এক
প্রেম-বন্ধুত্ব-যৌনতা:` এই তিনের মিথোস্ক্রিয়া নিয়ে একটা ভ্যান-ডায়াগ্রাম আছে।
এটা খুব একটা রিসার্চড কিনা, জানি না, তবুও ইন্টারেস্টিং!!!
এই লেখাটা তা নিয়েই।
ভ্যান-ডায়াগ্রামটি পরীক্ষিত হোক বা না হোক, দিস ক্যান বি ইউজড ইন এক্সপ্লেইনিং মেনি থিং এবাউট রিলেশনশীপ।
সেদিন বন্ধুদের আলাপে উঠে এলো, আজকাল ডিভোর্স বেড়ে যাওয়ার ইস্যুটি।
ভাবলাম, এই ভ্যান-ডায়াগ্রাম দিয়ে একটা ব্যাখ্যা দাড় করানোর চেষ্টা করি……
হিট্রিকালি এই দেশে রিলেশনশীপ ছিল মূলত এরেঞ্জড ম্যারেজ-নির্ভর।
সেখানে ফ্রেন্ডশীপের ব্যাপারটা বরাবরই গৌন ছিল।
দেখা যেতো, সারা জীবন একসাথে থেকেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো ফ্রেন্ডশীপ গড়ে ওঠে নাই।
এমনকি অনেক সম্পর্কই থেকে যেত প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্কের মত।
পরিস্থিতি উন্নত হয়ে সেটা কাপলে উন্নিত হওয়া শুরু করে।
কিন্তু বন্ধুত্ব বিহীন যে কাপল-রিলেশন, সেখানে পরে বন্ধুত্ব ঢোকানোটাও আসলেই কঠিন। কারন বন্ধুত্ব হলো প্রেমের চেয়ে লো-গ্রেড এফিলিয়েশন।
তাই আগে প্রেম হয়ে গেলে পরে বন্ধুত্ব গড়াটা কোনো প্রায়োরিটি থাকে না।
বরং যখন বন্ধুত্ব থেকে প্রেমে উত্তরণ হওয়া শুরু হলো, পারফেক্ট রিলেশনে পৌছানোর সম্ভবনা বেড়ে গেল।
সেখানেও গন্ডগোল দেখা যাচ্ছে আমাদের সামাজিক স্ট্রাকচার ও এক্সপেক্টেশনের কারনে।
ফ্রেন্ড থাকা কালে একসাথে করা যা যা খুবই একসেপ্টেবল ছিল, প্রেমিক প্রেমিকা হয়ে যাবার পর সেগুলার অনেক কিছুই বদলাবার চাপ সৃষ্টি হয় ভিতর-বাহির থেকে।
এতে প্রেম হয়তো দৃঢ় হয়, কিন্তু বন্ধুত্বটা কমতে শুরু করে।
আবার বিয়ের পর পরিবার-পরিজন, পাড়া-প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজন – সবাই মিলে, এক্সপেকটেশনের এত এত বোঝা চারিদিক থেকে চাপাতে থাকে, দেখা যায় একটা সময় বন্ধুত্বের কিছুই আর অবশিষ্ট তো নাই ই, বরং চাপ সামলাতে প্রেমেও টান পড়ে যাচ্ছে।
এই সময় শুধু সেক্সে নির্ভর করে একটা সম্পর্ক কিছুদিন হয়তো টানা যায়, কিন্তু কতদিন?
বিশেষ করে আজকের দিনে?
যে যুগলের উভয়ই বন্ধুত্বের আশ্রয় উপভোগ করেছেন, নিজেদের মধ্যে সেটা হারিয়ে যেতে বা অসম্ভব হয়ে উঠতে দেখলে অন্যত্র সেটা খুজে পেতে চেষ্টা করতে হতেও পারে।
একই ঘটনা ঘটতে পারে প্রেমের ক্ষেত্রেও।
সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী ও উপভোগ্য করতে চাইলে ভেবে দেখুন, সেখানে কতটা বন্ধুত্ব, কতটা প্রেম এখনো অবশিষ্ট আছে? কি কি ভাবে তা বাড়ানো যায়, বা আপনারা তা বাড়াতে আদৌ আগ্রহী কিনা?
