যুদ্ধাপরাধের রাজনীতি, রাজনীতির যুদ্ধাপরাধ


বেশ কিছুদিন ধরে বাংলা ব্লগে একটা উদীয়মান ধারা লক্ষ্য করছি, যা’কে আমি বলি ভার্চুয়াল মুক্তিযুদ্ধ। মূলতঃ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্য, চেতনা, ইত্যাদি জাতীয় পরিচয়ের অতিপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে নতুন প্রজন্মের মাঝে আগ্রহ জাগাতে এই ধারার অবদান অপরিসীম। কিন্তু এই ধারা একক সত্বার কোন সমন্বিত দল নয়। এদের সাধারণ ভিত্তি মূলতঃ বাংলাদেশের প্রতি দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি আবেগ যা’এদেরকে এক পতাকাতলে নিয়ে এসেছে। এখানে যেমন মুসলমান আছে, তেমনি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টানও আছে; আস্তিক যেমন আছে, নাস্তিকও আছে; ডানপন্থী যেমন আছে, বামপন্থীও আছে; বাঙ্গালী আছে, অবাঙ্গালীও (যাদেরকে আমরা উপজাতি বলি) আছে।
কাজেই, এক দেশপ্রেম ছাড়া এদের সবাইকে ধর্ম/এথনিসিটি/বিশ্বাস/রাজনৈতিক মতাদর্শের যেকোন একটার ভিত্তিতে একটা বিশেষ ফ্রেমের মধ্যে নিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব। অথচ, অসাবধান/অতি উৎসাহী কেউ কেউ এই কাজটাই করতে যায়, যা’ অনিবার্যভাবেই একটা সংকটকে সামনে নিয়ে আসে- সেটা হলো প্রতিক্রিয়াশীলতা এবং মৌলবাদ। যেহেতু এই ধারা মৌলবাদের বিপক্ষে, প্রতিক্রিয়াশীলতার বিপক্ষে, তাই এর গন্তব্যও প্রতিক্রিয়াশীলতা+মৌলবাদ অভিমুখী হলে সেটা শুধু অনাকাংখীতই নয়, ভয়ংকরও বটে। এই আশংকা সত্য হয়ে প্রতিভাত হয় এই ধারার নেতা+কর্মী+সমর্থকদের মধ্যে ‘ছাগু-ট্যাগিং’ এর প্রবণতার মধ্যে। যতদূর বুঝি, এই ট্যাগিংএর মূল টার্গেট হলো জামাত+শিবির যারা নানান ভাবে মুক্তিযুদ্ধে তাদের বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকাকে আড়াল+লঘু+যুক্তিযুক্ত প্রমাণ করতে চায়। কিন্তু Orientalization-এর স্বাভাবিক নিয়মে এই ট্যাগিং এর টার্গেট পপুলেশন অনবরত বেড়েই চলে যা’ অবধারিতভাবে জনগণের মধ্যে জন্ম দেয় স্বপক্ষ/বিপক্ষ নামের মোটাদাগের একটা বিভাজন। রাজনীতির লক্ষ্য যেহেতু প্রতিপক্ষের উপর বিজয়ী হওয়া, তা’ সে যেকোন উপায়েই হোক, চুড়ান্ত পর্যায়ে এসে এই ধারাও একই রীতি অনুসরণ করে, বিরোধীদের মতোই যেকোন উপায়ে জিততে চায়। মানবতার দাবী নিয়ে শুরু করে অবশেষে এটাও মিলে যায় প্রতিক্রিয়াশীলতায়, মৌলবাদে।

গণআন্দোলনের এই বিপরীতমুখী পরিণতি বোঝার ক্ষেত্রে Orientalization প্রক্রিয়ার মেকানিজমের মধ্যকার কনট্রাডিকশনের আলোচনা সহায়ক বলে মনে করি। এই কন্ট্রাডিকশনটা সাধারণঃত আমাদের বিবেচনায় আসে না। সেটা কেমন?- এই প্রক্রিয়ায় কিছু লোক কোন একটা মতাদর্শের ভিত্তিতে একত্রিত হয়, যেমন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
ভার্চুয়াল মুক্তিযোদ্ধারা এই চেতনায় উজ্জীবিত, ধর্মে/শ্রেণীতে/এথনিসিটিতে/রাজনৈতিক মতাদর্শে নিজেদের মধ্যে পার্থক্য থাকা সত্বেও। কিন্তু নিজেদেরকে একটা হোমোজেনাস বা একক দল হিসেবে দেখতে চাওয়ার প্রবণতা থেকে এই দল (মূলতঃ নের্তৃবর্গ এবং সবথেকে সক্রিয় সমর্থকগোষ্ঠি) নিজেদেরকে একক সত্বা হিসেবে ধরে নেয়। একইভাবে এটা দলের বাইরে সকলকে প্রতিপক্ষ হিসেবে অনুমান করে নেয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পক্ষ/বিপক্ষের বাইরে আরো একাধিক অবস্থান আছে যারা এখনো কোন পক্ষাবলম্বন করেনি, যারা যেকোন পক্ষেই যোগ দিতে পারে, অথবা উল্লিখিত মতাদর্শের সাথে সংশ্লিষ্টই নয়। এই পর্যায়ে এসে যেকোন মতাদর্শিক দলের মতোই ভার্চুয়াল মুক্তিযুদ্ধের সামনে প্রধানতঃ দুইটা পথ থাকে- যুক্তির মাধ্যমে অথবা বলপূর্বক এদেরকে দলে ভিড়ানো। প্রাথমিক পর্যায়ে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে দলে ভিড়ানোর চেষ্টা থাকলেও দিন দিন জনসমর্থন বৃদ্ধি পাওয়ায় এটা এক পর্যায়ে এসে যুক্তির পথ থেকে সড়ে বলপ্রয়োগের পথ ধরে। আর এই বল প্রয়োগ ঘটে শারীরিকভাবে নয়, ঘটে পরোক্ষে, দৈনন্দিন কথায়, কাজে। প্রাথমিক পর্যায়ে এর মাধ্যমগুলো হয় সফট- যেমন ট্যাগিং। এর মাধ্যমে নিজ দলের বাইরে যে কাউকে (বিপক্ষ+আনডিসাইডেড+নিরপেক্ষ+পক্ষত্যাগী) সাধারণঃত একটা নিম্নশ্রেণীর ষ্ট্যাটাস দেওয়া হয়। ক্রমাগতঃ ট্যাগিংএর ফলে দলের বাইরের লোকজন ভয় পেয়ে সাময়িক ভাবে দলে ভিড়ে, অথবা আরো দূরে সড়ে যায়। কিন্তু ট্যাগিং এর একটা প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে দলের মধ্যেই- এই চর্চার ফলে দলের মধ্যে ক্রমশঃ একটা বিশ্বাস গড়ে ওঠে যে, যেহেতু তারাই উল্লিখিত মতাদর্শের পক্ষের একমাত্র দল, অতএব তাদের বাইরের আর সকলেই মতাদর্শের বিরোধী। উপরন্তু, যেহেতু তাদের মতাদর্শই একমাত্র গ্রহনযোগ্য মত, তাদের পথই একমাত্র গ্রহনযোগ্য পথ। নিজেদেরকে মানবতাবাদী হিসেবে গণ্য করে বলে ডিস্কোর্সের কেন্দ্রস্থিত এই দল বিপথে থাকা অন্যান্যদেরকে নিজেদের দলভূক্ত করাকে নিজেদের মানবিক দায়িত্ব মনে করে। আর যেহেতু উদ্দেশ্য মানবিক, তাই যেকোন উপায়ে তা’ হাসিল করাও গ্রহনযোগ্য। অতএব, দলের বাইরের যেকারো উপর বলপ্রয়োগ করাও জায়েজ, যেহেতু সেটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বার্থে করা হচ্ছে। ভার্চুয়াল মুক্তিযোদ্ধাদের কাজের সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে ট্যাগিংএর কারণও এটাই। আমাকে ছাগু ট্যাগিং করার পরেও যুক্তিবাদী+মুক্তমনা+উদারমনা+নিদেনপক্ষে ক্যাডেট হিসেবে সিনিয়র-জুনিয়রের সম্পর্ক নিয়ে অস্বস্তিতে পড়া সিসিবি পাঠকদের নিরবতার মূলেও এটাই।

রাজনৈতিক বিবেচনায় বিরোধী এবং দলের বাইরের লোকদের উপর বল প্রয়োগের পাশাপাশি একই সময়ে নিজের দলের উপরেও বল প্রয়োগ ঘটে যখন ট্যাগিং এর মাধ্যমে সাধারণভাবে পক্ষ/বিপক্ষ নামের বিভাজন তৈরী করা হয়। দলের বাইরে (তথা নের্তৃত্বের মতের বিরুদ্ধে) গেলে যে শক্তি দিয়ে দল বিরুদ্ধমতের উপর জবরদস্তি করে, সেই শক্তি দলের মধ্যকার ব্যক্তিদের উপরেও প্রয়োগ হয়। আর সেই বল প্রয়োগের ফল কতটা ভয়াবহ হয়, সেটা দলের অংশ হিসেবে বিরুদ্ধমতাবলম্বীও সম্যক সচেতন। কাজেই, দলের মধ্যে সমালোচনা বা বিরুদ্ধমতের প্রতি সহিষ্ণুতার দ্বার রুদ্ধ হয়। আর সমালোচনার দ্বার রুদ্ধ হলে দল হয়ে পড়ে কিছু নেতা আর তাদের চ্যালাচামুন্ডার আখরায় যেখানে মুক্ত আলোচনার স্থানে জারি হয় নের্তৃত্বের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যের তেলবাজী। তার অনিবার্য পরিণতি প্রতিক্রিয়াশীলতা+মৌলবাদ। এই পর্যায়ে দলের মূল ভিত্তিতে থাকা মতবাদ কার্যতঃ পঙ্গু হয়ে পড়ে। কারণ, তখন দলের মধ্যকার ক্ষমতাশীনরা তাদের ক্ষুদ্র গোষ্ঠীস্বার্থে পুরো দলের মতবাদকে ‘ব্যবহার’ করে। তাদের ক্ষুদ্র গোষ্ঠিস্বার্থের পক্ষের যে কাউকে (এমনকি মূল মতবাদের বিরোধী হলেও)মিত্র হিসেবে গ্রহন করে, আর বিপক্ষের যে কাউকে (এমনকি মূল মতবাদের পক্ষের হলেও) দূরে তাড়িয়ে দেয়। এক সময় এই নের্তৃত্ব মূল মতবাদের ভিত্তিতে থাকা মানবতাকেও দূরে ঠেলে দেয়, যদি তা’ ক্ষুদ্র গোষ্ঠিস্বার্থ উদ্ধারের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়।

ট্যাগিং প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমি Orientalizing এর যে কন্ট্রাডিকশন বর্ণনা করলাম তা’ বোঝার জন্য আওয়ামী লীগের দিকে লক্ষ্য করা যাক। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধে নের্তৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বভাবতঃই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি। অতএব, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপন্থী রাজনীতির নের্তৃত্বও স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগের হাতে। যেহেতু বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ স্বাধীনতাকামী ছিল এবং আছে, তাই তাদের সমর্থনও আওয়ামী লীগের পক্ষেই। কিন্তু লীগ কি করেছে? স্বাধীনতার পর ক্ষমতায় এসে সমগ্র দেশের স্বার্থকে না দেখে ক্ষমতাবানদের ক্ষুদ্র ব্যক্তি+পরিবার+গোষ্ঠীর স্বার্থ দেখেছে+দেখছে (সূত্রঃ শেখ মনি আর গাজী গোলাম মোস্তফার ২/৩ বছরে দেশের সেরা ধনী বনে যাওয়া)। দলের মধ্যকার যারাই এর বিরোধীতা করেছে, তাদেরকে স্বাধীনতাবিরোধী ট্যাগিং করে বহিস্কার করেছে (দলছুট নেতাকর্মী), রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে সমূলে বিনাস করেছে (জাসদ)। অপরপক্ষে, অপরাধী দলীয় নেতাকর্মীদের আইনানুযায়ী শাস্তি না দিয়ে উলটো প্রশ্রয় দিয়েছে। চুড়ান্ত পর্যায়ে এসে একটা মুক্তিকামী আন্দোলন বাকশালের মতো প্রতিক্রিয়াশীল, ফ্যাসীবাদী গন্তব্যে পৌঁছেছে। যুদ্ধাপরাধীরা যেসব মানবতাবিরোধী অন্যায়ের জন্য অভিযুক্ত, আওয়ামী লীগও সেই একই ধরণের অপরাধ করেছে (এদের মধ্যে যে মাত্রাগত পার্থক্য আছে, সেটা জেনে+মেনেই বলছি)।

ক্ষুদ্র গোষ্ঠিস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে, সহযাত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের সমালোচনার পথ রুদ্ধ করে, বিরুদ্ধ মতকে নির্যাতন করে স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে সাময়িক সাফল্য পেলেও আওয়ামী লীগ এই ভুলের মাসুল দিয়েছে নেতার সপরিবারে নির্মম হত্যাকান্ড দিয়ে। পাশাপাশি দল থেকে বহিস্কৃত+সুবিধাবঞ্চিতরা গঠন করেছে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল যা’র কাছে বারবার আওয়ামী লীগ পরাজিত হচ্ছে ভোটের যুদ্ধে। এদেরকে রাজনীতির প্রতিযোগিতায় মোকাবিলা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগকে এমনকি মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী জামাত (১৯৯৬এ) এবং ধর্মব্যবসায়ী ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনকে (২০০৭এ) সাথে নিতে হয়েছে। অর্থ্যাৎ, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দুটি মূলস্তম্ভ যথাক্রমে স্বাধীনতার চেতনা এবং সেক্যুলারিজম (?) পরিত্যাগ করেছে। ফলস্বরূপ, গণমানসে আওয়ামী লীগের ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি’র দাবীর ভিত্তি দূর্বল হয়ে পড়েছে। এটা আওয়ামী লীগও বোঝে। আর তাই, বিরোধীদের উপর ক্রমাগত নির্যাতনের মাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি রাজনীতিতে বিকল্প সহযাত্রী খোঁজাও চলছে, সেই সহযাত্রী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে কি বিপক্ষে তা’ প্রায়শঃই বিবেচনায় না এনেও। এরই ধারাবাহিকতায় কাদের সিদ্দিকীর মতো বীর মুক্তিযোদ্ধা আজ যুদ্ধ বিরোধী, আর নুরু মিয়ার মতো তালিকাভূক্ত শান্তিবাহিনী নেতার পুত্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের মন্ত্রী! মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী (?) বলে যে বামআন্দোলনকে নির্মূল করার জন্য রক্ষীবাহিনী গঠন করেছিল, আজ তারাই আওয়ামী সরকারের শরীক! ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থকে রক্ষা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে। দলীয় মতের বিরুদ্ধ যাকে ইচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী ট্যাগিং করে নির্মূল করার চেষ্টা করছে। এমনকি দিনেদুপুরে প্রকাশ্যে খুন করার পরও সেটা জাস্টিফাই করছে, নিহতকে স্বাধীনতাবিরোধী বানাতে না পেরে নিজ দলের চিহ্নিত অপরাধীদের জাতকূল টেনে এনে স্বাধীনতাবিরোধী সাজানোর চেষ্টা করছে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে দেওয়া এইসব ফাঁকি জনগণ বোঝে। আর তাই আওয়ামী লীগের মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা এখন আর জনগণকে মোহিত করে না। সমগ্র বাংলাদেশে জনপ্রিয়তম রাজনৈতিক দলটি আজ এতোটাই জনবিচ্ছিন্ন যে, একদা জানের শত্রু (বেগম মতিয়া চৌধূরী শেখ মুজিবের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজানোর খায়েস প্রচার করার পরও) বামদেরকেও আজ আওয়ামী লীগের সাথে নেওয়া লাগে। রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনীও আজ বিরোধী দলকে নির্যাতনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট নয় বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দলীয় ক্যাডার বাহিনীকে রাস্তায় নামাতে হয়, যারা নির্বিচারে নির্যাতন করে, খুন করে। এভাবে যুদ্ধাপরাধের রাজনীতি ক্রমশঃ নিজেই মানবতাবিরোধী অপরাধে (তথা যুদ্ধাপরাধে) জড়িয়ে পড়ে।

আওয়ামী লীগের উপর আলোকপাত করার মাধ্যমে আমি এ’ই বোঝাতে চেষ্টা করলাম যে, শুরুতে মানবতাবাদী মতবাদ নিয়ে শুরু করায় ব্যাপক জনসমর্থন পেলেও বিরুদ্ধমতের গলা টিপে ধরলে, সমালোচনার দ্বার রুদ্ধ করলে সেই মতবাদ অনিযার্যভাবেই মানবতাবিরোধী হয়ে পড়ে। ফলে জনতার সমর্থনও থাকে না। টিকে থাকার প্রয়োজনে এমনকি সেই দলকে মূল মতবাদ জলাঞ্জলী দিয়ে একদা বিরোধীদের সাথে হাত মেলানোর মতো দেউলিয়াত্বও বরণ করতে হয়।

আজ যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারকের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগ করলেও প্রকৃত কারণ সাধারণজ্ঞানসম্পন্ন যে কেউই বুঝতে পারছে। এই সরল সত্যটা না-মেনে নিয়ে আইসিএফএফ উলটা নিজের দায় জামাতের ঘাড়ে চাপাতে চেষ্টা করছে; উপরন্তু যারা তাদের বয়ান বিশ্বাস করছে না, তাদেরকে ছাগু ট্যাগিং করছে। অথচ, প্রকৃতপক্ষে নিজের সমালোচনা আগে করার দরকার ছিল, নিজের ভুল থাকলে সেটা শোধরানোর দরকার ছিল। সেটা না করে সরাসরি সমালোচনাকারীদের মুখ বন্ধ করতে লেগে পড়েছে। তাদের সমর্থকদেরকে এ’ই বোঝাচ্ছে যে এই ক্যাচাল জামাতের ষড়যন্ত্র। নেতাদের পিঠ বাঁচাতে জামাত যে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে, সেটা বোঝার মত যথেষ্ট ঘিলু সবার মাথায়ই আছে। কিন্তু আসামীর ফাঁসীর দাবী করে আবার সেই মামলার বিচারকের সাথে মামলার রায় নিয়ে গোপনে সলাপরামর্শ করা যে বিচারকের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে, সেটা বোঝা ত’ কঠিন কিছু নয়। অথচ, এই সহজ কাজটাই আইসিএফএফ কঠিন করে তুলছে। আইসিএফএফ প্রথমে ঘটনাকে বিচারকের ব্যক্তিগত বলে চালিয়ে দিতে চেষ্টা করল। এখানে ব্যর্থ হয়ে বলা শুরু করল যে মামলার স্বার্থে শুধুমাত্র টেকিলিক্যাল সহায়তা দিয়েছে, যেহেতু বিচারক নতুন আইনে বিচারকাজ করছেন। তারপরেও সমালোচনা থামাতে ব্যর্থ হয়ে চুড়ান্ত অস্ত্র প্রয়োগ করল- ‘যারা’ই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে নিরপক্ষে হতে হবে বলবে, তারাই যুদ্ধাপরাধী, তথা ছাগু’!

আইসিএসএফ এর এই ট্যাগিংকে ধ্বংসাত্মক মনে করি। আর উপরে সেটাই ব্যাখ্যা করেছি আওয়ামী লীগকে পর্যালোচনা করে। এর পরিণতিতে আইসিএসএফ (প্রকৃতপক্ষে পুরো ভার্চুয়াল মুক্তিযুদ্ধই) ক্রমশঃ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, ঠিক যেমন আওয়ামী নিজেদেরকে দেউলিয়া করে ফেলেছে। এর লক্ষণগুলোও এখনই ষ্পষ্ট। যেমন, আইসিএসএফ এর সমর্থকেরা এখনো এর কোন দায় দেখেনা, দেখে শুধু জামাত কেন এইটা নিয়া ফালাফালি করে সেইটা। নিজেরাই যে বিচারের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, সেটা না দেখে উলটো যারা এইটা প্রকাশ করল, তাদের শাস্তি দাবী করছে। যেন ডঃ জিয়াউদ্দীন আর আইসিএসএফ’কে জামাতই নিয়োগ দিছিল বিচারকের সাথে সলাপরামর্শ করার!

অপরাধীর বিচার নিরপেক্ষ হতে হবে এইটা কোন ছাগুদলের দাবী নয়, এইটা সার্বজনীন মানবতার দাবী। এই জন্যই যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনাল নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সচেষ্ট, জামাতকে বাঁচানোর জন্য নয়। কাজেই, বিচারের নিরপেক্ষতার দাবী করলে তা’কে ছাগু বলা হলে সবার আগে তা’ ট্রাইব্যুনালের উপরেই পড়ে। অতএব, এই ইস্যুতে কাউকে ছাগু বলা অযৌক্তিক।

কাজেই, আইসিএসএফ’কে সর্বপ্রথম ট্যাগিং বাদ দিতে হবে। এরপর জোড় দিতে হবে যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধগুলোর বিচারের নৈতিক ভিত্তির উপর। বিচারকের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলেই যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধ মাফ হয়ে যায়নি, এই ধারণাকে শক্তিশালী করতে হবে। তা না করে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্যোল এজেন্সী নিজেরা নিজেরা নিয়ে নিলেই লোকে মেনে নেবে না। এটা কোন ক্ষুদ্র গোষ্ঠির দাবী নয়, সারা দেশের অধিকাংশ মানুষের জাতীয় দাবী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে যা খুশি করার বা বলার ম্যান্ডেট জনগণ কাউকে কোনদিন দেয়নি, কখনো দিবেও না। ইতিহাসের শিক্ষা এটাই।

২,০৮৭ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “যুদ্ধাপরাধের রাজনীতি, রাজনীতির যুদ্ধাপরাধ”

  1. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    ক্ষমতায় যাবার প্রশ্নে, গণতন্ত্রের সত্যিকারের চর্চার প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রধান দলগুলোর মধ্যে ভিন্নতা নেই বললেও চলে। সব সরকারের আমলেই আমরা একটা অরাজক অবস্থা দেখি -লুটপাট, নির্লজ্জতা, নৈরাজ্যের বেহিসেবী প্রকাশ দেখি।

    বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রুচিবোধ, শিক্ষা আর সহনশীলতার ভীষণ অভাব - এটা তো নতুন কথা নয়।

    তবু, বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই সরকারের আমলেই মানুষ উপলব্ধি করতে পারছে শেষ পর্যন্ত বিচারের মুখোমুখি হবার একটা সম্ভাবনা আছে রাজাকার-আলবদরের হোতাগুলোর। এ কারণে জনগণ আশান্বিত, সংগতকারণেই ভিন্ন মহল আতংকিত।

    যুদ্ধাপরধের বিচার যদি সময়ের দাবী হয়, ইতিহাসের দাবী হয় - তবে এর জন্যে উদ্যোগী রাজনৈতিক মহলটিকে এক্সপ্লয়েট করতে হবে, চাপ দিতে হবে - প্রয়োজনে তার পাশে দাঁড়াতে হবে। তাকে এই ইস্যুতে সমর্থন হওয়া মানে সবকিছুতে সমর্থন দেয়া নয় - এটা আমাদের বুঝতে হবে।যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্যে কমিটেড রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজন।সেই শক্তি যাতে উল্টে জনগণকেই এক্সপ্লয়েট করতে না পারে সেজন্যে হুঁশিয়ারও থাকতে হবে।

    অপরাধীর বিচার নিরপেক্ষ হতে হবে এইটা কোন ছাগুদলের দাবী নয়, এইটা সার্বজনীন মানবতার দাবী।

    মাহমুদ, ব্যাপার হচ্ছে সকল দাবীদার 'ছাগু' না হলেও প্রচুর ছাগু এই দাবী করেছিলো শুরুতে।বিচারকার্য শুরু হবার পর এরাই কিন্তু গণহারে বলতে শুরু করলো 'নিরীহ নির্দোষ পরহেজগার লোকগুলোকে ধরে ধরে হেনস্থা করে হচ্ছে। তারপর আরেকদফা এগিয়ে গিয়ে বলতে শুরু করলো - এ বিচার বন্ধ করো, মানিনা ইত্যাদি। কাজেই নিরপেক্ষতার সব দাবীদারই 'নিরপেক্ষতার' থোড়াই কেয়ার করে।
    সরকার যদি রায় চাওয়ার জন্য পাগল হইয়া যায়, এরা পাগল হইয়া গেছে যেনতেনভাবে সেই রায়ঘোষণা বানচাল/বিলম্বিত করার জন্য। অন্তর্জাল, ব্লগে এদের দাপাদাপি প্রবলভাবে লক্ষ্যণীয়।

    জবাব দিন
  2. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
    ব্যাপার হচ্ছে সকল দাবীদার ‘ছাগু’ না হলেও

    প্রচুর ছাগু

    এই দাবী করেছিলো শুরুতে।বিচারকার্য শুরু হবার পর এরাই কিন্তু গণহারে বলতে শুরু করলো ‘নিরীহ নির্দোষ পরহেজগার লোকগুলোকে ধরে ধরে হেনস্থা করে হচ্ছে।

    নূপুর ভাই,
    আমি বলি সব ছাগুই এই দাবী করেছিল। কিন্তু এতেই কি এটা ছাগুদের দাবী হয়ে গেল? ট্রাইব্যুনাল কি নিজেই নিরপক্ষতার দাবী করেনা? - এইখানে আপনার সাথে আমার মতের পার্থক্যটা। আমি এইটা মানি যে, সব ছাগুই নিরপেক্ষ বিচার দাবী করে+এই থেকে পুরো বিচারই বাতিল করতে চায়। কিন্তু এখান থেকেই এই সিদ্ধান্তে কিভাবে আসা যায় যে, যারাই এই দাবী করবে, তারাই ছাগু? এটা যে কেন প্রতিক্রিয়াশীল একটা অবস্থান, তা-ই বোঝানোর জন্য ব্লগটা লিখলাম। মনে হয়, আমার মত পরিষ্কার বোঝাতে পারিনি।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  3. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)
    – এইখানে আপনার সাথে আমার মতের পার্থক্যটা।

    মাহমুদ,
    পার্থক্যটা মতে নয় আসলে, পার্থক্য অ্যাপ্রোচে।তুমিও তো ঘটনাপ্রবাহের প্রথম কয়েকদিন চুপ ছিলে, পরে সোচ্চার হয়ে নিজের মতামত বলছো। আমি উচ্চকিত হয়ে নিজের মতামতটা বলছিনা - পার্থক্য এখানেই। যদিও মতামত যেখানকার জন্য সেখানে পৌঁছে দেবার চেষ্টা করেছি।

    এরপর জোর দিতে হবে যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধগুলোর বিচারের নৈতিক ভিত্তির উপর। বিচারকের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলেই যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধ মাফ হয়ে যায়নি, এই ধারণাকে শক্তিশালী করতে হবে।

    - এটাই আসল কথা।

    আমি মনে করিনা, আইসিএসএফ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সোল এজেন্সী বলে দাবী করেছে, বা সেরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। জামাতিদের সাংগঠনিক (আর্থিক এবং লোকবল দুই বিবেচনাতেই) শক্তির বিপরীতে আইসিএসএফ একটা ক্ষুদ্র সংগঠন, তার শক্তি কেবল মনোবলে, ন্যায়বিচারের দাবীতে। কতগুলো তরুণ লোকজন সর্বশক্তি দিয়ে লড়াইয়ে নেমেছে, তাদের ভুল-ভ্রান্তি গুলোকে সমালোচনা করার পাশাপাশি তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে তো। 'ট্যাগিং' যদি একটা ভ্রান্ত পথ হয় - তুমি (বা যে কেউ) এগিয়ে এসে তোমার অবদানটা রাখতে পারো বলে আমি মনে করি।এই সাহসটুকু আইসিএসএফ এর প্রয়োজন বলে আমার মনে হয়।

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
      পার্থক্যটা মতে নয় আসলে, পার্থক্য অ্যাপ্রোচে

      দ্বিমত করার প্রশ্নই আসেনা। পার্থক্যটা সুষ্পষ্ট করে দেখিয়ে দেওয়ায় ধন্যবাদ।

      কতগুলো তরুণ লোকজন সর্বশক্তি দিয়ে লড়াইয়ে নেমেছে, তাদের ভুল-ভ্রান্তি গুলোকে সমালোচনা করার পাশাপাশি তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে তো

      একসাথে দাড়ানোর প্রয়োজনটা আমরা সবাই বুঝি। কিন্তু সমালোচনা/আত্মসমালোচনা+দ্বিমতের সুযোগ বন্ধ হলে সেটা হবে কি করে? একটা উদাহরণ দেই, বিশ্বজিৎ প্রকাশ্য রাজপথে ছাত্রলীগ খুন করেছে। শেয়ার মার্কেটে আওয়ামী নেতারা লুটপাট করেছে। হলমার্ক অর্থকেলেংকারীতে জড়িয়েছে। এমতাবস্থায় জামাত-শিবির সুযোগ নিচ্ছে, সরকারকে খুনি হিসেবে, দূর্নীতিবাজ হিসেবে দেখিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাঁধার সৃষ্টি করছে। ঘটনা সত্য। কিন্তু তারা সুযোগ নিচ্ছে বলেই সরকারের সমালোচনা থেকে বিশ্বজিতের পরিবারকে থামতে বলতে পারিনা; বলতে পারিনা যে, ওদের কথার সুর জামাতীদের সাথে মিলে যাচ্ছে বলে ওরাও ছাগু। যে লোকগুলো শেয়ার মার্কেটে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে রাজপথে নেমেছে, তাদেরকে বলতে পারিনা যে তাদের সুর জামাতীদের সাথে মিলে গেছে বলে তারাও ছাগু।

      আপনার আর্গুমেন্ট বুঝতে পারছি যে, এখন সরকারকে যথাসম্ভব বিব্রত না করে যুদ্ধাপরাধের বিচারটা যথাসম্ভব শেষ করা দরকার। কিন্তু এর আরেকটা দিকও আছে যা' এই আন্দোলনের জন্য খুবই রিস্কি- আওয়ামী লীগও এই "যুদ্ধাপরাধ বাধাগ্রস্ত করা"র যুক্তি ব্যবহার করে তাদের যাবতীয় কুকর্মগুলো করেই যাচ্ছে। কাজেই, যারা আওয়ামী লীগের সেইসব কুকর্মে সরাসরি আক্রান্ত+যারা আওয়ামী লীগকে নানাবিধ কারণে অপছন্দ করে, তাদের কাছে "যুদ্ধাপরাধের বিচারের স্বার্থে সরকারের সমালোচনা আপাততঃ না করা"র দাবীটাও আওয়ামী লীগের সাথে মিলে যায়। আর সরকারের কোপে আক্রান্ত/ক্ষতিগ্রস্ত কেউ সমালোচনা করলে সেটা জামাতের সাথে মিলে যায় বলে তাদেরকে ছাগু/যুদ্ধাপরাধী ট্যাগিং করাটা আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচী হিসেবে দেখার সম্ভাবনা সর্বদাই থেকে যায়। - আশা করি ট্যাগিং নিয়ে আমার বক্তব্য বোঝাতে পেরেছি।

      তুমিও তো ঘটনাপ্রবাহের প্রথম কয়েকদিন চুপ ছিলে, পরে সোচ্চার হয়ে নিজের মতামত বলছো।

      ঠিকই বলেছেন। আমার উত্থাপিত সমালোচনা সামান্য পরিমাণেও জামাতিরা ব্যবহার করুক, সেটা আমি চাইনা বলেই চুপ করেছিলাম। কিন্তু বিচারকের পদত্যাগের পরে ক্ষতির আর কিছু বাকি ছিলনা বুঝেই আমি ব্লগটা শেয়ার করেছি। আমি নিজেও মনেপ্রাণে চাই এই বিচারটা শেষ হোক, এবং সেটা নিরপেক্ষতার গ্রহনযোগ্য মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হয়েই হোক যেন পরবর্তী কালে কেউ বলতে না পারে যে, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে প্রহসনের বিচার করে যুদ্ধাপরাধীদেরকে ঝুলিয়ে দিয়েছে।

      ইনফ্যাক্ট, ভার্চুয়াল মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদী একটা ভয়াবহ ফলাফল আমি দেখতে পাচ্ছি, যা' এখনই বলতে চাইনা। বিচার শেষ হলে শেয়ার করার আশা রাখি।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  4. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    ১। অনেক দিন পরে ব্লগে ঢুকেই একটা ধাক্কা খেলাম। প্রচুর ধস্তাধস্তির চিহ্ন পোস্টে পোস্টে ।

    ২। আই সি এস এফের প্রথম দিকে অনেক সময় দিয়েছিলাম, এখন দিতে পারিনা, আফসোস লাগে। দেয়া উচিৎ।

    ৩। আই সি এস এফ হচ্ছে বিভিন্ন ফোরাম থেকে একহওয়া একটা ফ্রন্টিয়ার পার্টি, যারা তৈরী হয়েছে একটাই দাবী নিয়ে। তা হল রাজাকারদের শায়েস্তা করা। অন্য আরও অনেক ইস্যু থাকতে পারে। সেগুলো অন্য কেউ দেখবে, আই সি এস এফ নয়। আই সি এস এফ দেখবে বিচারে রাজাকাররা তাদের প্রাপ্য রায় পাচ্ছে কিনা, তাই শাহরিয়ার কবির বা মফিদুল হকের কথাও এখানে "ছাগু" মাত্রা পায়। খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।

    ৪। মাহমুদ, তোমার প্রশ্ন ভালো, কিন্তু ওপেন ফোরামে এইসব প্রশ্ন তোলা অবান্তর। এই বিচার নিয়ে আওয়ামী-বিএনপির রাজনৈতিক হিসাব থাকতে পারে, কিন্তু বিচার হওয়াটা জরুরী। প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, ভালো দিক এটা, কিন্তু প্রক্রিয়া যেন বাধাগ্রস্থ না হয় সেটার দিকে লক্ষ্য রাখা উচিৎ সিসিবি ব্লগের সবার।

    ৫। নিজেদের দূর্বলতা নিয়ে ঢোল পিটানোর অন্য অর্থ হচ্ছে, প্রতিপক্ষকে সুযোগ করে দেয়া, মাহমুদ, তুমি বুদ্ধিমান, এত বুঝ, আর এইটা বুঝ না।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  5. আন্দালিব (৯৬-০২)

    ঠিক দুপুরবেলা ছায়া দেখে কায়া বুঝা অসম্ভবপ্রায় ব্যাপার। আপনি যে প্রশ্নগুলো তুলেছেন, বা তুলতে চাচ্ছেন, সেগুলো তোলার সময় এখন না। এখন সময় হলো বিচারকার্যটা চালানোর।
    বিচার-আলোচনার বহু বহু সময় পড়ে আছে। এই বিচারের উপরে রিফ্লেক্ট করার বহু সময় পড়ে আছে। তখন অনেক আলোচনা হবে, এই প্রশ্নগুলো আদৌ viable/reasonable কি না সেটাও প্রশ্ন হিসেবে উত্থাপিত হবে। প্রতিটা ন্যারেটিভের কাউন্টার-ন্যারেটিভ এবং সেসব কাউন্টার-ন্যারেটিভের ডেরিভেটিভের কাউন্টারও বিশ্লেষণ করা হবে।

    যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়ায় যদি আগুপিছু করি, মারুম কি মারুম না সেইটা চিন্তা করতে থাকি, তাইলে বিপক্ষের লুজার সৈন্যও এসে পুটু মেরে দেবে। এই বিচারটা কোনো অংশেই মুক্তিযুদ্ধের চাইতে কম গুরুত্ব রাখে না। মুক্তিযুদ্ধ যেমন রাজনৈতিক লড়াই, এটাও তেমন। তখন যদি সমমনাদের পাশে দাঁড়ায় কোন কনফিউশন না রেখেই কুত্তারবাচ্চাদের মারা গেছে, এখনো সেটাই করা উচিত।

    জবাব দিন
  6. সাইফ শহীদ (১৯৬১-১৯৬৫)

    মাহমুদ,

    আমার খুব ভাল লাগলো তোমার এই খোলামেলা বিশ্লেষনধর্মী লেখাটা। তারকাও লাগালাম - তবে বর্তমান বাংলাদেশে বেশী দিন টিকতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে।

    নূপুর, ফয়েজ, আন্দালিব - এবং লাবলু, রায়হান - এরা সবাই আমার অতি প্রিয়জন এবং আমার আপন ছোট ভাইয়ের মত এদেরকে সব সময় দেখে থাকি। কিন্তু এখন যেন বাধ্য হচ্ছি - সত্য বেশী না বলে, জ্ঞানী ব্যক্তির মত কম কথা বলে নিজের সম্মান বজায় রাখার চেষ্টা করতে।

    মুক্তি যুদ্ধের শেষে অনেক রাজাকার এবং রাজাকার সন্দেহে মানুষকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে - আমিও নিজের চোখে তেমন কিছু হত্যা দেখেছি। বীর মুক্তি যোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর বাহিনী স্টেডিয়ামে যে কয়েক জনকে বেয়নেটে খুঁচিয়ে হত্যা করেছে তার ছবি বিভিন্ন বিদেশী মিডিয়াতে প্রকাশ পেয়েছে। সত্যি বলতে কি - যদি তখন সুযোগ পেতাম, আমিও হয়তো আমার দুই চাচার হত্যাকারীদের এমনি করে হত্যা করতে চাইতাম। আমার অধীকার আছে কিনা, বা ন্যায় অন্যায় কোনটা - সেটা তখন প্রধান হয়ে আসতো না আমার কাছে। রাজাকার, জামাত, শান্তি-বাহিনীর লোক ইত্যাদি কারনে তখন যদি বর্তমান বিচারধীন মানুষদেরকে এভাবে মারা হত তবে হয়তো আজকের এই বিতর্ক উঠতো না।

    কিন্তু রাষ্ট্রীয় বিচার অন্য এক জিনিস। বিচারের নামে এমন কিছু করা কি উচিৎ যাতে সাড়া পৃথিবী এই বিচারকে 'কাঙ্গারু কোর্টের' বিচার বলে অভিভিত করবে?

    বর্তমান 'বাল' সরকার এই বিচার নিয়ে খেলা করে যাচ্ছে - যে কোন সাধারণ বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন লোকের কাছে এটা ক্রমে পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে।

    জবাব দিন
      • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

        সাইফ ভাইয়া,

        কিছু মনে করবেন না, আপনিও নিজেও একটা কমুনিটি ফোরাম নিয়ে লড়ছেন, "ইউনাইটেড ফর ইউনুস" । ইউনূসের সব ভালো কিছু নিয়ে আপনারা সোচ্চার। ইউনূসের সম্মানের জন্য আপনারা লড়ছেন।

        আপনার ডাটা কি বলে, ডঃ ইউনূসের সব কিছু কি "পারফেক্ট"? যেগুলো নয়, সেগুলো আপনাদের প্রচারনায় কখনো কি এসেছে? লিংক দিতে পারবেন আপনার গ্রুপ থেকে? মাহমুদ কিন্তু দিতে পারবে অনেক ডাটা । আমার কাছে ডাটা নেই, আছে গ্রামের মানুষের অভিজ্ঞতা, ভালো কম, মন্দ বেশী ।

        আপনাদের গ্রুপে এগুলো আসেনা, আসেনি কখনো, কারন আপনাদের গ্রুপের মটো এটা নয়।

        তবে, আই সি এস এফ থেকে আপনি অন্য কিছু কিভাবে আশা করেন?

        সবটাই এখন পন্যের মোড়কে চলছে, দারিদ্রতা বলেন, সাম্প্রদায়িকতা বলেন, বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলেন, সবই। কিন্তু কোন একখান থেকে তো শুরু করতে হবে। নিদেনপক্ষে কেউ শুরু করলে উৎসাহিত করাটা জরুরী।

        "সবকিছু আমার মন মত হতে হবেই" এই মানসিকতা বদলানো দরকার।


        পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

        জবাব দিন
        • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
          কিন্তু কোন একখান থেকে তো শুরু করতে হবে। নিদেনপক্ষে কেউ শুরু করলে উৎসাহিত করাটা জরুরী।

          ফয়েজ ভাই, আপনার সাথে একমত যে শুরু করতে হবে, এবং সেটা যে করবে, তাকে উৎসাহও দিতে হবে। কিন্তু সে যদি মাঝরাস্তায় সোজা পথে থেকে সর্টকাট মারার চেষ্টা করে, এবং সেই চেষ্টা করতে গিয়ে উলটো দিকে যাত্রা করে, তখন কি করা দরকার? নিশ্চয়ই বলবো না যে, let him/them go. তাকে/তাদেরকে পথ ঠিক করে নিতেই হবে, হবেই। তা না হলে শুরুতে যে লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা করেছে, সেখানে না গিয়ে অন্যকোথাও গিয়ে পৌঁছাবে, যা অনাকাংখীত ফলাফলই বেশি নিয়ে আসে।

          “সবকিছু আমার মন মত হতে হবেই” এই মানসিকতা বদলানো দরকার।

          - এইটা জব্বর একটা কথা বলেছেন। সবার ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। আপনার এই কথাটি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটাই বোঝা গেল আমার লাষ্ট তিনটা পোষ্টে।


          There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

          জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।