রুমানা মঞ্জুরকে নিয়ে এর মধ্যে গণমাধ্যমে, ব্লগে, ফেসবুকে প্রচুর লেখা হচ্ছে। ভাবছিলাম কি লিখবো! রুমানার ওপর নির্যাতনের কথা? এক ছাদের নিচে যার উপর সবচেয়ে ভরসা করা যায়, সেই লোকটার অমানুষ হয়ে ওঠার কথা? ঘরে ঘরে যে পারিবারিক সহিংসতা এদেশে চলে তার কথা? আমাদের সযত্নে গোপন রাখা সব সত্যের কথা? আমাদের তথাকথিত পৌরুষত্বের রগরগে কোনো দম্ভ?
এক. “এটা কোন রহস্য মামলা নয়। বরং এই মামলার তদন্ত করা খুবই সোজা, সাইদ নিজেই অনেকগুলো সূত্র দিয়েছে। মামলার তদন্তকারীরা যদি নিরপেক্ষ হয়, তাহলে আমার ধারনা আগামী কিছুদিনের ভেতরই এ মামলা বিষয়ে পাবলিকের জন্য দারুন একটা চমক অপেক্ষা করছে। পাবলিক এইখানে বেহুদাই আহা উহু করে পেচাল পারতেছে। ঐদিকে তার পিতা মাতা বা আই উইটনেসদের কথা কিচুই জানতে পারলাম না। যার বিয়া তার খবর নাই পাড়া পড়শীর ঘুম নাই। যত্তসব।”
দুই. “রুমানা-সাইদ দম্পতির ঘটনায় সাইদ হাসান যতটা বর্বরতার পরিচয় দিয়েছেন, সেটা সমগ্র মানবজাতির জন্যে কলঙ্ক; কিন্তু শুধু সাইদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই নয়, কেন সাইদকে ‘পশু’ হতে হল – এটা জানাটাই আমার কাছে বেশী জরুরী মনে হচ্ছে । রুমানা বর্বতার শিকার, এটা সত্যি; তবে সেও যে তুলসী পাতা ছিল না, এটাও নিশ্চিত। চাইলেই কোন মানুষের পক্ষে এতটা বর্বর হওয়া সম্ভব নয়। খুন করতে পারে, ধাঁরালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে পারে, কিন্তু আঙুল দিয়ে চোখ তুলে দেয়ার মত বর্বর হতে হলে পুরোপুরি brain-crashed হওয়া দরকার। এবং সাইদের brain-crashed কেন হয়েছিল এবং এর জন্যে তার স্ত্রী দায়ী কিনা – এটা জানাটাই বেশি জরুরী। কারণ শুধুমাত্র সাইদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়ত ঘরে ঘরে স্বামীদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, কিন্তু মিসেস রুমানার দোষগুলো প্রকাশিত হলে, সেটা স্ত্রীদের জন্যও শিক্ষনীয় হবে।”
তিন. “হাসানের যায়গায় অন্য কেউ হইলে কি হইত সেইটা একটু ভেবে দেখা দরকার।
হাসান তার স্ত্রীকে ভালবাসত, স্ত্রীর ক্রমাগত উপেক্ষা, আর তার বেকার হওয়ার হতাশা সবকিছুর সম্মিলিত ইফেক্টের সাথে যদি পরকীয়া যোগ হয়, এবং সেই সাথে আমরা ধরে নেই হাসান একজন কম বুদ্ধি সম্পন্ন আবেগ প্রবন মানুষ হওয়ায় সামাজিক উপায়ে সমস্যাটা মোকাবেলা করতে ব্যার্থ, তাইলে কামড়ানোর ব্যাপারটার মোটামুটি একটা ব্যাখ্যা দাড় করানো যায়। (এখানে আমি হাসানের সাফাই গাইতেছি না, রিয়েলিটি বুঝার চেষ্টা করতেছি)
হার্ড কোর ক্যারিয়ারিস্ট মহিলাদের বিয়ে করার আগে অবিবাহিত যুবক ভাইদের সাবধানে ভবিষ্যত চিন্তা করা উচিত। বিশেষ করে সেই মহিলা যদি সুন্দরী হয় তাইলে আরো বিপদ।
আমার এই কমেন্ট করার কারনে আমাকে গালি দিতে পারেন। কিন্তু এইটাই ফ্যাক্ট হওয়ার সম্ভবনা বেশী।”
উপরের তিনটি মন্তব্য একটি ব্লগ থেকে নেওয়া। আরো নানা ব্লগ, লেখা থেকে পুরুষদের আরো আক্রমণাত্মক মন্তব্য, হীনমণ্যতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নানা অসার যুক্তি পড়লে নিজেকে ওই প্রজাতির কেউ ভাবতে লজ্জা লাগে। রুমানার একজন বয়ফ্রেন্ড থাকলে; হাসান সাঈদকে আর ভালো না বাসলে; তার সঙ্গে আর সংসার করতে না চাইলে; তার গায়ে হাত তোলা, তাকে নির্যাতন করা যৌক্তিক হয়ে যায়! এই আমাদের পৌরুষত্ব!
আমি হাসান, আমি রুমানার নিয়ন্ত্রক, তার ঈশ্বর-প্রভূ! সে অপরাধ করলে (আদৌ করে থাকলে) তাকে মেরে কেটে পথে আনতে হবে! কেন আমার মনে হবে না, আমার স্ত্রী আমাকে আর ভালোবাসে না; তাই আলাদা হয়ে যাওয়াই ভালো। কেন বুঝবো না, জোর করে প্রভূত্ব আদায় করা যায় না। কেন ভাববো না, আমাদের মধ্যে যদি বনাবনি নাই হয়, তাহলে সমস্যা না বাড়িয়ে, নিজেকে এবং অন্যকে বিপদগ্রস্ত না করে পৃথক হয়ে যাওয়াটাই শ্রেয়?
হাসান সাঈদ ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ, বুয়েটে শিক্ষা পেয়েছে। তাই ফৌজদারহাট আর বুয়েটের অনেকে ওর কাজে লজ্জা পেয়েছে। বলছে, এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু যে দেশে প্রতি ৪ জন নারীর ৩ জনই ঘরে প্রিয় মানুষের নির্যাতনের শিকার হয়, সে দেশে ফৌজদারহাটসহ আরো সব ক্যাডেট কলেজের, বুয়েটসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যেও তো একই চিত্র পাওয়া যাবে! হাসান সাঈদ কোনো বিচ্ছিন্ন ‘পুরুষ’ নয়, আর রুমানাও কোনো বিচ্ছিন্ন নারী নন। এদেশে ৬৫ শতাংশ পুরুষ মনে করে, বউ পেটানোতে কোনো অন্যায় নেই। পারিবারিক সহিংসতা কি বিষয়, ৩৮ শতাংশ পুরুষের এ নিয়ে কোনো ধারণা নেই। ৪০ শতাংশ পুরুষ মনে করে বাঙালি নারী কঠিন সামাজিক অনুশাসনে পরিচালিত হবে! নারীদের মানসিকতায়ও বড় কোনো পরিবর্তন নেই। হিসেবটা দেখেছিলাম। এখন হাতের কাছে পাচ্ছি না। এ দেশের সম্ভবত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ নারী মনে করে স্বামীর চড়-থাপ্পর-লাথি খাওয়া, নির্যাতন স্বাভাবিক বিষয়। পুরুষরা নাকি এসব করেই! অর্থাৎ তারা এসব নিয়তি হিসাবে মেনে নিয়েছে!
কণ্ঠশিল্পী সায়ানের একটা নিজস্ব ব্লগ আছে। রুমানা (ডাক নাম হেমা) ওর স্কুলের বন্ধু ছিল। সায়ান লিখেছে, “হেমা’র চোখ” পড়ছিলাম। এক ধরণের পুরুষ সম্পর্কে ও লিখেছে, “আমাদের বয়সী এক বন্ধুর কথা বলি। ছেলেটি খুবই সম্ভ্রান্ত পরিবারের। বংশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ খুবই শক্ত। ছেলেটি নিজেও শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। বিয়ের সময়ে গল্প হচ্ছিলো। তখন ছেলেটি বললো … কথা প্রসঙ্গে … ‘আমার বউকে আমি চাকরি করতে দেবো। তবে শুধু মাত্র teaching। এর বাইরে অন্য কোন চাকরি ও করতে পারবে না’!
ছেলেটি পুরোনো দিনের কঠোর মানসিকতার পুরুষ-মানুষদের তুলনায় উদার ও নমনীয় হতে পেরেছে … এই কারণে … যে ঘরের বউ চাকরি করবে … এই পর্যন্ত সে মানতে পেরেছে। কিন্তু … কি চাকরি করবে … আর কি করতে পারবে না … বা কি করা যাবে না … সেইসব সিদ্ধান্ত নিজের হাতেই রেখেছে। ছেলেটি আমার বয়সী। উচ্চ শিক্ষা নিতে বিদেশে গিয়েছিলো। উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ফিরেছেও। এই উচ্চ শিক্ষা … তার degree’র বাইরে আর কি কি শেখাতে পেরেছে তাকে? ছেলেটি যেখানে পড়াশুনা করতে গিয়েছিলো … সেই অত্যাধুনিক উন্নত দেশে নারী পুরুষের ভেদাভেদ অনেক অনেক কম আমাদের দেশের তুলনায়! সেখানে একটা মেয়ে চাকরি করবে কি করবে না … সেটার জন্য তাকে কম্পমান হৃদয়ে অন্য কারোর মুখাপেক্ষী হতে হয় না। আমাদের প্রজন্মের একটা ছেলে হয়ে … ছেলেটা কি সেই সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে পেরেছে একটা উন্নত দেশে থেকে? নাকি কাগুজে degree নিয়ে গর্বিত হয়ে ফিরে আসা পর্যন্তই অন্তঃসারশুন্য তার সেই অর্থহীন অর্জন!? আমার এই বন্ধুটিও একজন বিচ্ছিন্ন মানুষ হয়েও অনেক মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন!”
রুমানা’র নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা আমাদের এখনো আচ্ছন্ন করে রাখলেও, স্মৃতি যদি প্রতারণা না করে আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে এপ্রিলের শেষে নাদিয়াকে হত্যা করে স্বামী রেজা গাড়িতে করে সারা ঢাকা শহর ঘুরেছে কোথাও লাশটা গুম করবে বলে। চিকিৎসক তামান্না, সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী সূতপা- তাদের কথাও স্মৃতিতে আছে তো? এরা সব মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত ঘরের মেয়ে; তাই গণমাধ্যমে ওদের কথা আসে। কিন্তু দেশের ৮০ হাজার গ্রাম, শ’ শ’ মফস্বল শহর, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনে কতো লাখো-কোটি ঘরে নারী প্রতিদিন শারিরীক ও মানষিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তার কতোটা খবর আসছে প্রকাশ্যে! পারিবারিক সহিংসতা শুধু স্বামীর হাতেই নয়, ঘরে নারী নির্যাতিত হচ্ছে বাবা-মা, শশুর-শাশুড়ি, দেবর-ননদ, ভাই-বোন, সন্তান ও স্বজনদের হাতে।
ভালো করে একটু নিজের ঘরের ভেতরে আলো ফেলে দেখি তো, ওখানে কোনো অন্যায় ঘটছে কিনা? আমি খুব ভালো স্বামী, স্ত্রীর গায়ে হাত তুলি না, কিন্তু কথায় কথায় স্ত্রীকে বলি, ‘তোমার রান্না খাওয়া যায় না। তোমার মা তোমাকে এটাও শেখায়নি?’ ‘খালাতো, ফুফাতো ভাই বাসায় এলে তোমাকে এতো উচ্ছল দেখায় কেন?’ ‘তুমি এতো বাবার বাড়ি যেতে চাও কেন?’ ‘আমি বাসায় না থাকলে কে কে আসে ঘরে?’
এমনসব কথা তো কোনো বিষয়ই নয়। স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তার সেলফোন ঘেটে দেখা, কে কে ফোন করেছিল। স্ত্রীর সেলফোন ব্যস্ত পেলে তাকে সন্দেহ করা। চাকরিজীবী স্ত্রীরা তো আরো কঠিন সমস্যায়। স্বামী তার অফিসের নারী সহকর্মীর সঙ্গে হেসে কথা বললে সমস্যা নেই, যতো সমস্যা স্ত্রীকে নিয়ে। আবার অনেকে উদার প্রমাণ করতে স্ত্রীকে নিজের অফিসের বড়কর্তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে বলেন। তাতে নিজের পদোন্নতি, ভালো বদলির সুবিধা হয়! ক’জন পুরুষ এসব মানষিক সমস্যা থেকে মুক্ত?
শুধু মেরে ফেললে, চোখ তুলে নিলে, কামড়ে-পিটিয়ে রক্তাক্ত করলেই আমরা নড়ে-চড়ে বসি। আমরা পুরুষরা কি কখনো ভেবে দেখি আমি আমার স্ত্রী, বোন, মায়ের সঙ্গে কেমন আচরণ করছি! একজন নারীকে ভালো প্রেমিকা, ভালো স্ত্রী, ভালো মা হতেই হবে। ধর্মে বলেছে, পরিবার-সমাজ বলছে, রাষ্ট্রও কম যায় না। কিন্তু পুরুষকে পুরুষই হতে হবে। হতে হবে নারীর নিয়ন্ত্রক! তাকে মানুষ হতে হবে না! কেউ কী সেকথা বলবেন?
জুন ১৬-২৩, ২০১১
[হয়তো বিষয়টা অনেকের কাছে পুরোনো হয়ে গেছে। কিন্তু সত্যটা হলো, মনের তাড়নায়, বিবেকের তাড়নায় লেখাটা শুরু করেছিলাম গত ১৬ জুন। আজ ২৩ জুন মনে হলো আরো দেরি হওয়ার আগেই লেখাটা শেখ করা জরুরি।]
লাবলু ভাই,
সমসাময়িক এই লেখাটা পড়ে আবার নড়ে চড়ে বসলাম।
অনেক গুলি বিষয় উঠে এসেছে আপনার লেখনীতে।
সবচাইতে যে বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে - আপনার শেষাংশটুকু ।
আসুন - আমরা সকলে সবাই মিলে মানুষ হই।
ধন্যবাদ লাবলু ভাই।
সৈয়দ সাফী
ধন্যবাদ ওবায়দুল্লাহ। আসলে শিশু বয়স থেকেই আমাকে বুঝিয়ে দেয় পরিবার-স্বজনরা যে আমি একজন পুরুষ। আমি শ্রেষ্ঠ, আমিই ঈশ্বর। মেয়ে শিশুকে কন্যা সাজিয়ে তৈরি করা হয় সুন্দরের প্রতিভূ হিসাবে। যেখানে নারী বিয়ে বসবে, স্বামী-সন্তানের লালন-পালন করবে।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
এই ব্লগেই অন্য একটা পোস্টে বলেছিলাম, সাইদের পাশবিকতায় যত না শকড হয়েছি, এ নিয়ে কিছু কিছু মানুষের মনোভাব (নারীরাও এদের মাঝে আছে) দেখে তার থেকে খুব একটা কম শকড হইনি। আমরা যতই এক সাইদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করি না কেন, সেটা কখনোই আমাদের পুরুষদের মানসিক সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার জন্য কোন দৃষ্টান্ত হবে না।
আপনার শেষ প্যারার উপলব্ধি আমাদের মাঝে জাগাতে হবে। পোস্টের জন্য ধ্ন্যবাদ লাবলু ভাই :hatsoff:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আকাশ: মূল সমস্যা পুরুষতান্ত্রিক চেতনায়, মূল্যবোধে। এই অবক্ষয়ের মূল্যবোধে নারী নিজেও আবদ্ধ। তাই পরিবারে নারীর ওপর নারীর নির্যাতন কিন্তু কম নয়।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
পড়লাম, লাবলু ভাই। বলার কোন ভাষা নাই। এই বিষয়ের উপর বেশ কয়েকটি লেখা পড়েছি। কোথাও কমেন্ট করার ইচ্ছে হয়নি। যে প্রশ্ন এবং দৃষ্টিভঙ্গীর কথা উল্লেখ করেছেন সেগুলো আমারো। কিন্তু আমাদের কতটুকু উপলব্ধি হবে তা নিশ্চিত নই।
কাবেরী গায়েনের লেখাটি পড়েছেন হয়তোবা। সিসিবি'র এই লেখায় যুতসই কমেন্ট পাবেন না। কাবেরী গায়েনের গুছিয়ে সুসংহত লেখাটির কিছু পাঠক কমেন্ট দেখে তাজ্জব বনে যেতে হয়! এই হলাম আমরা।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
রাব্বী: কাবেরীর লেখাটা আগেই পড়েছি। মন্তব্যগুলো এখন বারবার পড়ছি। কোথায় আছি আমরা তাতো পরিস্কার। আর সেজন্যই এমন লেখা বারবার লিখতে হবে। পুরুষতন্ত্রকে আঘাত করতে হবে। যতোক্ষণ না এটা ভেঙে-দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
লড়াইটা তাই একবিংশ শতকে দেখা যাচ্ছে আরো জরুরি।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
প্রথম দুটা কমেন্ট পড়ে আর এই ব্লগ পড়ার আগ্রহ সব হারিয়ে ফেলেছিলাম এমন কি এটার লেখক সানাভাই তা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছিল। ভাগ্যিস আমি পুরো লেখা পড়ার ধৈর্য্য রেখেছিলাম নইলে সানা ভাই সম্বন্ধে আমার এতদিনের শ্রদ্ধার কি হত কে জানে।
ভাইয়া আপনি অসম্ভব ভালভাবে জিনিস ফুটিয়ে তুলেন। সাংবাদিক বলেই হয়ত।
অঃটঃ কমেন্টের আগেই যদি বলে দিতেন যে নিচের কমেন্টগুলো আমার নয় তাহলে ভাল হত। আমার মনে হয় আমার মত অনেকেই হোঁচট খাবে।
তপু: একটু হোচট খাক না! সানা ভাইও তো পুরুষই। আমিও কী পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা থেকে পুরো মুক্ত? সচেতন বা অবচেতনে কখনো সেটা কী প্রকাশ পায় না? তাই নিজের সঙ্গে নিজের লড়াইটা প্রতি ক্ষণের, সব সময়ের। পুরো মানুষ কী হতে পারবো কখনো!
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
শাস্তি খুবই জরুরী এবং ভয়াবহ শাস্তি দেয়া উচিত । আগামীতে কেউ এরকম কিছু করার আগে যেন ১০ বার ভাবে কি করতে যাচ্ছে ।
আদনান: শাস্তিটা জরুরি। তবে একই রকম জরুরি আমাদের পুরুষ-নারীর মনোজগতের পরিবর্তন। আমাদের মানুষ হতে হবে যে।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
লেখাটা খুবই ভাল লাগলো ভাইয়া। শেয়ারে দিলাম...
::salute::
ধন্যবাদ শাওন।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
এই সময়টুকু নেটের বাইরে ছিলাম, তাই এই ব্যবহার দেখার সুযোগ হয়নি, আপনার ব্লগের প্রথমটুকু পড়ে আমি থ হয়ে বসে থাকলাম কিছুক্ষণ
নেট, সংবাদপত্র, টিভি, রেডিও থেকে পালিয়ে থাকলেও মুক্তি নেই সামিয়া। আজকের পত্রিকাতেই এই খবরটা পেলাম: কুড়িগ্রামে এসিড মামলার রায়ে একজনের মৃত্যুদণ্ড
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
অসাধারণ একটি লেখা :boss:
খুব ভালো লাগলো ভাইয়া।
ধন্যবাদ নাজমুল।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
আমি কাউকে কাউকে উপরের মন্তব্যের মত আসলেই বলতে শুনেছি।অসাধারণভাবে বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলার জন্য ধন্যবাদ।শেয়ার দিলাম।
ধন্যবাদ আমিনুল। উপরের মতো মন্তব্য বা একটি ছোট্ট জরিপ দেখো নিচে অয়ন মোহাইমেনের মন্তব্যে। বুয়েটের একটি বিভাগের একটি শাখার ৪৫ জন ছাত্রের ৪০ জনই বলছে, তাদের স্ত্রীদের চাকরি করতে দেবে না! অবস্থাটা আসলেই ভয়াবহ। এদের অধিকাংশই দেখবে বিয়ে করবে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের!!
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
প্রথমে যেমন কমেন্টগুলো তুলে এনেছেন, সেরকম কমেন্ট আমি অনেককেই করতে দেখেছি। অনেকে আরেকটু সূক্ষ্ণ কথা বলেছেন, "আমি ভেতরের ঘটনা জানতে চাই, কী ঘটেছিলো, কেন ঘটেছিলো সেগুলো সবার সামনে আসা উচিত" - এমন কথা বলেছেন। আমি সেখান থেকে বুঝতে পারি, এখানে রুমানা মঞ্জুরের কোন চারিত্রিক দোষ পেলেই সাঈদকে বক্তা জোরেশোরে শেল্টার দিবেন!! আমিও মনে করি প্রতিষ্ঠান তথা সমাজের অধিকাংশ পুরুষ এমন, ষাট ভাগের মধ্যে ক্যাডেট খুঁজলে অনেক পাওয়া যাবে, তেমনি পাওয়া যাবে বুয়েটিয়ান, পাওয়া যাবে ঢাবিয়ান, জাবিয়ান, আর্মি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক...
আন্দালিব, ক্যাডেটরা নিজেদের সেরা মনে করে তাই না? একটা গোপন জরিপ করে দেখবে কী আসলে চিন্তা-চেতনা, ভাবনা, আদর্শে আমরা কতোটা সেরা, কতোটা অগ্রসর! আমরা তো প্রথমত নিজেদের সমালোচনাই সহ্য করতে পারি না!
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
সমাজের পরিবরতন আম্রাকি পারব করতে? লাব্লু ভাইকে ধন্নবাদ লেখাতার জন্ন
crocodile farmer
crocodilefarmer@gmail.com
মুশতাক: পরিবর্তন সহজ কাজ নয়। নিজেই জানো। কতো লড়াই করতে করতে এক সময় যুদ্ধ জয় হয়! তবে লড়তে হবে। নিজের সঙ্গে, ঘরের সঙ্গে, সমাজ এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
ভাইয়া আমি নিজেও নিজেকে শিক্ষিত বলতে পারছি না... এই ঘটনায় নিজেকে নিয়ে অনেক দ্বিধায় পড়ে গিয়েছি।
রুমানার যেকোনো কাজ কিংবা তথাকথিত অপরাধ সাঈদের এমন কোনো কাজ কে জায়েজ করে দেয় না। এবিসি রেডিওতে আপনার মিঠে কড়ায় এ বিষয়ে অনুষ্ঠানটি শুনেছিলাম। সত্যি বলতে পেপারে প্রথম দিকে এইসব বর্বরতার খবর এড়িয়ে গিয়েছিলাম। গাড়ীতে বসেই প্রথম রেডিওতে ব্যাপারটা শুনি।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থা কিন্তু আমাদের ডিভোর্স করতে বাধা দেয়। দেখা যাবে রুমানা এবং সাঈদের পরিবার তাদের আলাদা হতে দেয়নি। নিজেদের মেয়ের কথা চিন্তা করে তারা একই সাথে থাকতে চেয়েছে। কিন্তু ফলাফলটা কি ভয়ংকর হয়ে গেলো।
হ্যা এহসান, আমাদের সমাজ কিন্তু পুরোপুরি পরিচালিত ও প্রভাবিত পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা দিয়ে। এই সমাজ-পরিবার শেখায় মেয়েদের সব কিছুর পরও সংসার ভাঙা যাবে না। স্বামীর সঙ্গে মানিয়ে চলতে হবে। পুরুষ মানুষের একটু-আধটু দোষ থাকতে পারে। আর সন্তান থাকলে তো কথাই নেই। সন্তানের মুখ চেয়ে বাকি জীবনটা দুঃসহ যন্ত্রণার মধ্যে কাটাতে হবে। আর শেষ পর্যন্ত না থাকতে পারলে, ডিভোর্স হলে দোষটাও মেয়েটারই হয়!
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
রুমানার জন্য আমি এক অলৌকিত্বের আশা করছি যে সে আবার তার দৃষ্টি ফিরে পাবে। আর যদি সে অলৌকিত্ব নাও দেখা দেয় তাতেও যাতে সে দমে না। হেলেন কিলারের উদাহরণ তো সামনে আছেই। একজন রুমানা শত প্রতিকূলতা সত্বেও সামনে এগিয়ে যাওয়া মানে বাংলাদেশের লাখ লাখ শারিরীক প্রতিবন্ধির সামনে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। আশার প্রদীপ জ্বালা।
কিছুদিন আগে সান ফ্র্যআন্সিসকতে ষাটজন মহিলা মিলে মিছিল করেছে পারিবারিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। তারা আর ঘরে স্বামীর শারিরীক নির্যাতন সহ্য করতে চায় না। পশ্চিম-পূর্ব, উন্নত-অনুন্নত, অতি ধার্মিক - সেক্যুলার সারা বিশ্বেই এ সমস্যা একটি সাধারণ সমস্যা।
এ বিষয়ে আমি মোটামুটি যতগুলো লিংক পেয়েছি পড়েছি। এবং একটু হতাশ হয়ে লক্ষ্য করলাম সবাই খালি 'পুরুষতন্ত্র ভেংগে দাও, গুড়িয়ে দাও' এই ধরণের কথাবার্তা বিভিন্ন মোড়কে উপস্থাপন করেছে। এটা কোন সমাধান না। এই জন্য যারা আসলেই বৌ পিটাচ্ছে তারা ভেতরে ভেতরে রুমানার দোষ খুঁজছে। লেখার পক্ষে-বিপক্ষে মত থাকবে। অন্তত একজন মানুষ তার চিন্তা ভাবনা বদলালেও অনেক পাওয়া - হয়তো একটা মেয়ের জীবন বেঁচে যাওয়া। তাই এরকম লেখার প্রয়োজনীয়তা অনেক। সেই সাথে দরকার বাস্তব সমাধান। কিভাবে এর সমাধান হতে পারে তা যদি আমাদের পথ প্রদর্শকরা এখনও বুঝতে না পারে তাহলে দিস্তা দিস্তা কাগজ ভরবে - আর ওদিকে রাহেলা, রুমানারা শারিরীক প্রতিবন্ধি হতে থাকবে।
আমার এক বান্ধবী আছে এখানে। বাংলাদেশী। ওর যখন আমেরিকাতে কোন চাকরী বাকরীও ছিল না তখন সে নিজের চেষ্টাতে স্বামীর নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। এর কারণ এখানে যথেষ্ট সরকারী শেল্টার আছে। একজন নির্যাতিত মেয়ে সেখানে ফোন করে শেল্টার পেতে পারে। যতদিন পর্যন্ত না সে একটা কাজ জুটিয়ে নিতে পারছে ততদিন পর্যন্ত সরকার থেকে ভাতা পাবে, শিক্ষা লোন পাবে। পাশাপাশি আইনী প্রটেকশন তো আছেই। মেয়েটির একটি ছেলে ছিল। ছেলেটির জন্যও সে বেবিসিটারের পয়সা পেত। আজকে সে মেয়েটি আমেরিকাতে খুব ভালভাবে প্রতিষ্টিত আর তার স্বামীকে এই দেশ থেকে ডিপোর্ট করা হয়েছে। আমেরিকার কথা বলছি অনেকেরই হয়তো শুনতে ভাল লাগবে না।
রুমানা আন্দোলন সফল করতে চাইলে প্রথমত দরকার নির্যাতিত মেয়েদের জন্য অনেক শেল্টার। গরীব দেশে টাকা কোত্থেকে আসবে? প্রতি বছর প্রধান্মন্ত্রী, মন্ত্রী আর আমলারা লট বহর নিয়ে যে বিশাল বিশাল অদরকারী বিদেশ সফর করে সেগুলো কাটছাট করে তার থেকে। একবার শুনেছিলাম আইন করে বংগবন্ধুর বংশধরদের বিদেশেও প্রটেকশনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেটার টাকা কোত্থেকে আসছে? মহিলা সাংসদরা তাদের আই ওয়াশ মানব বন্ধনের থেকে দেশে মহিলাদের প্রটেক্ট করা যায় এমন আইনে তৈরীতে কিঞ্ছিৎ মাথা খাটালে ভাল হয়। আদৌ যদি তা তাদের থেকে থাকে। (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
ধন্যবাদ শান্তা। বেশ চিন্তা-ভাবনা করে তোমার কথাগুলো লিখেছো। পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইটা করে যেতেই হবে। এর সমাধানও দ্রুত পাওয়ার কোনো উপায় নেই। বিশ্বের কোনো দেশ, জাতিই এ থেকে মুক্ত নয়। শুধু মাত্রা কম-বেশি এই যা। তবে সম্ভবত আদিবাসীরা এ সমস্যা থেকে অনেকটা মুক্ত।
আমাদের সঙ্গে একটা পার্থক্য আছে। উন্নত দেশে নারীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আইনের পাশাপাশি এর বাস্তবায়নও আছে। আমাদের দেশে নারী-শিশুদের সুরক্ষায় আইন হয়েছে অনেক। কিন্তু আইনের শাসন নেই। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচারালয় সব জায়গায় সমস্যা। এমনকি এসব প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিরা যথার্থভাবে প্রশিক্ষিত নয়। এসব প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যেও পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব কাজ করে।
অনেক নারীর এদেশেও আশ্রয়ের প্রয়োজন আছে। কিছু আশ্রয়কেন্দ্র আছে যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। কিন্তু সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রাষ্ট্রের-সরকারের সহানুভূতিশীল মনোভাব। রাষ্ট্র-সরকার নির্যাতিত নারীর পাশে দাঁড়াবে, দাঁড়াতে হবে। নির্যাতকের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
ভাইয়া, লেখাটার প্রথম অংশটা পড়ে খুব মন খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। আমি ভাবলাম আপনিও তাহলে একই দলে। আমি নিজেও এই ধরনের কথা শুনেছি কারো কারো মুখে। কিন্তু আমার কথা একটাই, কিভাবে এটা সম্ভব। একজন মানুষ আরেকজন মানুষের চোখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়ে চোখ নষ্ট করে দিল, এটা ভাবতেই তো গা শিউরে উঠেছে। আপনার লেখাটা অনেক কিছু চিন্তার মধ্যে নিয়ে আসছে। আসলেই কি আমরা উদার কিংবা সভ্য হতে পেরেছি।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
আহমদ: যেভাবে একজন স্বামী, শশুরবাড়ির লোকজন যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীর গায়ে আগুন দেয়, যেভাবে এসিড ছুড়ে মারে, সেভাবেই হাসান পারে রুমানার চোখে আঙুল ঢুকিয়ে দিতে! এসবই বাস্তব।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
লাবলু ভাই, পোস্ট প্রিয়তে এবং পাঁচ তারা।
আমরা বাঙালিরা হুজুগে এবং সুযোগ পেলেই আবেগ দেখিয়ে বিবেক সাজার চেষ্টা করি। আপনার এই পোস্ট টা আসলে আমার কথাগুলোর একদম যথার্থ প্রতিফলন। রুমানা নিয়ে নানা জায়গায় নানা আলোচনা হয়েছে। পক্ষে বিপক্ষে নানা কমেন্ট দেখে আমি বুঝতে পারি বাংলাদেশ আসলেই ডিজিটাল হয়ে গেছে। যে কোন বিষয়কে সাদা কালো মোহামেডান আবাহনী ম্যাচ বানিয়ে পক্ষ বিপক্ষ তৈরি করে কাদা ছোড়াছোড়ি আমাদের খুব প্রিয়।
আসল কথা হলো ভিতরের কথা বুঝা দরকর কিন্তু রুমানা -সাইদের দাম্পত্য জীবনের ভিতরের খবর নয় বরং এই জাতীয় ঘৃণ্য কাজের পিছনের ড্রাইভিং ফোর্সটা খুঁজে বের করা দরকার এবং সেই ফোর্সের দ্বারা আমরা নিজেরাই বা কতটুকু সভ্য মানুষ হতে পেরেছি সেটাও বুঝা দরকার। আমাদের দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স আমরাই ঘটাই। আমাদের পুরুষদের মাঝে ঘুমিয়ে থাকা তথাকথিত পৌরুষত্বই ঘটায়।
প্রসঙ্গ ক্রমে রিমা হত্যা মামলার কথা মনে হলো। ৯০ এর দশকের চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায়ের মাধ্যমে রীমার হত্যাকারী তার স্বামী মুনিরের ফাঁসির কথা মনে হলো। সমাজ দ্বারা নির্যাতিত এবং আমাদের সমাজের পুরুষের দোষ ঢেকে পুতপবিত্র করবার প্রচেষ্টার বলি রীমা। সেই রীমাকে নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছিলো। কারণ সাংবাদিকরা বিষয়টাকে পার্সোনালি নিয়েছিলেন রীমা শহীদ সাংবাদিকের মেয়ে হওয়ায়। মুনিরের মৃত্যুতে আমরা হাততালি দিয়েছিলাম আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হলো বলে। কিন্তু আজো কি আমাদের চোখের গোচরে অগোচরে রীমারা পরকীয়ার বলি হচ্ছে না ??
রীমার কথাটা আনলাম একটা অন্য বিষয়ে অবতারণার জন্য। রুমানার ঘটনা অবশ্যই দুঃখজনক। এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আমি চাই। কিন্তু তাতেই কি আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। আমি বলবো ,না। এবং আংশিক হলেও একথা সত্য রুমানার ঘটনা নিয়ে আমরা আজ সোচ্চার কারণ রুমানার পরিচয় । খিন্তু ব্যাপারটা এমন হওয়া উচিত নয় যে রুমানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বলেই তার উপর অন্যায়ের বিচার হবে কিন্তু রিক্সাওয়ালার বউ সোলেমন এর উপর নির্যাতন চলতেই থাকবে কারণ তার ভয়েস নাই।
তাহলে এর প্রতিকার কি? ব্লগে কিংবা গণমাধ্যমে আমরা যত কথা বলছি তার সাথে সাথে যেন একথাও ভাবি আমাদের আশেপাশেই আমাদের বোন মা কিংবা বউ আমাদের দ্বারা কিংবা আমাদের পরিবারের দ্বারা ক্রমাগত শারীরিক অথবা মানসিক ভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। দুঃখের ব্যাপার হলেও সত্যি মেয়েরা এই ভায়োলেন্স এর শিকার হচ্ছেন তাদের খুব কাছের মানুষগুলোর দ্বারাই। একটা ছোট উদাহরণ দেই নিজের জীবন থেকে। আমার বিয়ের পর আমার কাছের সম্পর্কের এক আত্মীয়া আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি আমার স্ত্রীকে বুরখা পড়াবো কিনা। প্রশ্ন শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। এবং যখন ব্যাখ্যা করলাম যে বুরখা পরা বা না পরা তার চয়েজ এখানে আমি ডিসিশন দেবার কেউ না তিনি অবলীলায় আমার আরেক আত্মীয়ার রেফারেন্স দিয়ে দিলেন, যিনি একজন শিক্ষিকা এবং তার স্বামীর ইচ্ছায় বুরখা পড়েন। আমি তাজ্জব হয়ে যাই এই ঘটনায় এবং তাকে সাপোর্ট দেয়ার পিছনে আমার আত্মীয়ার মনোভাব দেখেও। আমাদের সমাজে ক্রমাগত নিগ্রহের শিকার মেয়েরাও যেনো বুঝতে পারে না আসলে এই নির্যাতনের স্বরূপ।
পরিশেষে আমি বলতে চাই, রুমানার ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় এটা আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মানুষদের মনের মাজএ জমে থাকা নোংরামির হঠাৎ উম্মোচিত হওয়ার ঘটনামাত্র। আমরা নিজেদের মনের মাঝে জমে থাকা এই ময়লা পরিষ্কার না করা পর্যন্ত এর নিস্তার নেই। আমি এবং আমরা যারা বিভিন্ন জায়গায় ভালো ভালো কথা বলছি (যারা ভিন্নমতে বলছেন তাদের ব্যাপারে কিছু বলার আগ্রহ পাচ্ছি না) তারা যাতে প্রায়োগিকভাবে নিজেদের জীবনের দ্বারা হলেও একজন অথবা কয়েকজন রুমানার জন্য পৃথিবীটা সুন্দর করে যেতে পারি সেটাই হোক আমাদের সবার চাওয়া।
আমিন:
পুরুষতন্ত্র, নারীবাদ- এসব শব্দ আবার অনেকের পছন্দ না। তবে বাস্তবতা কিন্তু এটাই। নারীবাদ অর্থ অনেকে মনে করে নারীকে বুঝি পুরুষের ওপর বসিয়ে দেওয়া! নারীবাদ আসলে নারীর মানুষ হিসাবে স্বীকৃতির সংগ্রাম। আর পুরুষতন্ত্র হীনমণ্যতার আরেক প্রকাশ মাত্র।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
কয়েকদিন আগে বিকালে শহীদুল্লাহ হলের রাস্তায় হাঁটছি। পাশ দিয়ে দুইজন ছেলে পার হয়ে গেলো। ঐটুকু সময়ের মধ্যে ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও তাদের কথোপকথন কানে গেলো। "দোস্ত, মাইয়া মানুষরে পড়ালেখা করাইলেই গ্যাঞ্জাম। এগুলার ঘরে থাকার কাম, ঘরে থাকবোনা, আর ভ্যাজাল করবো"।
নারীবাদী মানে কী জানিনা, তবে এইসব মন্তব্য শুনলে নিজের ভেতরে কুঁকড়ে যাই। সভ্যতার এই পর্যায়ে এসেও কী ভয়াবহ পর্যায়ের অসভ্য আমরা। কী ভয়াবহ পর্যায়ের।
আর এইসব কারণেই ফেসবুক বন্ধ করে বসে আছি দুই সপ্তাহ ধরে। মুর্খামী থেকে দূরে থাকি, সুস্থ থাকার জন্য। আম জনতা সত্যিইইই অসাধারণ!
কিছুদিন আগে বুয়েটের ইলেক্ট্রিকাল এর একটি সেকশান এ এক স্যার প্রশ্ন করেছিলেন "তোমরা কজন তোমাদের স্ত্রীকে চাকরি করতে দিবে??"
৪৫ জনের মধ্যে হাত উঠেছিল মাত্র ৫টি। বাকি ৪০টি ছেলে যারা কিনা তথাকথিত বাংলাদেশ এর শ্রেষ্ঠ ছাত্রদের অন্তর্ভুক্ত, যাদের বিয়েরও বহুকাল বাকী তারাও এখন থেকেই পণ করে রেখেছে তারা তাদের স্ত্রীকে সম্পত্তি বানিয়ে রাখবে।
জনাব হাসান সাঈদ আমার কলেজে ছিলেন, বুয়েটে আমারই সাবজেক্টে পড়তেন, ঘটনাটির পর আমি এতই লজ্জিত ছিলাম এই ভেবে যে একই অবস্থায় পড়লে কি আমিও তাই করব না??
সত্যি কথা বললে আমি এখনো শঙ্কিত।
এ বিষয়ে অনেকগুলো পোস্ট পড়লাম, তবে এ লেখাটা সত্যিই ভালো লাগলো লাবলু ভাই।
অয়ন,
আমি কিন্তু আমার স্ত্রীকে কাজ করতে দিবোনা।
তাতে কি প্রমাণ হয়, আমি প্রাচীনপন্থি!
আমার বউ আজ কাজ করে।
কারণ কি?
আমার একার আয়ে সংসার চলে না; সোজা হিসাব।
আর নারী স্বাধীনতা চাকুরী করলেই আসবে তা না।
নারীরা নির্যাতিত কোনো সন্দেহ নাই।
কিন্তু পুরুষরাও কি স্বাধীন?
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
রাজীব ভাই, আমি আপনার সাথে খুব ভালোভাবেই সহমত পোষণ করছি।
পুরুষরাও স্বাধীন নয়, দায়বদ্ধতার ভারে জর্জরিত। আবার নারীদের পরাধীনতাও আগ্রাহ্য করার মত নয়।
সাংসারিক কাজ ভাগ করে নেয়ার জন্য যদি নারী বা পুরুষ চাকুরি না করে তাদের নিজস্ব সমঝোতার মাধ্যমে তাহলে তা কোনোভাবেই প্রাচীণপন্থী নয়।
কিন্তু যে ছেলেগুলোর আগামী ৩ বছরেও বিয়ের সম্ভাবনা নেই, তারা যখন এখন থেকেই ঠিক করে রাখে তারা তাদের স্ত্রীকে চাকুরী করতে দেবে না, এটা কি অসুস্থ মানসিকতা নয় ? সেই মেয়েটি অবশ্যই শিক্ষিত হবে সে চাকুরি করতে চাইতেই পারে। তাই আমার মনে হয়েছিল তাদের কাছে তাদের স্ত্রী কি আদৌ ভালোবাসার মানুষটি নাকি এক অর্থে সম্পত্তি।
তবে এক্ষেত্রে আমি স্যারেরও প্রশ্নের একটি দিক দেখাতে চাই। প্রশ্নটা কি "তোমরা কজন তোমাদের স্ত্রীকে চাকুরী করতে দিবে?" হওয়া উচিৎ ছিলো নাকি "তোমরা কজন চাও তোমাদের স্ত্রী চাকুরি করবে?" হওয়া উচিৎ ছিলো।
আমি মনে হয় এবার এই ঘটনাটিতে আমার মনোভাব বোঝাতে পেরেছি। (সম্পাদিত)
অয়ন,
বুঝেছি।
ছাগলগুলো বিয়ার পর বুঝবো কে কারে কি করতে দেয় বা দেয়না।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
=))
খুব ভাল হইসে ভাই। আরো চাই। ::salute::
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার আত্মজীবনী, "অর্ধেক জীবন"গ্রন্থে লিখেছিলেন, "স্কুল কলেজ গুলো যেন অফিসারদের বউ তৈরির কারখানা"। অনেক অনেক দিন গত হয়ে যাওয়ার পরেও দৃশ্যটা বদলায়নি। তবে উন্নতি হচ্ছে, স্কুল কলেজের পর বিশ্ববিদ্যালয় গুলোও অফিসার বা তথাকথিত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে কর্মরতদের জন্য চলনসই বউ তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে। আমাদের ব্যাচে খ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া মেয়েটা অনার্স পরীক্ষার আগেই মা হয়ে গেল!
