গতবছর এই রকম সময়েই নিচের স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলাম আমার ফেসবুক টাইমলাইনে…
========
দি স্ট্যাটাস
========
\\আমাদের তৃতীয় কন্যার জন্মের পর পিছনে অনেকেই হতাশা প্রকাশ করলো, আহারে, এবারও মেয়ে? কি হবে এঁদের? বৃদ্ধ বয়সে তো দেখার কেউ থাকবে না, ইত্যাদি।
আমার প্রথম উত্তর ছিল, ছেলেদের প্রধান কাজ কি বৃদ্ধ বাবা মা কে দেখা? নাকি নিজের ক্যারিয়ার তৈরী করা? আমার তো মনে হয় না পৃথিবীতে এমন কোন নিষ্ঠুর বাবা-মা আছেন যারা বলবেন, ক্যারিয়ারের দরকার নাই। তোর জন্মই দেয়া হয়েছিল আমাদের শেষ বয়সে দেখাশুনা করার জন্য। তাই সেটাই কর। অন্য কিছু না।
তবে হ্যাঁ, ক্যারিয়ার দাঁড়িয়ে গেলে সন্তানের জন্য বাবা-মাকে না দেখার কোন কারন দেখি না। যদি তা ঘটে, সেখানে নিশ্চয়ই অন্য আরও কিছু আছে যা খালি চোখে বোঝার উপায় নাই। আর এটা ছেলে বা মেয়ের ব্যাপার না, এটা ঘটতে পারে সবার জন্যই।
মূল আলোচনা আসলে এটা না। যেটা বলতে চাচ্ছি তা হলো, এদেশে, আমরা বাবা-মারা ছেলেদের সর্বকাজে এগিয়ে ধরি আর মেয়েদের ঐসব থেকে দূরে রেখে তাকে কাইন্ড অব প্রতিবন্ধি বানিয়ে ফেলি। এরপরে তাকেই আবার দোষারোপ করি, ওতো কিছু পারে না, বুঝে না, ইত্যাদি।
আমার যেহেতু তিন মেয়ে, এবং তারা সাত সাত বছরের ছোট, ওদের বুঝিয়ে বলেছি নিজেদেরকে নিজেদের দায়িত্ব ধীরে ধীরে বুঝে নিতে।
ভাই না থাকায় এই ব্যাপারে দেবার মত কোন অজুহাতও ওদের নাই। আনীলা তাই প্রতি সপ্তাহে লিস্ট নিয়ে একা একাই বাজার করতে যায়। আমরা সেই বাজার সারা সপ্তাহ ধরে খাই। মাসের বাজার অবশ্য ওর মা বা আমিই করি।
ব্যাংকে গিয়ে টাকা তোলা, এপার্টমেন্টের সার্ভিস চার্জ দেয়া, বোনদের বেতন দেয়া, চুল কাটিয়ে আনা, ইত্যাদি আরও অনেক কিছুই সে দায়িত্ব নিয়ে যত্ন কোরে করে। বোনরাও ওকে গুরুজনের মত মানে। যেকোন ডিসিশন নেবার আগে আমার বা ওদের মায়ের না বরং আনীলার সাথে কনসাল্ট করে প্রথমেই।
আসলে দায়িত্ব নেয়াটাতে শেখার, অনুশীলন করার, ভুল হলে ভেঙ্গে না পড়ে বরং তা থেকে শিক্ষা গ্রহনের প্রক্রিয়াগুলো জরুরী। ছেলে না মেয়ে, সেটা কোন জরুরী বিষয় না।
বয়স অনুযায়ী শিশুদের দায়িত্ব প্রদানের অনুশীলন করানোটা আমার মনে হয় খুবই জরুরী। এতে সামর্থ্য বাড়ে। আর যেকোন সামর্থ্য বাড়া মানেই তা হিউম্যান রিসোর্স ইনডেক্সকে উন্নত করতে ভুমিকা রাখা।
আসুন শিশুদেরকে দায়িত্ব দিয়ে ভুল করতে এবং সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিতে সুযোগ করে দেই…//
স্ট্যাটাসটি সম্ভবতঃ বহুবার পঠিত হয়েছিল। কারন এটা চারবার শেয়ার হয়। এতে লাইক পড়ে ২৩৭টি। আর এতে ৫৫ টি কমেন্ট আসে। কমেন্টের বেশিরভাগেই আমার বক্তব্যের প্রতিফলন ছিল। তবে দু’একটা যে ভিন্ন ছিল না, তা না।
কিন্তু গভীর ভাবনায় পড়লাম যখন আমার বেশ পুরনো এক ছাত্রীর কাছ থেকে ইনবক্সে বিশাল এক রাইট আপ এলো। চুম্বক অংশটুকু নীচে দিচ্ছি এবং তা অবশ্যই পরিচয় গোপন করে…
================
দি ইনবক্স কমেন্ট
================
\\ অন্যদের মত আপনার স্ট্যাটাসে প্রকাশ্য কমেন্টই করতে চেয়েছিলাম স্যার, কিন্তু এত বড় হয়ে গেল আর এত এত একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য ও মতাদর্শ এসে গেল যে পাবলিকলি দেয়াটাকে আর উপযুক্ত মনে হলো না।
স্যার আমাকে মনে হয় কেউ যেন রিভার্স বাটনে প্রোগ্রাম করে দিচ্ছে। আইয়ামে জাহিলয়াতের যুগে চলে যাচ্ছি দিনকে দিন। মেয়ে সন্তান জন্মের খবরে এখন আর খুশী হতে পারি না।
সারাজীবন চেয়ে এসেছি, মা হলে একটা ফুটফুটে ছোট্ট কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েই মাতৃত্বের পথচলা যেন শুরু হয়। পাচ মাসের আল্ট্রা সাউন্ডে যখন খুব জোরাজুরি করে ডাক্তারের মুখ থেকে জানতে পেরেছিলাম, “ঠিক বুঝা যাচ্ছে না, মেয়ে হতে পারে” – সারারাত আনন্দ আর কর্মপরিকল্পনার স্বপ্নে ঘুমাতেই পারিনি, যদিও মেয়ের বাবার কিঞ্চিৎ মর্মাহত মনের কাছে আমার আবেগ প্রকাশ করার আর সাহস হয়ে ওঠেনি।
আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে আমার সবচাইতে খারাপ সময় কোনটি, আমি এক সেকেন্ড সময় না নিয়ে বলে দেবো, গর্ভাবস্থার নয়টি মাস আমার জীবনের সবচাইতে দুর্বিসহ কেটেছে। সেই কারণটা একটু পরই বলছি।
বৃদ্ধ বয়সে ছেলের বউ সেবা করবে নাকি মেয়ে সন্তানের আদর ভালোবাসা পাবো – সেটা নিয়ে মাথা ঘামাই না, স্যার। কিন্তু স্যার, যুগ যতই বদলাক, মেয়েদেরকে মেয়ে হিসেবেই সৃষ্টি করা হয়েছে। কথাটা ওজনে হয়তো খুব হালকা। কিন্তু যতই আপনি, সমাজ, আধুনিকতা, আপনার মত উদার মানসিকতার মানুষরা নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলুক না কেন, জননিন্দ্রীয় আর যোনীপথের ভিন্নতাই মেয়েদেরকে সবকিছু থেকে আলাদা একটা অদ্ভুৎ জগতে ঢুকিয়ে তালাবদ্ধ করে সারাজীবনের জন্য বন্দী করে রাখবেই রাখবে।
আমার ১২ বছরের জন্মদিনের খুশীটা মাটি হয়ে গিয়েছিল যখন প্রথম শরীরের অপ্রয়োজনীয় আর অপরিষ্কার রক্ত প্রকৃতির নিয়মে ফোটায় ফোটায় ঝরে পড়া আরম্ভ করেছিল। আমার মা প্রচন্ড সনাতনী বিশ্বাস আর ধ্যান ধারনার মানুষ আর ছোটবেলা থেকেই আমার অতিরিক্ত চঞ্চলতা আর উচ্ছলতা নিয়ে তাঁর দুশ্চিন্তার কোন কমতি ছিলনা। তাই সেই অমুক সালের অমুক তারিখ সারাটা দিন আমার কেটেছিল আমার সারাজীবনের ডুজ এ্যান্ড ডোন্টস আর এমবার্গো লিস্ট জানতে জানতে।
নিজের সতীত্ব রক্ষা করা ছাড়াও কিভাবে হাটতে হবে, কিভাবে বসতে হবে, কি খাওয়া নিষেধ, কার কার সাথে কথা বলা নিষেধ, কোন রং এর কাপড় পড়া নিষেধ, সপ্তাহের কোন বার নখ কাটা যাবে না, নতুন জামা পড়া যাবে না…হাজারো ফিরিস্তিতে সেদিনের কচি মনটা ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল।
এখন আমার মনে হয়, “PMS” বা pre-menstrual syndrome বলে হরমোনাল ইমব্যালেন্সের যে কনসেপ্টটা প্রচলিত আছে সেটার কোন অস্তিত্ব থাকত না যদি না প্রাকৃতিক রক্তপাতের প্রথম দিন থেকেই সমাজে আমাদের অচ্ছুৎ হিসেবে আত্মপরিচিতি না ঘটানো হত, আমাদেরই খুব কাছের মানুষগুলোকে দিয়ে। এর বছর কয়েক পর, যখন তলপেটের ব্যাথায় কাতর হয়ে হটব্যাগের উপর উপুর হয়ে কাদছিলাম, আমার নারী হয়ে জন্মানোর আত্মগ্লানি আর অপরাধবোধে সান্তনা দিতে এসে তুলনামূলকভাবে আধুনিক আমার এক খালা বললেন, “তুই এখন পরিপূর্ন মেয়ে, ফিল প্রাউড” কথাটা আমাকে অভয় দিতে পারে নাই একফোটাও।
খুব ক্লান্ত লাগে স্যার, জানেন? আমি যে বেশ কয়েকটা বছর ধরে একা থাকার এক যুদ্ধ করে যাচ্ছি, আপনি মনেহয় জানেন না। এই চেষ্টার সাথে সাথে আশপাশের মানুষগুলোর নিন্দা, অপমান, কটুক্তিও শুনে যেতে হচ্ছে আমাকে। আমাকে জানতে হয়েছে যে “একা মেয়ে বড় অসহায়”। “তাঁর এই একাকিত্ব বড়ই অসম্মানের”।
আমার ইদানীং খুব হাসি পায়, যখন শপিং-মলে স্বামীর কব্জি ধরে গদগদ হয়ে লেপ্টে থাকা সাজুগুজু করে চলা মেয়েটাকে দেখি। একসময় মনে সুখ, সম্মানবোধ নিয়ে আমিও ওভাবে হেটেছি হয়ত, কিন্তু এখন মনটা হয় মরে গেছে স্যার। অথবা কি জানি, অতিমাত্রায় জেগে উঠেছে?
জানেন, এতো সামাজিক প্রতিকূলতা সহ্য করেও এখন আমি একা থাকাটাকেই বেশি পছন্দনীয় মনে করি। সমাজের চোখে না হোক স্যার, নিজের দৃষ্টিতে আমার এখন সম্মান আছে। মাঝে মাঝে যে একাকীত্ব ভর করে না, তা বলব না, কিন্তু পরক্ষনেই অনেকগুলা সেল্ফ কন্টাডিক্টরি ভাবনা এসে ভর করে।
নারীত্বের উপর অভিমান থাকলেও নিজের মাতৃত্বের রোল থেকে সরে আসতে পারি না। মায়া আর ভালবাসার সাথে সাথে আবার রাগও উঠে, মেয়ে কি আমার একার, যে ওর কথা আমি একা একা ভেবে, এভাবে সারাটা জীবন একা কাটিয়ে দেবো? আর মেয়ের বাপ জায়গায় জায়গায় গিয়ে যখন যা খুশি করার স্বাধীনতা ভোগ করবে? হয় লাগিয়ে বেড়াবে নয়তো সুখের সংসার করবে!
মাফ করবেন স্যার, কথাটা এভাবে বলার জন্য। কিন্তু রক্তমাংসের মানুষ যখন আমি, আমারও শরীরে চাহিদা জাগে। কিন্তু আমি যে মা, তাই আমাকে সন্তানের চোখে ছোট হওয়া যাবে না – এইজন্যই আমি কারো সাথে শারোরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারি না। আর বাপকে দেখেন, যখন খুশি যার যোনীতে খুশী ইচ্ছা মতো বীর্যপাত করে এসেও বিরাট সম্মানের আসনে বসে আছে পরিবার ও সমাজের চোখে।
আমার মেয়ের কাছে আমি তার বাবাকে কখনই ছোট করি না, বরং মেয়েকে তার বাবার প্রতি এবং সবার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার জন্য শিক্ষা দেই, নিজের ভিতরকার ক্ষোভ কখনই ওর সামনে প্রকাশ করি না।
নতুন করে সংসার পাততে, সম্পর্কে জড়াতে একরকম ফোবিয়াও কাজ করে। আবারও একটা ব্যাড ম্যারেজের দায়ভার নিতে মনকে কোনভাবেই মানাতে পারিনা। সে হয়তো আমার ব্যাক্তিগত সংকীর্নতা।
এখন যখন আমার বন্ধু বা সহপাঠিরা আমাকে বলে, “এখনি সময় জীবন নতুন করে শুরু করার” – কারণ আর কিছু বছর পর আমার শরীর, মন সবটাই অযোগ্য হয়ে যাবে – কিছুটা চিন্তায় যে পড়ে যাই না, তা নয়? জীবনের এই মুহুর্তে বসে আমি যা মনে করছি, “আমি একা ভালোই তো আছি”, – কিন্তু আমি জানি, স্থীর নির্দিষ্ট বলে কিন্তু কিছুই নাই।
এমন কোন সময় আসতেই পারে, আমার মাঝে মাঝে উকি দেওয়া একাকীত্ববোধ, অপূর্নতা আমাকে যদি কোনদিন গ্রাস করে, তখন? কি হবে তখন? এ ভাবনায় ও কিন্তু মাঝে মাঝে আক্রান্ত হই।
কন্যা জন্মানোর পর আমি খুবই অসুস্থ হয়ে যাই স্যার। প্রেগন্যান্সি টাইমে প্রচন্ড মানসিক চাপে ছিলাম। কন্যার বাবার অন্য নারীর সাথে সম্পর্ক, রাতের পর রাত বাসায় না আসার কারণে একা সারারাত জেগে থাকা, আমার নিজের অপরিপক্কতার কারণে পরিস্থিতি ঠিকমত সামাল না দিতে পেরে একাধিক বার প্রহৃত হওয়া, ঘড়ির সেকেন্ডের কাটার দিকে তাকিয়ে থাকা, এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা – সবই ছিল সেই মানসিক চাপের উৎস।
সেই সময় আমি একবার কন্যার বাবার সাথে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে বাজে ভাবে প্রহৃত হই এবং আমার হালকা খিচুনির মত হয়ে আমি জ্ঞান হারাই। এর পর কন্যা যখন হল, ওর চার মাস বয়সে আমার এক শশুরস্থানিয় ব্যক্তি মারা যান, যিনি আমাকে অসম্ভব স্নেহ করতেন। তার মরদেহ দেখে আমি আবার অজ্ঞান হয়ে যাই।
এর পর থেকে সামান্য সামান্য ব্যাপারে আমি অজ্ঞান হয়ে যেতাম এবং এই প্রবনতাটা আশংকাজনক ভাবে বাড়তে থাকে। নিউরোলজিস্ট দেখানো হয়, সিটিস্ক্যানে বলা হয় মস্তিস্কে না, মানসিক সমস্যা। এন্টি ডিপ্রেসএন্ট ওষুধের সাথে চলতে থাকে সাইকোথেরাপি। প্রায় বছরখানেক ধরে। অবস্থার তেমন কোন উন্নতি হয় না।
পরে দুই শুভাকাঙ্ক্ষীর কথায় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশানে মেডিটেশন কোর্স করি আর চারদিনের মাথায় নিজেকে নতুন ভাবে জন্ম দিতে সক্ষম হই। অনেকেই হয়তো ওদের কার্যকলাপ পছন্দ করে না, সেটা ভিন্ন গল্প।
এরপর, কন্যার বাবার সাথে আড়াই বছর আলাদা থাকার পর পুনরায় একসাথে থাকা আরম্ভ করি এবং দুই মাসের মাথায় আমি আবার অন্তসত্বা হই। আমি বুঝতে পারছিলাম না, আমার আসলে কিরকম অনুভূতি হওয়া উচিৎ। কারন আড়াই বছরের গ্যাপটা কন্যার জন্যেও পারফেক্ট ছিল। আমিও সেরকমই চাচ্ছিলাম। আবার অন্যদিকে নয়মাসের অসহনীয় যন্ত্রনার মধ্যে দিয়ে আমাকে আবার যেতে হবে, সে ভয়টাও কাজ করছিল। শেষটায় ডাক্তারের রায়ে, দীর্ঘদিন এন্টি ডিপ্রেসেন্ট নেবার কারণে আমাকে ঝুকিপূর্ন প্রেগ্নেন্সির দোহাই দিয়ে ভ্রুনটি আমার থেকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
এই তো আর কয়েকদিন পর আমার একমাত্র কন্যার বয়স সাত পূর্ন হবে। স্যার, আমি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সাবলম্বী, আত্মনির্ভরশীল। কিন্তু বাবার অতিরিক্ত আহ্লাদের কারণে আর মায়ের অতিমাত্রার শাসনের আচলে থেকে এই আত্মনির্ভরশীলতাটা আমার আগে সেভাবে রপ্ত করা সম্ভব হয় নাই। তাই আমি চাই আমার কন্যা ছোট থেকেই ওর নিজের মত করে বেড়ে উঠুক।
নাচ গানের বদলে মার্শাল আর্ট শিখাচ্ছি ওকে, নিজের ছোটখাট কাজ ওকে দিয়েই করাই, অনেক কিছু নিয়ে এখন থেকেই অনেক খোলামেলা আলচনা করি, ভালো-খারাপ সবকিছুর সাথেই পরিচয় করিয়েও দেই। কিন্তু স্যার, ওই যে শুরুতে বলেছিলাম, ব্যাকডেটেড হয়ে যাচ্ছি, এই একটা কথা ভেবেই যে – শতচেষ্টা করলেও ওকে তো আমি মেয়েলী বিপদগুলো থেকে রক্ষা করতে পারব না। শরীরে যে পরিবর্তনগুলো আর কিছুদিনের মধ্যেই দৃশ্যমান হবে আর তার কিছুদিন পর সে “পরিপূর্ন নারীত্ব”লাভ করবে, তখন আল্লাহ মাফ করুক কোন দূর্ঘটনায় পড়লে বা কারো সাথে বা কারো দ্বারা যৌন মিলন বা নিপীড়নে জড়ালে এই একটা জায়গাতেই তো ওর জন্মের সার্থকতা, ব্যর্থতা নির্ধারন হয়ে যাবে, নির্ধারন করে ফেলবে সবাই। সেটা সমাজ বলেন অথবা পরিবার। কি করবো তখন আমি?
এই একটা কারনেই আজকাল কন্যাসন্তানের জন্মের খবরে খুশী হতে পারি না আর…//
===========
দি রেসপন্স
===========
ইস্যু অনেকগুলা। একটা একটা করে আমার মন্তব্য/মতামত/ভাবনা জানাবো। কোনটাই উপদেশ না। কোনটাই “সব ঠিক হয়ে যাবে” টাইপের আশ্বাস না। আমার অভিজ্ঞতা জ্ঞান শেয়ার করাটাই উদ্দেশ্য যদি তোমার দেখার ফ্রেমটাকে আরেকটু বড় করা যায়। এবং তা মূলতঃ ইনফরমেশন শেয়ারিং-এর মধ্য দিয়ে। আমাদের দুর্ভাগ্য, যে আমরা শিশু বিশেষ করে নারী শিশুদের জন্য সুস্থ্যভাবে বেড়ে ওঠার মত কোন পরিবেশ আজ পর্যন্ত তৈরী করতে পারলাম না। হয় কেয়ার নিতে না পারার কারনে বা বেশী স্বাধীনতা দিয়ে তাঁদের এক্সপ্লয়েটেড হওয়ার রিস্কে ফেলে দিয়েছি না হয়তো বেশী কেয়ার নিতে গিয়ে তাঁদের জীবনটা দুর্বিষহ করে তুলেছি। আমি আজ পর্যন্ত যতগুলা ঘটনার কথা জানি, সবগুলাই এই দুইটার একটা। কেন যেন, এর মাঝামাঝি মানে স্বাভাবিক শৈশব দেয়াটা একেবারেই অনুপস্থিত। অন্ততঃ আমার জানা মতে।
আমার মনে হয়েছে এর জন্য মূলতঃ যেটা দায়ী তা হলো অজ্ঞতা ও সচেতনতার অভাব। বয়ঃসন্ধিতে ঘটা এক্সপ্লয়েটেশন বা স্ট্রেস শিশুর পরবর্তি সারাটা জীবনে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, সেটা নিয়ে সম্ভবতঃ কেউই তেমন একটা কনসার্নড না। এটা নিয়ে কোথাও কেউ কোন আলাপও করে না। করবে কি, জানেই না কিছু। মরার উপরে খাড়ার ঘা হলো, দুর্ভাগ্যক্রমে যদি কিছু ঘটেও, প্রতিকার না করে লোকলজ্জার ভয়ে সেটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা। আর এর মধ্য থেকে মেয়েটি আরও বেশী অসহয় বোধ করে এই ভেবে যে “আমাকে সাপোর্ট দেয়ার ক্ষমতাও কার নাই”। এ থেকে সেলফ ব্লেম “মেয়ে হয়ে জন্মানোর পর সবাইকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য আমিই দায়ী ” – এটা আসাও খুব অস্বাভাবিক না। অথচ, সামান্য সচেতনতা ও কিছু জ্ঞান এই জাতীয় পরিস্থিতি সামলানোর জন্য যথেষ্ট ছিল।
“কন্যাসন্তানের জন্মের খবরে খুশী হতে পারি না” – এইটা শুধু তোমার না, আরও অনেকেরই সমস্যা। তোমার কারনগুলা জানলাম। অন্যদের কারানগুলাও কাছাকাছিই হবে। পার্থক্য হলো তোমারগুলা হার্ড এক্সপেরিয়েন্স নির্ভর। অন্যদেরগুলা হয়ত ততটা এক্সপেরিয়েন্স নির্ভর না। অনেক বেশী শুনে শুনে হওয়া পারসেপশন নির্ভর। আলাপ যেহেতু শুরু হয়েছে, তা আরেকটু চালানোই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তোমার কোন কাজে তা আসবে কিনা সেজন্য না, আমার নিজের জন্য। আমার এই জ্ঞানগুলা আনীলাদের তিনবোনের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরীতে হেলপ করবে। ওরা আর কি কি প্রতিকুলতার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে / হতে পারে, আগাম জানা থাকলে সেইভাবে ওদের সতর্ক করা যাবে। যেকোন পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য সতর্কতা একটা বড় অবলম্বন। আমরাও প্রস্তুত হতে পারবো। সতর্কতা প্রস্তুতিতেও সাহায্য করে।
কি হয় জানো তো? সম্পর্কে কোন টানাপোড়েন দেখলে খুব কাছের মানুষরাও কেন যেন আগে মেয়েটারই দোষ খোজে। তুচ্ছ কিছু একটা পেয়ে গেলে সেটাকেই প্রধান সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করে। ব্যাপারটা এইরকম…… – ঘরের বউ হয়ে চা খাওয়ার সময় পাশে বসে না, হাত পাখায় বাতাস তো আর করা লাগে না, (এসি আছে তাই) তাও। ছেলের আর কি দোষ? এইজন্য মন তো উচাটন হবেই। শুধু হাতপাখার বাতাস খেতে বাইজি বাড়িতে (এক্সট্রা ম্যারিটাল রিলেশন অর্থে) গিয়েছিল। বউ যদি সকাল সকাল উঠে পাশে বসতো, তাহলে কি আর এসব হয়? ছেলে মানুষের মন না? এক্সট্রা ম্যারিটাল রিলেশন যে একটা অপরাধ আর এর জন্য একটা অপরাধি মন থাকতে হয় সেটা বেমালুম ভুলে যায় সব্বাই, মেয়েটার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোন দোষারোপের সুযোগ পেয়ে। কি বিচিত্র মন ও মানসিকতা…
“তুলনামূলকভাবে আধুনিক আমার এক খালার ‘তুই এখন পরিপূর্ন মেয়ে, ফিল প্রাউড’ – কথাটা অভয় দিতে পারে নাই একফোটাও” প্রসঙ্গে বলি। চারিদিকে সবাই যখন চেপে ধরে পারলে পিষে মারে এই বলে যে “তুই একটা মেয়ে, এটা করা নিষেধ, ওটা করা নিষেধ, এইভাবে দাড়াতে হবে, ঐভাবে তাকাতে হবে, ইত্যাদি, পদে পদে যেখানে নারী হয়ে জন্মানোর জন্য বিধি নিষেধ, চাপ আর বাধা – সেখানে “পরিপূর্ন মেয়ে” হবার মধ্যে হোয়াট ইজ দেয়ার টু “ফিল প্রাউড”, এই কনফিউশন আসাটাতো খুবই স্বাভাবিক। ব্যাপারটা যদি আরও আগে থেকে জানানো যেত, মানে মেয়েদের জানা থাকতো যে তার পিরিয়ড শুরু হবার অর্থ হল সে এখন থেকে একাই এমন একটা ক্যাপাবিলিটির অধিকারি হয়েছে যা গোটা পুরুষ জাতি সবাই মিলেও কোনদিন অর্জন করতে পারে নাই, পারবেও না – তাহলে হয়তো প্রাউড ফিল করার কিছু কারন থাকতো। আমার কন্যাদের ব্যাপারগুলো ওর মা যেন খুব কমপ্যাশনেটলি হ্যান্ডেল করে সেই জন্য আমি যথাসাধ্য কো অপারেট করেছিলাম। উৎসাহ দিয়েছিলাম। মনেহয় সেটা কাজেও দিয়েছিল। বিশেষ করে স্কুল থেকে ফেরার পর কোন সমস্যা হয়েছে কিনা, তা নিয়ে রুমে গিয়ে কথা বলা, চিয়ার আপ করা – এসব খুবই জরুরী। আমার মনেহয় ওদেরকে ব্যাপারটার সাথে অভ্যস্ত হতে খুব বেশী স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে যেতে যেন না হয়, সেই ব্যবস্থা করা খুবই জরুরী। যেটা বলতে চাচ্ছি, তা হলো, এত বড় একটা চেঞ্জ – স্ট্রেসফুলতো হবেই হবে। প্রস্তুতি, সঠিক ও বৈজ্ঞানিক তথ্য বিনিময় এবং অর্জনের ইমপ্লিকেশন সেটার সাথে কোপ আপ করাটা সহজ করতে পারে। সাধ্যমত চেষ্টা করে যেতে হবে যতটা সম্ভব তা যেন করা যায় চেনা জানা সবার জন্য।
সিমন দ্য বুভয়রের “One is not born, but rather becomes, a woman” – মনেপড়ে গেল তোমার লিখা, “যুগ যতই বদলাক, মেয়েদেরকে মেয়ে হিসেবেই সৃষ্টি করা হয়েছে” – এইটা পড়ে। কোনটা আসলে ঠিক? তোমারটাও ঠিক হতে পারে। কিন্তু সেটা মেনে নিলে তো আর কোন কথা থাকে না। মানুষ হয়ে জন্ম নিলাম আর কোন কিছুর ভ্যালিডিটি নিয়ে প্রশ্ন করবো না, এটা কেমন কথা। এমন ভূরি ভুরি উদাহরন দেয়া যাবে যা এই কথাটাকে ভুল প্রমান করে। তাহলে এটা বিনা চ্যালেঞ্জে মানবো কেন যে “মেয়েদেরকে মেয়ে হিসেবেই সৃষ্টি করা হয়েছে” যখন সম্পুরক প্রশ্ন করাই যায়, ১) কে সৃষ্টি করলো? ২) কেন সৃষ্ট করলো? তাহলে “মেয়েদেরকে মেয়ে হিসেবেই সৃষ্টি করা” সম্পর্কিত এই পুরো মতবাদটা যে পুরুষদের তৈরী একটা ঘোর ধান্দাবাজি সেটা প্রমান করা কি খুবই কঠিন? আমার মনে হয় না।
“এখন আমি একা থাকাটাকেই বেশি পছন্দনীয় মনে করি” – আমিও বিশ্বাস করি, একা থাকার মধ্যে পছন্দনিয়, ভাল লাগার অনেক কিছু থাকতে পারে। আর সেইসব কে গ্রহন করে কেউ যদি একা থাকার সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা শ্রোদ্ধা পাবার যোগ্য। কারন এই একা থাকাটা নিজের আনন্দের জন্য। কিন্তু সেটা যদি অন্য কাউকে খুশি করার জন্য হয়, অন্য কোন অর্জনের জন্য হয়, এক সময়ে সেটা অসহ্য মনে হবেই হবে।
“কিন্তু রক্তমাংসের মানুষ যখন আমি, আমারও শরীরে চাহিদা জাগে। আমি মা, আমাকে সন্তানের চোখে ছোট হওয়া যাবে না, তাই আমি কারো সাথে শারোরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারি না” – এইটা পড়ে কিন্তু মনে হলো, তোমার এই একাকিত্ব উপভোগের উদ্দেশ্যে নয়। বরং দায়িত্ব পালনের জন্য। আজ হোক কাল হোক, এটা দায়িত্বটাকে কিন্তু বোঝা বলে মনে হবেই। এমনিতেও দায়িত্ব আর বোঝার মধ্যে দূরত্ব সামান্যই। আমার কিন্তু মনে হয় না, যাঁদের সাথে তুমি চলো, মেশো, পরিচিত – তাঁদের মধ্য থেকে তোমাকে এবং তোমার মেয়েকে আপন করে নেয়ার মত মানুষের অভাব হবে। জীবনতো একটাই। তোমার কন্যার সামনে সার্বক্ষনিক কোন ফাদার ফিগার না থাকাটাও তার ন্যাচারাল লার্নিং প্রসেসটাকে বাঁধাগ্রস্ত করার কথা। শুধু তোমার জন্য না, কন্যার জন্যও তোমার একটা ডিসিশনে আসা উচিৎ। তাড়াহুড়ার কিছু নাই। ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নাও। তানিয়া আহমেদের এক ইন্টার ভিউ-এ শুনেছিলাম সেও এক সময়ে তোমার মতই ভাবতো। টুটুলের সাথে সখ্য হবার পর ভাবা শুরু করলো, এমন কেউ পাশে থাকলে, মন্দ কি? টুটুলও ভাবে কিন্তু বলে ক্যামনে, যেই পার্সোনালিটি নিয়ে বসে থাকে। তারপরে একসময় ক্লিক করলো। আমার কাছে ওদেরকে বেশ লাগে। আবারও বলি, জীবন একটাই। যে ডিসিশন দেরি করে হলেও নেয়াই লাগবে (আর কয়েক বছর পর। ধরো কন্যা স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকায় চলে গেল, তখন?) সেটা সময় থাকতে নিলে, ভালো না? আজ যে দিনটা চলে যাচ্ছে তা কিন্তু কাল আর ফেরানো যাবে না।
