সেটা ছিল আশির দশক, আমার ছাত্রজীবনের শেষ দিকের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে করতেই বাম রাজনীতিতে জড়িয়ে গিয়েছিলাম। সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। গণসংগীত আর গণনাট্য ছিল সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদের ভাষা।
রূপেশ বড়ুয়া উদীচীর প্রাণ ছিল। অসাধারণ তবলা বাজাতো। সব অনুষ্ঠানে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর মহড়া, আড্ডায় তার উপস্থিতি ছিল নিয়মিত। নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান রূপেশ জীবিকার জন্য এলিফ্যান্ট রোডে একটা পোশাকের দোকানে সেলসম্যানের কাজ করতো।
একদিন এক ক্রেতাকে প্যাকেট খুলে শার্ট দেখাতে গিয়ে তার হাতের আঙুলে একটি পিনের খোঁচা লাগে। রক্ত বেরিয়ে আসে এক ফোঁটা। ওই রক্ত দেখে রূপেশ জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। মাথায় আঘাত পেয়ে মারা যায় বন্ধু রূপেশ।
রূপেশের মরদেহ কাঁধে নিয়ে আমরা কমলাপুর শশ্মানে যাই। ওপরে-নিচে-চারপাশে কাঠ দিয়ে ওর দেহটাকে চিতায় তুলে দিয়ে আমরা উদীচীর সব কর্মী ওকে ঘিরে খোলা গলায় গাই, “আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে”। তারপর চিতায় পুড়ে ভষ্ম হয়ে যায় রূপেশ। কিন্তু ওই গানে রূপেশ আমার কাছে বারবার ফিরে আসে।
আমার বাবা ১৯৯২ সালের ২৪ মার্চ মারা যান। ধর্মীয় বিধিনিষেধের কারণে সেদিন আমি মনে মনে গেয়েছিলাম “আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে……………
শুধু রূপেশ বা বাবা কেন আজ যখনই কোনো প্রিয়জনকে হারাই এই গানটাই আমাকে শক্তি দেয়, সাহস দেয়।
আজ যখন নবাবগঞ্জের নালা, পিলখানার ম্যানহোল আর গণকবর থেকে যখন একে একে কর্ণেল মুজিব, ক্যাপ্টেন মাজহার, কর্ণেল ইনশাদ, লেঃ কর্ণেল কায়সার, মেজর মাহমুদ হাসান, কর্ণেল গুলজার, কর্ণেল আফতাব, লেঃ কর্ণেল লুৎফর রহমান, কর্ণেল ডা. জাকির হোসেনের মরদেহ বেরিয়ে আসে আমি আমার দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ভেঙ্গে পড়া মনটাকে সামাল দিতে বারবার শুনতে থাকি আর খালি গলায় কলিম শরাফির সঙ্গে কণ্ঠ মেলাই, আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে এ জীবন পূণ্য করো…………
২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা গণহত্যার শিকার সবাইকে সম্মান জানাতে আমার সঙ্গে আসো সবাই গাই,
আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে : কলিম শরাফি
যেদিন আমার মৃত্যু হবে, সেদিন তোমরা কেউ যদি আমার নিথর দেহটার পাশে থাকো- দয়া করে একবার হলেও গেয়ে ওঠো, “আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে…………………………”
আমি আন্তরিকভাবে চাইব আপনার চাওয়া যেন পূরণ না হয়..... আমি কোন ক্যাডেট ভাইয়ের লাশ বহন করতে / করা দেখতে চাইনা.... তার আগেই আমি পৃথিবী থেকে চলে যেতে চাই
তুমি আমার চোখটা আবার ভিজিয়ে দিলে! মরবোই তো একদিন। হয় স্বাভাবিক, নয়তো কোনো খুনির হাতে। এই যে এতোগুলো প্রাণবন্ত মানুষ, অনেকের কিইবা বয়স হয়েছিল? ওরা তো চলে গেলো আমার আগে? পারলাম ঠেকাতে?
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
ভাইয়া সত্যিটাই বলি...... আমি এজন্যেই কাপুরুষের মত মরে গিয়ে বেঁচে যেতে চাই.....
যে ঘটনা আমি ঠেকাতে পারব না কিন্তু তার জন্যে বুকে পাথর চাপা দিতে হবে আমাকে সে ঘটনা ঘটার আগেই সৃষ্টিকর্তার কাছে চলে যেতে পারলেই বেঁচে যাই....
চোখ উপচে আসা পানি নিয়ে গলা মিলাই, আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে এ জীবন পূণ্য করো…………
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
চোখ উপচে আসা পানি নিয়ে আমিও গলা মিলাই,
নয়নের দৃষ্টি হতে ঘুচবে কালো
যেখানে পড়বে সেথায় দেখবে আলো
ব্যাথা মোর ঊঠবে জ্বলে উর্ধ্বপানে
আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে
সানাউল্লাহ ভাই এতো ক্যাডেট এতো অফিসারের সাথে প্লীজ আবার আপনার এই অবস্থার কথা বলবেন না।
কত ভাই মারা গেলো মাজহার ভাই এর বিয়ের একটা ছবি আজ ফেসবুকে দেখলাম সেই সাথে তার ......।।
......।।দেহের ও একটা ছবি দেখলাম কিছুদিন আগের সিসিবি এর ছবিতে আপনাকেও দেখলাম চাইনা
অন্যভাবে আপনার কোনো ছবি দেখতে প্লীজ এইভাবে বলবেননা
আবারো সেই ২৫ তারিখ। আমি বা আমরা অনেকেই হয়তো দেখিনি সেই করুণ ইতিহাস... হয়তো এমন-ই কিছু হয়েছিল।
আমার মনে হয় সেই ২৫ -এর চেয়ে এই ২৫ আরো ভয়ংকর; এ যে আমারই দেশের অমানুষ, কোন বিদেশী বাহিনী নয়!!
আমাকে কেউ পাল্টা যুক্তি দিয়ে বোঝাতে না পারলে আমি বলবো এটা গণহত্যা। কারণ নির্বিচারে মানুষ হত্যাকে গণহত্যা বলতে যা যা উপাদান লাগে তার সবটাই পিলখানায় ঘটেছে।
১. নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে হত্যা
২. সংঘবদ্ধ সন্ত্রাস, লুটপাট
৩. গণকবর দেয়া, আগুনে মৃতদেহ পুড়িয়ে দেয়া, মৃতদেহ বিকৃত করা
এবং
৪. নারী ধর্ষণ
পিলখানার ঘটনাকে তাই আমি গণহত্যাই বলবো। আদনান আমি বুঝেছি, তুমিও এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে একমত।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
সহমত প্রকাশ করছি।
অশ্রুহীন বোবা কান্নায় গাই ....আগুনের পরশমণি ..... কাছের মানুষদের চলে যাওয়াটা বুকে বাজে খুব বেশি ....
সানা ভাই,
পর্দার আড়ালের খবরগুলো যেন আড়ালেই হারিয়ে না যায়। কারন, আমার বিশ্বাস, ওই খবরগুলোই বলে দিবে কেন আর্মি আর সাধারন মানুষের মাঝে গড়ে উঠেছে এই অবিশ্বাসের প্রাচীর।
আর এটা ভাংতে হলে জানতেই হবে এই প্রাচীর গড়ার পেছনে কারা এবং কেন?
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
সামরিক-বেসামরিক সম্পর্ক নিয়ে একটা লেখা অবশ্যই লিখবো।
আর মিডিয়া নিয়েও লিখবো আশা করি।
মনটা শান্ত হোক। এখনও ভীষণ স্পর্শকাতর হয়ে আছে। প্রচন্ড আবেগ কাজ করছে। আবেগের কাছে যুক্তি পরাস্ত হচ্ছে।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
লাবলু ভাই,আমাদের আবেগটাই যে আমাদের খেয়েছে.........নইলে কেন এই আবেগ কে পুজি করে একদল ব্যবসায়ি আমাদেরকে একের প্রতিপক্ষ হিসেবে অন্যকে দাড় করিয়ে দিয়ে দানবের অট্ট হাসি হাসবে
আপনার আমার সবার চিন্তার প্ল্যাটফরম টা ভিন্ন হতে পারে কিন্তু ল ক্ষ্য ত অভিন্ন......দেশ......
আমি সহ আমরা সবাই কেন তাহলে একের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড়াবো,নাকি আপনাকে আমাকে দাড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে ......আর অন্যরা কেন আমাদের দাড় করিয়ে দিবে......আমরা কেন অত সহজে দাঁড়িয়ে যাই,
এখন আমাদের ঘুরে দাড়াবার সময় নইলে যে আমার মৃত দেহের পাশে দাঁড়িয়ে
গান গাওয়ার কেউ থাকবেনা...
সাইফ, তোমার লেখাগুলো পড়েছি। অন্য অনেকের মতো তোমার তোলা প্রশ্নগুলো ভীষণ ভাবাচ্ছে আমাকে। অবশ্যই বিষয়গুলো নিয়ে লিখবো। মাথাটা আগে ঠান্ডা হোক।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
নয়নের দৃষ্টি হতে ঘুচবে কালো
যেখানে পড়বে সেথায় দেখবে আলো
ব্যাথা মোর ঊঠবে জ্বলে উর্ধ্বপানে
আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে
নীরবে গেয়ে গেলাম...
সানা ভাই,
শুধু গনহত্যা নয় - ঠান্ডা মাথায় নৃশংস একটা পুর্ব পরিকল্পিত গনহত্যা
আমার এই প্রশ্ন গুলোর জবাব খুজে দেন না , সানা ভাই . . . এর জবাব না পাওয়া পর্যন্ত যে ঠিকমত নিঃশ্বাস নিতে পারি না . . . .
//cadetcollegeblog.com/munna1548/4673
মুন্না : সব প্রশ্নের জবাব কি আমার কাছে আছে? আমি তোমাদের বড়ভাই, একজন সংবাদকর্মী। যেগুলোর জবাব খুঁজে পাব অবশ্যই জানাবো। কয়েকটা দিন সময় দাও। বিষয়গুলো আরো পরিস্কার হোক।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
কিছুই বলার নাই সানা ভাই। খালি মনে হয় ঠিক হল না এই মানুষ গুলোর প্রতি ঠিক বিচার হল না।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
Life is Mad.
নয়নের দৃষ্টি হতে ঘুচবে কালো
যেখানে পড়বে সেথায় দেখবে আলো
ব্যাথা মোর ঊঠবে জ্বলে উর্ধ্বপানে
আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে
...........................................
নিশিদিন আলোক শিখা জ্বলুক প্রাণে
আমরা তোমাদের ভুলতে দিব না!
আমার মা সবসময় বলে যে জীবনটা এত আনন্দের না যতটা তুমি ভাবছ। আমি ভাবতাম, ধুর কি বলে! এই কয়দিনে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি আমার মায়ের কথার সত্যতা। আমার চোখের পানি যেন কোন কারনে থামতেই পারছে না। যখনই একটু চোখ শুকিয়ে যায় আবার কাঁদা শুরু করি।
.................
..............
.................
www.tareqnurulhasan.com
ভালো লাগেনা কিছুই... ... ...
সানা ভাই,
বুকে আগুনের খনি নিয়ে বেঁচে আছি।
বুকে পাহাড় চেপে ধৈর্য্য ধরেই আছি।
সৈয়দ সাফী
কী অদ্ভূত।
এই লেখায় মন্তব্য করার ভাষা আমার জানা নাই।