বিশ্বকাপ দুয়ারে কড়া নাড়ছে। সপ্তাহের কম সময় দূরে দাড়িয়ে সে। এর মাঝেই প্রস্তুতি ম্যাচ শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশ দল এই প্রথম মিনোজ ট্যাগ হতে বেরিয়ে বিশ্বকাপ খেলছে। আর সাথে রয়েছে হোম এডভানটেজ। বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ দল গঠন নিয়ে মিডিয়া জুড়ে আলোচনা সমালোচনারও অভাব নেই। সেই আলোচনা সমালোচনায় সামিল হওয়ার জন্যই এই ব্লগের অবতারণা। একজন বোদ্ধার চোখে নয় বরং আঠারো বছর বাংলাদেশের ক্রিকেট ফলো করা একজন আম দর্শকের চোখে বাংলাদেশের দল নিয়ে মতামত প্রকাশ করার চেষ্টা এই অধম ব্লগারের।
গোড়াতে বাংলাদেশের দল গঠনের পর যথারীতি সমালোচনার ঝড় উঠে। এ ব্যাপারে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ কোচ দুঙ্গার একটা কথা বেশ মনে পড়ে। ” কোন দল গঠন হলে দলে কারা আছে তার চাইতে দলে কারা নেই তা নিয়েই আলোচনা হয় বেশি।” আমরা এই কথাকে সত্যি প্রমাণ করেই অলক মাশরাফির নাম নিয়ে সমালোচনার তুবড়ি ফুটিয়েছি। মজার ব্যাপার হলো গত দুই বছরে কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলা অলকের নাম এসেছে জাভেদ তত্ত্বের উপর। এ ব্যাপারে জাভেদ তত্ত্ব একটু বিশ্লেষণ করা দরকার। আগে বাংলাদেশ দলে একটা নিয়ম ছিলো। ওপেনিং এ কেউ ব্যর্থ হলো তো অটোমেটিক রিপ্লেসমেন্ট জাভেদ। অর্থাৎ জাভেদ নিজের পারফর্ম করার দরকার নেই অন্যরা পারছে না বলে সে খেলবে। সেই অদ্ভুত উটের পিঠ থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। মিডল অর্ডারে কেউ ভালো করছে না (আশরাফুল রাকিবুল) অতএব অলককে নিতে হবে এটা খুবই অপেশাদারী ও আবেগী কথা মনে হয়েছে। যদি এখন অলকের কথা উঠেই অবশ্যই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে নিজেকে প্রমাণ করে আসতে হতো অলককে। মাশরাফির বাদ নিয়ে অনেক কথা হলেও একজন ইনজুরি থেকে উঠে আসা পেসারকে নেয়ার ঝুঁকিতে যেতে চায়নি ম্যানেজমেন্ট। তবে যেহেতু মাশরাফি দলের জন্য বিরাট এক মনোবল তাই তাকে দলের সাথে রেখে দেয়াটা হয়তো ভালো ছিলো। তবে মজার ব্যাপার হলো, একদম উপেক্ষিত হয়েও তারকাখ্যাতি না থাকায় উঠে আসেনি জহুরুল ও রাসেলের নাম। ঢাকার স্লো উইকেটে রাসেল যথেষ্ট কার্যকর হতে পারতেন। অন্তত মূল দলে না হলেও শাহাদাতকে সরিয়ে স্ট্যান্ড বাই তালিকায় তাকে রাখা যেত। আর জহুরুলের বাদ পড়ার প্রক্রিয়া আমার কাছে অসৎ বলে মনে হয়েছে। সুযোগ পাওয়া চারটি ওয়ানডে জহুরুলের পারফরম্যান্স তাকে আরো কিছু ম্যাচ খেলতে দেয়ার কথা। অথচ তারপরেও টিম ম্যানেজমেন্ট ক্রমাগত ব্যর্থ হওয়া জুনায়েদ ও রাকিবুল কে সুযোগ দিয়ে গেছে। আর মুশফিকের ইনজুরিতে ব্যাকআপ কিপার কিংবা মুশফিককে ব্যাটসম্যান ধরে কিপার হিসাবে জহুরুলকে খেলানো যেতো।
যা হোক এবার আসি নির্বাচিত দল নিয়ে ভাবনায়। নির্বাচিত দলের সবাই পরীক্ষিত পারফরমার। খুব সম্ভবত এই মূহুর্তের সেরা ১৫ জনই আছেন দলে। ওপেনিং এ তামিম তো এই বিশ্বকাপের সম্ভাব্য তারকাদের তালিকাতেই আছেন। তার পার্টনার ইমরুলও পিছিয়ে নেই রান সংগ্রহের দিকে। ওপেনিং এ সলিডিটি দিতে পারেন ।প্রয়োজনে মারতেও পারেন। মজার ব্যাপার হলো একদম সবার চোখের আড়ালেই সে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তো বটেই ওয়ানডেতে গত বছরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় প্রথম দশে আছে। ওপেনিং জুটি বেশ নির্ভরতাই দিচ্ছে বলা যায়। তবে আমার কাছে তিন নম্বর পজিশনটা মনে হয়েছে দলের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা। অথচ এই জায়গাটা ওয়ানডের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেরা ফর্মের আশরাফুল অথবা আফতাব হতে পারতো এর সবচেয়ে ভালো দাবিদার। আমাদের দুর্ভাগ্য আইসিএল ফেরত আফতাব নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন অনেক দিন হলো, আর আশরাফুলের সহজাত আক্রমনাত্মক খেলা তো হারিয়েই গেছে। এমতাবস্থায় আমাদের দলে যারা আছেন তারা দুজনেই ওপেনিং থেকে মেক শিফট। জুনায়েদের ব্যাটিং অনেক লিমিটেড। তবে তার চেষ্টা থাকে উইকেটে টিকে থাকার। অপরদিকে নাফিস সহজাত আক্রমনাত্মক হলেও তিনি মূলত ওপেনার । ওপেনারদের শুরুকে টেনে নেওয়ার কাজ তিনি কতটা পারেন সেটা মোটেই পরীক্ষিত না। তামিম প্রথমে আউট হয়ে গেলে ইনিংসের আর্লি মোমেন্টাম জেনারেট করা হয়তো একটু কঠিন হয়ে যাবে। তাই ভালো স্কোর করতে গেলে তামিমের কিছুক্ষণ উইকেটে থাকার উপর নির্ভর করতে হবে। একই কথা প্রযোজ্য বড় রান চেজ করার বেলায়ও।
সিডন্সের যে জিনিসটা আমার ভালো লাগতো না সেটা হলো ডায়নামিসিজমের অভাব। হোয়াটমোরের মত ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা তিনি মোটেই করেন না। মুশফিক মাহমুদুল্লাহর ব্যাটিং প্রমোশনের দাবি জানিয়ে আসছিলো অনেক আগেই। সিডন্স এখানে বিকল্প রাখছেন। রাকিবুল খেললে চারে রাকিবুল পাঁচে সাকিব ছয়ে মুশফিক খেলবেন। এই কম্বিনেশনে দুশ্চিন্তা রাকিবুলের ফর্ম। অভিমান দেখিয়ে অবসর নিয়ে তিনি যতটা সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন পারফরম্যান্সে শিরোনাম তিনি ততটা কখনোই হতে পারেন নি। আর আরেকটা সমস্যা অবশ্যই ব্যাটিং পাওয়ার প্লে। এই জায়গাতে বাংলাদেশ দল কখনোই সুবিধা করতে পারেননি। এই জায়গাতএই সিডন্স বিকল্প পথে হাটতে পারেন যেটা তিনি হাঁটছেনও। রহিমকে অর্ডারে প্রমোশন দিয়ে চারে খেলানোর কথা ভাবছেন। কিপিং এর চাপ নিয়ে রহিম যদি এই দায়িত্ব পালন করতএ পারেন তবে দারুণ হয়। কারণ সাকিব এবং মুশফিক খুব ভালো ইনিংস বিল্ডার। তারা মিডল ওভারে সিঙ্গেল নিতে পারবেন, আবার স্পিনারদের উপর চড়াও হয়ে খেলতে পারবেন। আর সেক্ষেত্রে পাওয়ার প্লের সুবিধা নিতে মোহাম্মদ আশরাফুলকে ছয় নম্বরে। আশরাফুলকে নিয়ে এত আলোচনা সমালোচনা হয়েছে যে তার চাপে থাকা স্বাভাবিক। তবে আশরাফুলকে সফল হতে দেখাটা হবে দারুণ। একদিকে আশরাফুল বেরিয়ে আসবেন হতাশার নাম হওয়ার বৃত্ত থেকে আরেক দিকে বাংলাদেশ পাবে পাওয়ার প্লে তে ভরসা দেয়া একজন ব্যাটসম্যান।
সাকিবকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ক্রমশ বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতীক হয়ে যাওয়া এমন অধিনায়ক সবসময় দলের জন্য প্রেরণার উৎস। একজন জেনুইন অলরাউন্ডার যার উপস্থিতি দলের ব্যালান্স তৈরি অনেক সহজ করে দেয়। বোলিং ব্যাটিং দুদিকেই সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিতে পারেন। তার উপস্থিতির সাথে আরো তিনজন অলরাউন্ডার শুভ নাঈম আর রিয়াদের উপস্তিতি দলকে ফেলে দিয়েছে মধুর সমস্যায়। বোলিং স্ট্রেনথ বাড়াতে অলরাউন্ডাররূপী বোলার শুভ হয়তো অটোমেটিক চয়েজে যাবেন। সেক্ষেত্রে নাইম রিয়াদের একজনকে বেছে নিতে হবে। ব্যালান্স বিবেচনায় নাঈম -রিয়াদ অথবা শুভ- নাঈম হওয়াটা বেশি যুক্তিযুক্ত মনে হয়। তবে ম্যানেজমেন্ট সম্ভবত রিয়াদ -শুভ এর পথে হাঁটবে। তবে এদের তিনজনের মধ্য শুভর ব্যাটিং পারদর্শিতা নেই বললেই চলে। আর ছক্কা নাঈম হিসাবে পরিচিত হলেও নাঈমও পাওয়ার প্লেতে খুব কার্যকর হয়ে উঠেননি। রিয়াদ অবশ্য কিছু ম্যাচে ভালো করেছেন। তবে আশরাফুলের বাড়তি বুস্ট পাওয়ার প্লেতে থাকলে নাঈম বা রিয়াদের যে কোন একজন কার্যকর হবেন এমন আশা করাই যায়।
সাকিবের সাথে সাথে আরেক বাহাতি স্পিনার রাজ্জাকও আমাদের বোলিং এটাকের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একবছর আগে ফর্ম হারিয়ে ফেলা রাজ্জাক গত বছর খুব ভালো পারফর্ম করে ফিরে এসেছেন। তার পারফরম্যান্স ধরে রাখার উপর অনেকখানি নির্ভর করবে বাংলাদেশের সাফল্য। পেসার হিসাবে শফিউল খুবই ভালো করছে গত এক বছর ধরে। তার পার্টনার হিসাবে নাজমুল অথবা রুবেলকে বেছে নেওয়া হবে। এই জায়গাটিও বাংলাদেশের সমস্যার জায়গা মনে হচ্ছে। বোলিং এ নতুন বলে ভালো করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ এখনো বড় দলগুলোর মতো হঠাৎ মোমেন্টাম চেঞ্জে সক্ষম হয়ে উঠেনি। তাই একশ ওভারের বেশি সময় মোমেন্টাম ধরে রাখার উপর নির্ভর করবে আমাদের সফলতা।
এই লেখা যখন লেখছি তার আগেই একটি প্রস্তুতি ম্যাচ হয়ে গেছে। তবে সেই ম্যাচে বাটিং না নিয়ে বোলিং নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ আমাদের বোলিং মোটামুটি পরীক্ষিত। আর তার সাথে ডিউ ফ্যাক্টর আমাদের বোলারদের কতটা পরীক্ষায় ফেলে সেটাও দেখে নেয়া যেতো। আরো যেটা যেত সেটা হলো সব ব্যাটসম্যানের ফর্মটা ঝালাই করে নেয়া। যাই হোক পরের প্রস্তুতি ম্যাচে নিশ্চয়ই এই সুবিধাগুলো নেয়া যাবে।
এবার সম্ভাবনার ভাবনায় আসি। আমাদের দলটা বেশ ভালো । তবে আশার ব্যাপারে আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে। ভারত দক্ষিণ আফ্রিকা টুর্নামেন্টেরই ফেভারিট। মজার ব্যাপার হলো গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জয় এসেছিলো এই দুটো দলের বিরুদ্ধেই। আমাদের নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে হবে নিজেদের কাজে অটল থাকতে হবে। একদিনের ম্যাচে একটা দলের কিছু জায়গায় জ্বলে উঠাই শক্তির পার্থক্য ঘুচিয়ে দিতে পারে। এই কথাটা অবশ্য আমাদের মাথায় রাখতে হবে হল্যান্ড আয়ারল্যান্ডের সাথে খেলার আগেও। ছয়মাস আগেই আমরা ওদের কাছে একবার করে হেরেছি। এটা বিশ্বকাপ। তাই সুযোগ একবারই আসবে। কোনভাবে যাতে পঁচা শামুকে পা না কাটে। উপমহাদেশের কন্ডিশনে ইংল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইণ্ডিজের সাথে বাংলাদেশের শক্তির পার্থক্য খুব বেশি নেই। ইংল্যান্ডকে বাংলাদেশের সাথে জিততে ঘাম ঝরাতে হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে পরিসংখ্যান প্রেরণা যোগাবে। ওরা ২০০৯ জুনের পর কোন টেস্ট দলের সাথে জিতেনি। তবে তারপরেও ইংল্যান্ড আর ওয়েস্টইন্ডিজ শক্তির বিচারে এগিয়ে থাকবে। তাই আমরা উচ্চভিলাষী হই না। কিন্তু আমরা জানি আমরা আমাদের দিনে যে কাউকেই হারাতে পারি। আর সে দিন গুলো এখন আর আগের মত দীর্ঘ বিরতি দিয়ে আসে না। নিজের মাঠে জ্বলে উঠুক তামিম সাকিবরা। আমরা যাবোই কোয়ার্টারে।
গর্জে উঠো বাংলাদেশ !!! গুড লাক টাইগার্স !!!!
ম্যাচ উইনার হিসেবে আশরাফুল "ঠিকাছে" কিন্তু পাওয়ার প্লে চিন্তা করলে আমার ধারনা অলক "বেটার চয়েজ।" অলক ম্যাচ খেলেনি এ কথা সত্য, তেমনি সত্য হচ্ছে আশরাফুল ম্যাচ খেলে "মুষক" প্রসব করেছে। এটার বরং টস করে চয়েজ করাই ভালো ছিল, অলক আর আশরাফুল।
মর্তুজা না থাকায় ভালো খারাপ দুটো দিকই আছে। আমরা ধারনা মর্তুজা থাকলে টিমে গ্যাঞ্জাম লাগতো এবং তামিম সাকিব তাদের সেরাটা দিতে ব্যর্থ হত। সব মিলে এটা আসলে সিলেক্টর আর বিসিবি ব্যর্থতা, তাদের "মর্তুজা কেস" আরও "স্ট্যাটেজিক্যালি ডিল" করতে হত। তবে এই মুহুর্তে আমি চাই না, সে টিমে আসুক আবার।
তামিম প্রথমে আউট হয়ে গেলে বাংলাদেশের ম্যাচ জেতা কঠিন হয়ে যাবে, কারন আমার হিসেবে তামিম স্কোর না করে আউট হলে গেলে জুনায়েদ/ইমরুল এবং রকিবুল খুব তাড়াতাড়ি আউট হয়ে যাবে। রকিবুল মাঠে সেট হতে বেশ খানিকক্ষন সময় নেয় এবং প্রথম চার-পাঁচ ওভার সে খুব ডিস্টার্বড থাকে মনে হয়েছে। সেক্ষেত্রে সাকিব আর মুশফিক ভরসা। এই দুজনের একজন বাংলাদেশের স্কোর ৭০ এর নীচে আউট হয়ে গেলে আমরা সেদিন ১৫০ করতে পারব না।
রুবেল কে নিয়ে সমস্যা আছে। রানের সিডর বয়ায় দিতে পারে। এর সংগে যদি রাজ্জাক/সাকিব/শফিউলের একজন কোন একদিন বলের রিদম মিস করে বসে, খবর আছে সেদিন।
রিয়াদের ব্যাটিং ট্যাক্টিসে সমস্যা আছে। ব্যাট আর পায়ের মাঝখান দিয়ে পাঁচ নম্বর ফুটবল চলে যেতে পারে, আর তো ক্রিকেট। নাঈমের ফিল্ডিংটা ভালো, বলও করতে পারে, আমার কাছে বরং নাঈম-শুভ বেটার অপশন।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ভাল লিখসেন ভাই। লাইক দিলাম :boss: :boss:
ফয়েজ ভাই, প্রথমত অলকের ব্যাপার নিয়ে একটা মজার ঘটনা বলি। ২০০৫ সালের দিকে কোন খেলা হবে। অলকের খুবই খারাপ সময় চলছে। আমি মাঠে খেলা দেখতে গেছি। অলক ব্যাটিং এ নামছে। আমি "সাবাশ অলক , দেখায়া দে" বলতেই আশেপাশের কিছু লোক সন্দেহাতুর চোখে আমার দিকে তাকালো। একজন এসে আমাকে জিজ্ঞেসই করে বসলো, ভাই অলক কি আপনার ভাই?? এ প্রশ্নে আমি মাথা নেড়ে না বলে এমন অদ্ভুত প্রশ্নের কারণ জানতে চাইলে সে বললো , এখন কেউ অলককে দেখতে পারে না আর আপনি ওর পক্ষ নিয়ে লাফাচ্ছাএন আবার আপনার চেহারা শরীরের গড়ন অলকের সাথে মিল আছে। তাই মনে হলো হয়তো বা আপনি ওর ভাই। সেদিন সেই লোকের কথার কোন জবাব দিতে পারিনি। কিন্তু এ কথা সত্যি আমি অলকের খুব বড় ফ্যান ছিলাম। কিন্তু অলকের ক্রমাগত ব্যর্থতা থেকে আক্ষেপ নিয়েই এই কথাগুলো লেখা। আপনি গত পাঁচ বছরে অলকের ক্যারিয়ার ঘাটলে একটা ফিফটি কেনিয়ার সাথে আড় একটা শতরান ভারতের সাথে ছাড়া আর কিছু পাবেন না। তার সাথে যোগ করুন আইসিএল বিতর্ক আর তারো পরে দলে ডাক পাওয়ার পর তার বিভিন্ন অজুহাতে ক্রমাগত অনুপস্থিতি। হয়তো অলককে নিলে বেটার চয়েজ হতো কিন্তু তার জন্য অলককে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে তৈরি করতে হতো। যেই পথে নির্বাচকরা হাঁটেননি। এতদিন তাকে উপেক্ষা করে এখন তার জন্য দরদ উথলে উঠাটা আমার কাছে হাস্যকর মনে হয়। আমি বলবো এরপরেও অলকের চেয়ে এ্যাশ বেটার চয়েজ। যদিও প্রস্তুতি ম্যাচটা সে খারাপ খেললো কিন্তু এক ম্যাচ ব্যর্থ হলেই সব শেষ হয়ে যায় না। সিডন্স কেন আগের ম্যাচে কানাডার সাথে এই পরীক্ষাটা করলেন না?? এখন ব্যর্থ হলো, এখন পরের এক্সপেরিমেন্ট ওয়ার্ল্ডকাপে করতে হবে। কেন ১৫ জনের দলের ১৪ জন প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলবেন আড় একজন বসে থাকবেন বাকিদের ব্যর্থ হবার জন্য। আবার প্রথম ম্যাচ এমন হলো ব্যর্থ হবার কোন সুযোগ ছিলো না জুনায়েদের। তারপরেও নাফিস কেনো সুযোগ পেলেন না?? এই বেটা সিডন্সকে আমার কাছে ধান্ধাবাজ মনে হয়। ব্যাটা কানাডার সাথে খেলে জয়ের জন্য আর পাকিস্তানের সাথে করে প্র্যাকটিস ..অথচ উল্টোটাই বেশি যুক্তিযুক্ত।
মর্তুজার ব্যাপার আমি এড়িয়ে গেছি। কারণ এ নিয়ে নোংরামি চলছে সব জায়গায়। বাঙালি আড় কিছু না করতে পারলেও কনসপিরেসি তত্ত্ব খাড়া করতে খুব ওস্তাদ। এ ব্যাপারে আমার কোন মন্তব্য নেই। যে ১৫ জন আছে তাদের নিয়ে দল সাজাতে হবে।
ওপেনিং এবং টপ অর্ডার তামিমের উপর বেশি নির্ভর। ইমরুল সলিডিটি দেয় কিন্তু সে তার কাজ ৩০ এর ঘরে পৌছে আরেকজনের কাঁধে দিয়ে ফেরত আসে। তামিম ব্যর্থ হলে জুনায়েদ কিছু মোমেন্টাম দিতে পারে কিন্তু সেটা ক্যারি করতে পারে না। এই জায়গায় নাফিস বাকি দুজনের চেয়ে এগিয়ে অথচ নাফিস উপেক্ষিত থেকে গেলেন প্রস্তুতি ম্যাচে। ছোটদলের সাথে ভালো করেন এমন তকমা যখন আছে আয়ারল্যান্ড বা হল্যান্ডের সাথে তাকে খেলানো যেতেই পারে। এই দুটো দলের কাছে অঘটন ঘটলে ব্যাপারটা খুব সুখকর হবে না।
রুবেল ইনজুরি থেকে উঠে আসছে। সে রিদমে ফিরতে সময় নিবে। কিন্তু এর সাথে সাথেই আমরা মাশরাফি আক্ষেপে ফিরে গেলে সেটা দলের জন্য খারাপ বই ভালো হবে না। রাজ্জাক রিদম মিস করছে প্র্যাকটিস ম্যাচগুলাতে। যেটা দলের জন্য বড় ভয়ের কারণ। রাজ্জাক নির্ভরতার নাম।সে মার খাওয়া শুরু করলে ম্যাচ হাতছাড়া হবার চান্স বেড়ে যায়। শুভকামনা ছাড়া আড় কিছু বলার নেই।
এবার অলরাউন্ডার প্রসঙ্গ। রিয়াদের টেকনিকে সমস্যা থাকলেও ওকে খেলাতে আমার আপত্তি নেই যেহেতু তার ব্যাটিং নাঈম শুভর চেয়ে পরীক্ষিত। নাঈম বল খারাপ করছে না। আমার কাছে যেটা দৃষ্টি কটু লেগেছে শুভর অন্তর্ভুক্তি। নিউজিল্যান্ড ট্যুরে তিন ম্যাচ ভালো বোলিং করে যদি বিশ্বকাপের পার্মানেন্ট বোলার তকমা নিয়ে খেলে সেটা খুবই দুঃখজনক। ওর বোলিং আমার কাছে খুবই নির্বিষ মনে হয়েছে অন্তত স্পিন ভালো খেলে এমন দলের বিরুদ্ধে। আমি রিয়াদ নাইম এর পক্ষে যাবো। এই জায়গায়ও সিডন্সের চরম পক্ষপাত দুষ্ট মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়।
গর্জে উঠো বাংলাদেশ !!! গুড লাক টাইগার্স !!!!
রেজওয়ান ভাইয়ের সাথে সহমত 😛
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
=)) =))
আমিও সহমত পোষণ করে গেলাম
সবার স হমতের সাথে সহমত =))
রিয়াদ, নাঈম আর শুভ কে নিয়ে বলব , বিপক্ষ দলে বাহাতি ব্যাটসম্যান বেশি থাকলে রিয়াদ-নাঈম আর ডানহাতি ব্যাটসম্যান বেশি থাকলে রিয়াদ-শুভ খেলার সম্ভাবনা বেশি।
আর শুভর ব্যাটিং এমনিতে ভালো ,তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এ এখনো জলে উঠতে পারেনি। আমি বরং শুভর মাঝে আরেকজন সাকিবকে অপেক্ষায় আছি। কারণ শুভর লীগ রেকর্ড যথেষ্ট ভালো। ব্যাটিং পজিসনটাও তার খারাপ করার অন্যতম কারণ।
আর ব্যক্তিগত ভাবে আমি আশরাফুলকে তিনেই বেশি পছন্দ করতাম। তাহলে সে বোধ হই আরো ৪ বছর তার অদ্ভুত ব্যাটিং এ জালিয়ে মারত ।
😕 😕
ব্যাটিং এ শুভ'র লীগ রেকর্ড বেশ ভাল, আবাহনীকে ভাল সার্ভিস দিয়েছিল। সে কারনে ওকে নিয়ে আমি বেশ আশাবাদি ছিলাম, কিন্তু টিভি প্রথম ওর ব্যাটিং দেখে রীতিমত শকড হয়েছিলাম, এরকম টেকনিক নিয়ে কিভাবে লীগে এত রান পেত!!! সেসময় এক সাথে খেলা দেখতে থাকা এক বন্ধু বলেছিল এটাই আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের স্টান্ডার্ড নির্দেশ করে। খালেদ মাহমুদ যেমন তার ক্যারিয়ারের শেষের দিকেও ঘরোয়া ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট নেয়া পেসার হয়েছিল 🙁
শুভ নতুন সাকিব হয়ে ওঠাটা মনে হয় একটু বেশি চাওয়া হয়ে যায়, তবে আমি আশাবাদী এশিয়ান গেমস ফাইনালের হিরো সাব্বিরকে নিয়ে।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ভাইয়া আমি আসলে আশাবাদী হয়েছি শুভর অনূর্ধ-১৯ এর পারফরমেন্সে। ও পরে নেমেও ভালো ব্যাট করেছিল। বোলিং ও ভালো ছিল।
আর সাকিবের একটা ঘটনা শেয়ার করি। অনেকেই হয়ত জেনে থাকতে পারেন। উপরের কথাগুলোর সাথে কোনো মিল নেই। এমনি মনে পড়াতে............
সাকিবের তখন অনেক নামডাক। কিন্তু আশরাফুলের সাকিব দর্শন তখনও বাকি ছিল। প্রথম যেই ম্যাচে সাকিবের ব্যাটিং দেখলেন, সেই ম্যাচে সাকিব ৪ বলে ০ করেছিল। এর মধ্যে ছিল ৩ টি লাইফ।
রায়েদ, আকাশ উপরে বলে দিয়েছে আমি আবারো বলি, তোমার দল গঠনে বিপক্ষ স্টাডি তত্ত্ব আমার মনে ধরছে। একই কাজ জুনায়েদ নাফিস এর বেলায় করা যায়।
এবার শুভর ব্যাপারে বলি। আন্ডার নাইণটিনে ওর খেলার নামডাক শুনে আমিও ওকে আরেকজন সাকিব ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু তার ব্যাটিং এ টেকনিক্যাল সমস্যা আছে আড় আছে দৃঢ়চেতা মনোভাবের অভাব। ব্যাটিং অর্ডার বুঝলাম। তাই বলে ব্যাটে বল লাগাতে পারবে না। এই জায়গায় রফিকের মতো মিনি স্লগার অলরাউন্ডারকে আমরা মিস করবো। শুভকে অনেক উন্নতি করতে হবে। সাকিবের বোলিং আগে নির্বিষ হলেও ব্যাটিং টা মোটামুটি ভালৈ ছিলো। শুভর মাজএ সেইরকম কিছু এখনও দেখি না। অপেক্ষাই শুধু করতে পারি সেই সাথে আশা। তবে আপাতত শুভ না এইটা আমার মত।
নির্বাচকরা ভাল কাজই করেছে বলা যায়, তবে মাশরাফির ব্যাপারটা আরো ম্যাচিউরড ভাবে করা যেত। তবে আমি মাশরাফিকে টিমে না রাখার ব্যাপারে আমি একমত, ম্যাচ ফিটনেস ছাড়া কাউকে টিমে রাখা, বিশেষত পেস বোলারকে টিমে রাখা ঝুকুপূর্ণ হয়ে যেত। তবে এ নিয়ে মাত্রাতিরক্ত নাটক করা হয়েছে মিডিয়ায়, বিশেষ করে সিডন্স ১৫ জনের বাইরে কাউকে নিয়ে ভাবছে না এ কমেন্টের পরে কেউ কেউ তাকে ভিলেন বানানোর চেষ্টা করেছিল, যদিও আমার মনে হয় সে ১০০% ঠিক কথাই বলেছে।
টিম নিয়ে তোর সাথে প্রায় পুরোপুরি একমত। দু তিনটা পয়েন্ট আলাদা ভাবে বলছি।
তামিমের উপরে আমাদের নির্ভরশীলতা একটু বেশিই, বড় চারটা ম্যাচে যেকোন দুটোতে ওর বড় ইনিংস খেলা জরুরী। ইমরুল কায়েসের উপর আমার ভরসা একটু বেশি, তবে ওকে ঠিক ম্যাচ উইনার বলা যায় না।
তিন নম্বর আসলেই চিন্তার বিষয়, জুনায়েদ/নাফিস যে কাউকে খেলানো যেতে পারে, তবে শুরুর দিকের ম্যাচ গুলোতে মনে হয় জুনায়েদই খেলবে, ইদানিং ওকে দিয়ে নেটে সিম আপ বোলিং করানো হচ্ছে, পেস অলরাউন্ডার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। তবে আমি সবসময় নাফিসের বিরুদ্ধে কথা বলে আসলেও আমি নাফিসকে খেলানোর পক্ষপাতী, কারন কোন ম্যাচে ক্লিক করে গেলে নাফিস ম্যাচ বের করে নিয়ে আসতে পারবে।
চার, পাঁচ মুশফিক সাকিব দারুন। তবে আগের থিউরিতে রাকিবুলকে খেলালে ওকে সেট হবার জন্য সময় দিতে হবে, আর সেট হয়ে যেতে পারলে ও পাওয়ার প্লেতে যেকার থেকে ভাল করতে পারবে।সেক্ষেত্রে আশরাফুলের জায়গা হবে না। আর ছয়ে আশরাফুল কতটুকু সফল হতে পারবে সন্দেহ আছে, তবে মনে প্রাণে চাইছি এই ওয়ার্ল্ড কাপের মাধ্যমে আশরাফুল ফিরে আসুক।
রিয়াদ, নাইমের মধ্যে বাছাই করা ডিফিকাল্ট, আমার মতে শুভকে বাদ দিয়ে এ দুজনকেই একসাথে খেলান উচিত। শুভকে আমি কোন ভাবেই অলরাউন্ডার বলবো না, ওর ব্যাটিং কোন লেভেলেই আসে না, ওর থেকে রাজ্জাক বেটার ব্যাটসম্যান।
পেসার হিসেবে শফিউর ঠিক আছে, তবে রুবেল যেকোন দিনে নায়ক বা ভিলেন হয়ে যেতে পারে।
তবে গ্রুপ পর্বে ছয়টা ম্যাচ খেলতে হবে, তাই পারফর্মেন্স আর প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা/দূর্বলতার উপর ভিত্তি করে প্রথম একাদশ নির্বাচন করতে হবে, আর টিম ম্যানেজমেন্টের এই কাজ মাঠের খেলোয়াড়দের পারফর্মেন্সের সমান গুরুত্বপূর্ণ।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
তোর সব কথায় একমত। বিশেষ করে শেষের প্যারায় পাঁচতারা।
আজকাল কি হইলো, তুই আর আমি অনেক কিছুতেই একমত হচ্ছি 😛 :)) 😛
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
তিন নম্বর জায়গাটা আসলেই সবচে নড়বড়ে,যাই হোক
🙂
অপেক্ষা করছি এবার বাংলাদেশের সব ক্রিকেট খেলা দেখবো।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
হুমম। ইসস । আমিও যদি দেখতে পারতাম।
কুনখানে কুনজায়গায় খেলা দেখা যাবে একসাথে করে একটা পোষ্ট দিয়েন, আমিন সাহেব।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
কুনো চিন্তা নাই রাব্বী ভাই। বাংলাদেশের সব খেলার দিন লাইভ ব্লগিং হবে। সেইখানে আমরা যে লিংক থেকে দেখি তা তুলে দিবো সকল প্রবাসী দর্শকদের জন্য। 🙂
দোস্ত ক্রিকটাইম ডট কম ট্রাই করে দেখতে পারিস।