দা রেস্ট ইজ হিস্টোরি!

সিসিবি চালু হওয়ার পর থেকে বিগত বছর খানেক ধরে একটা রোগ আমাকে খুব পেয়ে বসেছে।রোগটা অবশ্য খুব অপরিচিত কিছু না-এইটাকে বলা যায় “ক্যাডেট সিমিলারাইজেশন সিনড্রোম”। গালভরা নামটার সাদামাটা ব্যাখ্যা অনেকটা এরকম-দৈনন্দিন জীবনে দুনিয়াতে যা কিছু আছে তার সব কিছুর সাথে নিজের ক্যাডেট জীবনের কোন না কোন ঘটনার মিল খুঁজে পাওয়া।এই সেদিন ভার্সিটিতে সার্টিফিকেট তোলার সময় ভিসি স্যারের দিকে এক ঝলক তাকিয়েই মনে হল,”আরে,আমাদের ভিসি স্যার তো হুবহু ক্লাস সেভেনে পাওয়া ভিপি স্যারের মত দেখতে!খালি চুলটা সাদা,গায়ের রঙ আরেকটু কালো,উচ্চতাটা একটু বেশি আর কথা বলেন কিছুটা ভিন্ন স্টাইলে”।বুঝুন অবস্থা!হাতের কাছে পড়ে থাকা বিখ্যাত ব্যক্তিদের একটা জীবনী পড়তে পড়তে তাই আমার মাথায় যে এঁরা ক্যাডেত হলে কেমন হত এই চিন্তা আসবে-তা আর বেশি কথা কি?

চলুন দেখা যাক বিখ্যাত ব্যক্তিদের ক্যাডেট জীবনের কল্পিত রূপ!

স্যার আইজ্যাক নিউটন

বালক নিউটন ক্লাস ইলেভেনে থাকতে একবার হুনাইন হাউসের পুকুর পাড়ে বসে বন্ধুদের ডাব পাড়ার কাজে সহায়তা করছিল।হঠাৎ এক নাইট গার্ড চলে আসায় সে সবাইকে সতর্ক করে দিল-সব ক্যাডেট আশেপাশের ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে পড়ল।কিন্তু সেয়ানা নাইটগার্ড এসব দেখে অভ্যস্ত-তাই সে খুঁজে খুঁজে যে-ই কিনা নিউটনের ঘাড়ে হাত দিয়ে তাকে টেনে বের করছে-ঠিক সেই মুহূর্তে গাছ থেকে মাঝারি সাইজের একটা নারিকেল আপনা আপনি এসে পড়ল তার মাথায়।গার্ড সেখানেই ফ্ল্যাট-মাথায় ক্যাপ থাকার কারণে বড় ধরণের কোন দুর্ঘটনা না ঘটলেও ঘন্টা আধেক অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে হয়েছিল তাকে-আর সেই সুযোগে নিউটন পগার পার!তিন বার লাস্ট ওয়ার্ণিং খাওয়া নিউটন সাক্ষাত ‘ধরা” এর হাত থেকে বেঁচে গিয়ে চিন্তা করা শুরু করল-“আচ্ছা,নারিকেলটা নিচে পড়ল কেন?”

সেই থেকে তার চিন্তার শুরু এবং দা রেস্ট ইজ হিস্টোরি!

এডলফ হিটলার

হিটলার বাল্যকালে ছিলেন খুব কড়া একটা ক্যাডেট কলেজের ছাত্র।কিন্তু সেই ছেলেবেলা থেকেই আর এম গুপ্তা রচিত বড় বড় মানুষের ছোট ছোট বইয়ের প্রতি তাঁর ছিল অদম্য আকর্ষণ।এই আকর্ষণ মেটাতে তিনি এসব বই কেবল সংগ্রহই করতেন না,নিজ থেকে এসব গল্পের উপর ভিত্তি করে চিত্রাঙ্কন করে সেগুলো ক্যান্টিন কূপনের বিনিময়ে সমমনা ক্যাডেটদের কাছে বিক্রিও করতেন।একবার হাউস বেয়ারা হানিফ ভাই তাঁর এই বই এবং চিত্রের ভান্ডার দুর্ঘটনাক্রমে আবিষ্কার করে ফেলে এবং সরাসরি হাউজ অফিসে জমা দিয়ে দেয়।ক্ষুদ্ধ হিটলার এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে হাউস মাস্টারের বেদম প্রহারের সম্মুক্ষীন হন।এই নিদারুণ প্রহারের ফলেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে আর্মিতে গিয়ে ক্যু করে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে এর শোধ নিতে হবে।

মনে মনে এই সংকল্প নিয়ে তিনি আই এস এস বি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং দা রেস্ট ইজ হিস্টোরি!

উসাইন বোল্ট

রংপুর ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ছাত্র উসাইন বোল্ট শুরুতে ছিলেন হাউস টিমের ক্রিকেটার।ফাস্ট বোলিং ছিল তাঁর অত্যন্ত প্রিয়।কিন্তু বলের গতির চাইতে প্রায়শঃই তাঁর রান-আপের গতি বেশি হওয়াতে প্রথম প্রথম ব্যাটসম্যানেরা ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও পরের ওভারগুলোতে তাঁর বল পিটিয়ে তামাতামা করত।একদিন এভাবে লম্বা রান-আপে বল করতে গিয়ে তিনি তালুকদার স্যারের নজরে পড়ে যান।তালুকদার স্যার তখন তাঁকে ক্রিকেট ছেড়ে আসন্ন ইন্টার ক্যাডেট কলেজ এথলেটিক্স মিটে ১০০ মিটার দৌড়ে অংশগ্রহন করতে উৎসাহিত করেন।

সেই আইসিসি এথলেটিক্স মিটে ক্যাডেট উসাইন(মতান্তরে হোসেন) বোল্ট (মতান্তরে বল্টু) রেকর্ডসহ স্বর্ণপদক লাভ করেন এবং দা রেস্ট ইজ হিস্টোরি!

প্রিয় পাঠক,বিদেশি সেলিব্রিটিদের কথা তো হল,এবার আসুন দেখি চৌধুরী জাফরুল্লা শরাফতযদি ক্যাডেট কলেজের ছাত্র হতেন তাহলে কি হতঃ

মাত্র ১০ কেজি ওভারওয়েট ক্যাডেট জাফর তার গদাইলস্করি চালের কারণে বহুবার হাউস টিমের বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁডিয়েছিল।শেষে টিমমেটরা বিরক্ত হয়ে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবে দল থেকে তাকে বাদ দেবার সিদ্ধান্ত নিল।প্রত্যেক ক্যাডেটের ভেতরেই যেহেতু একটি বাঘ লুকিয়ে থাকে-জাফরের ভিতরে লুকিয়ে থাকা বাঘ তাকে পরামর্শ দিল-আরে ব্যাটা খেলোয়াড় হতে পারিস নি তো কি হয়েছে-কমেন্ট্রি দিয়ে মাঠ কাঁপিয়ে দে!পরামর্শটা জাফরুল্লার খুব মনে ধরল-আর মনের ভেতরের এই ইচ্ছার কথা একদিন দোনামোনা করে সে তার জুনিয়র ক্লাস সেভেনের ক্যাডেট খোদাবক্সের সাথে শেয়ার করে ফেলল।নিজ ব্যাচের ক্রিকেট দল থেকে বাদ পড়া খোদাবক্সও এরকম কিছু একটাই ভাবছিল মনে মনে।দুজন মিলে হাউসের ড্রাইং রুমের আয়নার সামনে অনেক অনুশীলন করে পরিক্ষামূলকভাবে ইন্টার হাউস ক্রিকেটের জুনিয়র গ্রুপে একটা ম্যাচে ধারাবিবরণী দিল।

সেই ধারাবিবরণীতে সারা কলেজ মাত এন্ড দা রেস্ট ইজ হিস্টোরি!

এই বেলা চুপে চুপে একটা কথা বলি।এই ব্লগের একজন জাফরুল্লা শরাফতকে নিয়ে শুধু লেখা-ই দেননি,আমি গোপন সূত্রে খবর পেয়েছি যে জাফরুল্লা শরাফতের অনুকরণে ধারাবিবরণী দিতেও নাকি ইনার জুড়ি নাই।সিসিবি ইফতারে এই নিয়ে উনাকে চেপে ধরলেও রোজার অজুহাত দিয়ে উনি কোনরকমে পিছলিয়ে যান।আমি ব্লগের সবার কাছে আবেদন করছি-আগামী গেটটুগেদারে এই লোককে জাফরুল্লা শরাফতের স্টাইলে ধারাবিবরনী দিতে বাধ্য করা হোক-এমন প্রতিভা লুকিয়ে রাখার নয় বরং তা চোখ দিয়ে দেখার মত জিনিস(কপিরাইট-বুঝতেই পারছেন!)

উফ,বুঝতেই তো পারছেন আমার বাকি পোস্টগুলোর মত এটাও জন্মদিন পোস্ট-এত ডাউট কিসের তাহলে?

জি হ্যাঁ, আজকে সিসিবিতে জাফরুল্লা শরাফতকে অমর করা ব্লগের লেখক আমিন ভাই(৯৬-০২) এর শুভ জন্মদিন।

বল মিড উইকেট অঞ্চল দিয়ে সোজা সীমানার বা-ই-রে থুক্কু হযাপি বাড্ডে আমিন ভাই!

১২,১৯৮ বার দেখা হয়েছে

১০৯ টি মন্তব্য : “দা রেস্ট ইজ হিস্টোরি!”

