দেশে ফেরার গল্প – তিন

দেশে ফেরার গল্প – দুই

ট.
অনেকদিন পর দেশের সকালবেলার নিরেট আলো চোখে এসে লাগলে যে কি ভাল লাগে তা বলে বোঝাবার না। সকাল ব্যাপারটাই আসলে খুব স্নিগ্ধ। কেমন মোলায়েম পেলব আলো, নতুনদিনে জেগেওঠা মানুষজন, শহরের ব্যস্ত হয়ে ওঠার প্রস্তুতি – সব মিলে বেশ একটা আয়োজন। এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় যাচ্ছি। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে প্রথম চোখে পড়লো এয়ারপোর্টের মুখেই বেরিয়ে হজ্জ্ব ক্যাম্প-এয়ারপোর্ট এবং এয়ারপোর্ট-উত্তরা সড়কের সংযোগে যেখানে লালনের ভাষ্কর্য হবার কথা ছিল সেখানে কেমন যেন বাইন মাছের মতো পেঁচানো পেঁচানো একটি স্থাপত্য। জিনিসটা কি আমি তখন ধরে উঠতে পারিনি। পরে শুনি ওটা নাকি আরবি ক্যালিগ্রাফির কি একটা স্থাপত্য।

যে দেশের নাম বাংলাদেশ, যে দেশের শতকরা আশিভাগের বেশি মানুষ বাংলা ছাড়া দ্বিতীয় কোন ভাষা জানে না সে দেশের এয়ারপোর্টে ঢুকতে আরবি লেখা স্থাপত্যের কি শানেনুযূল থাকতে পারে তা বোঝা সত্যিই দায়। ভাষার সাথে সম্পর্ক খুঁজলে বরং ফার্সি এবং ইংরেজির সাথে আমাদের একটা সম্পর্ক ছিল জোরালোভাবে – এদুটি আমাদের প্রশাসনিক ভাষা ছিল অতীতে। এদুটি ভাষায় কথা বলতে পারা নাকি আভিজাত্যেরও প্রতীক ছিল। কিন্তু যেখানে সেখানে আরবি মারা নিঁখাদ ধর্মীয় লেবাসের বালখিল্য ছাড়া কিছু না। এসব বালখিল্য একদল মানুষকে দেয়ালে চিকা মারার সাহস করে দেয় – বাংলা হবে আফগান, আমরা হবো তালেবান – তখন সেসব দাবিতে আমাদের সার্বভৌমত্বে আঘাত, ঝুঁকি তো দূরের কথা আদরের টোকাটাও অনুভব করি না। কিংবা কৌশলে আমাদের কাছে জামাত এবং ইসলামকে সমার্থক করে ফেলা হয়। আমরা সহানুভূতিশীল হয়ে পড়ি ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি। কিন্তু এভাবে ধর্ম বিকিকিনি করে আর কত দিন! শেষপর্যন্ত আমরা কিনা পরাজিত হলাম একদল মানুষের কাছে যারা বাইতুল মুকাররমে জুম্মার নামাজ পড়ে ইসলাম রক্ষার নামে লগি বা হাতে স্যান্ডেল নিয়ে মিছিল করে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে পল্টনের হোটেলে উদরপূর্তি করে বাড়ি ফেরে তাদের কাছে।

আমরা বাঙালি মুসলমান সবসময় আত্ম-পরিচয়ের সংকটে ভূগি। বাঙালি না মুসলমান? কোনটি আমি? বাঙালিত্তের চর্চা বেশি হলে মনে ভয় ধরে এইরে এই বুঝি ধর্মটা গেল গেল। বাঙালির মনের এই সংশয়কে পুঁজি করে খায় ধর্ম-ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ – দালাল শ্রেনীপেশার ধান্ধাবাজ লোকজন। দেশে যতো ‘ সিমবোলিক ইসলামাইজেশন’ হয় আমরা ততো আত্ম-তৃপ্তির ঢেকুর তুলি – বেহেশতে যাওয়া এবার ঠেকায় কে। একেবারে লড়কে লেঙ্গে বেহেশতের বাসস্থান। লাড়ায় তাকবীর! সাধারণ বাঙালি মুসলমান আত্মপরিচয়ের রাজনীতিতে ঘুরপাক খেয়েই চলছে অবিরত দিনের পর দিন। আর তার ফসল তুলে নেয় গুটি কয়েক মানুষ। আমরা বার বার বুঝতে ব্যর্থ হই এই ‘ইসলামাইজেশনের’ রাজনীতি আসলে কার? আমার না অন্যের? যেদেশের মানুষ ভাষা আন্দোলন করলো, মুক্তিযুদ্ধ করলো সে দেশের গুরুত্বপূর্ন প্রতীকি ব্যাপারগুলোতে কেন আরবি ভর করবে? বুঝতে ব্যর্থ হই, এর সাথে ধর্মচর্চার কোন সম্পর্ক নেই। এই ব্যাপারগুলো যে আসলে ধর্মীয় লেবাসে রাজনীতি ছাড়া কিছুই না এই বোধগম্যটুকু হবার জন্য আসলে কোন লেখাপড়ারও প্রয়োজন নেই। যে জিনিস আমাদের দেশের বাউল-ফকিররা অনায়েশে ধরতে পারে সেটা শিক্ষিত মানুষ চোখে পর্দা এঁটে, কানে ঠুলি পরে একপ্রকার ভনিতা করে যায় দিনের পর দিন। বঙ্গভঙ্গ, সাতচল্লিশের দেশ ভাগ, একাত্তরের স্বাধীন বাংলাদেশ, নব্বইয়ের গনতন্ত্র কিংবা বর্তমানের ডিজি[টাল] বাংলাদেশ – ফলাফল ‘থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়’।

বর্ডারলাইন

ঠ.
প্রবাসে অনলাইন সংবাদপত্র পড়ে পড়ে শহর ঢাকার যে বাস্তবতা মনের মাঝে তৈরি হয় তার চেয়ে বাস্তবের ঢাকা যেন অনেক অন্যরকম। স্বশরীরে গিয়ে অক্ষত থাকলে যেন মনে হয় ওতোটা সংকটময় না আমাদের শহর ঢাকা। কারণ কি, দূর থেকে সংবাদপত্রই প্রতিদিনকার ঢাকার একটি চিত্র মনের ক্যানভাসে এঁকে দেয়। তার মূল বিষয় থাকে ছিনতাই, ডাকাতি, হানাহানি, সহিংসতা, ঠকানো, জনপ্রতিনিধিদের মিথ্যাচার, দুর্নীতি। এগুলোই যেন ঢাকার দৈনিক চালচিত্র। এসব যে মিথ্যা তা কিন্তু নয়। কিন্তু এগুলো দূর থেকে এমন একটি বাস্তবতা তৈরি করে দেয়, যেন দেশে এসব ছাড়া আর কিছু নেই। রাস্তায় হাঁটলে তারপর মনে হয় – এই তো দিব্যি চলাফেরা করতে পারছি। ঘুরতে পারছি। হাসিহাসি মুখে আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত হচ্ছে। যদিও দেশের সমাজ অর্থনীতির দিকে তাকালে সেই দিবাস্বপ্ন ভাঙতে সময় লাগে না খুব বেশি।

