(এই লেখাটা ক্যাডেট কলেজ ব্লগে দিতে একটু কুন্ঠিত ছিলাম। কিন্তু নূপূর ভাই সহ অনেক জীবনানন্দপ্রেমীদের ভীড়ে সাহসটা করেই ফেললাম। সামুর প্রথম পাতায় প্রকাশিত আমার প্রথম লেখা। ক্যাডেট কলেজে কোনো বার্ষিকীতে কিংবা বুয়েটের কোন সাময়িকীতে কখনো কোন লেখা ছাপাতে না পারা আমার জন্য এ লেখাটা তাই সবসময়ই বিশেষ কিছু। লেখা পড়ে বিরক্ত হলে পাঠককে নিজগুণে ক্ষমা করার অনুরোধ রইল। )
কোন কষ্ট না থাকাটা বড় কষ্টের কারণ। কষ্টহীন মানুষের কষ্টের তীব্রতা ভয়াবহ। যারা একথা শুনে এর মধ্যে হেসে উঠেছেন কিংবা ভ্রু কুঞ্চিত করেছেন কিংবা বিরক্ত বোধ করছেন আমার লেখা তাদের জন্য উৎসর্গীকৃত।
অর্থ নয় কীর্তি নয় স্বচ্ছলতা নয়
আরও এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের মাঝে খেলা করে……..
লাইন গুলো আমার খুব প্রিয় একটি কবিতা জীবনানন্দ দাশের আট বছর আগের একদিন কবিতার লাইন। প্রথম যখন পড়ি তখন এর অন্তর্নিহিত অর্থ কিছুই আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক দিয়ে অনুধাবন করা সম্ভব হয়নি। অবাক হয়ে ভেবেছি কী এই বিপন্ন বিস্ময়? আবার পড়ি পুরো কবিতা। বারবার পড়ি। যতই পড়তে থাকি ততই এই কবিটা আমার কাছে নতুন অর্থ লাভ করতে থাকে। এই এক কবিতা আমি আজও সুযোগ পেলে পড়ি এবং তা কখনও পুরাতন হয় না। অদ্ভুত সব রূপ নিয়ে সে নতুন করে হাজির হয় আমার সামনে কিন্তু আজও আমি বুঝিনি কবি বিপন্ন বিস্ময় বলতে ঠিক কী বুঝাতে চেয়েছেন।
বুঝি আর নাই বা বুঝি এই বিপন্ন বিস্ময় নামক জিনিসটি আমার মনোজগতকে আলোড়িত করে গেছে সব সময়। কী সেই চরম প্রাপ্তির পরম পুলক যার সন্ধানে একগাছা দড়ি হাতে অশ্বথের দিকে ছুটে গিয়েছিল সেই যুবক যার জীবনে কোন পার্থিব অপুর্ণতা নেই,জানি না, বুঝিনি কভু।কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমার মাঝে বোধ জাগে সে যুবকের স্বত্তাকে আমিও তো ধারণ করি নিজের মাঝে। তাই তো অপুর্নতাহীন এ জীবন খোজ করে অপুর্নতার। আর তাই তো আমি হয়েছি দু্ঃখবিলাসী।
বিপন্ন বিস্ময় আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় আমার সব প্রাপ্তির মধ্যে। কোন এক জোছনা ভেজা বিষন্ন রূপালি পূর্নিমার কোন এক একাকী মূহুর্তে আমি নিজেকে খুজে পাই সে কবিতার যুবকের মধ্যে। আর আমার অপ্রাপ্তি ঐ বিপন্ন বিস্ময় আমাকে তাড়া করে বেড়ায় সন্যাসব্রতের আহবান নিয়ে এই জীবন সংসারের নিরর্থকতাকে সদম্ভে ঘোষনা করে। আমার মন হারিয়ে যেতে চায় নিরর্থক জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে।
আর এ সময় আমার দুঃখবিলাসী মন বিলাসদুঃখগুলিকে হাজির করে আমাকে জানান দেয় জীবনের গূঢ় অর্থের।সে বিপন্ন বিস্ময়কে দুরে সরিয়ে দেয় সে সময়ের জন্য অনেক সময়ের জন্য। তাই তো আমি দুঃখবিলাসী। আমার দুঃখগুলো তাই আমার বন্ধু। আর আমার দুঃখবিলাসী মন তাই খুব সহজেই মানুষের কষ্টকে নিজের করে নিতে চায় আর নিজের কষ্টকে ছড়িয়ে দিতে চায় আমার মত কোন বিলাসদুঃখীর তরে।
সামুতে প্রকাশিত : ৩০ শে মে, ২০০৮ ভোর ৬:৪১
সুন্দর লেখা।
সৈয়দ মুজতবা আলীর একটা উক্তি মনে পরে গেল(কেন জানি না), স্বল্পভাষী মানুষের চেয়ে বেশি কথা বলা লোকের জন্য নীরবতার গুরুত্ব বেশি।
লেখাটা ভালো লাগলো।
রজনীগন্ধা
জীবনানন্দ দাশ
---------------
এখন রজনীগন্ধা - প্রথম- নতুন-
একটি নক্ষত্র শুধু বিকেলের সমস্ত আকাশে;
অন্ধকার ভালো বলে শান্ত পৃথিবীর
আলো নিভে আসে।
অনেক কাজের পরে এইখানে থেমে থাকা ভালো;
রজনীগন্ধার ফুলে, মৌমাছির কাছে।
কেউ নেই, কিছু নেই, তবু মুখোমুখি
এক আশাতীত ফুল আছে ।
---------------
সবচে' প্রিয় কথাটা খুবই কনফিউজিং, কথাটার উপর আমার পুরাপুরি বিশ্বাসও নাই। তবু কেউ যখন জিগায় তোমার সবচে' প্রিয় কবিতা কোনটা, আমি চোখ বুইজা এইটার কথা বলি।
জীবনানন্দের এত এত সুন্দর কবিতা থাকতে এই প্রায়-অপরিচিত কবিতাটা কেন আমার প্রিয়- সেইটা জানা নাই।
www.tareqnurulhasan.com
এমন করে কোন মানুষের পক্ষে লেখা সম্ভব ? :grr: জীবনানন্দ হালায় একটা অমানুষ ছিলো। 😀
পরজন্মে আমি জীবনানন্দ হইতে চাই। 😉
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
সহমত :thumbup: (বসের নামের পরে তিন অক্ষরের শব্দটা বাদ দিয়া)
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
জীবনান্দের একই কবিতা একেক বয়সে একেক রকম লাগে, অন্য অন্য অর্থ।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আমিন,
'আট বছর আগের একদিন' এ আক্রান্ত হয়ে আছি সেই কবে থেকে।
এতবার পড়েও সাধ মেটেনা। নতুন মনে হয় প্রত্যেকবার।
আমিও আরেকটি প্রিয় কবিতা লিখে দিলাম এইখানে।
তবুও পায়ের চিহ্ণ
ঘড়ির দুইটি ছোটো কালো হাত ধীরে
আমাদের দু'জনকে নিতে চায় যেই শব্দহীন মাটি ঘাসে
সাহস সংকল্প প্রেম আমাদের কোনোদিন সেদিকে যাবেনা
তবুও পায়ের চিহ্ণ সেদিকেয় চলে যায় কি গভীর সহজ অভ্যাসে।
সুন্দর একটা লিখা।
জীবনান্দের সব লেখাতেই কেমন যেন একটা রহস্য থাকে। মনে হয়, কোথায় যেন বুঝতে কি বাকি!
অনেক ধন্যবাদ সবাইকে যারা আমার লেখাটি পড়লেন।
বিশেষভাবে নুরুল হাসান ভাই আর নূপুর ভাইকে সুন্দর দুটি কবিতা উপহার দেয়ার জন্য।