এক
একজন নারী বা একজন পুরুষ কেন পরকীয়ায় জড়ান, সেটা জানা গেলে এর কোনো প্রতিকার আছে, নাকি নাই তা বোঝা যেতে পারে।
এই সিরিজটা শুরু করলাম নারী পুরুষ উভয়েরই পরকীয়ার স্বরূপ আবিষ্কার করার জন্য।
অনেক পুরাতন ও এখনো প্রচলিত কিছু হাইপোথিসিস আছে নারী বা পুরুষের পরকীয়ার কারন নিয়ে।
এ সম্পর্কিত যে তত্ত্বটা বিবর্তনবাদ কেন্দ্রিক, সেটায় যাবো না কারন এখন আর সেটা প্রমান বা অপ্রমান – কোনোটাই সম্ভব না।
তবে পুরাতন কিছু ধারণা এখনো দাঁড়িয়ে আছে আর তা হলো এই যে নারীর পরকীয়ায় জড়ানো আর পুরুষের পরকীয়ায় জড়ানোর কিছু সাধারন পার্থক্য আছে। যেমন:
১) কিছু ব্যাতিক্রম থাকলেও বেশিরভাগ পুরুষই খুব একটা ইমোশনালি ইনভল্বড না হয়েও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়তে পাড়েন। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে ইমোশনাল ইনভল্বমেন্ট ছাড়া পরকীয়ায় জড়ানোর ঘটনা ঘটে অনেক কম।
২) খুব অল্প সংশ্রাবের ফলশ্রুতিতেও পুরুষের জন্য পরকীয়ায় ঢুকে পড়া খুব কঠিন কিছু না। কিন্তু নারীর জন্য যথেষ্ট সংশ্রাব ছাড়া একটি সম্পর্ক সাধারনতঃ পরকীয়া পর্যন্ত গড়ায় না।
৩) সাধারনতঃ কোনো একটি মাত্র ফ্যাক্টরের কারনে কেউ পরকীয়ায় জড়ায় না। প্রায় প্রতিটা পরকীয়ার পিছনেই দেখা যায় বিভিন্ন কারন কাজ করে যার কোনো এক বা দুটি না থাকলে হয়তো সেই সম্পর্কটা পরকীয়া পর্যন্ত গড়াতো না।
একসময়ে আরও মনে করা হতো যে নারীরা পরকীয়া করে মূলতঃ ইমোশনাল কারনে আর পুরুষেরা করে দৈহিক কারনে। কিন্তু সাম্প্রতিক স্টাডি বলছে নারী পুরুষ উভয়েই ইমোশনাল অথবা দৈহিক উভয় কারনের যেকোনো একটির জন্য পরকীয়ায় লিপ্ত হতে পারেন।
একসময় এটাও মনেকরা হতো যে ইমোশনাল বা দৈহিক, কোনো একটায় স্পাউস বা পার্টনারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সাড়া না পাওয়ার কারনে সেটা পুরনের জন্য মানুষ পরকীয়ায় জড়ান। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সবদিক দিয়ে পরিপুর্ন জীবন যাপন করার পরেও পরকীয়ার আক্রান্তগনের বিরাট এক অংশ তাতে লিপ্ত হচ্ছেন।
যারা পরকীয়ায় জড়ান, তাঁদের মাত্র দশ ভাগের এক ভাগ কোনো না কোনো অপূর্নতা থেকে মুক্তির জন্য পরকীয়ায় লিপ্ত হন।
বাকিরা এটায় জড়ান তেমন কোনো অপুর্নতা না থাকার পরেও বিবিধ কারনে……
দুই
এই অধ্যায়ের অনুসন্ধান টপিক: “পুরুষ কেন পরকীয়ায় জড়ায়?”
প্রচলিত ধারণা হলো:
১) পুরুষ মাত্রই এমন। ডালে ডালে মধু খেয়ে বেড়ানোর প্রবণতা সম্পন্ন, তাই।
২) অনেক পুরুষই পরকীয়ায় আসক্ত, যাকে বলে লুইচ্চা প্রকৃতির – তাই।
৩) রেগুলার পার্টনারের কোনো অপারগতা বা অক্ষমতার শূন্যতা পুরনে এটা করে।
৪) নিজের বিশেষ কোনো প্রেফারেন্স রেগুলার পার্টনারকে দিয়ে পুরন হয় না বলে সেটার জন্য অন্য বিকল্প খুজে নেয়। – এরকম আরও অনেক স্টেরিওটাইপিং করা হয়ে থাকে পুরুষের অবিশ্বস্ততার কারন হিসাবে।
স্টাডি বলছে, এগুলাও অন্তর্ভুক্ত আছে পুরুষের পরকীয়তার কারনগুলোর মধ্যে কিন্তু খুবই তাজ্জব ব্যাপার হলো এই যে পরকীয়ার ঘটনাগুলোর বেশ কম অংশেই এগুলার জন্য সেটা হয়ে থাকে। এবং তাঁর হার নাকি ২০% এরও নীচে।
তাইলে বাকি ৮০%-এর পিছনে কারন কি?
সেই কারনগুলো নিয়ে পরে আলোচনা করছি। তার আগে একটা একটা করে বলে যাই, এই প্রচলিত ধারনাগুলো কেন মূল কারন না।
১) সম্মত পার্টনার ও নিরাপদ পরিবেশ পেলেই পুরুষ মাত্রই ফ্ল্যার্টিং-এ আগ্রহী হয় – এটা প্রায় সময়েই সত্য। কিন্তু তাই বলে সবাই যে এটাকে নেক্সট স্টেপে নিতে আগ্রহী হবে, এমন না। সবচেয়ে বড় কথা, ফ্ল্যার্টিং-এ পুরুষের আগ্রহ থাকলেও সেটা এক্টিভলি খুজে বেড়ানো পুরুষের হার কিন্তু আশংকাজনক কিছু না। বরং আগ্রহী নারীর কাছে আহ্ববান পেতে অপেক্ষমান পুরুষই আসলে মেজরিটি। প্রথম কারনটা এই জন্য প্রধান কারন না যে এটা একটা শর্ত বা প্যাসিভ রিজন যেটার উপস্থিতি পরকীয়া বান্ধব কিন্তু শুধু এটার কারনেই পরকিয়া ঘটে না। তা ঘটে অন্য আরও সরাসরি জড়িত কারনে।
২) পরকিয়া আসক্তদের ব্যাপারগুলা কিছুদিনের মধ্যেই জানাজানি হয়ে যায়। এদের ব্যাপারে নারীদের মধ্যে সাধারনভাবে আগ্রহের বদলে একটা অনাগ্রহই বেশী কাজ করে। তবে হ্যাঁ, অতি ক্ষুদ্র সংখ্যক বিশেষ এক প্রকৃতির নারীরা আবার এদেরকেই চায়। তাই এদের জন্য সাপ্লাইয়ের অভাব ঘটে না কিন্তু সংখ্যায় নগন্য হওয়ায় এঁরা কখনই পরকিয়ার মেইন স্ট্রিম নয়।
৩) ও ৪) এর কারনগুলোও মেইনস্ট্রিম নয় দুইটা কারনে। ক) এরা সংখ্যায় খুব বেশী না। খ) এদের পারপাজটা পেইড সার্ভিস নিয়েও পুরন করা সম্ভব। এরা তাই পরকিয়া বলতে আমরা সররাচর যেটা বুঝি সেটায় জড়ায়, কিন্তু তা কমই।
মূল কারনগুলো নিয়ে বলছি পরবর্তি অধ্যায়ে।
তিন
বলছিলাম বেশীরভাগ, মানে ঐ বাকি আশিভাগ পরকীয়া তাহলে কোন পুরুষেরা করে? কেন করে?
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে এটা করে আপনার আমার মতো হ্যাপিলি ম্যারেড, আটপৌড়ে জীবনযাপন করা লাভিং হাজিবেন্ড, সৎ ও চরিত্রবান-এর টুপি পরে থাকা, পরিবারে সমাজে দায়িত্ববান ও সফল হিসাবে ঘুরে ফিরে বেড়ানো স্বামীরাই…
তবে হ্যাঁ, এদের মধ্যেও প্রকারভেদ আছে।
এদের একটি গ্রুপ হলো প্যাসিভ।
আগ বাড়িয়ে পরকীয়ার ব্যাপারে তাঁরা আগ্রহ জানায় না। খুব ফ্রেন্ডলি, সদ্ভাব ও সৌহার্দ্যপুর্ণ, সেন্সিটিভ এবং ভদ্রচিত একটা দূরত্ব বজায় রাখে। তবে প্রতিপক্ষের যেকোনো পজেটিভ ইন্ডিকেশন পেলে এঁরা তাতে সাড়া দিতে খুব একটা কার্পন্য করে না।
এদের পরকীয়া হালকা আবেগময়, কোনো প্রমিজবিহীন, যেকোনো সময়ে বিযুক্তিতে সক্ষম।
এসব সম্পর্ক বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই খুব একটা দীর্ঘ্যস্থায়ী হয় না। ৩ থেকে ৭ সপ্তাহ, অথবা ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত।
কথা হলো, কেন করে এঁরা এসব? আর কারাই বা অংশ নেয় এরকম ঠুনকো পরকীয়ায়?
যারা এটা করে, উপভোগ্য কিছু সময় কাটানো বা ফর এ চেঞ্জ ছাড়া এদের তেমন কোনো উদ্দেশ্য থাকে না। তাই সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবার পরে তা এদের খুব একটা সমস্যাও করে না। যারা এদের সাথে সম্পর্কে জড়ায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা সেটা করে দুইটা সিরিয়াস সম্পর্কের মধ্যবর্তি লাল পিরিয়ডে অথবা একটি সম্পর্কের বিরতিতে।
তাঁদের জন্য তাই এই মধ্যবর্তি সময়টাও আগের সম্পর্ক ভোলার ও পরেরটির সাথে খাপ খাওয়ানোর
একটা উপলক্ষ হিসাবে কাজ করে।
অন্য গ্রুপটি হলো একটিভ ।
প্রথমেই এঁরা খুব রিসার্চ করে এমন একজনকে টার্গেট করে, যার একটা দীর্ঘ্যমেয়াদের সম্পর্কে ঢোকার প্রয়োজন ও সম্ভবনা আছে।
এরপর নানা পরিস্থিতি তৈরী করে এঁরা টার্গেট পর্যন্ত পৌছায় ও তাঁকে নিজের প্রতি দুর্বল করে তোলে। এরপরেই কোনো না কোনো ভাবে তাঁকে নিজের উপরে ডিপেন্ডেন্টও করে তোলে।
এটা হতে পারে কোনো না কোনো প্রমিজ (যেমন একসময় বিয়ে করার) করে অথবা সন্তানের বা বাবা-মার দায়িত্ব নিতে চেয়ে ইমোশনালি ডিপেন্ডেন্ট করা। অথবা এটা হতে পারে কোনো একটা খরচ নিয়মিত ভাবে বহন (যেমন বাড়িভাড়া বা ক্রেডিট কার্ড বিল পরিশোধ ইত্যাদি) করার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে ডিপেন্ডেন্ট করা।
এখানেও একই কথা: কারা এটা করে? আর যারা সাড়া দেয়, তারাই বা কেন তা দেয়?
যারা এটা করে, তাঁদের নিয়ে একটা বিস্তারিত আলাপ করতে হবে।
সেটা পরের পর্বের জন্য রেখে দিচ্ছি।
যারা সাড়া দেয়, তাঁদের নিয়েই বরং এখন বলি।
এঁরা আসলে একধরনের মোহাক্রান্ত হয়ে সম্পর্কে জড়ায় প্রমিজগুলোকে সত্য ধরে নিয়ে।
এঁরা ধরে নেয়, প্রেমিক আসলেই কোনো একটা পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে তাঁকে স্থায়ীভাবে আপন করে নেবার জন্য (ততদিনে তাঁর আগের পদক্ষেপগুলার পরিকল্পনা পার্ট সে বুঝতে পারে। এই বোঝাটা তাঁকে প্রেমিকের সক্ষমতা সম্পর্কে আরও দুর্বল করে তোলে)।
যার অন্যান্য আচরনে তাঁরা এত দায়িত্ববোধ ও বন্ধনে জড়ানোর ইঙ্গিত পায়, তাঁকে সন্দেহ করতে বা অবিশ্বাস করতে মন সায় দেয় না। যতই দিন যায়, এঁরা ততই আষ্টেপিষ্টে বাঁধা পড়ে আবেগের বন্ধনে কিন্তু এটাও একসময় বোঝে যে প্রেমিক তাঁর বিবাহিত সম্পর্কটা থেকে কখনোই বেরুবে না।
সম্পর্কে একটা নির্ভরতাও এসে যায় বলে এটা থেকে সহজে বের হওয়া হয়ে ওঠে না। আবার মোহভঙ্গ ঘটে গেলে এতে থাকাও হয়ে পড়ে কষ্টকর।
যারা এর কোনো একটা সয়ে নিতে পারে, তাঁরা এটা চালিয়ে যেতে পারে অনির্দিষ্ট কালের জন্য।
কিন্তু তা না পারলে বা ধরা পড়ে গেলে সম্পর্কটা চুকেবুকে যায়।
অবশ্য তখন তা দুজনকে না হোক অন্ততঃ একজনকে পোড়ায় দীর্ঘ্যদীন ধরে।
পুরুষের একটিভ হোক বা প্যাসিভ, দু ধরনের পরকীয়তায় একটা ব্যাপার কিন্তু কমন – নিজেদের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক থেকে বেরুনোর কোনো ইচ্ছা বা চেষ্টাই তাঁদের থাকে না, সেটা যে কোনো কারনেই হোক না কেন। তবে হ্যাঁ, তাঁরা একসাথে থাকার সময় বিয়ের স্বপ্ন দেখানো সহ নানা প্রমিজ করে।
এগুলো করে সম্পর্কটা স্পাইসড আপ করার জন্য। অর্থাৎ আরও উপভোগ্য করতে।
কিন্তু দেখা যায়, স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে বিয়ে করার কোনো চাপ এলেই কোনো না কোনো অজুহাতে তাঁরা তা সামলে নিচ্ছে যদি তাতে পরকীয়াটা ক্ষতিগ্রস্তও হয়, তবুও।
আরেকটা ব্যাপারে এই দুই ধরনের পরকীয়ায় দারুন মিল রয়েছে।
জলদিতে হোক বা দেরীতে, একটা সময় নিজ নিজ স্ত্রীদের কাছে এই পরকীয়ার খবর পৌছে যায়ই।
স্ত্রীরা অনেকক্ষেত্রেই ব্যাপারটা নিয়ে বড়সড়ো তোলপাড় করে না, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাঁরা এটা জানেন বা বোঝেন না।
স্ত্রী এটা জেনে গেছেন, এটা বুঝতে পারার পর এজাতীয় বেশীরভাগ সম্পর্কই ভেঙ্গে পড়ে।
এটা হবার আরেকটা কারন হলো এই যে, এই পুরুষেরা অনেকেই কিন্তু সম্পর্কের হানিমুন পর্বটা কাটার পর থেকে একধরনের অপরাধবোধেও ভোগেন। কিন্তু নিজ ইনিশিয়েটিভে এথেকে বেরুনোর উপলক্ষ বের করতে পারেন না বা করেন না।
ধরা পড়াটা তাই তাঁদের জন্য সেই অপরাধবোধ থেকে বাঁচার একটা সুযোগ করে দেয়………
প্রসঙ্গ : পরকীয়া – দ্বিতীয় পর্ব
প্রসঙ্গ : পরকীয়া – তৃতীয় পর্ব
প্রসঙ্গ : পরকীয়া – চতুর্থ পর্ব
প্রসঙ্গ : পরকীয়া – পঞ্চম পর্ব
প্রসঙ্গ : পরকীয়া – ষষ্ঠ (শেষ) পর্ব