তৃতীয় বিশ্বের সবদেশের মানুষই শহরে থাকতে ভালবাসে। এটাই তৃতীয় বিশ্বের মানুষের প্রবণতা – নিজের দেশে এবং প্রবাসে একইভাবে এটা কাজ করে। একদম কেন্দ্রীভূত হয়ে থাকতে ভালবাসে। আমাদেরও একই ব্যাপার – আমরা শহরে থাকা, ঢাকায় থাকা পছন্দ করি। ঢাকা শহর দিয়েই আমরা সব বিচার করি। ঢাকা হলো মূখ্য শহর। বাকি সবকিছু গৌণ। বাদবাকি নগর, মফস্বল, গ্রাম-গঞ্জ, বন্দর সবই গৌন। আমার যেসব বিদেশি বন্ধু ঢাকায় বা বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়েছে কিংবা কাজে গিয়ে থেকেছে সবাই বলে যে তোমাদের গ্রামগুলো এতো সুন্দর। এতো চমৎকার ল্যান্ডস্কেপ। মানুষগুলো দারুণ। কিন্তু তোমাদের ঢাকা একটি ‘অসম্ভব’ নগরী। দীর্ঘসময় বসবাসের জন্য ভাল না। তবে খুব জমজমাট – সেটা দেখা এক নতুন অভিজ্ঞতা – ক্রেইজি ট্রাফিক। … আমি ফিরে আসার পর ঢাকায় গিয়ে থাকা এমন আমার এক কানাডীয় বন্ধুর সাথে অটোয়ার মুনিস বে-তে একটি বিকাল কাটাতে গিয়েছিলাম। আমাকে দেখেই যেন সেদিন সে যেন বাংলাদেশকে দেখছিল – ‘আই লাভ বাংলাদেশ, ম্যান! ইউ হ্যাভ এ্যা গ্রেইট কান্ট্রি’। হ্যাঁ, গ্রেইট কান্ট্রি তো বটেই – আমার ঢাকার এক বন্ধুর মতে আমাদের সামাজিক জীবনের সবথেকে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো আমরা এখন সবক্ষেত্রে নীতিহীনতাকে উৎসাহিত করি। বাদবাকি সমস্যা ঠিক করা যায়। এই জিনিস মনে স্থায়ী হয়ে গেলে তা ঠিক করা আসলে মুশকিল। কথাটা হয়তো মিথ্যে না – কারণ আমাদের মধ্যবিত্তের প্রিয় শব্দসম্ভারে একটু ‘সিস্টেম করা’, ‘খুশি করে দেয়া’, ‘পারস্যুউ করা’, ‘ধরাধরি করা’, ‘ম্যানেজ করা’ প্রভৃতি বিশেষ তাপর্যপূর্ন। এটাতো সত্যি, ঢাকাতে অফিস-আদালতে-হাসপাতালে নিজের লোক না থাকলে যে কোন কাজই অত্যন্ত কঠিন। এমনকি ন্যায্য প্রাপ্য সার্ভিসটুকু।

ফুল বালিকা

দ.
ঢাকা শহরকে কর্পোরেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো খুবই উপর্যুপরিভাবে ব্যবহার করে চলেছে। সে ব্যবহার শ্রীহীন, নির্লজ্জ, নগ্ন, কদর্য একদম। ঢাকা যেন দেওলিয়া অর্ন্তসারশূন্য এক নগরী। তার কিছু নেই। ঐতিহ্য নেই। ইতিহাস নেই। সাংস্কৃতিক ধারা নেই। দেখলে মনে হয়, সব ছাপিয়ে আছে শুধু বিজ্ঞাপন। যেন একটি বিজ্ঞাপনের নগরী। কিন্তু সে বিজ্ঞাপন খুব যে নান্দনিক তা কিন্তু নয়। বড় দৈন্য অবস্থা। বিজ্ঞাপন যেন ঠিকাদারি নিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে আমাদের আবেগ, ইতিহাস, অতীতের গৌরবকে … মানুষকে এসবের সাথে কানেক্ট করে মূলতঃ ব্যবসায়িক ফায়দা লোটে। এগুলো সব দেশেই আছে, কিন্তু আমাদের দেশে এগুলো এতো ভয়াবহভাবে ব্যধির মতো চেঁপে বসেছে যে ন্যুনতম সৌজন্যবোধটুকু কাজ করছে না। ঢাকায় ঘুরে বেড়ালে এ প্রশ্ন মনে জাগতে পারে, আমাদের দেশে কি মুঠোফোন ছাড়া আর কিছু নেই? মুঠোফোন আসার আগে আমরা কি ছিলাম?

এবার চোখে পড়লো, সারা ঢাকা শহরময় রবির বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। বড় নির্লজ্জভাবে। রবি। নাম এবং লোগো পরিবর্তনে সারা ঢাকা ছাপিয়ে দেয়া হয়েছে বিজ্ঞাপনী বর্জ্যে। একটি মেয়ে বিলবোর্ডে হাসিহাসি মুখে সেলফোনে কথা বলছে। আরেকটি বিলবোর্ডে মেয়েটি কেমন যেন বেগুন গাছের ঢলে পড়া রোগের মতো বাকিয়ে রয়েছে – সেটির অর্থ হলো বন্ধুদের সাথে সবচেয়ে সাশ্রয়ী খরচে কথা বলা যায় রবিতে কথা বললে। আরেকটি বিলবোর্ডে সেই মেয়েটি রাগ করে ক্ষেপে তাকিয়ে আছে – তার অর্থ হলো ফোনে অপ্রত্যাশিত কল তাকে বিরক্ত করে। তারজন্যও ব্যবস্থা আছে – কলব্লক। মেয়েদের উত্তক্ত করা হয়, যেটি খারাপ কাজ। কিন্তু তার মাঝেও নিহিত আছে ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি এবং বিজ্ঞাপন। এটাই দেশের একটি বাস্তবতা।

শহরবন্দী বিজ্ঞাপনের রঙবাহারি

ড.
আগে মুঠোফোন বলতে ছিল গ্রামীন, সিটিসেল, একটেল, বাংলালিংক, টেলিটক, এবং ওয়ারিদ। এবার গিযে দেখলাম একটেলের নাম হয়েছে রবি। ওয়ারিদ হয়েছে এয়ারটেল। আরো দু’একটি সার্ভিস প্রোভাইডারেরও সম্ভবত মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। সেই সাথে পরিবর্তন হয়েছে গ্রাহক সেবার মান। মুঠোফোন কোম্পানিগুলোর গ্রাহক সেবার মান বেশ খানিকটা পড়ে গিয়েছে বলে এবার মনে হয়েছে। বার বার সংযোগ কেটে যায়। রং নাম্বারে ফোন চলে যায়। কানেকশনে অনেকসময় নয়েজ ঢুকে পড়ে ঠিকমতো শোনা যায় না। আগে এগুলো কম ছিল। গ্রাহক বেড়েছে কিন্তু ক্যাপাসিটি বাড়েনি সে তুলনায়।

মুঠোফোন আমাদের জীবনে অনেক পরিবর্তন এনেছে। সামাজিক যোগাযোগের বেশিরভাগ ধরনগুলো মুঠোফোনে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। মেয়েদের উত্তক্ত করা কিংবা প্রতারণা করার ব্যাপারটিও মুঠোফোন ব্যবহার করে করা হয়। আবার শুধু মুঠোফোনে কথা বলেই হয়তো অনেক মানুষের প্রেম হয়, ঘরসংসার হয়। আমার এক পৌড়া আত্মীয়াকে ফোন করে উত্তক্ত করে একটি ছেলে। ছেলেটির বয়স বড়জোর ষোল থেকে বিশের কোঠায় হবে হয়তো। ভদ্রমহিলা একসময় রেডিওতে অনুষ্ঠান করতেন। উপস্থাপনা করতেন। এখনো টেলিফোনে তার গলার স্বর অনেকটা ইউনিভার্সিটি পড়া তরুনীর মতো। এবং বেশ স্পষ্ট শুদ্ধ বাংলায় কথা বলেন। এই হলো তার কাল। এখন এই ছেলের ফোনে ভদ্রমহিলা জর্জরিত। ছেলেটির দাবি সে শুধু ভদ্রমহিলার বন্ধু হতে চায় এবং তাকে মিথ্যে করে বলা হচ্ছে যে ফোনের অপর প্রান্তের মেয়েটির বয়স ষাটোর্দ্ধ। ভদ্রমহিলা তাকে অনেক ধৈর্য্য সহকারে বুঝিয়ে যাচ্ছেন – বাবা, তোমার চেয়ে বয়সে অনেক বড় বড় ছেলেমেয়ে আছে আমার।… কিন্তু কে শোনে কার কথা! শেষে না পেরে ভদ্রমহিলা বললেন, আচ্ছা, আমি তোমার বন্ধু। এবার তুমি খুশি, বাবা? তো সেই ছেলের পরবর্তী আবদার – তাহলে বসুন্ধরা সিটিতে দেখা করতে আসো? সব শুনে, আমরা কিংকর্তব্যবিমুঢ় – হাসবো না রাগ হবো?

বাসস্টপে ঘরদুয়ার

ঢ.
আগে হয়তো অনেক কিছুই চোখে পড়তো না, গায়ে লাগতো না। কিন্তু এখন দিনদিন একটু একটু করে একটা দূরত্ব তৈরি হচ্ছে হয়তো দেশের সাথে সেই কারণে কিছু জিনিস চোখে অনায়েশে ধরা দেয়। এই যেমন, পাবলিক প্লেসগুলোতে আমরা খুব জোরে কথা বলি। আমি জানি, আমরা এভাবেই অভ্যস্থ। জোরে জোরে আমরা সুপারিশ, তদবিরের কথা বলি। জোরে গালিগালাজ করি। আর ভালবাসার কথা বলি নিচু গলায় চুপি চুপি। রাস্তায় প্রকাশ্যে কেউ জলবিয়োজন করলে আমরা সেটিকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখি, কিন্তু প্রকাশ্যে প্রেমিক-প্রেমিকা চুম্বন করলে আমাদের জাত চলে যায়। আমার এক বন্ধুর শেতাঙ্গ স্ত্রী। যেবার সে প্রথম স্ত্রীকে সাথে করে দেশে যায়, বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক বুঝিয়ে পড়িয়ে সাথে করে নিয়ে গিয়েছে। তার স্ত্রীও রীতিমতো বাংলা শিখে তারপর গিয়েছে। তো তারা ঢাকার রাস্তায় রিকশায় একসাথে ঘুরছে। এক পর্যায়ে বন্ধুর স্ত্রী চিন্তিতভাবে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলো, ঢাকায় এতো এতো মানুষের শরীর খারাপ করছে কেন? বন্ধু উত্তরে বললো, কই? কার শরীর খারাপ? বন্ধু-পত্নী বললো – এই যে একটু পর পর মানুষ রাস্তার পাশে বমি করছে। বন্ধু ততোধিক চিন্তিত হয়ে বলে – তাই নাকি? আমি তো দেখলাম না। এরপর আর কাউকে দেখলে আমাকে বলো। কিছুক্ষন পর বন্ধু-পত্নী রাস্তায় আরেকজনকে বমি করতে দেখে বন্ধুকে দেখালো। বন্ধু হেসেই খুন – আরে না! ওরা রাস্তার পাশে বসে পিশু করছে। এই কথা শুনে তখন বন্ধুর স্ত্রীর চক্ষু চড়কগাছ।

নাম নাই

ণ.
টেলিভিশনের সাথে আমার একরকম সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিয়েছে অনেকদিন বলা যায়। টেলিভিশনের রিমোর্ট নিয়ে একধরনের প্রতিযোগিতা হয় সম্ভবত সব বাসাতেই। এই প্রতিযোগিতার ধরণ এক এক বাসায় একেক রকম। কোন বাসায় কার্টুন চ্যানেল বনাম জি-বাংলা (ভারতীয় বাংলা সিরিয়াল), কোন বাসায় স্পোর্টস চ্যানেল বনাব বোম্বের হিন্দি চ্যানেলগুলো (হিন্দি সিরিয়ালের জন্য), কোন বাসায় ইংলিশ/মুভি চ্যানেল বনাম বাংলা চ্যানেল। হিন্দি এবং বাংলা দুই জাতীয় সিরিয়ালগুলোই মহা আজগুবি কিন্তু সেগুলোর দর্শকচাহিদা এবং কাটতি আকাশ ছোঁয়া। অনেকেই টিভি সিরিয়ালে সাংঘাতিক আসক্ত। আমাদের বাসার কাজের মেয়ে লায়লা সাবলীলভাবে হিন্দীতে কথা বলে। এছাড়া কেউ সিরিয়াল দেখতে বসলে যদি সে আগের পর্ব মিস করে থাকে তাহলে সে লাইভ রিক্যাপ পরিবেশন করে থাকে। সে বাসার ছোটদের সাথে এবং তার সহকর্মীদের সাথে দিব্যি হিন্দিতে কথাবার্তা চালায়। শুধু চালায় না হিন্দি স্পিকিংয়ে দশে আট পাবে যদি হিন্দি লাংগুয়েজ টেষ্ট দিতে বসে।

আমার মার কখনো তেমন টেলিভিশন প্রীতি ছিল না। একসময় শুধু সিনেমার পোকা ছিল। সেটাও ভিসিআর/ভিসিপি যুগের কথা। তার আগে সম্ভবত হলে গিয়ে সিনেমা দেখতো। অবসর জীবনে এখন মোটামুটি কলকাতার বাংলা সিরিয়াল নির্ভর সকাল-সন্ধা পার করে। একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম – এগুলোতে কি আছে? এতো এন্টারটেইনিং কি? প্রশ্ন সম্ভবত খুব একটা পছন্দ হয় নাই। উত্তর এড়িয়ে গিয়েছিল। নাস্তা করে ডাইনিং টেবিলে বসে কথা বলা শুরু করেছি, আমার মা কেমন উসখুস করা শুরু করে দিল। কি ব্যাপার? কারণ আর কিছু নয়, আগের রাতে কলকাতার কোন বাংলা সিরিয়াল মিস হয়ে গিয়েছে মেহমান আসায়। এখন ওটার পূর্নসম্প্রচার হচ্ছে। আমার ধারণা এমন ব্যাপার সব বাসাতেই হয়তো কম বেশি। লন্ডন থেকে পড়ালেখার পাট চুকিয়ে ঢাকায় স্থিতি হওয়া এক বন্ধুকে বললাম – অবস্থা এমন কেনরে? আগে সবাই কি এতো টেলিভিশন পোকা ছিল? তার উত্তর – দেশে ফিরে প্রথম প্রথম আমারো এগুলো চোখে লাগতো। এখন ঠিক হয়ে গেছে। মানুষের কিছু করার নেই। কোথাও ভাল বিনোদনের সুযোগ নেই। কি করবে মানুষগুলো বসে বসে?

দেশের টিভি চ্যানেলের হিসেব রাখতে কেমন খেই হারানোর দশা। এতো এতো টিভি চ্যানেল। অনেকগুলো নতুন। কিন্তু সেই অর্থে আর চমক সৃষ্টি করতে পারেনি হয়তো কেউ। একুশে যেমন আলোড়ন তুলেছিল সেভাবে আর কেউ পারেনি। একুশের মানুষগুলো বাকি চ্যানেলগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছে। টেলিভিশনের সংবাদগুলো এক ঘেয়েমিতে ভরা। একই কাঠামোতে সেই সংবাদগুলো পরিবেশিত হয়ে যেতেই থাকে। খুব রিপিটেটিভ মনে হয়। আমার মেজ ভাই সন্ধা থেকে রাত ১১টা বা ১২টা অবদি সেই খবর চ্যানেল পাল্টে পাল্টে দেখতে থাকে। সিরিয়াল দেখার মতো সংবাদ দেখাও একটা নেশার মতো। একই খবর চ্যানেল পাল্টে পাল্টে বার বার দেখছে। সংবাদগুলোতে আসলে ইন্টারন্যাশনাল ডেক্সের বাইরে বোধহয় খবর থাকে আসলে কম। গুরুত্বপূর্ন-অগুরুত্বপূর্ন যাই হোক, একটা মিটিং কাভার করা হলো সেটাই একটা সংবাদ। ভাল রির্পোটিং যে একেবারে হয় না তা বলছি না। অবশ্য মিটিং কাভার করে সংবাদ বানানো বোধহয় বাজেটের দিক দিয়ে সাশ্রয়ী।

ত.
মানুষের মুখে মুখে অনেক বেশি বাড়ি, গাড়ি, এ্যাপার্টমেন্টের গল্প ঘুরেফিরে। এসব দিয়েই হয়তো সাফল্য নির্নিত হয়। সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পায়। আমার মধ্যবিত্ত বাপ, চাচা, মামাদের প্রজন্মে দেখেছি সারাজীবন সঞ্চয় করে শেষ জীবনে একটি মাথা গোজার ঠাঁই করেছেন। অনেকে পারেনওনি। তাদের ততো আক্ষেপও হতে দেখিনি। এখন দেখছি আমার বয়সী অনেকেই নিজে এ্যাপার্টমেন্ট কিনে থাকছে ঢাকায়। সেটা তার থাকতেই পারে, এটা তো একটি প্রয়োজনও বটে – কিন্তু তাই বলে সেটি কিভাবে জীবনের সফলতার মাপকাঠি হতে পারে? কেউ এ্যাপার্টমেন্ট কিনে ঢাকায় স্থায়ী হলে কি দেশের অর্থনীতি মজবুত হয়? দেশের অর্থনীতি মজবুত বা দূর্বল যাই হোক – এটাই এখন প্রবনতা। বাড়ি, গাড়ি এসব চাই। কে কার আগে পারে। কিন্তু চিত্তের বিকাশ চাই না।

আমি যখন ঢাকায় চাকরি করতাম একটি অফিসে তখন দুই তিন ডেক্স দূরে এক ভদ্রলোক বসতেন। তিনি ছিলেন মিডিয়া রিলেশন্সের দায়িত্বে। কোন এক অজানা কারণে তিনি আমার প্রতি কিছুটা কিছুটা স্নেহশীল ছিলেন। মাঝে মাঝে দেখতাম তিনি কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে খুব খুশি হতেন। পরে একদিন ভাঙলেন যে শেয়ার ব্যবসা করেন। আমাকে শেয়ার ব্যবসায় নামতে বললেন। আমি যথারীতি এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিলাম। তারপর দেখি আমার আশপাশের বেশ ক’জন শেয়ার ব্যবসায় নেমে পড়েছেন। আমার কলেজের এক বন্ধু সে তখন আইভোরিকোষ্টে মিশনে। অনলাইনে কথা হচ্ছে – সে ওখানে বসে শেয়ার ব্যবসা করছে। এবং শেয়ারবাজারের ফজিলত কুদরতসহ কেন এই কর্মযজ্ঞে তরুন সমাজের নেমে পড়া উচিত নানাভাবে আমাকে বুঝালো। আশপাশের মোটামুটি অনেক মানুষই শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেছিল। আমার এক আত্মীয় শেষে বললো তোমার যখন এই ব্যাপারে আগ্রহ নেই তোমার নামে একটা বিও একাউন্ট খুলে আমি চালাবো – তাহলে আমার কিছু উপকার হবে। বললাম – আমার কোন ভেজাল যদি না হয় আমার নামে যতোগুলি খোলা যায় সব খুলে ফেলেন। যাইহোক, শেয়ারে আগ্রহ না থাকায় এটা নিয়ে কখনো তেমন মাথাব্যথা ছিল না। তবে দিনদিন দেখতে থাকলাম কিছু কিছু মজলিশে শেয়ার ব্যবসায় না থাকার দরুন গল্পগুজবে কোনঠাসা হয়ে কেমন যেন বর্তমান সরকারের দেয়া ‘ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বায়’ রুপান্তরিত হয়ে পড়ছি। তারপর তো দেশান্তরী হলাম।

এরপর এবছর শেয়ারবাজারে ব্যাপক ধ্বস। মানুষজন অনেকে ধরা খেলো। কিন্তু দেশে গিয়ে এবার দেখলাম শেয়ারবাজার নিয়ে সবার একটি অঘোষিত নীরবতা। পরিচিত শেয়ার ব্যবসায়ীরা যেন কিছুই ঘটেনি এমন করে মুখে কলুপ এঁটে বসে আছে। বা এমনটাই তো ঘটার কথা ছিল। পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম – সবাই এতো চুপ ক্যান? কাহিনী কি? এরাই শেয়ারে বিনিয়োগ করিনি বলে আমাকে আগে কেউ ‘বলদ’ কেউ ‘বেশি বড়লোক’ বলছিল। সে তখন বিশেষজ্ঞ মতামত দিল – তুই জীবনে ক’বার কেমন করে প্রেমে ব্যর্থ হইছিস, মানুষ দেখলেই কি সেইটা নিয়া আলাপ পাড়িস? বললাম – না। কখনোই না। বন্ধু বললো – তাইলে ভায়া, কেন এক্সপেক্ট করো যে তুমার সাথে পুলাপান শেয়ার ধরা খাওয়ার আলাপ পাড়বে?

থ.
ঢাকায় অনেক বেশি গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। সে তুলনায় পাবলিক সার্ভিসের অবস্থা আরো ন্যুজ হয়ে পড়েছে। একটি গাড়িতে একটি বা দুটি করে মানুষ চলাচল করে। ভাল বাস সার্ভিসের সংখ্যা সে তুলনায় প্রয়োজনের অনেক কম। যেগুলো আছে সেগুলো ঠিক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের একাএকা যাতায়াতের ঠিক উপযোগী না মান এবং পরিবেশের কারণে। যেসব মেয়ে নিরুপায় তারাই চড়ে বাসগুলোতে। সিয়েনজি দেখলাম খাঁচার মতো বানানো হয়েছে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে। দরজা খুলে ঢুকে আবার লাগিয়ে দিতে হয়। নিরাপত্তা কতটুকু নিশ্চিত হয়েছে জানিনা, তবে ট্রাফিক সিগনালের ভ্রাম্যমান ফকিরের নাগালের বাইরে থাকা যায় খানিকটা।

পথের মাঝে পথ চলা

মানুষের ভিতর রেস্টুরেন্টে খাবার প্রবণতা উত্তরোত্তর বেড়েছে। ঢাকাতে বেড়েছে ক্যাফে কালচারের প্রবণতা। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পারলাম, ক্যাফেতে পহেলা বৈশাখ এবং একুশে ফেব্রুয়ারি পালন হয় এখন। ঢাকায় চাকরিতে ঢোকার পর টাইম আউটে এবং মুভেনপিকে যাওয়া পড়তো মাঝে মাঝে মূলতঃ কলিগদের সাথে। কালেভদ্রে বন্ধুবান্ধবের সাথে। তার আগ পর্যন্ত ইউনিভার্সিটিতে থাকতে মোটামুটি আইবিএ ক্যান্টিন, মধুর ক্যান্টিন এবং শর্মা হাউস পর্যন্তই দৌড় ছিল। কখনো-সখনো কফি ওয়ার্ল্ডে এবং ক্যাফে ম্যাংগোতে – খুব কম যদিও। এবার মানুষের মুখে মুখে ক্যাফে বারিসতা লাভাজ্জা, বিটারসুইট ক্যাফে, টেরা ব্রিসটো, ফিয়েসতা ক্যাফে, কতকি শুনলাম। বুঝলাম আমি পুরাই ব্যাকডেটেড – আগেই ছিলাম, এখন আরো বেশি।

দ.
বিদেশ থেকে মানুষজন দেশে ফিরলে সাধরনত হতাশই হয় বেশি দেশের অনেক কিছু নিয়ে। দেশটা তো গরিব দেশ। সবসময়ই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আমার চোখেও হয়তো তাই ব্যত্যয়গুলিই বেশি করে ধরা পড়েছে। কিন্তু সুন্দর কিছু নেই এমনটি মোটেই নয়। আমার এক কোর্সের শিক্ষক প্রফেসর লুইস ডে-লা-গোরগেনডিলা অভিবাসন এবং ডায়াসপোরা নিয়ে গবেষণা করেন। একদিন আমাকে বলেছিল – প্রতিটি প্রবাসীর কল্পনায় চিন্তায় দখল করে থাকে তার ফেলে আসা দেশ। এবং অদ্ভুতভাবে সেই ‘দেশ’ হলো সে তাকে শেষবার যেখানে রেখে এসেছিল। কিন্তু দেশ তো সার্বিকভাবে গতিশীল। প্রবাসীর যতো দিন যায় দেশের সাথে তার দূরত্ব বাড়তে থাকে। স্থানিক দূরত্ব তখন মানুষিক এবং কনসেপচ্যুয়াল দূরত্বে রুপ নেয়। কারণ চেনা সম্পর্কগুলো তার সাথে ঢিলা হতে থাকে এবং সেই সম্পর্কগুলো আরো নতুন সম্পর্কে ঢুকে পড়ে। দেশের জীবনধারায় এবং প্রবাসীর নিজের জীবনে পরিবর্তন আসে। ফলে প্রবাসীর সাথে সম্পর্কের ধরণে পরিবর্তন হয়। আর সমাজ, অর্থনীতি, শহর, গ্রাম সবকিছুর অনেক পরিবর্তন হয়। আবার প্রবাসও তার নিজের নয়। কিন্তু যে দেশে সে ফিরে যেতে চায় সে দেশকে সময় এবং স্থান দুই অর্থেই ফেলে রেখে এসেছে সে অনেক আগে। ফলে সে মানুষটি দেশ এবং প্রবাস নিয়ে সবসময়ই সংকটে আবর্তিত হয়। আমার অবশ্য দুবছর পর দেশে গিয়ে এসব কিছুই হয়নি।

একদিন বাসায় বসে আছি। বাসার সবাই অফিসে। হটাৎ তুমুল বৃষ্টি শুরু হলো। সেই বৃষ্টি ঘন্টার পর ঘন্টা চলতে থাকলো। একেবারে ঝুম বৃষ্টি। কি অসাধারণ অপার্থিব সেই বৃষ্টির রুপ। কি যেন একটা আছে সেই বৃষ্টিতে। মাটির গন্ধ। আমি জানালার শিক ধরে ঠায় দাড়িয়ে থেকে সেই বৃষ্টিকে দেখতে থাকলাম। রাস্তা প্রায় ফাঁকা। একটি দুটি রিক্সা মাঝে মাঝে যাচ্ছে, চালক একেবারে কাঁকভেজা। বাসার একপাশে একটি তিনকোন পার্কের মতো আছে। পার্কের মাঠে একদল ছেলে বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলছে। বিভিন্ন বাড়ির ছাদ থেকে বৃষ্টির পানি অবিরত ধারায় পড়ছে। বাসার পাশের একটি টিনের ঘরের চালে বৃষ্টি এক অনবদ্য মূর্ছনা তৈরি করেছে। আমি চুপচাপ উত্তাল মনে দাড়িয়ে থাকলাম। তার দুদিন আগে মাত্র দশ/পনের ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে এসেছি। যদি ঠান্ডা লেগে জ্বর হয়, এসব সাত-পাঁচ ভেবেটেবে সোজা ছাদে চলে গেলাম। কতদিন পর আবার ভিজলাম। এমন অপরুপ বৃষ্টি আর কোথায় পাবো। কানাডায় হয় বড়ই ছিঁচকাদুনে বৃষ্টি। সে বৃষ্টিতে মন উদাস হওয়া দূরের কথা, তিরিক্ষি মেজাজ ঠান্ডা করতেই দিন পার হয়ে যায়।

শহরবন্দী ফেরিওয়ালা

ধানমন্ডি দেখতে কি সুন্দর জুন-জুলাই মাসে। রাস্তার চারপাশটা সবুজ হয়ে থাকে একেবারে। রাস্তার গাছগুলো আগের চেয়ে অনেক বড় বড় হয়ে গিয়েছে। ঢাকায় হাতেগোনা কয়েকটা জায়গায় কিছু গাছপালা আছে রমনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ক্যান্টনমেন্ট। তার বাইরে চিড়িয়াখানা এবং বোটানিক্যাল গার্ডেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল থেকে নীলক্ষেত মোড় অর্থাৎ ভিসির বাসার সামনের ডিভাইডারটা যখন হয় আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। ডিভাইডার তৈরির আইডিয়াটা তেমন পছন্দ হয়নি তখন। সামছুন্নাহার হলের ছাত্রী নিপীড়নের জের ধরে আন্দোলনে যখন অস্ট্রালোপিথিকাস গোত্রভূক্ত অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয় তারপর ছাত্র আন্দেলনে যাতে রাস্তাটি আর যথেচ্ছভাবে ব্যবহৃত হতে না পারে তাই একটি যুতসই ডিভাইডার করা হয়। শামসুন্নাহার হলের ঘটনায় এই রাস্তায় ব্যাপক আন্দোলন হয়েছিল ২০০৩ সালে। এবার এতদিন পর দেখলাম ডিভাইডারটা আসলে হরেক গুল্ম এবং গাছে অপরুপ সেজে উঠেছে। সেই সৌন্দর্য্য দেখে পুরোনো রাগ পড়ে গেলো। ভারি সুন্দর হয়ে উঠেছে বাহারি রঙের পাতা এবং ফুলে।

২০০৪ সালে আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থবর্ষে। ডিপার্টমেন্টে আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালযের অধ্যাপক আসলো একটি শর্ট কোর্স করাতে ভাষাতত্ত্বের ভাষা সংগ্রহ কৌশলের উপর। ওয়ার্কশপের ফাঁকে ফাঁকে সেই অধ্যাপক তার বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্প বলে। বললেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারনেট আরো সহজলভ্য হওয়া উচিত। তার আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোন জায়গায় বসে ইন্টারনেট এক্সেস করা যায় কোন সংযোগ তার ছাড়াই। এমনকি ক্যাম্পাস বাসস্টপ কিংবা মাঠে বসেও। আমাদের কাছে তখন তো সেসব গল্প একেবারে সায়েন্সফিকশনের মতো। তখন সবসাকুল্যে টিএসসিতে একটি সাইবার ক্যাফে হয়েছে যেখানে মোটামুটি লাইন দিয়ে বসতে হয় আধঘন্টা একটি কম্পিউটারে সিরিয়াল পাবার জন্য। আর ছিল নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটের চিপা চিপা সাইবার ক্যাফে যেখানে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ধরা মাত্রই একটি পর্নসাইট পপ-আপ করতো। তো এবার গিয়ে দেখি টিএসসির মাঠে বসে সবাই ওয়াইফাই ব্যবহার করছে। হাতে হাতে ল্যাপটপ। ছেলেমেয়ে বসে গল্প করছে আর কম্পিউটারে কাজ করছে (হয়তো ফেসবুকিংই করছে সেটাওতো একরকম সামাজিকতা রক্ষার কাজ)। সন্ধার অন্ধকারে ল্যাপটপ যেন জোনাকি পোকার মতো আলো ঝিকমিক করছে টিএসসির সবুজ মাঠময়।

দেশে ফেরার গল্প এখানে সমাপ্ত।

৫,৪৫৬ বার দেখা হয়েছে

৩৯ টি মন্তব্য : “দেশে ফেরার গল্প – তিন”

  1. আজিজুল (১৯৭২-১৯৭৮)

    -আমরা বাঙালি না মুসলমান?
    "আমরা বাঙালি মুসলমান সবসময় আত্ম-পরিচয়ের সংকটে ভূগি। বাঙালি না মুসলমান? কোনটি আমি? বাঙালিত্তের চর্চা বেশি হলে মনে ভয় ধরে এইরে এই বুঝি ধর্মটা গেল গেল।"

    - এখানে একটা ব্যাখ্যার অবকাশ থাকে। আমরা "বাঙালি" এবং "মুসলমান", দুটোই! ঠিক যে ভাবে - আরবী, তুর্কী, ইরানী, ভারতীয়, চৈনিক, মঙ্গলিয়ান ইন্দোনেশিয়েন আর মালেশিয়ানরা মুসলমান । ভৌগোলিক/সামাজিক অর্থে বাঙালি, ধর্মীয়ও বিশ্বাসে মুসলিম । (ঠিক যেমনটি একজন বাঙালি হিন্দু কিংবা বাঙালি বৌদ্ধ) ।
    বাঙ্গালিত্বের সাথে মুসলমানিত্ব সাংঘর্ষীক নয়।তবে যেহেতু বাঙ্গালিদের প্রাচীন কাল থেকেই আদি ধর্ম চর্চা হিন্দু, তাই অনেক 'বাঙালি' আঁচার আচরণ মুসলমান ধর্মীয় অনভুতির সাথে সংগতি পূর্ণ নয়। (যেমন মূর্তি স্থাপন,পুষ্পার্পণ,মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জলন ইত্যাদি ইত্যাদি)
    এখানে একটা উল্লেখ যোগ্য বিষয় হোল স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে খুবই চাতুর্যের সাথে "বাংলা কালচার" নামে "হিন্দু আঁচার' সংমিশ্রণ করা হচ্ছে, যেটাও সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত !
    একটা উধাহরন দিলে ব্যাপারটা আরো খোলাসা হবেঃ গ্লোবালাইজেশনের যুগে শহীদ বেদীতে ফুল দেয়ার রা্স্ট্রীয়্ আচরণ মেনে নেয়া গেলেও, নিজ বাড়ীর ড্রইং রুমে "বিষ্ণু মূর্তি " বা যে কোন মাটির মূর্তি রাখা নিশ্চয়ই মুসলিম সাংস্কৃতির পরিচায়ক নয় ?
    ঠিক একই ভাবে কুলোঁয় ধান-দুব্বা, প্রদীপ জ্বালিয়ে বরণ বা নব বর্ষে মুখোসে ঢেকে মঙ্গল যাত্রা ও কোন ইসলাম ধর্মীয় আঁচার নয়।
    তাই বাঙালীত্বের চর্চা অত টুকুই সমাচীন যতটুকু ইসলামের সাথে সাংঘর্ষীক নয়। ("বাঙালিত্তের চর্চা বেশি হলে মনে ভয় ধরে এইরে এই বুঝি ধর্মটা গেল গেল।" )


    Smile n live, help let others do!

    জবাব দিন
    • রাব্বী (৯২-৯৮)

      মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আজিজুল ভাই।

      আমার ব্যক্তিগতভাবে যেটি মনে হয়, বাঙালি মুসলমানের পরিচয়ের সত্ত্বাটি একক নয় এবং অস্পষ্ট। কারণ এটি ব্যক্তি এবং তার অন্যান্য নিয়ামকের উপর নির্ভর করে যে কে কিভাবে সীমারেখা নিরুপন করে। ব্যক্তি যখন এই পরিচয়ের সীমানা নিরুপন করতে যায় তখন আসলে বাঙালির সনাতনী প্রথা এবং ধর্মীয় সংস্কৃতির দ্বৈততার মুখোমুখি হয়। বাঙালি মুসলমান আত্মপরিচয় আসলে দ্বৈততার সংকটের। ‘কনক্লুসিভ’ অনেক কিছু বলা যায় – কিন্তু এটি হলো একটি বাস্তবতা। কিন্তু আমার মূল যে বক্তব্য রাষ্ট্র যখন প্রতীকি রাজনৈতিক ইসলামের পৃষ্টপোষক হয় (যেমন এয়ারপোর্টের ক্যালিগ্রাফিক স্থাপত্য বানানো লালনের স্থাপত্য ভেঙ্গে) এবং সেটি যখন হয় মোল্লাদের দাবিতে, তখন আর ব্যাপারটি সাধারণ থাকে না। পুরোপরি রাজনৈতিক। থিয়োর্যা টিকালি রাষ্ট্র তো লেবেল প্লেয়িং গ্রাউন্ড – এখানে তো শুধু বাঙালি মুসলমান এককভাবে বসবাস করে না। আমরা কেন মোল্লাদের দাবি বাস্তবায়িত হলে তার প্রতিবাদ করি না? কিংবা কেন প্রতিবাদ করতে ভয় পাই। কিংবা চুপ করে থাকি। লালনের স্কাল্পচার হলে কারো আসলে তেমন কোন দ্বিমত থাকতো না। কিন্তু মোল্লারা যে না বলেছে আমাদের আর সাহসে কুলায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তো কতো স্কাল্পচার রয়েছে। তাই বলে সেখানে কি 'হিন্দু আঁচারে' ছেঁয়ে গেলো? সাংস্কৃতিক ইসলাম এবং রাজনৈতিক ইসলামের মধ্যে পার্থক্য আছে – প্রথমটি অনেক ক্ষেত্রেই উদার কিন্তু দ্বিতীয়টি সাধারনত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংকীর্ন। আমি আশপাশের অনেককেই বলতে শুনেছি, রবীন্দ্রনাথ হলো বাঙালি হিন্দুর এবং কাজী নজরুল বাঙালি মুসলমানের। এটা হলো বাঙালি মুসলমানের পরিচয়ের একটি গ্রে এরিয়া।


      আমার বন্ধুয়া বিহনে

      জবাব দিন
    • রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

      এদেশের মুসলমান এক সময় মুসলমান বাঙালি, তারপর বাঙালি মুসলামান, তারপর বাঙালি হয়েছিলো; এখন আবার তারা বাঙালি থেকে বাঙালি মুসলমান, বাঙালি মুসলমান থেকে মুসলমান বাঙালি, এবং মুসলমান বাঙালি থেকে মুসলমান হচ্ছে। পৌত্রের ঔরষে জন্ম নিচ্ছে পিতামহ।

      হুমায়ুন আজাদ

      জবাব দিন
    • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

      আজিজুল ভাই,
      বিষ্ণু মূর্তি কি বাঙালি সংস্কৃতি?
      আমার বাসায় বিভিন্ন ধরণের মূর্তি ছিলো।

      আমার মনে হয় আমরা প্রথমে মানুষ (অমানুষ), তারপর বাঙালি, তারপর মুসলমান।
      তবে তারচেয়েও বড় পরিচয় আমরা শোষিত।


      এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

      জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    অসাধারন লাগলো ভাইয়া, সিরিজটা আরো কিছুদিন চললে খারাপ হত না। প্রতিটি প্যারা পড়েই বলার মত অনেক কিছু মাথায় এসেছিল কিন্তু পুরোটা শেষ করার পর কোনটা রেখে কোনটা বলবো খুঁজে পাচ্ছি না 😛

    ছবিগুলোও দারুন হয়েছে, আপনার তোলা ছবিগুলো দিয়ে আলাদা একটা ছবিব্লগ দিয়ে দিতে পারেন।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
    • রাব্বী (৯২-৯৮)

      ধন্যবাদ স্কাই। প্রতিটা প্যারাতেই প্রায় নতুন টপিক, তাই খেই হারানো স্বাভাবিক। ছবির একটা আলাদা ব্লগ দিবো ভেবেছিলাম। পরে মনে হলো এক জিনিস আর টানাটানি না করে এক সাথে দিয়ে দেই।

      ভাল থাকো, সুখে থাকো 🙂


      আমার বন্ধুয়া বিহনে

      জবাব দিন
  3. আন্দালিব (৯৬-০২)

    লেখাটা পড়ে লগইন করলাম। অনেকদিন কিছু লিখি না। এই শহরটাকে অনেক বেশি ভালোবাসি, সেদিন হঠাৎ খেয়াল করলাম যে অনেকদিন ধরে লিখি না আর এই না-লেখার কারণ মনে হয় শহরটাই! হয়তো কিছুটা স্বার্থপর শোনায়, কিন্তু অস্বীকার করতে পারি না যে ঢাকা শহর ধীরে ধীরে মগজ খেয়ে ফেলে। 🙁

    লেখাটা খুব উদাস করে দিল রাব্বী ভাই...

    জবাব দিন
  4. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    ইদানিং সিসিবিতে আসি পড়ি।
    কিন্তু কমেন্ট রেখে যাওয়া হয় না কোন এক কারণে।
    অনেক কিছু বলতে মন চাইলো এই পোস্ট পড়ে। কিন্তু পড়ে শেষ করতে করতে হারিয়ে গেলো।
    পোস্ট প্রিয়তে গেলো।
    আড় পাঁচতারা।

    অফটপিক: লম্বা কমেন্ট করতে মঞ্চায় না ইদানিং।

    জবাব দিন
  5. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    রাব্বী, নস্টালঢাকা পাইয়া বসলো নাকি রে বাবা তোমাকে 😕

    ফেসবুকে কার কমেন্টে যেন পড়লাম "এখনকার পোলাপাইনের সর্বোচ্চ সাধ হইলো গিয়া একটা কর্পোরেট জব আর একটা সেক্স ডল।" মন্দ বলেনি।

    ঠিকই, বাংলাদেশের আসলে ঢাকা ছাড়া সবকিছুই সুন্দর। আর তৃতীয় বিশ্বের যে নগরমুখীতার কথা বললা, তার একটা বড় কারন হয়তো, নুন্যতম সুযোগ সুবিধা। আমি নিশ্চিত নই, তবে এখন মনে হয় মানুষের মাঝে ঢাকাকে ছেড়ে যাবার একটা প্রবনতা তৈরী হচ্ছে। আমি নিজেও ঢাকা আসতে চাইনি, কিন্তু আসতে বাধ্য হয়েছি বলতে পার। প্রথম সুযোগেই হয়ত আবার ছেড়ে যাব। ঢাকা আবার খুব চ্যালেঞ্জিং শহর, বলা যায় না, চ্যালেঞ্জ নিতে ভালো লাগে।

    ধর্মের ক্যানভাস অনেক বড়। লুপহোল বেশী, গ্রে এরিয়া অনেক। তাই এ নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। কারন আমরা ধর্মের ব্যাপারে সৎ নই, বরং নিরক্ষরতা বা অন্য অনেক কারনেই, এটা এখন অনেকটাই একটা পন্য। বাজারে ধর্মের কাটতি ভালো।

    ভালো থেক, তোমার জন্য শুভকামনা থাকলো।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
    • রাব্বী (৯২-৯৮)

      ভাল বলছেন নষ্টালঢাকা! নষ্টাল-ফষ্টাল কিছু না, সিরিজটা শেষ করতে হবে তাই একটু বেশি লিখে ফেলছি মনে হয়।

      আপনে কি ঢাকায় এখন পুরোপুরি চলে আসছেন?

      আপনার জন্যও শুভকামনা। ঢাকায় বসবাস সুখকর হোক।


      আমার বন্ধুয়া বিহনে

      জবাব দিন
  6. জিহাদ (৯৯-০৫)

    লেখাটা যেখানে এনে শেষ করে দিলেন ভালো লাগলোনা। আরো চালাইতে পারতেন।

    আমিও উদাস হয়া গেলাম। এত বড় লেখা পড়তে গিয়ে কোথাও হোঁচট খাইনি। বেশি দারুণ


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
    • রাব্বী (৯২-৯৮)

      শেষটায় আসলে কোন উপসংহারই টানিনাই। ঠাস করেই দিলাম ছেড়ে। আর চালাইতে চাই নাই দেখে এমন করলাম। আসলে এই পর্বে শুরু বা শেষ কোনটাই দেই নাই - খালি লিখে ছেড়ে দিসি। কন্টেন্টের কারণে এই লেখাটা কেমনভাবে নেয় সবাই নিশ্চিত ছিলাম না।


      আমার বন্ধুয়া বিহনে

      জবাব দিন
  7. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    রাব্বী,
    পুরো সিরিজটা বেশ উপভোগ করলাম। এ পর্বে এসে বিষণ্ণতায় পেয়ে বসলো যেন।
    ঢাকা :বিজ্ঞাপনের ঢাকা আর উল্লম্ফ দালানের ঢাকা দেখে দেখে আমার ক্লান্তি হতো ভীষণ, সবসময়েই।লাভের লোভ আমাদের এমন পেয়ে বসেছে বলবার নয়।
    এখন পুরো বাংলাদেশের নগরচিত্রই এই।কোথাও একটু রিলিফ নেই। সবখানে বিজ্ঞাপন।
    তোমার লেখা এত ভালো, কিন্তু কিছু বানানভুল দেখলে কেমন জানি লাগে।
    যেমন: ছাঁদ (ছাদ); কাঁকভেজা।
    ভালো থেকো।

    জবাব দিন
    • রাব্বী (৯২-৯৮)

      নূপুর'দা, কেমন আছেন?

      বানানের ব্যাপারটা নিয়ে আসলে বেশ সমস্যায় আছি। সম্ভব হলে আমার লেখায় যদি ভুল বানান আপনার চোখে পড়ে কষ্ট করে শুদ্ধ বানান ধরে দিয়েন। আমি সত্যি কৃতজ্ঞ থাকবো এজন্য। আমি এখন ঠিক করে দিচ্ছি, এবং ভবিষ্যতে বানানের প্রতি যত্নশীল হতে চেষ্টা করবো।

      আপনার জন্য শুভকামনা।


      আমার বন্ধুয়া বিহনে

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।