১
সমাজবিজ্ঞানে ধর্মের আলোচনা শুরু করেছেন এমিল ডুর্খেইম (Emile Durkheim) তার Elementary Forms of Religiuos Life গ্রন্থে। এখানে তিনি দাবী করেন যে, সমাজই ঈশ্বর (God of a community is the community itself)।
ডুর্খেইম তার স্বভাবসিদ্ধ বিনির্মাণ (Deconstructive) ধারায় শুরু করেছেন কোনটা ধর্ম নয় তা’ দিয়ে। তিনি বলেন, ধর্ম কোন অতিমানবীয় বা রহস্যময় কোন জিনিস নয়। ধর্ম দেবদেবী বা অন্যকোন স্বত্ত্বায় বিশ্বাসও নয়। মানুষকে অতিপ্রাকৃত ও অস্বাভাবিক ঘটনাসমূহের ব্যাখ্যা দান করাও ধর্মের মূল কাজ নয়। আসলে ধর্মের কাজ হচ্ছে সমাজের সাধারণ ঘটনাগুলোর আপাতঃ গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা প্রদান করা, যেমন রংধনু, ঝড়-বৃষ্টি, ইত্যাদি। তিনি আরো বলেন, জগতের সকল ধর্ম সূর্যের উদয়-অস্তে দেবদেবীদের ভূমিকা স্বীকার করেনা। ধর্মের উৎপত্তি দেখতে গিয়ে ডুর্খেইম অষ্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের মধ্যে করা কিছু এথনোগ্রাফিক গবেষণার ফলাফল পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, ধর্ম হচ্ছে পবিত্রতা ও অপবিত্রতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা প্রতীক (symbols), বিশ্বাস (beliefs) আর আচারের (rituals) এর সমন্বিত একটি ব্যবস্থা (এখানে অপবিত্রতা ‘পবিত্র নয়’ অর্থে, কোন খারাপ অর্থে না)। পবিত্রতা ও অপবিত্রতার এই শ্রেণীবিন্যাস এবং এ’ থেকে উদ্ভূত আচার-আচরণসমূহ (তথা ধর্ম) প্রকৃতপক্ষে জন্ম লাভ করে সমাজের সংহতি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে।
ডুর্খেইম আদিবাসীদের মধ্যে ‘টোটেম’ (Totem) এর ব্যবহার বিশ্লেষণ করে তার তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। টোটেম হচ্ছে সাধারণ কোন বস্তু, প্রাণী বা গাছ যা’ একটা বিশাষ গোষ্ঠীকে রিপ্রেজেন্ট করে। সেইসব গোষ্ঠীর মানুষ নিজেদের হেয়ারষ্টাইল, হাটার ধরণ, মেক-আপ ইত্যাদি তাদের নিজ নিজ গোষ্ঠীর টোটেম অনুযায়ী করার চেষ্টা করে। যেমন, যাদের টোটেম ক্যাঙ্গারু তারা ক্যাঙ্গারুর মতো হাটাচলা করার অভ্যাস করে। এই টোটেম প্রকৃতপক্ষে উক্ত গোষ্ঠীর সংহতির স্থায়ী প্রতীক হিসেবে কাজ করে; কারণ সংহতির অন্যান্য প্রতীক তুলনামূলকভাবে অস্থায়ী, যেমন- নেতা মৃত্যুবরণ করে, ভৌগলিক অবস্থান বদলায়, ইত্যাদি। টোটেম যত বেশি মনোযোগ (emphasis) লাভ করে, এর গুরুত্বও (significance) ততো বৃদ্ধি পায়। ক্রমশঃ উক্ত গোষ্ঠীর অভ্যাস, আচার, বিশ্বাস, ইত্যাদি তাদের টোটেমকে অনুসরন করে কল্পিত হয়। এভাবে ক্রমশঃ টোটেম হয়ে ওঠে ‘পবিত্র আইকন’। এপর্যায়ে টোটেমের সাথে সম্পর্কিত যেকোন কিছুই পবিত্র বলে গৃহীত হয়, আর বাদবাকি সব কিছু সাধারণ (profane) বলে বিবেচিত হয়।
পবিত্র আইকন টোটেমকে লক্ষ্য করে যাবতীয় বিশ্বাস আর আচারের (তথা পুজা) মধ্য দিয়ে গোষ্ঠির সদস্যদের মাঝে এই বিশ্বাস জন্মে যে, গোষ্ঠী আছে কারণ টোটেম আছে আর টোটেম আছে বলেই গোষ্ঠী আছে; অর্থ্যাৎ গোষ্ঠী আর টোটেম একে অপরের মধ্যে একাকার হয়ে যায়।
পবিত্র বস্তুকে পারিপার্শ্বিক অন্যান্য সাধারণ বস্তু থেকে আলাদা রাখার জন্য সংরক্ষণ করতে হয়। তাই টোটেমকেও সংরক্ষণ করতে ‘পবিত্র স্থান’ নির্দিষ্ট করা হয়। এইসব স্থান পবিত্র আইকনের প্রভাবে এতটাই পবিত্র (সংরক্ষিত) হয়ে ওঠে যে, এগুলো শত্রু বা শিকারের পশুপাখির জন্য অভয়াশ্রমে পরিগণিত হয় (ক্বাবা শরীফের ‘হারাম’ নামকরণ স্মরতব্য)। বিশেষ বিশেষ বস্তু ও স্থানের এই যে পবিত্রতা (sacredness) তা’ সেই বস্তু বা স্থানের কারণে নয়, তা’ এই কারণে যে সেই বস্তু (তথা টোটেম) সমগ্র গোষ্ঠীকে রিপ্রেজেন্ট করে; অর্থ্যাৎ পবিত্রতা আসে সকলের গোষ্ঠীবদ্ধ তথা সামাজিক অস্তিত্ব হতে। অতএব, টোটেম এবং তা’ সংরক্ষণ করার স্থানকে (এবং এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য সবকিছুই) সম্মান করা, পুজা করা প্রকৃতপক্ষে নিজ নিজ গোষ্ঠী তথা সমাজকেই সম্মান করা, পুজা করা। এইখান থেকেই ডুর্খেইম এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, সমাজই ঈশ্বর। অর্থ্যাৎ ধর্ম পালন করার মাধ্যমে মানুষ প্রকৃতপক্ষে তার নিজ সমাজেরই উপাসনা করে।
সমাজরূপ এই ঈশ্বর যদি সমাজ তথা ব্যক্তি মানুষের সংঘবদ্ধ সামাজিক অস্তিত্বই হয়ে থাকে, তাহলে এই ঈশ্বরের উপাসনা মানে সমাজের সংঘবদ্ধ অস্তিত্বের উপাসনা; অর্থ্যাৎ, সামাজিক সংহতির উপাসনা। তারমানে, যাবতীয় ধর্মীয় বিশ্বাস, আচার-অনুষ্ঠান, ইত্যাদির লক্ষ্য মূলতঃ সামাজিক সংহতি।
সমাজের এই ঐশ্বরিক অস্তিত্ব আরেক ভাবেও উপলব্ধি করা যায়ঃ প্রত্যেক সমাজেই ‘সামাজিক বিবেক’ (Collective Consciousness) আছে যা’ একটি নির্দিষ্ট সমাজের সদস্য হিসেবে সকল ব্যক্তিকে মেনে চলতেই হয়। এই সামাজিক বিবেকের অন্তর্গত বিশ্বাস, মতামত, নৈতিকতা, আদেশ-নিষেধ, ইত্যাদি আসলে সমাজেরই Collective Living এর বিভিন্ন পর্যায়ে বাস্তব প্রয়োজনের উপলক্ষ্যে উদ্ভূত (কুরআনের আয়াতসমূহের শানে-নুযূল বিবেচ্য)। যে বক্তি সমাজের সাথে যত বেশি সংযুক্ত, তার মধ্যে এই সবকিছু তথা সামাজিক বিবেকও বেশি ক্রিয়াশীল। সমাজের সাথে ব্যক্তির নৈকট্য এতো বেশি, সামাজিক বিবেকের প্রভাব ব্যক্তির উপর এতো বেশি যে, ব্যক্তি মনে করে এইসব বিশ্বাস, আদেশ-নিষেধ, নৈতিকতা, ইত্যাদি তার নিজের উপলব্ধিগত নয়, এগুলো বাইরে থেকে কেউ নিয়ে এসেছে। আদতে এই সামাজিক বিবেক তার গোষ্ঠীই তার উপর চাপিয়ে দেয়। অতএব, ব্যক্তি যে বিবেক বা নৈতিকতার কাছে দায়বদ্ধ, তা’ আকাশে অবস্থানকারী কোন ঈশ্বর নয়, তা’ তার সমাজেরই। ব্যক্তির সামাজিক পরিচিতি তথা সমাজে তার অবস্থানও প্রভাবিত হয় উক্ত ব্যক্তি সামাজিক বিবেকের দায়বদ্ধতা মেনে নিচ্ছে কি না তা’ দিয়ে। অর্থ্যাৎ, কেউ সামাজিক বিবেক বা নৈতিকতা অনুসরণ করলে তাকে ভালো মানুষ বলা হয় (যা’ সকলেরই কাম্য) আর অমান্য করলে তাকে বলা হয় অসামাজিক (পতিত, নষ্ট, ইত্যাদি যা’ সাধারণভাবে কেউ কামনা করেনা)।
২
আমরা জানি, সব ধর্মেই ঈশ্বর নিয়ন্ত্রনকামী- সে নিজ নিজ অনুসারীদেরকে নির্ধাতির পথে পরিচালিত করার প্রয়াস পায়। যেসব ব্যক্তি ঈশ্বরের নির্দেশিত পথে চলে তারা পুরষ্কার পায়, আর যারা বিপথগামী হয় তারা শাস্তি পায়। ঈশ্বরের প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করলে ইহকাল-পরকালে আসে সুখ-শান্তি; বিপথে গেলে অনিবার্য ধ্বংস। – এই এনালোজিতে ঈশ্বরের স্থলে ‘সমাজ’কে প্রতিস্থাপন করে দেখা যাক কি পাওয়া যায়।-
আধূনিক শিল্প সমাজের মূল চালিকা শক্তি হলো মানুষের শ্রম। আর তাই ব্যক্তির জন্য এই সমাজ তথা ঈশ্বরের নির্দেশিত সঠিক পথ হলো নিয়মিত কাজ করা। একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ কাজের মধ্যে ডুবে থাকবে, কাজের বিনিময়ে জীবিকা নির্বাহ করবে। আর মানুষকে এই কর্মময় পথে চালিত করার টেকনিক হলো work ethic যা’ উদ্ভূত হয়েছে ইউরোপে, শিল্পায়নের প্রাথমিক পর্যায়ে।
Zygmunt Bauman তার Work, Consumerism and the New Poor (2005) গ্রন্থে সংক্ষেপে চারটি অনুসিদ্ধান্তের মাধ্যমে work ethic-কে ব্যাখ্যা করেছেনঃ
১। সুখী এবং সন্তুষ্ট হওয়ার জন্য যা’ কিছু প্রয়োজনীয় তা’ পেতে হলে ব্যক্তিকে এমন কিছু কাজ করতেই হবে যা’ অন্যরা মূল্যবান এবং অর্থের মাধ্যমে বিনিময়যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করে;
২। যেটুকু আছে তা’ই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা এবং আরো বেশি কামনা না করা ভুল, বোকামী, নৈতিকভাবে ক্ষতিকর। কর্মময়তা নিজেই একটা মূল্যবোধ, একটা মহৎ ব্যাপার। কর্মই জীবন। আর তাই কর্মের মধ্যে নিজেকে সর্বাত্মক নিংড়ে না-দেওয়াটা জীবনের অপচয় যা’ প্রকারান্তরে অযৌক্তিক।
– এই দুই থেকে যে ঐশ্বরিক আদেশটা নাযিল হয়, তা’ হলোঃ কাজে যাও, এমনকি যদি তুমি না-ও দেখতে পাও সেই কাজের মাধ্যমে তুমি নিজের সুখ ও সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে কি কি পেতে পারো। কারণ, কর্মময়তা ভালো আর কর্মহীনতা খারাপ।
৩। প্রত্যেক মানুষের কাজ করার ক্ষমতা আছে যা’ বিক্রয়যোগ্য এবং অনেকেই তাদের সেই ক্ষমতা বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করে। ব্যক্তির মালিকানায় যা’ আছে তা’ তার পূর্বের কর্ম এবং ভবিষ্যতে কাজ করার ইচ্ছের মাধ্যমে অর্জিত। বেশিরভাগ মানুষই তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে। আর তাই যারা কোন কারণে কাজ করতে ব্যর্থ তাদের জন্য কর্মঠদের সম্পদ বা মুনাফা থেকে কোন কিছু আকাঙ্ক্ষা করা অন্যায্য।
৪। প্রকৃত কাজ হচ্ছে কেবলমাত্র সেই কর্ম যাকে অন্যরা মূল্যবান বলে বিবেচনা করে, যাকে কেনা ও বেচা যায়। বাদবাকি সব সময় ও কর্মক্ষমতার অপচয়।
– শিল্পযুগের আগে কয়েকশ’ বছর ধরে মানুষ মূলতঃ কৃষিভিত্তিক জীবন যাপন করেছে যেখানে নিরবচ্ছিন্নভাবে সারা বছর কাজ করার প্রয়োজন ছিলোনা; ফসলের মৌসুমে কাজ করেছে আর মৌসুম শেষ বিশ্রাম করেছে। কিন্তু এভাবে ত শিল্প কারখানা চলে না। শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করতে হয়, সারা বছরই। তাই শিল্পায়নের প্রাথমিক যুগে মানুষকে Work Ethic বা নৈতিকতার মাধ্যমে সারা বছর কারখানায় কাজে উদ্বুদ্ধ (প্রকৃত পক্ষে বাধ্য) করা হয়েছে।
কিন্তু মানুষকে একটা বিদ্যমান জীবনধারা থেকে নতুন ধরনের জীবনে নিয়ে আসতে শুধু নৈতিকতা যথেষ্ট ছিলনা। সেই নৈতিকতাকে উপযুক্ত বস্তুগত সামাজিক অবস্থার (Objective social condition) মধ্য দিয়ে প্রয়োগ করতে হয়েছে। লংগরখানার (poor house) বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই সামাজিক অবস্থার রূপ উপলব্ধি করা যায়ঃ
লংগরখানায় শুধ্যমাত্র ‘প্রকৃত গরীব’দের আশ্রয় দেওয়া হয়। এখানে একটা ব্যাপার নিশ্চিত করা দরকার ছিলো যে অলস ব্যক্তিরা যেন নিয়মিত শ্রম এড়িয়ে থাকার জন্য সেখানে আশ্রয় না পায়। তারমানে, প্রকৃত গরীবদের চিহ্নিত করে সেখানে আশ্রয় দিতে হবে। কিন্তু প্রকৃত গরীব চিহ্নিত করার ত’ কোন সহজ উপায় নাই। এ কারণে একটা পরোক্ষ পদ্ধতি বেছে নেওয়া হলো- লংগরখানায় থাকার পরিবেশ, খাবার-দাবার, অন্যান্য সুবিধা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হলো যেখানে কোন রকমে শুধু জীবন বাঁচানো যায়। সেখানকার জীবন এতোটাই দুর্বিষহ করে ফেলা হলো যেন কেউ সেখানে আশ্রয় নেওয়ার আগে বারবার ভেবে দেখা বাইরের সমাজে তার কোন ভাবে বেঁচে থাকার উপায় আছে কি না। আর লংগরখানার ভিতরকার এইসব ভয়াবহ জীবনের কাহিনী বাইরে যত বেশি ছড়িয়ে পড়তে থাকে, লংগরখানার মধ্যকার জীবন ততোই অমানবিক হিসেবে পরিচিত হতে থাকে। এভাবে এই ধারণা দৃঢ় হয় যে, লংগরখানার জীবন মানবেতর তথা সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের জন্য নয়। অতএব, যারা লংগরখানায় আশ্রয় নেয়, তারা মানুষ পদবাচ্যই নয়।
এই পর্যায়ে ব্যক্তির সামাজিক পরিচয় নির্ধারণে সমাজের প্রভাব ঐশ্বরিক রূপ লাভ করে। ঈশ্বর যেমন নির্ধারণ করেন কে স্বর্গে যাবে আর কে নরকবাসী হবে, সমাজও তেমনি ঠিক করে দেয় কে স্বাভাবিক তথা সামাজিক জীবনযাপন করবে আর লংগরখানার দূর্দশায় নিপতিত হবে। ঈশ্বর যেখানে পূণ্যের ভিত্তিতে ব্যক্তির মাঝে বিভাজন করেন, সমাজ করে নিয়মিত কর্ম এবং কর্মে সদিচ্ছার মাধ্যমে। যারা নিয়মিত কর্মে নিয়োজিত তারাই মানুষ, আর যারা কর্মহীন (তা’ সে যেকোন কারণেই হোক) তারা অসম্পূর্ণ মানুষ (পতিত, দূর্দশাগ্রস্থ, অপরের অনুগ্রহভোগী)।
কর্মপ্রিয় ঈশ্বরের এই সমাজে ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান নির্ণীত হয় তার কর্মের মধ্য দিয়ে। যে ব্যক্তি যে ধরণের কাজে নিয়োজিত, তার সামাজিক মর্যাদা তথা সামাজিক অবস্থানও সেই রকম। যেমন, একজন কারখানা-শ্রমিকের অবস্থান তার মতো কর্মে নিয়োজিত অন্যান্য শ্রমিকের মতো। আবার একজন উচ্চপদস্থ ম্যানেজারের অবস্থান অন্যান্য ম্যানেজারদের সাথে। এই ভাবে ছোট ব্যবসায়ী অন্য ছোট ব্যবসায়ীর সাথে, শিক্ষক অন্যান্য শিক্ষকের সাথে, একেক পেশাজীবি সেই নির্দিষ্ট পেশার অন্যান্যদের সাথে একই সামাজিক অবস্থানে থাকে। এইরূপ সামাজিক স্তরবিন্যাসের ফলে সমাজের সামগ্রিক সংহতি বজায় থাকে। সঙ্গী-সাথী দিয়ে ব্যক্তির সামাজিক পরিচয় নির্ধারণের কারণে ব্যক্তি সচেষ্ট থাকে সমাজে সুস্থ-স্বাভাবিক হিসেবে স্বীকৃত লোকজনের সাথে একই দলে থাকতে। এজন্য সকলেই দলের এবং সেই সাথে বৃহত্তর সমাজের নৈতিকতা মেনে চলে। আর যারা তা’ মেনে চলে না বা চলতে পারেনা, তারা হয় সমাজচ্যুত।
এইভাবে ঈশ্বররূপী সমাজ এই বার্তা শিল্পসমাজের সকল সদস্যকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন যে, তার পছন্দের বান্দারা তারাই যারা নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কর্মে নিয়োজিত থাকবে। আর কেবলমাত্র তারাই সফলকাম। এর বাইরে বাকি সবাই বিপথগামী; আর তারা নিক্ষিপ্ত হবে স্বাভাবিক সমাজের বাইরে (লংগরখানায়, ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্রে, জেলখানায়, পাগলাগারদে)।
কাজেই, সুস্থ-স্বাভাবিক সামাজিক জীবনযাপনের জন্য ঈশ্বরের নির্দেশে আমাদেরকে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করে যেতেই হয়। ঐশ্বরিক এই আদেশ অমান্য করার ক্ষমতা স্বাভাবিক জীবন কামনা করে এমন কারো নেই। যারা এই আদেশ যথাযথ ভাবে মেনে চলবে, তারা সমাজে উন্নতি করবে, উচ্চ মর্যাদায় আসীন হবে। অন্যদিকে যারা এই আদেশ অমান্য করবে, তারা কর্মপ্রিয় এই ঈশ্বরের কোপানলে পড়ে সমাজের বাইরে নিক্ষিপ্ত হবে (তথা marginalized হবে)।
৩
মোটামুটি ভাবে আমরা সবাই জানি যে, এখনকার সমাজটা হচ্ছে ভোগবাদী সমাজ (consumer society) যেখানে স্বাভাবিক ভাবে আমরা সবাই ভোক্তা (consumer)। আর ভোগ করা বলতে বুঝি খাবার জিনিস খেয়ে ফেলা, পরিধানের পোষাক হলে তা’ পরে ফেলা, খেলার সরঞ্জাম হলে তা’ দিয়ে নির্দিষ্ট গেমটা খেলে ফেলা, ইত্যাদি; অর্থ্যাৎ যে কাজের জন্য যে জিনিস, তা ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করা। আমাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষম যেকোন জিনিস পেতে হলে আমাদেরকে টাকা খরচ করতে হয়, নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে ইপ্সিত জিনিসটি কিনতে হয়। আমরা যখন জিনিসটি টাকার বিনিময়ে কিনে ফেলি তখন তা আমাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হয়, ফলে অন্য কেউ তা মালিকের অনুমতি ছাড়া নিজের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যবহার করতে পারেনা।
ভোগের আরেক অর্থ হচ্ছে ধ্বংস করা, আক্ষরিক অর্থে, প্রতীকি অর্থেও। যেমন, আমরা কোন খাদ্য খেয়ে ফেললে তা’ আক্ষরিক অর্থেই নিঃশেষ হয়ে যায়, কোন বস্ত্র পরিধান করলে তা’র উপযোগ বা আকাঙ্ক্ষা পূরণের ক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে যায়, কোন গানের সিডি বারবার বাজালে তা’র উপযোগও ক্রমশঃ নিঃশেষ হয় (অর্থ্যাৎ প্রতীকি অর্থে ধ্বংস হয়)।
দুটো বিষয় এখানে স্পষ্ট করে বলা দরকার- এক, ভোগবাদী সমাজে আমরা সবাই কমবেশি ভোগ করি, করতেই হয়। কিন্তু আমরা কি শুধু ভোগই করি? আর পূর্বের সমাজে কি মানুষ ভোগ করতো না, শুধু কর্মই করতো?- আসলে কর্ম ও ভোগ উভয়ই সমাজে সর্বদা বিদ্যমান। কিন্তু আগের সমাজে কর্মপ্রিয় ঈশ্বর প্রধানতঃ কর্মের মাধ্যমে ব্যক্তির পরিচয় ও অবস্থান নির্ধারণ করতো, আর বর্তমান সমাজে সেটা করে প্রধানতঃ ভোগের মাধ্যমে। আগে যেমন কর্মের মর্যাদা সেই কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তির মর্যাদা নির্ধারণ করতো, এখন ভোগকৃত জিনিসের (পণ্য+সেবা) মর্যাদাসেটা নির্ধারণ করে। দুই, কর্মের মাধ্যমে ব্যক্তি যে কর্মজীবন পেত তা’ ছিল স্থায়ী, (‘lifelong career’) এর মাধ্যমে যে সামাজিক পরিচিতি (অবস্থান+মর্যাদা) লাভ করতো তা যথারীতি স্থায়ী হতো। কিন্তু ভোগ্যপণ্য (consumer goods) বাই ডিফল্ট স্বল্পায়ু এবং পরিবর্তনশীল। আর তাই এসব পণ্য ভোগের মাধ্যমে ব্যক্তি যে সামাজিক পরিচিতি (অবস্থান+মর্যাদা) অর্জন করে তা-ও ক্ষণস্থায়ী এবং পরিবর্তনশীল।
শিল্প সমাজের কর্মপ্রিয় ঈশ্বর মানুষকে নিয়মিত কাজে যেতে বাধ্য করতো Work Ethic তথা নৈতিকতার মাধ্যমে। কিন্তু ভোগবাদের ঈশ্বর ব্যক্তিকে ভোগে বাধ্য করে নৈতিকতা দিয়ে নয়, সম্মোহনের (seduction) মাধ্যমে। অনাস্বাদিত জিনিসের প্রদর্শনী, পূর্বে না-পাওয়া ইন্দ্রীয়সুখের আশ্বাস মানুষকে প্রবল্প ভাবে অকর্ষন করে ভোগের দিকে। আর এই ভাবে ব্যক্তিকে আকর্ষনের মাধ্যমে সম্মোহিত করার জন্য সমাজ ব্যক্তির সামনে ভোগ্যপণ্য সম্পর্কিত তথ্যকে প্রতিমূহুর্তে হাজির করে আরো নতুন, আরো আকর্ষনীয় ভাবে। এইখানে ভোগ্যপণকে আস্বাদন করাটা ব্যক্তির সামনে অধিকার (consumer right) হিসেবে দেখা দেয়, যেখানে পূর্বে কর্মে নিয়োজিত থাকাটা ছিল নৈতিক দায়িত্ব (moral duty)।
ব্যক্তির অধিকার (right) কেউ দাবী না করলে নৈতিক ভাবে সেটা নিতে তাকে বাধ্য করার কোন উপায় নাই। একারণে ভোগবাদের ঈশ্বর একটা নতুন উপায় উদ্ভাবন করে, এটা হলো নান্দনিক বোধ (asthetic interest) যা ব্যক্তিকে ভোগ্যপণ্যের প্রতি সম্মোহিত করে রাখে। ভোগবাদী সমাজে ব্যক্তির সামাজিক পরিচয় নির্ধারিত হয় তার নান্দনিক বোধের ভিত্তি’তে যা’ সাধারণভাবে smartness হিসেবে পরিচিত। এই সমাজে যে যত বেশি মর্যাদাসম্পন্ন ভোগ্যপণ্য ভোগ করবে, সে ততো বেশি স্মার্ট তথা উচ্চ সামাজিক মর্যাদার অধিকারী। স্বাদে প্রায় একই রকম হওয়া সত্বেও KFC-র চিকেনফ্রাই আর ঢাবি’র চারুকলার গেটে রাস্তার পাশের চিকেনফ্রাই মর্যাদায় আলাদা, ফলে তাদের ভোক্তাদেরও সামাজিক পরিচিতি (অবস্থান+মর্যাদা) আলাদা। গুণে-মানে কাছাকাছি হওয়ার পরেও ওয়েষ্টেকস এর জিন্স আর ওডিসির (Opposit to Dhaka College) জিন্সের মর্যাদা এবং ফলশ্রুতিতে তাদের ব্যবহারকারীদের মর্যাদা আলাদা।
ভোগবাদী সমাজে ঐশ্বরিক আদেশ হচ্ছে ভোগ করা, যত বেশি ভোগ ততো বেশি ঈশ্বরের কাছাকাছি তথা সমাজে উচ্চমর্যাদা। এই ঈশ্বরের পছন্দনীয় ব্যক্তি হলো একজন ভোগী যে অগণিত সুখময় ও উচ্ছ্বল ভোগের উপকরণ থেকে তার ইচ্ছে (এবং আর্থিক সামর্থ) অনুসারে অবিরাম ভোগে লিপ্ত। এখানে সুখী জীবন মানে হচ্ছে সব থেকে বেশি আকর্ষনীয়, বেশি ইপ্সিত, বেশি আলোচিত ভোগ্যপণ্যগুলো বাজারে আসার সাথে সাথেই ভোগ করা, সম্ভব হলে অন্য কারো আগেই। আর ভোগ করতে না-পারা হলো অস্বাভাবিক জীবন। অর্থ্যাৎ, ঈশ্বরের অপছন্দীয়। আর এমন ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদাও তাই শূণ্যের কোঠায় যাকে আমরা সাধারণভাবে বলি আনস্মার্ট বা ‘খ্যাত’।
পূর্বের সমাজে ব্যক্তির নিয়মিত কর্মে নিয়জিত থাকার ইচ্ছেকে নিশ্চিত করে নৈতিকতা; কাজে লিপ্ত থাকাটা ব্যক্তির নৈতিক দায়। আর এই সমাজে অবিরাম ভোগের ইচ্ছেকে নিশ্চিত করে স্মার্টনেস। এখানে নৈতিকতা অপ্রয়োজনীয়। একারণে ভোগের জন্য আবশ্যক টাকা কি উপায়ে আসে তা’র তুলনায় টাকা থাকাটাই মূখ্য হয়ে দাঁড়ায়, তা’ সে যেভাবেই অর্জিত হোক। পূর্বের সমাজে যেমন কেউই কাজ না করে অলস বসে থেকে কর্মপ্রিয় ঈশ্বরের বিরাগভাজন হতে চায়না, তা’ সেই কর্মের ফল যা’ই হোক, ঠিক একই ভাবে এই সমাজে ভোগ না করে কেউ ভোগবাদী ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যেতে চায়না, তা’ সেই ভোগ্যপণ্য কেনার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা যেভাবেই অর্জিত হোক। ভোগবাদী ঈশ্বর শুধুমাত্র ব্যক্তির ভোগেই আগ্রহী, অন্য কিছু নয় (উদাহরণ ত আমাদের আশেপাশেই আছে)।
৪
উপরে সংক্ষেপে আলোচনা করলাম ঈশ্বরের (আসলে সমাজের) দুটি ভিন্ন ভিন্ন রূপ- কর্মপ্রিয় ঈশ্বর আর ভোগপ্রিয় ঈশ্বর। ব্যক্তির সামাজিক পরিচয়ে (অবস্থান ও মর্যাদা) তাদের ভূমিকাও খানিকটা বর্ণনা করলাম। এখন দেখা যাক, খোদ সমাজের উপর এদের প্রভাবটা কি রকম, অর্থ্যাৎ এই ঈশ্বরদ্বয়ের নিজেদের ভবিষ্যত কি।
আগেই বলেছি, কর্মপ্রিয় ঈশ্বরের কাছে কেবলমাত্র সেইসব কর্মই কাজ বলে স্বীকৃত যা’ অন্যদের জন্য উপকারী তথা অন্যরা যা মূল্যবান মনে করে এবং তার বিনিময়ে টাকা খরচ করতে রাজী থাকে। এই জাতীয় কর্ম বাই ডিফল্ট সম্মলিত (Collective)। শ্রমিক কারখানায় অন্য অনেকের সাথে একত্রে কাজ করে; এমনকি বাড়িতে ফেরার পথে, বাড়িতে, আবার কারখানায় যাওয়ার পথেও তারা একত্রিত। অর্থ্যাৎ, শ্রমিকরা কাজের মধ্যে একত্রিত, আবার কাজের বাইরে অবসরেও। আর তাদের কর্মের ফলাফল হচ্ছে অন্যদের চাহিদা পূরণে সক্ষম পণ্যের উৎপাদন যা টাকার বিনিময়ে বিক্রয়যোগ্য।
কিন্তু ভোগপ্রিয় ঈশ্বরের কাছে ভোগই মূখ্য। আর এই ভোগ বাই ডিফল্ট ব্যক্তিগত (Individual) ব্যাপার। ব্যক্তি যখন কোন কিছু ভোগ করে, তা’ সে একা একাই করে। এই ভোগের জন্য সে পণ্যকে ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করে। সম্মিলিত ভাবে কিছু ভোগের সুযোগ আছে বটে (যেমন, বিয়ের দাওয়াত), কিন্তু তা’ ব্যক্তিগত মর্যাদায় খুব সামান্যই প্রভাব ফেলে। তাই মূল্যবান বা গুরুত্বপূর্ণ ভোগ কেবলমাত্র সেইগুলো যা’ ব্যক্তিগত, যা’ ভোক্তাকে অন্যদের থেকে আলাদা মর্যাদা দান করে।
অতএব, দেখা যাচ্ছে যে, কর্মপ্রিয় ঈশ্বর কর্ম করতে বাধ্য করার মাধ্যমে মানুষকে সংঘবদ্ধ করে। এটা মূর্ত হয়ে ওঠে এই ঈশ্বরের সমাজে দৃঢ পারিবারিক মূল্যবোধ, সমবায়ভিত্তিক সংগঠন, ইত্যাদির প্রাধান্যে। আর ভোগপ্রিয় ঈশ্বর ভোগ করতে বাধ্য করার মাধ্যমে মানুষকে ব্যক্তিকেন্দ্রীক করে ফেলে। এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে ভোগবাদী সমাজে পারিবারিক মূল্যবোধের ভেঙ্গে পড়ায়, সমবায়ভিত্তিক সংগঠনের স্বল্পতায়, নিতান্ত ব্যক্তিগত কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার প্রবণতার মধ্যে।
৫
আমাদের সমাজে দুই ঈশ্বরই বিরাজমান; অর্থ্যাৎ আমাদের সমাজে নৈতিক মূল্যবোধও লোপ পায়নি, আবার ভোগের প্রবণতাও লক্ষ্যনীয়। তবে একথা না মেনে উপায় নেই যে, বর্তমানে নৈতিকতার জোর ক্রমশঃ কমছে আর ভোগের প্রবণতা বাড়ছে। তারমানে কর্মপ্রিয় ঈশ্বরের তুলনায় ভোগপ্রিয় ঈশ্বরের প্রভাব বাড়ছে। এই পরিবর্তনটা ধরা পড়ে স্থায়ী কর্মের ক্রমঃহ্রাসমান আকর্ষন (যথা সরকারী চাকুরী), নৈতিকতার অবক্ষয় (সুদ-ঘুষ-দালালীর মাধ্যমে উপার্জনকে গ্রহনযোগ্য হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া), নিত্যনতুন ভোগ্যপণ্যের (দ্রব্য ও সেবা) আগমন, ইত্যাদির মধ্যে।
প্রশ্ন হলো- দুই ঈশ্বরের মধ্যে আমি কাকে অনুসরণ করবো?- উপরের আলোচনা আমলে নিলে ক্রমঃবর্ধমান হারে ক্ষমতা অর্জনকারী ভোগপ্রিয় ঈশ্বরকেই পুজা দিতে হয়, তথা ভোগে মনোনিবেশ করতে হয়। কিন্তু সম্পূর্ণরূপে ভোগে লিপ্ত হতে হলে নৈতিকতাকে সম্পূর্ণরূপেই ছুঁড়ে ফেলতে হয়। কারণ, ভোগ ব্যক্তিগত; আর তাই এই আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী, স্বদেশী সবাইকে বাদ দিয়েই চিন্তা করতে হয়। কারণ, তাদের চিন্তা মাথায় রাখলে তাদের জন্যও খরচ করতে হবে যা’র ফলে নিজের ভোগের সুযোগ এবং ক্ষমতা কমে যাবে।
কিন্তু কর্মপ্রিয় ঈশ্বর এখনো বিদ্যমান, নৈতিকতা এখনো মিলিয়ে যায়নি। আর তাই আমি এখনো ভুলতে পারিনা অন্যান্য সকলের কথা, তাদের প্রতি আমার দায়দায়িত্বের কথা (আমার বিশ্বাস, প্রায় সকল এক্স-ক্যাডেটই এমন)। কাজেই, এখনো আমি কর্মপ্রিয় ঈশ্বরেরই পুজা করি, তথা অন্যদের চোখে মূল্যবান কর্মে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি। এর ফলে ভোগপ্রিয় ঈশ্বর স্বভাবতঃই আমার প্রতি রূষ্ট, আমার সামাজিক অবস্থানও তাই ভোগবাদী এই সমাজের নিচুতলায়। আমি তাদের দলভূক্ত যাদেরকে বলা হয় আনস্মার্ট বা ‘খ্যাত’, যাদের সাথে ভোগপ্রিয় ঈশ্বরের পুজারী স্মার্ট-ভদ্রলোকেরা ওঠাবসা করতে অনিচ্ছুক। এই নিচু সামাজিক পরিচয়ই অনেক (আসলে বেশিরভাগ) ব্যক্তিকে ভোগপ্রিয় ঈশ্বরে পুজায় ঠেলে দেয়, ভোগে বাধ্য করে।
আমি ভোগবাদের ঈশ্বরকে পুজা দিতে চাইনা। কারণ, আমি জানি আমার আজকের এই আমি হয়ে ওঠার পেছনে ভোগবাদের ঈশ্বরের কোন ভূমিকা নেই, এর পুরো কৃতিত্ব কর্মপ্রিয় ঈশ্বরের যে আমার পরিবারকে (রাষ্ট্রকেও) আমার পড়াশোনার জন্য অপরিমেয় ত্যাগে উদ্বুদ্ধ করেছে, আমার আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী এবং অন্যান্যদের মনে আমার প্রস্তুতিপর্বে আমার জন্য সহানুভূতির উদ্রেক করেছে। আমি এদের সকলের কাছে ঋণী। আমার নৈতিকতা আমাকে তাদের সকলের অবদানের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমাকে উদ্বুদ্ধ করে এমন কিছু কর্ম করার যা’ অন্যদের কাছে মূল্যবান, যা’ থেকে অন্যরাও উপকৃত হবে। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ভোগে এইজন্য আমি মনোনিবেশ করতে পারিনা।
হে ভোগের ঈশ্বর, আমি শুধুমাত্র ভোগের পুজা দিতে অপারগ। আমায় মাফ করো। আর তা’ না করলেও আমার খুব একটা সমস্যা নাই। কারণ, ‘খ্যাত’ পরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকতে আমি ভয় পাইনা।
😀
মিয়া, পইড়া প্রথম হও আপত্তি নাই। না পইড়া প্রথম হওয়ার জন্য জাহিদের ব্যঞ্চাই :grr: । আমি যখন ব্লগটি পড়ে শেষ করি তখন আর কোন পাঠক ছিল না। পড়া শেষ করে মন্তব্য করতে করতে তুমি আইসা একটা হাসি দিয়া চইলা গেলা, এটা মানি না, মানবো না। x-( :tuski: :duel: :chup: :gulli2:
পড়েই প্রথম 🙂 । তবে অফিসে আছি। পরে আলোচনা করা যাবে। আগের লেখাটিও পড়েছি, কিন্তু মন্তব্য করা হয়নি 🙁 ।
কী দুর্দান্ত একটা লেখা! সমাজের ঐশ্বরিকতা নিয়ে একটা ছোট প্রবন্ধ ইংরেজিতে পড়েছিলাম, কিন্তু এমন বিস্তারিত বর্ণনা পড়ি নাই। বুঝিও নাই আগে! আমি আশা করছিলাম ধর্ম আর সমাজ নিয়ে টুকটাক মন্তব্যের পরে আপনি এমন একটা চমকে দেয়া লেখা দিবেন।
দুই ঈশ্বরের দ্বন্দ্ব নিয়ে বলি- আপনার মতো আমার অবস্থানও সমাজের নিচুতলায়, যেহেতু কর্মপ্রিয় ঈশ্বর আমার বিশ্বাসে বসবাস করছেন। খেয়াল করলে দেখবেন এই ঈশ্বরের অধীনে থাকা অনুসারীরা যেমন যুথবদ্ধ, তেমনি তাদের মাঝে ভোগপ্রিয় ঈশ্বরের অনুসারীদেরকেও সমানভাবে হেয় করার মনোভাব বিরাজ করে। প্রতিক্রিয়াটা হয়তো ঈর্ষাকাতরতা বা অক্ষম ক্ষোভ থেকে জন্মায়, কিন্তু সেটা অনুভূত হয় সবার মাঝেই।
ভোগপ্রিয় ঈশ্বরের অনুসারীরা সেই তুলনায় দ্বিধাবিভক্ত। অনেকে কর্মপ্রিয় ঈশ্বরের অনুসারীদের প্রতি সহানুভূতিশীলও বটে! এই জনগোষ্ঠীর এনালাইসিস খুব চমৎকার লেগেছে আমার।
আমার ধারণা কর্মপ্রিয় ও ভোগপ্রিয় ঈশ্বরের যুদ্ধে শেষপর্যন্ত প্রথমজন জিতে যাবেন। অনুসারীদের একত্র আর সমমনা অনুভব দেবার জন্যে এই ঈশ্বরের ছায়াতলে মানুষ সহসাই নিরাপদ বোধ করে (সামাজিক প্রতিপত্তি না থাকা সত্ত্বেও)। অন্যদিকে ভোগপ্রিয়দের জনবিচ্ছিন্নতা একটা সময়ে তাদের হতাশ ও আত্মবিনাশী করে তুলবে (ইতোমধ্যেই তেমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে)। ভোগের একটা স্টেট হলো ইউফোরিয়া। মানুষের স্নায়ু ও শরীর এই ইউফোরিক স্টেট খুব বেশি সময় ধরে রাখতে পারে না। দ্রুত ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়ে। চিন্তা ও কাজে স্থবিরতা আসে। অপরদিকে শ্রম ক্রমেই মানুষকে আনন্দ দেয়, হরমোনাল কিছু ব্যাপারও ঘটে বলে জানি।
যাক, এই বিতর্ক অন্তত প্রাচীন ধর্ম ও আধুনিক বিজ্ঞানের লড়াইয়ের মতো ফিউটাইল না! 😀
সহমত। আমি মোটামুটি নিশ্চিত; মানে আমি বলতে চাইছি নিকট ভবিষ্যতে ভোগের উপর থেকে মনোযোগ সড়ে গিয়ে আবার উৎপাদনের প্রাধান্য ফিরে আসবে।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
ইয়ে, মাহমুদ ভাই, আরেকটা কথা। আমার মনে হয় লেখাটির বিষয় ও আলোচনার তুলনায় ডিসক্লেইমারটি অনেক 'জলো' হয়ে গেছে। 😛
এই লেখা পড়লে যে কেউই বুঝবে যে এটা কোন বিষয়ে। আপনি ওটা তুলে দিতে পারেন।
দিলাম 🙂
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
:hatsoff:
আমি তাহলে এই টপিকের কাছাকাছি বিষয় নিয়ে পোস্ট দেয়ার হাত থেকে রেহাই পেলুম, নাকি? :dreamy:
উঁহু, সেটা হবে না। x-(
সময় করে পোষ্টটা দিয়ে ফেলো।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
বিশ্বাস ব্যবস্থা আর ভোগের সম্পর্কটা ইন্টারেস্টিং। ঝামেলায় আছি, পরে ভাল করে পড়ে কমেন্টায় যাবো।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
সবায় দেখি আমার ডিফল্ট কমেন্ট করা শুরু করলো। 🙂 🙂 🙂
ধর্ম নিয়ে আপনার প্রাথমিক পর্যবেক্ষনের সাথে পুরোপুরি সহমত । আমারো মনে হয় সামাজিক ভাবে সুসংহত রাখার জন্যই আল্লাহ আমাদের ধর্ম দিয়েছেন । এরপরের বিশ্লেষন ও ভাল লেগেছে । সমাজের পরিবর্তনটা সুন্দর করে দেখিয়ে দিয়েছেন । আচ্ছা একটা প্রশ্ন ছিল, ভোগবাদী সমাজ কি ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে শুরু হয়েছে ? সমাজ পরিবর্তনের টাইমলাইন নিয়ে কোন আলোচনা করবেন নাকি ? আর ভালো থাকুন । আপনার লেখা সবসময় আমাকে নতুনভাবে ভাবতে সাহায্য করে ।
২য় বিশ্বযুদ্ধ না, আমার মনে হয় শিল্প বিপ্লবের পরে থেকেই ভোগবাদি সমাজ শুরু হয়েছে। কি বলেন মাহমুদ ভাই ???
আদনান ও স্বপ্নচারী,
সমাজে ভোগবাদের অবস্থান সব সময়ই ছিলো। কারণ, মানুষ শুধু উৎপাদনই করেনা, ভোগও করে। কিন্তু শুরুর দিকে উৎপাদনের প্রাধান্য ছিল, ভোগ ছিলো তারপরে। কিন্তু ভোগবাদী সমাজে
ভোগই প্রধান, উৎপাদন তারপরে।
ভোগবাদের প্রাধান্যের শুরু ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরেই, নির্দিষ্ট করে ফোর্ডিজমের উদ্ভবের সাথে ( এ' বিষয়ে পোষ্টমডার্নিজম বিষয়ক আমার পোষ্টে খানিকটা আলোচনা আছে)।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
ঘুমটা কি ভোগের মধ্যে পড়ে? ঘুমমুখী একটা সমাজ দরকার। যেখানে কাজের কোন বালাই নেই খালি ঘুম আর ঘুম।
একটা প্রশ্ন মাহমুদ ভাই, উন্নত বিশ্ব কি কর্মবাদী নাকি ভোগ বাদী? এরা কাজের সময় খাটে গাধার মত আর বিনা প্রয়োজনে শপিং করে পাগলের মত। আমি বুঝি না এদের সমাজটা কোন ক্যাটাগরিতে পড়বে।
-মান্নান,
ঘুম ভোগের মধ্যে পড়ে, আবার পড়েও না। যেমন, তুমি যদি কর্মব্যস্ত একটা দিনের শেষে শারীরিক শক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য ৬/৭ ঘন্টা ঘুমাও সেটা ভোগ নয়। কিন্তু তারচেয়ে বেশি, মানে ৮/১০ ঘন্টা ঘুমালে সেটা এক প্রকার ভোগ যা'কে work ethic বলে অলসতা (একটা মন্দ কাজ)।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আর হ্যাঁ, উন্নত বিশ্বে এখন মূলতঃ ভোগবাদই চলছে। ভোগবাদে কিছু মানুষকে দেখবে গাধার মতো খাটতে (workaholic), সবাই নয় কিন্তু। গাধার মতো খেটে চলা এইসব মানুষের পেশাগুলোতে কর্ম আর ভোগের পার্থক্য নাই, দুটো একাকার হয়ে আছে (The vocation itself is entertaining. It is full of unexperienced experiences, and hence, exciting)। এইসব পেশাজীবিরা নিত্যনতুন কর্মস্থলে ভ্রমন করে, নতুন নতুন এসাইনমেন্ট নেয়, নতুন নতুন মানুষের সাথে ওঠাবসা করে, নতুন নতুন পণ্য/সেবা উৎপাদন করে, এমনকি প্রায়শঃই কর্মস্থল পরিবর্তন করে। এক কথায়, এসব কাজ ফ্লেক্সিব্ল+ক্রিয়েটিভ। তাই এসবের মাঝে দিনরাত ডুবে থাকলেও তারা বোর্ড হয় না। বরং নিত্যনতুন অনাস্বাদিত অভিজ্ঞতা লাভ করে। এইসব পেশা তাই সবথেকে বেশি গ্ল্যামারাস, এবং একারণে সবার আরাধ্য ও সবথেকে বেশি মর্যাদাপূর্ণ। পাশাপাশি যেসব কাজ স্থায়ী, রূটিনমাফিক- বদলি নাই, এসাইনমেন্টের নতুনত্ব নাই, একই অফিসে দিনের পর দিন একই কলিগের সাথে ওঠাবসা- সেইসব কাজ deadly boring। এসবের তাই গ্ল্যামারও কম, লোকে এসবকে চায়ও কম, এসবের মর্যাদাও তাই কম।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মান্নান ভাইয়ের কমেন্টে একটা কথা মনে পড়লো।
এক হিসাবেই আমি চরম ভোগবাদী। সেটা হলো ঘুমের বেলায়।
😀 😀 😀
মাহমুদ ভাই,
সমাজ এবং ঈশ্বরের এনালজিটা ভাল লাগছে...
আমার মনে হয় ভোগপ্রিয় এবং কর্মবাদী ঈশ্বর কখনোই একে অন্যকে পরাজিত করতে পারবে না। অর্থাৎ এই দুই পার্টির মধ্যে টানাপোড়েন চলতেই থাকবে চলতেই থাকবে...ব্যাপারটা অনেকটা দাঁড়িপাল্লার মতন, একবার এ পাল্লা ভারী হবে তো পরে অন্য পাল্লা...
বর্তমানে আমাদের দেশে ভোগবাদী ঈশ্বরের পাল্লা ভারী হচ্ছে..নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সামাজিক সম্প্রীতি ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে...কিন্তু তাই বলে কি একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাবে? কখনোই না...কারণ, শেষ পর্যন্ত আমরা তো মানুষই... 😀
সামাজিক বিজ্ঞানের সবচেয়ে প্রচলিত একটা কথা যেটা প্রায়ই শুনি তা হ্ল, 'Probably the truth lies in between...'
সম্ভবত কথাটা এখানেও দারুনভাবে প্রযোজ্য... :-B
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
-একেবারে আমার মনের কথা।
উৎপাদন ও ভোগ দুইই চিরকাল সমাজে থাকবে, কারণ মানুষ কাজ করে ভোগের জন্যও। তবে একেক সময় একেকটার উপর মনোযোগ বেশি পড়ে যায়; তখন সমাজে কিছু পরবর্তনও দেখা যায় যেমনটি আমরা দেখছি বর্তমান সময়ে।
পোষ্টমডার্নিজমের একটা মূল দাবীই হলো সত্যের আপেক্ষিকতা। সত্য আবসোলিউট নয়, এটি কনটেক্স (সময়+স্থান) অনুযায়ী নানারূপে দেখা দেয়।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
অসাধারন লাগলো মাহমুদ ভাই ...... :boss: :boss: :boss: :boss:
অপেক্ষাতে আছি কবে আপনি ত্রিশ দশকের মন্দা আর বর্তমানের মন্দা নিয়ে বিশ্লেষন মুলক লেখা দেবেন।
- এই বিষয়ে বিশ্লেষণমূলক লেখার জন্য প্রয়োজনীয় পড়াশুনা নাই। তাই মনে হয় সহসা তোমার আশা পূর্ণ হচ্ছে না। তবে খুব সাদামাটা ভাবে যেটুকু বুঝি, ত্রিশের দশকের মন্দা হয়েছিলো সেই সময়কার সমাজের ভোগের ক্ষমতার তুলনায় বেশি উৎপাদনের কারণে, আর এখনকার মন্দা হয়েছে এই সময়কার সমাজের উৎপাদনের তুলনায় ভোগ বেশি করার কারণে (এখানে সমাজ বলতে মূলতঃ আমেরিকার সমাজকে বুঝিয়েছি)।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
ব্যাপার না বস। আপনি সময় নিয়ে পড়াশুনা করে লিখেন।
ভাল লাগলো। মাহমুদ ভাই, আপনি কলেজ থেকেই ভাল লেখেন। আশা করি, আরও কিসু লেখা অচিরেই পাব।
আপনার লেখা সবসময়ই নতুন করে চিন্তা করতে শেখায় মাহমুদ ভাই।
কর্মবাদী ঈস্বরের পাল্লা সবসময় ভারী থাকুক- এটাই চাওয়া।
আমার পোষ্টে তোমার ডিফল্ট কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।
- আমারও।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ ভাই, এইটা ডিফল্ট কমেন্ট না! আসলেই আপনার পোস্টগুলা বেশ সময় নিয়ে পড়ি এবং অনেক নতুন কিছু অনুধাবন করি। আমার ভাবের প্রকাশটা মনে হয় সবসময় একরকম হয়ে যায়! 🙁
আরে বাপু,
ঠাট্টাও বোঝো না :bash:
আমার কমেন্টটা একটা জুক্স-কমেন্ট আছিল।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
তানভির, =)) :khekz:
উফ মাহমুদ, তুমি একটা না .........।
মান্নানের মন্তব্যে পিলাস
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
কথাগুলো একদম আমার মনের কথা.....।
ভোগবাদ আর কর্মবাদের মাঝে সামঞ্জস্য রেখেই চলার পক্ষপাতী। যেমন : ছোট একটা উদাহরণ দিয়ে বলি। এক লোক কর্মকে যদি তার জীবনের পরম প্রাপ্তি মনে করে কাজ করে যায় দুইটা ব্যাপার ঘটতে পারে। একটা হচ্ছে কর্ম করার মাঝে আত্মতৃপ্তির আনন্দ। সেটাতে সন্তুষ্ট যারা থাকেন তাদের জন্য কোন সমস্যা না বরং যারা কর্মকে গলাধকরণ করে দীর্ঘ সময় বাদে অনন্ত ভোগের আশায় তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অনিশ্চিত হয়ে যায়।
আগের পোস্টে আমি সেলফ ডিফাইন যে সুখের কথা বলেছিলাম তা সমাজের ইরেস্পেকটিভ আমার উপরের উদাহরণের প্রথম ব্যাক্তির ধরণকে মাথায় রেখে বলেছিলাম। যদি কর্মবাদের ঈশ্বরকে পূজা দিতে হয় তবে এই প্রবণতাকে কি প্রমোট করা যায়?
এই পোস্টের বিষয়গুলোর বিশ্লেষণ খুব ভালো লেগেছে। আগের পোস্ট রিলটেড যে ব্যাপারগুলো প্রশ্ন জেগেছিলো তার পেছনের কারণ গুলো বুঝা গেলো। সময় করে আরো ডিটেইলস মন্তব্য করবো।
আমিন,
ব্যক্তি ডিফাইন করেনা, এটা করে ঈশ্বর (অর্থ্যাৎ সমাজ)। আর ব্যক্তি সেটা মেনে নেয়, নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু ব্যক্তির এই বাধ্য হওয়াটা সামাজিক সিষ্টেমের ভিতর দিয়ে এমন ভাবে হয় যে, ব্যক্তি মনে করে সে তার নিজের ইচ্ছাই অনুসরণ করছে (পোষ্টের মূল কথা এটাই, আমি হয়তো ঠিক মতো লিখতে পারি নাই)।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
এখন আমি ধরতে পারছি মোটামুটি। মনে করার ব্যাপারটা সমাজ আরোপিত। এই ব্যাপারটাই তো। আছ্ছা পরে কথা বলবো। এখন একটু বিজি।
আসলে সমাজে এর সুযোগ খুবই কম। তবে বাস্তবে সম্ভব, এমন কিছু ব্যক্তি সব সময়ই পাওয়াও যায়। কিন্তু সমাজ তাদেরকে ভিতরে স্থান দেয় না, তাদের স্থান হয় সমাজের বাইরে। তারাই বোহেমিয়ান, জিপসী, এবং তাদের মতো যেকোন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসমূহ।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আর হ্যা মাহমুদ ভাই, গত পোস্টে একটা আলোচনায় আসছিলো সমাজের মূল্যবোধের পরিবর্তন বিষয়ে। আমি যেখানে বলেছিলাম সামাজিক মূল্যবোধ সমাজের প্রয়োজন অনুসারেই পরিবর্তিত হবে কোন নির্দিষ্ট শ্রেণীর আঙুলের ইশারায় না। সেই ব্যাপারে আপনার দ্বিমত ছিলো। যেটা নিয়ে আলোচনা এই পোস্টে হওয়ার কথা ছিলো। এখন ষমাজ ঈশ্বরের এনালোজি দিয়ে আমি কিন্তু এখনও আমার কথাটাই রিফ্লেকট করছে। এই ব্যাপারে আপনার মন্তব্য আশা করছি।
আমিন,
আমি সরি যে তোমার ঐ কমেণ্টের কথা এই ব্লগ লিখার সময় ভুলে গেছিলাম।
সমাজ আর ব্যক্তি বিষয়ক যে প্যাচের মধ্যে তুমি ঘুরপাক খাচ্ছো তা' সামাজিক বিজ্ঞানের পরিমন্ডলে structure Vs Agency-র দ্বন্দ্ব হিসেবে বেশ পরিচিত। এই প্যাচের খানিকটা পরিষ্কার হতে পারে আমার 'ভাসাই ভাবের ভেলা' পোষ্ট এবং সেখানে মুহাম্মদের করা মন্তব্য থেকে যেখানে সে সিনেমার ব্যখ্যায় ধারণাটা ব্যবহার করেছে।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
দেখছি এখনই।
আমি তাদের দলভূক্ত যাদেরকে বলা হয় আনস্মার্ট বা ‘খ্যাত’, যাদের সাথে ভোগপ্রিয় ঈশ্বরের পুজারী স্মার্ট-ভদ্রলোকেরা ওঠাবসা করতে অনিচ্ছুক।
তীব্র সহমত
😮 😮 😮
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
x-( মাহমুদ ভাই কি আমারে আকারে ইঙ্গিতে ভোগবাদী কইয়া গালি দিলেন?
তোমারে গালি দেওয়ার কোন কারণ নাই রে ভাই।
আর যাদেরকে এখন ভোগে লিপ্ত দেখবে, তাদেরকেও আমি গালি দিবো না। কারণ, তারা যা' করে সেটা নিজে থেকে করেনা, সিষ্টেমের চিপায় পড়ে করে (যদিও মনে করে তারা ব্যক্তিগত ইচ্ছেতেই তা' করে)। কাজেই, গালি যদি দিতেই হয় তাইলে সেটা দিমু সিষ্টেমরে, ব্যক্তিকে নয়।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
চাচাজান ব্লগটা দারুন লেখছেন... আমি এই টাইপের লেখার খোজে আসি...
Nahian
জ্ঞানের সন্ধান করিও না,কেবল বিভ্রান্ত হবে বাছা!
People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.
@শাহরিয়ার,
সেইজন্যই ত' ঈমান আনার কথা বলা হয়েছে। ঈমান আনো, যা সাধারণভাবে সবাই বিশ্বাস করে, সেটা বিশ্বাস করো, আরামে থাকবে। 😛
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
জ্বী ভাইয়া,অনেক ঠেক খেয়ে সেটা বুঝছি!
People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.
পিচ্চি,
কলেজের ভিতরে থেকেই এই কথা, বাইরে আসলে ত' খবর আছে হে!
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
খুব ভালো লেগেছে। :boss:
Nahian
কঠিন হইছে।
মাষ্টার,
গাইতে গাইতে গায়েন। অনেক পরিনত।
সমাজে ঈশ্বরের প্রভাবের মত আরেকটা অদৃশ্য শক্তির তীব্র প্রভাব আছে। প্রেমের প্রভাব। কিছু জান নাকি এ ব্যাপারে? একটা পোষ্ট দাবী করছি। ফাজলামি নয় কিন্তু। সিরিয়াস। 🙁
ডাক্তার, খোচা দেও নাই ধরে নিলাম 😛 ।
ঠিকাছে। দেখা যাক কয়েকদিন পর ট্রাই দিমু।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
পোস্টে তো যথারীতি পাঁচ তারা।
পুরোপুরি অনুশীলন করতে না পারলেও মনের দিক থেকে আমি শতকরা ১০০ ভাগ ভোগবিরোধী। ভোগবাদী সভ্যতায় মনে হয় devouring এবং savoring এর মধ্যে পার্থক্য ঘুচে যায়।
ডুর্খেইম এর গবেষণা এবং আপনার বিশ্লেষণ খুব কাজে লাগল। এর আগে ধর্মের ওপর জাক দেরিদা-র ডিকনস্ট্রাকশন পদ্ধতির প্রয়োগ খুব ভাল লেগেছিল। এখানে ডুর্খেইম এর বিনির্মাণ এর সাথেও পরিচয় হয়ে গেল।
ধর্ম এবং বিজ্ঞান নিয়ে লেখার ইচ্ছা ছিল অনেকদিন থেকেই। দিন দিন রসদ জোগাড় হচ্ছে। যেমন ডুর্খেইম "The Elementary Forms of the Religious Life" নিয়ে ঘাটতে গিয়ে এই সাইটটা বেরিয়ে এল। এখানে "The Social Origins of Religion and Science" নামে একটা অধ্যায় আছে। এই বিষয়েই আরও বেশি এক্সপ্লোর করার ইচ্ছা আছে। এর আগে আপনার কাছ থেকে "The meaning of 'Religion as a cultural system'" (Stan Wilk) নিয়েছিলাম। আরও কোন বই বা প্রবন্ধ পড়ার পরামর্শ থাকলে দেন।
মুহাম্মদ,
পোষ্টটা তোমার ভালো লেগেছে জেনে আনন্দিত হলাম।
ডুর্খেইমের এই থিসিসটা বেশ ইনফ্লুয়েনশিয়াল, আর তাই সহজেই এটা দৃষ্টি আকর্ষন করতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে সমাজের সাথে ধর্মের আলোচনায়, বিশেষ করে সামাজিক সংহতি সৃষ্টি+বহাল রাখতে ধর্মের প্রভাব আলোচনায় এটি খুবই উপযোগী। (কিন্তু জ্ঞানতাত্ত্বিক দিক থেকে এর কিছু বড় ধরণের ত্রুটি আছে। এর এপিষ্টেমোলজিক্যাল দূর্বলতা এড়িয়ে যাওয়া কঠিন। )
সমাজে ধর্মের প্রভাব বিষয়ে পড়তে চাইলে আরেকটা খুব সহজ কিন্তু আই-ওপেনিং আর্টিক্যাল আছে- Clifford Geertz এর Sacred Cow। এটি ভারতীয় সমাজে গরুর উপাসনা এবং তার সামাজিক কারণ+ফলাফলের বিশ্লেষণের মাধ্যমে ধর্ম ও সমাজের সম্পর্কের আলোচনা।
আর, যেকোন বিষয়ে জানতে চাইলে আমি যা করি (অন্ততঃ করার চেষ্টা করি) তা হলো- টার্গেটেড বিষয়টা সম্পর্কে আমার পূর্ব-ধারণাগুলো (যা প্রায়শঃই নানাবিধ মূল্যবোধের ভারে স্থবির) বাদ দিয়ে একেবারে নতুন করে শুরু থেকে শুরু করি (আমার ওরিয়েন্টালিজমের আলোচনা পড়লে এই বিষয়টা বুঝবে)।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx