ঘটনার সুত্রপাত ২৭ শে মে ২০১৫।
এক আড্ডায় হঠাৎ করেই উঠে এলো সদ্য আত্মহত্যা করা এক তরুনের প্রসঙ্গ।
কেউ কেউ নানা যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছিল, কেন তা আত্মহত্যা না ও হতে পারে। আবার অন্যান্য সোর্স থেকেও এমন সব খবর পাওয়া যাচ্ছিল যা তার একটা “মৃত্যুকে মহিমান্বিত কর” অবস্থানেরই বর্ননা দেয়। একই সাথে এটাও জানা যাচ্ছিলো যে মৃত্যু যে জটিলতার একটা সমাধান, এরকম কথাও তরুনটিকে কেউ কেউ বলতে শুনেছে।
এগুলো শুনে, আমি আমার জানাশোনা সার্কেলের অন্তত তিনজনের কথা স্মরন না করে থাকতে পারলাম না।
তাঁদের প্রত্যেকের সাথেই এই তরুনটির ভাবনা চিন্তায় দারুন মিল রয়েছে।
কিন্তু কেবলই ভাবনা চিন্তার মিল আর মৃত্যুকে সমাধান ভাবলে কি আর কাউকে “সুইসাইডাল” ভাবা যায়?
না, যায় না।
তাই তরুনটির অবস্থান জানারাও যেমন তাঁকে নিয়ে সিরিয়াস কোন পদক্ষেপ নেবার কথা ভাবে নাই, আমিও তেমনই আমার চেনা ঐ মানুষগুলোকে নিয়ে কোন কিছু করার কথা ভাবি নাই।
আর এই সুযোগটাকে ঢাল করে সবার চোখে স্বাভাবিকতার ধুলো দিয়ে বিভিন্ন সময়ে তারা এটেম্পট করে করে অবশেষে একে একে মরতে সফল হন সবাই। এই তরুনের মতই হারিয়ে যান এই অনিন্দ্য সুন্দর পৃথিবী থেকে।
আড্ডায় এসব আলোচনা যখন চলছে, হঠাৎই আবিষ্কার করি যে খুব প্রিয় এক ছোটভাই মামুন (আসল নাম না) কেন যেন ঐ তরুনের পক্ষ নিয়ে যুক্তি প্রদর্শন করা শুরু করলো যে, সমাধান খোজার পদ্ধতি হিসাবে কেন একজন মানুষের জীবনাবসানের অধিকারটাকে স্বাভাবিক হিসাবে দেখা উচিৎ? যদিও সে তার অবস্থানটাকে এক অর্থে দার্শনিক পয়েন্ট অব ভিউ বলে দাবী করেছে এবং নিজেকে “সুইসাইডাল না” হিসাবে বর্ননা করেছে, তবুও এক পর্যায়ে তার কথার ভিতরে “যদি কোন দিন শোনেন, আই এম নো মোর দেয়ার, ডোন্ট বি সারপ্রাইজড” জাতীয় কথাবার্তার উল্লেখ দেখে খানিকটা বিচলিত না হয়ে পারি নাই।
বাসার ফেরার পর এটা আরও বাড়লো।
আগের ঐ তিন কেইস নিয়েও ভাবলাম। আমার কি কিছু করার ছিল, ঘটনাগুলো ঘটতে বাঁধা দিতে?
প্রথমতঃ যে জিনিষটা আমাকে বিষন্ন করলো, তা হলো এই যে আমি আসলে কখনোই কিছু করি নাই।
তবে এটাও ঠিক, যেটুকু যোগসুত্র তারা বেঁচে থাকতে পেয়েছি, তা আসলে কিছু করার বা বলার জন্য যথেষ্টও ছিল না।
একজনের ক্ষেত্রে হয়তো তা সামান্য বেশী ছিল, কিন্তু কি এক অজ্ঞাত কারনে তিনি হঠাৎ এমনভাবে দূরে সরে গেলেন এবং সরেই থাকলেন যে আর কখনো তার সম্পর্কে বেশী কিছু জানা হলো না।
যেদিন জানলাম, সেদিন সব জানাজানির উর্ধে উঠে গিয়েছেন তিনি।
মাঝেমাঝে মনের ভিতর আমি তাঁদের মুখোমুখি হই। তখন খারাপই লাগে, যতসামান্যই হোক, ইংগিত যা পেয়েছিলাম, তা নিয়ে যে কিছু করি নাই সে কথা ভেবে এক ধরনের মনকষ্টও হয়। যদিও জানি, কিছু করতে চাইলেও যে তাঁদের ফেরানো যেতো বা আটকানো যেতো – তা কিন্তু না। আমার মনে হয় বেশিরভাগ সুইসাইডাল মানুষই তাঁদের ঐ আত্মধ্বংসি প্রবনতাটাকে একটা এচিভমেন্ট মনে করেন। আর তা অর্জনে এতটাই সতর্কতা অবলম্বন করেন যে আমার মতো এই বিষয়ে নাদানের পক্ষে তাঁদের সেই অবস্থানের ধারেকাছে পৌছে তাঁদের সাহায্য করতে চাওয়াটা আসলেই এক ধরনের অসম্ভব প্রচেষ্টাই।
সাম্প্রতিক আরেকটা অভিজ্ঞতা এটার জাজ্বল্যমান উদাহরন।
আগে দুবার অসফল এটেম্পট করা একজনের সাথে আলাপ হলো কিছুদিন আগে। আমি তাঁকে জীবনের যাবতিয় সুখকর বিষয়গুলোতে অনুপ্রানিত করে যাচ্ছিলাম। সেও সেগুলো উচ্ছাসের সাথে এনডোর্স করে যাচ্ছিল একে একে। হঠাৎ কি হলো, জানি না – একদিন দেখলাম সে আমাকে যাবতিয় যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে কোন রকমের ভূমিকা ও ব্যাখ্যা ছাড়াই।
শুধু তাই না, বন্ধু মহলে আমার সম্পর্কে এমনই এক ধোঁয়াশাও তৈরী করেছে, যা অতিক্রমের কোন চেষ্টাকে সীমা লংঘনের সমতূল্যই জ্ঞান করা যায়।
আর সবচেয়ে যেটা দুঃখজনক, তা হলো, একটা সময় অসমর্থিত সুত্রে জানতে পারলাম, যে আমার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা শুরুর সপ্তাহখানেকের মধ্যে নাকি সে আরেকখানা অসফল আত্মহত্যা প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে গেছে।
এতসব জীবন-পলাতক ঘটনার মোকাবেলা করতে কাহাঁতক আর ভাল লাগে?
তাই মামুনের ঐ ডেথ-গ্লোরিফাইং (মৃত্যু-মহিমান্বিতকর) অবস্থানটা জানার পর, এ নিয়ে আরও কিছুটা এক্সপ্লোর করা উচিৎ বলেই ঠিক করলাম।
আমি জানি এতে ওর অবস্থান হয়তো বদলাবে না। একদিন হয়তো ও ওর লক্ষার্জনে ঠিকই সফল হবে। তবুও এই “কিছু একটা” করার এই মটিভেশন থেকে যে, আমি যেন এই সান্তনা নিতে পারি, “একটা কিছু তো করেছিলাম” অথবা এ জন্য তা যদি “খানিকটা হলেও পিছায়, সেটাই বা মন্দ কি?”
কিন্তু কি করবো? কি করার আছে আমার?
হঠাৎ আশার আলো হয়ে মনে উদয় হলো একটি নাম। ধরা যার তার নাম “আশা”। আশার আলো হয়ে যে এসেছে তার নাম তো আশাই হওয়া উচিৎ, তাই না?
আশাকে বেশ কয়েক দিন দেখেছি মামুনের সাথে দীর্ঘ্য আড্ডায়। দুজনই অসাধারন ট্যালেন্টেড, গুনি। ওদের আড্ডা যে জমজমাট হবে এ আর এমন অবাক করা কি কথা? আবার সৌভাগ্যক্রমে, আশা হলো একজন প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত কাউনসেলর।
আমি আশাকে মেইল করলাম। করে মামুনের মৃত্যু-মহিমান্বিতকর হোক বা মৃত্যুর প্রতি পক্ষপাত থাকা জনিত হোক – অবস্থানতা জানালাম। বললাম, তার জানা মনঃবিজ্ঞানিক টেকনিকগুলো ব্যবহার করে সে যেন এটা নিশ্চিত হয় যে মামুনের কোন সাহায্যের দরকার আছে কি না? আফটার অল, আশারও একজন ভাল বন্ধু যেহেতু, এটুকু তো তার কাছ থেকে আশা করাই যায়, তাই না?
বলে রাখা ভাল যে আশা ছাড়া আর কোন কাকপক্ষিও কিন্তু জানে না, আমার এই পদক্ষেপের কথা।
অথচ গতকাল কি যে হলো, মামুন হঠাতই আমাকে থামালো ক্লাব থেকে বেরুনোর আগে। বললো “আপনার সাথে কথা আছে……”
আমি অবশ্য আগেই লক্ষ করেছি, দীর্ঘ্যক্ষন ধরে মামুন আর আশা কথা বলছিল। তা দেখে আমিও আশায় বুক বাধলাম, হয়তো আশা আমার মেইলটা সিরিয়াসলি নিয়ে থাকবে। হয়তো তারা কিছুটা প্রোগ্রেসও করে থাকবে।
আশা চলে যাবার পর মামুনের থামানোটাকে তাই আমি ইতিবাচক বলেই ভাবলাম। কিন্তু একি শুনি আজ মন্থরার মুখে?!?!
– ভাই আপনার সাথে সেদিন যে আলাপটা হয়েছিল, তা আসলে একটা দার্শনিক পর্যায়ের আলোচনা। আপনার উচিৎ হয় নাই ওটাকে আমার জন্য সিরিয়াস ভাবে নেয়ার।
– আমি নিয়েছি নাকি? কে বললো?
– সেটা আপনিই ভাল জানেন। আমি যদি কামুর রেফারেন্সে বলি……
– বলো, শুনি। আমার সামান্য কিছু কামু পড়া আছে।
– কামু পড়া আছে? কি পড়েছেন কামুর?
– এই মুহুর্তে তো নাম মনে করতে পারছি না। তবে খান দুই নাটক পড়েছি, এবং তা বেশ আগে। আপাততঃ সেটাই মনে আছে। নাটকের নাম মনে পড়লে বলবো। তা তুমি কামুর বিষয়ে কি বলতে চাচ্ছো যেন? বলো, শুনি।
– ভাই, এই তো বিরাট ভুল করে ফেললেন। কামুর সম্পর্কে তো আপনি কিছুই জানেন না। কামুর কিছুই পড়েন নাই। তাহলে, বলে আর কি লাভ? কারন আপনি বললেন, আপনি কামুর নাটক পড়েছেন। কিন্তু কামু কোন নাটকই লিখেন নাই। তার মানে আপনি না জেনে কথা বলছেন। আমার সম্পর্কেও যা যা ভেবেছেন, সে সবও আসলে না জেনেই ভেবেছেন। কি, ঠিক বলছি না?
– নাটকের নাম এই মুহুর্তে মনে নাই ঠিক, তবে এর মানে এই না যে, কামু কোন নাটক লিখেন নাই। কামুর লিখা নাটক অবশ্যই আছে। আমি পরে তোমাকে জানাচ্ছি। কামুকে নিয়ে আলাপ করার জন্য নিশ্চয়ই থামাও নাই আমাকে। তাই ঐ প্রসঙ্গটা আপাততঃ থাক। আমাকে থামালে কেন? তোমার আসল কথাটা কি, সেইটা বরং শুনি?
– হুম, বলছি। এই যে কত লোক ট্যাক্স ফাঁকি দেয়, আপনার বন্ধু বান্ধব চেনা পরিচিতদের মধ্যেও অনেকে আছে, তাই না? তাঁদের নিয়ে আপনার ইথিকাল স্ট্যান্ড-পয়েন্টটা কি, বলবেন?
– কেউ তো আর ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে জনে জনে বলে বেড়ায় না। তবে কখনো জানতে পারলে তাঁদের বুঝিয়ে বলার চেষ্টা নিশ্চয়ই করি যে এটা করাটা তাঁদের উচিৎ না।
– ও শুধু বলেন? কিছু করেন তো আর না। তাই না?
– ভালই বলেছো। জানো না এটা বাংলাদেশ। ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া নিয়ে আমার কথা কেউ শুনবে, এমনটা মনে হবার কোন কারন আছে কি?
– আচ্ছা এবার বলেন, যদি শোনেন কেউ চুরি করছে, পরকীয়া করছে, তাঁদের সম্পর্কে আপনার ইথিকাল স্ট্যান্ড পয়েন্ট কি?
– চুরিটা যদি প্রান বাচানোর জন্য না হয়, সেটা অবশ্যই তাতক্ষনিক ভাবেই বিচারের আওতায় আনতে হবে। আর প্রান বাচানোর জন্যে হয়ে থাকলে, আগে সেটার মানে প্রান বাচানোর সুযোগটা দিতে হবে। তার পরে তো আইনের আওতা, তাই না? যে প্রানেই বাচলো না, তার জন্য আর আইন কি? আর বিচার কি?
পরকীয়ার ব্যাপারে আমি আবার তসলিমা নাসরিনের সংজ্ঞার অনুসারি। উনি বলেছেন “প্রেম তো প্রেমই, তার আবার স্বকীয়া কি? আর পরকীয়া কি?” এটার অর্থ হলো, দুজন মানুষ নিজেদের সকল লিমিটেশন জেনেও যদি নিজেদেরকে প্রেমিক-প্রেমিকা হিসাবে মেনে নেয়, তুমি আমি থার্ড বা ফোর্থ পার্টি হিসাবে সেখানে ঢুকে কি আর বলার অধিকার রাখি, বলো?
তবে হ্যাঁ, ঐ সো-কল্ড “পরকীয়ার” (তসলিমার মত আমিও যাকে জাস্ট এনাদার লাভই মনে করি) থার্ড পার্টি অর্থাৎ পুরুষটির স্ত্রী বা নারীটির স্বামির অধিকার আছে স্ব স্ব কাউন্টার পার্টের সাথে এটা সর্ট-আউট করার যে তার দুর্দমনিয় ভালবাসা উপেক্ষা করে কেন সে অন্যে আসক্ত হলো? একই ভাবে তাঁদের ও জবাব দেয়ার অধিকার আছে, কেন তারা স্ত্রী বা স্বামী হয়েও এক বিছানা ভাগাভাগি করেও দীর্ঘ্য সময় একত্রে কাটিয়েও নিজেদের জন্য বিকল্প খুজেছেন? বা খুজতে বাধ্য হয়েছেন?
আমি সর্ট আউট করার কথা বলেছি, মারামারি নয়। আর সর্ট আউট করা মানে কিন্তু নতুন করে ঘটা প্রেমকে ইচ্ছামত নামে ডাকার লাইসেন্সও না।
– তারমানে আপনার কাছে পরকীয়া কোন সিরিয়াস ইস্যু না? কোথাও পরকীয়া হচ্ছে জানলে আপনি তার বিরুদ্ধাচারন, বিরোধিতা করবেন না?
– একটি প্রেমের দর্শক হলো আমার হিসাবে ফোর্থ পার্টি। পরকীয়া হোক বা স্বকীয়া, সেটাকে আমি যতক্ষন প্রেম হিসাবেই দেখছি, ফোর্থ পার্টি হিসাবে আমার সেখানে কোন অবস্থান নেয়ার সুযোগ আসলেই কি আছে? আমার তো মনে হয় না। আর হ্যাঁ, আগে বলা ঐ থার্ড পার্টির কাছে যেটা পরকীয়া, তাতে অংশগ্রহনকারীদের কাছে তা কি স্বকীয়া না? ভেবে বল তো।
– আচ্ছা, অনেক ধরনের সাধারন ভাবে আন-ইথিকাল হিসাবে গন্য বিষয়াবলির ব্যাপারে আপনার ইথিকাল স্ট্যান্ড-পয়েন্ট জানলাম। এবার আসল প্রসঙ্গে আসি। ধরেন আপনি যখন জানলেন, কারো একজনের মধ্যে আপনার মনে হচ্ছে যে আত্মহত্যা-প্রবনতা আছে, আপনি কি তা জনে জনে বলে বেড়াবেন?
– না কখনোই তা বলে বেড়াব না। এটা বলে বেড়ানর তো কোন প্রশ্নই ওঠে না। এটা কি বলে বেড়ানোর মত কোন গর্বের বিষয়?
আমি বুঝলাম, আজই হয়তো আশা মামুনকে আমার আমার জানানো সেই আশংকার কথাটা জানিয়েছে। আমি দেখলাম সে যে পরিমানে রেগে আছে, সেটা অল্প আগে পাওয়া শক জনিত হওয়াই যুক্তিযুক্ত। রাগের কারনে কামুকে কে নিয়ে ঐ ভুল অবস্থানটা সে নিয়েছে। সেটা ভুল না ঠিক, তা বিচারের বুদ্ধি হারিয়েই। ঐ যে বলে না, “রেগে গেলে, তো হেরে গেলে” – মামুনের এখন সেই অবস্থা। আমি ঠিক করলাম, এখনই ওকে একটা ধাক্কা দিয়ে হারার সেই চুড়ান্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে।
সমস্যা হলো, আশা ওকে কিভাবে কতটা বলেছে, সেটা তো আর আমি এখনই জানতে পারছি না।
আমি দ্রুত ভাবছি। দুটো এক্সট্রিম পরিস্থিতি ইভালুয়েট করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
হতে পারে আশা আমার কথা ধর্তব্যে নিয়ে খুবই প্রফেশনালি ঘটনাটা হ্যান্ডেল করেছে। তার মানে হচ্ছে, নিজে থেকেই একটা পরিস্থিতির বর্ননা করে মামুনকে তাতে ঢুকিয়ে ওর ভিতরে থাকা সেই মৃত্যু-মহিমান্বিতকর অবস্থানটা জেনে নিয়েছে। কিন্তু গুনি ছেলে, হয়ত বুঝতে পেরেছে, আশার এই আগ্রহে আমার কোন একটা সংশ্রাব যে থাকতেও পারে, তা সে অনুমান করে নিয়েছে। তাই কামু, ট্যাক্স, চুরি, পরকীয়া এসব বলে ডেস্ট্রাক্ট করে জানতে চাইছে আমার কোন ভুমিকা নেই তো আশার এই জানতে চাওয়ায়?
আবার এটাও হতে পারে যে আশা আমার কথা ধর্তব্যে নেয় নাই। তার কাছে স্বাভাবিক পর্যবেক্ষনে মামুনকে মোটেও সেরকম কিছু মনে হয় নাই, যা আমি ভেবেছি। বরং সে আমাকেই অযাচিত হস্তক্ষেপকারী ভেবে মামুনকে এমনভাবে উত্তেজিত করেছে যে মামুন যেন আমার কাছে এরকম রিমোট পসিবিলিটির একটা বিষয় পাবলিক করার ব্যাপারে ব্যাখ্যা চায়।
আমার কাছে আসল ঘটনাটা দ্বিতীয় পরিস্থিতিটার কাছাকাছি কিছু একটা বলেই মনে হলো। আর সাথে সাথে এও অনুমান করলাম, যে আশা সেরকম কিছু বলে থাকলে সে নিশ্চয়ই পই পই করে বলে থাকবে, “সে যে এটা মামুনকে জানিয়েছে – মামুন যেন তা কোনক্রমেই প্রকাশ না করে”।
মামুন আশার কথা বলবে না, এটাকেই বাজীর ঘোড়া ধরে নিয়ে মাঠে নামলাম। আর আশা ছাড়া আর কেউ যে এটা জানে না, তাতো আমার চেয়ে ভাল আর কেউ জানে না। তাই বললাম,
– দেখো মামুন, জনে জনে বলে বেড়ানো তো দূর কি বাত, আজ পর্যন্ত কোন কাকপক্ষিও জানে না, সেদিন সুইসাইড বিষয়ে কি কি আলাপ হয়েছিল তোমার আমার মধ্যে। তাছাড়া আমি একজন ভাল রকমের সিক্রেট কীপার। তোমার সব কথাই আমার কাছে এক্কেবার নিরাপদ। তুমি যদি কারো কাছে কিছু শুনে থাকো, তো বলে ফেল? এক্ষুনি ফোন করে বের করি সে কোথা থেকে কি ভাবে তা জেনেছে? আমি আদৌ তাঁকে কিছু বলেছি কি না?
বাজীটা কাজে দিল। “আশার কাছে শুনেছি” – এটা কোন ভাবেই সে বলতে পারলো না। “আশার কঠোর নিষেধ যে ওর নামোল্লেখ করা যাবে না” – এই অনুমানটা তাহলে ঠিকই আছে, বোঝা যাচ্ছে। যেই যুদ্ধংদেহীরূপে শার্দুলিয় অবস্থান থেকে আমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সে, আর সাথে সাথে ইথিক্সের জ্ঞান কপচাচ্ছিল, দার্শনিক অবস্থান জানাচ্ছিল, বুঝলাম, আশার এক নিষেধাজ্ঞার গুনে তা থেকে মামুনকে মার্জারের অবস্থানে নিয়ে গেল। বললো,
– যদি কাউকে না বলে থাকেন, তাহলে তো খুব ভাল কথা। তবে আশা করছি কখনো শুধু বলবেনই না বরং এমন ভাবিবেনও না যে আমার ওরকম কোন অবস্থান আছে।
– আমি তো ভাবতে চাইও না, মামুন। আর তা যদি ঠিক হয়, আমার চেয়ে খুশি তো আর কেউ হবে না। তবে কি জানো, আগের কিছু খারাপ অভিজ্ঞতা আছে তো। তাই না চাইলেও কিছু কিছু ভাবনা এসেই পড়ে। আর ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া, চুরি করা অথবা পরকীয়া করার মত রিভার্সেবল কোন ইস্যু তো এটা না। তাই কম্পেয়ারেবলও না। যত নুন্যতম রিস্কই থাক, ইন প্রিন্সিপাল আমি কিছু এক্সপ্লোরেশনের পক্ষপাতি। আর তা সতর্কতা হিসাবেই। বোঝো তো, এটেম্পটে সাকসেকফুল হলে তো আসলে দুঃখ পাওয়া ছাড়া কিছুই থাকবে না করার, তাই না? এই ব্যাপারটা কিছুটা হলেও ভাবায়।
শুনে মামুন বললো:
“আই গিভ আ ড্যাম টু ইওর অল দিজ নন-সেন্স ভাবাভাবি……”
[পুনশ্চ: উঠে যাওয়ার সময় মামুনের শেষ কথাটা কানে বাজতে থাকে।
পুরো এক্সাসাইজটা কি তাহলে বিফলে গেল?
কে দায়ী তাহলে এই বিফলতার জন্য?
এমেচার আমি? নাকি প্রফেশনাল আশা??
অভিজ্ঞতাটা গল্পাকারে এখানে রেখে গেলাম। যদি কোনদিন শুনি মামুন নাই, অন্তত বলতে পারবো যৎসামান্যই হোক না কেন, একদা আমি একটা চেষ্টা তো করেছিলাম? কাজ যে হয়নি সেটায়, তা আমার দোষ না।
আর যদি কিছু না হয়, তাহলে বলবো “ও, ওটা? ওটা তো একটা গল্প ছিল। সত্যি কিছু না।”
আর হ্যাঁ, এসব নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানি কাজগুলো আমি এমনি এমনিতেই করি। কোন কিছু প্রতিদান পাবার আশায় না।
এই জন্য যদি কেউ আমাকে গায়ে-পড়া, হালকা এমনকি পরকীয়া-বান্ধব ভাবে, তো ভাবুক। আমার কিছু যায় আসে না।
আই টূ গিভ আ ড্যাম টু ইট……]
এসব নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানি কাজগুলো আমি এমনি এমনিতেই করি। কোন কিছু প্রতিদান পাবার আশায় না।
এই জন্য যদি কেউ আমাকে গায়ে-পড়া, হালকা এমনকি পরকীয়া-বান্ধব ভাবে, তো ভাবুক। আমার কিছু যায় আসে না।
আই টূ গিভ আ ড্যাম টু ইট……
-- রাইটলি সেইড ।
আর সেখানে যদি আত্মহননের মতোন বিষয় কখনো কোনো সন্দেহের দানা নিয়েও সামনে আসে দাঁড়ায় । তবে তো কথাই নেই ...
এই না হলে "মাই ফ্রেন্ড"
🙂 🙂 🙂
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
আমার চেনা জানা কারো মত লেখা নয়। একেবারে অন্যরকম। আমার অন্তত আরেকবার পড়া লাগবে
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
অপেক্ষায় থাকলাম......
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
:clap: :clap:
কবিতা তোমার অন্যতম শক্তি হলেও তোমার লেখা প্রবন্ধগুলো আমার ভাবনার খোরাক জোগায়, ভাইয়া!
জগতে অথবা কারোর মনোজগতে আলো জ্বালাতে আমরা সময়ে সময়ে ব্যর্থ হলেও আলোর মশালটি কিন্তু প্রজ্বলিত থাকেই। কেউ না কেউ এর থেকে আলোটুকু নেবেই।
অনেক ধন্যবাদ বিষয়টি তুলে আনার জন্য। :clap: :clap:
তোমার প্রতি এই কারনেই আমার এতটা মুগ্ধতা কাজ করে, জানো?
এই লিখাটা দেয়ার পর ভাবছিলাম, বেশিরভাগ পাঠকই বোধ হয় ভাববে, এই "মড়াটানা"-টাইপের লিখা কার জন্য?
এটা পড়ে কার কি লাভ?
অথচ, কোন ভূমিকা ছাড়াই তুমি বুঝে নিলে, ভনিতা ছাড়াই বলে দিলে এটা আসলে কার জন্য লিখেছে!!!
মাঝে মাঝে মনে হয়, তুমি কি মনের কথাও পড়তে পারো?
:hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
🙂 🙂 🙂 🙂
ভাইয়া তোমার এই লেখাটি পড়তে পড়তে মনে হলো you are putting real mangoes into an imaginary cake.
সুইসাইডাল মানুষেরা নানান ভাবে নিজেদের ভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটান; একবার, দুবার নয় বহুবার। তারা সিগন্যাল দেবেই চলে যাবার আগে পরিবার এবং বন্ধুদের ছাড়াও ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়াতে। আমাদের দেশে কাউন্সিলিং ব্যাপারটি এখনো বোধকরি ততখানি জোরদার নয় যতখানি সামাজিক ভ্রুকুটি অথবা ডিনায়ালের ব্যাপারগুলোতে!
প্রথম এনালজিটা দারুন উপভোগ করলাম।
"সুইসাইডাল মানুষেরা নানান ভাবে নিজেদের ভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটান" - এইটা দারুন বলেছো।
এইগুলা বোঝার জন্য চোখ-কান যে একটু খোলা রাখা দরকার, অনেকে সেটা বোঝে না।
তুমি জানো তাই তোমাকে না, আকাশের কমেন্টের উত্তরে কিছু সিম্পটম দিচ্ছি......
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
পড়লাম, মন্তব্যের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। দুটো কবিতার কথা মনে এলো। একটি সুপরিচিত অন্যটি স্বল্পপরিচিত। (সম্পাদিত)
দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ
দুটো কবিতাই পড়লাম।
যদিও একটা আগেই বহু পঠিত তাও আবার পড়লাম।
অন্যটা পড়েও অনেক কিছুই ভাবার সুযোগ হলো।
লিখার সাথে লিংক করার জন্য অনেক ধন্যবাদ............
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
এখন পর্যন্ত কোন সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি প্রকাশ করা মানুষের সাথে আলাপ হয়নি, অথবা আলাপ হলেও আমি সেটা ধরতে পারিনি। তবে সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি সম্পর্কে বিন্দুমাত্র সন্দেহ হলেও আমি সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষপাতি। কেউ কেউ হয়ত এতে ভুল বুঝতে পারে কিন্তু এর মাধ্যমে যদি একটা আত্মহত্যাও থামানো যায় সেটাই অনেক বড় প্রাপ্তি।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ওরা তো যাকে তাঁকে সুইসাইডের কথা বলে বেড়াবে না, তবে এই সাইন গুলোর এক বা একাধিক সবার মধ্যেই দেখা যায়:
Suicide Warning Signs - Any of the following could be potential warning signs for suicide:
- Excessive sadness or moodiness: Long-lasting sadness, mood swings, and unexpected rage.
- Hopelessness: Feeling a deep sense of hopelessness about the future, with little expectation that circumstances can improve.
- Sleep problems: Sleeping too little or too much
- Sudden calmness: Suddenly becoming calm after a period of depression or moodiness can be a sign that the person has made a decision to end his or her life.
- Withdrawal: Choosing to be alone and avoiding friends or social activities also are possible symptoms of depression, a leading cause of suicide. This includes the loss of interest or pleasure in activities the person previously enjoyed.
- Changes in personality and/or appearance: A person who is considering suicide might exhibit a change in attitude or behavior, such as speaking or moving with unusual speed or slowness. In addition, the person might suddenly become less concerned about his or her personal appearance.
- Dangerous or self-harmful behavior: Potentially dangerous behavior, such as reckless driving, engaging in unsafe sex, and increased use of drugs and/or alcohol might indicate that the person no longer values his or her life.
- Recent trauma or life crisis: A major life crises might trigger a suicide attempt. Crises include the death of a loved one or pet, divorce or break-up of a relationship, diagnosis of a major illness, loss of a job, or serious financial problems.
- Making preparations: Often, a person considering suicide will begin to put his or her personal business in order. This might include visiting friends and family members, giving away personal possessions, making a will, and cleaning up his or her room or home. Some people will write a note before committing suicide. Some will buy a firearm or other means like poison.
- Threatening suicide: From 50% to 75% of those considering suicide will give someone -- a friend or relative -- a warning sign. However, not everyone who is considering suicide will say so, and not everyone who threatens suicide will follow through with it. Every threat of suicide should be taken seriously.
A few more:
- Talking about feeling trapped or in unbearable pain.
- Talking about being a burden to others.
- Preoccupation with death.
- Suddenly happier, calmer.
- Visiting or calling people to say goodbye.
- Making arrangements; setting one's affairs in order.
- Giving things away, such as prized possessions.
মাঝে মাঝে বাংলায় এ জাতীয় কথা বলা:
১) মরতে তো একদিন হবেই, দুদিন আগে আর পরে।
২) আমি মরে গেলে কারো কিছু আসবে যাবে না।
তাছাড়াও মৃত্যুকে মহিমান্বিত করা, ও কারো মৃত্যুর সংবাদে, "যাক মানুষটা বেচে গেল" জাতীয় উল্লাস জানানোও গন্য করা দরকার।
এছাড়াও কারো আত্মহত্যার সংবাদের প্রতিক্রিয়া হিসাবে তার সাহসিকতার প্রশংসা করাটাকেও সন্দেহের মধ্যে রাখা উচিৎ......... (সম্পাদিত)
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
একটা বেদনার বিষয়কে গুছিয়ে অবতারণা করার জন্য ধন্যবাদ। আত্মহত্যা সম্পর্কে চিন্তাকারীর লক্ষণসমূহ জেনে কিছুটা ভয় লাগলেও বিষয়গুলো জানা থাকাতে হয়তো কোনদিন কাউকে ওপথ থেকে ফেরানোর ব্যাপারে কাজে লাগলেও লাগতে পারে।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ খায়রুল ভাই।
আমার মনে হয়, যাদের মধ্যে এই টেন্ডেন্সি আছে, তাদেরই বরং বেশী কনভিন্সড হওয়া উচিৎ যে তাদের বন্ধু ও কাছের মানুষদের এই টেন্ডেন্সিটার কথা জানা থাকুক।
আর ঐ বন্ধুদের দায়িত্ব হবে উপরের সাইনগুলো দেখা গেলে তাঁকে বেশী বেশী সঙ্গ দেয়া, সাহস দেয়া।
মনে রাখা দরকার, একজন মানুষ কিন্তু হঠাৎ করে সুইসাইডাল হয় না।
এটা ঘটে একটা দীর্ঘ্য মেয়াদি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, ধীরে ধীরে।
আজ তাকে ফেরাতে পারার মানে কিন্তু এই না, যে সে চিরদিনের মত সুইসাইড ঝুঁকির নাগাল থেকে বাইরে চলে যাচ্ছে। বরং তাঁর ভবিষ্যৎ এটেম্পটটা সে কিন্তু আরও নিখুঁত ভাবে, আরও বেশী ডিসিপশন ব্যবহার করে করবে।
কাউকে সুইসাইডাল হিসাবে আবিষ্কার করার পর প্রথম কর্তব্যই হবে কিভাবে তাঁকে সকল সঙ্গি সাথীসহ এটা মেনে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করা যায়।
আমার এই লিখাটার একটা উদ্দেশ্যও আসলে তাই।
সম্প্রতি যে দুজনের মধ্যে এই প্রবনতা দেখলাম, আমি যে নিঃস্বার্থভাবে তাঁদের সাপোর্টিভ বন্ধু হতে যে ইচ্ছুক, এটা তাঁদের জানিয়ে রাখতে চাচ্ছি।
তারা দুজনেই সম্ভবতঃ লিখাতা পড়বেন। দেখি কি করেন তারা?
আমি বুঝি, তারা তাদের এই প্রবনতাটা দীর্ঘদিনে অর্জন করেছে।
হঠাৎ করে তাই এটা ছাড়ানো যাবে না।
তবে আমার মত কম্প্যাশনেট বন্ধুদের সাথে যোগাযোগে থাকলে হয়তো তাদের ও তাদের উপর নির্ভরশিলদের উপকারই হবে।
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
:thumbup: