একবার একটা বাঘ তার একমাত্র ছেলে মাইকেলকে নিয়ে গেল হরিণ শিকার করতে। মাইকেল হরিণ শিকারে তার বাবা টমাসের থেকেও অনেক বেশি দক্ষ ছিল। বাপ-বেটা দুজন সুন্দরবনের হিরন-পয়েন্টে ঘাসের মধ্যে ভাল একটা ঘনঝোপ ঠিক করে শিকারের পজিশন নিয়ে হরিণের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে তারা দুজন দেখতে পেল যে, কিছু হরিণ-হরিণী তাদের ছানাপুনা নিয়ে মনের আনন্দে সেই ঘন ঘাসের দিকে আসছে তাদের পেটপূর্তি করতে। মাইকেল তার গোঁপের তলে কুটিল হাসির একটি রেখা ফুটিয়ে বলল, বাবা আজ আমরা আমাদের মাকে আমাদের শিকারটি উপহার দেব, ওকে। টমাসের মুখে শব্দহীন সিরিয়াস গাম্ভীর্য। সে মনে মনে তার টার্গেট নির্বাচনে ব্যস্ত।
এমন সময় অনেক দূর থেকে কিছু মানুষের ক্যামেরার শাটারের ক্লিক-ক্লিক শব্দ টমাসের খাড়া কানে তীক্ষ্ণ তীরের মতো আঘাত করল। মাইকেল বলেই ফেলল, আবারও সেই উটকো ঝামেলা। টমাস বলল, ওদিকে কান না দিয়ে এবারে আমাদের ফাঁকা পেটের শব্দের দিকে কান দিয়ে শিকারে মননিবেশ কর। ঐ শব্দে হরিণগুলো আর একটু পরই আমাদের থেকে দূরে চলে যাবে।
অপেক্ষার প্রায় টান টান শেষ মূহুর্ত। আর দেরি করা মোটেও ঠিক হবে না। তাই কোনো টুরিস্ট-ফুরিস্ট না গুনেই তারা বাপ-বেটা লাঁফিয়ে পড়লো দুটি হরিণের ওপর। তারা সেগুলিকে মেরে, টেনে তাদের মা আর মাইকেলের বোন এলিসার জন্য নিয়ে গেল।
বেশকয়েক বছর পরের কথা। মানুষেরা হিরণ-পয়েন্টে মাইকেলদের বসবাসের স্থানে চেকপোস্ট বানিয়েছে। মাইকেলের বাবা টমাস সেই চেকপোস্ট থেকে ছোঁড়া গুলিতে মারা গেছে। মাইকেল তার মা, বোন আর বোনের একমাত্র ছেলে নিটনকে নিয়ে অন্যস্থানে চলে এসেছে। এখানে হরিণ প্রায় নেই বললেই চলে। তাই মামা-ভাগ্নে এখন মাঝেমধ্যেই তাদের পরিবারের জন্য মাছ শিকার করে।
একদিন মামা-ভাগ্নে ঠিক করলো যে তারা মানুষের বসতিতে যেয়ে রাতের আঁধারে গরু শিকার করবে। সেই কবে যে তারা শেষবারের মতো গরুর স্বাদ পেয়ে ছিল তা ঠিক মনে নেই তাদের। মাইকেল তার দাদার মুখে শুনেছিল মানুষ্য বসতিতে গরু শিকারের অভিজ্ঞতার কথা। সেই অভিজ্ঞতাটা বোধহয় আজ এতদিন পরে তাদের পেটের দায়ে কাজে দিতে চলেছে।
যে সমস্ত বাঘ পূর্বে মানুষ্য বসতিতে গেছে তাদের বেশির ভাগই মারা পড়েছে। আর যারা শিকার করে ফিরেছে তাঁরা একেকজন মহাবীর। তাদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে আরও ভালভাবে প্রস্তুতি নিল মাইকেল আর নিটন। নিটনের মা এলিসা প্রথমে রাজি হচ্ছিল না এই মিশনে নিটনকে যেতে দিতে। কিন্তু নিটনের কিচ্ছু হবে না, এই আশ্বাস দিয়ে মাইকেল নিটনকে তার সাথে নেবার ব্যবস্থা করলো।
সবকিছু ঠিকঠাক করে মামা-ভাগ্নে এক চাঁদরাতে তাদের মিশনে বের হলো। তখন মাঝরাত। বসতিতে মানুষ্য জাতির নাক ডাকার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। গোলপাতা, মাটি আর খড় নিয়েই বেশির ভাগ বাড়ি তৈরি। মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি বাড়ি পাকা। গরুগুলো সব ঘুমাচ্ছে। মাইকেল আর নিটন তাদের নিঃশব্দ পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে। প্রখর দৃষ্টি তাদের।
এমন সময় একটা পাঁকা বাড়ির সামনে হঠাৎ করে মাইকেল থমকে দাঁড়াল। নিটন বলল, কি হল মামা! থামলে যে ? মাইকেল বলে উঠল, বাবা! নিটন বলল, মানে। এরপর মাইকেল নিটনকে তার সামনের পা তুলে দেখাল যে সেই পাঁকা বাড়িটির দেয়ালে একটা ছবি ঝুলছে। সেখানে ছোট মাইকেল আর তাঁর বাবা টমাস হরিণ শিকার করছে। ইমোশনাল মাইকেল তাদের গরু শিকারের প্লান পাল্টে ফেলে, দেয়াল থেকে সেই ছবিটি পেড়ে মুখে করে তাদের বাড়িতে নিয়ে গেল সে রাতে।
বাঘেরা সবাই ছবিটি দেখছে অবাক দৃষ্টিতে। তাদের শিকার, তাদের বসতি, তাদের চামড়া আজ সবই মানুষের বিনোদনে পরিণত হয়েছে। মানুষকেও বাঘেরা এবার বিনোদন বানাবে তাদের জন্য। মানুষের রক্তের স্বাদ আলাদা। মাইকেলের কানে সেই ক্যামেরার শাটারের ক্লিক-ক্লিক শব্দ বাজছে। সে ভাবছে, এবারে ছবিতে হরিণের স্থানে থাকবে মানুষ।
(ধারাবাহিক)
ভাল লাগলো। সুন্দরবনের বাঘের বাংলা নাম হতে পারতো। :teacup:
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ মোস্তাফিজ ভাই। 🙂
চায়ের জন্য ধন্যবাদ। আশাকরি একদিন আপনার সাথে একসাথে বসে চা খাওয়া হবে। ইনশাল্লাহ। :teacup:
আর, বাঘের বাংলা নামগুলো ঠিক করতে আমি চেষ্টা করছি। নাম পাওয়ামাত্র ঠিক করে দেব। ইনশাল্লাহ।
বাংলাদেশের মানুষের নাম আর বাঘের নাম এক হয়ে গেলে কী যে হবে ... বুঝছি না। =))
ভাই, আমার জন্য দোয়া করেন।
ভালো থাকা অনেক সহজ।
গল্পটা ভালই ছিল। কিন্তু মোস্তাফিজ ভাইয়ের মতই আমারও ইংরেজি নাম কেমন জানি বেখাপ্পা লাগতেসে। বাংলা নাম হলে আরও সুন্দর হত। 🙂
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
অসংখ্য ধন্যবাদ, সামিউল।
বেখাপ্পা নামগুলি দেখি কীভাবে পাল্টানো যায়। 😀
ভালো থাকা অনেক সহজ।
খুব সুন্দর !
ভাল্লাগলো !
আমি চোখ মেললুম আকাশে
জ্বলে উঠলো আলো পূবে পশ্চিমে
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকা অনেক সহজ।
ইংরেজি নাম আমার অবশ্য খারাপ লাগে নি,আসলে ভালই লাগছে।গল্পটাও ভাল্লাগছে। পরের পর্বের জন্য প্রত্যাশে বেড়ে গেল। বন্ধুর কি বোর্ড যেন নিরাশ না করে। 😀
ক্যাডেট রশীদ ২৪তম,প ক ক
বন্ধু, "বন্ধু" কথাটা শুনতে/পড়তে অনেক ভালো লাগে। :guitar:
আমি অনুপ্রাণিত। অনেক অনেক অনেক।
যাইহোক, আমি সচেষ্ট থাকবো আশা জোগাবার ক্ষেত্রে।
আর ততক্ষণ, :teacup:
ভালো থাকা অনেক সহজ।
:teacup:
ক্যাডেট রশীদ ২৪তম,প ক ক
কয়েকদিন আগে এনিম্যাল প্লানেট চ্যানেলে পৃথিবীর সব বাঘের উপরে একটা ডকুমেন্টারী দেখলাম। সব দেখে মনে হলো আসলেই আমাদের রয়্যাল বেঙ্গল সেরা, যেমন দেখতে, তেমনি ভাব-ভঙ্গিতে! পুরাই মারদাঙ্গা। পৃথিবীর আর কোন বাঘই এর ধারেকাছে আসেনা। B-)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
অন্যদেশের বাঘেরা আমাদের দেশের বাঘে সাথে লড়াই করে পারবে না। বরং অন্যদেশের বাঘেরা বেঙ্গল টাইগার দেখে মেঁও মেঁও করে পালাবে। 🙂
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। দোয়া করবেন আমার জন্য।
ভালো থাকা অনেক সহজ।