আকসেনভ লোকটার নাম মনে হতেই নিজের অজান্তে আমি শি্উরে উঠি। কেমন এক অজানা ভয় আমার শিড়দাঁড়া দিয়ে নেমে যায়। অথচ এই আকসেনভ বুড়ো আমার কাছে যে খুব বেশি ভয়ের ব্যাপার ছিল এ দাবি করাটা অযৌক্তিক হবে। বরং একটু খোলাসা করেই বলি আকসেনভ হচ্ছে খুব ছোট বেলায় পড়া তলস্তয়ের এক ছোট গল্পের চরিত্র। আপাতত এই বুড়োকে আমলে নেবার কোন কারণ না ঘটলেও তার নামটি আমার মনে বেশ স্থায়ী ছাপ ফেলে গেছে।
ভূমিকা বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে। আসল গল্পটি ছোট হওয়ার কারণেই কিনা গল্পের ভূমিকা অযথা প্রলম্বিত করে পাঠককে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিতে চাইছি। যাই হোক আকসেনভ সম্বন্ধে বলি। তলস্তয়ের সেই ছোট গল্পটি প্রায় ভুলেই গেছি। শুধু এটুকু মনে আছে আকসেনভ নামে একজন তরুণ ব্যবসায়ীকে মিথ্যা খুনের অপরাধে সারা জীবন জেলে পঁচতে হয়েছিল। সম্ভবত খুব গভীর জীবনবোধ থেকেই লেখা। কিন্তু সেই গল্পের মূল সুর রস সব টুকুই এই অবোধের অন্তকরণ হতে বিলুপ্ত প্রায়। তারপরেও তার নামটি গেঁথে গিয়েছিল ছোটবেলায় পড়া সেই বইয়ের কিশোরীয় কায়দায় আকা ছবির আকসেনভকে দেখেই। ছোরার সামনে কাচুমাচু মুখে অপরাধী অপরাধী মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একজন তাগড়া জোয়ান। আর তার বেশ কয়েক পৃষ্ঠা পরেই এক সাদা চুলো বুড়োর ছবি!!! ইসস, কী রূপান্তর!! ছবিটগুলোর প্রকাশ ভঙ্গিতে কষ্টের চেয়ে কৌতুক বেশি উদ্রেক করতো। সত্যি বলতে গল্প বুঝার চেয়ে ছবি আমার দৃষ্টি বেশি কাড়ল আর ফল হলো অকারন মন খারাপে বুড়ো আকসেনভের ছবি দেখে নির্দোষ বিনোদনে হাসতাম। সেই রকম প্রাণ খোলা হাসি – ভাবতে গেলে গ্লানির অনুভূতি হয় আজ। কিন্তু সেই আকসেনভ কিভাবে আমার উপর ভর করল সেই গল্পই বরং বলি।
সময়টা তখন ভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ার। বুয়েটের নাম ভাঙিয়ে সবে টিউশনি জুটা শুরু হচ্ছে। কাচা পয়সা কিছু আসতে শুরু করেছে হাতে। সেই পয়সা নিয়ে মৌজ মাস্তির চিন্তাও করছি আগাম। ঈদ আসি আসি করছে। এমনি করতে করতে প্রথম টিউশনি বেতন লাভের মাহেন্দ্র ক্ষন উপস্থিত হলো তখন ঘুনাক্ষরেও টের পাইনি ঘন্টা দুয়েকের মাঝে সেই সাধের বেতন কি বিপত্তি ঘটাবে। টিউশনির বেতন নিয়ে ভাবছি বাসায় যাবো । এমন সময় মা ফোন করে জানালেন বাসায় আসলে খালার বাসা হয়ে আসতে। আমি গেলাম বিরক্ত মুখে মাতৃদেশ পালন করতে। খালার অনাবশ্যক আহলাদিত হয়ে উঠাটাও অস্বাভাবিক কিছুই ছিল না। বের হবার আগে খালা একটা বাণ্ডিল ধরিয়ে দিয়ে মাকে দেবার জন্য বললেন। এতক্ষণে আমাকে খালার বাড়িতে পাঠানোর শানে নুযুল ধরতে পারছি। খুব একটা যে খারাপ বোধ হচ্ছে তাও বলা যায় না। কারণ খালার আদরের আতিশায্যে খাবার ডাবারের যে সমাগম ঘটেছিল তার বদৌলতে শীর্ণ শরীরের ভরের তাৎপর্য পূর্ণ বৃদ্ধি না ঘটলেও উদরের অনাবশ্যক মেদের বক্রতার ব্যাসার্ধ বেড়ে গিয়েছিল একথা নিশ্চয়ই বলা যায়। খালার থেকে বিদায় নিয়ে নিজের সদ্যস্ফীত পেটে হাত বুলাতে বুলাতে এক পকেটে টিউশনির টাকা আরেক পকেটে খালার দেয়া টাকা নিয়ে বাড়ি অভিমুখে বের হলাম।
গলির মাথায় আসতেই ডাকাত ডাকাত চিৎকার শুনে আমি থমকে দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণের মাঝেই বেশ একটা শোরগোল তৈরি হয়ে গেল। এলাকায় ডাকাত পড়েছে !!! সব লোোকের চিৎকার। কিন্তু ডাকাত ধরতে আসা লোক অনেক হলেও গডাকাতদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাপার দেখে মজা পাওয়ার তীব্র বাসনায় অনুপ্রাণিত আমি এক পা দুই পা করে ভিড়ের সাথে মিশে যাই। কিন্তু ডাকাত কোথায়? সবাই ডাকাত খুঁজছে অথচ ডাকাত নেই। এমন সময় হঠাৎ করেই যার বাড়িতে ডাকাত পড়েছিল এক লোককে দেখিয়ে বলল এই তো !!! এই বার সবার মাঝে অবিশ্বাস ছড়িয়ে গেছে। এ্যাহ!! একজন বুড়ো মত মানুষ বললেন, আমাদের মাঝেই ডাকাত আছে। ব্যাপার দেখে বিরক্ত আমি ভিড় ঠেলে বাইরের দিকে এগোতেই একসাথে একঝাক দৃষ্টি আমার উপর পড়ল। এই ছেলে তুমি কে? আমার খালার এলাকায় যাওয়া আসা কম বলেই আমাকে ঐ এলাকার লোকজন চিনে কম। আর তাদের পাকড়াও করার কারনে আমার গলায় স্বর অস্পষ্ট হয়ে যেতে থাকে। কোন এক স্যার আমার কলেজ জীবনে বলেছিলেন আমার চেহারায় নাকি বেশ একটা চোর চোর ভাব আছে। সেই কথা কত সত্য সেই মূহুর্তে আমি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে থাকি। এক বার মৃদু প্রতিবাদ করতে যাই। আমার পরিচয় বলতে গিয়ে আবিষ্কার করি আমি আমার খালুর নামটাও ভুলে গেছি। এমন সময় একজন আমার দুপকেটে তার হাত চালান করে বলে ছোকরা মানুষ তোমার কাছে এত টাকা কোত্থেকে আসে। আমি ভেঙে বলার চেষ্টা করি কিন্তু উপস্থিত জনতার হৈচৈ এ সেটা মৃদু গোঙানির মত শোনা যায়। হঠাৎ করেই বুড়ো আকসেনভ হাজির হয় আমার চোখের সামনে। সেই সাদা চুলো বুড়ো আমার দিকে তাকিয়ে বেদম হাসছে যেভাবে আমি হেসেছি তার কাচুমাচু মুখ দেখে। তার হাসি আমার বাক আরো রুদ্ধ করে দিচ্ছে। আমি আমার বুয়েটের আইডির জন্য খোঁজ করতে থাকি আইডির ভাঙা এক অংশ বেরিয়ে আসে। সেখানে আবার ছবি নাই। সেটাকে অনায়াসে পকেট মারের সম্পদ বলে চালিয়ে দেয়া যায়। আকসেনভের হাসি আরো প্রকট হচ্ছে জন সাধারণের গনপিটুনি আরো ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। সংজ্ঞাহীনতার অভিজ্ঞতা আমার নেই কিন্তু সেটাই যেন হচ্ছে। আমার বভোধ গুলো অবশ হয়ে যাচ্ছে। চারপাশের আমজনতার মাঝে আমি হাজার আকসেনভ দেখতে পাচ্ছি………..
[ যখন জ্ঞান ফিরল তখন আমার মাথায় পানি পড়ছে। ভিড়ের মাঝে আমার এক কাজিন আমাকে পেয়ে ডাকাতদের থেকে আলাদা করে এনেছে। আরো পরে জানতে পারি সেদিন ধরা পড়া তিন ডাকাত গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে। বোকা বুড়ো আকসেনভের ছবিটা খুঁজতে থাকি। ছবিটা বাসার কোথাও জুটে না। তবে সেই বুড়োর চেহার মাঝে আমি আর কৌতুক খুঁজে পাই না, বরং তার জন্য থেকে যায় সমবেদনা আর সেই সাথে ভেসে আসে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার ভয়ঙ্কর স্মতি।]
এটা কি সত্যি ঘটনা? সত্য হলে মনে ছাপ থাকাটাই স্বাভাবিক। খারাপ লাগছে, পড়ার পর। ভালো থেকো।
ঘটনা সত্যি তবে কিছুটা অতি রঞ্জন আছে। তবে আকসেনভ কে মনে হয় আর ইহজনমে ভোলা হবে না।
অফটপিক: আমার ব্লগে স্বাগতম ম্যাডাম। বুয়েটে আমি আপনার ডাইরেক্ট স্টুডেন্ট। আপনার থেকে কম্প্লিমেন্ট পাইছি একটু :awesome: :awesome: লই।
ভাই, সময় মত কখনই কিছু পাওয়া যায় না :grr: বিশেষ করে সেটা বিপদের সময় তো যাবেই না ~x(
যাই কন না কেনো, অভিজ্ঞতাটা ভয়াবহ :boss:
"Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
- A Concerto Is a Conversation
এখন বলার সময়ও আমি ঠিক লাইভ অভিজ্ঞতার আগুন টের পাইতাসি। বুঝ কত ভয়াবহ !!!
সত্যি???
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
পুরাটা সত্যি ণা কিছুটা অতিরঞ্জন আছে। ঘটনা গুলো প্রায় সত্যি। অর্থাৎ আমি প্রায় ঘটনা ঠিক রেখে এদিকে ওদিকে একটু নাটকীয়তা তৈরির চেষ্টা করেছি এই আর কি.... তবে অভিজ্ঞতাটা কতটা ভয়াবহ তার উপলব্ধি ঘটেছে গনপিটুনিতে নিহত হবার খবর শুনার পর। তখন বুঝলাম কত বড় বাঁচা বেঁচে গেছি। 😀 😀
আল্লাগো 🙁
🙁 🙁 🙁
ও মাই গড! আমারও শিরদাড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো!
হুম সাথে আকসেনভের চেহারা ভাসলে বুঝতি। পুরা পাগল হওয়ার জোগাড় !!!!!!!!!!১ :(( :((
আমি নিজে একবার পানিতে ডুবে মরে যেতে নিছিলাম। সেই স্মৃতিটা মনে পড়ে গেলো। একটু মাথা তুলতে পেরেছিলাম পানি থেকে। মনে হলো, পৃথিবীটা কী সবুজ কিন্তু আর দেখতে পাবোনা। ভয়ংকর অনুভূতি 🙁
বেঁচে থাকাটা আসলেই দারুন ব্যাপার । মৃত্যুকে কাছে থেকে দেখার অনুভুতি অদ্ভুত , সি এম এইচ এর আই সি ইউ তে থাকার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা থেকেই জানি ।
আপনার এতো অভিজ্ঞতা ক্যান? কী হইছিল তখন?
🙁 🙁 🙁
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
🙁 🙁
জানের সদকা দিছিলি? :grr:
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
জানের সদকা মনে হয় আগেই দিছিল..টিউশানি আর খালার টাকা দিয়া.... :-B
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
টিটো ভাই তো দেখি বারবার আমার কমেন্ট কাইড়া নিতেসেন!!!! 🙁 🙁
তুই আগে বলবি না যে তুই এটা বলতে চাস
আমারে কইসা মাইনাস :thumbdown: :thumbdown: :thumbdown:
আছিস কেমন?
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
আছি ভালো বস। এতদিন নানা দাবড়ানিতে ব্লগ থেকে প্রায় বাইরে ছিলাম। এখন রেগুলার হবো।
আপ্নার খবর কি?
নতুন কোন কাজে হাত দিছেন ???
আমি এ কদিন মহা ব্যস্ততায় ছিলাম........ব্লগে সময় দিতে পারি নাই
আশা রাখি আবার রেগুলার হতে পারব। ইন্ডিয়ার লাইজল ফ্লোর ক্লিনার বাজারে আসবে .....ওইটার কাম করতেছি
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
আইহায় কন কি? টাস্কি খাইলাম।
লেখার ফ্লো তো অনেক বস। ব্যাক ইন দ্যা ফর্ম। 😀
------------------------------------------------------------------
কামলা খেটে যাই
টাস্কি কেন!!!
একবার ধরা খাইলে বুঝতি কত ধানে কত চাল।
এরপর থেকে আমি ছিনতাইকারী পকেটমারের ভয় পাই না। ওরাও মনে হয় আমারে নিজেগো লোক মনে করে 😀 😀
আর আমারে ডাহাইত মনে করে 🙁
ভয়াবহ ব্যাপার দেখি 🙁
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আসলেই ভয়াবহ 🙁 🙁
বাপ্রেবাপ!
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
😀 😀
বস হয় একটু ডর খাইয়া গেলেন !!!
ডরাই গেলাম!
আমি ছিনতাই জিনিশটারেই বিরাট ডরাই। হার্ট দূর্বল। দেখা যায় ধরফড় শুরু হয়ে গেছে। তোর লেখা পড়ে সেটাই আমার অবস্থা এখন...!!!
🙁
😀 😀 😀 কেন আমারেই ছিনতাইকারী ভাবতাসস নাকি???
বাপরে বড় বাঁচা বেঁচে গেছিস ।
এই আপণাদের দুয়া !!!! 😀 😀
আমার প্রায় সিমিলার এক অভিজ্ঞতা হইছিলো হাইওয়েতে একটা এ্যাক্সিডেন্টে। পুরা এক ট্রাক মানুষ তাড়া করে আসছে গাড়ির পিছে পিছে। আল্লাহ বাঁচাইছে,কাছেই এক থানা ছিল। ঐটাতে ঢুকে পরে শেষরক্ষা হয়!
জানের সদকা দিছিলা ?
নইলে কেএফসি'তে একবেলা দুইটা ফকির খাওয়াইয়া দেও। 😛
ফকির শর্ট পরলে আমারে ডাকতে পারো। :grr:
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
এই উইকে ভাইয়ের বিয়ের কারণে বাইর হইতে পারতেসি না। নেকসট উইকে বা তার পরের উইকে ছদকার ব্যবস্থা করুমনে। (বস কথাটা কিন্তু কানে কানে)।
আরো দুই/তিন উইক পরে করা যায় না?
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ওরে বাপ্পস আপু তো আরো ঝামেলায় পড়ি গেছিলেন।
পাবলিক রোষ গাড়ির উপর দিয়াই যাইতো গা।
আহারে বেচারা... 🙁 🙁 🙁
তোর আর আকাশের প্রোফাইল পিকস তো এখই রকম হয়ে গেলো। আমি কনফিউসড হয়ে গেছিলাম। 😀 😀 😀
আমি নিজেই মাঝে মাঝে কনফিউসড হয়ে যাই 😛 বদলাতে হবে...
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
:)) :))
ভয়াবহ অভিজ্ঞতা 🙁
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
হুম।আসলেই ভয়াবহ। 🙁 🙁
ঈশ!! ভয়াবহ 🙁
আল্লাহ বাচাঁয়সে তোমারে
সবই আপনাদের দুয়া!!!!