আগের পর্ব (http://www.cadetcollegeblog.com/mahmudh/27922)
কল্পনা করুন একটা কর্মব্যস্ত দিনের শুরু থেকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশে পেষ্ট লাগিয়ে দাঁত পরিস্কার করি, ট্যাপ থেকে মুখে ঠান্ডা পানির ঝামটা দিয়ে টাওয়েলে মুখ মুছতে মুছতে ডাইনিং টেবিলের দিকে এগুতে থাকি। দৈনিক পত্রিকার কপিটা হাতে নিয়ে চোখ বুলাতে বুলাতে চা-নাস্তার জন্য অপেক্ষা করি। এরপর থেকে সারাদিনমান আমরা এটা-ওটা-সেটা ব্যবহার করেই চলি। বিভিন্ন কাজের জন্য, নানা রকম চাহিদা পূরণের জন্য অগণিত পণ্য ক্রমাগত ব্যবহার করে চলি। এইসব পণ্য কিভাবে পাই?- খুবই সোজা উত্তর, অর্থের বিনিময়ে। কেন, অর্থের বিনিময়ে কেন?- কারণ, এইসব বস্তু মূল্যবান। আর মূল্যবান কোনকিছু পেতে হলে ত’ ট্যাকের পয়সা ঢালতেই হয়।
আগের পর্বে দেখেছি যে, কোন বস্তু আমাদের চাহিদাপূরণে সক্ষম হলেই তা মূল্যবান হয়না, যেমন বাতাসের অক্সিজেন বা বৃষ্টির পানি। সেই বস্তু তখনই অর্থ বা অন্য কোন পণ্যের সাথে বিনিময়যোগ্য হয় যখন তা’ উৎপাদনে মানুষের শ্রম প্রয়োগ করা হয়। যেমন, গ্যাস সিলিন্ডারের অক্সিজেন বা ট্যাপের পানি। অর্থ্যাৎ, শ্রম প্রয়োগের মাধ্যমে বস্তু ‘মূল্যবান’ হয়। আর তাই এইসব মূল্যবান বস্তু পেতে হলে আমাদেরকে অর্থ ব্যয় করা লাগে। অর্থ্যাৎ, পণ্যের মূল্য (value) পণ্যকে বিনিময়যোগ্য করে তোলে, আর এই মূল্য আসে মানুষের শ্রম থেকে। এই শ্রমের পরিমাণ দিয়ে পণ্যের মূল্য নির্ধারিত হয় এবং সেই নির্ধারিত মূল্যে দাম (price) দিয়ে আমরা পণ্য কিনি।
মার্ক্স এইখানে শ্রমের বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে, ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদরা (সেই সময় রিকার্ডো ছিলেন তাদের প্রধান প্রবক্তা) পণ্যের মধ্যকার এই শ্রমকে এককরূপে দেখলেও আসলে সেখানে দুই ধরণের শ্রম বিদ্যমানঃ মূর্ত (concrete) ও বিমূর্ত (abstract) শ্রম। একেক ব্যক্তি একেক পণ্য উৎপাদনে সক্ষম+ইচ্ছুক+নিয়োজিত থেকে একেকটা পণ্য তৈরী করে, যেমন কেউ কাঠ কাটে, কেউ কাপড় বোনে, কেউবা জমি চষে। পণ্যের আলাদা আলাদা বস্তুগত (material) অস্তিত্বের মধ্যে এই মূর্ত-শ্রম প্রকাশিত হয় এবং এটা পণ্যে ব্যবহারিক মূল্য সংযোজন করে। কিন্তু পণ্য বিনিময়ের ভিত্তি তার বস্তুগত অস্তিত্ব নয় বা তা’র ব্যবহারিক মূল্যও নয়; বরং সকল পণ্যের মধ্যে সাধারণভাবে উপস্থিত বিমূর্ত-শ্রম যা পণ্যসমূহকে পরস্পরের সাথে বিনিময়যোগ্য তথা মূল্যবান করে তোলে (আগের পর্বে বিস্তারিত ব্যাখ্যা আছে)। আর তাই, পণ্যের মূল্য পণ্যের মধ্যকার এই বিমূর্তশ্রমের প্রকাশিত রূপ। এইখানে উল্লেখ্য যে, পণ্যের মুল্য আসে কেবলমাত্র পণ্য বিনিময় প্রক্রিয়ার মধ্যে। কাজেই, পণ্যের মূল্য পুরোটাই অবস্তুগত (immaterial); এখানে বিন্দুমাত্র বস্তু নেই।
আগের পর্বে আমরা দেখেছি যে, মানুষের শ্রম হচ্ছে মূলতঃ একটা প্রক্রিয়া যা’ অবজেক্টিফায়েড হয় কোন বস্তুর মধ্যে, তথা পণ্যে। পণ্যের মধ্যে এই শ্রম অবজেক্টিফায়েড হয়ে তা’র ব্যবহারিক মূল্য (use value) এবং মূল্য (value) তৈরী করে। মার্ক্স দেখিয়েছেন যে, মূর্তশ্রম অবজেক্টিফায়েড হয়ে গঠন করে পণ্যের বস্তুগত অস্তিত্ব বা ব্যবহারিক মূল্য যা’ আমাদের সুনির্দিষ্ট কোন চাহিদা পূরণ করে; আর বিমূর্তশ্রম অবজেক্টিফায়েড হয়ে গঠন করে পণ্যের মূল্য যা’ পণ্য বিনিময় প্রক্রিয়ায় সকল পণ্যের মধ্যে সাধারণভাবে উপস্থিত থেকে তাদেরকে পরস্পরের সাথে তুলনাযোগ্য এবং বিনিময়যোগ্য করে তোলে, কিন্তু তা’ কোন বিশেষ পণ্যের বস্তুগত উপাদান নয়। পণ্য বিনিময় প্রক্রিয়ায় একেকজন একেক পণ্য নিয়ে অংশ নেয় এবং যার যার চাহিদাপূরণে সক্ষম ব্যবহারিক মূল্যযুক্ত পণ্যের সাথে নিজের পণ্য বিনিময় করে। এইভাবে, পণ্য বিনিময় প্রক্রিয়ায় (সুনির্দিষ্ট করে বললে, পুঁজিবাদে) বস্তু ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সম্পর্কের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। অর্থ্যাৎ, মানুষে মানুষে সম্পর্ক হলো বস্তুগত (material)। কিন্তু এই বিনিময়ে এক পণ্যের সাথে আরেক পণ্যের সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে মূল্য, যা’ অবস্তুগত (immaterial)।
পণ্যের মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় এই বিমূর্ত শ্রমকে পরিমাপ করা হয় ‘শ্রমঘণ্টা’ দিয়ে। কোন নির্দিষ্ট পণ্য উৎপাদনের জন্য গড়ে কতখানি শ্রমঘন্টা প্রয়োজন সেই সম্পর্কে প্রত্যেক সমাজেই একটা প্রচ্ছন্ন ধারণা থাকে (আগের পর্বে বর্ণনা করেছি)। এই বিষয়টা বিবেচনা করলে বোঝা যাবে যে, পণ্যের মূল্য শুধুই বিমূর্ত শ্রমের উপর নির্ভরশীল, শ্রমের দক্ষতা বা উৎপাদনশীলতার উপর নয়। যেমন, ধরি কোন সমাজে একজন কারিগর সনাতন কৌশলে গড়ে দৈনিক ৫টি শার্ট বানাতে পারে। আধূনিক মেশিন ব্যবহার করার ফলে সেই সমাজে এখন একজন কারিগরের দৈনিক গড় উৎপাদন হলো ১০টি শার্ট। এখানে ৫টা শার্টের মূল্য আর ১০টা শার্টের মূল্য একই, কারণ এদের মধ্যকার বিমূর্তশ্রমের পরিমাণ একই। এই কারণে আগের ১টা শার্টের মূল্য পরের ২টা শার্টের মূল্যের সমান। এখানে দেখা যাচ্ছে যে, উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে শ্রমের উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ হয়েছে, কিন্তু মূল্য হয়েছে অর্ধেক। একইভাবে, প্রশিক্ষণের মাধ্যমেও শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব। আর যে সমাজে শ্রমের উৎপাদনশীলতা বেশি, সেখানে পণ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় গড় সামাজিক শ্রম তুলনামূলকভাবে স্বল্প (shorter) বলে সেখানকার পণ্যের মূল্য কম, অতএব তা’র জন্য নির্ধারিত দামও কম।
এখানে লক্ষ্যনীয় যে, শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা কম/বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় শ্রমঘণ্টা বা পণ্যের মুল্যের যে পরিবর্তন হচ্ছে, সেটাই পণ্যের দামের কম/বেশির মধ্যে প্রকাশিত হয়। এখানে পণ্যের বস্তুগত গুণাগুণের কোন ভূমিকা নেই। এই কারণে, সমাজে শ্রমিকের গড় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে উৎপাদিত পণ্যের বস্তুগত পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও তা’ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমঘন্টা কমে যায়, ফলে তা’র দামও কমে যায়। এভাবে, পণ্যের যোগান বাড়লে তা’ কম দামে কেনা যায় (অর্থ্যাৎ, যোগান বাড়লে পণ্যের মূল্য হ্রাস পায়, ফলে দাম কমে)।
পণ্যের মূল্যবান হওয়ার জন্য পূর্বশর্ত হচ্ছে সেই পণ্য অন্যান্যদের জন্য চাহিদাসম্পন্ন কি না; অর্থ্যাৎ অন্যরা তাদের পণ্য বা অর্থের সাথে সেই পণ্য বিনিময় করতে আগ্রহী কি না। কারণ, অন্যদের কাছে পণ্যের চাহিদা না থাকলে ত বিনিময় শুরুই হবে না, আর পণ্যের মূল্য আছে শুধুমাত্র বিনিময় প্রক্রিয়ার মধ্যেই। এটা আমরা আগের পর্বে দেখেছি। আমরা এ’ও দেখেছি যে, মূল্য আসে পণ্যের মধ্যকার বিমূর্তশ্রম থেকে, আর মূল্য পরিমাপ করা হয় সেই শ্রমের সময় (শ্রমঘন্টা) এর ভিত্তিতে। অতএব, মূল্য তৈরী বা নির্ধারণে চাহিদার সরাসরি কোন ভূমিকা নেই।
মোটকথা, শ্রমঘন্টা’র পরিমাণের মাধ্যমে পণ্যের মূল্য নির্ধারিত হয় যা পণ্যের দামের (price) মধ্যে প্রকাশিত। আর এখানে শুধুমাত্র বিমূর্ত শ্রম বিবেচ্য, মূর্তশ্রমের কোন ভূমিকা নেই।
অর্থের (Money) উদ্ভব/আবির্ভাব
বিনিময়ে আমরা নিজের একটা পণ্য অন্যের আরেকটা পণ্যের সাথে বিনিময় করি। একটা বিনিময়ের ঘটনা কল্পনা করি যেখানে ব্যক্তি ‘ক’ ১০ কেজি চাল ব্যক্তি ‘খ’ এর ২টা শার্ট এর সাথে বিনিময় করে। এখানে ক-এর ১০ কেজি চালের মূল্য খ-এর ২টা শার্টের মূল্যের সমান। একইভাবে ‘খ’ তার ২টা শার্টের বিনিময়ে অন্য আরেকজনের কাছ থেকে আরেকটা পণ্য পেতে পারে, সে আবার তার পণ্যের বিনিময়ে অন্য আরেকজনের কাছ থেকে আরেকটা পণ্য পেতে পারে। এইভাবে বিনিময় প্রক্রিয়া অনন্ত কাল ধরে চলতে পারে যেখানে প্রত্যেক পণ্যই একটা আরেকটার সাথে তুলনীয় এবং তুল্য। এখানে উল্লেখ্য যে, মানুষ অন্যদের কাছে থাকা পণ্য পেতে চায়+বিনিময় করে সেই পণ্যের ব্যবহারিক মূল্যের (use value) জন্য, কিন্তু তুলনা করার সময় সেই পণ্যের মূল্যের (value) সাথে নিজের পণ্যের মূল্যের (value) তুলনা করে।
আমরা জানি যে, পণ্যের মধ্যে ব্যবহারিক মূল্য আর বিনিময় মূল্য দুইই থাকে। আর বিনিময়ের মধ্যে একটা পণ্যের মূল্যকে আরেকটা পণ্যের মূল্যের সাথে তুলনা করে প্রকাশ করা হয়। যেমন, ১০কেজি চালের মূল্য ২টা শার্টের মূল্যের সমান। এখানে যে পণ্যের মূল্য তুলনা করা হয়, তা’কে বলা হয় তুলনীয় (relative) আর যা’র সাথে তুলনা করা হয়, তা’কে বলা হয় ‘তুল্য’ (equivalent)। এই তুল্য বা equivalent-এর মধ্যে তিনটা অদ্ভুত জিনিস দেখা যায়ঃ