যেকোন সম্পর্কে বিশ্বাস হলো সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন অনুষঙ্গ। বিশ্বাস ভাঙ্গা মানুষের সাথে কি আচরন করা উচিৎ, সেই শিক্ষা আমরা পাই না। তাই বিষয়টা হ্যান্ডেল করতে অযথা দেরী করে ফেলি। আর এই দেরীর সাথে আসে সংশ্লিষ্ট জটিলতা। তোমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল বলেই মনে হচ্ছে। তবে ভাল দিক হলো, সেসব পিছনে ফেলে আসতে পেরেছো। যে ভাবেই পারো। কোয়ান্টাম নিয়ে আমার যে আপত্তি সেটা ওদের মেথড নিয়ে যতটা, তারচেয়ে বরং ঢের বেশী ওঁদের কনসেপ্টটা নিয়ে। আমার মনে হয়েছে ওরা একজন মানুষকে ওদের মেথডের ওপর নির্ভরশিল করে ফেলে। ঐ মানুষটা ওদের সাথে থাকলে সুখি থাকে, ওদের ছেড়ে গেলে আবার বিদ্ধস্ত হয়ে পড়ার ঝুকিতে পড়ে। অনেকটা ঔষধে ডিপেন্ডেন্ট হয়ে পড়ার মত। এমন কিছু পাওয়া গেলে আরও ভাল হতো যা এই ডিপেন্ডেন্স মুক্ত। সেটা হতে পারে একটা সুখি পরিবার। কিন্তু কি ভাবে তা পাওয়া যাবে, আমি জানি না। তবে পাওয়া যে সম্ভব, তা জানি। সবারই মনে রাখা দরকার, বিশ্বাস ভাঙ্গা মানুষ কখনো বদলায় না। যে বলে বদলে যাবো, সে আরও কম বদলায়। কঠিন সিদ্ধান্ত একবারেই নিতে হয়। আর পাশে আমরা যারা থাকি, আস্বস্ত করতে পারি, তোমার সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত – এই কথা বলে।
আনীলাকে সেই কথাই বলে রেখেছি। তোমার সাথে আলাপ করার পর বুঝলাম, কথাটা আরও পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বলে দিতে হবে এবং তা অনতি বিলম্বেই।
========================
এরপরে এই মেয়েটির সাথে খুব একটা আর আলাপ হয় নি।
হয়তো ঝোঁকের বসে অনেক বেশী ব্যক্তিগত কথা শেয়ার করার ব্যাপারটা পরে আর নিতে পারে নাই।
মাঝে মধ্যে এখানে ওখানে দেখাও হয়, কিন্তু আলাপে উৎসাহ দেখায় না বলে আমিও আর কিছু বলি না।
নারীদের এই যে গুটিয়ে নেয়া, এই যে গুটিয়ে থাকা, এটার কি কোন সমাধানই তাহলে নাই?
আমি শুধু ভাবি আর ভাবি………
[কৈফিয়াত: ব্লগ হিসাবে একটু বড় হয়ে গেল। তিনটা ভাগ করে দিলাম পড়ার সুবিধার্থে]
প্রথমেই বলি, তোমার স্বাধীন আত্মনির্ভর ছাত্রীটির ভাবনার দরিদ্রতা দেখে মায়াই হলো, ভাইয়া 🙁
বহু মেয়ে আজো নিজেদের মানুষ ভাবার আগে মেয়েমানুষ বলে ভাবে। নারী স্বাধীনতা মানে নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা নয়, নিজের শরীর নিয়ে ওয়াইন করা নয়। ছাত্রীটি ভাবছেন তার পতিধন বা এক্স কামরূপ কামাখ্যার বহু রাজ্য জয় করে বেড়াচ্ছেন; প্রশ্ন হলো কার সাথে? তিনিও তো নারীই! একের ঝুটা অন্যের আহার্যবস্তু! দোষ কেন তবে পুরুষের একার হবে?
মেয়ে জুডো ক্যারাটে শিখবে অতি উত্তম কথা কিন্তু নাচ গান শিখলে নারী জাতির অবমাননা ক্যামনে হয় বুঝলাম না ঠিক।
ফেসবুকের নারীবাদী অথবা নারীবিদ্বেষী শ্রেণী দুটোই সমান বিরক্তিকর। ইনবক্সে শিক্ষকের সাথে নিজের পিরিয়ডের কারণে নাকের জল চোখের জল ফেলা অথবা স্বামীটির 'লাগানো'র মত রুচিহীন খোশগল্পে সমাজ পরিবর্তন করা যায়না।
বাইবেলে বলা হয়েছে, If the blind lead the blind, both shall fall into the ditch! ভাগ্যিস তোমার ছাত্রীটির মত মানুষেরা এখনো সমাজের নেতা হননি। নয়তো দলবেঁধে ডিচেই পড়তে হতো নারীকুলকে!
আনিলা এন্ড গং সিম্পলি অসাম :clap:
আমাদের মায়েরা আমাদের মানুষ হতেই শিখিয়েছেন, মেয়েমানুষ নয়। বিধিনিষেধ যা ছিল তা ভাই বোন সবার জন্য একই ছিল। দেশে ও বিদেশে পড়াশোনা করেছি, জুতো শেলাই থেকে চন্ডীপাঠ সব মিলেমিশে করেছি, গান বাজনা শিখেছি, অখাদ্য কবিতা লিখেছি, প্রেম করেছি, তুমুল ভালবেসে বিবাহ করেছি, সংসার করেছি বিপুল আনন্দে, সন্তানের মা হয়েছি সবই করেছি কিন্তু মানুষ হিসেবেই।
হাঁও মাঁও খাঁও পুরুষের গন্ধ পাঁও বলে মনোটোনাস ছিঁঁচ্কাঁদুনে অতি আধুনিক মেয়েমানুষের কান্না বন্ধ করতে হবে, ব্লেম গেম বন্ধ করতে হবে। অর্থনৈতিক মুক্তির কথা আলোচনায় আসতে পারে প্রথমেই। বারো বছর বয়েসে কি হলো, কেন হলো এসব বইতে লেখা আছে স্পষ্ট, তাই এটিকে ইস্যু বানিয়ে নারীবাদী হতে চাওয়া খুব সস্তা মনেহয়।
পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে, প্রিয় ইনবক্সদাতা! চিআও!
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ পড়েছো, এই জন্য।
পড়ে দীর্ঘ সময় ভেবেছো, এই জন্যেও।
আবার ভেবেটেবে এত বিশাল একটা কমেন্ট করেছো, এই জন্য তো বটেই...
তবে একটু বেশী হাস হয়ে গেল কি কথাগুলা?
আফটার অল, এন্ড অব দ্যা ডেতে মেয়েটি কিন্তু কোন এক সিস্টেমের ভিক্টিম।
আর ভিক্টিম ব্লেমিং জিনিষটা তো আসলে খুব সুখকর কোন ব্যাপার না।
কেউ তো নিজ থেকে ভিক্টিম নয় না। নিয়ন্ত্রানাধিন নয় - এরকমের নানান ফ্যাক্টরের প্রভাবে একজন ভিক্টিম হয়ে পরে এক একটা পরিস্থিতির।
আরেকটু দয়ার্দ্র হলেও কিন্তু পারতে!!!
অবশ্য এই কথাটা পছন্দ হয়েছে, জানো?
"হাঁও মাঁও খাঁও পুরুষের গন্ধ পাঁও বলে মনোটোনাস ছিঁঁচ্কাঁদুনে অতি আধুনিক মেয়েমানুষের কান্না বন্ধ করতে হবে, ব্লেম গেম বন্ধ করতে হবে।"
কেন, বলছি...
দিন কয়েক আগে হঠাৎ এক গভীর রাতের আড্ডায় অংশ নিতে হলো।
আমি ছাড়া সবাই তরুন। ৫-৬ থেকে ১৫-১৬ বছরের ছোট আমার থেকে।
রাত যত বাড়ছে, বিষয়াবলির বিস্তারও বেড়ে চলছে।
এক পর্যায়ে অমোঘ অন্তর্ভুক্তি নারী বিষয়ক আলোচনা।
যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পরিচিত সার্কেলের একাকি নারীরা (যেভাবেই হোক, অবিবাহিত বা বিচ্ছেদ) কে কেমন???
প্রথমেই দু'চার জন নিয়ে ওরা তাদের মনভাব জানালো এইভাবে...
"অমুক? ওকে চেনো না? খুব ভাল মেয়ে। কতটা এগুবে, কি কি করবে - সবই এক্সপ্লিসিটলি ডিসক্লোজড বাই হার। আর কখনো কোন ব্যাক বাইটিং-এ যাবে না যদি তাঁর ডিসিক্লোজড রুল মেনে চলো তুমি...... ইত্যাদি"
আবার আরেকজনের কথা বললো, " কিন্তু তমুক থেকে এক্কেবারে সাবধান। সে খোঁচাবে। খালি খোঁচাবে। কিন্তু যে মুহুর্তে তুমি তাকে কিছু একটা ইঙ্গিত দেবে, পরদিনই মাইক লাগিয়ে জনে জনে রাস্ট্র করে বেড়াবে "ভাইসব জেনে রাখুন অমুক ভাই কতটা পারভার্ট... বোনসব অমুক ভাই থেকে সাবধান। তিনি ইঙ্গিতপূর্ন কথা বার্তা বলেন। আমার কাছে রেকর্ড আছে, দেখে যাও... ইত্যাদি"
এসব শুনেটুনে মাঝে মাঝে তো ভাবতে ইচ্ছাই হয়, কিছুটা রেসট্রেইন আসলে উভয় পক্ষেই থাকা উচিৎ.........
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
আমি পুরনো ধ্যানধারণার মানুষ বোধকরি, ভাইয়া। তাই হয়তো রুট লেভেলে ভাবতে পছন্দ করি। নিজেদের শিক্ষা, পরিবার, সমাজ এবং মূল্যবোধ আজো সমস্যার মূলে ভাবতে শেখায়। আমার সমসাময়িক এবং পারিপার্শ্বিক নারীরা নিজেদের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করে গেছেন। সবাই যে সফল হয়েছেন তা নয় কিন্তু সকলেই সচেষ্ট নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠাকল্পে!
নারী স্বাধীনতা মানে পুরুষবিদ্বেষ নয় এই সরলবর্গীয় ব্যাপারটি যতদিন মেয়েরা না বুঝবেন ততোদিন সমস্যার সমাধান তো দূরের কথা বরং নিত্য নতুন সমস্যায় পড়তে হবে আমাদের।
বিচ্ছিন্ন ঘটনা সব সমাজেই ঘটে সেটি ভুলে গেলে চলবেনা। সমাজের এইসব পুরুষেরাই আমাদের পিতা, প্রপিতা, ভাই, বন্ধু, স্বামী অথবা প্রেমিক।
মেয়েটি কি আশা করছেন তোমার থেকে; অথবা তুমি কি আশা করছো পাঠকের থেকে, ভাইয়া? সহানুভূতি, সমবেদনা, এমপ্যাথি, পরামর্শ? নাকি কেবলই মনের দুঃখের কথা বলে নিজেকে হালকা করা? শিক্ষক হিসেবে অথবা বন্ধু হিসেবে আমার মনেহয় তুমি তাকে সর্বত সুপরামর্শই দিয়েছো। আমার মতামত লেখকের অথবা অতি আধুনিক নারীবাদীদের কষ্টের কারণ হলে দুঃখিত হওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই।
যত্রতত্র যারতার সাথে খেয়াল খুশীমতো ঘুমানোর অধিকার যদি নারী স্বাধীনতার সমার্থক হয় তবে আমি মুখে কুলুপ আঁটলাম।
কারপে ডিয়েম!
"মেয়েটি কি আশা করছেন তোমার থেকে; অথবা তুমি কি আশা করছো পাঠকের থেকে, ভাইয়া?"
আসল জায়গায় হিট করেছো।
প্রথম প্রশ্নটার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করি আগে।
মেয়েটি কিছু আশা করলে তো নিজ নামে প্রকাশ্য ব্লগ বা আর্টিকাল লিখে জানাতো তা, তাই না?
সে তা জানায় নি।
কেন জানায়নি?
আমার মনেহয়, তাঁর মনে হয়েছে যে, তাঁর এইসব কথা বুঝে তাকে ধারন করার মত সহানুভুতি তাঁর আশেপাশের মানুষগুলোর মধ্যে এখনো আশে নাই।
তারা সব গতানুগতিক চিন্তাভাবনার সেই সব মানুষ যারা পদে পদে মেয়েটির দোষ-ত্রুটি খুজবে সবার আগে। একটা কিছু পেয়ে গেলেই, সেটাকেই সব সমস্যার মূল হিসাবে চিহ্নিত করে আঙ্গুল তুলবে তাঁর দিকে। মানুষ যখন, দোষ-ত্রুটির উর্ধে নয় কেউ।
তাই বলে দু'একটা ভুলের জন্য সব দায় কেন একটি মেয়ের উপরেই বর্তায়, বলতে পারো?
এবার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দেই।
আমার স্ট্যাটাস দেখে সে যে নিজেকে প্রকাশিত করেছে, তা আসলে একটা আস্থার কারনে।
কি সেই আস্থা?
সহানুভুতি দেখাতে পারার আস্থা...
সে যখন বলে "আজকাল কন্যাসন্তানের জন্মের খবরে খুশী হতে পারি না আর" - এটা আক্ষরিক অর্থে সে বলে নাই।
সে এই অর্থে বলেছে যে "আপনার মত মানুষ কম বলেই, আজকাল কন্যাসন্তানের জন্মের খবরে খুশী হতে পারি না আর"
যার অর্থ হলো "এইরকম সহানুভুতিশীল অনেক মানুষ যদি চারপাশে পেতাম, তাহলে কন্যাসন্তানের জন্মের খবরে অনেক খুশী হতাম..."
আমি আসলে দেখতে চাইছিলাম - নারীর দিকটা আগে ভাববে, এরকম মানুষের আসলেই কতটা অভাব?
মনে তো হচ্ছে, অভাবই.........
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
প্রসঙ্গতঃ আরেকটা ঘটনা বলি।
অন্য একটা লিখায় একবার এমন একটি মেয়ের উল্লেখ ছিল যে মেয়েটিও এই মেয়েটির মতই স্বামী কর্তৃক শারীরিকভাবে নিগৃহিত, প্রহৃত।
তাঁর আশেপাশের মানুষরা, এমন কি খুব ঘনিষ্ট মানুষেরাও, যখনই তাঁর ঐ নিগ্রহের কথা জেনেছে, তাদের প্রথম প্রশ্নই থাকতো "তোকে মারতো কেন?"
এজ ইফ, সে কোন দোষ-ত্রুটি করতো বলেই তাকে মারতে হপ্তো। যেন নারী দোষ-ত্রুটি করলে, তাকে মারধর করাটা খুবই স্বাভাবিক ও গ্রহনযোগ্য একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
সে দোষ করতো, তাই তাকে মেরে দোষ মুক্ত করতে হবে, সংশোধন করতে হবে, এটাই যেন নিয়ম।
অথচ প্রহারের সাথে যে সংশোধনের কোন সম্পর্ক নাই, বরং এটা যে প্রহারকারীর শ্রেষ্ঠত্য প্রমানের একটা হাতিয়ার।
প্রহারকে যৌক্তিকতা দেয়াটা তাই আমার কাছে প্রহারকারীর শ্রেষ্ঠত্য মেনে নেয়ার সমতুল্য...
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
(সম্পাদিত)
@ সাবিনা চৌধুরী, চমৎকার, স্পষ্ট ও বলিষ্ঠ বক্তব্য।
ইম্প্রেসড! (সম্পাদিত)
মেয়েটি যে আমার মাটিকে পেছনে ফেলে বুকের ভেতর আবেগের বাক্সটাকে বেদম দখল করে বসে আছে । তাকে নিয়ে সাত সতেরো কোটি ভাবনা ঘিরে থাকে সারাক্ষণ । মেয়েটি আমাকে ছেড়ে যেদিন গেলো বিভূঁই আমার চোখে বান ডাকতো নিত্য দিন । তখন কেবল আমি ভাবতে পেরেছিলাম আমি যেদিন গিয়েছিলাম ক্যাডেট কলেজে অখন নিশ্চয়ি আমার মায়েরও কষ্ট ছিলো বুক জুড়ে।
আকাশে ছুঁড়ে দিয়ে লুফে নেয়ার সময় উচ্চকিত খিল খিল হেসে ওঠা আর আবার অমন ছুঁড়ে দেয়ার অপেক্ষায় অধীর আমার দিকে চেয়ে থাকা মেয়েটা কি করে এমন বড় হলো । আমার মায়ের শাসন করার চেয়ারখানার দখল নিলো ... মনে হয় যেনো কিচ্ছুটি টের পাইনি ।
এই মা আর মেয়ের প্রজন্ম ব্যবধানে পৃথিবীর কতো কিছু পাল্টেছে কতো আযুত মাইল এগিয়েছে । তবু শংকার শেকলগুলো যেনো আজো সমান চকচক করছে। এটা কি আমার সামাজিক প্রতিবেশ থেকে ইনজেক্ট করা অনুভূতির বৈকল্য নাকি এর পেছনে আছে জাগতিক সমস্যা সংকটের অস্তিত্ব !
ভালো লাগলো খুউউউব ...
"তবু শংকার শেকলগুলো যেনো আজো সমান চকচক করছে। এটা কি আমার সামাজিক প্রতিবেশ থেকে ইনজেক্ট করা অনুভূতির বৈকল্য নাকি এর পেছনে আছে জাগতিক সমস্যা সংকটের অস্তিত্ব......"
আমার তো মনে হয় এটা "অনুভূতির বৈকল্য"-ই...
এত মনোযোগ দিয়ে পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ!
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
"বয়স অনুযায়ী শিশুদের দায়িত্ব প্রদানের অনুশীলন করানোটা আমার মনে হয় খুবই জরুরী। এতে সামর্থ্য বাড়ে। আর যেকোন সামর্থ্য বাড়া মানেই তা হিউম্যান রিসোর্স ইনডেক্সকে উন্নত করতে ভুমিকা রাখা।" - যথার্থ!
"নারীদের এই যে গুটিয়ে নেয়া, এই যে গুটিয়ে থাকা, এটার কি কোন সমাধানই তাহলে নাই?" - কে বা জানে!
এমন একটা সংবেদনশীল বিষয়কে তুলে ধরার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ, পারভেজ। আমার মনে হয়েছে, তোমার ছাত্রীটি সর্বদা একটা সেন্স অব ইন্সিকিউরিটি দ্বারা তাড়িত। তোমার লেখা পড়ে সে উজ্জীবিত হয়েছিলো, তাই তোমার কাছে সে অকপটে তার নেহায়েৎ ব্যক্তিগত কথা প্রকাশ করে কিছুটা নিরাপত্তার সন্ধান চেয়েছিলো। যাই হোক, এ সমস্যার কোন দ্রুত সমাধান নেই। জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েই যুদ্ধের কলাকৌশল পাল্টাতে হয়। মেয়েটিও তাই করবে নিশ্চয়।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, খায়রুল ভাই।
আমার সাথে তাঁর যতটা যোগাযোগ হয়েছিল, আমি সাধ্যমত চেষ্টা করেছি যেন সে যাই করে আত্মিবিশ্বাসের সাথে দায়িত্ব নিয়ে করে।
আশা করছি সেই লেসনগুলা সে ঠিকঠাক মতই ব্যবহার করে যাবে।
তাঁর সর্বাঙ্গিন সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করি সবসময়েই...
কখনো সম্ভব হলে আপনার বক্তব্যও তাঁকে পৌছে দেবো...
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.