  1. রকিব (০১-০৭)

    জন্মদিনের পোষ্টে পত্থম। 😀
    শুভ জন্মদিন আমিন ভাই। এইভাবে যুগ যুগ ধরে আপনার জন্মদিন পালন করার প্রত্যাশা করতেছি।
    এখন কেক-কুক আর মুস্তাকিম এর ভাপ খাওয়ান। 😀 😀
    অফটপিকঃ মাস্ফ্যুদা আপনে মিয়া আসলেই বস।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    হাহাহা, নিউটনের টা এইটা কি লিখছিস জামাই! মাথায় হেলমেট আর লুংগি দিয়া পাগড়ি না থাকলে শুধু ক্যাপ দিয়া ডাব আটকানি =)) =))

    লেখা জুইতের হইছে,
    সো, হেপি বাড্ডে আমিন :clap: :clap: আরো বড় হ, আর কামরুলের সাথে তিন প্রহরের বিল দেখতে যাওয়ার তৌফিক প্রাপ্ত হ। 😀
    এখন সিওর পোলায় আইসা বলবে, ব্লগিং এ টিম পি না, কারেন্ট নাই, ব্লা ব্লা ব্লা 😀 😛


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  3. ছেলেবেলা থেকেই আর এম গুপ্তা রচিত বড় বড় মানুষের ছোট ছোট বইয়ের প্রতি তাঁর ছিল অদম্য আকর্ষণ।এই আকর্ষণ মেটাতে তিনি এসব বই কেবল সংগ্রহই করতেন না,নিজ থেকে এসব গল্পের উপর ভিত্তি করে চিত্রাঙ্কন করে সেগুলো ক্যান্টিন কূপনের বিনিময়ে সমমনা ক্যাডেটদের কাছে বিক্রিও করতেন।একবার হাউস বেয়ারা হানিফ ভাই তাঁর এই বই এবং চিত্রের ভান্ডার দুর্ঘটনাক্রমে আবিষ্কার করে ফেলে এবং সরাসরি হাউজ অফিসে জমা দিয়ে দেয়।ক্ষুদ্ধ হিটলার এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে হাউস মাস্টারের বেদম প্রহারের সম্মুক্ষীন হন।এই নিদারুণ প্রহারের ফলেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে আর্মিতে গিয়ে ক্যু করে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে এর শোধ নিতে হবে।

    :pira: :pira: :khekz:

    জবাব দিন
  4. রাশেদ (৯৯-০৫)

    শুভ জন্মদিন আমিন ভাই 🙂 বহুদিন কোন পোস্ট দেন না তাই আজকে জন্মদিন উপলক্ষ্যে একটা পোস্ট আর ফ্রীজ থেকে বের করে এক বাক্স মিষ্টি দেন 😀


    মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

    জবাব দিন
  5. জাবীর রিজভী (৯৯-০৫)

    আপনেরা যারা এখনো জানেন না তদের জ্ঞাতার্থে জানাইতেছি, আজ সিসিবির সবাইরে আমিন ভাই ইফতারের দাওয়াত দিছেন। ভেন্যু পরবর্তীতে আমিন ভাই জানিয়ে দেবেন,ইন্স্ল্লাহ। :grr:

    জবাব দিন
  6. দিহান আহসান

    শুভ জন্মদিন আমিন ভাইয়া 😀 :party: দেরীতে আসলাম ...

    ম্যাশ পটেটো কি লিখা দিলিরে, আবার দেখি ফর্মে ফিরে এসেছিস 🙂 তয় আমার টা বাদ গেসিলো, ঐটার জন্য দেরীতে হলেও তোলে পাঙ্গামু নাকি ভাবতেসি :grr:

    জবাব দিন
  7. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    লেট করে ফেললাম মনে হয়... আমিন, শুভ জন্মদিন :party:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  8. রাহাত (২০০০-২০০৬)
    শতেক সন্তানের জনক হও এই দোয়া করি

    ফয়েজ ভাই, ছোট পোলা হইয়াও একটা কথা কই। এইটা কি দোয়া করলেন না কি............................. :no: :no: দেশে আর মানুষের থাকনের জায়গা নাই রে ভাই। :no:

    জবাব দিন
  9. তৌফিক (৯৬-০২)

    দেরী হইলেও শুভ জন্মদিন আমিন। মোবাইল নেই নাই এখনো, নিলে আপডেট পাবা। দাওয়াত-কাউন্টার দাওয়াত, জ্বর- এইসব নিয়া ব্যস্ত এখন। ঈদের পর দেখা করার আশা রাখি। 🙂

    জবাব দিন
  10. রেজিস্টার করেছি, নিজের পার্সোনাল ব্লগ পেইজও তৈরী হয়েছে। কিন্তু লগ ইন করতে পারছি না। লগ ইন ইনফরমেশন সব ঠিকঠাক আছে, আমাকে পাঠানো ইমেইল অনুযায়ীই লগ ইন করার চেষ্টা করেছি। সমাধান দেয়ার জন্য অগ্রিম ধন্যবাদ। 🙂

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।