লো-লিবিডো : একটি উপেক্ষিত ডিসফাংশানালিটি – প্রথম পর্ব

এক
লো-লিবিডো অর্থাৎ যৌনাকাঙ্ক্ষা হারিয়ে ফেলা বা আশংকাজনক ভাবে কমে যাওয়াটা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে একটি সেক্সুয়াল ডিসফাংশান।
পুরুষদের জন্য সমস্যাটার হার নারীদের চেয়ে কম এবং তা সম্ভবত এই কারনে যে পৌরুষ ও যৌনক্ষমতাকে প্রায়ই ইকুয়েট করা হয়। পৌরুষ জাগিয়ে রাখার চেষ্টা লো-লিবিডো থেকে বেরিয়ে আসার জন্য একটা মটিভেশন হিসাবে কাজ করে।
নারীদের মধ্যে এই হারটা হয়তো এই কারনে বেশি যে নারীদের জন্য সতীসাধ্বী হওয়াটাকে বা অযৌন জীবনযাপন করাটাকে সামাজিকভাবে প্রসংশনীয় গন্য করা হয়। নারীদের মধ্যে তাই লো-লিবিডোর জীবন-যাপন চালিয়ে যাওয়াটাই বরং একটা মটিভেশন হিসাবে কাজ করে।
কিন্তু প্রিভেল্যান্সে এই কম-বেশি যাই হোক, স্টাডি ফাইন্ডিং কিন্তু বলে, নারী-পুরুষ উভয়েরই এই কারনে সাফারিং হয় কাছাকাছি হারেই:
– প্রতি ৬০ জন পুরুষের মধ্যে ৯ এই অবস্থার মধ্য দিয়ে যান। আবার ঐ ৯ জনের মধ্য মাত্র দু’জন নিজেকে সুখি ভাবেন। বাকি ৭ জনের অসুখি জীবন যাপনের মূলে থাকে এই যৌনাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কিত জটিলতা।
– প্রতি ৬০ জন নারীর মধ্যে ২০ জন এই অবস্থার মধ্য দিয়ে যান। আবার ঐ ২০ জনের মধ্য ন’জন নিজেকে সুখি ভাবেন। বাকি ১১ জনের অসুখি জীবন যাপনের মূলে থাকে এই যৌনাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কিত জটিলতা।
প্রশ্ন হলো, কিভাবে বুঝবেন, আপনি লো-লিবিডোতে আক্রান্ত কিনা?

নীচের সাতটি পরিস্থিতির বেশিরভাগই যদি আপনার জন্য সত্য হয়, বুঝবেন,
– আপনি পুরুষ হলে প্রতি ৬০ জন পুরুষের মধ্যে আপনিও ঐ ৯ জনের একজন।
– আর আপনি নারী হলে প্রতি ৬০ জন নারীর মধ্যে আপনিও ঐ ২০ জনের একজন।
পরিস্থিতি সমুহ:
১) বেডরুম ছাড়া সারাদিনে একবারও তাঁকে ছোঁয়া হয়ে ওঠে না। এমনকি নিজ থেকে ছুঁয়ে দেখতে তেমন কোনো ইচ্ছাও জাগে না।
২) যৌনতা ঘটলেও কিন্তু সেটা কোনো বাড়তি কানেকশন বা সুখ ভাগাভাগি করার মত অনুভুতি দেয় না। (মনেহয়, যা করলাম, নিজের জন্য বা তাঁর চাহিদা মেটানোর জন্য করলাম)।
৩) সবসময় সেক্সের ব্যাপারে নির্দিষ্ট একজনই হয়ে ওঠে সুচনাকারী আর অন্যজন হলো এটা ভেবে টেনশনে ভোগা যে “এই বুঝি আবার প্রস্তাব এলো বলে”।
৪) নিজের যৌনতা নিয়ে আগ্রহ, পরিকল্পনা এসব গুটিয়ে ফেলা। অর্থাৎ দৈনন্দিন কর্মকান্ডে সেক্সের কোনো প্রায়োরিটি না রাখা।
৫) সেক্সকে একটি যান্ত্রিক ও নৈমিত্তিক ব্যাপার বালিয়ে ফেলা। অর্থাৎ করতে হবে, তাই করা। এতে কোনো ভ্যারাইটি রাখার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলা।
৬) সঙ্গিকে নিয়ে কোনো রকম যৌনাত্বক ভাবনা-চিন্তা-পরিকল্পনা বা ফ্যান্টাসাইজ না করা।
৭) ফ্রিকোয়েন্সি এতটাই কমে যাওয়া যে মাসে দু’একবারের বেশি সঙ্গম হচ্ছেই না।

লো-লিবিডোর মূল সমস্যা হলো এই যে, আপনি এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন বলে এটা আপনার নিজের জন্য খুব বড় কোনো সমস্যা বলে মনে না হওয়া। বরং এরকম অজুহাত শোনা যায় যে “ইচ্ছা না জাগলে আমার কি করার আছে???” – ইত্যাদি।
কিন্তু এর জন্য আপনার সঙ্গির সাথে আগ্রহের যে ভিন্নতাটা তৈরী হয়, এবং সেই জন্য তাঁকে কিসের কিসের মধ্য দিয়ে যেতে হয় – একবার ভাবুন তো দেখি?
আপনি না হয় লো-লিবিডো আক্রান্ত, কিন্তু সে তো আর তা নয়।
আপনার এই সমস্যা বা অক্ষমতার কারনে তাঁকে কেন এই বাধ্যতামূলক বঞ্চিতের জীবন-যাপন করতে হবে, বলুন দেখি???

দুই
লো-লিবিডো থেকে উত্তরনের জন্য প্রথমেই যা দরকার, তা হলো, নিজের যে এই সমস্যাটা আছে, সেই ব্যাপারে কনভিন্সড হওয়া।
এরপর, এ থেকে উত্তরনে পদক্ষেপ নিতে সম্মত হওয়া।
এই দুইটার কোনোটাই শুনতে যতটা সহজ মনে হচ্ছে, আসলে তা কিন্তু ততটা সহজ কোনো কাজ না।
প্রথমেই আসি কনভিন্সড হবার ব্যাপারটায়।
বেশিরভাগ লো-লিবিড আক্রান্তই নিজের অবস্থাটাকে স্বাভাবিক বলে গন্য করেন এবং অন্যদের স্বাভাবিক লিবিডোকেই তাঁরা বরং অত্যুৎসাহ বলে গন্য করেন।
তাঁরা নিজেদের শুধু স্বাভাবিকই ভাবেন না, এই স্বাভাবিকতার জন্য তাদের অনেক সময় এরকম একটা গর্ব বা হামবড়া ভাবও এসে যায় “দেখো, আমি কাম রিপুকে কিভাবে বশিভুত করে রেখেছি…” ইত্যাদি।
যারা এরকম অবস্থার মধ্য দিয়ে যায়, তাদের জন্য নিজের অবস্থাটাকে লো-লিবিডো হিসাবে মেনে নেয়া কঠিনই…
আবার ধরা যাক, পার্টনারের পিড়াপিড়িতে যদিও বা বুঝলো যে কিছু একটা সমস্যা আছে, চিকিৎসার মাধ্যমে সেটা জানাজানির চেয়ে সোশাল স্টিগমার ভয়ে সেটা লুকিয়ে রাখতেই সচেষ্ট হন অনেক বেশি মানুষ।
তাছাড়া এদের বিরাট একটি অংশই অযৌন এক্টিভিটিতে জড়িয়ে সাবলিমিশন পদ্ধতিতে লো-লিবিডো সম্পর্কিত জটিলতা ভুলে থাকায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েন।
এদের জন্য নিজের লো-লিবিডোর কথা বুঝলেও সেটা উত্তরনে পদক্ষেপ নেয়াটা আশা করা কঠিনই।
তবুও যদি কেউ লো-লিবিডো থেকে বেরুতে সম্মত হন, ও সেইজন্য উপায় অনুসন্ধান করেন, প্রথমেই তাঁকে যা করতে হবে, তা হলো, নিজের লো-লিবিডো ঘটার পিছনের কারন বা কারন সমুহ খুজে বের করা।
পরবর্তি পর্বে লো-লিবিডো সৃষ্টির পিছনের কারনসমুহ বর্ননা করবো। কিন্তু তার আগে এখানে একটা কথা বলে যাওয়া প্রাসঙ্গিক –
– নারী ও পুরুষ উভয়েই লো-লিবিডো আক্রান্ত হলেও তাদের এই আক্রান্ত হবার পিছনে একেবারেই ভিন্ন ভিন্ন কারন ক্রিয়াশিল থাকতে পারে।
– লো-লিবিডো ঘটার জন্য: পরিবেশগত, কেবল শারীরিক, কেবল মানসিক, অথবা, শারীরিক-মানসিক উভয় কারনই যুগপৎ ভাবে দায়ি হতে পারে।

মনে রাখবেন, কারন জানাটাই আপনার লো-লিবিডো সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার কোনো উপায় না। এথেকে মুক্ত হলে, আপনাকে চিকিতসক অথবা মনবিদের সরনাপন্ন কিন্তু হতেই হবে। তবে হ্যাঁ, কারনগুলো আপনি জেনে রাখলে তা দিয়ে আপনি চিকিৎসক বা মনবিদকে চিকিৎসা চালানোর বিষয়ে সহায়তা দিতে পারবেন………
(চলবে…)
লো-লিবিডো : একটি উপেক্ষিত ডিসফাংশানালিটি – দ্বিতীয় পর্ব
লো-লিবিডো : একটি উপেক্ষিত ডিসফাংশানালিটি – তৃতীয় পর্ব

৪,৬৯৩ বার দেখা হয়েছে

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।