১। পণ্যের মধ্যে ব্যবহারিক মূল্য ও বিনিময় মূল্য দুইই থাকলেও বিনিময় প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির জন্য শুধুমাত্র একটা থাকে- হয় বিনিময় মূল্য, নাহয় ব্যবহারিক মূল্য। তুল্য বা quivalent পণ্যে ব্যবহারিক মূল্য দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়, শুধু বিনিময়মূল্য প্রকাশিত হয়। যেমন, ব্যক্তি ‘ক’ শার্টের ব্যবহারিক মূল্যের জন্যই সেগুলোর বিনিময়ে তার ১০ কেজি চাল প্রদান করে। কিন্তু ব্যক্তি ‘খ’-র জন্য শার্টের ব্যবহারিক মূল্য শুধুমাত্র বিনিময় মূল্যে পরিণত হয়। কারণ, ব্যক্তি-খ শার্ট ব্যবহার করতে পারে না, শুধু বিনিময় করতে পারে।
২। [প্রথমোক্ত কারণে] তুল্য বা quivalent পণ্যের অন্তর্গত মূর্তশ্রম (যা’ ব্যবহারিক মূল্য তৈরী করে) ঢাকা পড়ে, প্রকাশিত হয় শুধুমাত্র বিমূর্তশ্রম (যা’ মূল্য তৈরী করে)।
৩। [দ্বিতীয়োক্ত কারণে] তুল্য বা quivalent পণ্যে ব্যক্তির একান্ত ব্যক্তিগত শ্রম (মূর্তশ্রম) ঢাকা পড়ে, প্রকাশিত হয় শুধুমাত্র সমাজের সকলের মধ্যকার সাধারণ সামাজিক শ্রম (বিমূর্তশ্রম)।
-প্রাথমিক পর্যায়ে বিনিময় প্রক্রিয়ায় দেখা যায় কোন একটা বিশেষ পণ্য সকলের কাছে ইপ্সিত, ফলে সকলেই সেই পণ্যের সাথে নিজেদের পণ্য বিনিময় করতে আগ্রহী হয়, যেমন স্বর্ণ। স্বর্ণের সাথে বিভিন্ন পণ্যের বিনিময় চলতে চলতে এক পর্যায়ে সমাজে সকলের কাছে এটা স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়। এই পর্যায়ে স্বর্ণ universal equivalent হিসেবে আবির্ভূত হয়, যখন একে আমরা সাধারণভাবে বলি অর্থ (money)। অর্থ হিসেবে স্বর্ণের ব্যবহার শুরু হওয়ার পর আমরা এর মধ্যেও উপরোক্ত তিনিটা বিষয় দেখিঃ ১। বিনিময়ে অর্থ হিসেবে ব্যবহৃত স্বর্ণ শুধুই বিনিময়ের মাধ্যম, অলংকার বা অন্যকিছু হিসেবে এর ব্যবহার (অর্থ্যাৎ, ব্যবহারিক মূল্য) বিলুপ্ত হয়ে যায়।
২। এরফলে, স্বর্ণের মধ্যকার মূর্তশ্রম ঢাকা পড়ে, প্রকাশিত হয় শুধুমাত্র বিমূর্ত শ্রম।
৩। ফলশ্রূতিতে, স্বর্ণের মধ্যকার ব্যক্তিগত শ্রম আড়ালে চলে যায়, প্রকাশিত হয় শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় গড় সামাজিক শ্রম। যেমন- আমরা কখনোই জানতে পারিনা কি খনি থেকে স্বর্ণ উত্তোলনে কি ধরণের কতটা শ্রম দরকার হয়, শ্রমের প্রক্রিয়া কি ধরণের, শ্রমিকের সামাজিক অবস্থা কিরূপ, ইত্যাদি।
বিনিময় প্রক্রিয়ার মধ্যে আমরা দেখেছি যে মানুষ কোন পণ্য পেতে চায় তার ব্যবহারিক মূল্যের জন্য, কিন্তু বিনিময় করে মূল্যের ভিত্তিতে। অর্থ্যাৎ, পণ্যের ব্যবহারিক মূল্য ও মূল্যের মধ্যে একটা আভ্যন্তরীণ কন্ট্রাডিকশন বিদ্যমান। এই কনট্রাডিকশনটাই অর্থের মধ্যে প্রকাশিত হয় একটা বহিঃস্থ কন্ট্রাডিকশনে যেখানে সমস্ত মূর্তশ্রম আড়ালে চলে যায় এবং বিমূর্তশ্রম বিনিময়ের হার নির্ধারণ করে। ফলে কোনো পণ্য উৎপাদনে মূর্তশ্রম, সেই সাথে শ্রমিক, উৎপাদনের পদ্ধতি, সামাজিক অবস্থা, ইত্যাদি আমাদের আড়াল হয়ে যায়। একারণে আমরা বাজারে গিয়ে পণ্য কিনতে গেলে কখনোই দেখতে পাইনা একেকটা পণ্য কোন ধরণের মূর্তশ্রমের ফসল।
এভাবে বর্তমান বাজার ব্যবস্থা অর্থের মাধ্যমে এমনভাবে বিনিময়কে অর্গানাইজ করে যেখানে পণ্য উৎপাদনে শ্রমের প্রত্যক্ষ ভূমিকা আমাদের দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়। সকল পণ্যের মধ্যকার বিমূর্তশ্রম তথা মূল্য বিবেচিত হয়, কিন্তু মূর্তশ্রম (যা’ নানা পণ্যের ব্যবহারিক মূল্য তৈরী করে) অনুধাবন করতে না পারায় শ্রমিকের প্রত্যক্ষ ভূমিকা এবং সেই সাথে শ্রমিক নিজেও বিবেচনার বাইরে চলে যায়। মনে হয় সকল পণ্যে যেমন একই রকম বিমূর্ত শ্রম বিদ্যমান, তেমনি সকল পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত শ্রমিকসকল, উৎপাদন প্রক্রিয়া, তাদের সামাজিক অবস্থা, ইত্যাদিও একই রকম। অর্থ্যাৎ, অর্থের মধ্যে পণ্য উৎপাদনের মূল কারিগর শ্রমিক এবং সমাজের সাথে তাদের সম্পর্ক আড়াল হয়ে যায়।
আগের পর্বে আলীমুজ্জামান ভাই (১৯৭০-৭৬) একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে এসেছিলেন। তিনি বলেছেনঃ “………ছোট্ট মেয়েটিই এতদিন মুরগীটা পালতো, খাবার দিতো, দেখাশুনা করতো। মেয়েটির কান্না থামাতে, গৃহিনী তাঁর মুরগী বেচা টাকা থেকে মেয়েটাকে এক টাকা দিল- তবু কান্না থামে না। দুই টাকা দিল তাও কান্না থামে না।
প্রশ্ন হলো, মুরগীটার ভ্যালু যদি দুইশো টাকা হয় তা হলে ঐ ছোট্ট মেয়েটার ভালবাসার ভ্যালু কতো হওয়া উচিৎ? শ্রমের মূল্যতত্ত্বে, এই ভালোবাসার মূল্যায়ন কি ভাবে হয়?” –
ভাইয়া, উপরে আলোচনায় দেখলাম যে অর্থের মাধ্যমে পণ্য বিনিময় প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত মূর্তশ্রম (যা’ পণ্যের ব্যবহারিক মূল্য তৈরী করে এবং পণ্যের বস্তুগত অস্তিত্বে প্রকাশ পায়) আড়ালে চলে যায়, থাকে শুধু বিমূর্তশ্রম (যা’ মূল্য তৈরী করে)। এখানে মুরগীটি লালন-পালনে মেয়েটির ভালোবাসাসহ মুরগী পালনে তার দক্ষতা এবং তার শ্রমের অন্যান্য ব্যক্তিগত দিক হচ্ছে মূর্তশ্রম আর ঐ মুরগীটি পালনে সে যেটুকু ‘প্রয়োজনীয় গড় সামাজিক শ্রম’ দিয়েছে তা’ বিমূর্তশ্রম। পালিত মুরগীটি অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করায় এখানে শিশুটির মূর্তশ্রমের পুরোটাই বিবেচনার বাইরে। বাজারের পণ্য হিসেবে মুরগীর ভ্যালু এসেছে বিমূর্তশ্রম থেকে। কাজেই শিশুটির ভালোবাসার মূল্য নেই, এর জন্য সে কোন দামও পাবে না।
"ভালোবাসার মূল্য নেই"
মাহমুদ ভাই,
এইজন্যই তো এত সমসা মনে হয় 🙁 😛 :frontroll: :frontroll: :frontroll: আগে কয়েক তা দিয়া রাকলাম.
পুরো ব্যাপার টা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। কিন্তু শেষ লাইনে এসে মনটা খারাপ হয়ে গেল মেয়েটার জন্য। সে তার ভালোবাসার কোন নীতিগত দাম পেল না।
তবে আমি বলব মূল্যতত্ত্বে এদের মূল্য থাক বা নাই থাক এই অবস্তুগত ব্যাপার গুলি যেমন: সময়, ভালোবাসা, দক্ষতা এগুলো হল অমূল্য সম্পদ। এগুলো কেবলমাত্র অর্থের বিনিময়ে পাওয়া সম্ভব নয়।
- মহিউদ্দিন,
বিনিময়ের মধ্যে অর্থ শুধুমাত্র পণ্যের মূল্যকে কমপেনসেট করে, আর মূল্য আসে বিমূর্তশ্রম থেকে। অর্থের মাধ্যমে লেনদেনে একারণে শ্রমের ব্যক্তিগত দিকটা ঢাকা পড়ে যায়। অতএব, ভালোবাসা-মানবতা-সততা-বিবেক ইত্যাদি ভালো গুণাবলী এবং কপটতা-স্বার্থপরতা-পশুত্ব ইত্যাদি দোষের সাথে অর্থের কোন সম্পর্ক নেই।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
চোখ রাখছি। তবে লেখাটা আমার কাছে কঠিন লাগছে ভাষার কারণে। মনে হচ্ছে টেক্সট বই পড়ছি কোন। আরেকটু সহজ করে চাই। অথবা এখনো যেহেতু শুরুর দিকে সে কারণেও এমন মনে হতে পারে।। হয়তো পরের পর্বে আরো পরিষ্কার হবে। লিখতে থাকো।
মোস্তফা ভাই,
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
এটা একটা টেক্সটই বটে, বরং টেক্সটের থেকেও কঠিন। সহজ করে লেখার চেষ্টা করছি খুব। কিন্তু হয়ে উঠছে না কিছুতেই। হয়তো আরো পড়তে হবে, আরো সময় নিয়ে লিখতে হবে।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মূর্তশ্রম আর বিমূর্তশ্রমের জাক্সটাপজিশনে ভালোবাসাতো হাবুডুবু খাচ্ছে দেখি 😛 বিনাশ্রমের হালহকিকত কি হবে কে জানে!
বস্ পড়ছি। চলুক। কিছু প্রশ্ন আইছে মনে। এই টপিকে, ইভেন আগের ইউনুস্টপিকেও। সাজায়া গুছায়া পেশ করবোনে। :thumbup:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
কাইয়ুম,
আমাদের সময়ে শ্রমের মূল্যতত্ত্ব অর্থনীতির বাইরে চলে গেছে বলে আমরা এই ধারায় চিন্তার সাথে পরিচিত নই। এই তত্ত্ব ক্লাসিক্যাল ইকোনোমির মূল ধারায় ছিল অনেক দিন।
- দুইটা কিন্তু আলাদা আলাদা, এক করে ফেলোনা যেন।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
একটা আদর্শ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কি বিমূর্তশ্রম এবং মূর্তশ্রম সমান হবে?
একটু একটু ক'রে পড়ছি।
খুব ভালো লাগছে মাহমুদ। আমার সময় এত কম যে নিজের সাবজেক্টই পড়ার সময় ম্যানেজ করতে পারিনা। তোমার কল্যাণে অনেক কিছু জানা হচ্ছে।
এখনও পড়া হয়নি। পরে পড়ে আলোচনা করব। ব্লগে তোমার আরো নতুন লেখা দেখলাম। শুভ লক্ষণ।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi