যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – প্রথম পর্ব

এক
নানা বিষয় নিয়েই তো লেখালেখি করি, ভাবছি এই বিষয়টাই বা বাদ দেবো কেন?
অনেকেরই ধারণা, পশ্চিমা দেশে বা উন্নত বিশ্বে যৌনতার এত ছড়াছড়ি, ফ্রি-সেক্স, সেক্স এডুকেশন – সে সব দেশে লোকজন না জানি কতই না উত্তাল যৌনানন্দে বসবাস করে!!!
বিরাট ভুল ধারণা…
খোদ আমেরিকায় সবচেয়ে সেক্সুয়ালি একটিভ এইজ, মানে ২০-৬০ এ যারা, তাঁদের ৬০% এর জন্য সপ্তাহে ১ বারের বেশী সেক্স করা সম্ভব হয় না।
৩০-এ পৌছানো পর্যন্ত তাঁরা বছরে গড়ে ১১১ বার, মানে সপ্তাহে ২ বারের মত সেক্স করার সুযোগ পায়।
এরপর প্রতি দশকে তা ২৫% এর মত করে কমে আসে।
অর্থাৎ ৪০-এ পৌছে এটা গড়ে বছরে ৮৩ বার, মানে প্রতি ৯ দিনে ২ বার-এ নেমে আছে।
৫০-এ পৌছুতে পৌছুতে এটা গড়ে বছরে ৬৩, মানে ৬ দিনে একবারে পৌছে।
এরপর দিনে দিনে এটা সপ্তাহে একবার বা তারও নীচে নেমে যায়…

এদেশে যারা সপ্তাহে তিনবার বা তাঁর বেশী সেক্স করার সুযোগ পান, জানবেন আপনি গড় পশ্চিমাদের চেয়ে যৌনাভিজ্ঞতার দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে আছেন।
তবে হ্যাঁ, কোয়ান্টিটিতে এগিয়ে থাকা যে যৌনতা আমরা এদেশে উপভোগ করি, সেটা অজ্ঞতা, কুসংস্কার, ট্যাবু, কমুনিকেশনহীনতা, ইত্যাদির কারনে ওদের চেয়ে কোয়ালিটিতে কতটা উন্নত – তা একখানা মিলিয়ন ডলার প্রশ্নই বটে!!!

মনে রাখতে হবে যৌন অভিজ্ঞতার সর্বোচ্চ উপভোগের জন্য কোয়ান্টিটির গুরুত্ব থাকলেও কোয়ালিটিই হলো মূল পয়েন্ট অব ফোকাস। আর সেটা অর্জন সম্পুর্ন ভাবে আপনার নিয়ন্ত্রানাধীন!!!

দুই
এরপরেই যে ভুল ধারনাটা নিয়ে আলাপ করবো, সেটার নাম “সাইজ ডাজ ম্যাটার”।
এটা এতটাই বাজে ধরনের একটা ভুল ধারণা, যাতে আক্রান্ত হয়ে এক তৃতীয়াংশ পুরুষ অকারনে এমন এংজাইটিতে ভোগেন যা থেকে তাঁদের তো বটেই, তাঁদের পার্টনারেরও সহজ কোনো মুক্তি নাই।
মুক্তি থাকে না, কারন ব্যাপারটা তাঁদের মাথায় এত ছোট বেলা থেকে এত ডীপরুটেড হয়ে যায় যে পরবর্তিতে এ নিয়ে কে কি বলছে, সেসব গ্রহন করার সামর্থ্যই তাঁরা হারিয়ে ফেলেন। আর এর পরিনতিতে ভোগে তাঁদের সঙ্গিনীরাও।
অথচ, চমকপ্রদ তথ্য হলো, যারা এই পেনাইল এংজাইটিতে ভোগে, তাঁদের বিরাট একটা অংশই কিন্তু গড় বা গড় থেকে পর্যাপ্ত পরিমানে বেশী দৈর্ঘ্য সম্পন্ন!!!
এতে করে বোঝা যায়, পেনাইল এংজাইটির জন্য প্রকৃত দৈর্ঘ্য না, বরং মনের মধ্যে থাকা ভুল কোনো চিত্র বা তথ্যই দায়ি।
এটা ঠিক, যে নারীরা তাঁদের চাহিদা জানানোর সময় এভারেজ থেকে কিছুটা বড় মাপকে তাঁদের প্রেফার্ড দৈর্ঘ্য হিসাবে জানান, কিন্তু সেটাই শেষ কথা না।
আমেরিকানদের এভারেজ মাপ ৫.৬”। কিন্তু সেখানে পরিচালিত সমীক্ষা বলছে, নারীদের গড় প্রেফারেন্স ৬.৩”। কিন্তু বাস্তবে এর থেকে অনেক কম দৈর্ঘ্য সম্পন্ন পুরুষদের নিয়েও প্রচুর নারীরাও যেমন সুখি যৌন জীবন কাটান, পুরুষরাও তাই করেন।
বাস্তবতা হলো, উত্থিত অবস্থায় তিন ইঞ্চির উর্ধে থাকা যেকোনো পুরুষাঙ্গই ভ্যাজাইনার অভ্যন্তরের প্রতিটা বিন্দু স্পর্শ করার জন্য সামর্থ্যবান। তাই কোনো অকারণ এংজাইটি না থাকলে, প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রেই যেকোনো মাপের পুরুষাঙ্গই সফল ইন্টারকোর্সে সক্ষম, যতক্ষণ উভয়েই তাতে অংশ নিচ্ছেন পুর্ন সম্মতিতে, ভালবেসে, এবং সাফল্যে ও উপভোগের জন্য।

পুনশ্চ:
একজন নারী হতে পারেন ক্লিটোরাল বা ভ্যাজাইনাল বা উভয় অর্গাজমে আকৃষ্ট। যারা শুধুই ভাজাইনাল অর্গাজমে আকৃষ্ট, শুধুমাত্র তাঁদের কারো কারো জন্য এভারেজ বা তা থেকে সামান্য বড় পুরুষাঙ্গ অর্গাজম অর্জনে একটা গুরুত্বপুর্ন ব্যাপার হতে পারে। তবে সেটাও সাধারনভাবে উত্থিতাবস্থায় ৫”-র চেয়ে বেশী হবার তেমন কোনো দরকার পড়ে না।
এরকম পরিস্থিতি কিন্তু সংখ্যায় নগন্য, যেখানে নারীসঙ্গিটি কেবলই ভ্যাজাইনাল অর্গাজমিক এবং তাঁর পুরুষ সঙ্গি পর্যাপ্ত দৈর্ঘ্য সম্পন্ন নন। আর তা যদি হয়ও, সেটা উভয়েই আলাপ আলোচনা করে অনুশীলনের মাধ্যমে সংশোধন করে নিতে পারেন। এই বিরল ঘটনাবলির জন্য এক তৃতীয়াংশ পুরুষের উৎকণ্ঠায় ভুগে সারাটা জীবনের জন্য দুর্বিষহ যৌনজীবন যাপন করার কোনো মানে হয় না।
কোনোই মানে হয় না!!!

তিন
যৌনতার যে অধ্যায়টা সম্ভবতঃ সবচেয়ে দুর্বোধ্য, তা হলো “ফিমেল অর্গাজম”।
আর যৌনতা নিয়ে পরবর্তি যে ভুল ধারনাটা নিয়ে আলাপ করতে চাচ্ছি, তা এই ফিমেল অর্গাজম-কে ঘিরেই।
সমিক্ষা বলছে, স্বাভাবিক স্থায়িত্বের বিভিন্ন মানদন্ড ধরে নিয়ে যেখানে প্রিম্যাচিওর ইজাকুলেশনকে কোনোক্রমেই ৩০%-এর উপরে গন্য করার সুযোগ নাই, সেখানে আমেরিকার ৭০% পুরুষই নাকি যৌনতার ক্ষেত্রে পারফর্মেন্স এংজাইটি নামক একটি সাইকোসোমাটিক সমস্যায় ভুগে থাকেন।
কথা হলো, সংশোধন যোগ্য প্রিম্যাচিওর ইজাকুলেশনে আক্রান্তগন সেরে ওঠার আগ পর্যন্ত এটায় ভুগলে না হয় একটা কোনো অর্থ তাঁর থাকতো, কিন্তু আরও প্রায় দেড়গুণ মানে ৪০% স্বাভাবিক পারফর্মাররাও এটায় ভুগছেন কেন?
এটার পিছনে প্রধান কারনই হলো ফিমেল অর্গাজমের দুর্বোধ্যতা।
আর সেটার জন্য শুধু পুরুষরাই না, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীরাও দায়ি: অজ্ঞতা, অসচেতনতা, ট্যাবু, সংশয়, ইত্যাদি কারনের জন্য।
ফিমেল অর্গাজম যেহেতু দৃশ্যমান কোনো ব্যাপার নয়, এবং সেটার অনুভব বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই হয় একক ভাবে, পার্টনারের অগোচরে – তাই এটা নিয়ে দুজনেরই সংশয় থাকার যুক্তি সঙ্গত কারনও আছে।
আরও বড় একটা সমস্যার ক্ষেত্র হলো লিঙ্গভেদে অর্গাজমিক এক্সপেরিয়েন্সের পার্থক্যগুলি।
ধারাবাহিক অর্গাজমহিনতার পরেও অনেক নারীই তাঁদের যৌনজীবনকে স্বাভাবিক জ্ঞান করেন, যেটা পুরুষদের ক্ষেত্রে অসম্ভব। আবার একবার ইজাকুলেশনের পরে, বেশ অনেকটা সময় পুরুষ আর সক্ষম থাকেন না। সেই অর্থে ইজাকুলেশন পুরুষের জন্য একটি সেশনের সমাপ্তি সূচক। কিন্তু একটি অর্গাজম অর্জনের পরেও নারীর প্রায় একই রকম সামর্থ্য থাকে ইন্টারকোর্স চালিয়ে যাবার জন্য এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁরা আবারো এতে পুর্নোদ্দোমে অংশগ্রহন করতে পারেন।
এসব ব্যাপারই নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সেশনটা আসলেই কতটা সাফল্যময় হয়েছে – তা নিয়ে সংশয় জাগাতে পারে।
আর এইসব সংশয়ের ফলাফলই হলো – পুরুষের জন্য “পারফর্মেন্স এংজাইটি”।
অদ্ভুত তথ্য হলো, এখনো এদেশে তো বটেই সারাবিশ্বেই বিপুল সংখ্যক নারী যে অর্গাজম বঞ্চিত জীবন যাপন করেন, এর পিছনে মূলত যে কারনটা দায়ি, তা হলো অজ্ঞতা।
কিছুদিন আগে দশ বছরেরও বেশী সময় ধরে বিভিন্ন পুরুষের সাথে যৌনাভিজ্ঞতা থাকা এক নারীর কাছে “হাউ ইম্পর্টেন্ট ইজ অর্গাজম ফর এন উওম্যান?” – এই প্রশ্ন পেয়ে আমি আকাশ থেকে পড়েছিলাম।
পরে এ নিয়ে অনুসন্ধান করে জানলাম, উনি একা না, জগতে অসংখ্য নারীই আছেন যারা সারা জীবন ধরে অসংখ্যবার যৌনতার অভিজ্ঞতা নিলেও অর্গাজমের স্বাদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকেন বা কদাচিতই সেই স্বাদ পান।
কেন এটা হয়?
আমরা বেশীরভাগ পুরুষেরা ভাবি, একচুয়াল ইন্টারকোর্সের শুরুটা যেহেতু আমাদেরকে দিয়েই হয় (একটা কমপ্লিট ইরেকশন অর্জনের পর) তাই এটা সফল ভাবে শেষ করার (মানে উভয়েরই অর্গাজম অর্জন করার) সব দায় দায়িত্বও আমাদেরই।
এখানে ভুল ধারণা হলো, নারীর অর্গাজম অর্জনকেও আমরা পুরুষেরা আমাদের কাজ হিসাবে কাঁধে তুলে নেই।
প্রকৃত সত্য হলো, নারী অর্গাজম অর্জন করতে চান কিনা, তা অর্জন করবেন কিনা – এসব সিদ্ধান্ত একান্তই তাঁর নিজেস্ব। পুরুষ কেবল আগ্রহ জানিয়ে তাঁকে সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহ দিতে পারে, কিন্তু অর্জন করাটা সম্পুর্ন ভাবে তাঁর নিজের ইচ্ছাধীন। তাই সব কৃতিত্বও তাঁরই।
যেকোনো কারনেই হোক, নারী যদি সেটা পাওয়া থেকে বিরত থাকেন, ঐ অনিচ্ছার দায় পুরুষের হতে পারে কিন্তু পারফর্মেন্সহীনতার কোনো দায় আসলে পুরুষের না।

পুনশ্চ:
ইন্টারেস্টিং তথ্য হলো, কাংখিত পুরুষের সাথে কোনো ইন্টারকোর্স ছাড়াও কেবল অজনন অঙ্গের স্পর্শ বিনিময়ের মধ্য দিয়েও (যেমন: শুধু হাত ধরে থেকে) নারীর পক্ষে অর্গাজম অর্জন (হ্যাভিং ভ্যাজাইনাল কন্ট্রাকশান) করাটা বিরল কিছু না। অথচ সারারাত ধরেও অপছন্দনীয় ইন্টার কোর্স, ওরাল সেক্স ইত্যাদি করেও একবারও অর্গাজম না হওয়াটা যথেষ্ট কমন একটা ঘটনা।

যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – দ্বিতীয় পর্ব
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – তৃতীয় পর্ব
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – চতুর্থ পর্ব
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – পঞ্চম পর্ব
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – ষষ্ঠ পর্ব
যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – সপ্তম (শেষ) পর্ব

৭,০২৭ বার দেখা হয়েছে

১টি মন্তব্য “যৌনতা সম্পর্কিত নানা ভুল ধারনা – প্রথম পর্ব”

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।