প্রথম অংশ
এক
সারা পৃথিবীতেই রেইপ সম্পর্কিত আইনগুলো দাবী করে, একজন এডাল্টের সাথে রেইপ সংঘটনের জন্য নীচের দুইটা শর্ত পুরন করা হয়েছে কিনা:
১) পেনিট্রেশন
২) আর সেটা হয়েছে, হয় বিনা সম্মতিতে অথবা সম্মতিতে তবে সেই সম্মতিটা নেয়া হয়েছে বলপূর্বক কিংবা ভুল বুঝিয়ে (বাই ফ্রড)।
যাকে বিনা সম্মতিতে পেনিট্রেট করা হলো, আইনের চোখে সে একজন বিচারপ্রার্থি হলেও বাস্তবে সে কিন্তু একজন ভিক্টিমও!!!
দুই
যেকোনো বিচার প্রক্রিয়ায় বার্ডেন অব প্রুভ সাধারনতঃ বর্তায় অভিযোগকারীর উপরে।
তারমানে, রেইপের যিনি অভিযোগকারী তিনি ভিক্টিম হলেও তাঁকেই কিন্তু প্রমান করতে হবে যে তাঁর বিনা সম্মতিতে তাঁর উপরে পেনিট্রেশন সংঘটিত হয়েছে। অভিযুক্ত এই পর্যায়ে বসে বসে পা দোলানো ছাড়া আর কিছুই করবে না, যতক্ষণ না একজন ভিক্টিম নিজের উপরে ঘটা পেনিট্রেশনের প্রমান টু ফিঙ্গার টেস্ট করিয়ে হাজির করছেন। শুধু তাই না, সেই পেনিট্রেশন যে তাঁর বিনা সম্মতিতে ঘটেছে, সেটাও যতক্ষণ না তিনি সন্দেহাতিত ভাবে প্রমান করছেন!!!
তিন
আবার প্রিন্সিপালস অব ন্যাচারাল জাস্টিস বলে অভিযুক্তের অধিকার আছে আত্মপক্ষ সমর্থনের।
তো এই সুযোগে আসল খেলায় নামে রেপিস্ট।
দাতে দাত চেপে সন্দেহাতিত ভাবে পেনিট্রেশন ও সম্মতিহীনতা প্রমান করার পরেও আইন অভিযুক্তকেই আবার সুযোগ করে দেয় আত্মপক্ষ সমর্থনের নামে ভিক্টিমকে আরেক হাত নেবার।
এখানে অভিযুক্তের হাতে আইনই অস্ত্র তুলে দেয় নিজের ও ভিক্টিমের যাবতিয় ইতিহাস তুলে ধরে আত্মপক্ষ সমর্থনের নামে ঐ পেনিট্রেশনে যে ভিক্টিমের সম্মতি ছিল তা দেখানোর অথবা সম্মতিহীনতাটা যে সে নিজে বুঝে নাই এটা প্রমান করার!!!
চার
ধর্ষন সম্পর্কিত আইন ও ট্রায়েল প্রক্রিয়ার আমূল পরিবর্তন ছাড়া রেইপ নামক অপরাধের রাশ টেনে ধরা কখনোই সম্ভব না।
যে যে পরিবর্তন আনা জরুরী তা হলো:
১) শুধু পেনিট্রেশন নয়, যেকোনো সেক্সুয়ালি মটিভেটেড মুভকেই রেইপ হিসাবে গন্য করা।
২) কনসেন্ট থাকুক বা না থাকুক, অভিযুক্তের পক্ষে ভিক্টিমকে এক্সপ্লয়েট এবং/অথবা ম্যানিপুলেট করার মত সক্ষমতা ছিল কিনা, সেটাকে বিবেচ্য করা।
৩) এই দু’টি শর্ত পুরোন হলে নট-গিল্টির বার্ডেন অব প্রুভ অভিযুক্তের উপরে ন্যাস্ত করা।
এর অর্থ হলো:
শক্তি সামর্থে, অর্থে-বৃত্তে, বয়সে, অথবা অবস্থানে সুপিরিয়র কেউ যদি কোনো নারীর প্রতি বিনা সম্মতিতে কোনো রকম সেক্সুয়ালি মটিভেটেড (হতে পারে তা চুম্বন প্রচেষ্টা বা শুধু স্পর্শের জন্য হাত বাড়ানো) পদক্ষেপ নেয়, আর তখন যদি ঐ নারী সেটা যেকোনো ভাবে (মুখে বলে অথবা ইশারায় বা অনিচ্ছা প্রকাশের মাধ্যমে) প্রত্যাখ্যান করে, তাহলেই সেটার জন্য নারীটি ধর্ষনের এমন এক অভিযোগ আনতে পারবে যেখানে তাঁকে আর কিছুই প্রমান করতে হবে না।
বরং অভিযুক্তকেই প্রমান করতে হবে, কেন সেই আচরনগুলি রেইপ সংঘটনের জন্য যথেষ্ট ছিল না।
ভিক্টিম শুধু তফাতে বসে পা দোলাবেন এবং যুক্তি খন্ডন করবেন…
পাঁচ
এরকম কিছু যদি করা যায়, দেখা যাবে, কে কত রেইপের চেষ্টা করে!!!
দ্বিতীয় অংশ
প্রথমে কিছু ফ্যাক্ট:
১) দেশভেদে ৫০-৮০% রেপের ঘটনাই রিপোর্টেড হয় না।
২) যেগুলো রিপোর্টেড হয়, অর্থাৎ বিচারের আওতায় আসে, সেগুলির মাত্র ৫%-এর মত ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে শাস্তি প্রদানের মধ্য দিয়ে অভিযোগের চুড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়। বাকিগুলি হয় অপ্রমানিত থেকে যায়, নয়তো অভিযোগকারীর অনিহা অথবা আউট-অব-দ্যা-কোর্ট সেটেল্ড হয়ে বাদ যায়।
৩) ৯০%-এর বেশি রেপের ঘটনাগুলি ঘটায় এমন কেউ, যে শুধু ভিক্টিমের পুর্ব পরিচিতই নয় অনেকক্ষেত্রে বেশ ঘনিষ্ট, এমনকি শারীরিক সম্পর্ককের অভিজ্ঞতা সম্পন্নও। রেপ বাই স্ট্রেঞ্জার এবং রেপের সময় অস্ত্রপ্রদর্শনের হারে আশ্চর্য মিল আছে। ১০%-এর কাছাকাছি ভিক্টিম অপরিচিতের দ্বারা রেপের শিকার হয়। আর অস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভিতির মধ্য দিয়ে রেপ করা হয় ১১% কেসে। তাই রেপ নিয়ে প্রচলিত ধারনা যে রেপ মানেই বলপূর্বক সেক্স এবং ভিক্টিমের শরীরে সে সম্পর্কিত প্রমান থাকতেই হবে – এমনটা খুব কমন না।
৪) রেপ সংঘটনের শর্ত দুইটা: ক) পেনিট্রেশন, খ) সম্মতিহীনতা। দেখা গেছে, উন্নত বিশ্বে রেপ চার্জগুলোতে অভিযুক্তরা প্রায় সবক্ষেত্রেই পেনিট্রেশনের ব্যাপারটি অস্বীকার করে না। মেনে নেয়। মূলতঃ তাঁদের ডিফেন্স থাকে সম্মতি ছিল কি ছিল না, সেটা নিয়ে। এই কারনে রেপচার্জের বিচার্য্য বিষয় থেকে একচুয়াল পেনিট্রেশন ঘটেছিল কিনা সেই বিষয়টা গুরুত্ব হারিয়েছে। ভিক্টিমকে টু-ফিঙ্গার টেস্ট করাটা এখন আর তাই গুরুত্বপুর্ন কিছু না। বরং অসম্মতিতে যৌন সম্পর্ক ঘটে যে মানসিক বৈকল্যের সৃষ্টি হয়, রেপ ভিক্টিম সেটায়, মানে “রেপ ট্রমা সিনড্রোম”-এ ভুগছেন কিনা, তা নির্ধারন করে সেটাকে সম্মতিহীনতার প্রমান হিসাবে উপস্থাপনের চল অনেক ক্ষেত্রেই করা হচ্ছে।
৫) অসম্মতি নির্ধারনে আরও যে যে ফ্যাক্টরগুলি আজকাল গুরুত্ব সহকারে নেয়া হয়, তা হলো: ক) পরিচিতদের ক্ষেত্রে, অপরাধের স্থান (অর্থাৎ স্থানটি কে নির্বাচন করেছিল? ঐ স্থানে অপরাধ সংঘটন কালে কে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ছিল? ভিক্টিম নিজে থেকে এসেছিলেন নাকি তাঁকে সাথে করে আনা হয়েছিল? – এইসব বিষয়াবলি) গুরুত্বপুর্ণ। খ) শারীরিক সম্পর্কের সময় প্রোটেকশন, বিশেষ করে কনডম বা এই জাতিয় কিছু ব্যবহৃত হয়েছিল কিনা? (যৌন সম্পর্কে অসম্মতি থাকলে সেটার প্রস্তুতিতেও অসম্মতি থাকার কথা)। গ) ভিক্টিমকে শারীরিক সম্পর্কের আগে মদ-মাদক বা অন্য কোনো উত্তেজক বস্তু খাইয়ে অথবা উত্তেজক কিছু দেখিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনে অসামর্থ বা সিদ্ধান্ত গ্রহনে প্রভাবিত করা হয়েছিল কিনা?
পাঁচ নাম্বার পয়েন্টের ইন্টারপ্রিটেশন হলো,
– ভিক্টিমকে নিজের পছন্দের স্থানে ডেকে এনে যৌন সম্পর্ক করলে ভিক্টিমের জন্য অসম্মতির দাবী অধিক গ্রহনযোগ্য। অভিযুক্তের জন্য সম্মতি থাকার দাবী কম গ্রহনযোগ্য।
– যৌন সম্পর্কের সময় প্রটেকশন না থাকলে অসম্মতির দাবী অধিক গ্রহনযোগ্য। অভিযুক্তের জন্য সম্মতি থাকার দাবী কম গ্রহনযোগ্য।
– যৌন সম্পর্কের সময় ভিক্টিম ইনটক্সিকেটেড থাকলে অসম্মতির দাবী অধিক গ্রহনযোগ্য। অভিযুক্তের জন্য সম্মতি থাকার দাবী কম গ্রহনযোগ্য।
– আর এই তিনটি বা এর দু’টিও যদি একসাথে ঘটে থাকে, অভিযুক্তের জন্য “সম্মতি ছিল” এই দাবী করে ডিফেন্স নেয়ার ক্ষমতা তো আরও লোপ পাবে।
দেখা যাচ্ছে, একজন ভিক্টিমের জন্য অনেকক্ষেত্রেই অসম্মতি প্রমান করাটা কঠিন কিছু না। আবার ভিক্টিমের মেডিকাল টেস্টের নামে টু-ফিঙ্গার টেস্টে করানোর মধ্য দিয়ে ভিক্টিমকে হয়রানির মুখে ফেলাটাও খুব জরুরী কিছু না।
শুধু আমাদের বিচার পদ্ধতিতে রেপচার্জ বিচারের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারগুলো অন্তর্ভুক্ত করে নিলেই হলো……
যতটুকু জানি এই টু ফিঙ্গার টেস্টটি পৃথিবী থেকেই উঠে যাবার পথে। তারপর ও আমাদের দেশে কেন এটা বিবেচ্য বোধগম্য নয়। এটি দিয়ে নাকি শুধু দেখা হয়, ভিক্টিম সেক্সে অভ্যস্ত কিনা। সেক্সে অভ্যস্ত হলে এই টেস্ট নাকি তেমন কোন ফলাফলই দেয় না। এই টেস্ট বাতিল করা এখন সময়ের দাবী। সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য।
পোষ্টের বক্তব্যের সাথে সহমত।
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
এটা এখন আসলেই অপ্রয়োজনীয়...
ব্যাপারটা যত তাড়াতাড়ি বুঝবো, ততই মঙ্গল!!!
পড়ার ও পার্টিসিপেশনের জন্য অনেক ধন্যবাদ...
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
ভাইয়া, যে তিনটি পরিবর্তনের কথা বলেছেন, সেগুলো সম্ভবতঃ আমেরিকায় প্র্যাকটিস হচ্ছে। প্রতিবছর ইউনিভার্সিটি থেকে যৌন হয়রানি বিষয়ক একটা বাধ্যতামূলক অনলাইন কোর্স করতে হয় ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারি সকলকে। সেখানে এমনটি দেখেছি বলে মনে হলো।
আর, শেষাংশে ব্র্যাকেটের মধ্যের কথাটা না-থাকলে মনে হয় ভালো হতো।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
ব্রাকেটাবদ্ধ কথাগুলো ডিলিট করে দিলাম।
ওটা লিখেছিলাম এক ধরনের মানুষকে টিটকারি করে।
এরা হলো সেসব কন্সপিরেসি থিওরিস্ট যারা রেপ সম্পর্কিত আইনে কোনো সংশোধন আনার কথা শুনলেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে উদ্বাহু চিৎকার শুরু করে দেয়, "ইহাতে আইনের অপব্যবহার হবে" অথবা "ভুয়া রেপ-চার্জ এর ঘটনা বাড়বে" ইত্যাদি কথা বলে।
যাহোক, ফেসবুকে দরকার হলেও এখানে এদের টিটকারি দেয়ার কিছু নাই।
তাই এখানে এটা মুছে দেয়াটাই ঠিক।
🙂 🙂 🙂 🙂
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
আইনের যুগোপযোগী সংশোধন এবং দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা ডিটারেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারে।
মাহমুদ এর মন্তব্যের সাথে আমিও একমত, শেষাংশে ব্র্যাকেটের মধ্যের কথাটা না-থাকলে মনে হয় ভালো হতো।
জ্বী স্যার, দ্রুত বিচার ছাড়াও ভিক্টিম ব্লেমিং ও ভিক্টিম শেইমিং এর সুযোগ না থাকাটাও খুব জরুরী।
আমার ধারনা, রেইনট্রি হোটেলের ঘটনা দ্রুত বিচারের আওতায় আসার কারনেই পরবর্তি বেশ কিছু কেস রিপোর্টেড হয়েছে।
এর বাইরে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে যে সাপোর্ট সিস্টেম চালু হয়েছে, সেটার ব্যবহারে এসব কে আরও নিয়ন্ত্রন করতে পারবে।
"জয় বা Joy" নামের একটা এপস এখন পাওয়া যাচ্ছে। ১০৯ নাম্বারটা তো আগের থেকেই আছে।
আশা করছি ভবিষ্যতে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে...
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.