এসেছে, আজ বিশ্ব নারী দিবস বলে ভূমিকাটুকু শেয়ার করলাম। আসল আইডিয়ার একটা ইঙ্গিত দিছি আমিনের কমেন্টের উত্তরে।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
বুঝলাম।
সকল বৈষম্য দূর হয়ে যাক। মানুষের পরিচয় হক শুধুই 'মানুষ'।
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
কামরুল,
তোমার আকাঙ্ক্ষার সাথে একমত। কিন্তু বাস্তব প্রায় সব সময়ই বৈষম্য/বিভাজন তৈরী করে চলেছে। আর একারণেই মূলতঃ 'শুধুই মানুষ' পরিচয় বারবার বিভাজিত হয় নানা বৈশিষ্ট্যের (লিংগ, শ্রেণী, গায়ের রঙ, জাতীয়তা, ইত্যাদি) ভিত্তিতে।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই নহে কিছু মহীয়ান..
আউট অফ কনটেক্স হইলো কিনা বুঝতাসি না, তবে আমার মনে হয় হয় নাই বরং সভ্য সমাজ খুব সুন্দরভাবে নারীদেরকে মুক্তি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়েই তাদেরকে নতুন আরেক স্তরে নামিয়ে নেয়। নারী মুক্তি আসবে নারীদের বা পুরুদষের দিয়ে নয় বরং সমাজ দ্বারা। কিন্তু আমাদের সমাজের মাঝেকার কিছু ব্যাপার এবং দৃষ্টি ভঙ্গি দ্বারা কেবল নারী শোষণের প্রক্রিয়ারই আধুনিকায়ন হচ্ছে। নারী কে নারী নয় মানুষ হিসাবেই ভাবতে চাই স্বপ্ন দেখি সেই সমাজের যেখানে নারী পুরুষ সমাজ মূল্যায়নের মাপকাঠি তাদের মেধা কর্ম মননে হবে।
পোস্টের জন্য ধন্যবাদ মাহমুদ ভাই। কবিতাটা ভালো লেগেছে।
- আমারও এরকমই ধারণা।
ইচ্ছে আছে ব্যক্তি-স্বাধীনতা (individual freedom) এবং সামাজিক ন্যায়বিচার (social justice) একসাথে চলতে পারে কিনা তা'র খোঁজ খবর নেওয়া, আর সেই সাথে বর্তমান নব্য-উদারনৈতিক (Neoliberal) সমাজে এদের অবস্থা কিরূপ।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
:salute:
বাংলার সংগ্রামী নারীদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা থাকল।
নারীদের জন্য সারা বছর ভালোবাসা 🙂
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
শুধু একদিনের জন্য না, নারীদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও সম্মান থাকুক সব সময়ের জন্য।
ভগিনি সকলকে নারী দিবসের শতবর্ষের শুভেচ্ছা।
একবছর আগে মুহিব আর মুহাম্মদ মনে হয় নারী দিবসকে লইয়া পোস্ট দিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছিল। হায়, এই বছরটাও শেষ পর্যন্ত চলিয়া গেল.............. তাহারা সময় পাইলো না! B-)
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
ইসলাম এ নারীজাতি কে খুব সম্মান দিয়া হইসে, বিশেষ করে পবিত্র কোরান সরীফ এ সম্পত্তি এর অধিকার এর ক্ষেত্রে ৮ শ্রেনীর নারী ও ৪ শ্রেনীর পুরুষের কথা বলা হইসে, যৌতক কে নিষিদ্ধ করা হইসে, বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ হলেও নারী কে তার প্রাপ্প সম্মান আমরা দিচ্ছি না, পরিবারই প্রথম নারীর প্রতি অবগ্গা করা সেখায়, এরপরই আসে সমাজ, তাইত আমরা বাস এ উঠলে লাডিস সিট এ বসে থাকি, র নারী থাকে dariey .মাহমুদ ভাই কে ধন্যবাদ.
নারীদের জন্য সারা বছর ভালোবাসা 😀 :hug:
কবিতা চাকমা :thumbup: :salute:
"Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
- A Concerto Is a Conversation
সুন্দর পোস্ট মাহমুদ। আমাদের অনেক বেশি প্রমিথিউস দরকার।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi