প্রথম কিস্তি
না-গল্প পাঁচ(ক) – তোড়ার কথা: ফ্ল্যাশব্যাক
দ্বিতীয় কিস্তি
না-গল্প পাঁচ(খ) – তোড়ার কথা: শাওন-রিটা অধ্যায়
তৃতীয় কিস্তি
নিজেকে আসলেই দারুন স্মার্ট হিসাবে প্রমান করেছে রিটা।
এক সন্ধ্যার পরিচয়কে পুঁজি করেই শুধু ইন্টার্নশিপই না, রাশেদের আন্ডারে বিজনেস ডেভেলাপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট-এ কাজ করার সুযোগও পেয়ে গেছে সে।
সবার সামনে রাশেদকে স্যার বলে এবং পূর্ণ অফিস ডেকোরাম মেনে চলে কিন্তু একা থাকলে রাশেদ ভাই-কে কফি বানিয়ে খাওয়াতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।
বেশ কয়েক দিন ধরে রাশেদ লক্ষ্য করছে, কফির কাপ দেয়া নেয়ার সময় রিটার হাত ছুঁয়ে যাওয়াটা আগের চেয়ে যেন বাড়ছে। এটা কি ইচ্ছাকৃত, নাকি মনের ভুল?
স্বামী বিদেশে, যাকে বলে প্রসিতভর্তিকা। মন উড়ু উড়ু হতেই পারে। শরীরের চাহিদা বলে একটা জিনিষ আছে না? রাশেদ ভাবে, “একটু বাজিয়ে দেখবো নাকি?” সেইজন্য একটা সুবর্ণ সুযোগও রেডি অবস্থায় আছে হাতে এইমুহুর্তে।
ইন্টারকমে রিটাকে ডেকে পাঠায় রাশেদ।
রিটা আসার আগেই নিজের চেয়ার ছেড়ে কাউচে গিয়ে বসে। সাধারনতঃ বিশেষ ধরনের সম্পর্ক যেসব ক্লায়েন্টদের সাথে, তাঁদের নিয়েই রাশেদ এখানে বসে। রিটার সাথে আগে কখনো এখানে বসেনি। প্রথম বসায় রাশেদ রিটার পরীক্ষা নিতে চাচ্ছে যে, সুযোগ পেলে কতটা কাছে আসতে চায় মেয়েটি!
“জ্বী, রাশেদ ভাই বলেন” বলতে বলতে ওকে ডিঙ্গিয়ে নব্বুই ডিগ্রী কোনে থাকা থ্রী-সিটারের সবচেয়ে কাছের যে কোনাটা, সেখানে গিয়ে বসে রিটা। আর তা করতে গিয়ে, ওর নাকের তিন ইঞ্চি দুরত্ব দিয়ে বেরিয়ে যায় রিটার নিতম্ব। শুধু পারফিউম না, রাশেদের মনে হলো, রিটার দেহের ঘ্রানও যেন সে পেল তখন। আর ওটা যেন রিটা ইচ্ছে করেই দিল রাশেদকে।
– তোমাদের আটজন ইন্টার্নের মধ্যে দুজনকে এডহক এপয়েন্টমেন্ট দিয়ে রিটেইন করার স্যাংশন এসে গেছে, জানো নিশ্চই।
– জ্বী রাশেদ ভাই শুনেছি।
– এর মধ্যে আমাকে আবার দিন কয়েকের জন্য নেপাল যেতে হচ্ছে। ঐযে, ওখানে স্টাডিটা হচ্ছে বলেছিলাম, বিজনেস অপারেশন চালুর ব্যাপারে সেটা মনিটারিং-এর জন্য। আমি ম্যানেজমেন্টকে বলেছিলাম দুই-তিনজন ইন্টার্ন নিয়ে যেতে চাচ্ছি যাঁদের দিয়ে আমিও একটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ট্যাডি বা ভেরিফিকেশন করিয়ে দেখতে পারি। ম্যানেজমেন্ট সিরিয়াসলি ভাবছে সেটা নিয়ে। ধরে নাও, প্রায় রাজি হয়েই গেছে। আমি ভাবছিলাম, যাদের নেপাল নিয়ে যাবো, তাঁদের মধ্যে থেকেই দুজনকে এই ডিপার্টমেন্টে রিটেইন করবো কিনা? তুমি কি দিন কয়েকের জন্য নেপালে যেতে পারবে? এখনই বলতে হবে না, বাসায় কথা বলো, শাওনকে জানাও। আমাকে দুদিনের মধ্যে জানালেই হবে।
– কি যে বলেন না রাশেদ ভাই, আপনার সাথে নেপাল যাবো, এটা আবার কাউকে জিজ্ঞাসা করা লাগবে নাকি। দুদিন লাগবে না, আমি এখনই আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিচ্ছি। আমি যেতে রাজী। পরে ওদের বুঝিয়ে বলবো। ভাইয়া, আমার কোন সমস্যা নাই।
– তাহলে তো ভাল। কাল তোমার পাসপোর্ট নিয়ে এসো। ভিসা তো গিয়েই নেয়া যাবে। টিকিট কনফার্ম করে ফেলি। অফিস অর্ডারটা কাল করে ফেলবো। এরমধ্যে তুমি বাসায় জানিয়ে রেখো।
চমৎকার একটা প্ল্যান এঁটেছে রাশেদ। মনে মনে বলে,
– দুটো কানেক্টিং রুম নিতে হবে আমার আর রিটার জন্য। দুটো কর্মঠো ছেলে নিয়ে নেবো কাজ করানোর জন্য। আর ইঙ্গিতটা তো ভালোই বুঝেছে বলে মনে হচ্ছে। বাকিটা কাল ক্লিয়ার করে নেবো। এখন ছেলে দুটোকে আগে সিলেক্ট করে ফেলি।
পরদিন পাসপোর্ট নেবার সময় রিটাকে বলে,
– তিনজন ইন্টার্ন যাচ্ছে। তোমাকে তো রিটেইন করতে চাচ্ছি, তাই অন্য মেয়ে নিয়ে তোমার কমপিটিটর বাড়ালাম না। দুটো ছেলে নিলাম, রিটেইনশন পেতে ওরাই খাটা খাটুনি করুক। তুমি আবার একা একা বোর ফিল করো কিনা, সেটাই ভাবছি, একা যেতে কি কোন আপত্তি আছে তোমার?
– ভাইয়া, কী যে বলেন? আপনার সাথে গেলে তা আবার একা হবে কিভাবে? অবশ্যই যাবো।
– আমিও তাই ভাবছিলাম। ট্রাভেল এজেন্ট কে বলে রেখেছি, তোমার রুমটা যেন আমারটার কাছেই দেয়, যেন রাতে ভয় টয় পেলে ডাকতে পারো।
কিন্তু যেটা বলে না তা হলো, এজেন্টকে কঠোর ভাবে বলা আছে, রুম দুটো যেন শুধু কাছেই না, কানেক্টিংও হয়।
“কাছাকাছি রুম”, “ভয় পেয়ে রাতে চলে আসা” – এইসব ইঙ্গিতে রিটার কোন ভাবান্তর না দেখে রাশেদ মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায় রিটা বোধ হয় আঁচ করে নিয়েছে, সে কি চাচ্ছে। ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে তার। এটা প্রশান্তির নাকি দুষ্টুমির হাসি, ঠিক বুঝতে পারে না সে নিজেও।
প্রাথমিক বাধা তো সে পার করলো, আসল বাধা নিয়ে ভাবতে শুরু করে এবার রাশেদ। তোড়াকে কিভাবে স্মোক-স্ক্রিন দিয়ে ঢাকা যাবে, এবার সেটা নিয়ে ভাবা শুরু করে দেয় রাশেদ।
সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে তোড়ার সাথে যেসব কথোপকথন হয় তা নিম্নরূপ:
– আগামী বুধবার একটু নেপাল যেতে হবে কিছু অফিশিয়াল কাজে। রিটারাও কয়েকজন যাচ্ছে ডেটা কালেকশনে হেল্প করতে। তুমি কি যেতে চাও?
– অফিসের কাজে যাচ্ছো যখন, তুমিই যাও। আমার শরীরটা একটু খারাপ। আমি বরং এ’কয়দিন মায়ের বাসা থেকে ঘুরে আসি। কি বলো?
– সেটা মন্দ বল নাই। ভালোই তো। যাও।
হাঁপ ছেড়ে বাঁচে রাশেদ। ভাগ্যিস যেতে চায়নি। পুরো প্ল্যানটাই কেঁচে যেতো। যাহোক, যেতে চাইলে একটা ধুনফুন বুঝিয়ে যে পরে কাটাতে হতো, সেটা ঠিক করে রেখেছিল। নিজে যেতে না চাওয়ায় সেটা আর করা লাগল না। একদিকে ভালোই হলো, সাপও মরলো, লাঠিও ভাঙ্গলো না।
ওদিকে রাশেদের আচরনে চুড়ান্ত বিরক্ত হলো তোড়া। দুমাস হলো ওর সাইকেল মিস হয়েছে, সেই খেয়ালই নাই। শরীর খারাপ লাগছে তাই মায়ের বাড়ি যেতে চাচ্ছে, এসবের মানে বুঝতে বিবাহিত পুরুষদের কি রকেট সাইন্টিস্ট হতে হয় নাকি? কোন জামানায় যে বাস করছে এঁরা?
বুধবার পর্যন্ত অপেক্ষা করে না তোড়া। সেদিনই মায়ের বাড়ি যাবার জন্য গোছগাছ শুরু করে দুই ভাগে। রাশেদের নেপাল থেকে ফেরার এ’কয়দিনের জন্য একটা সুটকেস রেডি করে। আর ও ফেরার পর শরীর যদি আরও খারাপ হয়, থাকাটা যদি আরও দীর্ঘ্য করতে হয়, সেটা ভেবে আরেকটা সুটকেস রেডি করে, রেখে যাওয়ার জন্য। যেন দরকার হলেই পড়ে সহজে ওটা নিয়ে নেয়া যায়।
রাশেদের নেপাল ট্যুর, আভিসারে পরিনত করতে কোনই বেগ পেতে হয় না। রিটা খুবই বুদ্ধিমতি মেয়ে। কানেক্টিং রুমের অর্থ ডিকোড করতে একদমই সময় নেয় নি। রুমে ঢোকার আধ ঘন্টা পরেই কল পায় সে,
– রাশেদ ভাই, এই দরজা দিয়ে কি আপনার রুমে যাওয়া যায়? খোলেন তো দেখি, গিয়ে দেখি – কি করছেন?
– আমার দিকে ওটা খোলাই আছে। তুমি যখন চাইবে চলে আসতে পারবে।
রুমে ঢুকে বিছানায় রাশেদের গা ঘেঁসে বসে রিটা। বলে,
– রাশেদ ভাই, খোলাখুলিই বলি। প্রথম যেদিন আমাকে নেপাল নিয়ে আসা ও ডিপার্টমেন্টে রিটেইন করার কথা একসাথে বললেন, আমি আপনার ইঙ্গিতটা বুঝে নিয়েছিলাম। তাছাড়া বিয়ের মাস দেড়েক পর থেকেই একা থাকি, যত ভালবাসাই থাক শাওনের জন্য, মেয়ে হলেও – আমিও তো মানুষ? আমারও তো চাহিদা আছে, তাই না? সেই জন্য, না করার কথা ভাবি নাই। তোড়া আপুর কথা যে একদমই ভাবি নাই, তা না। তবে ওনার অবস্থান তো আর আমি নিচ্ছি না, তাই না? আর আপনাকেও কথা দিতে হবে যে আমাদের এখানে মধ্যে যা যা ঘটবে, এর কোন কিছুই যথা সম্ভব দেশে টেনে নেবেন না। তবে সেরকম কোন ক্লীন সময়-সুযোগ পেলে ভিন্ন কথা। আর হ্যাঁ, শাওন ফিরে আসার পর আমাদের সম্পর্কটা কিন্তু এবসলুওটলি অফিশিয়াল হতে হবে। আমি শাওনকে সত্যিই খুব ভালবাসি। আপনার সাথে যা হবে, সেটাও এক ধরনের ভালবাসাই তবে তা ক্যারি ফরোয়ার্ডের জন্য নয়। প্রয়োজনের তাগিদে। আপনি কি বুঝতে পেরেছেন, আমি কি কি বুঝাতে চেয়েছি?
– ক্রিস্টাল ক্লিয়ার।
আর কথা না বাড়িয়ে, রিটার মধ্যে ডুব দেয় রাশেদ………
(চলবে)
চতুর্থ ও শেষ কিস্তি
না-গল্প পাঁচ(ঘ) – তোড়ার কথা: ফেরা
আরও কিছু না-গল্প
পরপর তিনটে কিস্তি পড়লাম।
রাশেদ-এর বহু সংস্করণ আশেপাশেই আছে। অন্যদিকে দ্বিধায় পড়ে যায় তোড়া-রা। রাশেদ-দের চাওয়া-পাওয়ার হিসেবটা 'ক্রিস্টাল ক্লিয়ার'-লি বোঝেনা বলে 'ইম্ম্যাচুওর'-এর তকমা মেলে, আবার 'ম্যাচুওর'-লি ডিল করতে গেলে ওই রাশেদ-রাই বেঁকে বসে সবার আগে, বোনাস হিসেবে জোটে 'সুশীল' সমাজের ভর্ৎসনা।
তবুও, তোড়া পথ চলতে থাকুক। সেই পথের আরো গল্প শোনার প্রতীক্ষায় রইলাম।
এরকম সুচিন্তিত সুলিখিত একটা মতামত পেয়ে, ভোর বেলাতেই মনটা অনেক ভাল হয়ে গেল।
তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, তিশা।
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.