[অনেকদিন পর কিছু লেখার সাহস করলাম। সাহস করলাম বলাটাই বেশি যুক্তিসংগত কেননা একরকম জোর করেই সিসিবিতে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়ার জন্য এই লেখার অবতারণা। যাদের অযথা বগর বগর এ ধৈর্যচ্যুতির সম্ভাবনা আছে তাদের কাছে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিয়ে লেখাটা শুরু করছি।]
ইদানিং আমার জীবনটাকে আমি নিয়ন্ত্রণ করি না। আমার গতিবিধিগুলো খুব বেশিরকম গণ্ডিবদ্ধ হয়ে পড়ছে।অনেক আগের একটি লেখায় বৃহন্নলাদের জীবন নিয়ে লিখতে গিয়ে একটি লাইন লিখেছিলাম- ” বিষণ্ণ নিস্তরঙ্গ জীবন আমার বয়ে চলে নর্দমার জলের মত”। সেই লাইনের সেই হতভাগার মত আমার জীবনটাও কেমন যেন পানসে হয়ে যাচ্ছে। ক্রমশই রসগুলো নিঙড়ে বেরিয়ে গিয়ে শুধুই ক্লেদ জর্জরিত এক করুণ জীবনাবশেষ পড়ে আছে আমার জন্য। প্রতিদিন আমি চলি বাসা – বাস- বাস – অফিস- লাঞ্চ- অফিস বাস- রিকশা বাসা। যাপিত জীবনের টানা একঘেয়ে ক্লান্তিকর বিষণ্ণ পথচলায় আমি ক্রমেই যেন জ্বালানিচালিত যন্ত্র হয়ে যাচ্ছি। কেমন একটা ভয়াবহ শূন্যতার বোধে আমি ক্লান্ত।
আজকের রাতটাও তেমন বিষণ্ণ একঘেয়ে হয়ে যাবার আগেই আমার মাঝেকার কোন এক সত্তা আমাকে জানান দিল বাইরে কিছু একটা ঘটছে। জানালা খুলে বসে থাকি। একটা ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাপটা এসে লাগে গায়ে। আর তার সাথে হঠাৎ করেই আমার কাছে মনে হয় যেন বাতাসের এই গন্ধটা আমার কাছে খুব পুরাতন। কোন এক অসীম মহাকালের আদি হতে আমার জন্মের অনেক আগেই আমি একে চিনি। বাতাস তার সাথে একটু একটু করে নেমে আসল – নেমে আসল বৃষ্টি। আমার মাঝেকার বিরক্তিগুলো দূরে চলে গেল কিছু সময়ের জন্য। আমার স্মৃতির ঝাপি খুলে গেল হঠাৎ করেই।
খুব ছোট শৈশবের ক্লান্তিহীন দুরন্ত সময় ফিয়ে এল মনে। মনে এল ছোট বাড়ির বারান্দায় বসে বারি দর্শন আর তার সাথে কানে ভেসে এল যেন তখনকার সময়ে শোনা কিছু বৃষ্টির ছড়া। আমি কল্পনার চোখে দেখতে পাই সেই আঁধারিত রহস্যময় আলোতে কৃষ্ণ জলদের শুভ্রবারি হয়ে ঝরে পড়ার অপার বিস্ময়কর দৃশ্য। কালো মেষহ থেকে কিভাবে সাদা বৃষ্টি হয় তা আমার কাছে অদ্ভুত ঠেকেছে কিংবা প্রকৃতিকে নিজের কাছে আমি নিজেই রহস্যময় করে তুলেছি। ভালো লাগা বৃষ্টি ভালোবাসার বৃষ্টিও আজ আমার কাছে ধরা দেয় না সবসময় আজকের মত করে।
ভারি বর্ষণে নীড়ে ফেরা পাখির মত ন্যুব্জ হয়ে আমি বসে থাকি না কখনও। বরং রিকশার হুড খুলে দিয়ে বৃষ্টিকে সুযোগ করে দেই আমাকে আলিঙ্গন করতে পরম মমতায়। মনে পড়ে ক্যাডেট কলেজের কথা। তীব্র বর্ষণের ক্লান্তিকে কাটাতে অকারণ ফুটবলের আদলে ওয়াটার পোলো সম কিছু খেলার চেষ্টা করা, কিংবা কোন এক বৃষ্টিস্নাত দুপুরে অথরিটির রক্তচক্ষু বুড়ো আঙগুল দেখিয়ে আম চুরির চেষ্টা কিংবা বর্ষণ মুখর রোমান্টিক দিনে ভাবালু কিছু কিশোরের মুক্তির আনন্দে জল অবগাহন। কিংবা আঁতলামি ভর করা কোন দিনে কবিতা পাঠ করে বোদ্ধা হয়ে যাওয়ার ভান করা ভানাড়ু সময়। সেই সৌন্দর্য আর আজ আমাকে ছোঁয়া দেয় না। ঠাণ্ডার সমস্যা আর বাতজ্বরের গুতায় ফুটো ভালব নিয়ে আমি বৃষ্টি অবগাহনে নামলে অভিভাবক মহলে কেমন এক বিপ্লব এসে উপস্থিত হয়। তারপরেও মনে চায় আমার বাইয়ে সামনের বাড়ির স্বাধীন বালকটির মত এত রাতেও যদি বৃষ্টির সাথে আলিঙ্গন করতে পারতাম।
আমি বিষণ্ণ এক ধরণের ভালো লাগা অনুভব করি। নিস্তরঙ্গ গতিহীন জীবনে ক্ষণিকে ভালোলাগার অনুভূতিগুলো খুব করে ছুঁয়ে যায়। আমার মনের গোপন ঘরে একে একে বাজতে থাকে সেই সব সুন্দর কিংবা স্মৃতিময় সময়ের প্লেব্যাক। যাপিত জীবনের ক্লেদ ভরা ক্লান্তিকে পিছনে ফেলে সামনে অগ্রসরমান আমি থমকে দাঁড়িয়ে শুধুই নস্টালজিক হয়ে ভাবি — কিছু কিছু পিছুটান গুন টানে উজানে উজানে।
বৃষ্টিতে ভিজতে পারিস নাই তাই না। ভিজতে পারলে খুব ভাল লাগত। এখন তো কেউ বাধা দেওয়ার নাই এই জন্য মনে হয় ভিজতে পারি না। ওইদিন আমি রেইনকোট গায়ে দিয়ে ভিজলাম মনে হচ্ছিল সব খুলে ফেলি কিন্তু হইল না।
আজ শুক্রবার ছুটির দিনেই তোর এইরকম লেখা? ঘর থেকে বের হ। দেখা করে আয় ভাল লাগবে।
দোস্ত , আজকে অনেকদিন পর ছুটির মত করে ছুটি কাটাইতাসি। নয়তো শুক্র শনি নাই দিনরাত নাই যখন তখন যাইতে হয়। তারচেয়ে বড় কথা সব একঘেয়ে হয়ে যাইতেসে। কিছুই মন মতো হয় না। এই লেখাটা লেখুম ভাবছিলাম বৃষ্টি দেইখ্যাই কিন্তু কারেন্ট বাবাজির বদৌলতে এতক্ষণে বের হলো। আজকে অবশ্য আমার ছোট ভাইটাকে নিয়ে বের হবো ভাবতেসি। দেখা যাক........
অনেক আনন্দ করে ছুটি কাটা। আমার সামনে ৫ দিন বন্ধ আজ থেকে শুরু হইল।
ভাবতেসি আমিও ছুটি নিব নাকি....... তোর শরীরের অবস্থা ক্যামন এখন??
শিরোনামটা খুব চমৎকার। গানের লাইন কোনও?
www.tareqnurulhasan.com
লাইনটা কোথাও যেন শুনছিলাম মনে হয়। গানের কিনা বলতে পারছি না।
ভাইজান মনডা কি খারাপ??
একটু.........
দারুন লাগলো
হুম ........
হুম, বৃষ্টি শব্দটাই কেমন জানি একটু রোমান্টিক...............।। খুব ভাল লিখেছিস বন্ধু...।।
ফরিদ ইব্রাদের কাছে তোর নাম শুনছিলাম।
পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো। ভালো থাকিস দোস্ত।
কেবল না চাকুরী শুরু করলা, এখনি এই, কি কও এইগুলা।
পড়াশুনার গিয়ার থাকলে টেরাই কইরা দেখতে পার।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
কিছু না ভাইয়া, এমনিতেই প্যাচাল।
পড়াশুনা না করলেও বুয়েটে মাস্টার্সের নাম কইরা একটা পড়ার ভং ধরি।
কিছুই ভালা লাগে না। নিজেরে পিডাইতে ইচ্ছা করে।
আহা! অনেক কথা মনে করায়া দিলা।
অন টপিকঃ লেখা পইড়া মনে হইল তোমার বিবাহ করার টাইম হইছে। কইরা ফালাও। 😀
ওরে বাব্বা কও কী??? বিয়া সাদীর নাম শুনলেই কেমন আৎকে উঠি। এমনিতেই রিপিটেশন গৎবদ্ধতায় অস্থির। বিয়া করলে উপায় আছে?? নতুন ঝামেলা যোগ হইবো আরেকটা।
আমিন তোমার বাইন্ধু ভালা কতা বলসে ।
:shy: :shy: :shy:
আমিন, ভালো লাগল লিখাটা। :clap: :clap:
একটু বিষন্ন মনে হল তোমাকে। আশা করি মন ভাল হয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি। 🙂
থ্যঙ্কু ভাইয়া। বিষণ্ণতায় ইদানিং ভুগি সবসময়ই। ঐটা ব্যাপার না।
ভালো থাকবেন।
চমৎকার লেখাটা পড়তে একটু দেরীই হয়ে গেলো।
শিরোনামের সাথে চমৎকারিত্বে মানানসই লেখা।
মনটা উদাস হয়ে গেলো।
কি একটা লাইফ যে পার করতাছি :bash:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
সমব্যথী পায়া ভালা লাগতাসে।
কিছুদিন ধইরাই মন মেজাজ বিলা।
লিখুম কয়া সিসিবিতে বসি। লিখা আর বের হয় না। কিছু না কিছু না করে হঠাৎই লিখে ফেলা এই লেখা। শিরোনামের কৃতজ্ঞতা ক্যাডেট কলেজের কৈশোরের প্রিয় বন্ধু আল-মাহমুদকে।
লাইনটারে আমি খুব ভালা পাই।
আমি কমেন্ট পোস্ট করার আগেই বেয়াক্কেল কারেন্ট গিয়ে পুরা মেজাজটাই বিলা করে দিল! বিদ্যুৎ মন্ত্রীর ** মারি! :gulli2:
লেখাটা পড়ে মন খুব বিষণ্ণ হয়ে উঠলো এই ভর দুপুরে। এমন লেখায় কিছু বলার থাকে না আলাদা করে।
এই শুক্রবারটা আমিও একটু অন্যরকম কাটিয়েছি, কাকতালীয়ভাবে। অনেকদিন পরে নানাবাড়ি গিয়েছি। নানা-নানি কেউ বেঁচে নাই, ওখানে এক খালা আর মামা থাকেন তাদের সংসার নিয়ে। অনেকদিন পরে সব খালা, মামা, মামাত-খালাত ভাইবোনদের সাথে দেখা হলো। যাদের সাথে ঈদ ছাড়া দেখা হয় না। খুব অন্যরকম একটা দিন, যেভাবে ছোটবেলায় কারণ ছাড়াই এমন দেখা হতো, তেমন। মা এখনও মাঝে মাঝে যায়, তার তো ভাই-বোনের মায়া! আমিই কেবল কাজের ব্যস্ততা নয়তো অলসতার অজুহাত দিয়েছি বড় হতে হতে। সেদিন গিয়ে এত মন ভরাট করা অনুভূতি নিয়ে বাসায় ফিরেছি!...
তোর পোস্ট পড়ে সেগুলো মনে পড়ে গেল দোস্ত। ভাল থাকিস।
নানাবাড়ির কথা বলে আমার নানাবাড়ির কথা মনে করায়া দিলি। মেঘনার প্রত্যন্ত চরে যেখানে বিদ্যুৎ পৌছায়নি এমন গ্রাম শেষ গেছিলাম ক্যাডেট কলেজে ঢুকার আগে। আমার মামা প্রায়ই যায় গ্রামের মানুষগুলার টানে। আমি প্রতিবার কায়দা করে এড়িয়ে যাই। কিন্তু সেখানকার একটা সুন্দর ছবি স্মৃতিতে ভাস্বর। সেটা ভাঙতে চাই না বলে।
তোর নানার বাড়ির গল্প নিয়ে কিছু লিখ- রিকোয়েস্ট রইলো।
আমিন সুন্দর লেখা । এই পোলাটা যে এমন কাবি্যক কলেজে বোঝাই যায় নাই । মন ভাল হয়ে যাক এই দোআ রইল ।
বুঝতেসি না কী কমু??
আপাতত :shy: :shy:
লিখাটা পড়তে দেরী হয়ে গেলো, যাইহোক, শব্দের অপূর্ব ব্যাবহার।
আর এতো বিষন্ন হওয়ার কিছু নাই মিয়া প্রতিদিন চিন্তা করবা যা আছি ভালো আছি, আর মাঝে মাঝে একদিন রুটিন ভাংবা ব্যাশ তাইলেই দেখবা জীবনটা অনেক মধুর।
অসম্ভব ভাল লাগল ভাইয়া মন্তব্যটি পড়ে ।
আগেই পড়েছি, কিন্তু ভুলে মন্তব্য করা হয়নি।
সুন্দর লেখা।
পাঁচে পাঁচ।
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
ধইন্যাপাতা