সময়টা আশির দশকের শেষ দিকে অথবা নব্বই দশকের শুরুতে। সেই সময়টা মনের পাতায় এলেই শান্ত সৌম্যভাব কাজ করে। তখন শহরের ধূলোবালি হয়তো কম ছিলো এখনকার চেয়ে। নাগরিক যান্ত্রিকতায় ছেয়ে যাওয়া এই শহরের বুকে হয়তো একটু বেশি প্রাণের স্পন্দন ছিলো। সেই সময়ের শিশুদের শৈশবে হয়তো শান্ত নীরবতার স্থান এখনকার চেয়ে একটু বেশি। দুপুর শেষ করে বিকেলের ছুটোছুটি কিংবা নিরর্থক ক্রীড়ার আয়োজনও ছিলো তখন বেশি। আর বিকেল শেষে সন্ধ্যার আগে অথবা দুপুর শেষে বিকালের আগে টেলিভিশনের পর্দায় কার্টুনের আনাগোনাও তখনকার সময়ের এই আমার জীবনের একটা অংশ হয়ে গিয়েছিলো। সেই সময়ের টেলিভিশন এখনকার মত রাত দিন নির্ঘুম বিচরণ করতো না। ঘড়ির কাঁটায় পাঁচটা বাজা তাই সবার জন্যই এক ধরণের উৎসবের আয়োজনের অংশ ছিলো। তেমনি কোন কার্টুন দেখা বিকালে কার্টুনের পরিবর্তে কোন এক অনুষ্ঠানে মনযোগ ভিন্ন খাতে যায়। বাচ্চা এক মেয়ে যখন আছাড় দিয়ে একজন বড়সড় মানুষকে ফেলে দেয় কেমন যেন অনাহূত আগ্রহ কাজ করে মনে। সেই বিস্ময়ে প্রলেপ বুলান বড়রা মেয়েটি রোবোট এই কথা বলে। মানুষ কিংবা রোবোট বিষয়ক পার্থক্য কিংবা ধারণা না থাকলেও যান্ত্রিক ভাবে কথা বলা সেই মেয়েতিই প্রথম আগ্রহ নিয়ে আসে বিটিভিতে প্রচারিত বিদেশি সিরিয়ালের প্রতি। আজ দুই যুগ পরে যখন সেই মেয়েটিকে খুঁজি অন্তর্জালের বুকে, স্মল ওয়ান্ডার নাম নিয়ে সে হাজির হয় আমার মনিটরের পাতায়। আর সেই মেয়েটিকে খুঁজতে গিয়ে পেয়ে যাই সেই সিরিজের সূচনা সংগীতটিও।
তবে স্মল ওয়ান্ডারে মেয়েটির রোবোটিক ধরণ ছাড়া আর কিছু অবশ্য খুব বেশি ভাবে মনে পরে না। কিন্তু শৈশবের মনে রাখা অনেক স্মৃতিগুলো ধরে রেখেছে আমার অতি প্রিয় ‘তিন চাল্লি’র সিরিয়াল। হ্যা থ্রি স্টুজেসকে আমরা বন্ধুরা তিন চাল্লি বলে ডাকতাম। তাদের হাস্য রসাত্মক কর্মকাণ্ডে আমাদের মুগ্ধতা ছিলো বরাবরই। সময় বদলে যায়। কিন্তু সময়ের বিবর্তনেও এই চমৎকার সিরিয়াল দাগ কেটে থাকে মনের কোনে। তাই সময়ে অসময়ে আমি খুজে নেই এই সিরিয়ালের মজার মজার দৃশ্যগুলো। মো কার্লি ল্যারির মাঝে আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগতো ল্যারিকে। সেই সিরিজের মজার অংশ গুলো দেখা যাক।
https://www.youtube.com/watch?v=5FRsBa4KRkc
ভুল করে ঠিক জিনিস পাওয়ার মত ব্যাপার হয়তো থাকে কখনো। এমনই হয়েছিলো আমার ক্ষেত্রে ম্যাকগাইভারের ক্ষেত্রে। কোন এক বুধবার রাতে টিভি অন করে রেখেছিলাম আমরা তিন ভাই বোন। হঠাৎ করেই সেই সিরিয়াল হবার ঘোষণা হলো। আমরা নামটা খুব গুরুত্ব দিয়ে শুনি নি। শুনবার দরকারও মনে করি নি। তারপরে শুরু হয়ে যাবার পরে আমরা জমে গেলাম সিরিজে। বলা বাহুল্য ইংরেজি বুঝার মত যথেষ্ট জ্ঞান তখনো হয়নি। কিন্তু শুধু ছবির এ্যাকশনেই রীতিমতো মন ভরিয়ে ফেলেন। মজা হলো ম্যাকগাইভার যা ই করতেন খালি হাতে করতেন। মানে হাতে কোন অস্ত্র নাই। তার মাথার জোরেই সব সমস্যা সমাধান হয়ে যেত। বাংলাদেশ জুড়ে তুমুল সাড়া ফেলেছিলো এই সিরিজ। আমার মনে আছে ম্যাকগাইভারের নাম স্কুলের ছেলেরা মজা করে ভেঙে ভেঙে সুর করে বলত আকাশের মেঘ অস্ট্রেলিয়ার গাই পাথরের ভার– ম্যাকগাইভার। সেই সময়ের কথা মনে পড়লে এখনো নস্টালজিক হয়ে যাই। সেসময়ে বাজারে পোস্টারের চল ছিলো প্রচুর। তাই প্রথম সুযোগেই ম্যাকগাইভারের পোস্টার আমাদের বাসায় শোভা পায়। এখানেই ভালোবাসার শেষ নয়। আমার বোন পোস্টার দেখে ম্যাকগাইভারের স্টারিং রিচার্ড ডিন এন্ডারসন এর ছবিও একে ফেলে আর্ট পেপারে। সেই ম্যাকগাইভারের ইন্ট্রো মিউজিক দেখতে পারেন স্মৃতি ঝালাই করতে এখানে
সেই সময়ে আরো দুইটা টিভি সিরিয়াল হতো। ওশিন এবং ডালাস । ওশিন সিরিয়ালটা আমার মা খুব পছন্দ করতো। তাই দেখলে তার সাথে বসে ওশিন দেখতে হবে এমন একটা নিয়ম ছিলো। আর ডালাস দেখার ব্যাপারে ছিলো নিষেধাজ্ঞা। অর্তর্জাল ঘেটে ওশিন এবং ডালাসের ইন্ট্রো পাওয়া গেলো
যা হোক বলছিলাম ম্যাকগাইভার এর কথা। ম্যাকগাইভার শেষ হয়ে গেলে মন ব্যাপক খারাপ হয়ে যায়। সে সময়ে ম্যাকগাইভারের জায়গায় যে সিরিয়াল শুরু হয় তার নাম হলো দি ফল গাই । হলিউড স্টান্টের এ্যাডভেঞ্চার নিয়ে গড়ে উঠা এই সিরিজ অবশ্য আমাকে খুব বেশি আনন্দ দেয় না। মানে খুব বেশি ভালো লাগে নি। হলিউড নামক জিনিসটির সাথে পরিচয় ঘটে এই সিরিয়ালের হাত ধরে। আর এখনও মনের মাঝে গেঁথে আছে শুরুর গানের “হেই হেই ” বলা। শুরুর গানটি শুনতে পারেন এইখান থেকে
ফল গাইয়ের মূল নায়ক সিক্স মিলিয়ন ডলারম্যানের লি মেজরের চাইতে সাইড নায়ক ডগলাস বারকে ভালো লাগতো বেশি। সেই বারের অভিনীত আরেক সিরিয়াল উইজার্ড শুরু হলে তাতে ডুবে যেতেও সময় লাগে না খুব বেশি। এখানে বামন সাইমন আর তার সাথেকার এলেক্সের কার্যকলাপ গিলতে থাকি ক্রমাগত। বিশেষ করে সাইমনের বিশেষ ভঙ্গিতে এলেক্স বলা খুব মজা দিত তখন। কাছাকাছি সময়ে বিটিভিতে শুরু হয় রেভেন নামের টিভি সিরিজ। ব্যাপক ফাইটিং (তখনো এ্যাকশন জাতীয় শব্দের সাথে পরিচয় হয় নাই) হতো বলে আমাদের মহলে খুব দ্রুতই রেভেন বেশ জনপ্রিয় হয়ে যায়। স্কুলে রেভেনের স্কিল দেখায়া মারপিট করে মার খাওয়া ছাত্রের সংখ্যা নিতান্ত কম হয় না। উইজার্ডের সূচনা দএখতে পারেন নিচের লিংকে
রেভেনের সূচনা ভিডিওটাও পেয়ে গেলাম অন্তর্জাল ঘেটে।
তবে ঐ সময়ে আমার সবচেয়ে প্রিয় টিভি সিরিজ ছিলো দি এ টীম । দারুণ একশন সাথে হিউমার মিশে ছিলো পুরা সিরিজ জুড়েই। হানিবলের কঠিন ভাব, ফেইসের বুলাবুলি, মরড্যাকের পাগলামি আর মি টি এর এ্যাকশন আসলেই দুর্দান্ত। মি টি এর মাথার অদ্ভুত টি শেপ চুলও দারুণ জনপ্রিয় হয় আমাদের মাঝে। সেসময়ে উম্মাদে দি এ টীম কে প্যারোডি করে দি এতিম নামে ফিচার কার্টুন করেছিলো সেটাও বেশ মনে পড়ে। দি এ টীম এর সূচনা সংগীত শুনে এখনো নস্টালজিক হই সেই পুরনো সময়ের কথা ভেবে।
হঠাৎ করে মোড় ঘুরে যায় বিটিভির গতি প্রকৃতির। কারণ এইবার বাংলায় ডাব হয়ে আসে ভারতে হয়ে যাওয়া সঞ্জয় খানের সোর্ড অফ টিপু সুলতান । সম্ভবত এ যাবতকালে বিটিভিতে প্রচারিত সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি সিরিজ এটা। আমার মনে আছে সেই সময়ে প্রতি রবিবার নয়টা থেকে দশটা পর্যন্ত ঢাকা শরের রাস্তাঘাটে জন সমাগম কমে যেত এই জনপ্রিয় সিরিয়ালের কল্যানে। বাংলায় ডাব করা আর সেই সাথে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে করা বলে ছেলে বুড়ো সবার কাছেই ব্যাপক আবেদন নিয়ে উপস্থিত হয় এই সিরিজ। টিপু সুলতানের মৃত্যু দৃশ্য দেখে প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছিলাম এ কথা মনে পরে বেশ। টিপু সুলতান যখন মরে যায় দু ইংরেজ সেপাইয়ের কথোপকথন বেশ মনে পরে। “হু ইজ হি?” । আরেকজন বলে, “আই ডোন্ট নো। বাট হি ফট লাইক আ টাইগার”। টিপু সুলতান শুরুর আগে বেশ কিছু বাংলা কথাবার্তা ছিলো। ভালো লাগার প্রচণ্ডতা এত বেশি ছিলো শুনতে শুনতে মুখস্ত হয়ে গিয়েছিলো। টিপু সুলতানের সূচনা মিউজিকটা খুবই দারুণ
টিপু সুলতান শেষ হয়ে যাবার পরে বিদেশি সিরিয়ালে বেশ মন্দা শুরু হয় বিটিভিতে। আকবর দ্যা গ্রেট নামক সিরিয়ালটি তেমন আলোড়ন তুলতে পারে নি বললেই চলে। সেখানে শেরশাহকে ভিলেন দেখানোর ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ দৃষ্টিকটু লেগেছিলো সে কথা মনে আছে। একই সময়ে শুরু হয় আরব্য রজনী অবলম্বনে বাংলায় ডাবকৃত সিরিয়াল আলিফ লায়লা। সেখানে হাফ প্যান্ট পরা টিউবলাইট হাতে নিয়ে যুদ্ধ করা সিন্দবাদকে দেখলে যতটা ভালো লাগা কাজ করতো তার চেয়ে অনেক বেশি হাস্যকর মনে হতো সেই সময়। অথচ সেই হাসির মাঝেই তাদের অদ্ভুতুরে বাংলা ডায়লগের জন্য দেখতাম মাঝে সাঝেই। ডায়লগের কথা যখন আসলোই বলতে হবে আরেক সিরিয়াল গুল সানোবারের কথা। সেটা একটা সিরিয়াল ছিলো বটে। মাঝে সাঝে দেখলেও তাকে মনে হতো বদরুল আলম (বালাম) এর গানের মতো। মানে কোন পর্বকেই একটা থেকে আরেকটাকে আলাদা করা যেত না। মনে হত একই পর্ব বারবার দেখছি।
তবে ইংরেজি সিরিয়াল দুইটা পরবর্তীতে চালু হয় যা আমার কাছে এক কথায় দারুণ লেগেছিলো। প্রথমটা ছিলো ডার্ক জাস্টিস । সেখানে একটা কথা বেশ মনে গেঁথে গিয়েছিলো। জাস্টিস মে বি ব্লাইন্ড বাট ইট ক্যান সি ইন দ্যা ডার্ক। থিমের কারণে আর এ্যাকশনের কারণে দারুণ লাগতো এই সিরিয়াল। এর সুচনার থিমটা দেখলাম নিচের লিংক থেকে
সেই সময়ের দ্বিতীয় যে সিরিয়ালটার কথা বলবো সেটা হলো টাইম ট্র্যাকস । সাই ফাই সম্পর্কে আইডিয়ার সূচনাও মূলত এই সিরিজের হাত ধরে । ড্যানিয়েল ল্যামবার্ট আর সেলমার গল্প দেখতে দারুণ লাগতো। তখন বেশ বিপদে পরে যেতাম এজন্য সপ্তাহে দুইটা সিরিয়াল দেখলে বাসা থেকে বিপদে পড়তে হতো। অথচ ডার্ক জাস্টিস আর টাইম ট্র্যাকস এর কোনটাই ফেলানো কঠিন ছিলো আমার জন্য। টাইম ট্র্যাকসের ইন্ট্রো দেখতে পারেন নিচের লিংক থেকে
সাই ফাইয়ের কথা আসাতে মনে পরে গেলো আরো দুটো সিরিয়াল গার্ল ফ্রম টুমরো এবং স্পেল বাইন্ডার এর কথাও। সাই ফাই এবং সেই সাথে উঠতি বয়সের সুন্দর নারী প্রীতি ভালো লাগা জন্ম দিয়েছিলো এই দুটো সিরিজের জন্য। দুটো সিরিজের ইন্ট্রো দিলাম নিচের লিংকে
http://www.youtube.com/watch?v=wUWWSxAloYQ
মি বিন আর পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জার্স এর কথা না বললে গল্প অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সন্দ্যায় হওয়া এই দুটো কমেডি সিরিজ কতটা আগ্রহ নিয়ে দেখতাম বলে বুঝানো যাবে না। পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জার্সের সূচনা গানের লাইন দুটো আজও ভাসে কানে। মাই লাইফ মাই ড্রিম , নাথিং কসেস স্টপ মি নাও– ভিডিও পেলাম ঐটার
মি বিনের কথা নতুন করে বলবার কিছু নাই। এই লোকটার কার্যকলাপে বোধ করি কবর থেকে লাশ ও হেসে উঠবে। কোন রকম ডায়লগ ছাড়াই কীভাবে দর্শক মাতিয়ে রাখা যায় তার দুর্দান্ত নমুনা হতে পারে এই লোক। তার সিরিজ গুলো দেখা হয় সময়ে অসময়ে এখনো।
একই সময়ে শুরু হওয়া আরও দুটো সিরিয়াল ছিলো মিস্টেরিয়াস আইল্যান্ড আর রবিনহুড । রবিন হুডের চাইতে মিস্টেরিয়াস আইল্যান্ড ভালো লাগলো বেশি। তবে ছাগলা দাড়ি নিমোর গুটি চালাচালি দেখে বিরক্ত লাগতো। জুলভার্নের বইটা আগে পড়া হয়েছিলো বলে হয়তো একটু হতাশ হয়েছিলাম। তবে রবিন হুডের কার্যকালাপে খুব বেশি মজা পেতাম না। তার বন্ধু ফায়ার টাক অবশ্য বেশ ভালো ছিলো। সেই সময়ে রাতে হতো হারকিউলিস । দেবদেবী পুরাণে আগ্রহ থাকায় বেশ লাগতো দেখতে। থেটিস হেরা থেকে শুরু করে সবাইকে দেখা যেত। আর দেখা যেত পৌরানিক গল্প। সিরিয়ালগুলোর ইন্ট্রোর লিংক দিলাম নিচে
https://www.youtube.com/watch?v=b9k4MUpz_r8
তারপরে অনেক সময় কেটে যায়। কোন এক ইংরেজি এক্সটেমপোরি স্পিচে আমার এক বন্ধু যখন তার প্রিয় টিভি সিরিয়াল হিসাবে একস ফাইলসের নাম বলে নিজেকে কেমন জানি বেকুব বেকুব মনে হয়। সেই বেকুব লাগা বাড়ে সিরিয়ালটা দেখার পরে। তখন বয়স নেহায়েত কম না। অথচ ফক্স মোল্ডডার আর স্ক্যালির ইংরেজির বর্ণও উদ্ধার করতে পারি না। সে কী যন্ত্রণা। পরে আশ্বস্ত হই এক বোনের বাসায় বেড়াতে গিয়ে। সেই ডাক্তার দম্পতি আমার সাথে বসে একস ফাইলস দেখে যখন মানে বুঝতে ব্যর্থ হয় নিজের মনে সান্তনা খুঁজে পাই। তবে নায়িকা আর সূচনা মিউজিকের টানে তারপরেও দেখা হয় একস ফাইলস।
এক বিংশ শতাব্দীতে ঢুকার পরে কোন এক অজানা কারণে টিভি দেখায় বেশ বিরতি পরে। তাই এরপরে অনেক সিরিয়াল বিটিভিতে চললেও দেখা পরে না তেমন। আর তাছাড়া স্যাটেলাইট ও একাধিক বাংলা চ্যানেলের চাপে বিটিভিও জৌলুস হারায় কিছুটা। নিজের ভালো লাগা শেষ সিরিজের নাম করতে হলে বলতে হবে সিন্দবাদের কথা। এই সিন্দবাদ আলিফ লায়লার টিউবলাইট সিন্দবাদ না। বরং এইটা হইলো মডার্ন স্মার্ট সিন্দবাদ। সাথে মিভের উপস্থিতি এর তুমুল জনপ্রিয়তাকে ভিন্ন মাত্রায় পৌছে দেয়। মনে করতে পারি আমাদের কলেজে সপ্তাহে একদিন টিভি দেখার বিরতি থাকতো সেটা হলো সিন্দবাদের জন্য। আর তখন টিভির রুম ভরে যেত এর তুমুল জনপ্রিয়তায়। সিন্দবাদের ইন্ট্রো দেখে নস্টালজিক না বরং সিরিজটিই দেখা শুরু করেছি বলা যায়।
শুরু করেছিলাম স্মল ওয়ান্ডার নামক সিরিজ দিয়ে। এই ব্লগ লেখার ফাঁকে সিরিজটার ১৫ টা এপিসোড দেখে ফেলেছি। সেই পুরনো সময়ের সিরিয়াল আবেদন হারায়নি এতটুকুও। ফাঁকে ফাঁকে সেই রোবট ভিকি চরিত্রে অভিনয় করা মেয়েটির নার্সরূপী বর্তমান ছবিও খুঁজে পেলাম। একইভাবে রোবোট বোনের ভাইটির বর্তমান ছবি দেখেও বেশ মজা লাগলো। সময় এগিয়ে যাবে আমি আমরা সবাই বুড়ো হবো অথবা হারিয়ে যবো মহাকলে। শুধু হারিয়ে যাবে না শৈশব স্মৃতিগুলো কবিতা গান নাটক সিনেমা কিংবা সিরিয়ালের ভাঁজে ভাঁজে আঁটকে থেকে।
:brick: ইটা ফেলিয়াছি।
এইবার পাঠ করিয়া আসি 😀
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
সিন্দাবাদের মিভরে বিশাল ভালো পাইতাম। র্যাভেন, দ্যা এ টিম, দ্যা ফল গাই, ম্যাকগাইভার সবগুলাই মোটামুটি দেখছি, পছন্দের ছিল। আমার একটা ম্যাকগাইভারের ছবিওয়ালা জামা ছিল। আর ছিল টিপু সুলতানের তলোয়ার।
আলিফ লায়লা প্রথমদিকে বিশাল মজা পাইছি। মালিকায়ে হামিরার একটা বিচ্ছু ছিল- আকরাম আকরাম বলে জাদু ছুড়তো। ঐটা একটা কিনছিলাম। আমার ছোট ভাই, ঐটা অর্ধেক কামড়ে খেয়ে ফেলার ট্রাই দিছিল 🙁 🙁 ।
আরো একটা সিরিয়াল চলতো ঐ সময়, তুলনামূলকভাবে অল্প জনপ্রিয়- থান্ডার ইন প্যারাডাইস। তৎকালীন এক বিখ্যাত রেসলার (রেসলিং ভালো লাগতো না, তাই আমি তখন চিনি নাই) হাল্ক হোগান অভিনয় করতো কেন্দ্রীয় চরিত্র দুটোর একটায়।
ঐটার ইন্ট্রো এইখানে পাবেন।
দারুণ একখানা পোষ্ট; পুরনো অনেক কিছুই মনে পড়ে গেল।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
এক্স ফাইল দেখতে গিয়ে প্রথম প্রথম ভয় পেতাম। আম্মা পাশে বসে থাকতো দেখার সময় এই জন্য 😛
দুইটা সিরিজের নাম মনে পড়লো আরো। এর মধ্যে একটায় আবার রায়ান গসলিং অভিনয় করতো- ইয়ং হারকিউলিস।
আরেকটা হলো আর্থ ফাইনাল কনফ্লিক্ট। এইটা অবশ্য অতটা হজম হয় নাই।
রবিন হুডে প্রথমে যে লোকটা অভিনয় করতো রবিন হুডের চরিত্রে হুবুহু একই চেহারার একজনকে দেখাইছিল একবার ইত্যাদিতে। উনি আমার প্রতিবেশী ছিলেন। প্রতিদিন সকালে স্কুলে যাবার সময় উনাকে দেখতাম ব্যালকনীতে ব্রাশ নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁত মাজতেছেন। স্কুল ভ্যানের সবাই চিল্লাপাল্লা করতো রবিন হুড রবিন হুড বলে। 😀
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
হা হা হা। রবিনহুড কাহিনী ব্যাপক মজা পাইলাম। ঐ সময়ে অনেকেই বড় চুল আর খোচা দাড়িতে রবিন হুড হইতে চাইত। আর্থ ফাইনাল কনফ্লিক্ট আমিও মজা পাই নাই তেমন ্তাই উল্লেখ করি নাই। এক্স ফাইলস বেশ লাগতো। ওহহহ আরেকটা হইতো এলিস ইন দ্য ওয়ান্ডার ল্যান্ড। এইটা অবশ্য বেশিদিন চলে নাই।
হাকহোগানরে সিরিয়ালে দেইখা বেশ মজা পাইলাম।
হিসাব মিলাইতে পারতেসি না। যখন ম্যাকগাইভার হয় তখন আমি নিজেই অনেক ছোট। তোর তো কোলে থাকার কথা !!! কেম্নে কি !!!
ম্যাকগাইভার দেখছি, কিন্তু খুব বেশিই ছোট ছিলাম, ম্যাগগাইভার, ফলগাই কোনটার স্মৃতিই ঐভাবে মনে নাই। খালার বাসায় পরে কয়েক পর্ব দেখছিলাম, উনাদের ভিসিআরে রেকর্ড করেছিল।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
সিন্দাবাদের মিভরে বিশাল ভালো পাইতাম। =)) =)) আমুও...।
মোর্শেদ_(৯৮-০৪)পাবনা ক্যাডেট কলেজ
থান্ডার ইন প্যারাডাইসে মাঝে মাঝে সুইম স্যুট পরিহত ললনারা হাজির হইতো, ফলে এর পরে এইটা দেখা লাগতো লুকায়া লুকায়া 😛
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
খুব সম্ভবত সিন্দাবাদের পরে বিটিভিতে রাত দশ টায় প্রচারিত হত একটি সিরিয়াল, সিরিয়ালটা খুবই পছন্দ করতাম। নামটা মনে নাই, তবে কয়েকটি চরিত্র মনে আছে, জিগালা, সাকার, যুবরাজ কেউ জানলে জানাবেন দয়া করে ।
বুঝছি, যখন টারজান দেখাইতো তখন তোমাগো জন্মই হয় নাই । তাইতো কই, লিস্টে টারজান নাই ক্যান।
আরেকটা দেখতাম, কিছু বুঝতাম না, তাও দেখতাম "হাউ দ্যা ওয়েস্ট ওয়াজ ওন"
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
নাহ বস, টারজানের নাম ভুলে গেছিলাম পোস্ট লিখার সময়। রোবোকপের নামও ভুলে গেছি একই ভাবে। টারজানের একটা মজার ব্যাপার ছিলো, টারজান কখনো বলতো না আমি যাব না, সে বলতো টারজান যাবে না। এইটা ব্যাপাক মজা লাগতো।
বাসার নারিকেল গাছের ডাল নিয়া ঝুলাঝুলি করতাম আর টারজানের মত একটা হাত মুখের কাছে নিয়া হাঁক পাড়তাম আউউ---উউউউউ-উউউউউউউ-উউউউউ 🙂
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ফয়েজ ভাইকে নারকেল গাছের ডালে ঝুলতে ঝুলতে আউউ—উউউউউ-উউউউউউউ-উউউউউ করার দৃশ্যটা কেন জানি চোখের সামনে ভাসতেছে 😛
:frontroll: :frontroll: :frontroll:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
:khekz:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
কি পোস্ট দিলিরে আমিন, একেবারে নস্টালমুজিব হয়ে গেলাম... আসতেছি পরে সময় নিয়ে 😀
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
:(( :(( :((
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ভাই কি মনে করাইয়া দিলেন? কি মজাডাই না পাইতাম...। কি আগ্রহই না আছিল টিভি দেখার, রাতের সিরিয়াল গুলান দেখার জন্য তারাতারি হোমওয়ার্ক শেষ করা, একদিন মিস হইলে মন খারাপ হওয়া, আর এখন এত গুলান চ্যানেল একটাও দেখা হয় না কোন দিন, রিমোট হাতে নিলেও খেলা আর মুভি চ্যানেল ছাড়া আর কিছুতে আটকায় না ...।
মোর্শেদ_(৯৮-০৪)পাবনা ক্যাডেট কলেজ
পড়বার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
দেরি করে রিপ্লাই করলাম দুঃখিত।
কথা সত্যি, কতদিন হইছে, টিভিই দেখা হয় না।
নাইট রাইডারস এর কথা মনে নাই?
কিংবা সুপারম্যান? কলেজ এ থাকতে বিকালে দেখাত, কিন্তু নামাজে যাওয়ার কারনে শেষটা আর দেখা হত না।
আর ওই সময় নাইট রাইডার এর খেলনা গাড়ীর ছিল চরম ডিমান্ড।যার কাছে থাকত তার ভাবই থাকত অন্যরকম। (আমার নিজেরও একটা ছিল 😀 )
নাইট রাইডারসের কথা হালকা মনে আছে। তবে সেটা স্মৃতিচারণ করার মত সিগনি ফিকেন্ট না।
সুপার ম্যান আমার ভালো লাগতো না। তাই খুব এবশি মনেও নাই। 🙂
র্যাভেন এর মূল আকর্ষন ছিল পার্শ্বনায়িকাগুলো। পরদিন ক্লাসরুমের প্রধান টপিক থাকত নায়িকা গুলোর তুলনা। (সম্পাদিত)
নায়িকাগুলার তুলনাও সম্পা দিত ?? খাইছে !!
কিছু কমন পড়ছে। বাকীগুলো পড়ে নাই। টিপু সুলতান শুরু হত রাত ৯টায়। সিনবাদ সারে আট টায়। সিনবাদের নায়িকাগুলোকে মিস করি। 😛
নাৈকাগুলারে মিস করি না। শুধু মিভরে মিস করি। মিভের কিন্তু ফেসবুক পেজ আছে। লাইক দিমু কিনা ভাবতেসি।
তোর পোস্টে উল্লেখ করা গুলো বাদ দিলাম বাকি গুলো নিয়ে বলি
সবচেয়ে পুরোনো যে সিরিজটার কথা মনে আছে সেটা হলো ভি(V)র একটা দৃশ্য, কেউ একজন হাত দিয়ে টেনে মুখের চামড়া খুলে ফেলছে। ঐ দৃশ্য দেখার পরে ভয়ে বেশ কয়েকদিন রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারিনি (এ কারনেই হয়ত মনে পড়ে)।
তারপর আবছা স্মৃতি স্ট্রিট হক (শুধু মটরবাইকের কথাই মনে আছে) আর এয়ারউলফ(এটারো শুধু পাহাড়ের মাঝখানে হেলিকপ্টার ল্যান্ডিং মনে পড়ে)। তবে পুরো বুঝে দেখা শুরু হলো ম্যাকগাইভার। এইটা নিয়ে পাগলামির শেষ ছিল না। বুধবারে নামই বদলে হয়ে গিয়েছিল ম্যাকগাইভার।
মনে পড়ে টুইন পিকস বড় ভাই বোনেরা খুব আগ্রহ নিয়ে দেখতো, কিন্তু আমি নিজে তেমন কিছুই বুঝতাম না। জাপানী একটা রোমান্টিক সিরিজ ছিল, এগেন্সট দ্যা উইন্ড, অল্প কয়েক পর্ব ছিল তবে বেশ ভাল লেগেছিল।
রাত দশটার খবরের পরেও কিছু ইংলিশ সিরিয়াল দেখাতো, অন্যান্য দিন দশটার পরে টিভি দেখার অনুমতি না থাকলেও ঐ দিনগুলোতে থাকত। আব্বুর ধারনা ছিল ইংরেজি সিরিয়াল দেখে দেখে ছেলে ইংরেজি শিখবে। ঐ সময় দেখাতো দি উইজার্ড, ইকুলাইজার, ইএনজি। আর থান্ডার ইন প্যারাডাইস দেখা লাগতো লুকিয়ে লুকিয়ে।
আপাতত আর কিছু মনে পড়ছে না...
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
এগেইনসট দ্যা উইন্ডের কথা মনে আছে। ইকুয়েলাইজের বুইড়ারে আমার ভালো লাগতো না একদম। উইজার্ডের তো আমি পাঙ্খা। বাকিগুলো মনে করতে পারতেসি না।
ভাইয়া, আপনার প্রথম দিকের সিরিয়াল গুলোর সাথে পরিচয় নেই কারণ তখনও আইসা পারিনাই। আমার সবচেয়ে প্রিয় ছিল সিন্দাবাদ। একটা কারণ মিভ। তাছাড়া ডোবার এর ডায়লগ গুলো খুব মজার ছিল। আমি এখনও ডোবার এর মত কথা বলতে পারি যদিও সাইজ ওর এক দশ ভাগের একভাগ।
ইয়ং হারকিউলিস, টিপু সুলতান, রবিন হুড দেখে অনেক মজা পেয়েছি। আমার মনে আছে টিপু সুলতান দেখার পর আমরা বন্ধুরা খেজুর গাছের ডাল দিয়ে তলোয়ার বানিয়ে খেলতাম। পরে আব্বু বাজার থেকে কাঠের একটা তলোয়ার কিনে দিয়েছিল।
আমিন ভাই, ভাল লাগল আর নস্টালজিক হয়ে গেলাম…………………………।
তানভীর আহমেদ
পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ তানভীর।
ভালো থেকো।
আমিন, নষ্টালজিক লেখা। ভাল লাগল।
ক্যাডেট কলেজ নিয়ে লেখাগূলোর পরে এই লেখাটাকেই আমার কাছে নষ্টালজিক মনে হল।
ইদানিং দেখি নষ্টালজিয়া পেলেই মনটা কেমন কেমন করে।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
আহমদ ভাই, অনেকদিন পরে আপনাকে দেখে ভালো লাগলো।
লেখাটা পড়বার জন্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
স্ট্রীট হক কই?
এক্স ফাইলসের জিলিয়ান এন্ডারসন 🙂
আমার বন্ধুয়া বিহনে
স্ক্যালিরে আমিও ভালো পাই।
স্ট্রিট হকের কথা মনে নাই বস।
আরো কয়েকটা সিরিয়াল এড করি...
১। ম্যানিম্যাল (http://www.imdb.com/title/tt0085051/)
২। অটোম্যান (http://www.imdb.com/title/tt0084978/)
৩। সিক্স মিলিওন ডলার ম্যান (http://www.imdb.com/title/tt0071054/)
৪। দ্যা বায়োনিক ওম্যান (http://www.imdb.com/title/tt0073965/)
৫। দ্যা কসবি শো (http://www.imdb.com/title/tt0086687/)
৬। স্পেন্সার ফর হায়ার (http://www.imdb.com/title/tt0088612/)
৭। দ্যা ইকুয়ালাইজার (http://www.imdb.com/title/tt0088513/)
৮। স্টার ট্রেক (http://www.imdb.com/title/tt0092455/)
পোস্টের জন্য তোরে অনেক অনেক ধন্যবাদ... :clap: (সম্পাদিত)
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
জুনা ভাই লিংকগুলো যোগ করাবার জন্য ধন্যবাদ। দুইটা একটা দেখা হইছে। বেশিরভাগই অচেনা।
রোবোকপ,রবিনহুড, আর সিন্দবাদরে খুবই ভালু পাইতাম,পেটের ভাত হজম হইত না,বাসায় বিদ্যুৎ না থাকলে রাস্তার ব্যাটারি চার্জ করার দোকানে গিয়ে দাড়ায় দাড়ায় দেখতাম।
আর চতুর্মাত্রিকেও দেখলাম,ভালু হইছে লেখা খুবই।
চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।
পড়বার জন্য ধন্যবাদ। আমার মনে আছে, একবার গ্রামে গিয়ে কারেন্ট নাই। শুধু টিপু সুলতান দএখার লাইগা ব্যাটারি ভাড়া করানো হইছিলো।
কত যে বকা খাইছি ভাই, পড়ার সময় দেখাই তো তাই। ভাবতেই খুব ভাল লাগছে। অনেক ধন্যবাদ।
বিটিভিতে একটা অ্যাডভেঞ্চার এপিসোড কত যেটার নাম ছিল চিরন্তনী যুদ্ধ এই নামে বাংলায় বলা হত আসল নাম কি ছিল জানি না এটা আসল নাম কি কারো জানা আছে এটা সম্ভবত চাইনিজ হতে পারে কারণ সেখানে কুংফু বা মার্শাল আর্ট জাতীয় একশন ছিল।