লাভলু ভাই ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
আদনান ভাইয়ের কথার উত্তরে যে কথাটি বলেছেন "আমাদেরকে মানুষ হতে হবে"
আমার অবস্থানও এই জায়গায় ।
সত্যিই আমাদের মধ্যে মনষ্যত্বের বীজ রোপন করতে হবে,করাটা অতিব জরুরী।
তবেই পরিবার, সমাজ,রাষ্ট্র সব জায়গায়
এমন অবাঞ্ছিত ঘটনার জন্ম নিবে না।
সমাজে এমন কোনো বর্বরোচিত
সূত্রপাত হবে না।
লাবলু ভাই, তাহলে নির্যাতিত মেয়েরা কি করবে? আইনের সাহায্য নেবে- এমন গতবাধা উত্তর আপনার কাছে যে আশাকরিনি সেটা নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন।
অনেকেই বলে থাকে যাদের পায়ের নীচে মাটি নেই বা যারা সহায় সম্বলহীন তারা মুখ বুজে স্বামীর সব অত্যাআর সহ্য করে, করতে বাধ্য কারণ তাদের যাবার যায়গা নাই। আমি এটা মানতে রাজী না। কারণ এখন হাজারটা এনজিও আছে অই সব দুস্থ মেয়েগুলোর পাশে দাড়ানোর জন্য, আইনী সহায়তা দেবার জন্য। এই শ্রেনীর মেয়েদের মূলতঃ সামাজিক দিক থেকে তেমন কোন বাধা থাকে না মামলা, আইন ইত্যাদির দারস্থ হতে। কিন্তু যেসব মেয়েরা সামাজিক অবস্থানগত দিক থেকে মোটামোটি উপরের দকে আছে, অর্থাৎ' পারিবারিক পরিচিতি আছে, উচ্চশিক্ষিত বা উচ্চপদে চাকুরীরত... তারা খুব সহযেই স্বামীর হাতে নির্যাতনের কথা বলতে পারে না। এমনকি তার নিজের পরিবারকেও না। অথবা পরিবারকে বললেও তেমন কোন সাহায্যের আশ্বাস তো পাওয়া যায়ই না অনেক সময়ই তাদেরকে উপদেশ দেওয়া হয়ে থাকে "মুখ বুজে সহ্য" করার জন্য। কারণ এসব ক্ষেত্রে মেয়েদেরই দোষ সবাই খুঁজে বেড়ায়। এই লেখাটি ও কিন্তু একটি সত্যি ঘটনার উপর ভিত্ত করে লেখা হয়েছিল। এইসব স্বামীদের কখনও বিচার হয় না।
এই মেয়েগুলো কোথায় যাবে? কার কাছে তাদের নির্যাতনের কথা বলবে?
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
জিতু,
আমার এক বান্ধবীর বোনের জীবনে একদম ঠিক রুমানার মতো অবস্থা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একজনকে ক্যাডারকে ভালবেসে বিয়ে করেছিল। সে ছেলে জীবনে কোনদিন ইনকাম করেনি। আগের শ্বশুর বাড়ি এখন বৌএর বাড়িতে থাকছে (বৌ বাবার থেকে বাড়ি পেয়েছে), বৌ হাতে টাকা না দিলে পিটাচ্ছে। কলেজে চাকরি করা বৌকে সন্দেহ করে পিটাচ্ছে। আমার সেই বান্ধবীরা দুটো বোন। বান্ধবী আমেরিকায় থাকে। ওদের বাবা-মা মারা গেছে। তার বোন সবরকমভাবে সম্পর্ক ভাংগতে চাচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য পারছে না। ছেলেটার পরিচয় সে রাজনীতি করে। মেয়েটাকে বলেছে যেদিন তালাকপত্র পাঠাবে সেদিনই খুন করে ফেলবে। এখন আমাকে একটা এনজিওর নাম বলবে যেখানে মেয়েটাকে অন্তত পক্ষে এক বছরের জন্য নিরাপত্তা দেওয়া হবে?
এখানে উল্লেখ্য যে অনেক মেয়েই মানবাধিকার সংস্থার এডভোকেট এলিনার কাছে অভিযোগ করে আসছে। কিন্তু তেমন ফল পায়নি। জুরাইনের যে মা তার দুই সন্তানসহ আত্মহত্যা করলো সেও অভিযোগ করে এসেছিল।
অর্থনীতি কোন সমস্যা নয়, তারপরও যে স্বনির্ভর মেয়ে তার নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে না, পরিবারের কথার উপর চলতে হয় সেক্ষেত্রে আমি বলবো সে মেয়ে এখনও পুরোপুরি মানুষ হয়ে উঠতে পারেনি। এবং এর একটা কনসিকোয়েন্স তো থাকেই। এই কথাটা বলছি আমার চারপাশে দেখা মানুষদেরকে দেখে। বিস্তারিত ব্যাখ্যায় আর গেলাম না।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
জিতু,
গতবাধা উত্তর হলেও বলবো- হ্যা নির্যাতিতকে অবশ্যই আইনের আশ্রয় নিতে হবে। নারীরা সেটা ৯০ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে করেনা। এটা নির্যাতকরা জানে। অন্তত নিজে না করলেও তাদের সহায়তার জন্য অনেক সংগঠন আছে, ওদের মাধ্যমেও যেতে পারে। এর কোনো বিকল্প নাই। প্রতিবাদ, প্রতিরোধের মুখে না পড়লে এদের সাহস আরো বেড়ে যায়। মেয়েরা এবং তাদের পরিবারের নম নম মনোভাবটা স্বামী, স্বামীর বাড়ির লোকজনকে বেশি দুঃসাহস দেয়।
মানবাধিকার, নারী অধিকারের সংগঠনগুলোকে অন্তত মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত, শহুরে কিছুটা ভয় পেতে শুরু করেছে। সচেতন হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্যাতকদের ভয় দেখানোটা-পাওয়াটাও জরুরি।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
জিতু তোমার ওই লেখাটায় যে মন্তব্য করেছিলাম তা এখনো সমান প্রাসঙ্গিক। তাই সেটাই আবার এখানে তুলে আনলাম।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"