[ শুরুর কথা: শিরোনামে প্রতিক্রিয়া কথাটা একটু মিসলিডিং মনে হবে। কারণ প্রতিক্রিয়া সাধারণ ঘটনা ঘটার পরে হয়। সেই হিসাবে পাঠ প্রতিক্রিয়া কথাটাও মাত্র পড়ে শেষ করা কোন বই নিয়ে ভাবনাকে নির্দেশ করতে পারে। তবে আলোচ্য বইটি আমার পড়া হয়েছিলো এক বছরেরও কিছুকাল আগে। বইটা পড়া শেষ করার পরের অনুভূতি ছিলো অদ্ভুত। লেখা নিয়ে প্রতিক্রিয়া বলার চাইতে বরং লেখার প্রতিক্রিয়া নিজের উপর জারি ছিল বেশ কিচুটা সময়। শহীদুল জহিরের লেখার মাঝে ঘোর আছে। সেই ঘোর থেকে মন মুক্তি পেতে সময় নেয় বেশ কিছু কাল। তারপরে প্রতিক্রিয়া লেখার ইচ্ছা প্রবল না হওয়ায় লেখা হয় নি। বেশ কিছুকাল চলে যাওয়ার পরে মনে হলো, যারা বইতি পরে নি তাদের কাছে বইটার জানান দেয়ার জন্য হলেও ক’লাইন লিখে ফেলা যায়। সেই ভাবনা থেকেই এই লেখা লিখতে বসা।]
শহীদুল জহিরের লেখার সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল বছর ছয় সাত আগে। ছুটির দিনে আড্ডা দিতে বুয়েটে যাওয়া হত প্রায়ই। ক্যান্টিনে অনুজ হোসেনকে দেখতে পেলাম চা খেতে খেতে একটা বই পড়তে। একটু মনযোগ দিয়ে উঁকি দিতেই বইয়ের লেখকের নাম জানলাম শহীদুল জহির। বলাই বাহুল্য লেখকের নাম আমার কাছে একেবারেই অপরিচিত ছিল। হোসেনকে জিজ্ঞেস করে যা জানতে পারলাম, ভদ্রলোকের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে নিয়ে আজিজ মার্কেটে বেশ আয়োজন হয়েছিল। সেখানে তাঁকে নিয়ে লেখা আর তাঁর লেখা দুই ই ছিলো। হোসেনও তখন এই লোকের নাম শোনে নি। আয়োজনের আতিশয্য দেখেই হয়তো তাঁর উপন্যাস সমগ্র নামের বইটি নিয়ে আসে। আমার দিকে বইটি ঠেলে দিয়ে বললো, ‘ দুটা পৃষ্ঠা পড়ে দেখেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সবচেয়ে কমপ্যাক্ট, নির্মোহ, বাস্তব ঘনিষ্ট উপন্যাস। আবেগকে পাশ সরিয়ে বাস্তবতা দেখার চেষ্টা করা হয়েছে।’ আমি তুলে নিয়ে দু পাতা পড়ে এক ধরণের মায়ায় পড়ে যাই। সেই মায়া শহীদুল জহিরের জাদুকরী লেখনীর মায়া। তখন না হলেও সময় করে পড়ে ফেলি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার উপন্যাস ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা।’ একটু বাড়াবাড়ি শোনা গেলেও হোসেন একটুও বাড়িয়ে বলেনি। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বড় ক্যানভাসের এক টুকরো উপজীব্য করে বেড়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পুরনো ঢাকার একটি এলাকার সুখ দুঃখ নিয়ে।
লেখকের লেখনীর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য চোখে লেগে গিয়েছিলো একেবারে। নির্মোহভাবে কথা বলা লেখক আর তার মোহজালে আবিষ্ট পাঠক যেন উপন্যাসের একটি চরিত্র হয়েই উপন্যাসের মাঝে নেমে আসেন। তার পরে হ্যামেলিনের বশিওয়ালার মত লেখক পাঠকদেরকে নিয়ে ঘুরে বেড়ান উপন্যাসের গলি ঘুপচি। চোরা কুঠুরী থেকে খন্ড খন্ড গল্পেরা বের হয়ে আসে পাঠকের কাছে। এভাবে সময় আর সমন্বয়কে ডিসরিগার্ড করে টুকরো টুকরো ছবি জোড়া দিয়ে গড়ে উঠে উপন্যাস। উপন্যাস শেষ হয়ে গেলো টুকরো টুকরো গল্প গুলোর অন্তর্নিহিত তাৎপর্যগুলো একে একে পাঠকের কাছে মূর্ত হয়ে উঠে। লেখনীর কারণে পুরোটা উপন্যাস জুড়েই ভ্রম আর মায়া থাকে সমানতালেই। শহীদুল জহিরের লেখার এই মৌলিক বৈশিষ্ট্য তার ছোট গল্পগুলোতেও থাকে বলে ছোট গল্প সময়ে সময়ে অমনযোগী পাঠকের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে উঠতে পারে।
যাই হোক, ধান ভানতে বসে শিব সাহেবের গীত হয়তো একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে। আগের উপন্যাসটি নিয়ে মুগ্ধতা থাকলেও একটা জায়গায় একটু খচখচানি ছিলো। সেটা হলো উপন্যাসের দৈর্ঘ্য। সেটা যেন পূর্ণ দৈর্ঘ্য হবার পরিবর্তে স্বল্পদৈর্ঘ্য হয়ে যায়। আর তাই উপন্যাস শেষ হবার পরেও লেখকের কাছে অনেক প্রত্যাশা জাগিয়ে এক ধরণের অতৃপ্তিও কাজ করে। সেই অতৃপ্তি অপূর্ণতা সবটুকু ঘুচে যায় ‘সেই রাতে পূর্ণিমা ছিলো’ উপন্যাসটি পড়বার পরে। উপন্যাসের শুরুটা হয় জোছনার মায়ায়। জোছনার মায়ার মাঝেই মফিজউদ্দিনের পরিবারের নৃশংসভাবে খুন হওয়ার খবর পাঠকের কাছে পৌঁছায়। যে কোন পাঠকই অর্ধেক পাতা পড়বার আগেই মফিজউদ্দিনের পরিবারের করুণ পরিণতির পিছনের কাহিনী জানতে উৎসুক হয়ে উঠে। সেই সময়ে আমরা জানতে পারি মফিজউদ্দিনের একশত এগারো বছর বাঁচবার কথা ছিলো। সেই নিশ্চয়তা মফিজউদ্দিনের কাছেই ছিল। যা এলাকার আড্ডার মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো। মূলত মফিজউদ্দিনের পরিবারের করুণ পরিণতি একই সাথে উপন্যাসের শেষ দৃশ্যও। তবে প্রতিশ্রুত একশত এগারো বছরের তিরিশ বছর আগে খুন হওয়া মফিজউদ্দিনের বর্নাঢ্য জীবনের পটভূমিকে উপজীব্য করেই উপন্যাসের মূলো ধারা চলতে শুরু করে।
একজন প্রভাবশালী লোকের সপরিবারে নৃশংসভাবে খুন হওয়ার গল্প শুনে পাঠকের ভাবনায় একবার হলেও বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কথা মনে আসতে বাধ্য। তবে পাঠককে মনে রাখতে হবে চরিত্র ধরণে কিংবা পরিণতিতে মিলে গেলেও উপন্যাসটি মূলত গড়ে উঠেছে বড় পরিসরে; আশির দশকের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনের ধারাকে বুঝবার চেষ্টা করা হয়েছে উপন্যাসের ক্ষুদ্র গন্ডিতে। সামাজিক এবং রাজনৈতিক বাস্তবতায় ডান ধারার উত্থানের চিত্রটিও চোখে পড়ে খুব স্পষ্টভাবেই। নয়নতারা’র হাটের নাম বদলে ফেলে টার উপর মুসলমানিত্ব আরোপ করবার ছোট অথচ তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা আমরা দেখি। এর পিছনে ধর্মকে উপজীব্য করে রাজনৈতিক ফায়দা অর্জনের চিত্রটি আমাদের নজরে আসে, সেই সাথে নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি অশ্রদ্ধার বীজ বপনের কালচারও ধরা পড়ে যেন। সেই সাথে রাজনৈতিক দন্ডে একটি পরিবারের কেউ একজন সেনাবাহিনীতে থাকবার কথা আলাদা উল্লেখে আমরা সেনাদের হস্তক্ষেপে কোনঠাসা রাজনীতির ছবিও দেখতে পাই যেন।
উপন্যাসের মূল ধারার প্রবাহ ঘটে মফিজ উদ্দিনের উত্থানের গল্প দিয়ে। সেই উত্থানের পিছনেও পূর্ণিমা ছিল। কীভাবে এক পূর্ণিমার রাত্রিতে মফিজউদ্দিন বদলে যায়। জমিদারের মেয়ে চন্দ্রভানকে সে জয় করে কামলা মফিজউদ্দিন থেকে মফিজ উদ্দিন মিয়া হয়ে উঠে তাও পাঠকদের জানা হয়ে যায়। মফিজউদ্দিনের অসম সাহসের কঠা যেমন আমরা জানতে পারি, তেমনি জানতে পারি একাধিক বার মৃত্যু থেকে ফিরে আসার কথাও। সেইভাবেই কোন এক সময়ে মফিজউদ্দিন একশত এগারো বছর বাঁচবার নিশ্চয়তা পায়। সেই ঘটনার মাঝে পরাবাস্তবতা গ্রাস করে থাকে, যার থেকে মফিজউদ্দিন কখনোই যেন মুক্তি পায় নি। নয়নতারার হাটের নামকরণের পিছনে সেই কাহিনী মিশে থাকে। সেই পরাবাস্তবকে ফুটিয়ে তুলতে লেখক একাধিক দৃশ্যকল্পে সহায়তা নিয়েছেন।
মফিজউদ্দিনের চরিত্রটি কি তবে কোন সুপার হিরোর? উপন্যাস এগিয়ে যাওয়ার পরে যে তর্ক থেকে আমরা সরে আসতে পারি। যে সাহসী উদ্যমী মফিজউদ্দিনকে আমরা উপন্যাসের শুরুতে দেখি পরের দিকেও তার গোড়া রূপটাও চোখে বাজে খুব ভালো মতই। নতুনকে বরণ করে নেবার মত গতিশীলতা তার ছিল না। বরং নিজের কাছে ক্ষমতা কুক্ষিগত করবার মত গোড়ামি তার ছিল। তার পতনের পিছনের অন্যতম বড় কারণ যে সেটা ছিল উপন্যাস এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই আমরা তাও জানতে পারি। এই চিত্রটি আসলে যেন দুটি আলাদা প্রজন্মের দৃষ্টি ভঙ্গি ও চিন্তাভাবনার অসমতার, মানসিকতার দ্বন্দ্বের। যুবক মফিজউদ্দিনের মাঝে আমরা যে বিদ্রোহী রূপ দেখি, সেই মফিজউদ্দিনই ছেলেদের বিদ্রোহ দমনে ছিল পুরোপুরি তৎপর। এই অসমটা বৈপরীত্ব যেন আসলে কেবল মফিজউদ্দিনের নয়। বরং, শাসক-শাসিত এর পারস্পরিক রূপান্তরের যে সামগ্রিক চিত্র বয়ে চলেছে মহাকাল তারই পুণর্মঞ্চায়ন।
মূল ধারার গল্পে মফিজউদ্দিনের যুবক সময় থেকে ঘটনা প্রবাহিত হয়ে আশির দশকে আসে। এই দীর্ঘ সময়ে চলতে থাকা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট উপন্যাসের সাথে সঞ্চালিত হয়ে পাঠককে নিয়ে চলতে থাকে। তবে সেই সাথে উপধারা হয়ে মিশে আরো কিছু গল্পের। মফিজউদ্দিনের ছেলে নাসিরউদ্দিনের গল্পটাও তেমনই। গ্রামের কিশোরী দুলালীর সাথে তার সম্পর্কটা প্রেমের। তবে সেই প্রেম পরিণতি লাভ করে না। বরং এই উপধারা বিলুপত হয়ে যাবার আগে পাঠকের মনে বেদনার বোধ জমা রেখে যায়। দুলালী আর নাসিরউদ্দিনের সম্পর্ক আলোচনায় একাধিক বার মোরগ খাসি করবার প্রক্রিয়া বর্ননা করা হয়েছে। একাধিক বারের উল্লেখে আসলে দিনশেষে হয়তো এটা নাসিরউদ্দিনের নিজের অক্ষমতাকে (অবশ্যই যৌন নয়) রূপক অর্থে বুঝাবার চেষ্টা করা হয়েছে।
যেই বড় পরিসরে উপন্যাসের পটভূমি চিত্রায়িত হয়েছে তার মাঝে ১৯৭১ গেছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখ না দেখলেই বরং অবাক হতাম। এই উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতা উঠে এসেছে সুহাসিনী গ্রামের প্রেক্ষাপটে। সেখানে আকিয়ে আবুবকর সিদ্দিকির গল্প আমরা জানতে পারি। সেই সাথে জানতে পারি আলেকজানের কথাও। এই অংশে এসে অবশ্য লেখকের আগের উপন্যাসটির কথা বেশ মনে পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অংশটুকু এতটা জীবন্ত ও টানটান যে, মুক্তিযুদ্ধের সময়কার লেখকের ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে পাঠক কৌতুহলী হয়ে উঠে।
উপন্যাসের শেষেই আবার সেই নৃশংস হত্যাকান্ডের গল্পে ফেরত আসে। পুর্ণিমার ভ্রমের সাথে সাথে লেখকও পাঠককে নিয়ে এক সাথে ধন্ধে পড়ে যান। তাই মফিজউদ্দিনের মৃত্যুর পিছনের কারণ গুলো নিয়ে এক ধরণের রহস্য যেন লেখক রেখে যেতে চান। তবে তার পিছনেই আসলে বলা হয়ে যায়, মধ্য সত্তুর ও আশির দশকের অস্থির রাজনৈতিক পরিমন্ডলের ছবি ও প্রতিহিংসা মূলক রাজনীতির স্বরূপ। তাই মফিজউদ্দিন ও তার পরিবারের হত্যাকান্ডের পিছনে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাত ছিলো এমন সত্যটা যেন তাই প্রকাশিত হয়েও প্রকাশিত হয় নি। চাঁদের আলোতে গ্রামের মানুষেরা বিভ্রান্তির মাঝেই আটকে থাকে। অতঃপর মফিজউদ্দিনের বর্নাঢ্য জীবন কেবল লোক কথা আর চায়ের দোকানের আড্ডার মাঝেই আটকে যায়। রাজনৈতিক পরিমন্ডল মফিজ উদ্দিনের শুন্যতা পূরণ করে নেয়।
যেখানে শুরু সেখানে শেষ হয়ে গেলেও উপন্যাসটি গ্রাম বাংলার মানুষের চিন্তাধারার প্রতিফলন। বৃহৎ সময়কাল নিয়ে রচিত বলে সমকালীন বাস্তবতা আর তাদের পার্থক্য গুলো খুব স্পষ্টভাবেই উঠে এসেছে। আর সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ আগার কাছে মনে হয়েছে, উপন্যাসটির গলি গুপচি ঘুরে বিভিন্ন প্রজন্মের চিন্তা রাজনৈতিক দর্শন, প্রেম ও ভাববাদ খুব যত্ন নিয়ে উঠে এসেছে।
(সম্পাদিত)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
প্রথম B-)
আপাততঃ বিজি আছি। পরে সময় করে এসে মন্তব্য করবো। 😛
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
হা হা হা।
প্রথম হওয়ার জন্য অভিনন্দন আর পোস্টে উঁকি দেয়ার জন্য ধন্যবাদ মাহমুদ ভাই। যদিও বিজি আছি কমেন্টানি ছাইড়া দিছি ইদানিং।
চমৎকার একটি পাঠ প্রতিক্রিয়া। সুস্বাদু এবং মেদহীন লিখসো। শহীদুল জহীর পড়লে আমারও একটা ঘোর কাজ করে সাঙ্ঘাতিকভাবে। এজন্যই হয়তো তার লেখার ধরণকে জাদুবাস্তবতা বলে। সেই রাতে পূর্ণিমা ছিল - পড়িনি। আগ্রহ জাগলো পড়ার। (সম্পাদিত)
আমার বন্ধুয়া বিহনে
কমেন্টে কৃতজ্ঞতা রাব্বী ভাই। আপনার কমেন্ট দেখে একটু চাপে পড়ে গেছিলাম, লেখকের নামের বানান ভুল করছি কিনা। তার পরে গুগল মামার দ্বারস্থ হয়ে ক্লিয়ার হলো। স্মৃতির উপর আমার বেশি কনফিডেন্স। সেটা একটু বিপজ্জনক হতে পারে।
শহীদুল জহিরের লেখা একেবারে ভিন্ন ধরনের। আর তার চেয়ে বড় কথা একটু সংক্রামকও। তবে ঘোর মায়া এসবে ফেলে খুব সাধারণ দৃশ্য দেখবার প্রচেষ্টা খুব দাগ কাটে। বিশেষ করে, শহীদুল জহিরের এই উপন্যাস টি আলাদা মনযোগের দাবী করে মূলত তার বয়াপ্তির জন্য। এবং এতটা ব্যাপ্তিতে লেখকের কাহিনীকে টানটান করে রাখাও কৃতিত্বের দাবিদার।
এহহে! নামের বানানটা ভুল করলাম! আমার টাইপিং অবস্থা এখন খুব খারাপ। সাথে বানানও। ভুলে গেসি, আবার শিখছি এখন। আমি আবার জব্বার ভাইয়ের ভক্ত ছিলাম। এখন তো ওটা কাজ করে না।
বইটা পেলেই পড়বো। শহীদুল জহিরের লেখা পড়লে যেটা ভাবায় তার নিজের জীবনটা আসলে কেমন ছিল! অসম্ভব মেধাবী না হলে এমন পরাবাস্তব ধারায় লেখা সম্ভব না।
তুমি নাকি এখন প্রবাসী সরকারের রাষ্ট্রপতি?
আমার বন্ধুয়া বিহনে
হা হা। না ব্যাপার না। বিজয়ে অভ্যস্তদের অভ্রতে বেগ পেতে হয়। আর আমারও এমনিতেই অনেক টাইপো হয়। আর অনেকদিন পরে লিখতে গিয়ে ইদানিং পেন্সিল ভাঙার দশা।
আপনারে ব্লগে একটিভ দেখে ভাল্লাগতাসে (আসলে নিজেই হালকা একটিভ হইতেসি আর কি)।
===
রাষ্ট্রপতি ই বলা যায়। বিদায়ী রাষ্ট্রপতি। তবে ক্ষমতা ছেড়ে গছানোর লোক পাইতেসি না (নিজেরে ক্যাম এরশাদ এরশাদ মনে হযইতেসে)। সময় পাইলে এইদিকে একবার ঘুইরা যাইয়েন।
😀 😀
গদিতে পাকাপাকি থেকে যাও!
আমার বন্ধুয়া বিহনে
আর কোনটা মনে হচ্ছে? স্বৈরাচারী না বিশ্বপ্রেমিক?
আমার বন্ধুয়া বিহনে
ভাইডি, বিশ্বপ্রেমিক আমার হওনের তেমন কোন চান্স নাই।
বরং স্বৈরাচার জিনিসটার সাথে বেশ যায়।
=====
প্রসঙ্গ ক্রমে, ছোটবেলায় আমাদের জেনারেশনের অনেকের মতই আমার একটা কমন বিভ্রান্তি ছিল। আমার ধারণা ছিলো এরশাদ বুঝি একটা পদের নাম। নির্বাচনের আগে সাহাবুদ্দিন সাহেবরে আমি নতুন এরশাদ ভাবছিলাম সেই ১৯৯১ সালে।
আর চান্স পাইলে? 😀
আমার বন্ধুয়া বিহনে
কি কোইন্সিডেন্স, গতকাল রাতে সচলে রায়হানের একটা আবেগঘন স্মৃতিচারণ পড়লাম, সেটারও কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন শহীদুল জহির। আজ দেখি এখানেও তিনি। পড়ে ফেলতে হবে, পড়ার লিস্ট কেবলই বাড়ে। হায়, জীবন এত ছোট ক্যানে?
এমন মানব জনম, আর কি হবে? মন যা কর, ত্বরায় কর এ ভবে...
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। টাইম থাকলে পড়ে ফেলতে পারো। মাত্র সোয়াশ পেজের উপন্যাস। তবে লেখকের লেখা একটু মনযোগ ও সময় দাবী করে।
উনার কোনো লেখা পড়িনি এখন পর্যন্ত। আপনি কি ভাই কাগুজে বই এ পড়েছেন ?
এই মুহূর্তে আসল বই কেনা সম্ভব না। আপনার কাছে অনলাইন ভার্সন বা পিডিএফ জাতীয় কিছু কি আছে ?
বাংলা বই সাধারণত আমি কাগুজে পড়তে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। এই বইটার বেলায়ও তার ব্যাতিক্রম নয়। খুঁজে দেখব অনলাইন কিছু পাওয়া যায় কিনা। তবে না পাওয়ার চান্সই বেশি।
পুরো শহীদুল জহির রচনাসমগ্র খুঁজে পেয়েছি একদম 🙂 পিডিএফ ফরম্যাট।
যদি এখনো পড়ি নি, তবে গতকাল খুঁজে এটা পেলাম।
শহীদুল জহিরের নির্বাচিত উপন্যাস
দুটি উপন্যাস এক সাথে-
জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা
সেই রাতে পূর্ণিমা ছিল।
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
নেভারমাইন্ড ভাই, একদম রচনাসমগ্র পেয়ে গেছি 🙂
এই ওয়েবসাইটে আছে... খুব ভালো বই এর কালেকশন।
লেখনীর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য চোখে লেগে গিয়েছিলো একেবারে। নির্মোহভাবে কথা বলা লেখক আর তার মোহজালে আবিষ্ট পাঠক যেন উপন্যাসের একটি চরিত্র হয়েই উপন্যাসের মাঝে নেমে আসেন। তার পরে হ্যামেলিনের বশিওয়ালার মত লেখক পাঠকদেরকে নিয়ে ঘুরে বেড়ান উপন্যাসের গলি ঘুপচি। চোরা কুঠুরী থেকে খন্ড খন্ড গল্পেরা বের হয়ে আসে পাঠকের কাছে।
~ দারুন অব্যর্থ কথাগুলো।
অনন্য এক কথার জাদুকর। লেখা তো লেখা না ...
পাঠপ্রতিক্রিয়াটি মন কেড়েছে।
অপার ধন্যবাদ।
লেখাটি পড়বার জন্য বিনীত কৃতজ্ঞতা জানুন ভাইয়া।
শহীদুল জহিরের লেখা আমার মতে গুরুত্বপূর্ণ কারণ মধ্য সত্তর এবং আশি দশকের বাস্তবতাগুলো খুব লেখকের লেখনীতে আছে। ইলিয়াসের কথা বলা যেতে পারে এক্ষেত্রে। তবে ইলিয়াসের ক্যানভাসের ব্যাপ্তি বেশি হলেও শহীদুল জহিরের অনবদ্যতা মূলত ছোট পরিসরে বৃহতের চিত্র অঞ্কন করবার জন্য।
শহীদুল জহিরের ছোটগল্পগুলো সত্যিই ধারালো ও অন্য স্বাদের।
ওয়েলকাম ব্যাক, আমিন :clap: :clap:
তোমাদের দেখতে পেয়ে (আই বেটার সে ফিরে পেয়ে) কী যে ভাল লাগছে, ভাইয়া! প্রতিদিন প্রতিবেলা ঢু মেরে দেখে যাই আর কে এলে 😀
শহীদুল জহিরের নাম শুনিনি কখনো। আধাজীবন প্রবাসী থাকলে যা হয় ভাইয়া, মোটা দাগের ঘটনাগুলো ছাড়া তেমন কিছুর সাথে আমাদের সংযোগ থাকেনা বলতে গেলে। দেশ থেকে কেউ এলে তার পছন্দসই বই নিয়ে আসেন; তবে কদাচিৎ যে নিজের ফরমায়েশী বই পাইনা তা নয়। নিজের মাটির থেকে দূরে সরে গেলে যা হয়, আমরা তোমাদের চোখে আমার ফেলে আসা দেশটিকে দেখি।
সিসিবিতে এটিই বোধকরি আমার প্রথম পাঠ প্রতিক্রিয়া পড়া। তোমার লেখার হাতটি ভাল। আলোচিত বইটি না পড়েও তার সুরভিটুকু টের পেয়েছি তোমার লেখনী থেকে। পড়তে লোভ জাগছে।
অনলাইনে কি পেতে পারি বইটি?
নাফিসের মন্তব্যের জবাবে লিখেছি এখানেও বলছি, বইটির অনলাইন ভার্সন আছে কিনা আমার জানা নেই। রকমারি ডট কম বিদেশে তাদের সার্ভিস শুরু করবার কথা বলেছিলো, যদিও জানি না তাদের দিয়ে আনানো আসলে কতটা সম্ভব। তাই দেশ থেকে আসা কাউকে দিয়ে আনাটাই ভালো অপশন।
শহীদুল জহির নিভৃতচারী লেখক ছিলেন। তার জীবদ্দশায় তাকে নিয়ে খুব বেশি হইচই হয়েছে এমন জানতে পারি না। তিনি খুব বেশি লিখেন ও নি। তবে যে কয়টি লিখেছেন তাতেই সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যে তার একটা শক্তিশালী অবস্থান দাবি করে। তার দেখবার চোখ আর বলবার ক্ষমতা দুটোই অনন্য। সত্তর আশি দশকের পুরনো ঢাকা তার বেশিরভাগ গল্পের থিম। ঢাকায় জন্ম এবং বেড়ে উঠা বলে হয়তো তাই একটু পক্ষপাতও আছে উঁনার ব্যাপারে।
কোন কিছু পড়ে সেটা নিয়ে লিখতে ভালো লাগে। কিছুটা ভালো লাগা বইয়ের ব্যাপারে মানুষের কাছে জানাতে আর কিছুটা নিজের ভালো লাগার জন্যই। তাছাড়াও পাঠ প্রতিক্রিয়ার নামে এখনকার পিঠ কচলানি কালচার অপছন্দ করি বলেই নির্মোহভাবে সমালোচনা লেখবার চেষ্টা করি নিজের ক্ষুদ্র জ্ঞানে। পড়বার জন্য বিনীত ধন্যবাদ।
একটা লাইনও পড়িনি এখন পর্যন্ত। কামরুল (৯৪-০০) বলসিলো দিবো, তার নিজের সংগ্রহের সমগ্রটা। এত হ্যাপার মধ্যে তার আর এসব মনে আছে কি না কে জানে।
আপনার মন্তব্য সবসময়ই একটা অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করে ভাইয়া। শহীদুল জহিরের লেখার ব্যাপারে ঘোর আছে এক ধরণের। সিসিবিতেই রাশেদের একটা পোস্ট আছে 'জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা' উপন্যাসটি নিয়ে। সময় পেলে পড়ে ফেইলেন ভাইয়া। সময়ের অপচয় হবে না গ্যারান্টিড।
পড়ার লোভ জাগালে আমিন।
আর তোমার লেখা? বরাবরের মতোই সুস্বাদু.........
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
লাবলু ভাই, আপনাকে দেখে অনেক ভালো লাগলো। ইদানিং অনলাইন একটিভি অনেক কমিয়ে দেয়ায় পুরান লোকজনের সাথে ইন্টারএকশন হয় অনেক কম।
দেশে থেকেও শহীদুল জহিরের লেখা আগে কখনো পড়িনি। তোমার লেখাটা পড়ে পড়ার আগ্রহ জন্মালো।
পাঠ প্রতিক্রিয়া অনবদ্য হয়েছে। বর্ণনার প্রাঞ্জল্য ভালো লেগেছে।