ফ্লার্ট সমগ্র – প্রথম পর্ব

এক

ফ্লার্ট নিয়ে লিখালিখির ইচ্ছা সেদিন থেকে যেদিন এক টিভির লাইভ আলোচনায় বিশেষজ্ঞগনকে ফ্লার্টিং-এর পক্ষে এইভাবে ওকালতি করতে দেখেছিলাম:
ফ্লার্টিং হলো খুবই স্বাস্থ্যকর (হেলদি) একটি অনুশীলন (প্র্যাকটিস)। এটা একজনকে প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হওয়া বিভিন্ন ধরনের চাপ থেকে মুক্ত রাখতে ভূমিকা রাখে। তাঁর জীবন যাত্রা সহজ করে। তবে কখনো যদি ফ্লার্টিং-কে চাপযুক্ত বা কষ্টকর মনেহয়, বুঝতে হবে সেটা আর ফ্লার্টিং-এর সংজ্ঞার মধ্যে সীমাবদ্ধ নাই। এটা এমন কিছুতে পরিনত হয়েছে যা কে হয় পরিনতি দেয়া দরকার, না হয় তো টার্মিনেট করে তা থেকে বেরিয়ে যাওয়া দরকার।

এর প্রায় কাছাকাছি সময়ে আমার এক ফেবু বন্ধুকে বলতে শুনেছিলাম:
একজন স্বাধীন মানুষ হিসাবে আমার অবশ্যই অধিকার আছে পছন্দের যে কারো সাথে পারস্পরিক সম্মতিতে ফ্লার্ট করার। এটা নিয়ে তৃতীয় কারো কিছু বলার থাকতে পারে না…

এই দুটি ঘটনার পর ফ্লার্ট নিয়ে যে উৎসাহ তৈরী হয়েছিল, তার কারনে দীর্ঘ অনুসন্ধান করলাম ফ্লার্ট সম্পর্কে জানার। এতদিনে যা যা জানলাম, অভিজ্ঞতা হলো – সেসবের আলোকে আজ থেকে কিছু কিছু করে লিখবো ফ্লার্ট নিয়ে।

আগে ব্যাখ্যা করে নেই, ফ্ল্যার্টিং-এর সীমারেখা কতদূর। ফ্ল্যার্টিং হলো প্রাপ্তবয়ষ্কদের পারষ্পরিক সম্মতিতে তৈরী হওয়া এমন একটি সম্পর্ক, যা হতে পারে কেবলই বন্ধুত্বময় (পুরোপুরি সেক্সবিবর্জিত) থেকে রোমান্টিক (প্রেমময় কিন্তু ফিজিকাল সেক্সবিহীন, অবশ্য এডাল্ট কথাবার্তা চলে) থেকে পুর্ন যৌনাত্বক (যেখানে ফিজিকাল বা অনলাইন সেক্স অন্তর্ভুক্ত) পর্যন্ত অনেক কিছুই। তবে সব ধরনের ফ্লার্টেই যেটা জিনিষটা কমন, তা হলো, বন্ধনহীনতা। ততক্ষণই সম্পর্কটা ফ্ল্যার্টিং-এর আওতায় থাকবে, যতক্ষণ কোনো পক্ষই কোনো স্থায়ী বন্ধনে জড়াতে চাচ্ছে না। তারমানে, ফ্ল্যার্টিং-এ পারষ্পরিক সম্মতিতে যাই হোক না কেন, এটা বন্ধনে আবদ্ধ হবার মত সিরিয়াস কোনো সম্পর্ক কিন্তু না।

এবার আসি ফ্ল্যার্টিং-এর উপকারিতা সম্পর্কে। ফ্ল্যার্টিং-এর উপকারিতা মূলত তিনটি:

১) ফ্ল্যার্টিং সেলফ-এস্টিম বাড়ায় :
ফ্ল্যার্টিং-এর সময় কুশল আদান প্রদানের ছলে প্রচুর পরিমানে পারষ্পরিক পিঠ চাপড়া-চাপড়ির ও প্রশংসা-গুনকির্তনের ঘটনা ঘটে। এতে করে একজন আদারওয়াইজ হীনমন্যতায় ভোগা বা নিজেকে সাধারন মনেকরা নিরুতসাহি মানুষও অসাধারন সব প্রানবন্ত এটেম্পট করে বসেন।

২) ফ্ল্যার্টিং মেজাজ-মর্জিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে :
ফ্ল্যার্ট চলাকালে মস্তিষ্কের প্লেজার রিসেপ্টর খুব সক্রিয় হয়ে ওঠে। সেসময় ছোটখাটো ভাল লাগাগুলিও হয়ে ওঠে অত্যন্ত আনন্দময়। দেখা যায়, ফ্ল্যার্টিং শেষ হবার পরেও দীর্ঘসময় ধরে এই সক্রিয় অবস্থাটা চলতে থাকে। যারা ফ্ল্যার্টিং করছেন, তাদের সান্নিধ্যে থাকা অন্য মানুষগুলোও এই ভাল-মেজাজের বেনিফিটগুলো পান।

৩) ফ্ল্যার্টিং স্ট্রেস কমায় :
ফ্ল্যার্টিং চলাকালে স্ট্রেস ভেন্টিলেশনের প্রচুর সুযোগ থাকে। যারা স্ট্রেসফুল কাজকর্মে নিয়োজিত থাকেন, তাঁরা কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফ্লার্টিং-এর সুযোগ পেলে তা ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে তাদের স্ট্রেসজনিত ক্লান্তি দূর করে কর্ম-উদ্দিপনা ফিরে আনায় ভূমিকা রাখে।

দুই

ফ্লার্টিং জিনিষটা কিন্তু হঠাৎ করেই শুরু হয়ে যায় না। শুরুর আগে একখানা ধাপ আছে যেটাকে “র‍্যাপো বিল্ডিং” বলে।
এই ধাপে মূলতঃ যে কাজটা করা হয় তা হলো দুজন ফ্ল্যার্টেচ্ছু কিছু কমুনিকেশনের মাধ্যমে যোগাযোগে পারষ্পরিক সম্মতিটা দিয়ে দেয়।
সাধারনতঃ এই ধাপটা পুরুষরাই শুরু করে, কিন্তু নারীরা যে একদমই শুরু করেই না, তাও কিন্তু না।
র‍্যাপো বিল্ডিং পর্বটা খুবই প্রকট ধরনের হয় এবং কারো জন্যই তা চিহ্নিত করা খুব কঠিন না। প্রথম মুভ যে ই করুক না কেন, প্রতিপক্ষের যদি ফ্লার্টিং-এ ইচ্ছা না থাকে, শুরুতেই অনিচ্ছাটা জানিয়ে দেয়াটাই হলো বেস্ট অপশন।
তা না করে, “দেখি না কি হয়” ভেবে বসে থাকলে ও একবার র‍্যাপো তৈরী হতে দিলে পরে তা থেকে বেরুনো আর সহজ হয় না। কিছু তিক্ততা সেটা তৈরী করেই।

ফ্ল্যার্টিং নতুন কোনো কিছু না।
সবসময়ই ছিল।
আগে যোগাযোগটা সহজ ছিল না বলে এটার প্রস্তাব কোনো র‍্যান্যডম পার্সনের কাছ থেকে আসতো না।
ইন্ডিভিজুয়াল মেসেজিং (আই এম) সার্ভিসগুলি আসার পর থেকে এটা যে কারো জন্য নাগালে এসে গেছে।
একদিক দিয়ে ফ্লার্টেচ্ছুদের জন্য এটা যেমন সুবিধা বাড়িয়েছে অন্যদিক দিয়ে এটা সবার, বিশেষ করে নারীদের জন্য ফ্লার্ট প্রস্তাবে জর্জরিত হওয়ার পথ করে দিয়েছে।
তবে সম্প্রতি অনেকগুলি এপই স্বয়ংক্রিয় ভাবেই ইনিশিয়াল এটেম্পট ফিল্টার করে রাখছে। আপনি চাইলেই শুধু দেখাবে, নইলে না।

এবার জানা যাক, প্রাথমিক র‍্যাপো তৈরী করার পর ফ্লার্ট প্রস্তাবকারী কি কি পন্থা নিতে চাইতে পারেন। এগুলো আবার ফ্ল্যার্টের প্রকারভেদও:
১) গতানুগতিক ফ্ল্যার্টিং
২) মার্জিত ফ্ল্যার্টিং
৩) নীবিড় ফ্ল্যার্টিং
৪) মতলবি ফ্ল্যার্টিং
৫) আন্তরিক ফ্ল্যার্টিং

এ নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করছি পরে।

তিন

১) গতানুগতিক ফ্লার্ট :
গতানুগতিক ফ্লার্ট কিন্তু অন্য চার প্রকার ফ্ল্যার্ট থেকে পৃথক কিছু না।
ঐ চারটিই হতে পারে গতানুগতিক ভাবে অথবা নিজেদের নির্ধারিত অন্য যেকোনো ভাবে।
গতানুগতিক অর্থে বুঝানো হচ্ছে এই যে, র‍্যাপো তৈরী হবার পর থেকেই পুরুষটি কন্ট্রোল নিজের হাতে তুলে নেবে এবং নারীটি মূলত হয়ে যাবেন একজন রেসপন্ডেন্ট।
যেকোনো কর্মকান্ডের ইনিসিয়েশন আসবে প্রধানতঃ তাঁর দিক থেকেই।
এটাকে গতানুগতিক বলা হচ্ছে এই কারনে যে, নারীটি শুরুতেই যদি ভিন্ন কোনো প্রেফারেন্স না জানিয়ে রাখে, তখন পুরুষটি ধরেই নেবে যে সম্পর্কটা হিম-ট্রিগার্ড বা গতানুগতিক।
নারীর জন্য বলছি, আপনার নিরবতাই প্রতিপক্ষকে গতানুগতিক হতে সংকেত দেবে। কিন্তু আপনি যদি এটায় সম্মত না থাকেন এবং চান যে সবকিছু বা অনেক কিছুই আপনার পছন্দ মত চলবে, তাহলে পরবর্তিকালে এই নিয়ে হতে যাওয়া জটিলতা এড়াতে যথাশীঘ্র সম্ভব জানিয়ে রাখুন সেটা…

২) মার্জিত ফ্ল্যার্ট :
এ হলো সেই ফ্ল্যার্ট, যা র‍্যাপো তৈরীর পর থেকে আর খুব একটা এগোয় না। কখনো সখনো কোনো উপলক্ষ ধরে তাঁরা আলাপচারিতায় জড়ায়। এবং একবার সেরকম কিছু শুরু হলে একটানা বেশ চলে তা দুর্দমনিয় গতিতে। আবার হঠাত ছেদ পড়ে তাতে। সময় কেটে যেতে থাকে দীর্ঘ্য বিরতির মধ্য দিয়ে, আবারো কোনো উপলক্ষের অপেক্ষায়। প্রশ্ন উঠতে পারে, এরকম থেমে থেকে চলা যোগাযোগটা আবার ফ্ল্যার্ট হয় কিভাবে? উত্তর হলো, এটাও ফ্ল্যার্টিং, কারন এতে ফ্লার্টিং এর অন্য উপাদান গুলি অর্থাৎ সান্নিধ্যজনিত ভাললাগার, পারষ্পরিক রেসপেক্ট, প্রতিপক্ষকে তুলে ধরা, প্রশংসা করা – এইসব থাকে।
এধরনের ফ্লার্টিং সাধারনত যৌনতা বিবর্জিত হয়। আবার কদাচিৎ তাতে যৌনতা অন্তর্ভুক্ত হলেও সেটা হয় অত্যন্ত মার্জিত ভাষায়। এটা যে ফ্ল্যার্টিং, তাঁর আর একটা প্রমান হলো, এজাতীয় সম্পর্কে ফ্ল্যার্টিং-এর তিনটা উপকারিতাই যোগাযোগে থাকা কালে পুর্নমাত্রায়ই পাওয়া সম্ভব।

৩) নীবিড় ফ্ল্যার্ট :
এ জাতীয় ফ্লার্টে অন্য কথাবার্তার চেয়ে শারীরিক ব্যাপার-স্যাপার গুলা বেশি বেশি সামনে চলে আসে। অনলাইনে এটা হয় অডিও বা ভিডিও চ্যাটে বেশি বেশি কথা বলার ও ছবি আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে। অফলাইনে যা যা চলে তা হলো, নিজেকে বেশি বেশি রিভিল করা, যখন তখন খুব কাছে যাওয়া, ছুঁয়ে দেয়া – এসবের মধ্য দিয়ে। তাছাড়া মাঝে মধ্যে সুযোগ বুঝে পারষ্পরিক সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্কও এজাতীয় ফ্লার্টিং-এ অন্তর্ভুক্ত হতে দেখা যায়…
(চলবে…)

ফ্লার্ট সমগ্র – দ্বিতীয় পর্ব

ফ্লার্ট সমগ্র – তৃতীয় পর্ব

৫,১৭৫ বার দেখা হয়েছে

৪ টি মন্তব্য : “ফ্লার্ট সমগ্র – প্রথম পর্ব”

  1. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    তোমার ফ্লার্টিং সমগ্র পড়ে মনেহলো কত বিচিত্র বিষয় নিয়ে তুমি লিখো, ভাইয়া। ভাবলাম, তোমার সাথে সাথে আমাদের অন্যান্য বিজ্ঞজনেরাও কি ভাবছেন একটু জেনে আসি। অনেকের সুচিন্তিত ভাবনা পড়লাম। অসকার ওয়াইল্ডের মতামত শোন। তিনি বলেছেন, The amount of women in London who flirt with their own husbands is perfectly scandalous. It looks so bad. It is simply washing one's clean linen in public.

    জবাব দিন
  2. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    "...... is perfectly scandalous. It looks so bad." - এইটা পড়ে হাসি পেয়ে গেল!!!
    একসময় তারাও কতই না রক্ষনশীল ছিল ফ্ল্যার্টিং নিয়ে।
    আমরা এখনো আছি, কিন্তু খুব বেশি যে থাকবো না, সেটা মোটামুটি নিশ্চিত...


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  3. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    ফ্ল্যার্ট চলাকালে মস্তিষ্কের প্লেজার রিসেপ্টর খুব সক্রিয় হয়ে ওঠে। সেসময় ছোটখাটো ভাল লাগাগুলিও হয়ে ওঠে অত্যন্ত আনন্দময় -- বাহ! বেশ তো!

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।