মনে রাখতে হবে, যে সম্পর্কে বন্ধুত্ব হারিয়ে গেছে, প্রেম দুর্বল হয়ে পড়েছে, সেখানে সেক্সও তেজী থাকে না। এরকম সম্পর্কের ঘানী টেনে যাওয়া আর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার মধ্যে আসলেই কি খুব একটা কোনো পার্থক্য থাকে?
দুই
অর্থপুর্ন বন্ধুত্বের অনুষঙ্গগুলো হল:
১) পছন্দ, অর্থাৎ তাঁর সান্নিধ্য ভাল লাগা। কোনো সংশয় না জাগা। সব কিছু মন খুলে তাকে বলতে পারা। আর এজন্য জাজমেন্টাল হওয়ার ভয় না পাওয়া।
২) কেয়ার, অর্থাৎ তাঁর ভালগুলো নিজে থেকেই ভাবা এবং সে যে না চাইতেই আমার ভাল নিয়ে ভাবছে, সেটা অনুভব করা। আবার না চাইতেই কষ্ট লাঘবে এগিয়ে যাওয়া, দরকারে পাশে থাকা, লেইম এক্সকিউজ না দেয়া, ভুল হলে তা স্বীকার করা – এগুলোও কেয়ারের অন্তর্ভুক্ত।
৩) আস্থা, অর্থাৎ প্রয়োজনের সময়গুলোতে পাশে থাকার পারষ্পরিক নিশ্চয়তা বা অগ্রগন্যতা বোধ করা।
পরিপুর্ণ প্রেমের অনুষঙ্গগুলো হল:
১) অন্তরঙ্গতা, অর্থাৎ যার সাথে সেই মাপের নৈকট্য গড়ে উঠেছে যা কাছে থাকা সময়টাকে তীব্র আনন্দময়তায় ভরে তোলে। আবার দূরত্ব ভালই বিষাদ জাগায়।
২) প্যাশান, অর্থাৎ যার প্রতি রোমান্টিক সান্নিধ্যের ইচ্ছা জাগে। সেই ইচ্ছা পুরন না হওয়া পর্যন্ত একটা অপূর্ণতা কাজ করে দেহে-মনে।
৩) কমিটমেন্ট, অর্থাৎ শুধু তারই প্রতি এই অন্তরঙ্গতা ও প্যাশান নিয়ে নিবেদিত থাকাতে পারষ্পরিক সম্মতি।
উপভোগ্য সেক্সের অনুষঙ্গগুলো হল:
১) তাঁর প্লেজারের জন্য সম্ভাব্য সব কিছু করার আগ্রহ।
২) নিজের প্লেজার পেতে তাঁকে তথ্য দিতে ও গাইড করতে সম্মত থাকা।
৩) এই দুইটির প্রয়োগে দুজনের জন্য ফুলফিলিং ফিজিকাল রিলেশন মেন্টেন করা বা সেটার উন্নতির চেষ্টা করে যাওয়া।
এবার মিলিয়ে দেখুন, আপনার সম্পর্ক কতটা পারফেক্ট!!!
তিন
এই ভ্যানডায়াগ্রামের সবগুলো কম্পনেন্ট যত বেশি থাকবে, একটি সম্পর্কের দীর্ঘস্থায়ি হবার সম্ভবনা তত বাড়বে।
কিন্তু এটাও ঠিক যে এই কম্পনেন্টগুলি যত বেশিই থাকুক না কেন, একটি পারফেক্ট সম্পর্ক যে দীর্ঘস্থায়ি হবেই, সে নিশ্চয়তা কিন্তু নাই।
আমিতাভ-রেখা প্রেম-কাহিনী হলো তাঁর এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
তাঁদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল বন্ধুত্ব দিয়ে।
পরে সেটা প্রেমে গড়ায়।
একটা সময় তাঁরা নিয়মিত ফিজিকালও হতেন কোনো এক কমন বন্ধুর বাঙ্গলোয়।
অপ্রকাশিত হলেও এইভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য টেনে নিয়ে যাওয়া সম্পর্কের ব্যাপারে দুজনেই যে সেসময় কন্টেন্ডেড ও সহমত ছিলেন, সেটা বোঝা যায়।
সমস্যার সূত্রপাত হয় কুলির সেটে দুর্ঘটনার পর।
ঐ একটা ঘটনা রেখাকে বুঝিয়ে দেয় এই গোপন সম্পর্ক যত রিলিভিং, সাটিসফাইং-ই মনে হোক না কেন, সেটা তাঁর জন্য কোনো সামাজিক অবস্থান তৈরী করতে না পারায় প্রিয়জনের দরকারের সময়ে সেটা তাঁকে অসহায় করে ফেলে।
বাধ্যতামূলক দূরে থাকার সময়ে পাওয়া কষ্টগুলো কাছে থাকার স্মৃতির মলমে নিরাময় হয় না।
রেখার জন্য অমিতাভের যত প্রেমই থাকুক, সমাজ সংসারের কথা ভেবে তাঁর সেই প্রেমটাকে পুর্ণতা দিতে না পারাটা যে প্রেমটিকে অবমূল্যায়ন করার সামীল, এটা রেখা বুঝতে পারেন।
আর তাই অমিতাভকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে রেখার তখন খুব একটা বেগ পেতে হয় না।
আমার মনেহয়, এরকম ডেস্টিনেশন বিহীন পারফেক্ট রিলেশনগুলোতে সফল করতে চাইলে কতগুলাকে ব্যাপারে ঐক্যমত থাকা দরকার।
শুনতে নিষ্ঠুর মনে হলেও সেগুলার মধ্যে প্রধান হলো বিপদের সময় গুলোতে দূরে থাকার ব্যাপারে পারষ্পরিক সম্মতি।
জনসম্মুখে লুকিয়ে রাখাটাই যে সম্পর্কের কেন্দ্রিয় চরিত্র, বিপদের সময় সেটার ব্যবহার সেটার কেন্দ্রিয় চরিত্র ক্ষুন্ন করে সম্পর্কের দুর্বলতা প্রকাশ করে দিতে পারে।
তখন দেখা যাবে না অমিতাভ না রেখা – কেউ আর সেটা হ্যান্ডেল করার সামর্থ রাখছেন………
পুনশ্চ:
আমি একবার এরকম একটা নিবিড় কিন্তু নো-ডেস্টিনেশন লুকানো রিলেশনের কথা শুনেছিলাম।
সেখানে পাত্র-পাত্রী নয়, বরং পাত্রীর কন্যা খুব অসুস্থ্য হয়ে পড়ে একটা সময়।
পাত্রীর সুবাদে তাঁর কন্যার সাথেও যেহেতু পাত্রের গভীর এটাচমেন্ট গড়ে উঠেছিল, তাই তখন পাত্র কন্যার অসুস্থ্যতা নিয়ে উৎকণ্ঠা জানিয়ে খুব বেশী বেশী কমুনিকেশন করেছিল পাত্রীর সাথে। পরে দেখা গেল, ব্যাপারটা ব্যাক ফায়ার করেছে।
পাত্রী জানালো, সে খুবই বিরিক্ত।
এত কমুনিকেশনকে সে তাঁর প্রতি আস্থাহীনতা (মা হয়ে মেয়ের যত্ন নিতে পারছে না জাতীয়) হিসাবে মনে করেছে।
এই ভুল বুঝাবুঝি (মতান্বরে মিস-কমুনিকেশন)-এর জের ধরে পরবর্তিতে সম্পর্কটা ভেঙ্গে যায়।
আমি পাত্রকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, “এত খোজ খবর করেছিলেন কেন?”
উনি জানালেন বাধ্যতামূলক, দূরে থেকে প্রিয়জনের বিপদে কিছু করতে না পারার কষ্টটা ওনাকে ভোগাচ্ছিল। “তাই সেটা লাঘবে…”
কষ্ট লাঘব করতে গিয়ে নেয়ার পারফেক্ট প্রেমটাই যে লাঘব হয়ে যাবে, তিনি বুঝেন নাই!!!
(মূল লেখাটা বছর তিনেক আগে ফেসবুকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত। এখানে ঈষৎ সংশোধিত করে রাখলাম আর্কাইভিং সুবিধাটা পাবার জন্য। আগে রেখেছিলাম কিনা, মনে নাই। রাখলেও খুঁজে পাই নাই। যদি খুঁজে পাই, সরিয়ে নেবো)
https://cadetcollegeblog.com/pervez840/59564 (সম্পাদিত)
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
সুন্দর লিখেছো পারভেজ। সংক্ষেপে অনেক কথাই বলা হয়েছে, সহজবোধ্য ভাষায়।